এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাণা আলম | 111.218.52.110 | ১৩ মার্চ ২০১৩ ২১:২৪586202
  • ইস্কুলের গপ্পো...
    রাণা আলম

    আমার ইস্কুলে দুই ভাই পড়ে,ক্লাস সিক্সে,নোমান রেজা আর ওসামা রেজা।তাদের বাপ ধর্মপ্রাণ মুসলিম,দুবেলা আমেরিকা কে গালমন্দ না করে জলগ্রহণ করেন না,এমনকি,তার ছোট ছেলের নাম রেখেছেন ওসামা রেজা(বেচারি দুর্ভাগ্যক্রমে ৯/১১ এর বছরে জন্মেছিল,বুশ সায়েব খোঁজ পেলে জেরা করতেন নিশ্চয়)।যাই হোক,দুই ভাই কিন্তু মোটেই হরিহর আত্মা নয়,বরং ঘোষিত শত্রুই বলা চলে।দুই ভাই মুখ এবং হাত-পা সমান পরিমানে ব্যবহার করতে সক্ষম।পুরাকালে জন্মালে এরাই সব্যস্যাচী হত,তবে কিনা এ ভঙ্গ বঙ্গদেশে জন্মেছে বলে পাতি বাঙালি হয়েই রয়ে গেল।তবুও ওসামা যখন রেগে যায়,হাত পা ছুঁড়ে গলা ফাটিয়ে ভাই এর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে ‘উ আমার ভাই লয়,পাক্কা দুশমন’,তখন বোঝা যায়,কক্সিসের মত বাঙালির ক্ষাত্রতেজ ওই মুখেই অবশিষ্ট আছে।
    আজ ক্লাস সিক্সের ক্লাস টেস্ট ছিল।ইংরেজী’র।নোমান রেজা, পড়াশোনায় বেশ ভালো।সে অর্থে বাড়িতে দেখাবার কেউ নেই।কিন্তু বেশ সপ্রতিভ।ভালো মার্কস পায়।আজকেও পেয়েছে।আর খুব কল্পনাপ্রবণ।যা আমার খুব পছন্দের।লেসন থ্রি থেকে বাংলা শব্দের ইংরেজি অনুবাদ করতে দেওয়া ছিল,তার মধ্যে একটি শব্দ ছিল ‘মশা’।নোমান যা লিখেছে তা আরেকবার দিলাম,
    ‘মশা’=D.D.T
    এখন D.D.T আর ‘মশা’ কিভাবে সমার্থক হতে পারে?হতে পারে,যদি মশা’টি বোষ্টম সেজে ‘মরণ’এর প্রেমে পড়ে যায়।কল্পনাশক্তি কতদূর যেতে পারে,এটা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
    এই দুই ভাই এর ঝামেলা এতদূর গড়ায় যে মাস্টারমশাইদের প্রায়শই হস্তক্ষেপ করতে হয়।নোমান পড়াশোনায় ভালো হলেও,ওসামা আবার ঠিক উল্টো।অবশ্যি,যার নাম ওসামা,তাকে তো বন্দুক পিস্তলের সাথেই ভালো মানায়।কোথায় আফগানিস্তানের রণভূমিতে ডান হাতে দুম্বার ঠ্যাং চিবোতে চিবোতে বাম হাতে কালানশিকভ দিয়ে টিপ মকসো করবে,তা না তো কি অজ বাংলাদেশে খাতা পেন নিয়ে ফেমিনিন জেন্ডার এর সংজ্ঞা আর উদাহরণ লিখতে হচ্ছে।তোবা তোবা,এই জন্যই এই দেশটার কিচ্ছু হয়না।
    মাঝে মধ্যে ক্লাসে বৈচিত্র আনার জন্য ছেলে মেয়েদের দিয়ে ক্লাসে পড়ানো হয় আমার স্কুলে।এরকমই একদিন,নোমান ক্লাসে রোল কল করছে।তার অব্যহিত আগে,শুম্ভ-নিশুম্ভের ঝগড়া হয়ে গেছে,মানে দুই ভাই লড়েছেন।নোমান রোল কল করছে,ওসামা সাড়া দিচ্ছেনা।ক্লাসে যিনি ছিলেন,তিনি বললেন ‘ওসামা,উপস্থিত দাও’।ওসামা জোরালো গলায় বললো ‘ উ আমার ভাই লয়,আমি উকে ভাই ডাকতে পারবো লা’।মাস্টারমশাই বললেন, ‘ঠিক আছে,ভাই নয়,অন্যকিছু বল’।
    নোমান ডাকলো, ‘রোল নাম্বার বাইশ?’
    ওসামা উত্তর দিল, ‘প্রেজেন্ট দুশমন’।
    আমি যেখানে চাকরি করি,ওমরপুর,সেখানে লোকেদের মিশ্রবসবাস,প্লাস্টিক কারখানা,গ্যারেজ,ছোটখাটো নানা কারখানার ভিড়,তাতে বাঙ্গালি,বিহারী,উড়ে,দক্ষিণ ভারতীয় __ সব রয়েছে।ফলে ভাষাতেও তার প্রভাব পড়েছে।স্থানীয় ভাষা অনেক সময় বুঝতে অসুবিধে হয়।
    ক্লাস ফাইভের ছাত্র,ফুলবাবু সাউ,আদতে বিহারী,বাবা এখানে গ্যারেজ চালান,তাই ‘ফুল’ টিকি নিয়ে ফুলবাবু সাউ কপালের দোষে এই বাংলা মুলুকের ইস্কুলে ভর্তি হয়েছেন কিন্তু এক অক্ষর বাংলা লিখতে বা পড়তে না পেরেও আমাদের শিক্ষানীতি’র জোরে ক্লাস ফাইভে উঠে বসে আছে।আমি মাঝে মাঝে ক্লাসে পড়াশোনা করে কি কি ভালো হয়,তার উদাহরণ দিয়ে থাকি,কদিন আগে একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ বললাম ‘ লেখাপড়া করে যে,গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’।সেটা ব্যখ্যাও করলাম।সবাই মন দিয়ে শুনলো।
    ইস্কুল সেরে বাড়ি ফিরছি।ফাইভের তো আগেই ছুটি হয়ে যায়।ফুলবাবু খেলছিল।আমাকে দেখে আমার সঙ্গ নিল।আমাকে বললো ‘তোমাকে একটা কথা বলবো?’ ( প্রসঙ্গত,ওরা বেশীরভাগ তুমি সম্বোধন করে থাকে,আমরাও তাতেই অভ্যস্ত)
    আমি বললাম ‘বল’।
    ফুলবাবু বললো ‘ আজকে কেলাসে তুমি বুললা না,লিখাপড়া করলে গাড়িতে চাপা যায়?’
    আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম।
    ফুলবাবু বললো ‘কিছু মুনে কোরোনা,তুমি খানিকটো উল্লু আছো (প্রসঙ্গত আমার শিক্ষকেরাও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করতেন,তাই প্রতিবাদ করলাম না)’
    এখানেই না থেমে ফুলবাবু তার বক্তব্যের ব্যখ্যা দিলেন ‘তুমি আমার বাপু’র গ্যারেজে কাম করতে লেগে যাও,রোজ গাড়ি চড়তে পারবা।গাড়ি চড়ার জন্য ইতো কসটো করে লিখাপড়া করার কি আছে?’
    আমার কাছে উত্তর ছিলনা।তাই...
    পরিশেষে,গতসপ্তাহের একটা ঘটনা...
    আমি অফিসে খুব ব্যস্ত ছিলাম।ক্লাসে যেতেই পারিনি।সহশিক্ষকরা সামাল দিচ্ছেন।টিফিনে একটা গোলমালও শুনলাম,কিন্তু তাতে মাথা দেওয়ার মত সময় ছিল না।একগাদা হিসেব নিকেশ আর কাগজ পত্র নিয়ে মাথা তুলতে পারিনি।বিকেল নাগাদ,এক মাঝবয়সিনী,রণরঙ্গিণী চেহারার ( উদাহরণ না দেখে থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে স্টার আনন্দের সাংবাদিক প্রশ্ন করলে মাননীয়া’র চেহারাটা দেখে নেবেন)মহিলা আমার ঘরে পিওনের বাধা না মেনেই ঢুকে পড়লেন।খুব উত্তেজিত তিনি।
    আমি বললাম ‘বসুন দিদি’।
    আমার ব্যবহারে ঠান্ডা হয়ে তিনি যা জানালেন তার সারমর্ম হল এরকম,তার মেয়ে এই ইস্কুলে পড়ে,আজ নতুন জুতো পরে এসেছিল।টিফিনে তা খুলে সে খেলতে যায়।ফিরে এসে দ্যাখে জুতোজোড়া ভ্যানিশ ( সৌজন্যে অম্বিকেশ মহাপাত্র)।কেউ নিয়েছে তা স্বীকার করেনি।ভদ্রমহিলা রাগে সবাইকে শাপশাপান্ত করেছেন,ছাপার যোগ্য নয়, এরকম কিছু শব্দাদি ব্যবহার করেছেন (আমাদেরও ছাড় দেন নি) এবং সব থেকে বড় কথা তিনি তার মেয়ের সহপাঠী সহপাঠিনী’দের মন্ত্রপূত চালপড়া খাইয়েছেন।এবং হুমকি দিয়েছেন যে কালকের মধ্যে যদি তার মেয়ের জুতো যে নিয়েছে সে ফেরত না দিলে মুখে রক্ত উঠে মরবে।
    আমি আপত্তি করলাম।এভাবে অন্যদের ছেলে মেয়েদের খাওয়ানো যায় না।তিনি শুনলেন না।আমি বললাম এগুলো অবৈজ্ঞানিক এবং ভুয়ো।মহিলা জোর গলায় জানালেন চালপড়া খাইয়ে তিনি আমার গুষ্টিশুদ্ধু উদ্ধার করে দেবেন।অনেক বাক-বিতন্ডা’র পর তিনি বিদায় নিলেন।
    সেদিন রাতে আমাদের আড্ডা’য় এটা নিয়ে খুব হাসাহাসি হল।কিভাবে কুসংস্কার এখনও দানা বেঁধে আছে,তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা হল।পরদিন,সকাল দশটায় স্কুলে ঢুকছি,পিওন ডাকলো ‘স্যার,দেখে যান’।
    দেখলাম স্কুলের বারান্দায় একজোড়া নতুন জুতো পড়ে আছে।খানিক পরে গতকালকের মহিলা বিজয়িনী’র বেশে এলেন,আমার দিকে বক্রকটাক্ষে তাকিয়ে জুতোজোড়া নিয়ে গেলেন।আমি হাঁ করে দেখলাম।
    কে বলে দাদা,মন্ত্রশক্তিতে কাজ হয় না?
    ভাবছি,বকেয়া ডিএ পাওয়ার জন্য আমিও অর্থমন্ত্রীকে চালপড়া খাওয়াবো।
    আপনারা কি বলেন?
  • mila | 212.156.10.253 | ১৪ মার্চ ২০১৩ ০৮:২০586203
  • এইটা দারুন :)
  • Sibu | 118.13.142.178 | ১৪ মার্চ ২০১৩ ০৮:৫৪586204
  • অর্থমন্ত্রী কি চালপড়ার মত পেডেস্ট্রিয়ান ফুড খাবে?
  • pi | 78.48.231.217 | ০৪ মে ২০১৩ ১৮:১৯586205
  • রাণা, ইস্কুলের বাকি গপ্পোগুলো এইখানে হয়ে যাক !
  • ranjan roy | 24.96.25.0 | ০৪ মে ২০১৩ ১৮:৩২586206
  • রাণা আলম,
    তুমি একটু উল্লু আছ, নইলে অর্থমন্ত্রীকে চালপড়া খাওয়াতে চাও?
    চুপচাপ এই পাতায় বাকি গল্পগুলো লেখো নইলে সাউয়ের বাপের গ্যারাজে কাম করতে অইব, দিব্যি দিলাম।ঃ)))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন