এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মনোরমা বিশ্বাস | 183.2.99.228 | ৩১ মে ২০১২ ০৪:৩৫550552
  • এর আগে দু’বার গিয়েছি জেনেভা। কোথাও তেমন ঘোরা হয়নি এর আগে। ইউএন-এর কাজ সেরেই নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছি। এবার ঠিক করলাম আল্পস না দেখে ফিরব না। এত নামকরা যে পাহাড়, যে পাহাড়কে নিয়ে গান রচিত হয়েছে- তার কাছাকাছি গিয়ে বার-বার ফিরে আসা ঠিক হবে না। আমার এক দাদা আছেন, তাঁকে বললাম, আল্পস পাহাড় দেখতে যাব, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে।

    প্রত্যেকদিন ইউএন থেকে ফিরে দাদাকে জিজ্ঞেস করি, কোনো খবর পেলেন কি না। দাদা বলেন, ‘দিদি কোনো চিন্তা করবেন না, সবকিছু ম্যানেজ হয়ে যাবে।’ আমিও বিশ্বাস করে আমার কাজে নিমগ্ন থাকি। শুক্রবারে কনফারেন্স শেষে জানলাম, দাদা শুধু একটা ইনফরমেশন জোগাড় করতে পেরেছেন, সেটা হল ফ্রান্সে যাওয়া যায় বাসে করে। আমার মন একটু খুঁত-খুঁত করতে লাগল, কারণ আমি চাই ট্রেনে করে যেতে। আমি বই পড়ে জেনেছি, ট্রেনে করে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে-করতে যাওয়া যায়। আমি নিজেই গেলাম সেই টুরিস্ট এজেন্সির অফিসে। ওদের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ট্রেনে করে যেতে হলে ট্রেন স্টেশনে খোঁজ নিতে হবে। সেখান থেকে দৌঁড়ালাম স্টেশনে, গিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে গেছে অফিস, একজন বললেন, ‘সকালে এসো।’ মনটাই খারাপ হয়ে গেল, সকালে এসে খবর নিয়ে, টিকেট কেটে কখন যাব, কখন ফিরব- এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। অরুণদা আর সুনীলদা আমাকে অনুরোধ করছিলেন, এবার যাওয়ার দরকার নেই, পরেরবার আল্পস পাহাড় দেখা যাবে। আমি চুপ। রাতে রুমে ফিরে ইন্টারনেট থেকে দেখি- ফ্রান্সে ওই সময় তুষারপাত হবে। বরফের উপরে ঘুরতে গিয়ে যদি তুষারপাতে পতিত হই, তা হলে সে ঘুরাঘুরি যে মোটেই উপভোগ্য হবে না, তা সহজেই অনুমেয়।

    সকালে দাদা এলেন বেশ দেরি করে। দাদাকে নিয়ে রেল স্টেশনে গেলাম। ইনফরমেশনে খোঁজ করলাম, সুইজারল্যান্ডের ভেতর কোথায়-কোথায় আমি আল্পস পাহাড় দেখতে পারি। সভ্যদেশের ভদ্রলোক খুব যত্নসহকারে ম্যাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোথায়-কোথায় গেলে কী-কী এনজয় করতে পারব এবং সন্ধ্যা নাগাদ জেনেভা ফিরে আসতে পারব। তবে ভাড়ার টাকা শুনে একটু ভড়কে গেলাম, গরিব দেশের গরিব মেয়ে আমি। এক-এক জনের ১৮০ ফ্রাঁ। দাদা তো যেতে রাজিই হন না। দাদাকে আমি আমেরিকা থেকেই অনুরোধ করেছিলাম, হয় তিনি নিজে যাবেন, অথবা একজন লোক ঠিক করে দেবেন যে আমার গাইড হিসাবে যেতে পারবে। সব খরচ আমার।

    'Alpine' এলাকাটা প্রাচীনকাল থেকেই সমাদৃত। এটা ইউরোপের মাঝখানে অবস্থিত। অবস্থানের কারণেই এর গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে এটা আটটি দেশের মধ্যে অবস্থিত। এই আটটি দেশ হল ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, মোনাকো, ইতালি, সুইজারল্যান্ড এবং Liechtenstein. সিন্ধান্ত হল 'Matterhorn' পাহাড়ে যাব। এই 'Matterhorn' পাহাড়টি সুইস আল্পস বা সমস্ত আল্পসের মধ্যে একটা বিমূর্ত প্রতীক। এখানেই বেশিসংখ্যক টুরিস্ট আরোহণ করে। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৪,৪৭৮ মিটার বা ১৪,২৯৫ ফুট। এখানে আবহাওয়া দ্রুত, মানে ক্ষণে-ক্ষণে পরিবর্তিত হয়। এই পাহাড় সবচেয়ে বিপজ্জনক। এটাতে প্রথম মানুষ আরোহণ করে ১৮৬৫ সালে, এই সময় থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ৫০০ জন আল্পিনিস্ট (Alpinist) এই পাহাড়ের উপর মৃত্যুবরণ করেছে।

    'Zermatt' একটা ছোট ভিলেজ। এর চতুর্দিকে পাহাড়। হোটেল ব্যবসা আর রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এদের মূল জীবিকা। শেষ পর্যন্ত ৩০০ ডলার দিয়ে 'Zermatt' নামক স্থানের দুটো টিকেট কেটে আমরা ট্রেনে চেপে বসলাম। প্রায় ৪ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। পথের দু’ধারে কখনো লেক, কখনো পাহাড়, কোনো-কোনো পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনা ঝরছে। আমার আনন্দ আর ধরে না! কোনো-কোনো পাহাড়ের উপরে বাড়ি, খুবই আশ্চর্য লাগছিল। এইসব পাহাড় পাথরের। কোনো-কোনো বাড়ির ছাদও দেখলাম পাথর দিয়ে তৈরি। ট্রেন কখনো পাহাড়ের ভিতর সুড়ঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন অন্ধকার দু’ধার। কি যে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য! না দেখলে বোঝা যায় না। তা ছাড়া আমি তো কবি-সাহিত্যিক নই, তাই কলমের আগায় সে দৃশ্য, সে সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারছি না। আকাশে সাদা-সাদা মেঘের সমাহার, সেগুলোও অপরূপ দেখাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, উন্নত দেশের আকাশ, মেঘ সব কিছু যেন উন্নত মানের।

    'Zermatt' পৌঁছে ইনফরমেশনে খোঁজ নিয়ে জানলাম, উপরে ট্রেনে করে উঠতে ৮০ ডলার করে, আর রোপে করে ১৯০ করে দিতে হবে। আবার এই দাম শুনে আমরা আমতা-আমতা করতে লাগলাম। এত দূরে এসে টাকার জন্য ফিরে যাব? মেয়েটা আমায় সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল, আমরা যদি উপরে না উঠি, তা হলে এই ভিলেজে কী-কী দেখতে পাব। তখনও ট্রেন আসতে ৪৫ মিনিট বাকি, আমরা এদিক-ওদিক ঘুরলাম। সবই সুন্দর। এই সুন্দর দৃশ্যের কথা আমি মনে হয় ভুলব না। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পাহাড়, পাহাড়ের সাথেই সাদা-সাদা মেঘ, মেঘগুলো আবার আকাশের সাথে মিশে গেছে। তার মানে পাহাড়গুলো আকাশের সাথে মিশে গেছে।

    আমার ভিডিও ক্যামেরা ওপেন করে দেখি কোনো স্পেস নেই। তাই ভিডিও করতে পারলাম না। ছোট ছেলে সাথে থাকলে সে ঠিক করে দিতে পারত, আমি চেষ্টা করলাম, পারলাম না, অগত্যা আমার ছোট ক্যামেরায় যেটুকু পারলাম, সেটুকুই ক্যামেরাবন্দি করলাম। এর পর ট্রেনে করে উপরে ওঠা শুরু করলাম, সে এক অন্য রকম রূপ! সবাই দেখলাম উত্তেজনা বোধ করছে, সবাই তাদের বড়-বড় ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। আমেরিকায় নিউ হ্যামশায়ারে একটা উঁচু পাহাড়ে আমি উঠেছিলাম। সেই পাহাড়গুলো ছিল গাছ দিয়ে ঢাকা, আর এই পাহাড়গুলো বরফ দিয়ে ঢাকা।

    বিশাল এলাকা জুড়ে, বিশাল-বিশাল পাহাড়। মেঘেরা পাহাড় ছুঁয়ে আছে, আর পাহাড় ছুঁয়ে আছে আকাশ। পাহাড়, মেঘ, আকাশ একাকার। নীচের দিকে কোনো-কোনো পাহাড়ের গায়ে ঝরনা, উপরে ওঠার পর আর ঝরনা দেখিনি। সাদা-সাদা, পবিত্র সাদা সর্বত্রই। পৃথিবীর এত সৌন্দর্য এবং সেই সৌন্দর্য উপভোগ্য করার এত প্রয়াস! মনে চাইছিল বরফের উপর শুয়ে থাকি। খানিক্ষণ শুয়ে ছিলামই। আমি জানতাম ওখানে এমন ঠাণ্ডা, তাই আমি ঠাণ্ডার সব কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম, একটুও ঠাণ্ডা লাগছিল না। অন্য টুরিস্টরা খুশিতে উল্লাস প্রকাশ করছিল, উল্লাস প্রকাশ করার মতোই বিষয়।

    শুনেছি, মুনী-ঋষিরা এই রকম বরফের পাহাড়ের উপর বসে ধ্যান করত। ধ্যান করার মতোই জায়গা! উদার প্রকৃতির কাছে গেলে মনের ভেতর-বাহির উদার হয়ে যায়, পবিত্র হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর শুরু হল তুষারপাত। আমার আনন্দ আর ধরে না। তখন আকাশ, পাহাড় সব একাকার। কোনো কিছু থেকে কোনো কিছু পৃথক করা যাচ্ছিল না। চতুর্দিক সাদা আর সাদা।

    ফিরতি ট্রেন চলে এল, আমাদের ফিরে আসার পালা। মনটা বিরহাক্রান্ত হয়ে গেল। আর কি কখনো আসব ফিরে, হেথায়!
  • ঝিকি | 229.83.85.197 | ৩১ মে ২০১২ ০৭:৫৯550554
  • এতো স্বর্গ!!
  • কাদা | 69.93.210.214 | ৩১ মে ২০১২ ১৩:৩২550555
  • Zermatt থেকে ট্রেনে করে যেখানে সকলে ওঠে সেই জায়গাটার নাম মনে হয় Gornergrat। খাদের (গ্লেসিয়ার) উল্টোদিকেই ম্যাটারহর্ণের সেই জগদ্বিখ্যাত ভিউ। আরও বেশ কিছু পীক দেখা যায় - একটারই নাম মনে আছে মন্টা রোসা। আর একটা নাকি অ্যাভাল্যান্চের জন্যে কুখ্যাত।

    অত ওপর থেকে নীচে বয়ে যাওয়া গ্লেসিয়ারও এক অপূর্ব দৃশ্য।

    সত্যিই ভয়ঙ্কর (লিটারালি) সুন্দর।
  • একক | 24.96.154.211 | ৩১ মে ২০১২ ১৫:১৫550556
  • দারুন তো !
  • fevi | 227.162.209.11 | ৩১ মে ২০১২ ২৩:৩৩550557
  • হুমমমমম। শেষকালে আলপ্স !!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন