এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খড়কুটো -২

    Tim
    অন্যান্য | ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ | ২৬৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Tim | 12.133.35.8 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৪২584734
  • বাড়িতে এলেই আইগেরিম একবার করে কারলাগ দেখতে যাবে। যাবেই। আলমাসের ভালো লাগেনা। আইগেরিম ছোটবেলায় এদিকেই আসত এক বন্ধুর বাড়ি। সেই মেয়েটি, ডালিয়াপ্রাজ, আর এখন এখানে থাকেনা। তবু আইগেরিম এখান থেকে একবার ঘুরে যেতে চায়।

    ডালিয়াপ্রাজের বাবা আদতে ভলগার তীরের মানুষ। সেই নদী, ইতিহাস মাখামাখি নদীর ধারেই ওরা ফিরে গেল কিনা জানা যায়না। একদিন ওখান থেকে তাড়া খেয়ে এদিকে এসেছিলো ওরা, আবার ওখানেই ফিরে গেল? ওদের বাড়ির পাশে একটা বড়োসড় গাছ ছিলো, এখন সেটাই কি গুঁড়িতে সাদা রং মেখে দাঁড়িয়ে আছে?

    কারলাগের রাজনৈতিক বন্দীদের কথা, স্তালিন, লেবার ক্যাম্প, কয়লাখনি এসব আলমাসের অল্পস্বল্প জানা ছিলো। সেই কারলাগ, আজ কেমন পাউডার মেখে শান্ত সমাহিত চার্চের মত। সাদা টাউনহলের আকারের বাড়ি, মাথায় লাল চিহ্ন। যেন মুকুটের পাথর। বিশাল চত্বর জুড়ে বাগান, গাছগাছালি। সব গাছের গুঁড়িতে সাদা বেড়। ঘোড়ার পায়ের কাছে একটা সাদা ফিতের মত থাকে, দেখেছে আলমাস। গাছগুলোর পা থাকলে ওরাও কি ডালিয়াপ্রাজের মত সরে যেত, আইগেরিম?

    প্রতিবারই এখানে এলে ওরা একবার করে ভেতরে যায়। ঘুরে ঘুরে দেখা জিনিসগুলোই দেখে আসে। রক্তের কৃত্রিম দাগ, কালিঝুলি মাখানো জংধরা আসল ও নকল নির্যাতনের যন্ত্রপাতি দেখে নেয় একবার করে। বহু বই, ডায়রির পাতা আর নাম জমা আছে এই যাদুঘরে। প্রতি চল্লিশজন বন্দীর জন্য একটা করে বিছানা থাকত এইখানে। ভাগ করে কয়েক মিনিট ঘুম। হাসপাতাল আর মরে যাওয়ার ঘর। মৃত্যুপথযাত্রীদের একেবারে ওখানেই ফেলে দেওয়ার নিয়ম ছিলো। শেষে একসাথে গণকবর। ডালিয়াপ্রাজ কেন চলে গেল আইগেরিম? এখানে মাটির নিচে ওদের নিজের লোকেরা গাদাগাদি করে শুয়ে নেই বলে? বলতে বলতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘর আসে, মেকি রক্তের দাগ্ধরা দেওয়াল, শিকল আর ছেনি হাতুরি পাওয়া যয়। তারপর অন্ধকূপ, যেখানে বুকসমান বরফজলে দাঁড় করিয়ে রাখা হত অবাধ্য আসামীকে।

    আইগেরিম কাঠের সিঁড়িতে দুমদাম আওয়াজ করে ওপর উঠে যায়। প্রভুদের অফিস, আরাম আর নাচগানের ঘর এদিকটায়। স্তালিনের আমলের ট্রানজিস্টার, চেয়ার টেবিল দোয়াতদান আছে ঐ ঘরে। ছড়ানো ইতিহাসের ধুলো। এককোণে ধূসর হয়ে আসা কালো চামড়ার লংকোট। ওরা চামড়ার কোট পড়তো, কেন জানো? আলমাস বিড়বিড় করে -- চামড়া থেকে রক্ত ধুয়ে ফেলতে সুবিধে হত, তাই।

    আলমাস জানে আইগেরিম এবার কোথায় যাবে। একেবারে শেষ ঘরটায় বিশাল একটা গরাদহীন জানলা আছে। ওখানে দাঁড়িয়ে কারলাগের সর্বেসর্বা ট্রাকে করে আসা লট কে লট বন্দীদের নিয়ে আসা দেখতেন। মনমেজাজ খারাপ থাকলে নাকি অনেক সময় ট্রাকভর্তি লোককে পাইকারি গুলি চালিয়ে মেরে ফেলতেও বলা হত। ঐ জানলার পাশে গিয়ে আইগেরিম এখন দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ। ডালিয়াদের বাড়িটা দেখার চেষ্টা করবে। বন্ধুর বাড়িটা কি এখান থেকে দেখা যায়? আলমাস, ডালিয়াদের কি খুনে লোকটা দেখে ফেলেছিলো?

    কিসব বলছো আইগেরিম? ডালিয়াপ্রাজ তখন কোথায়? আইগেরিম আশ্বস্ত হয়। ভলগার তীরে নিশ্চই ওরা সংসার পেতেছে, তাইনা আলমাস? ওখনে গাছগুলোকে কেউ বিচ্ছিরি সাদারং করে দেয়নি।

    একসময় আইগেরিম হাঁফিয়ে ওঠে। যাদুঘর সংলগ্ন গ্রামের মধ্যে দিয়ে ফেরার পথ ধরে ওরা। পথেই কতগুলো সেন্ট্রি টাওয়ার পড়ে। এও কারলাগেরই অংশ, জেলখানার একটা ছোট শাখা। এত ভালো জেল নাকি বানানো কঠিন, তাই এখনও ব্যবহার হচ্ছে। জেল কিভাবে ব্যবহারযোগ্য হলো, আইগেরিম? জেল কি আগুন, না চাকা?

    দিনটা শেষ হয়ে যেতে থাকে দ্রুত। বাড়ির পথও। আনারার রান্না করা বাঁধাকপির ঝোল আর শাশলিক খাওয়ার জন্য ওরা ফিরে আসে অস্থায়ী ঠিকানায়।
  • Tim | 12.133.35.8 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:০৮584735
  • ফেরার সময় আলমাস বড়ই চুপচাপ হয়ে যায়। গাড়িতে। আনারার বয়স হয়েছে, বয়সের ভাঁজগুলো ধ্বক করে এসে বুকে গেঁথে যায়। মাটিরও বয়স হয়, বরফের গর্তগুলো সেখানে লম্বালম্বি বাসা বেঁধে ফেলে। সেই চিড় বরাবার সরে যায়, একা মাটি। বসন্ত অনেক দেরিতে আসে এই দেশে। এসে তাজা পাতার স্তুপে ঢাকে সেই শব, অন্ধকার।

    চোখ আর নাকের ওপরের দিকটা ব্যথায় টনটন করে আলমাসের। বেশ অনেকদিন ভালো করে ঘুম হয়না। শুলেই ঐ ভিনদেশী লোকটর মুখ, কালো কোটরের চোখ মনে পড়ে। অথচ কতটুকুই বা দেখেছে! এদিকে আমিনার মুখ মনে পড়েনা সেভাবে। খোঁড়া কুকুরটার নাম মনে নেই, দানিয়ারের ঠিকানা মনে নেই। সেই ঠিকানা, যেখান থেকে দানিয়ার হারিয়ে গেছে।

    জল খাবে আলমাস? আইগেরিম একটু স্বাভাবিক হয়েছে এখন। ডালিয়ারা ভলগার তীরে। ওখানে অনেক জল, ওদের বুকের পালকে আগলে রেখেছে নদী, সেই নদীর তীরে ওরা ভালো আছে।

    জানলার বাইরে একটা কয়লাখনি দেখা যায়। যাবতীয় কলকারখানা তাদের চিমনিগুলোকে পতাকার মত করে উঁচিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। একটা রাশিয়ান ট্রাক ধুলো উড়োয়ে ঢুকে যাচ্ছে, দেখতে পাওয়া যায়। প্রহরী আছে ওখানে, মূল্যবান জ্বালানির রক্ষণাবেক্ষণে মোতায়েন সৈন্য। ঐ ভিনদেশি লোকটাকে বলে একবার খনিটা দেখতে হবে, ভাবে আলমস। এও তো মাটি।

    একে একে ইস্পাতের রাজত্বও ছুটে চলে যায় উল্টোদিকে। তারপর আর কিছু দেখা যায়না। শুধু গাড়ির হেডলাইটের আলোয় পথ কেটে শ্রান্ত দুজন মানুষ পথ চলে। গাড়ির চালক একহাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্যহাতে একচুমুক করে ভদকা গিলে নেয়। তার দু দুটো ছুটির দিন কাজ করে কেটে গেছে। বাড়তি পয়সার লোভের আফশোস বা ঘুমে তার চোখ কড়কড় করে।

    রাত হয়ে যাচ্ছে, দূর্ঘটনায় বেঘোরে মরে গেলে বাচ্চাটাকে আর দেখতে পাবনা। এই ভেবে স্পিড বাড়িয়ে দেয় সে, গোঁ গোঁ করে আওয়াজ তুলে টাল খেতে খেতে পুরোনো গাড়িটা ছোটে আধাঘন্টা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকান্ড কংক্রিটের দানবটার দিকে।
  • Tim | 12.133.63.108 | ১৬ মার্চ ২০১৩ ১৬:০৯584736
  • কারাগান্ডা থেকে ফেরার পরে আলমাস আরো একটু চুপচাপ হয়ে গেছে। অথচ শীতের প্রকোপ কমে আসছে, রোদের তেজ ধীরে বেড়ে উঠছে, ক্রমাগত। রোজ একটু করে কোণ পাল্টে পাল্টে উঠে দাঁড়াচ্ছে সূর্য্য, বিগত কয়েকমাসের আয়েশ ঝেড়ে ফেলে ফিরছে আগের জীবনে।

    আইগেরিম লক্ষ করে, আলমাসের এই ভাবান্তর। মানুষটার লুকিয়ে পড়তে চাওয়ার সাথে সে পরিচিত। চেনা স্বভাবে।সেই দানিয়ারের সাথে দেখা হওয়ার সময়েও দেখেছিলো, এরকমই শান্ত, ধীর আলমাস।

    খালি রাস্তায় রোদ পড়ে একা একা ঝকমক করে গলন্ত বরফ, সাদা আর ঘিয়ে রঙের মাঝামাঝি অদ্ভুৎ অর্ধস্বচ্ছ মোড়কে ঢেকে থাকে শহরের গা-গতর। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জান্তব যন্ত্রগুলো এতদিন স্তব্ধ হয়ে থাকার পর আবার সাড়া তোলে। খয়েরি, উজ্জ্বল নীল, হলদে আর জলপাই রঙের ছোপ ছোপ সেইসব যন্ত্রে। উঁচু থেকে দেখতে ভারি ভালো লাগে। চোখের আরাম হয়।
    আসলে অন্য সর্বত্র এখন বসন্ত। হয়ত সবুজ পাতা বেরোচ্ছে আরো একটা ক্ষয়াটে শীতের পর। এই কথাটা ভেবেই আলমাসের সেই সরাইয়ের লোকটাকে মনে পড়ে। অত টাকা জমিয়ে কি করবে লোকটা, জিগ্যেস করায় বলেছিলো একটু হাত পা ছড়িয়ে থাকতে চায়। শেষ দশটা বছর, জীবনের শেষ চৌহদ্দিটা খালি শুয়ে বসে থাকবে লোকটা। পারবে? ওর চোখের নিচের অন্ধকার বেড়ে বেড়ে একসময় ওকেই না গ্রাস করে ফেলে।

    ফেলতেই পারে। এই শহরে, ঐ শহরে, সব শহরেই তো কত লোক রোজ হারিয়ে যায়। অন্য শহরে, অন্য সব শহরে আবার তাদের কেউ কোনভাবে খুঁজে পেয়ে থাকবে। বসন্তে হারিয়ে যাওয়া মানুষ অঝোর শ্রাবণে অন্য শহরের রাস্তায় শীতে কাঁপে। গ্রীষ্মদেশের লোককে হৈমন্তী ফসলের সময় অন্য শহর ডেকে নিয়ে সেই ধার শোধ করেনা।
    এইসব ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি নামে।
  • Tim | 12.133.63.108 | ১৬ মার্চ ২০১৩ ১৬:৪৬584737
  • বৃষ্টিতে কালো পিচের রাস্তা অপার্থিব দেখায়। জলে আলোয় মাখামাখি হয়ে শুয়ে আছে, ক্লান্ত রাস্তা। স্তেপে বৃষ্টি কেমন ধোঁয়ার মত, কুয়াশার মত। বিরল সেই বর্ষায় ভেসে যেতে যেতে আলমাস খুশি হয়ে ওঠে। পাভলোদারের লেকে এখন নিশ্চই বৃষ্টি পড়ছে। লেকের ধারের প্রকান্ড কালো উদ্ভট আকৃতির পাথরটাও ভিজে যাচ্ছে নির্ঘাৎ। মাছ কিলবিল করে ঐ লেকে। জলে, আধগলা বরফে মিলেমিশে লেক এখন ভরভরন্ত হয়ে থাকবে। এই বর্ষায় কুকুরটার পা ভালো করে দিও ঈশ্বর। ওর পায়ে নতুন তাগদ দিও, ওর চোখে খরদৃষ্টি, ওর নখে আরো মাটি আঁকড়ে থাকার ইচ্ছে দিও। বৃষ্টিতে এইসব প্রার্থনা করে আলমাস। আমিনার জন্য কিছু চাওয়া হয়নি তার। আমিনার কাছে তার ঋণ আছে। পাওনাদারের মত উপদ্রব লাগে আমিনাকে তার এখন।

    অনেকদিন মনে হয়েছে আলমাসের, সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে। এই, সব পাওয়া হয়ে গেছে অবস্থাটা তাকে যথেষ্ট ভীতু করে তুললেও, আসলে সে পালাতেই চায়। বেরিয়ে পড়লে প্রথমেই কোথায় যাবে? পাভলোদার? শিমকেন্ত? তরাজ?

    ভেবে পায়না আলমাস। প্রভুভক্ত কুকুরের মত তার মনটা বারবার পুরোনো ভাবনায় ফিরে আসে, পাক খায়, উশখুশ করে, শেষে হাঁফিয়ে উঠে একমনে পোকা বাছতে থাকে গায়ের। আলমাসের ভয় হয়, কুকুরটর মত তার মনেও পোকা ধরছে কিনা। মায়ার শরীর, মায়াহীনতার পোকা সমেত সে বাঁচছে। স্বপ্নহীনতার বীজ ফেলে চাষ শুরু করেছে সে, অলক্ষ্যে। সেই বিষাদ, কোকশেতাউর কালো রগরগে পাথরটার মত করে আজ ভিজে যেতে চাইছে।

    কাছেই কোথাও বাজ পড়ে। শব্দ, বৃষ্টির ছাঁট, আইগেরিমের সুগন্ধী প্রসাধন আর দূরের লেভেল ক্রসিং এর আলো আলমাসকে ফিরিয়ে আনে। সে হাতের তেলোয় জল নেয়, চোখ বুঁজে লেভেল ক্রসিং এর আলোটাকে চামড়ার নিচে জমতে দেয়, তারপর আইগেরিমকে কাছে টানে।

    শহরের বৃষ্টি ধরে এলেও তেমিরতাউ আর পাভলোদারের দিক থেকে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা যায়। আলমাস জলকাদা পছন্দ করেনা। অথচ সে একটু আগেই বেরিয়ে পড়তে চেয়েছিলো। তাজা বৃষ্টিতে তার মনের পোকাগুলো মরে ঝরে পড়তে থাকে। সুগন্ধী মাকা চাদরে সেসব ফুলের মত, বালিশ থেকে বেরিয়ে আসা তুলোর মত ছড়িয়ে থাকে।

    এমন সময় ফোনটা বেয়াদব গাধার মত ডাকতে থাকে। অনেকক্ষণ, প্রায় অনন্তকাল বেজে বেজে সেটা একসময় থেমে যায়।

    বৃষ্টিটা ততক্ষণে একেবারেই থেমে গেছে, থেমে যাওয়ার শব্দটা শুয়ে শুয়েই শুনতে থাকে আলমাস।
  • | 24.97.249.163 | ১৬ মার্চ ২০১৩ ১৭:০৬584738
  • বহুত ভাল হচ্ছে
  • Tim | 12.133.63.108 | ১৬ মার্চ ২০১৩ ১৮:০২584739
  • এক একটা জিনিস মানুষের পেছনে এমন করে লেগে থাকে যেন এঁটুলি। বিশ্বাস। দূর্ভাগ্য। মায়া। যে ছেলেমেয়েরা গান গাইতে গাইতে বিকেলের দিকে বেরিয়েছিলো, যারা টিলার চারপাশে এদিকসেদিক ছিটিয়ে আছে রঙবেরঙের ফুটকির মত, তারা এইসব পার্থিব সুখদুঃখে জড়িয়ে আছে। ঐ লাল সাদা গোল্লাছাপ রুমালে মাথাঢাকা মেয়েটি, অ্যাকর্ডিয়ানের সুর ওর মনে লেগে আছে। ওরা এখন আপনা থেকেই নাচবে খানিক, হাসবে অকারণ, হেঁটে যেতে থাকবে রূক্ষ পাথুরে আবহকে অগ্রাহ্য করে। আলমাস ওদের দূর থেকে দেখে অবাক হয়। মদ খাওয়ার সময় নাহয় একরকম, অন্যসময়েও ওরা এত খুশি কেন?
    এইসব বিশ্রি সন্ধ্যেগুলোয়, যখন আইগেরিমের সুগন্ধী নেই, বৃষ্টি নেই, দূরদূরান্তেও কোথাও রেললাইন দেখা যায়না, সেইসময় এই নাচগান, প্রেম, ওর আদিখ্যেতা মনে হয়।

    কিন্তু তবু ছেলেমেয়েদের দলটা, ওকে একরকম অগ্রাহ্য করেই, কলকল করে হাসতে হাসতে, শিস দিতে দিতে অন্যত্র চলে যায়। কেউ বা পিছিয়ে পড়ে চুমুর জন্যে। রুমালে মাথা ঢাকা মেয়েটাও ওদের সাথেই যায়। তোমাদের মধ্যে কেউ দানিয়ার নামে আছে, এই মেয়ে? তোমাদের গ্রাম কোথায়? উত্তরের দিকে শীত কি কমে এলো? বৃষ্টি? এইসব চেঁচিয়ে জিগ্যেস করতে যায় আলমাস। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।

    ওরা চলে যায়। ওদের ছায়াগুলো জড়িয়েমড়িয়ে এক বিশাল কচ্ছপের মত নেচে বেড়াতে থাকে টিলার পাথর থেকে পাথরে। বেলা পড়ে আসছে। আলমাস ফেরার পথ ধরে।

    বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে আসে। শহরের পথঘাটে লোক গিজগিজ করছে। আলমাস ইচ্ছে করেই ঘুরপথে বাড়ি ফেরে। টিলার ধুলো তার বুটজোড়াকে মলিন করেছে। আইগেরিম ঠিক ধরে ফেলবে।

    বাড়িতে ঢোকার সময়ই আলমাস টের পায়, কেউ এসেছে। বসার ঘরে আইজাত বসে আছে। খানিক হতভম্ব ভাব। আইগেরিম শোবার ঘরেই কোথাও আছে, সেখান থেকে সামান্য ডুকরে ওঠার শব্দ পায় আলমাস।

    - তোমাদের ফোন করেছিলাম। আমতা আমতা করে বলে আইজাত- একবার কারাগান্ডা চলো।

    আনারার খবর, এবং খবরটা বাজে সন্দেহ করে আলমাস চুপ করে থাকে। জানতেও চায়না কি খবর। আইজাত হয়ত এখন বিব্রত হবে, দুয়েকটা স্তোক দেবে, মিথ্যে বলবে। প্রতিবেশীর ছেলে আইজাত, ওকে বিব্রত করা ঠিক না।

    আলমাসের অদম্য ইচ্ছে হয় জানার, আইজাত ফোনটা সেই বৃষ্টির রাতেই করেছিলো কিনা। করা হয়না।
  • Tim | 12.133.51.136 | ২৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৩:৩২584740
  • এইভাবে একদিন সত্যিই শীত একেবারে চলে যায়। বরফের কাদা ক্রমাগত সাফ হতে হতে একেবারে মিলিয়ে গিয়ে শুকনো পথঘাট দাঁত বের করেছে। জলের, বরফের, শীতের ক্ষতচিহ্ন, আদর শরীরে মেখে জেগে উঠে ফুর্তির জোগাড় করে এ শহর। ঐ ক্ষত, শীতের আঁচড় আশির্ব্বাদের মত ফসল ফলাবে স্তেপে।

    ইদানিং আইগেরিমের শরীরটা একেবারেই ভালো নেই। আনারা চলে যাওয়ার পর থেকে আলমাসেরও কোনকিছুই তেমন ভালো লাগেনা। আগে ছুটির দিনগুলোয় কাজ করতো ওরা। খাবারের, ভালোবাসার, সম্পর্কের পাত্রগুলো ধুয়েমুছে, ফের ভরে সাজিয়ে দিত। সারা সপ্তাহের রসদ। এখন সে শক্তি নেই, অন্তত গত কিছুদিন ওদের কারোরই তেমন করে মেতে উঠতে ইচ্ছে করেনি আর। তাই, গুলমিরা বলে একজনকে ডেকেছে আজ আলমাস। ঘর গেরস্থালির যত প্রয়োজনীয় আলফাল কাজ, সেসব করে দেবে গুলমিরা। এই ব্যাপারটায় আলমাসের অদ্ভুৎ লাগে। একদিকে সে ভেবে তৃপ্ত হয়, তার কিছু টাকায় সে কিনে নিচ্ছে শ্রম, ঠিকঠাক দামে। আবার তার অস্বস্তি হয়, সে কিনে নিচ্ছে শ্রম, দাম দিয়ে। এই কেনা না কেনার দ্বন্দ্বে সে গুলমিরাকে অপ্রয়্জনীয় খাতির করে, মেকি কুটুম্বিতার মত সেটা একেক সময় অসহ্য লাগে, বোঝে আলমাস।

    যাই হোক, এক মেঘলা দিনে গুলমিরা আসে, কাজ সারে। তার জিন্স আর ফোন বাথরুমে এক কোনে অপেক্ষা করে, বাড়ি ফিরবার। তার রোগা মজবুত গড়নের দিকে দেখে আলমাস মনকে প্রবোধ দেয়, এই টাকা ওকে ওর পরিবার ছেলেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মোবাইল ফোনের মিনিটের থেকেও বেশি কিছু দেবে। একজন মানুষের সামান্য সুবিধে করে দিয়ে সে খানিক হালকা বোধ করে। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে অপরাধবোধ আর অকর্মণ্যতার গ্লানিও পাক খেতে খেতে ভেসে যায়।

    ওদিকে, যেহেতু আলমাসের প্রকৃতির শোভা দেখার সময় নেই, তাই দিনগুলো রাতগুলো অলক্ষে অন্যরকম হয়ে উঠছে। আকাশে একরকম খুশির মত মেঘ আর রোদ সহাবস্থান করে। পরিষ্কার রাস্তাঘাটে মানুষের থুতু পড়ে, আবার পরিষ্কৃত হয়, এইভাবে চক্রাকারে ধীরে ধীরে একসময় সব আবর্জনা মুছে ঝকঝকে হয়ে থাকে শহর। বিস্তীর্ণ স্তেপে বিশাল ক্রেনগুলো, আরোসব নাম না যানা বিশাল জন্ত্র নড়াচড়া করে, মিস্ত্রীরা সমস্বরে চেঁচিয়ে কাজ করে দিনরাত।

    এইসব ঘটনা, মানুষ আর আসন্ন্ন গ্রীষ্মের তাপমাত্রা আলমাসকে খোঁচায়, ক্রমাগত। এখন, এই সুবিধেজনক আবহাওয়া ও মানসিক অবস্থায় সে মনে মনে সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়ার কথা ভাবে আবার। আইগেরিমের শরীর তো খারাপ। ওকে কি ওর বাবা-মা'র ওখানে দিয়ে এলে হয়না? ওর এক ভাই ও তো আছে, তার কাঠের আসবাব ভালো দামে বিকোয় এখন, এই শহরেই। অভাব কিছুই নেই, এইবারে মানে মানে বেরোলেই হয়।
    "শেষবার মায়ের কবরটা দেখে নেব, চলে যাওয়ার আগে।" ভেবে রাখে আলমাস। কারলাগের কাছেই ছিমছাম গাছের নিচে আনার কবর। "সাদা সেই পাথরের ফলক ছুঁয়ে নিতে হবে।" আইজাতের সাথে সেইদিনের সন্ধের সাক্ষাৎকার মনে করতে করতে ভাবে আলমাস।

    এবছর বৃষ্টিটা একটু বেশিই হবে মনে হয়। জানলায় তখন বৃষ্টির ছাঁট। আইগেরিমের মুখ ঠান্ডা হাওয়ায়, আরামে অল্প হাঁ হয়ে আছে। ঘুমে।
  • | 24.96.171.104 | ২৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:০৯584741
  • তারপর?
  • nina | 79.141.168.137 | ২৭ এপ্রিল ২০১৩ ২০:২৫584742
  • বসে আছি-------
  • Tim | 188.89.100.253 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৮:১৬584744
  • ঘুমে ভারি চোখ খুলেই প্রথমটা আলমাস বুঝতে পারলোনা সে কোথায়। খোঁচা খোঁচা লাগছে সারা গায়ে, ঠান্ডায় হাত পা অসাড়। আবছা মত আলো, সম্ভবত সময়টা ভোর। চোখ আবার বুজে আসে আলমাসের, ঘুমে তলিয়ে যায় বলে সে দেখতে পায়না বিশাল স্তেপের ঢেউগুলো, কাছেই চৌবাচ্চার মত পড়ে থাকা পুকুরটা।

    শীত অনেকদিন চলে গেছে। এখন সারাদিন রোদ থাকে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেশ গরম লাগে কোন কোনদিন। সেই গরমে, হয়ত খানিক ঘেমেই, জেগে উঠলো আলমাস। গতরাত থেকে অনেকবারই এরকম জেগে উঠেছে সে। এখন গায়ের ব্যথাটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আলোয় ভেসে যাচ্ছে সব, সেও। যতদূর চোখ যায়, তার চেয়েও বেশি অবধি ঢেউখেলানো স্তেপ, কোথাও বড়ো ঘাস, সবুজ বা সবজে সোনালী। সামনের পুকুরটা বেশ ছোটই। সেখানে এইমাত্র একটা পাটকিলে পাখি ছোঁ মারলো। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে সে, আইগেরিম এসেছে। তার সরু, হালকা আঙুল খেলা করে যাচ্ছে আলমাসের মাথায়, বুকে পিঠের যেখানে যেখানে যন্ত্রণা চাঙড় হয়ে জমে আছে, সেইগুলো। এত কড়া রোদেও চাঙড়গুলো অটুট, জানো আইগেরিম? আইগেরিম হাসে। মিষ্টি স্বপ্নের মত, আবছায়া অবাস্তব সুন্দরী আইগেরিম।

    টুংটাং করে একটা আবছা আওয়াজ পেয়ে ঘাড়টা তোলে আলমাস। অনেকক্ষণ, প্রায় এক শতাব্দী ওকে অপেক্ষা করিয়ে রেখে তারপর ঘোড়াসমেত একটা মানুষের মুখ ভেসে ওঠে। আরো কিছু খরখরে শব্দ, একটা কুকুরের অস্ফুট ডাক শুনে বোঝা যায়, ভেড়ার পাল এসেছে। ছেলেটি ওরই বয়সী হবে, রূক্ষ ক্ষয়াটে চেহারা, গলায় একটা রুমাল বাঁধা। সাথের কুকুরটা বুড়ো কিন্তু এখনও হম্বিতম্বি বেশ। সে এসে কড়া চোখে আলমাসকে দেখতে থাকে, একটু শুঁকেও যায়। আলমার চোখ বড়ো করে তাকায়, কুকুরটা কি চেনা চেনা? কিন্তু কই, খোঁড়াচ্ছে না তো! ওর পা কি ভালো হয়ে গেল? এই স্তেপ, বরফ জমে ও গলে তৈরী পুকুরের জল, তুলোর মেঘের মত ধুলো আর ভেড়ার পাল --- এসব কি পাভলোদারের?

    কিন্তু এসব ভাবতে গিয়ে অবসন্ন শরীর আবারো বিদ্রোহ করে। ডানহাতটা একবার তুলেই আবার শুয়ে পড়ে আলমাস, খোঁচা খোঁচা ঘাসগুলোয় ওর মুখে আবারো আরাম লাগে, জেগে ওঠার আরাম।
  • Tim | 188.89.100.253 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৮:৪৬584745
  • স্মৃতি, সাধারণত, বেইমান। আলমাস ভাবে। সে নিজের নাম মনে করতে পারে, আবছা আবছা অফিসের কথাও। আইগেরিমকে তুলনায় স্পষ্ট মনে পড়ে, বারবার স্বপ্নে দেখা দিয়ে আইগেরিম নিজেকে স্পষ্টতর রেখেছে। আর কিছু মনে পড়েনা আলমাসের। বাকিসব ভাঙা কাচের টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। সে এমনই ছোট টুকরো, আলমাসের মন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ভাবতে গিয়ে। আর ঘুমোবার বাধাও নেই তেমন। এই কুটীর, ভাঙাচোরা হলেই এখানে আপাতত আশ্রয় পেয়েছে আলমাস। গরীর মেষপালকের সাথে ভাগ করে আধখানা রুটির টুকরো অন্তত জুটে যাচ্ছে রোজ। কোন কোনদিন , কম দামে কেনা আড়ষ্ট মাংসের হালকা ঝোল। আর শস্তার মদ, স্তেপের হাড়কাঁপানো হাওয়া থেকে ওকে পুষ্ট করছে, শরীরে ও মনে জমে থাকা বরফের চাঙড়গুলো গলে আসছে।

    যদিও মনে পড়ছেনা এখনও। আইগেরিম কোথায়, সে দক্ষিণের, প্রা দেশের সীমার কাছে এই স্তেপে কিকরে এলো, মনে পড়েনা। এর মধ্যে একদিন বৃষ্টি এলো। অকাল বৃষ্টি। আকাশ থেকে তীরের মত বৃষ্টি ফোঁটার নেমে আসা দেখে আলমাসের চেনা লাগলো। এই সরলরেখায় নেমে আসা জল, আকাশটা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি...।

    এক একদিন আলমাস আর আলিবেক নামের রাখালটি গল্প করে। সন্ধ্যে সন্ধ্যে মাঠ থেকে ফিরে এসেই দুদ্দাড় খিদে নিয়ে বসে যায় আলিবেক। গোগ্রাসে গিলে, মদে গলা ভিজিয়ে দুজনে গল্প করে। এই মাঠ, আকাশ আর আলিবেকের ভেড়ারা নির্লিপ্ত থাকে সে গল্পে। আলিবেকের মা বাপ কেউ বেঁচে নেই আর। এই ভেড়ার পাল, এই ভাঙা তোবরানো জোড়াতালি কুঁড়ে, ঐ বুড়ো কুকুর, এইই সব। শুনতে শুনতে আলমাস কুকুরটাকে চিনতে পরে, ওর কানের ঝোলা লতিটার যে অংশটার লোম উঠে গেছে, ঐখানটা চেনা লাগে। পেটের কাছটা একটু শিথিল, ঝোলা ঝোলা, ওখানটাও, আর চোখদুটো তো অবশ্যই। আলমাস অল্প বুঝতে পারে আলিবেক কিকরে এই আদিগন্ত মাঠ আর নির্জন জীবনে বেঁচে আছে।

    এক একদিন এরকম হয়, রোজ না। যেভাবে এক একদিন ভোরের দিকে এমনিই ঘুম ভেঙে উঠে বসে আলমাস অবাক হয়ে গলার কাছের কষ্টটা বুঝতে পারে। কতগুলো মুখ মনে পড়ে, সবই মানুষের মুখ। একটা কালো তেলতেলে পাথর, একটা খোঁড়া কুকুর, একটা সেলাইকল। অন্ধকার চোখে নিয়ে বসে থাকা একটা লোক। আর আইগেরিম। খালি মনে হয়, দূরে, বহুদূরে কিছু একটা নিঃশব্দে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সেইসব দিনে আলমাস একা থাকতে পারেনা। আলিবেকের সাথে সেও মাঠে গিয়ে বসে। রোদে পোড়া আলিবেকের মুখ ঘুমে ঢলে পড়ে অল্পক্ষণেই, তারপর একসময় বেইমান স্মৃতিকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে আলমাসও ঘুমোয়।

    কাছেই ভেড়াগুলো একমনে ঘাস খেতে খেতে চরে বেড়ায়। কুকুরটা পোকা বাছার ব্যর্থ চেষ্টা করে, শুয়ে শুয়েই।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৩৭584746
  • এই অনবরত বেড়ে চলা সান্নিধ্যসুখ, এই দিগন্তবিস্তৃত উদোম প্রকৃতির মাঝে পোকার মত লুকিয়ে থাকার স্বস্তি, একদিন শেষ হয়ে আসে। মাঠের ঘাসগুলো রং বদলায়, চড়া রোদে ঝলসাতে থাকে। পায়ে চলা যে রাস্তাটা মাঝে মাঝে জেগে উঠে আবার মিলিয়ে গেছে সেখানে ধুলোর ঝড় ওঠে, পড়ে, বয়ে যায়। সময়ও।

    আলিবেকের তবিল ক্রমশই ক্ষীণ হতে থাকে, যদিও তার বাজখাঁই গানে সুরের ওঠাপড়া খোলতাই হতে থাকে। কুকুরটার বয়স সামান্য কমে এসেছে, যদিও তার খাবারেও টান যেন। এইসব, এবং আরো নানা কিছু, আলমাসকে তাড়িয়ে বের করে দেয়। তখন হাওয়া আরো সতেজ, রোদ শীতের আগে শেষবারের মত দাপট দেখাচ্ছে, পুকুরট শুকিয়ে যাবে না সামান্য জল শীতশেষের জন্য রেখে দেবে বুঝে উঠতে পারছেনা।

    বেরোবার আগের রাতে গল্প ফুরোতে চাইছিলোনা। আলিবেকের গল্প শাখা প্রশাখায় এমন ছড়িয়ে পড়ে যে একসময় খেই হারিয়ে যাচ্ছিলো। তারপর এক সময় কথা ফুরোলোনা বলেই কথা শেষ হলো। রাতে আর ঘুম আসেনি আলমাসের, বোধহয় আলিবেকেরও। সকালে উঠেই বেরিয়েছে আলমাস, সেই পায়ে চলা পথে, যার সরু রেখা আধ ঘন্টাটাক হাঁটলেই হারিয়ে যাবে ঢেউখেলানো স্তেপে। পকেটে অলিবেকের জোর করে বরে দেওয়া দুটো টাকা আর রুটির টুকরো। এখন আলমাস ভাবার অনেক সময় পাবে। ঘন্টা তিনেক চললে একটা নদী আছে সামনে, ইলি নদী। তারপর আরো ঘন্টা দুই না আড়াই চললে চেরিন। এইভাবে একের পর এক নদী পেরিয়ে যেতে যেতে কোথায় পৌঁছবে আলমাস জানেনা। জানেনা বলে ভারি শান্তি পায় সে। গন্তব্যহীনতার সুখ বা রাত জাগার ক্লান্তিতে সে শুয়ে পড়ে ঘাসের ওপর। আজকাল সে ঘুমোলেই একটা স্বপ্ন দেখে। বৃষ্টি পড়ছে বড়ো বড়ো ফোঁটায়। বহুতলের বিশাল জানলার ধারে দাঁড়িয়ে দেখা বৃষ্টি। সামান্য তেরচা হয়ে ফোঁটাগুলো রাজপথে পড়ার আগেই মিলিয়ে যাবে।

    ঘুম ভেঙে আবার পথ চলা শুরু হয়। কিছু দূরে চারটে ঘোড়া চরছে। হালকা বাদামী উজ্জ্বল রঙের শাবক গাঢ় বাদামী মায়ের পাশে ছুটে বেড়াচ্ছে ফূর্তিতে। তার পেটের কাছটা সাদা। আরো দূরে ঘাসের ঢেউ তিনকোনা জ্যমিতির মত হয়ে সামান্য ইতস্তত করেই উঠে গেছে পাহাড়ে। ডানদিকে ইলি নদীর পাড় দেখা যাচ্ছে, সরু সুতোর মত জল, স্রোত প্রায় নেই তবে পাথর প্রচুর।

    জলের ধারে বসে আলমাস রুটি বার করে। ইস, কুকুরটা এখন কাছে থাকলে ভালো হত। পাভলোদারের খোঁড়া কুকুরটার নাম যদিও এখনও মনে পড়েনা তার। খিদে বেইমান নয়, স্মৃতির মত। খিদে পোষা কুকুরের মতই, সুখে দুঃখে পায়ের কাছে বসে থাকে হাজার লাথিঝ্যাঁটা খেয়েও।

    নদীর জল ঠান্ডা, কাদা পেরিয়ে তবে তার নাগাল পেতে হয়। নদী পেরোলে আরো মাঠ, আবারো পায়ে চলা পথ। তারপর গাড়ি রাস্তা। পেটে খিদের জ্বালা এখন কম, নদীর জল যদিও মোচড় দিচ্ছে সেখানে। ঘুম আসছেনা এখন। ওদিকে আইগেরিম ধারে কাছে নেই, আলিবেকও। কানের কাছে লোম উঠে যাওয়া কুকুরটাও নেই।

    এমন সময় ঘড় ঘড় করে একটা শব্দ শোনা যায়, আবছা থেকে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
  • | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৪৭584747
  • শুরু থেকে আবার পড়ত্রে হল, ভুলে গেছিলাম।
    লিখে যাও।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৫৮584748
  • এখানটায় ঘাস নেই প্রায়। ধূসর কাঁকুড়ে মাটিতে থোকা থোকা ফুলের মত কাঁটাগাছ জেগে আছে। তার মধ্যে দিয়ে আসছে একটা গাধায় টানা গাড়ি। ফিকে লাল উলের টুপি পরা একটা বাচ্চা লাগাম ধরে। বোঝাই যাচ্ছে বড়ো রাস্তা থেকে নেমে এলো এরা এখুনি। তবু, এতক্ষণ টানা মানুষের মুখ না দেখে হাঁফিয়ে ওঠা আলমাস অবাক হয়ে দাঁড়ায়। সশব্দে গাড়িট ওকে পেরিয়ে চলে যাওয়ার সময় বাচ্চাটি হাসে, হাত তুলতে গিয়েও গাড়ি বেসামাল হয়ে যাবে ভয়ে তোলে না। গাড়িটা মরচেপড়া পাতলা লোহার পাতবসানো, এখানে ওখানে সরু সরু ফাটল। তবে গাধাটা দুরস্ত, চালকের মতই। চাকাদুটো পুরোনো রদ্দি গাড়ি থেকে খুলে লাগানোয় সব মিলিয়ে বেশ জাঁকজমক হয়েছে।

    গাড়ি চলে যাওয়ার পরে আলমাসের খেয়াল হয়, ধুলো উড়ছে খুব। কাশির দমকের মত সময় বেরিয়ে যাচ্ছে, যদিও সময় অফুরান। রোদ পড়ে আসে, ন্যাড়া প্রান্তরে কোন ছায়া যদিও লম্বা হয়না। কি একটা শেষ হয়ে আসছে, আলমাস টের পায়। কি যে সেটা, স্পষ্ট বোঝা যায়না। একটা প্রকান্ড মাটির ঢিবি পেরিয়ে যেতে যেতেও সে তাই অবাক হয়না, এই খোলা মাঠে এই মাটির ঢিবিটা যেমন বিসদৃশ, এই মেঠো রাস্তায় সেও তেমনটিই, সম্ভবত।

    দূর থেকে বাঁধানো রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো, যদিও স্তেপের সাথে পরিচিত যেকেউ জানবে তাতে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। একে তো সে রাস্তা যতটা কাছে দেখাচ্ছে ততটাও নয়। দ্বিতীয়তঃ সে রাস্তায় কয়েক ঘন্টায় একটা করে গাড়ি চলে।

    তবু, পাকা রাস্তা, সরকারী হাইওয়ে। এইসব রাস্তার নাম হয়, সেসব মনে না রাখলে তোমারই ক্ষতি, বুঝলে আইগেরিম? গাড়ি নিয়ে কিছুতেই পৌঁছতে পারবেনা। কুকুরের নাম মনে রেখে কি হবে? কুকুর যে খোঁড়া সেই খোঁড়াই থাকবে। যার কানের লোম উঠে গেছে সেও থোড়াই জলুস ফিরে পাবে নাম মনে রাখলে। কিন্তু রাস্তার কথা আলাদা। এইসব ভেবে বিড়বিড় করতে করতে আলমাস রাস্তার ধার ধরে হাঁটে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া দেয়, সে হাওয়ায় উড়ন্ত কিছু ধুলিকণা ওর পায়ে পায়ে চলে, পুরোনো, ছিঁড়ে আসা একসময় চড়াদামে কেনা ট্রাউজারের খাঁজেখোঁজে ঢুকে লুকিয়ে পড়ে। আলমাস টের পায়না।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১২:২২584749
  • এইভাবে অনেকক্ষণ কাটে, বা হয়ত বা কাটেনা, হয়ত সময় এখনও সেই মাখনের মত দলা হয়ে থাকা আকাশে আটকে আছে। হয়ত আইগেরিম এখনও বিছানায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে। ধুলোর ওঠাপড়া, সময়ের, গুলিয়ে যাওয়া সময়ের হিসেব আর আবারো অনেকক্ষণের খিদে সঙ্গী করে আলমাস হাঁটে। রাস্তার পাশের চেহারা তখন অন্যরকম। গেরুয়া আর মেটেরং বেড়ে উঠছে আস্তে আস্তে, অজান্তেই। চেরিন নদী আসছে সামনে। আরেকটু পরেই গিরিখাত দেখা যাবে, মেটে, খয়রি , লাল মূর্তির মত সারি সারি দেখা যাবে ঢালা উপত্যকায়। প্লেন থেকে আলমাস দেখেছে এই গিরিখাত। এখন যত বিশালই লাগুক না কেন, আসলে বিস্তীর্ণ স্তেপের অনুপাতে এর আয়তন খুবই কম। যেমন ঘাসের ডগার পোকাটার থেকে আলমাস বড়ো হলেও চেরিন নদীর কাছে সে একটা ছোট গাছের গুঁড়ি বই কিছু নয়, সেরকম।

    রাস্তটা একটু উঁচু হয়েছে দেখে আলমাস দাঁড়ায়। পকেট থেকে একটা ছোট রুটির টুকরো বের করে মুখে দেয়, কিন্তু খেতে পারেনা। গলা শুকিয়ে কাঠ। ফের পকেটেই টুকরোটা ভরে ফেলে একটু জিরিয়ে নেয়। আর তখনই দেখা যায় পেছনে, দূরে একটা লালচে ধুলোর ঝড় উঠেছে।

    গাড়িটা অল্পক্ষণেই আলমাসের কাছে এসে পড়ে। একসময় কত অনায়াসে এইসব গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাতায়াত করেছে আলমাস। হয়ত মিনিট কুড়ির হাঁটাপথ, গাড়িতে গেছে। বাড়িয়ে দেওয়া ডানহাতে নোট, খিদের ওষুধ।

    ফিরে হাঁটতেই শুরু করেছিলো আলমাস। কিন্তু গাড়িটা ওর পাশে এসে আস্ত হয়ে গেল। ধুলো। ড্রাইভার জানলার কাচ নামিয়েছে।
    কোথায় যাবেন?
    -----!?

    প্রশ্নের উত্তরে আলমাস ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকে। এ কেমন বেইমানি, ভগবান? আবারো একই প্রশ্ন করতে গিয়ে ড্রাইভার থমকে গিয়ে তড়িঘড়ি নেমে আসে। পথের ওপর জমে থাকা ধুলোর মেঘটা ক্রমশ শান্ত হয়ে নেমে আসছে। ড্রাইভার ততক্ষণে এসে জড়িয়ে ধরেছে আলমাসকে। যদিও এর নাম আলমাসের মনে নেই, তবু এই সময় হঠাৎ পাভলোদারের খোঁড়া কুকুরটার নাম মনে পড়ে যায় তার। সুমকা...সুমকা নামে ডাকতো ওরা ঐ কুকুরটাকে। আহা, আজ ওর নাম মনে এলো, অন্তত এবার ওর পা ঠিক করে দাও ঈশ্বর। আর যদি, যদি মরেই গিয়ে থাকে এতদিনে , ওর কবরের মাটিতে দু ফোঁটা বৃষ্টি দিও। একটু জল, আর কিছু নয়, এই ভেবে চোখ পিটপিট করে আলমাসের। তেষ্টায় না অপরিচিত এই মানুষের নাম হারিয়ে ফেলার জন্য, বুঝতে পারেনা।
  • ranjan roy | 132.176.223.47 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৩২584750
  • টিম মূলতঃ খুব ভালো কবি। তাই এইরকম মায়বী গদ্য লিখতে পারে, এই রকম অনুবাদ করতে পারে।
    দময়ন্তীর মত শুরু থেকে পড়লাম।
    কিন্তু বইটার নাম কী? আর লেখক?
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৪৭584751
  • অস্বস্তি নিয়ে, সামান্য হতচকিত আলমাস গাড়িত এসে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে। ড্রাইভারের আসনে বসা মানুষটি তারই বয়সী হবে। আলিবেকের পর প্রায় সমবয়সী আরো একটি ছেলে, যদিও অনেক তফাৎ। এ চৌকস ফূর্তিবাজ ছেলে, তার গাড়ি ধুলো উড়িয়ে ছোটে, সেই ধুলো পাক খেয়ে আসেপাশের সব নস্যাৎ করে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেটি কথা বলে চমৎকার। কলেজের কথা বলে, নাম বলে অনেক, আলমাসের কিছুই মনে পড়েনা তেমন। ভাসা ভাসা কয়েকটা মুখ, সেগুলো হলেও হতে পারে এইসব নামের মালিকেরা, আলমাস অপ্রস্তুত হয়ে ভাবে। চেরিন নদীর ওপরের সরু ব্রিজটা পেরিয়ে যায় ওরা, আর কিছুক্ষণের জন্য ইতস্তত করে, অবশেষে দানিয়ার প্রশ্নটা করেই ফেলে।
    -আইগেরিম কেমন আছে?
    -আইগেরিম?
    বলতে বলতেই থতমত খেয়ে যায় আলমাস। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। এই চটপটে হাসিখুশি মানুষটাকে আরো চেনা লাগতে থাকে ওর। ভারি দিলদার, এর মধ্যেই ওকে সিগারেট দিতে চেয়েছে। জল দিয়েছে। আহা এই জলের খানিকটাও যদি ....ভেবে আনমনা হয়েছিলো আলমাস তখন। বাইরে রোদ পড়ে এসেছে, বেড়েছে হাওয়ার তোড়জোড়। সেই হাওয়া কেটে সাঁ সাঁ করে এগোচ্ছিলো ওদের গাড়ি।
    -আইগেরিম ভালোই আছে। মানে ভালোই তো। সেলাইকলটা বিগড়ে গেল, এদিকে বাচ্চাটা হবে আর কদিন পরেই। মায়ের পা ফুলেছে, জানোতো, হাঁটতে কষ্ট হয়। আইগেরিম ডাক্তার নিয়ে গেছিলো একদিন, কাজ হয়নি।

    এইসব বলতে বলতে হঠাৎ আরো খেই হারিয়ে ফেলে অপ্রস্তুত আলমাস লক্ষ করে, গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছোট জনপদ, ততোধিক ছোট পেট্রলপাম্প। দানিয়ার নেমে গিয়ে পাম্পের লোক খুঁজতে যায়। গাড়ির স্টিয়ারিং এ তার লাইসেন্স একটা সুদৃশ্য ফিতে দিয়ে ঝোলনো।

    আলমাস ওর নামটা পড়ে, কি একটা চাপা অস্বস্তি, স্মৃতিহীনতার । দানিয়ার ফিরে আসে, গাড়ি চলতে থাকে।

    - আমি বর্ডারের কাছে যাচ্ছি কাজে। তুইও আসবি নাকি? বলে আশান্বিত দানিয়ার তাকায়।
    -হ্যাঁ, তা, বেশ তো
    বলে অবাক হয় আলমাস। সে যেন কোথায় একটা যাচ্ছিলো। রাস্তাটা, পাকা চওড়া রাস্তাটা এসে সব গুলিয়ে দিচ্ছে। খোঁড়া সুমকার কথা ভাবা যেত এখন একটু নিরিবিলিতে। আর তো কিছুই মনে নেই, আইগেরিম আর সুমকা। এদের নিয়ে ঈরো একটু সময় চেরিন নদীর ধারে বসা যেত। কিন্তু সেসব কখনই পেরিয়ে গেছে। আবারো পথের দুধারে সবুজের নানা রকমফের।
    পকেটের রুটির টুকরো নাড়াচাড়া করে আলমাস। দানিয়ার নামের এই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে তার ভারি আরাম হয়, অথচ একটা অস্বস্তি কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে।
    আর কিছুক্ষণ পরেই সরাই আসবে একটা। এদিকটা মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম দেখা যাচ্ছে।
  • | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:২৯584752
  • এটা টিমি লিখছে রঞ্জনদা। কোনো অনুবাদ নয়। অনেকদিন আগে শুরু করে মাঝপথে থামিয়ে রেখেছিল।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:০৫584753
  • পাকা রাস্তার পাশেই মেঠো পথ। এখান দিয়েই পশু মানুষ ও গাড়ি গ্রামে ঢোকে। গাঢ় খয়রি রঙ করা টিন বা টালির চাল দেওয়া বাড়ি সব। একটা বড়ো টানা হলঘর, চালে হালকা হলদেটে খ্ড় বিছোনো। গ্রামটা রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছিলো, খুবই ছোট, সীমানা ছাড়ালেই ঢালু হয়ে ক্রমশ উঠে যাওয়া সবুজ পাহাড়। সেই ঢালে ইতস্তত ছোট ছোট ঘর, দমকা ঝড়ের থেকে চটজলদি আড়াল খোঁজার জন্য বানিয়ে রাখা। ঐ ঢালে ভেড়া আর ছাগলের পাল চরছিলো। এখন এই পড়ন্ত বিকেলে তারা ফিরছে।

    মাত্র এক রাতের জন্য ওরা থাকবে, তবু দানিয়ার বেশ বড়ো একবোতল মদ কিনলো। সঙ্গে তাওয়ায় সেঁকা মোটা লাভাশ, আর মাংসের সুপ। একটু খেয়েই গা গুলিয়ে উঠছিলো আলমাসের। অনেকদিন পরে এইসব রান্না করা খাবার, তাদের সুগন্ধ, স্বাদ, মাথার মধ্যে একটা অস্ফুট যন্ত্রণা -- সব মিলিয়ে অসুস্থ লাগছিলো। একসময় এই জনপদ দিয়ে চেরিনের একটা সরু শাখা বইতো। এখন সেই শুখা নদীখাত এলিয়ে পড়ে আছে, তার গায়ে হলদে দাঁতের মত জলের দাগ, ফাটল। আলমাসের শীত করছিলো। গায়ের জামা ছিঁড়ে এসেছে, ময়লাও বটে। এসব দেখে দানিয়ার ওর ব্যাগ থেকে একজোড়া জামা প্যান্ট দিলো। পরিষ্কার সুন্দর পোষাক। বাইরে তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত। ঝিঁঝিঁর ডাক, অনেকক্ষণ কান পেতে থাকলে বড়োজোর নিচে রান্নাঘর থেকে বাসনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একবার আজানের সুর ভেসে এসেছিলো ছোট মসজিদটা থেকে।

    শোবার আগে অনেকক্ষণ মদ খেল ওরা। গলা পুড়ে যাচ্ছে, শীতভাব একটু একটু করে কমে আসছে আলমাসের। নিজের জামার দিকে তাকালো আলমাস। ঘুমের পোষাক। তার নাগরিক অতীত ফিরে আসছে ধীরে। কি খেতে হয়, কি নেই, কোথায় ঘুমোতে হয়, কিভাবে, সেসব স্মৃতি। বেইমান স্মৃতি যদিও বলে দিচ্ছেনা দানিয়ার কে।
    - কতদিন বেরিয়েছিস তুই? কোথায় যাচ্ছিলি?
    এ প্রশ্নের উত্তরে হাসলো আলমাস। এই প্রথম সহজ, স্বাভাবিক, অপ্রস্তুত না হওয়া হাসি।
    -ঘুমের ওষুধ আছে? মাথাটা...

    রাত নেমে এলে ছোট জনপদ আরো ছোট হয়ে যায়। সরাইয়ের পাশে জঞ্জালের স্তুপে যেসব কুকুরেরা ছুটে বেড়াচ্ছিলো, তারা ঠান্ডা হাওয়ার দাপট থেকে বাঁচতে কোন না কোন খোঁদলে গিয়ে লুকিয়েছে। এখন একমাত্র অপরিচিত পথ হারিয়ে ফেলা মাতালই ওদের বের করে আনতে পারবে।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:৪৮584755
  • শুয়ে ঘুম আসেনা দুজনেরই। মদটা বেশ ভালো ছিলো যদিও। দিনটা কি ভালো গেল? কোথাও একটা যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলো সকালে। সেই ছেলেটা, গাধার গাড়ির ছুটে যাওয়া, দানিয়ার। আসছেনা, কিছুতেই মনে আসছেনা এই ছেলেটা কে। কোন ছেলেটা আলমাস? গাধার গাড়ি ছুটিয়ে যে বেরিয়ে গেল? লাল উলের টুপি?

    ছোট জানলায় শিক বসানো, সেখান দিয়ে কুচ্ছিত আকারের চাঁদ দেখা যাচ্ছে। শিকগুলো যেন এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে চলে গেছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তুষারে ছেয়ে যাওয়া লেকটা মনে পড়লো আলমাসের। এইরকম একটা সরাই, যেখানে রক্তের মত, স্বাদু বীটের ঝোল আর রুটি খেয়েছিলো একদিন। সেদিন আইগেরিমকে বড়ো সুন্দর লাগছিলো। আনারার সেলাইকল তখনও চলছিলো। নামটা হঠৎ ই মনে আসায় অস্থির হলো আলমাস। নিজের জামা হাতড়ে দেখলো । নাহ, এই জামায় সেলাইয়ের দাগ বোঝা যায়না। শরীরে সেলাইয়ের দাগ হলে এভাবে কি মুছে যেত? সহজে?

    আনারার সেলাইকল আজ অনেকদিন বন্ধ। কারাগান্ডার শুনশান কবরে এখন আনারা শুয়ে আছে। সবই মনে পড়লো আলমাসের একে একে। স্মৃতিরা ফিরে আসছে। দ্রুত। আনারার কবরটা ওদের বাড়ির থেকে বেশি দূরে না। ওখানে জলের অভাব নেই, ছায়াও প্রচুর। এই রাতে নিশ্চই সেখানে গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে চাঁদের আলো পড়েছে।

    এই ভেবে আলমাস জানলার দিকে তাকাতেই দেখলো ততক্ষণে চাঁদটা অনেকটা সরে গেছে। শিকগুলো বাঁচিয়ে এবার পিছলে বেরিয়ে যাবে সেটা।

    নিচে একটা কুকুর ডেকে উঠলো। হয়ত কেউ যাচ্ছে। আলমাস দানিয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘুমোচ্ছে। এই মুখ, ঐ চোখা নাক.... এ বড়ো চেনা তার। এই শ্বাসপ্রশ্বাসের ওঠাপড়াও তার চেনা। কুকুরটা আবার ডেকে উঠলো। সুমকা এসেছে কি? দেখ আলমাস, সুমকাকে নিয়ে আইগেরিম তোমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। চাঁদটা কখন পিছলে বেরিয়ে গেছে আলমাস, চলো আমরা এই সরাই ছেড়ে বেরোই।

    এক লাফে ছিটকে উঠলো দানিয়ার। তার হাতের ঝটকায় গড়িয়ে পড়েছে আলমাস। আঙুলগুলো ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। দানিয়ার কাশতে কাশতে হাঁটু গেড়ে বসেছে মেঝেতে। একটু আগেই ঐ গলায় আলমাসের অপুষ্ট ক্ষয়াটে আঙুলগুলো চেপে বসেছিলো। হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে দানিয়ার মদের খালি বোতলটাই তুলে ধরে। তরপর অবাক হয়ে দেখতে থকে আলমাসকে। সে মেঝেতে গুটিয়ে পড়ে আছে এখন। তার পিঠটা ফুলে ফুলে উঠছে।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:১১584756
  • প্রায়ান্ধকার ঘর। বাইরে হালকা আলো, ক্ষতবিক্ষত চাঁদের। এর মধ্যে দুজন পুরোনো বন্ধু পা ঝুলিয়ে বসে থাকে। বন্ধুত্বটা অতীত অবশ্য, এখন শুধু পরিচয়ের স্মৃতি। অনেক অনেকক্ষণ পর পর একটা করে কথা ফোটে, অন্ধকারে। কখনও উত্তরে আরো কোন অস্ফুট শব্দ, কখনও তাও নয়। জেগে উঠে যে কুকুরটা ডাকছিলো, সে এখন শান্ত হয়ে ঘুমিয়েছে। ঘরের হাল্কা অন্ধকারের বাইরেই, জানলার নাগালে গাঢ় অন্ধকার।

    দানিয়ার ওর গল্প বলছিলো। শিমকেন্তের গল্প, আরো দক্ষিণে অন্য দেশ ঘুরে আসার গল্প। এটা সেটা ব্যবসা, চাকরি। এদুয়ার ও দুয়ার ঘুরে কিছু উঞ্ছবৃত্তি এ কয়বছরে সে কম করেনি।

    কিন্তু এসব কথা কানে ঢুকছিলো না আলমাসের। বাইরে আস্তে আস্তে অন্ধকার ফিকে হতে শুরু করেছে। আরো একটা রাত, আরো একটা সকাল। এখুনি বেরিয়ে পড়তে হবে। অথচ দানিয়ার ঘুমোতে চায়। অনেকক্ষণ বকবক করে ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়েছে।

    আলমাস চিন্তায় বুঁদ হয়ে বসে থাকে। এই দানিয়ারের সাথে সে একদিন পৃথিবী দেখবে ভেবেছিলো। আর আজ এক রাতের জন্য পাশেই শুয়ে তাকে ভালো লাগছেনা। এসবই ঘুমের দোষ, ভাবলো সে। ঘুমোলে স্বপ্ন দেখতাম, বড়ো বড়ো জলের ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছে জানলার কাচ। নানা রেখায় জেগে উঠছে ফিকে সরু ধারা, এতই আবছা যেন ছুঁলেই মিলিয়ে যাবে। সেই স্বপ্নে আইগেরিম এসে কথা বলতো। ওদের খবর আলমাস এখনও মনে করতে পারেনি। ওদের, ঠিক ঠিক বললে আলমাস? একাধিক মানুষের কথা বললে যেন?
    উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়না। এর জন্যই ঘুমের দরকার ছিলো...যে ঘুমে ভিজে গিয়ে আরামে অসাড় ঐ দানিয়ার।
  • Tim | 188.89.8.195 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:৫৬584757
  • নরম রোদে আরাম করে হাঁটছিলো আলমাস। আহ, বড়ো শান্তি এখন। গ্রামটা এখনও দেখা যাচ্ছে, দূরে। একটা বাড়ির চিমনি থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলী। এসবই পাহাড়ের মাথা থেকে দেখছিলো আলমাস। দানিয়ার নিশ্চই এখনও ওঠেনি। থাক, আরো ঘুমোক। আবার হাঁটা শুরু করলো আলমাস, আসবার আগে একটা চিঠিতে সে সব কথা লিখে আসতে চেয়েছিলো। দানিয়ারের কাছেই প্যাড থাকে, কলম। কিন্তু কিছুই লিখতে পারেনি সে, অনেকক্ষণ। শেষে, নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবেই সে আলিবেকের কথা লিখে এসেছে। তার লোম ওঠা কুকুরটার কথাও লিখেছে কি? মনে পড়লোনা। আরো কিছু নিতান্তই দরকারী কথা ছিলো। সেসব লিখেছে কিনা তাও মনে নেই আলমাসের। এই চিঠি যে পৌঁছবেই এমন কথা বলা যায়্না। দুনিয়ার সব কথা, যেখানে পৌঁছবার ক্থা, পৌঁছয়?

    আন্দাজে পাহাড় পেরিয়ে পশ্চিমের দিকে যেতে চাইছিলো আলমাস। গাড়ি রাস্তা থেকে দূরে। কেজানে দানিয়ার যা খ্যাপা, হয়ত বা ধাওয়া করে এলো। এদিকটায় তেমন কোন জনপদ নেই, সারাদিন হাঁটলে ঘন পাইনের বন পাবে বিকেলের দিকে। সে বনের ওধারে কোলসাই লেক। ওখানে পাহাড়ী গ্রাম আছে একটা। এইসব টুকিটাকি কাল রাতে সে জেনেছিলো খাওয়ার টেবিলে। দানিয়ার কিছু কিছু খবর রাখে, সরাইয়ের অন্য লোকেরাও জানে।

    স্মৃতি বেইমানী করে ঠিকই, তবু তা কাজের জিনিস। বাড়ির কথা মনে পড়ে, বিলাসবহুল ঐ বহুতল, যার খোপে খোপে বাসা বেঁধেছে মানুষ। পাশেই বিরাট খাঁখাঁ অঞ্চলটাও নির্ঘাৎ এতদিনে লাফিয়ে লাফিয়ে কংক্রিট হয়ে গেছে। নিচের বাস স্ট্যান্ড থেকে কি অপূর্বই না লাগে! ছোট হতে হতে বিন্দুর মত অয়ে যাওয়া জানলাগুলো, আলো জ্বলছে তারার মত। সেখানেও কি কেউ দাঁড়িয়ে থাকে মাঝরাতে? বৃষ্টির কথা ভাবে? এইভাবে একদিন আইগেরিমের কথা মনে পড়ে যাবে, ভাবে আলমাস। খুব কি আর দেরি হয়ে যাবে? এইতো খোঁড়া কুকুরটার নাম মনে পড়লো। পড়লোই তো, তবে?

    এইসব চিন্তা এলে আলমাস আরো জোরে পা চালায়। দূরে, আরো দূরে সরে যেতে হবে তাকে। প্রশ্নগুলোর উত্তর যতদিন না মনে পড়ে ততদিন আরো আরো দূরে সরে যেতে হবে দ্রুত।

    এভাবেই একটা ছোট টিলা পেরিয়ে দূরে ঘন সবুজ বন দেখতে পাওয়া যায়। আরো ঘন্টা দুই হেঁটে গেলে ঐ জঙ্গলের ধারে পৌঁছবে।

    কালচে সবুজ জঙ্গলটা বোরোভয় লেকের ধারের জায়গাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। বা পুবের সেমেই শহরকে। আলমাস জোরে হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারে, তার শরীর ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে আসছে। চোখের সামনেই হঠাৎ একবার ছবিটা চলকে ওঠায় সে থেমে পড়ে। চারিদিকে ধূ ধূ মাঠ, বড়ো বুকসমান উঁচু ঘাস কোথাও কোথাও।

    ডানদিকে খানিক দূরে একটা মাটির ঢিবি। এরকম ইতস্তত ঢিবি ছড়িয়ে আছে এই অঞ্চলে। পুরোনো কবর এগুলো, সে অনেককাল আগের কথা। ঝুরো মাটির স্তুপ এখন, অনেকগুলোই সামান্য খোঁড়া। চোরেদের কাজ।

    আজ রাতটা এই মাটির চাদরের নিচেই ঘুমোবে আলমাস। ঠান্ডায় মরে যাওয়ার চাইতে এই ভালো। সত্যিই আলমাস?
    মরে যাওয়ার চাইতেও? কিন্তু আর বেশিক্ষণ ভাবার সময় নেই। হু হু করে সন্ধ্যে নেমে আসছে। চাঁদ অবশ্য আজও উঠবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাতড়ে হাতড়ে একটা ছোট ফোকর খুঁজে বের করে সে। এগুলোও চোরেদের কাজ, বেমক্কা গাঁইতি চলেছে এখানে। হাত দিয়ে আলগা মাটি আরো খুঁড়ে খুঁড়ে ফোকরের মুখটা বড়ো করে নিয়ে শরীরটা গলিয়ে দেয় আলমাস। পুরোটা শরীর ঢোকেনা, অতএব আরো খুঁড়তে হয়। বেঁচে থাকতে গেলে খুঁড়তেই হবে। অন্য জীবন, সময়,...মানুষ।

    গর্তটা বেশ মানানসই হয়েছে। সেখানে শুয়ে আলমাসের ওপর মাঠ আর আকাশটা ঝুঁকে আসে। আলো কমে গেছে অনেক্ক্ষণ। হাওয়া দিচ্ছে এলোমেলো, যদিও আলমাসের তাতে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছেনা। শীত আসতে এখনও কিছুদিন বাকি।

    চাঁদটা যখন শেষমেষ উঠলো তখন গর্তে শুয়ে থাকা মানুষটা ঘুমিয়ে পড়েছে।

    ওদিকে অনেক দূরে অন্য কোথাও একটা গাড়ি স্তেপের আনাচে কানাচে কিছু একটা খুঁজছিলো। জ্যোৎস্নায় চরাচর ভেসে যাওয়ার উপক্রম, এমন সময় সে খুঁজে পেলো খোলা মাঠে হা হা দাঁড়িয়ে থাকা কুঁড়েটাকে। কুকুরটার কানের লোমগুলো উঠে গেছে। সে বুড়ো ফুসফুসে যতটা জোর আসে ততটাই উজাড় করে চেঁচিয়ে যাচ্ছিলো।
  • ranjan roy | 132.176.209.200 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:২১584758
  • দময়ন্তী,
    টিমের জন্যে টুপি খুললাম।
    এই লেখা, পরিবেশ ও চরিত্র সৃষ্টি! এর পেছনে যে " সমঝ" (হিন্দি) তাকে কুর্নিশ!!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন