এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • সাহিত্যধারার এপথ ওপথ

    পাই
    বইপত্তর | ১৩ মে ২০১২ | ৪৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য | 132.163.16.60 | ১৩ মে ২০১২ ০১:৪৫546596
  • হাইবান- এক মিশ্র সাহিত্যধারা

    একটা আকর্ষণীয় সাহিত্যরীতির খবর বলি। ১৭ শতকের জাপানী সাধক কবি বাসো মাতসুও লিখেছিলেন কিছু অনুপম ভ্রমনকথা। তাতে ক্ষুদ্রায়তন লিরিক্যাল গদ্যখণ্ডের সঙ্গে হাইকু জুড়ে দিয়ে দিয়ে যে সাহিত্যরীতিটি তিনি গড়ে তোলেন তাকে বলে হাইবান। (এ প্রসঙ্গে বলি বিখ্যাত হাইকু "পুকুরের জল/ঢিলের শব্দ/ব্যাঙের লাফ" এঁর লেখা।)
    তাঁর "গভীর উত্তরের গলিপথ" নামের ভ্রমনকথা থেকে একটা উদাহরণ দিইঃ

    "দিন, মাস বছরেরা চিরকালের সময়পথিক। জীবন এক যাত্রা। যাদের জীবন কাটে সমুদ্রের বুকে অথবা শুধুই অশ্বের রশিটি ধরে, তাদের বাসস্থলটিই এক খোলা রাজপথ যেন বা, শুরু থেকে অন্তমুখে চলে।
    একদিন, চলমান বাতাসের রাজপথ ধরে ভেসে যাওয়া পরিব্রাজক মেঘেদের দেখে আমারও ইচ্ছে হল বেরিয়ে পরি। রওনা হলাম সমুদ্রের ধার ধরে ধরে। গত হেমন্তে যখন আমি নদীর পাশে আমার কুঁড়েয় ফিরে মাকড়শার জাল সাফ করছি ততক্ষণে কোথা দিয়ে কেটে গেছে একটা বছর।
    কিন্তু আবার বসন্ত এলো তার কুয়াশার স্পর্শঘেরা আকাশটি সাথে নিয়ে। পথের দেবতা আবার ডাক দিলেন আমায়। শিরাকাওয়া পার হয়ে দূরে আরও দূরে ঘুরে আসবার লোভ ফের সওয়ার হল আমার কাঁধে। ব্রিচেসের ফুটোফাটায় ফের পড়ল নতুন তালি। টুপিতে নতুন করে বাঁধলাম রিবনের ফাঁস। মোক্সাগুল্ম আগুণে পুড়িয়ে হাঁটুতে প্রলেপ দিলাম তার। আমার চোখে ততক্ষণে মাতসুসিমার ওপরে চন্দ্রোদয়ের ছবি ফুটে উঠেছে।
    কুঁড়েটা বেচে দিয়ে গিয়ে উঠলাম সাম্পু-র অতিথিশালায়। ঘরটি ছাড়বার আগে তার একাটা খুঁটিতে লিখে এলাম এই কবিতাটি--

    সন্ন্যাসীর এই বিজন ঘর
    বদলে যাবে
    , জানতে পাবে
    হয়তো কারও পুতুল খেলার কথা"

    আধুনিক যুগে ইংরিজি সাহিত্যে হাইবান নিয়েও কাজ হচ্ছে অনেক। হরটেনসিয়া এণ্ডারসনের একটা কাজের উদাহরণ দিলাম এইসঙ্গেঃ

    "হৃদয় দিয়ে--

    রাস্পবেরি ঝোপের দিকে যে পথটা গেছে , কতকাল ধরে তা ঝোপঝাড়ে ঢাকা। তবু আমাদের নগ্ন পা তার ঠিকানা জানে ঠিক। ঠাকুমা আর আমি মিলে ঠাকুমার ঘাসের টুপি ভরে রাস্পবেরি কুড়োই। মাঝে মাঝে মুখে তার তিক্তমধুর স্বাদ নিই।
    তারপর সন্ধ্যা হলে বারান্দায় ঠাকুমার চুল খুলে যখন বেণী বাঁধতে বসি, খোলা চুল ছড়িয়ে পড়ে তাঁর কোমর ছুঁয়ে--কালো চুলে মাঝে মাঝে গোলাপি ঝিলিক--মেঘের গায়ে ফুল ফুটেছে যেন...

    ঠাকুমার গিটারে
    প্রেমের সুর
    সে তাঁর হৃদয় দিয়ে জানা"

    সবশেষে আমার নিজের করা একটা হাইবান দিয়ে এই পোস্টটা শেষ করিঃ

    এক ঘননীল বর্ষার নিঃশব্দ দুপুরে, অরণ্যের ওধারে কর্ণাবতী নদীর সঙ্গে দেখা। বলল, আমার সঙ্গে হাঁটবি? রাজি হয়ে গেলাম। তারপর তার পার ধরে ধরে সুখদুঃখের কথা বলতে বলতে অ-পথে চলা। চলতে চলতে জাম আর যজ্ঞডুমুরের একটা বন দেখে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম। কর্ণাবতি সেই ফাঁকে এগিয়ে গেছে বেশ খানিক দূর। হঠাত জঙ্গলের ওপার থেকে শুনি তার হাসির শব্দ। তার সাথে মিশে গেছে পাথরের গম্ভীর গর্জন। তাড়াতাড়ি পিছু পিছু গিয়ে দেখি আমার কর্ণাবতী ঝাঁপ দিয়ে পড়েছে এক প্রাচীন আগুণ পাহাড়ের মাথায়। দুজনে মিলে মেঘভরা আকাশের নিচে অলজ্জ প্রেমলীলা চলছে। আমায় যেন দেখতেই পেল না আর। রাগ করে গিয়ে একটা পাতাছড়ানো কুল্লু গাছের নিচে বসে রইলাম। আমার হিংসে হয়েছে।

    খোলা আকাশের নীচে
    আগুণে ও জলে
    চিরন্তন, অলজ্জ প্রেমলীলা
  • Arin | 129.224.108.139 | ১৩ মে ২০১২ ০৪:৩১546597
  • খুব সুন্দর হয়েছে; হাইবুন (haibun) আর তান্ক (tanka)'র মধ্যে কি কোন তফাত আছে? কি করে বোঝা যায় যে কোনটা হাইবান আর কোনটা তানকা?

    আরো লিখুন, আপনার লেখা হাইবানটা পড়ে খুব ভালো লাগলো ।
  • দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য | 132.163.33.92 | ১৩ মে ২০১২ ১২:১৪546598
  • আদি জাপানি কাব্যধারাকে বলে ওয়াকা। ওয়াকা-র দুটো চেহারা-চোকা (লম্বা কবিতা) আর তাংকা (৫-৭-৫-৭-৭ সিলেবলের পাঁচ লাইনের কবিতা)। ছোট গদ্য আর তাংকা মিশিয়ে যে সাহিত্যরীতি তাকেও- ওই তাংকা নামেই ডাকা হয়। তাংকার জন্ম হয়েছিলো হাইবান জন্মের বেশ কয়েক শতাব্দি আগে। হাইবান হল ছোট গদ্য এবং হাইকু-র সম্মিলন (৫-৭-৫ সিলেবল)

    এই টেকনিক্যাল তফাতটুকু ছাড়া তাংকা (পদ্য) ও হাইকু এবং তাংকা (গদ্যপ্পদ্যের মিশ্রণ) ও হাইবান আলাদা জেনারের কিছু নয়।

    এর আরো অনেক বিস্তারিত মিল ও পার্থক্য রয়েছে। সেসব টেকনিক্যালিটির দিকে না গিয়ে আসুন এই সাহিত্যরীতিটির লেখা খুঁজে বের করে করে অনুবাদ করা যাক অনেকে মিলে এই থ্রেড-এ। এমনকি এই ৫-৫-৭ সিলেবলের ছন্দে একশো লাইনের রেঙ্গা লেখারও চেষ্টা করা যেতে পারে যাতে একাধিক কবি তারে পরপর ভার্সগুলো লিখে চলবেন। সেটা হবে একটা যৌথকাব্য।
    হবে নাকি?
  • i | 147.157.8.253 | ০৫ অক্টোবর ২০১২ ০৯:৩৬546599
  • লিখুন দেবজ্যোতি বাবু ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন