এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একক | 53.224.129.63 | ১১ মে ২০১৬ ০৯:৫৪706944
  • শিল্প ও লোকহিত :

    রবিবাবুকে উদ্ধৃত করেই শুরু করি । যদিও রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক সাহিত্যিকদের দলে ফেলা যায়না , কিন্তু অনাধুনিক ও আধুনিক এর বাইরে শিল্পের একটি জমি আছে যা তার নিজস্ব । আধুনিকতা তার দার্শনিক অবস্থানকে নির্দিষ্ট করে , কিন্তু যে মানুষটি দেখছে অর্থাত শিল্পী তার কিছু ন্যাচেরাল রাইটস থাকে যার ফলে সে চয়েস তৈরী করার সুযোগটুকু পায় । দর্শন গড়ে ওঠে । রবিবাবু বারংবার কথা বলেছেন সেই শিল্পীর ন্যাচেরাল রাইটস নিয়ে । দেখতে পাই শিল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি শিল্পী নিয়ে কথা বলছেন বেশি । ভাবীকালের দিকে তাকিয়ে । দীলিপকুমার কে লেখা একটি চিঠির অংশ :

    "যেখানে আর্টের উৎকর্ষ সেখানে গুণী ও গুণ’দের ভাবের উচ্চশিখর। সেখানে সকলেই অনায়াসে পৌঁছবে এমন আশা করা যায় না–সেইখানেই নানা রঙের রসের মেঘ জমে ওঠে–সেই দুর্গম উচ্চতায় মেঘ জমে বলেই তার বর্ষণের দ্বারা নীচের মাটি উর্বরা হয়ে ওঠে। অসাধারণের সঙ্গে সাধারণের যোগ এমনি করেই হয়, উপরকে নীচে বেঁধে রেখে দিলে হয় না। যারা রসের সৃষ্টিকর্তা তাদের উপর যদি হাটের ফর্মাশ চালানো যায়, তা হলেই সর্বনাশ ঘটে। ফর্মাশ তাদের অন্তর্যামীর কাছ থেকে। সেই ফর্মাশ-অনুসারে যদি তারা চিরকালের জিনিস তৈরি করতে পারে, তা হলেই আপনিই তার উপরে সর্বলোকের অধিকার হবে। কিন্তু, সকলের অধিকার হলেই যে হাতে হাতে সকলে অধিকার লাভ করতে পারে, ভালো জিনিস এত সস্তা নয়। বসন্তে যে ফুল ফোটে সে ফুল তো সকলেরই জন্যে, কিন্তু সকলেই তার মর্যাদা সমান বোঝে এ কথা কেমন করে বলব? বসন্তে আমের মুকুলে অনেকেরই মন সায় দিলে না ব’লেই কি তাকে দোষ দেব? বলব ‘তুমি কুমড়ো হলে না কেন’? বলব কি–গরিবের দেশে বকুল ফুল ফোটানো বিড়ম্বনা–সব ফুলেরই বেগুনের ক্ষেত হয়ে ওঠা নৈতিক কর্তব্য? বকুল ফুলের দিকে যে অরসিক চেয়ে দেখে না, তার জন্যে যুগ-যুগান্তর ধরেই বকুল ফুল যেন অপেক্ষা করে থাকে; মনের খেদে এবং লোকহিতৈষীদের তাড়নায় সে যেন কচুবন হয়ে ওঠাবার চেষ্টা না করে। গ্রীসে সর্বসাধারণের জন্যেই সফোক্লীস এস্কিলাসের নাটক রচিত ও অভিনীত হয়েছিল, কেবল বিশিষ্ট কতিপয়ের জন্যে নয়। সেখানকার সাধারণের ভাগ্য ভালো যে, তারা কোনো গ্রীসীয় দাশুরায়ের শরণাপন্ন হয় নি। সাধারণকে শ্রদ্ধাপূর্বক ভালো জিনিস দিতে থাকলে ক্রমশই তার মন ভালো জিনিস গ্রহণ করবার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। কবিকে আমরা যেন এই কথাই বলি–‘তোমার যা সর্বশ্রেষ্ঠ তাই যেন তুমি নির্বিচারে রচনা করতে পারো।’কবি যদি সফল হয় তবে সাধারণকে বলব–‘যে জিনিস শ্রেষ্ঠ তুমি যেন সেটি গ্রহণ করতে পারো।’যারা রূপকার, যারা রসস্রষ্টা, তারা আর্টের সৃষ্টি সম্বন্ধে সত্য ও অসত্য, ভালো ও মন্দ, এই দুটি মাত্র শ্রেণীভেদই জানে; বিশিষ্ট কতিপয়ের পথ্য ও ইতর-সাধারণের পথ্য বলে কোনো ভেদ তাদের সামনে নেই। শেক্‌সপীয়র সর্বসাধারণের কবি বলে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করি হ্যাম্‌লেট কি সর্বসাধারণের নাটক? কালিদাস কোন্‌ শ্রেণীর কবি জানি নে, কিন্তু তাঁকে আপামর সাধারণ সকলেই কবি বলে প্রশংসা করে থাকে। জিজ্ঞাসা করি–যদি মেঘদূত গ্রামের দশজনকে ডেকে শোনানো যায়, তা হলে কি সেই অত্যাচার ফৌজদারি দণ্ডবিধির আমলে আসতে পারে না? সর্বসাধারণের মোক্তার যদি কালিদাসের আমলে বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন বেদখল করে কালিদাসকে ফর্মাশে বাধ্য করতেন, তা হলে মেঘদূতের জায়গায় যে পদ্যপাঠ তৈরি হত, মহাকাল কি সেটা সহ্য করতেন? আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করো এ সমস্যার মীমাংসা কী, আমি বলব–মেঘদূত গ্রামের দশজনের জন্যেই, কিন্তু যাতে সেই দশজনের মেঘদূত নিজের অধিকার উপলব্ধি করতে পারে, তারই দায়িত্ব দশোত্তরবর্গের লোকের। যে দশজন মেঘদূত বোঝে না, তাদের খাতিরে মেঘদূতের বদলে পদ্ম-ভ্রমরের পাঁচালিতে সস্তা অনুপ্রাসের চক্‌মকি ঠোকা কবির দায়িত্ব নয়। কৃত্রিমতা সকল কবি সকল আর্টিস্টের পক্ষেই দূষণীয়, কিন্তু যা সকলেই অনায়াসে বোঝে সেটাই অকৃত্রিম আর যা বুঝতে চিত্তবৃত্তির উৎকর্ষসাধনের দরকার সেটাই কৃত্রিম এ ধরনের কথা অশ্রদ্ধেয়।"

    এই কথার পরে আর কোনো কথা চলেনা এমন নয় । তাহলে তো এত প্যাচাল পারার প্রয়োজন ফুরোত । ঘুরে ফিরে সেই একই কথা আসে , শিল্পীর কি আদৌ দায় আছে বকুলফুল সরিয়ে বেগুনখেতের বর্ণনা লেখার ? লোকহিত কি আদৌ শিল্পীর কাজ ? আমি এখানে "আর্ট ফর আর্টসেক " জাতীয় কৈবল্যবাদী হতে বলছিনা । কারন কৈবল্যবাদের ধারনাটিই এসেছে এমন এক পাশ্চাত্য চিন্তারীতি থেকে যা বারংবার অবজেক্ট ও অবসার্ভার এর তুলনামূলক বিচারে ক্রিয়েশন কে ব্যাখ্যা করে ।অবসার্ভার কে উপেক্ষা করলেও সেটা করে তুলনার লজিকে দাঁড়িয়েই । আমি বলছি সেই ধারণার কথা , যেখানে "যুগ-যুগান্তর ধরেই বকুল ফুল যেন অপেক্ষা করে থাকে" । যেখানে শিল্প নিজে অবসার্ভার । সে সত্বাযুক্ত । যেখানে সমস্ত গান লক্ষ্য করে শ্রোতা কে । এবং শ্রোতা নিজেকে তুলে আনে গানের কাছে । অমুক বড়লোক দের নিয়ে লিখেছেন , তমুকের লেখায় শুধু উদ্বাস্তু বস্তির বর্ণনা : এইদুটো তো একই মুদ্রার এপিঠ -ওপিঠ । তাই না ? রবিবাবুর সময় শিল্পীর ক্রাইসিসের জায়গা ছিল সে লোকহিত এর দায় কাঁধে তুলে নেবে না নিজের মনন যা অনুভব করেছে তার মধ্যেই শিল্প কে চক্ষুদান করে সত্বা দেবে ।

    আজকের দায় আরও গোলমেলে । ক্লাসিফায়ার এর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । জেন্ডার আছে । ক্লাস আছে । রেস আছে । বাড়তে বাড়তে এমন হাল যে একদিন বোধয় এওয়ান-বি ফাইভ-সি থ্রি-ডি নাইন দের জন্যে এই শিল্প গড়া হলো , এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রয়োজন পরবে। নইলে শিল্পরসিকরা রসনা অতৃপ্তির হতাশায় কামড়ে দিতে বা মামলা ঠুকতে পারেন ।

    আপনি অবশ্য দু কান কাটা হতেই পারেন । বড়লোকদের গলফ কোর্স রোমানস্ নিয়ে লিখেছি বেশ করেছি বা উপজাতি দের শুওর শিকার নিয়ে সাড়ে এগার পাতা বর্ণনা দিয়েছি বেশ করেছি , এরকম মুখের ওপর বলে দিতেও পারেন প্রানের মায়া ত্যাগ করে । কিন্তু সেটা প্রশ্ন নয় ।

    প্রশ্ন ওই বকুল । এবং ওই বেগুন খেতের কাঁটা গুলো । ওদের প্রত্যেকএরই নিজের গল্প বলার আছে । আমার বেগুনে মুখ চুলকায় বা বকুল ফুল আমাদের হাউসিংএ হয়না বলে তাদের গল্প গুলো শুনব না ? শিল্প আস্বাদন করা জিনিসটি যে মুখের ভেতর বেগুন ভর্তা নেওয়া বা চারপাশে বকুল গাছ না থাকার থেকে বেড়িয়ে এসে আলাদা একটা ক্ষমতার দরজা খুলে দেয় , একটা আলাদা শক্তির স্বাদ দেয় যা রিয়ালিটি থেকে আলাদা বলেই আমাদের এত কাছের এবং তার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করার প্রয়োজন আছে সেটা বোধহয় ভুলে গেলে মুশকিল । আমি -আপনি- সে- আমরা তো কেও রিয়েল নই । রিয়ালিটি নিজেই একটা আইডিয়াল স্টেট । আমরা সকলেই আনরিয়েল । শিল্প সেই রসিক আনরিয়েল এর সঙ্গে স্রষ্টা আনরিয়েল এর মোলাকাত ।

    এখানে অনেকেই লেখেন এবং বেশ ভালো লেখেন । মাঝে মাঝেই বিভিন্ন আলোচনা দেখি এই লোকহিতের ফাঁদে পরে যায় । তাই মনে হলো আলাদা করে ওপেনলি আলোচনা হোক ।
  • ranjan roy | 132.162.174.101 | ১১ মে ২০১৬ ১৫:০৪706951
  • "আমি -আপনি- সে- আমরা তো কেও রিয়েল নই । রিয়ালিটি নিজেই একটা আইডিয়াল স্টেট । আমরা সকলেই আনরিয়েল । শিল্প সেই রসিক আনরিয়েল এর সঙ্গে স্রষ্টা আনরিয়েল এর মোলাকাত ।"
    --- একককে কুর্নিশ! শুধু এই কটি পংক্তির জন্যে নয়, গোটা প্রবন্ধটির জন্যেও।
    এমন ধ্রুবপদ রচনার পর তার সঙ্গে ধরতাই দেওয়া আমার সাধ্যের বাইরে।

    হ্যাঁ, সেই গোদা ভাবে কলাকৈবল্যবাদ বনাম জীবনমুখী সাহিত্যের বিতর্ক, সেই বুদ্ধদেব বসু বনাম মাণিক বন্দ্যোঃ, যা নিয়ে বিষ্ণু দের কলমে বেরিয়েছিল "রাজায় রাজায়",--- তা প্রায় তামাদি হয়ে গেছে। সেই প্রসঙ্গে মুজতবা আলীর বামপন্থী সাহিত্যিকদের চিমটি কাটা-- ওঁরা যে শিবলিঙ্গ দিয়ে দেয়ালে মশারি টাঙানোর পেরেক পোঁতা যায় না তাকে বাতিল করেন-- শুনে সবাই আজকে বড়জোর মুচকি হাসবেন, কেউ বিব্রত হবেন না।
    ফেরা যাক রবিবাবুর গল্পেঃ
    সাহিত্যের লক্ষ্য কী, বা আদৌ কোন লক্ষ্য আছে কি না, থাকা আবশ্যক কি না-- এ নিয়ে উনি চিন্তা করেছেন বইকি!
    খাপছাড়া ভাবে মনে পড়ছেঃ
    উনি একদিন শান্তিনিকেতনের আবাসিকদের দেওয়ালে দেখলেন কেউ লিখেছে-- অনিল একটা গাধা! উনি বললেন যে এটাও একটি সাহিত্যকর্ম, কিন্তু ব্যর্থ সাহিত্য! কারণ এটা পড়ে সবাই অনিলকে গাধা বলে মেনে নেবে এমন বোধ হয় নি।
    এখানে বোধহয় উনি সাহিত্যের উদ্দেশ্য খানিকটা সংকীর্ণ অর্থে ধরেছেন-- কমিউনিকেশন , ( হিন্দী-সম্প্রেষণ, বাংলা মনে পড়ছে নাঃ((()।
    তাহলে কি সাহিত্যের মূল্য সফল/বিফল কমিউনিকেশনের নগদ বিদায়ে সিদ্ধ হবে?

    অন্যেরা বলুন!
  • pi | 74.233.173.177 | ১১ মে ২০১৬ ১৯:৩৭706952
  • বেগুন ও কুমড়ো ফুল যথেষ্ট সুন্দর দেখতে হয়। শৈল্পিক ভাবে দেখলেও। দুজনেই যথেষ্ট ফোটোজেনিক।
    তা সত্ত্বেও শুধু ফসলপ্রসূ হবার মত একটা অর্থকরী ব্যাপার আছে বলেই বুজিদের এই যে হ্যাটা , এইটা কিন্তু ঐ বাঙ্গালিদের বেওসা করা নিয়ে নাসিকা ও ভ্রূ কুন্চনের সমতুল্য। অতএব যারা বেওসা করে বলে তুশ্চু করা নিয়ে পাল্টা নাসিকা ও ভ্রূ কুন্চন করেন তান্রা ঐ কুমড়ো বেগুন ফুল ফেলে বকুল নিয়ে একদম আদিখ্যেতা করবেন না। আগেই বলে রাখলুম।
  • dc | 181.49.211.175 | ১১ মে ২০১৬ ১৯:৪৯706953
  • কুমড়োফুল খেতে আমার ভারি ভাল্লাগে, ফেলার প্রশ্নই নেই।
  • Ekak | 53.224.129.43 | ১১ মে ২০১৬ ২০:৪৪706954
  • দুটি শব্দের খানিক গভীরে প্রবেশ করার প্রয়োজন আছে । এক হলো "সুন্দর " আরেক "ব্যবহারযোগ্যতা " ।

    শিল্পী "সুন্দর " শব্দটি লেখেন অক্ষম পাঠক কে একটা প্রারম্ভিক সুত্র দেবার জন্যে । পাঠকের সীমাবধ্ধতার প্রতি চোখ রেখে । আদতে সৌন্দর্য্য আদৌ শিল্পীর এরিয়া নয় । শিল্পীর মাথাব্যথা রূপ নিয়ে । রূপের কাছাকাছি ইংরাজি ফর্ম । কাজেই প্রশ্ন এই নয় যে বকুল সুন্দর না কুমড়োফুল । কারণ যিনি শিল্পী তিনি বকুল কেও সুন্দর লেখার পর অবহেলায় রাস্তায় ফেলে যাবেন ; কুমড়োফুল ফর্ম খুঁজে পেলে তুলিতে ফোটাবেন , সর্ষের তেল খুঁজবেন না । এইখান থেকেই শিল্পীর কাছে "ব্যবহারযোগ্যতা " শব্দটির অর্থ একজন চূড়ান্ত ধান্দাবাজ -ব্যবহারজীবি মানুষের চেও , "বেয়সায়ী" -র চেয়ে অনেক কঠোর । শিল্পী বেওসায়ীর বাপ । ব্যবসাজীবি তবু কোনদিন শঙ্খমালা বেচতে বেচতে ভালো লেগে নিজের গলায় একটি পরেও ফেলতে পারেন । শিল্পী তা করেন না । কারণ অবজেক্ট এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে গেলে যা লাগে সেই প্রেম জিনিসটি শিল্পীর নেই । সে রূপের জগতের লোক । এসব কথা কোনো নতুন কথা নয় । যাঁরা আঁকেন -লেখেন -ছবি তোলেন -সুর সৃষ্টি করেন , সকলেই জানেন ।
    আপনার সামনে দুটি মানুষ নিজেদের মধ্যে ধুন্ধুমার কলহ করছে । সম্পর্ক ভেঙ্গে চৌপাট হয়ে যায় এমন অবস্থা । আর আপনি সামনে বসেই মাথার মধ্যে ভেবে চলেছেন : এই কথাটা বলার সময় মেয়েটির মুখ ছেলেটির আরেকটু কাছে ...না না থাক অতটা না ......ভ্রু দুটো আরেকটু এরকম .....ব্যাকগ্রাউন্ড এ একটা লোকাল ট্রেন চলে গেলে ক্যামন হয় ?......আপনি এদের কেও না । এমনকি সো কল্ড "রিয়েল " জগতে ওই দুজনের একজন আপনি হলেও আপনি এদের কেও না । কী প্রচন্ড ইউটিলিটারিয়ান , ধান্দাবাজ হলে এটা সম্ভব , কতটা ব্যবসায়ী হলে প্রেম না থেকেও প্রেম লেখা যায় , বেচা যায় , এমনকি সাবজেক্ট কে বিশ্বাস করানো যায় ও আর্ট প্রডাকশন এর প্রয়োজন মিটে গেলে জাস্ট একটা ঠিকে এমপ্লয়ীর মত তাকে পিএফ -পেনশন ছাড়াই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে লে অফ করে দেওয়া যায় , এটা শিল্পী জানে । এটাই তার ধর্ম । এর থেকে চ্যুত হলে , বকুল ফুল পকেট বোঝাই করে এনে ঘরে জমাতে শুরু করলে তার শিল্পী হিসেবে পতন ঘটে ।

    তাই , শিল্পীর জগত কোনভাবেই ইউটিলিটি বিযুক্ত না । রসিক সেই শিল্পকে ছুঁতে পারছে কিনা সেটা রসিকের প্রস্তুতির জায়গা । সে যখন প্রস্তুত হবে তখন আর্ট পেপারের উপর ফুটে ওঠা ফুলের আদলটি তাকে ক্ষুদ্র ইউটিলিটি থেকে অনেক বড় ইউটিলিটির জগতে নিয়ে যাবে । মাঝখানে পরে থাকা রেখাগুলি কুমড়ো ফুলের আদল না বকুলের ,ত়া ম্যাটার করবে না ।
  • Atoz | 161.141.85.8 | ১২ মে ২০১৬ ০৪:৪৬706955
  • কিংবা ধরুন আঁতেল শিল্প ও তেল শিল্প। সব তো সবার জন্য না। কেউ কেউ আঁতেল ভাজা খাবেন কেউ কেউ তেলেভাজা। কেউ কেউ আঁতেল খেয়ে গড়াগড়ি খাবেন, কেউ নাক সিঁটকাবেন, "আদিখ্যেতা দ্যাখোনা! " বলে। আবার উল্টোদিকেও, তেলেভাজা খেতে দেখে আঁতেলরা রেগে বলবেন, "এঃ বোকা-বলদেরা ঘাস চিবোচ্ছে", এদিকে যারা তেলেভাজা ভালোবাসেন তাঁরা আনন্দে লাফাতে লাফাতে খাবেন।
  • Ekak | 53.224.129.43 | ১২ মে ২০১৬ ০৫:৩১706956
  • তেলেভাজা তো বিশাল বড় সেট । ধরা যাক যে লোকটি ফুলুরি খাবে সে কি হ্যালাপেনো চীস বল কে কর্ন কোটিং দিয়ে ফ্রাই করলে খাবে না ? কই সেরকম তো দেখিনা । খুব অপরিচিত স্বাদ না হলে এবং অবস্যই স্ট্যান্ডার্ড একটা রান্না হলে লোকে দিব্য খায় । অসংখ্য বাফে ডিনার, বিয়েবাড়ি , পার্টি তার সখ্য দিচ্ছে । অবশ্য এইখানে একটা সুক্ষ মজা আছে । আমি খেয়াল করি বাফে তে খাবার তুলে নেবার সময় লোকের চোখ মুখের ভঙ্গী কিরকম । অপরিচিত খাবার লোকে তিন রকম ভঙ্গী তে তোলে দেখেছি ।

    এক হলো চারপাশের লোক খাচ্ছে কিনা দেখে ।

    দুই হলো , চারপাশে কেও তাকে দেখছে কিনা দেখে ।

    তিন হলো , এদিক ওদিক না দেখে খাবারটার দিকে কিছুক্ষণ সন্দেহভরা চোখে তাকিয়ে দেখে ।

    এই তৃতীয় দলের খাদককে সবচে কম সামাজিক নির্বাচনের শিকার মনে হয় । তার নিজের ওপর আস্থা আছে । এদিক ওদিক না দেখে খাবারটা দেখে বোঝার চেষ্টা করে । তবে সবচে কম হলেও সামাজিক নির্বাচন নেই তা নয় ।

    প্রথম দুই দল তা নয় । একদল , সবাই খেলেই মুখে তুলে নেবে । আরেকদল , তাদের চেখে দেখার ষোলোআনা ইচ্ছে আছে কিন্তু পার্টিতে এসেছে হয়ত এমন কিছু বন্ধুর সঙ্গে যারা তাকে ওই বিজাতীয় খাবার খেতে দেখলে : এম্যা ওটা খেলি ! আমি বাবা শুধু বিরিয়ানি আর আইসক্রীম খেয়েছি !! বলে কানের মাথা খাবে ।

    মানে , মূল কথা হলো "তেলেভাজা খাওয়া " জনতার মধ্যে থেকে আমি যে গুষ্টিসুখ বা সিকীয়রিটি পাচ্ছি , সেটা কি হঠাত হ্যালাপেনো চীস বল ফ্রাই মুখে তুলে নিলে একটা অজানা বিপদের সামনে পর্বে ?

    বা ,

    একদিন হঠাত ক্যাট বান্ধবী বা নাক উঁচু মাঙ্গেতরের সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে , হঠাত দাঁড়িয়ে কাঠকয়লা পোড়া -লেবু ঘষা ভুট্টা খেয়ে ফেললে কি জাত যাবে ?

    মানে , আমরা যে এই দ্বীপ গুলো সৃষ্টি করি এবং "যার যেমন পছন্দ " বলে কাটিয়ে যাই , আদৌ এগুলো আমারি পছন্দ না কি নিজের তৈরী করা আইডেন্টিটি রক্ষার দায় ? অন্যরকম খেয়ে দেখতে ক্ষতি কি । নাহয় জিভ কে একটু পড়াশোনা করালুম ।
  • Atoz | 161.141.85.8 | ১২ মে ২০১৬ ০৫:৩৬706957
  • প্রথম দল নিয়ে একটু আলোচনা হোক।
    ঐ যে আড়চোখে চারপাশে কে কী খাচ্ছে দেখে নিয়ে তারপরে নিজের পাতে তুলে নেওয়া, আর একটু মুখে দিয়েই ওয়া ভাই ওয়া করতে থাকা টাইপ।
    এদের মধ্যে সম্ভবত অনেকেই খাবারটার স্বাদ বোঝার রিস্ক নেয় না বা ভালো লাগলো না লাগলো তার জন্য তোয়াক্কা করে না। ফিট ইন করতে হবে বলেই ওয়া ভাই ওয়া করতে থাকে।
  • Ekak | 53.224.129.43 | ১২ মে ২০১৬ ০৫:৪৭706958
  • করে তো ! নিঃসন্দেহে তারাও ফিট ইন করার জন্যে অন্যের দেখাদেখি ওয়া ওয়া করে । আপনি খাবারের প্রসঙ্গ তুলে ভালো করেছেন । ফুড রিলেটেড বিহেভিয়ারের সঙ্গে রীডিং বিহেভিয়ারের যোগ আছে । বয়েস দামড়া হয়ে গেলে আমরা যেমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে চেটে চেটে আইসক্রিম খাইনা , বাড়িতে এনে একা বসে খাই ; তেমনই অনেকেই রোমান্টিক সাহিত্য পড়লেও কি পড়ছিস জিজ্ঞেস করলে শেয়ার করেনা । অনেক দিন আগে পড়া কোনো বিটকেল বই এর নাম করে :)

    মুখে দিয়েই সবার দেখাদেখি ওয়া ওয়া করতে থাকা কোনো কাজের কথা নয় । ওয়াইন পান নিয়ে এই মজাটা ঘটে সবচে বেশি । ওয়াইন মোটামুটি মডার্ন আর্ট এর মত । অধিকাংশ লোক দুটো আলাদা বোতলের পার্থক্য করতে পারেনা । কারন সেরকম অভিজ্ঞতা নেই । কিন্তু এক -দু সিপ পান করেই সমালোচনার ঠেলায় অন্ধকার ।
  • Atoz | 161.141.85.8 | ১২ মে ২০১৬ ০৮:০৯706945
  • তারপরে ধরুন এদিক ওদিক দেখে নিয়ে টুক করে ফুচকাওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে কজন বন্ধু মিলে ফুচকা খেয়ে নিল। খুবই আনন্দ পেল। কিন্তু অন্য আঁতেল বন্ধুদের সামনে তো আর সেসব স্বীকার করা যায় না! সেখানে এসে বলবে হয়তো অমুক হোটেলে আ লা কিয়েভ খেয়ে এলাম। ওঃ। সে কী জিনিস ভাই! জিন্দেগী তর হয়ে গ্যালো।
    ঃ-)
  • sinfaut | 74.233.173.185 | ১২ মে ২০১৬ ০৯:২৯706946
  • জিজিতে গেল।
  • T | 165.69.188.96 | ১২ মে ২০১৬ ০৯:৪২706947
  • সিঁফো, জিজিতে যেতই। আমার মনে হয়েছে 5:31AM এ একক রিয়্যাক্ট না করলেই পারত।
  • d | 144.159.168.72 | ১২ মে ২০১৬ ১০:১৬706948
  • হুঁ
  • sinfaut | 74.233.173.181 | ১২ মে ২০১৬ ১০:১৯706949
  • একক ওটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তেলেভাজা থেকে আর্টে ঘাড় ধরে ঘোরাবার চেষ্টা করেছিল। :-))
  • de | 24.139.119.171 | ১২ মে ২০১৬ ১৫:৪৭706950
  • কিন্তু আর্টের পথ ফুচকার দিকে
    গেছে বেঁকে, গেছে বেঁকে ঃ))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন