এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রবিবাবুর জন্মদিনে

    পাই
    অন্যান্য | ০৮ মে ২০১২ | ১৫৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • ব্ল্যাঙ্ক | 69.93.195.183 | ০৮ মে ২০১২ ২৩:০২547050
  • 'রবীন্দ্রনাথের বংশ পরিচয়' অনুসারে উলুঘ খা জাহান আলির সময় নবদ্বীপের ব্রাহ্মন পির‍্য লি মুসলিম মেয়ে বিয়ে ধর্মান্তরির হন। ডাক নাম হয় পীর আলি। নবাবের অনুগ্রহে জমিদারি পান পীর আলি। পরে ঐ মাংসের ঘটনা ঘটে আর সেই চাপে তার আরো দুই ভাই ধর্ম ত্যাগ করেন।
    কিন্তু বাকি দুই ভাইকে সমাজ এক ঘরে করে দেয়। এরাই হলেন পিরালী বামুন। এর মধ্যে রতিদেব সন্যাস নেন আর সুকদেব গৃহেই থাকেন। তার বাড়ির মেয়েদের বে থা হতো না। শেষে জগন্নাথ কুশারি বে করেন সুকদেবের বোন কে। তার থেকেই কুশারী রা সমাজে পতিত হন। পঞ্চানন কুশারি এই জগন্নাথের প্রপৌত্র।
  • siki | 132.177.190.72 | ০৮ মে ২০১২ ২৩:১১547051
  • হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে।
  • Debashis | 104.97.25.20 | ০৯ মে ২০১২ ০০:৩৮547052
  • যখন রব না আমি মর্ত্যকায়ায়
    তখন স্মরিতে যদি হয় মন
    ডেকো না ডেকো না সভা/ এসো এ ছায়ায়
    যেথা এই চৈত্রের শালবন।

    রবি ঠাকুর বলে গিয়েছিলেন বটে তাঁর ইচ্ছেখানি। কিন্তু আমরা তাঁর কোন ইচ্ছেরই বা মর্যাদা রেখেছি। তার ওপর গত বছর থেকে তাঁর সার্ধশতবর্ষে পদার্পন উপলক্ষ্যে যা উদযাপিত হচ্ছে, তাকে তাঁর শ্রাদ্ধবাসর বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। এবং লিটার‌্যালি শুনলুম আমার বন্ধুদের কাছ থেকে পাড়ার কিছু রাজনৈতিক দাদা "রবি ঠাকুরের শ্রাদ্ধের চাঁদাটা দেবেন" বলে পয়সা আদায়ও করে গিয়েছে। পোষ্টারেও লেখা হয়েছে "কবিগুরুর শ্রাদ্ধশতবর্ষে আমাদের শ্রাদ্ধাঞ্জলি.....", ইত্যাদি।

    নতুন করে তো আর তাঁকে নিয়ে কিছু বলার নেই। কয়েক হাজার বইয়ের কয়েক লক্ষ পাতায় শুধুমাত্র তাঁকে নিয়ে আঁকিবুকি কেটেছে বাঙালী। আজও নতুন করে গবেষণা হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। শুধু তাঁর পাওয়া নোবেল প্রাইজের মেডেলটি কি করে খোয়া গেল সেই গবেষণা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের কাছ থেকে হয়'ত এটাই তাঁর পাওনা ছিল।

    আমাদের সবথেকে বড় দুর্ভাগ্য হল, হয় আমরা তাঁকে ভগবান হিসেবে পুজো করেছি, নতুবা টেনে আমাদের পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রয়াস পেয়েছি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো বা কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলে। আমরা বুঝি নি তাঁর সবথেকে নিকট যে জন, তার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েও বিফল মনোরথ কবির তীব্র মনোকষ্ট। ভুলে গেছি তাঁর আকুতি, "আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল/ শুধাইল না কেহ/ সে তো এল না, সে তো এল না......। তাঁর মতো মানুষের যোগ্য সঙ্গী হওয়া কি মুখের কথা। তাঁর হৃদয়ের কথা শুনবার জন্যও যে গুণের দরকার হয় তা কি সবার মধ্যে থাকতে পারে! তাঁর সেই না বলা বাণীর অপ্রকাশের যন্ত্রণা তাঁকে তাড়িয়ে ফিরেছে সারাটি জীবন। "আমার একটি কথা বাঁশীই জানে/ রইল ভরা বুকের তলা/ কারো কাছে হয়নি বলা/ বলে গেলেম শুধু বাঁশীর কানে কানে"।

    এই যন্ত্রণাতেই কখনও কবি আশ্রয় নিতে চেয়েছেন কাদম্বরী দেবীর কাছে, কখনও বা ওকাম্পোর কাছে। যে এই অপ্রকাশের যন্ত্রণা বুঝতে না পেরেছে সে কি করে জানবে কবির ব্যাকুলতা। সারা পৃথিবী যখন তাঁকে নিয়ে উচ্ছসিত, তখন তো তাঁরও মনে হত, কাছের মানুষটিও উপলব্ধি করুক, ভাগ পাক এই গরবের। বড়ো দুর্ভাগা রবীন্দ্রনাথ। সব দম্পতি তো আর পিয়ের কুরী-মাদাম কুরী হয় না।

    আমরাও তো অতি সাধারণ মানুষ। কি করে বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রোম্যান্টিক মানুষটির চাওয়া। তাই বছরে দু দিন সভা ডাকি তাঁকে স্মরণ করতে। প্রতিদিন নদীর ধারে, শালের বনে, মেঘের ফাঁকে তাঁর ছবি চোখে পড়ে না আমাদের। ক্ষতবিক্ষত করি তাঁর আকুলতার আশ্রয়কে, অবৈধ প্রেমের আখ্যায় ভূষিত করে। তাঁর নিজেকে অপ্রকাশের যন্ত্রণা ধরা পড়ে না আমাদের ক্ষুদ্র হৃদয়বৃত্তিতে। তবুও, তিনি, আমাদের রবীন্দ্রনাথ, প্রতিদিন মেঘলোকের আড়াল থেকে গাইতে থাকেন "আরো আঘাত সইবে আমার/সইবে আমারো/ আরো কঠিন সুরে জীবনতারে ঝংকার"।
  • কুমু | 132.161.249.132 | ০৯ মে ২০১২ ০০:৫৭547053
  • ঘরের মধ্যে বন,
    বনের মধ্যে মন,

    তার ছোঁয়ায় বাঁশী বাজে বনোমাঝে কী মনোমাঝে।

    নানা পূর্ণতা-অপূর্ণতায়,আনন্দে-বিষাদে,মিলনে-বিরহে,তৃষ্ণায়-নিবৃত্তিতে জীবনখানি কাটে,কেটে যায়।আর সেইসব অতৃপ্তি,শূণ্যতারা সৃষ্টি করে চলে এক চিরন্তন হাহা রব,যে দিন ভেসে চলে যায় তার ছায়া ভেসে থাকে শ্রাবণ আকাশতলে,গভীরতম বেদনারও পরিত্রাণ হয়ে আসে রবীন্দ্রগানের অমল আশ্বাস।সে যেন তৃষ্ণার শান্তি শুধু নয়,নিবারণ-দুঃখের অবসান নয়,অতিক্রম-শুশ্রূষা নয়, প্রাণ।
    কবি বলছেন
    "গানের সুরে নিজেকে ভাসিয়ে দিলেম আর সব জিনিসের মূল্য যেন এক মুহূর্ত্তে বদলে গেল।যা অকিঞ্চিৎকর ছিল,তাও অপরূপ হয়ে উঠলো।কেন?কেননা গনের সুরের আলোকে এতক্ষণে সত্যকে দেখলুম,অন্তরে সর্বদা এই গনের দৃষ্টি থাকে না বলেই সত্য তুচ্ছ হয়ে সরে যায়।সত্যের ছোট-বড় সকল রূপই যে অনির্বচনীয় তা আমরা অনুভব করতে পারি নে।"(সাহিত্যের পথে-তথ্যো সত্য)।
  • নিনা | 22.149.39.84 | ০৯ মে ২০১২ ০১:৪৯547054
  • এই টইর প্রত্যেকটি লেখা পড়ে মনে এত আনন্দ হল---কত রকম ভাবে কত সুন্দর ভবে কবিগুরুর কথা স্মরণ করেছে সবাই---
    ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ?
    যতক্ষণ বাঙালী আছে
    ততক্ষণ তো অবশ্যই----
    বাঙালী , বাংআলী থাকবে
    কতক্ষণ---জানিনে !
  • MR | 80.122.243.167 | ০৯ মে ২০১২ ০৫:৪৯547055
  • বিশ্বাস করতে পারছিনা যে রবীন্দ্রসদনের প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে। এতোক্ষণে বুঝলাম কেন তারাটিভিতে সল্টলেকের এতো ad হল। আর সব শিল্পীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কেই একটা টুঁ শব্দটি করলনা। কতবার যে পরিবারের সকলে মিলে গেছি। বন্ধ হয়ে গেলো ভেবে খারাপ লাগছে!
  • PT | 213.110.246.230 | ০৯ মে ২০১২ ১১:০৯547056
  • নব্য ইতিহাসঃ
    রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধি ত্যাগ করে লিখেছিলেন -"এ মণিহার আমায় নাহি সাজে"। রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে সরকারি অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে দিদি উবাচ - আকাশ বাংলা দেখাচ্ছে!!
  • মোহনদাস | 230.227.106.153 | ০৯ মে ২০১২ ১১:২০547057
  • ধুস এ আর নতুন কি !

    ৪২ সালে আমাকে রবি এসে জুস খাইয়ে গাইল "জীবন যখন শুকায়ে যায়" আর বলে কিনা নতুন ইতিহাস !!
  • কল্লোল | 129.226.79.139 | ০৯ মে ২০১২ ১৭:২০547058
  • ব্যাঙ্গালোরে আজিম প্রেমজী ইউনিভার্সিটি রবীন্দ্রনাথের একটা গ্রাফিক জীবনী ছেপেছে। পড়া হয় নি। উল্টে পাল্টে দেখলাম, ভালোই লাগলো।
    অনেকদিন পর আবার সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ দেখলাম।
  • KallolB | 131.241.218.132 | ০৯ মে ২০১২ ১৭:৫৮547060
  • সুনেছেন তো সবাই, তিনোমুল-এর সুদীপ-বাবু বোলেছেন মোক্খূম কথাখান - "গতো প্রোজোন্মো পেয়েছিলো রোবি-বাবু আর বিবেকানন্দ-কে, আর এই প্রোজোন্মো পেয়েছে আমাদের দিদি-কে" - দাদু সুন্তে পেলেন?
  • কল্লোল | 129.226.79.139 | ১০ মে ২০১২ ০৯:৪৯547061
  • স্বাগতম কল্লোলবি। অ্যাতোদিনে গুরুতে একনাম পাওয়া গেছে।
  • আসলি মোহনদাস | 131.241.218.132 | ১০ মে ২০১২ ১০:০১547062
  • অ্যাঃ, ৪২ না রে, ৪৬। মোহনদাস নাম নিলেই কি আর মোহনদাস হয় রে ফাগোল?
  • I | 24.99.132.198 | ১০ মে ২০১২ ২৩:৪৩547063
  • ফেসবুকে জনৈক বাংলাদেশী যুবক রবিঠাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। রবিঠাকুরের গান-টান শুনিয়ে চালাক ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে বিহ্বল করে দিয়ে একের পর এক অসম চুক্তিতে সই করিয়ে নিচ্ছে। যুবক বলেছেন-রবিঠাকুরকে মাফ করা গেল না।

    বৃদ্ধ কতরকমই তো গাল খেয়েছেন। তাই বলে শেষমেশ এই ?
    এর পরের লজিক্যাল স্টেটমেন্ট হল-বাংলাভাষাকে মাফ করা গেল না।

    ভেবেছিলাম লিখব-যুবক , আপনি কি গোলাম আজমের পোলা? তারপরে আর লিখলাম না। ফাউয়া ঝগড়া করতে আর ইচ্ছা করে না।
  • | 24.99.241.188 | ১১ মে ২০১২ ০৬:৫২547064
  • কথা কয়োনাকো অই যুবকের সাথে
  • কুমু | 132.160.159.184 | ১২ মে ২০১২ ১৮:৫০547065
  • ইগনোর মাডি হে ডাগদার।

    এট্টা কথা জিগাই,নীনা একবার অসাধারণ একটা লিং দিয়েছিল,তাতে প্রতিটি রবীন্দ্রগানের ইতিহাস,রচনাকাল,রাগ,তাল,বোধহয় স্বরলিপিও ছিল।আম্রিগাবাসী কোন ডাক্তার প্রচুর উদ্যম,সময় ও শ্রদ্ধা দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ।

    কারো হাতের/মনের কাছে আছে সেটি?
  • পাই | 82.83.81.233 | ১২ মে ২০১২ ২২:৫৫547066
  • সুমিতদার সাইটটা ?
  • নিনা | 78.34.167.250 | ১৩ মে ২০১২ ০২:৩৭547068
  • পাই
    সত্যি তো সুমিতদার সেই সাইটটা একটু খুঁজে দিবি প্লিজ?
  • নিনা | 78.34.167.250 | ১৩ মে ২০১২ ০২:৪০547069
  • কুমু
    সাইটটা সুমিতদার অতি যত্নে তৈরি কারা--সুমিত রায়---যিনি শিলাইদহ র কথা ছবি-সহ লিখেছিলেন।
    আমি একটুও সময় পাচ্ছিনা নইলে আমি তোমায় এক্ষুনি দিতাম।
  • পাই | 82.83.81.233 | ১৩ মে ২০১২ ০৪:১৩547072
  • *সোজা
  • Aniket Pathik | 212.54.54.240 | ১৫ মে ২০১২ ১৭:০৪547073
  • ওর ছোটবেলা মানে ছিল সহজ পাঠ। ও তখনও জানত না হারিয়ে যাওয়া ঠিক কাকে বলে । শুধু পড়ার বই খুলে যখন পড়ত
    "তারাগুলি নিয়ে বাতি,
    জেগেছিল সারারাতি,
    নেমে এল পথ ভুলে,
    বেলফুলে, জুঁইফুলে ..."
    তখন ওর কেমন একটা গা ছমছম করে উঠত। সকালে ইস্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার দু'পাশে নিবিড়ভাবে ফুটে থাকা, ছড়িয়ে থাকা বেল-জুঁই-বকুলের দিকে তাকিয়ে ওর মন কেমন করত। ওর মনে হত রাতের আকাশে তাকিয়ে তো কিচ্ছু বোঝা গেল না, কেউ তো জানতে পারল না যে এই তারাগুলো আর আকাশে ফিরতে পারছে না, কেউ তো ওদের রাস্তা চিনিয়ে দিল না ! (বড় হয়ে ও জেনেছিল কেউ হারিয়ে গেলেই বিশ্বজগতে কিচ্ছু বদলায় না...সদ্য সন্তান হারা বাবার চোখেও চরাচর ধুয়ে যাওয়া জ্যোত্স্নার রূপ ধরা পড়ে আর মনে হয় জগতে কোথাও কিচ্ছু যেন বাকি নেই !) আর একটু বড় হয়ে ও ইচ্ছে করে পথ হারায় ; ছড়ার শিশুর সঙ্গে অনেকদুর চলে যায় একা একা। জঙ্গলের শুঁড়িপথে
    "লম্বা লম্বা কাদের পা যে
    ঝুলছে ডালের মাঝে মাঝে
    মনে হচ্ছে পিঠে আমার
    কে দিল সুড়সুড়ি..."
    গা ছমছম করে বটে তবে ও বুঝতে পারে এ-ও ঠিক হারিয়ে যাওয়া নয়। এই হারাবার শেষে আছে এক সহজ ফিরে আসা।
    কিন্তু যেদিন একটা ছোট্ট মেয়ে বলেছিল 'হারিয়ে গেছি আমি' সেইদিন ও বুঝে গেছিল কাকে বলে হারিয়ে যাওয়া ।
    ************************************
    কবিতা ধরে ধরে এই যে মানে শেখা, নিজের মনে মনে ভাঙ্গা-গড়া, ছোটবেলায় এসব কথা বলতে ও লজ্জা পেত । কিন্তু এখন ও বড়ো হয়ে গেছে, ও জেনে গেছে যে গল্পটা মোটেই ওর একার নয় । ওর-আমার-আপনার যে কারুর ছোটবেলার কথা হয়ে উঠেতে পারে সহজ পাঠ থেকে শিশু ভোলানাথ।তারপর সোনার তরী-বলাকা-মহুয়া-ক্ষণিকা হয়ে ধারাবাহিক যাত্রা । চলত চলতে জীবনের এক কে পর্যায়ে এক একটা চরিত্র বা একটা লাইন এসে হাত ধরা ...এ কোনো নতুন কথা নয় । তাই প্রত্যেক বছর মে মাসে এই রকমের গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা পড়তেও ওর কোনোদিন একঘেয়ে লাগে নি । বরং নিজের মধ্যে একটা তাগিদ জন্মেছে নিজের গল্পগুলো বলে ফেলার । কারণ ও জানে সকলের গল্পগুলো এক ধরণের হয়েও কি ভীষণভাবে আলাদা আলাদা ।
    ****************************
    হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলার পালা চলতেই থাকে। রং পেন্সিল, ঝর্ণা কলম, ছবির বই, সব যেন এই ছিল এই নেই । কিন্তু একবার শিখে ফেলা কবিতারা হারায় না। হারানো জিনিস খুঁজতে খুঁজতে ও নীচুস্বরে বলে যায়
    "যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
    তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছো, তুমি কি বেসেছো ভালো"
    অর্থে মেলে না, বোধে কোথাও যেন মিলে যায় । হারিয়ে ফেলার অভিমান আর খুঁজে দেবার প্রার্থনা একাকার হয়ে যায় সদ্য শেখা কবিতার লাইনে।
    (অনেক পরে ও জেনেছে যে এই কবিতা কত দুর্বল। কিন্তু কে না জানে ছোটবেলায় সব কিছু কত অন্যরকম থাকে !)
    সেই অনুভুতি বহু বছর পরে জীবনে ফিরে এল অন্য একটা কথার মধ্যে। তখন সে বড় হয়ে গেছে, জীবনের নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে তার নিত্য দিনযাপন। একটা অঘাতে সে তখন হতবিশ্বাস। তার জীবনে কেন এমন হল, হিসেব মেলে না কিছুতেই। তবে কি আদর্শের আর বিশ্বাসের কোনো মূল্যই নেই জীবনে ! তবে কি এর পর থেকে অন্যভাবে চলত হবে...........নানারকম ভাবনার মধ্যেই পাতা উল্টেছিল গল্পগুচ্ছ-র। গল্পের নাম দৃষ্টিদান। শেষ পর্যায়ে কুমু তার স্বামী আর তার ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস চুরমার হয়ে যাবার চরম সংকটের মুহুর্তে দাঁড়িয়ে ভাবছে "জগতে আমার প্রার্থনাই কি চূড়ান্ত। তঁর ইচ্ছাই কি শেষ কথা নহে। যে আঘাত পড়িয়াছে সে আমার মাথার উপরেই পড়ুক। কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে যেখানে আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস আছে, সেখানে পড়িতে দিব না। আমি যেমন ছিলাম, তেমন থাকিব।" না, এখানেও সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে মেলে না, কিন্তু বুকের ভার লাঘব হয়। বিশ্বাস অটুত রাখার অঙ্গিকারে আঘাতের কষ্ট সহনীয় হয়ে ওঠে।
    কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। হারাবার তালিকাও বেড়ে চলে। আজকের নিবিড় বন্ধুত্ব কাল উদাসীনতায় হারিয়ে যায় । শুধু তো বন্ধু নয়, বন্ধুত্বের ওপর থেকে বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবার এই তীব্র মনখারাপের অনুভুতি নিয়ে কি করবে সে ভেবে পায় না। এই সময় আলাপ হয়ে যায় বলাই এর সঙ্গে আর ও জেনে যায় "কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পুর্ণ ওর একলারই-ওর চারদিকের লোকের মধ্যে তার কোন সাড়া নেই।" এই বুঝে ফেলা ওকে স্বান্ত্বনা দিল না কি ওকে সারাজীবনের মত একলা করে দিল তা বলা কঠিন।
    গল্প-কবিতা-গানের মধ্যে নিজেকে অহরহ খুঁজে পাওয়ার গল্প আর সকলের মত ওর জীবনেও আসে রোজ। কিন্তু একটা গান বা গল্পের লাইনকে আশ্রয় করে এক একটা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার অনুভুতি যেন ওর একান্ত নিজের মনে হয় ।
    ****************************
    জীবনের পাতা একদিকে উল্টে যায়। ঝক্ঝকে স্বপ্নিল কৈশোর পেরিয়ে জীবন যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হবার দিন। প্রতিটি ব্যর্থতার কাছে নিজের স্বপ্ন জমা দিতে দিতে নিজেকে সম্পুর্ণ অপছন্দ করে ফেলার প্রন্তে এসে পৌছে সে হঠাত শুনতে পায়
    "আকাশ তবু সুনীল থাকে
    মধুর লাগে দিনের আলো
    মরণ এলে হঠাত দেখি
    মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো...
    ওর কানে আসে এক আশ্চর্য্য সহজ কথা "ভালো মন্দ যাহা আসুক, সত্যেরে লও সহজে"। কাজটা ততটা সহজ হয় না ঠিকই কিন্তু ও অনুভব করে হারিয়ে ফেলার এই পথে ও আর একা নয়। একটা কবিতা ওর আগে আগে পথ দেখাচ্ছে, পাশে পাশে চলছে, কানে কানে কথা বলছে।
    (এখন শুনতে পায় এই কবিতা কি অত্যধিক লম্বা, কতো অতিকথনে ভারী। ও ভাবে সত্যি যদি এই লম্বা কবিতা এই কথাগুলো এতবার করে বলে না দিতে, কার কি হত ও জানে না কিন্তু ও কি করে বেঁচে উঠত !)
    অন্ধকার পেরিয়ে যাবার সেই অনন্য অনুভুতি আবার ফিরে আসে। ও ভুলে যায় ও একজন স্বপ্ন হারানো ভাঙ্গাচোরা মানুষ। ছেড়ে যাওয়া সম্পর্কের চোখে চোখে চোখ রেখে ও এখন বলতে পারে
    "এই কটা দিন তোমায় আমায় অনেক কথা হল কানে কানে
    আজ কানে কানে বলছ আমায় 'আর নয় এবার তোলো বাসা'
    আমি পাকা করে গাঁথিনি ভিত
    আমার মিনতি ফাঁদিনি পাথর দিয়ে তোমার দরজায়
    আমি বাসা বেঁধেছি আলগা মাটিতে
    যে মাটি ভেসে এসেছিল বর্ষার প্লাবনে
    যে মাটি পড়বে গলে শ্রাবণধারায়
    ******************************************
    এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। তবে এখন অন্ধকার এলে ও আর ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকে না। বরং খুঁজতে শুরু করে কোথায় আছে সেই বিশল্যকরণী। কোথাও যে আছেই তা নিতে এখন আর সংশয় নেই ওর মনে। সেই বিশ্বাসই ওর ঈশ্বর। তার কথা ভেবে সে এখন বলতে পারে "আমায় অনেক দিয়েছ নাথ"
    (উদ্ধৃতির ভুল অমার্জনীয়)
  • pi | 24.139.209.3 | ০৯ মে ২০১৪ ১৬:৫৪547074
  • তুলে দিলাম। এককের খুচুং আর টিমের খুচুংরাজ্যের কথা কেউ এখানে তুলে দিক...
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন