এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাণা আলম | 111.211.221.151 | ০৪ জুন ২০১৩ ০৭:৫২609067
  • (আমার বাজে বকা যারা সহ্য করে থাকেন,তারা একবার এই লেখাটা পড়ুন। সম্পর্কে অর্ক আমার ভাই,কিন্তু নিছক ভাই হওয়ার সুবাদে ওর লেখার ওকালতি করছি না।আমাদের মত যাদের পুরোনো বাড়ি ছিল,বিশ ইঞ্ছির দেওয়াল,কড়িকাঠের ছাদ,তাতে চড়ুই-এর বাসা,তাদের জন্য এ লেখার স্বাদ আলাদা হবেই...

    ভালো কথা,আমারও একটা ব্রিটিশ আমলের পুরোনো দোতলা বাড়ি ছিল,তার জানালায় রোজ একটা কাঠবেড়ালী আসতো আর কড়িকাঠে বাসা বেঁধেছিল কিছু অসাবধানী চড়ুই,প্রায়শই তাদের ডিম ভেঙ্গে পড়তো।এখন সে বাড়ি আর নেই,তার জায়গায় মার্বেল-আচ্ছাদিত মহার্ঘ সুরম্য হালফ্যাশানের দোতলা বাড়ি উঠেছে...কাঁচের জানালা হয়েছে আমার ঘরে,খালি কাঠবেড়ালীটা আর আসেনা আর চড়ুইগুলো পোস্টকার্ড না দিয়েই হয়েছে নিরুদ্দেশ...)

    মন খারাপের মুহুর্তরা...

    অর্ক

    আজ শহরের একটা পুরনো বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে । শুরু হল তিনতলা দিয়ে। সেই বাড়িরই এক ছেলের হঠাৎ মনে পড়ে যাচ্ছে কিছু টুকরো স্মৃতি, খুচরো আলো-ছায়ার খেলা। হয়ত তুচ্ছ, তবু......

    ছেলেটার মনে পড়ছে ছোটবেলার গাড়ি-গাড়ি খেলার কথা। মায়ের কড়া নিয়মে সকালবেলায় পড়তে বসা (প্রায় কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, রবিবার স্কুল ছুটি। তাতে কি, পড়তে বসার ছুটি নেই)...মন যদিও দরজার দিকে, কখন দাদার বন্ধু আসবে। সে এলেই দুটো রং-চটা কাঠের চেয়ার(গাড়ির সিট) আর একটা গোল চাকা (স্টিয়ারিং) নিয়ে সোজা তিন-তলার বারান্দায়...আর তারপর? এক পলকে হারিয়ে যাওয়া নিরুদ্দেশের পথে......

    আজ ছেলেটার শৈশবের বারান্দা ভরে যায় নিরন্তর হাতুড়ির আঘাত আর অবিরাম একটানা ভুঁউউউ শব্দে...

    সামনে দিয়ে গঙ্গা বয়ে যায়...

    মনে পড়ছে সাঁতার রেসের কথা। ছেলেটার বাড়ির সামনের ঘাট-টি ফিনিশিং পয়েন্ট হওয়ায় বিকেলের একটু আগে থেকেই পরিচিতরা ভিড় জমাতেন সেই বাড়িতে। বারান্দায় তিল ধারণের স্থান থাকতো না। কচিকাঁচাদের নিজস্ব চিল্লার পার্টি চলত নিজের মত। শুধু ডেকে নেওয়া হত যখন স্থানাধিকারিরা ঘাটে পৌঁছাত... ভেজা শরীর...ক্লান্ত জলবিন্দু টুপ-টাপ ঝরে পড়ছে শেষ বিকেলের সূযার্স্তের আভা গায়ে মেখে...

    আজ আর প্রতিযোগিরা সেই ঘাটে থামে না...নিশ্চিন্তে পুরনো বারান্দাটা পেরিয়ে যায়, থামে আরও খানিকটা এগিয়ে... বারান্দাটা তাই পড়ে থাকে চুপচাপ...ঝিমধরা

    আর সামনে দিয়ে গঙ্গা বয়ে যায়...

    এবার খানিকটা বড়বেলা... ক্লাস নাইন। বাবার কাছে ছেলেটা পুরনো বাড়ির তিনতলার ঘরে পড়তে বসি অন্যদের সঙ্গে... ছোট থেকেই ঐ ঘর তাদের কাছে পড়ানোর ঘর হিসেবেই পরিচিত। বড় বড় দাদা-দিদিরা ঐ ঘরে ভিড় জমাত সকাল সকাল, আর নিচ থেকে শোনা যেত বাবা বলছেন “(a+b)^2 = a^2 + 2ab +b^2... তাহলে...” । কখনো কখনো উপরে গেলে দিদিদের কাছে জুটত প্রচুর আদর। দিদি আর দাদাদের প্রতি খুব শ্র‍‍দ্ধা হত ছোট্টছেলেটার... কি মোটকা মোটকা বই পড়ে রে বাবা, হাতে করে তোলাই যায় না... যাই হোক, শেষে একদিন ছেলেটা সেই ঘরে ঢুকল ছাত্র হিসেবে। এইরকম-ই এক সকালবেলায় অঙ্ক কষছে, হঠাৎ ঘরে বাবার এক পূবর্পরিচিত ভদ্রলোক ঢুকলেন । তিনি এসেছেন একজন-কে পড়ানোর জন্য বলতে। যদিও তখন নাইনের বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে, তবু পরিচিত হওয়ায় বাবা অনুরোধ ফেলতে পারলেন না। শুধু একবার যে পড়বে তার সঙ্গে ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। ভদ্রলোক তাদের সঙ্গেই এনেছিলেন, বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলার পরে বাবা যাকে পড়াবেন তাকেই সরাসরি ডাকলেন। সকালের কাঁচা রোদ্দুর তখন ঘরে খাচ্ছে লুটোপুটি আর হাল্কা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে কপাল, বারান্দা দিয়ে দূরে দেখা যাচ্ছে গঙ্গা নদীর ওপার... এই সময় একঝাঁক রোদ্দুর-কে সঙ্গে নিয়েই যেন দরজায় এল কেউ... বয়কাট চুল, চোখে হাফ-লেন্সের চশমা, প্রতি কথায় মাথা নড়ছে এদিক-ওদিক, পরনে হাল্কা রঙের ফ্রক জাতীয় কিছু, আর অসম্ভব ছটফটে... মুগ্ধতার সেই শুরু। তখনো ছেলেটা বোঝেনি এটাকে কি বলে, খালি আর্শ্চয এক ভাললাগার অনুভূতি কাজ করত। কথা বলতে ইচ্ছে করত প্রাণভরে, কিন্তু ছেলেটা তখন ছিল অসম্ভব মুখচোরা, তাই অপেক্ষা করে থাকত বাবার পড়ানোর দিনগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে...। ছেলেটা চিনে গিয়েছিল ওর সাইকেলের আওয়াজ, দরজা ঠেলে ঢোকার শব্দ, আরো অনেক খুঁটিনাটি অভ্যাস, একদিন পড়তে আসতে দেরি হলে খাতার পাতা হয়ে উঠত দুবোর্ধ্য বণর্মালার কোলাজ আর সংখ্যাগুলো হয়ে উঠতো অসম্ভব রকমের বেয়াড়া... ছেলেটা যেহেতু তথাকথিত অর্থে ছিল না স্মার্ট তাই মনের গভীরে জমে থাকা এক আকাশ কথা আর দলা-পাকানো কষ্ট নিয়ে ছেলেটা বলতে শুরু করল নিজের একলা চুপকথা...

    এর বহুদিন পর, ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে। সে এখন জানে অনুভূতিটার নাম...কিন্তু এখনও......

    এদিকে হাতুড়ির আঘাত হতে থাকে আরও তীব্রতর...

    ঝুরঝুর করে ঝরে পড়তে থাকে ঘরে জমাটবাঁধা কিছু স্মৃতি...ভেতরে ভেতরে হয়তো বা ছেলেটিও...

    ঘরের দেওয়ালময় বটের শিকড়ে কিছু পুরোনো সোঁদা বাতাসের গন্ধ...

    আর সামনে নিশ্চুপে বয়ে যায় গঙ্গা...একাকী......
  • nina | 22.149.39.84 | ০৪ জুন ২০১৩ ২০:১৩609068
  • রাণা আলমের লেখার বিরাট পাখা হয়ে যাচ্ছি। জানি জানি এটা অর্কর--কিন্তু রাণা আলম নাম দেখলেই সব কাজ ফেলে পড়ে ফেলছি---খুব ভাল লাগছে এতাবৎ প্রত্যেকটি লেখা------
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন