এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ-

    tatin
    অন্যান্য | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ | ২৩৬৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pinaki | 85.231.137.195 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৪৪533060
  • আমার কাছে কেউ হায় এভারেস্টে ওঠা হল না বলে আক্ষেপ করলে তাকেও আমি একই প্রশ্ন করতাম। দরকারটাই বা কি?
  • PM | 2.50.43.93 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৪৪533059
  • রনজনদা 11 Feb 10: 36 AM

    আমি অনেক উদাহরন দিয়ে বললাম জে কোথাও নারী সম্পর্কে প্রশংসা বা পুরুষ শরীর নিয়ে উদাহরন দেখি নি। এর উপযুক্ত কাউন্টার হত ওনার সম্পর্কে তথ্য দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে আসলে ঠাকুর মেয়েদের সম্পর্কে ভালো কথা বলেছেন।'

    রন্‌জনদা 11 Feb 1: 28 PM

    'এখানে কথাপ্রসংগে ঠাকুরের নারী প্রসংগে দৃষ্টিভংগির কথা ওঠায় আমি কিছু উদাহরন দিয়ে (কথামৃত থেকে) আমার স্ট্যন্ড রেখেছি যে আজকের মুল্যবোধ-এ নারীদের প্রতি সন্মানজনক কিছু ওখানে নেই'

    রন্‌জনদা 11 Feb 11: 44 PM

    'PM, ভাই তুমি যে উদাহরান গুলো কোট করেচ তাতে কোনো ভাবেই বক্তার ধর্মীয় বা জেন্ডার বায়াস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না----- তাতে কি হোলো? ---- সন্মান্‌জনক কথা বলা হবে সেটাই তো এক্সপেক্টেড; অপমানজনক কথা বলা হলেই তো আপত্তির প্রশ্ন'

    রনজনদা, আমার অভিযোগ আছে। অন্য কারুর কাছে নয়। আপনার-ই কাছে। এটা কি গোল পোস্ট সরিয়ে নেওয়া হোলো না? আপ্নার প্রথম দুটো পোস্ট পড়ে আমার ধারনা হোয়েছিলো গোলপোস্ট হোলো - রাকৃ মেয়েদের সম্পর্কে কোনো ভালো কথা বলেছেন কিনা বা ছেলেদের শরীর নিয়ে খারাপ কোনো কথা বলেছেন কিনা তা দেখানো।

    রাকৃ নিয়ে আপনার বায়াস আপনি গোড়াতেই বলেছেন। আঅমার কোনো অপত্তি নেই তাতে। কিন্তু সেই বায়াসকে জাস্টিফাই করার জন্য গোলপোস্ট সরাতে আমি অন্তত আপনাকে দেখি নি কখনো, আমার বোঝাটা ভুল হোলে আমি-ই সবচেয়ে আনন্দ পাবো।

  • ranjan roy | 14.97.232.197 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৪৮533061
  • একেবারে অরিজিনাল দুখে:))))।
    এবার ঘুমোতে যাই। নিবেদন এই, যে দুই পক্ষই নিজেদের কথা অন্যকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে হয়। এটাই তো যেকোন টইয়ের লক্ষ্য। এবার রিকর্সিভ লুপ এড়িয়ে গিয়ে দাড়িদাদুকে নিয়ে শুরু হোক, আমি আছি।
    "" চিত্তদুয়ার খুলে আমার সাধূবুদ্ধি বহির্গতা,
    আজকে আমি কোন মতেই বলব নাকো সত্য কথা।''
  • dukhe | 14.99.187.162 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৪৯533063
  • রাকৃ মহিলাভক্তদের পুরুষদের থেকে আলাদা রাখতেন পড়েছিলাম । তাঁদের কী উপদেশ দিতেন জানিনা। তবে পাইয়ের কোট দেখে মনে হয় দাওয়াই একই । তবে সে ভক্ত যদি নটী কি বিধবা হন, স্বামীত্যাগের কথা আসে না ।
    ওনার মুখ্য অডিয়েন্সে অনেকেই ছোকরা । স্ত্রীকে ত্যাগ করা নয়, স্ত্রী অবধি ব্যাপারটা গড়াতে না দেওয়াই সম্ভবত: ওনার প্রায়রিটি ছিল ।
  • aranya | 68.38.243.161 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৪৯533062
  • এটাই কি এখনও অব্দি মোস্ট হাইজ্যাকড টই - ৯৯% পোস্ট দাড়িদাদুকে সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে আমার বেশ লাগছে - গুচ তো উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠান,সেদিক দিয়ে ঠিকই আছে।

    রা কৃ, সাংখ্য, বেদান্ত ই: বিষয়ে আমার জ্ঞানগম্যি একটি বিগ জিরো। একটা নাইভ প্রশ্ন ঈশ্বর সম্পর্কে - রা কৃ-র মতে ঈশ্বর কি কোন অলৌকিক শক্তি ? ওনার মা কালীকে দেখতে পাওয়া - এটার মধ্যে কি কোন অলৌকিক ব্যাপার আছে? সেরকম তন্ত্র সাধনার দ্বারা যে নানাবিধ সিদ্ধাই পাওয়া যায় - রা কৃ সাধককে যেগুলোর দিকে মন না দিতে বলেছেন - সেই সিদ্ধাই -ও কি একটি অলৌকিক ক্ষমতা ?

    এই ব্যাপারগুলোর মধ্যে অলৌকিকত্ব , সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার কতটা মিশে আছে, সেটাই জানতে চাইছি।
  • kd | 59.93.254.175 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৫৭533064
  • স্কুললাইফে ক্যারম খেলার সময় এক 'মস্তান' প্লেয়ার একটা ইজি সট মিস করায় এক পেছন-পাকা বন্ধু বলেছিলো, মাইরি মিহির সেন ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে এসে শালা পদ্মপুকুরে ডুবে গেলো!! ranjan@11:17PMএর পোস্ট পড়ে হঠাৎ এটা মনে পড়ে গেলো। মানে, এত বড় বড় বই পড়েছো, বুঝেছো, অন্যকে বোঝাচ্ছো আর এত ছোট্টো ব্যাপার (ছোট্টো এই জন্যেই বলছি, কেননা আমি ছোট-খাটো ব্যাপারের বেশী কোনোদিন পড়ে জেনে উঠতে পারিনি) জানো না।

    প্রথমত: ""আমেরিকা''র বেদান্ত সোসাইটি স্বামী বিবেকানন্দ (আমি আগমার্ক মূখ্‌খু, ""বিবুদা'' বলার মতো পন্ডিত হইনি, কোনোদিন হতে পারবো বলেও মনে হয় না) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেলুড় মঠ স্থাপনের বেশ কয়েক বছর আগে, যদ্দুর মনে পড়ছে ১৮৯৪ সালে নিউইয়র্কে। এই সব বেদান্ত সোসাইটি, বেদান্ত সেন্টার, রামকৃষ্ণ মিশন নানা দেশে নানান নামে পরিচিত আর এই সবগুলি ""রামকৃষ্ণ অর্ডার''এর আন্ডারে। এই অর্ডারের হেডআপিস বেলুড় মঠে।

    তবে জানিনা এমন কোন নিয়ম আছে কিনা যাতে আমাকে একটা স্ট্যান্ড-অ্যালোন বাংলাদেশ (জাস্ট উদাহরন) বেদান্ত সোসাইটি খুলতে আটকাবে।

    যা: লেখার পর ভেবে দেখলুম তুমি ঠিকই বলেছো, বেদান্ত সোসাইটি তো রামকৃষ্ণ মিশনের আন্ডারে না, বেলুড় মঠের আন্ডারে। ভুলেই গিয়েছিলুম তুমি ওদের স্কুলেই পড়েছো। সরি। :(
  • sosen | 111.63.157.152 | ১১ মে ২০১৩ ১৭:২৩533065
  • হায়। রবিঠাকুর, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ কারো সম্পক্কেই আমার কোনো বক্তব্য নাই। আমার ক্কি হবে?
  • kumu | 132.161.148.222 | ১১ মে ২০১৩ ১৭:৫৯533066
  • আমারো নাই গো সোসেন,হায় হায়।চলো,ল্যাবে ফিইরা যাই।
  • rivu | 78.232.118.246 | ১১ মে ২০১৩ ২০:৫১533067
  • সোসেন, কুমু আপনাদিগের উপর দাড়ি দাদুর বিশেষ আশির্বাদ আছে। সে আপনাদিগের সৃষ্টি দেখেই বোঝা যায় গো। বক্তব্য টক্তব্য আপনাদের প্রয়োজন নাই, ওসব আমাদের মত লেসার মর্টালদিগের জন্য।
  • Ekak | 125.118.23.225 | ১১ মে ২০১৩ ২৩:৪৫533069
  • কথামৃতের বিষয় এর মত কথামৃত কে বোঝার ও দুটি পথ । এক ভক্তিমার্গ । আরেক জ্ঞান । এর মধ্যে সোজা-শক্তের ব্যাপার নাই। যে যেপথ নেবেন তেমন করে বুঝবেন ।
  • dukhe | 127.194.247.4 | ১২ মে ২০১৩ ১৩:১৮533070
  • ভুলেই গেসলাম। এখন দেখে খেয়াল হল এটার শুধু নামেই দাদু। সম্পূর্ণ ডিরেইলড একটি টই।
  • san | 24.98.253.93 | ১২ মে ২০১৩ ১৩:৪০533071
  • এইটা আমি এতদিন পড়ি নি ?????
  • san | 24.98.253.93 | ১২ মে ২০১৩ ১৩:৪৩533072
  • যাহোক, পড়ার পরেও আমার কথামৃত উল্টে অপমানিত লাগছে না। আমারই বা ক্ষি হবে ? ঃ-(
  • dukhe | 127.194.247.4 | ১২ মে ২০১৩ ১৩:৪৭533073
  • স্যান পুরোটা পড়ে ফেললেন? এর মধ্যে?
    আপনি তো সাতদিনে দাদু রচনাবলী শেষ করে দেবেন মশায়।
  • ranjan roy | 24.99.136.30 | ১২ মে ২০১৩ ১৪:০৩533074
  • এইটা দুখে হেব্বি দিয়েছে।ঃ))
    স্যানের ব্যাকহ্যান্ড রিটার্নের প্রত্যাশায়।
  • san | 24.98.253.93 | ১২ মে ২০১৩ ১৪:০৮533075
  • ওমা কুড়ি পাতা পড়তে কি সারাবেলা লাগবে?
    রোব্বার দুপুরে টানা এক দেড় ঘন্টা পাওয়া কি এমন কঠিন ?
  • dukhe | 127.194.224.45 | ১২ মে ২০১৩ ১৮:৫২533076
  • অ। আমি ভেবেছিলাম গুচর রেসিডেন্ট বালিকা দুটো পোস্ট করার মধ্যে পড়ে ফেললেন।
  • pi | 233.176.41.206 | ০৮ মে ২০১৬ ২০:৫৭533077
  • টি , এই একটি দাদুকে নিয়ে শুরু হয়েছিল বটে, কিন্তু কোথায় গেছে নিজেই দেখে নে ঃ))
  • avi | 37.63.189.133 | ০৯ মে ২০১৬ ০১:৫০533078
  • সবকটা দেখি নি, এখানে কি নির্মোহ ব নামক টই হলেই তা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দে চলে যায়? :P
  • Atoz | 161.141.85.8 | ০৯ মে ২০১৬ ০২:৪৯533080
  • একেই তিনি বলে গিয়েছেন "যত মত তত পথ ", সব পথই সেই একই জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে। হুঁ হুঁ বাবা, পালানোর উপায় নেই।
    ঃ-)
  • aka | 34.96.82.109 | ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪৮533081
  • daadudibase onaake Je gaan sabatheke riprejenT kare bale aamaar mane hay, shunun, arNaber galaay. aami barha hayechhi ei gaan kaNikaar galaay shune. bhaalo laagala ayArenjamenT naa ki bale taar janya - mUlata byaakagraaunD miujiker janya. ki sundar.

  • pi | 57.29.214.216 | ০৯ মে ২০১৭ ১২:৪৯533082
  • রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনা কতটা রিগ্রেসিভ এই নিয়ে নানা মিম , পোস্ট ঘুরে বেড়ায় , দাদুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলাই বাহুল্য। এদিকে একট একটা ক'রে লাইন তোলা, কন্টেক্স্ট জিগেশ করলেই, প্রবন্ধ থেকে নেওয়া কি গল্প উপন্যাস,, সেসব জিগালেই জগত নিরুত্তর।

    এই টইতে যদ্দুর মনে পড়ে এই নিয়ে কিছু তর্ক হয়েছিল। ক'দিন আগে একটা প্রবন্ধ পড়ছিলাম। পুরোটাই রাখা থাক এখানে। বিশেষ আপত্তিকর কথা কিন্তু কিছু দেখলাম না। যদি কিছু সেরকম প্রোগ্রেসিভ না মনে হয়, সেটা আশি বছর প্রাচীনত্বের কারণে , আর তখনকার অবস্থা অনুযায়ী বোধহয় ছাড় পাবার যোগ্য।

    নাকি, অনেক রক্ষণশীলতার দায় মেয়েদের নিজেদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ইন্টারপ্রিট করা হয়, বা মেয়েদের বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটাকে স্বাভাবিক বলা নিয়ে আপত্তি ?
    'সেও হয়েছে সহজে। প্রাকৃতিক কারণে নদীতে জলধারার পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তবে তার তটভূমির সীমা আপনিই হটে যেতে থাকে। মেয়েদের জীবনে আজ সকল দিক থেকেই স্বতই তার তটের সীমা দূরে চলে যাচ্ছে। নদী উঠছে মহানদী হয়ে।'

    ------
    কালান্তর থেকে, নারী।

    নারী
    মানুষের সৃষ্টিতে নারী পুরাতনী। নবসমাজে নারীশক্তিকে বলা যেতে পারে আদ্যাশক্তি। এই সেই শক্তি যা জীবলোকে প্রাণকে বহন করে, প্রাণকে পোষণ করে।
    পৃথিবীকে জীবের বাসযোগ্য করবার জন্যে অনেক যুগ গেছে ঢালাই পেটাই করা মিস্ত্রির কাজে। সেটা আধখানা শেষ হতে না-হতেই প্রকৃতি শুরু করলেন জীবসৃষ্টি, পৃথিবীতে এল বেদনা। প্রাণসাধনার সেই আদিম বেদনা প্রকৃতি দিয়েছেন নারীর রক্তে, নারীর হৃদয়ে। জীবপালনের সমস্ত প্রবৃত্তিজাল প্রবল করে জড়িত করেছেন নারীর দেহমনের তন্তুতে তন্তুতে। এই প্রবৃত্তি স্বভাবতই চিত্তবৃত্তির চেয়ে হৃদয় বৃত্তিতেই স্থান পেয়েছে গভীর ও প্রশস্ত ভাবে। এই সেই প্রবৃত্তি নারীর মধ্যে যা বন্ধনজাল গাঁথছে নিজেকে ও অন্যকে ধরে রাখবার জন্যে প্রেমে, স্নেহে, সকরুণ ধৈর্যে। মানবসংসারকে গড়ে তোলবার, বেঁধে রাখবার এই আদিম বাঁধুনি। এই সেই সংসার যা সকল সমাজের সকল সভ্যতার মূলভিত্তি। সংসারের এই গোড়াকার বাঁধন না থাকলে মানুষ ছড়িয়ে পড়ত আকারপ্রকারহীন বাষ্পের মতো; সংহত হয়ে কোথাও মিলনকেন্দ্র স্থাপন করতে পারত না। সমাজবন্ধনের এই প্রথম কাজটি মেয়েদের।
    প্রকৃতির সমস্ত সৃষ্টিপ্রক্রিয়া গভীর গোপন, তার স্বতঃপ্রবর্তনা দ্বিধাবিহীন। সেই আদিপ্রাণের সহজ প্রবর্তনা নারীর স্বভাবের মধ্যে। সেইজন্য নারীর স্বভাবকে মানুষ রহস্যময় আখ্যা দিয়েছে। তাই অনেক সময়ে অকস্মাৎ নারীর জীবনে যে সংবেগের উচ্ছ্বাস দেখতে পাওয়া যায় তা তর্কের অতীত– তা প্রয়োজন-অনুসারে বিধিপূর্বক খনন করা জলাশয়ের মতো নয়, তা উৎসের মতো যার কারণ আপন অহৈতুক রহস্যে নিহিত।
    প্রেমের রহস্য, স্নেহের রহস্য অতি প্রাচীন এবং দুর্গম। সে আপন সার্থকতার জন্যে তর্কের অপেক্ষা রাখে না। যেখানে তার সমস্যা সেখানে তার দ্রুত সমাধান চাই। তাই গৃহে নারী যেমনি প্রবেশ করেছে কোথা থেকে অবতীর্ণ হল গৃহিণী, শিশু যেমনি কোলে এল মা তখনই প্রস্তুত। জীবরাজ্যে পরিণত বুদ্ধি এসেছে অনেক পরে। সে আপন জায়গা খুঁজে পায় সন্ধান করে, যুদ্ধ করে। দ্বিধা মিটিয়ে চলতে তার সময় যায়। এই দ্বিধার সঙ্গে কঠিন দ্বন্দ্বেই সে সবলতা ও সফলতা লাভ করে। এই দ্বিধাতরঙ্গের ওঠাপড়ায় শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে যায়, সাংঘাতিক ভ্রম জমে উঠে বার বার মানুষের ইতিহাসকে দেয় বিপর্যস্ত করে। পুরুষের সৃষ্টি বিনাশের মধ্যে তলিয়ে যায়, নূতন করে বাঁধতে হয় তার কীর্তির ভূমিকা। পালটিয়ে পালটিয়ে পরীক্ষায় পুরুষের কর্ম কেবলই দেহপরিবর্তন করে। অভিজ্ঞতার এই নিত্যপরিক্রমণে যদি তাকে অগ্রসর করে তবে সে বেঁচে যায়, যদি ত্রুটিসংশোধনের অবকাশ না পায় তবে জীবন-বাহনের ফাটল বড়ো হয়ে উঠতে উঠতে তাকে টানে বিলুপ্তির কবলের মধ্যে। পুরুষের রচিত সভ্যতার আদিকাল থেকে এইরকম ভাঙা-গড়া চলছে। ইতিমধ্যে, নারীর মধ্যে প্রেয়সী, নারীর মধ্যে জননী প্রকৃতির দৌত্যে স্থিরপ্রতিষ্ঠিত হয়ে আপন কাজ করে চলেছে। এবং প্রবল আবেগের সংঘর্ষে আপন সংসারের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অগ্নিকাণ্ড করেও আসছে। সেই প্রলয়াবেগ যেন বিশ্বপ্রকৃতির প্রলয়লীলারই মতো, ঝড়ের মতো, দাবদাহের মতো– আকস্মিক, আত্মঘাতী।
    পুরুষ তার আপন জগতে বারে বারে নূতন আগন্তুক। আজ পর্যন্ত কতবার সে গড়ে তুলেছে আপন বিধিবিধান। বিধাতা তাকে তার জীবনের পথ বাঁধিয়ে দেন নি; কত দেশে কত কালে তাকে আপন পথ বানিয়ে নিতে হল। এক কালের পথ বিপথ হয়ে উঠল আর-এক কালে, উলটিয়ে গেল তার ইতিহাস, করলে সে অন্তর্ধান।
    নব নব সভ্যতার উলট - পালটের ভিতর দিয়ে নারীর জীবনের মূলধারা চলেছে এক প্রশস্ত পথে। প্রকৃতি তাকে যে হৃদয়সম্পদ দিয়েছেন নিত্যকৌতূহলপ্রবণ বুদ্ধির হাতে তাকে নূতন নূতন অধ্যবসায়ে পরখ করতে দেওয়া হয় নি। নারী পুরাতনী।

    পুরুষকে নানা দ্বারে নানা আপিসে উমেদারিতে ঘোরায়। অধিকাংশ পুরুষই জীবিকার জন্যে এমন কাজ মানতে বাধ্য হয় যার প্রতি তার ইচ্ছার তার ক্ষমতার সহজ সম্মতি নেই। কঠিন পরিশ্রমে নানা কাজের শিক্ষা তার করা চাই– তাতে বারো আনা পুরুষই যথোচিত সফলতা পায় না। কিন্তু গৃহিণীরূপে জননীরূপে মেয়েদের যে কাজ সে তার আপন কাজ, সে তার স্বভাবসংগত।
    নানা বিঘ্ন কাটিয়ে অবস্থার প্রতিকূলতাকে বীর্যের দ্বারা নিজের অনুগত করে পুরুষ মহত্ত্ব লাভ করে। সেই অসাধারণ সার্থকতায় উত্তীর্ণ পুরুষের সংখ্যা অল্প। কিন্তু হৃদয়ের রসধারায় আপন সংসারকে শস্যশালা করে তুলেছে এমন মেয়েকে প্রায় দেখা যায় ঘরে ঘরে। প্রকৃতির কাছ থেকে তারা পেয়েছে অশিক্ষিতপটুত্ব, মাধুর্যের ঐশ্বর্য তাদের সহজে লাভ করা। যে মেয়ের স্বভাবের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সহজ রসটি না থাকে, কোনো শিক্ষায়, কোনো কৃত্রিম উপায়ে সংসারক্ষেত্রে সে সার্থকতা পায় না।
    যে সম্বল অনায়াসে পাওয়া যায় তার বিপদ আছে। বিপদের এক কারণ অন্যের পক্ষে তা লোভনীয়। সহজ-ঐশ্বর্যবান দেশকে বলবান নিজের একান্ত প্রয়োজনে আত্মসাৎ করে রাখতে চায়। অনুর্বর দেশের পক্ষে স্বাধীন থাকা সহজ। যে পাখির ডানা সুন্দর ও কণ্ঠস্বর মধুর তাকে খাঁচায় বন্দী করে মানুষ গর্ব অনুভব করে; তার সৌন্দর্য সমস্ত অরণ্যভূমির, এ কথা সম্পত্তিলোলুপরা ভুলে যায়। মেয়েদের হৃদয়মাধুর্য ও সেবানৈপুণ্যকে পুরুষ সুদীর্ঘকাল আপন ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে কড়া পাহারায় বেড়া দিয়ে রেখেছে। মেয়েদের নিজের স্বভাবেই বাঁধন-মানা প্রবণতা আছে, সেইজন্যে এটা সর্বত্রই এত সহজ হয়েছে।
    বস্তুত জীবপালনের কাজটাই ব্যক্তিগত। সেটা নৈর্ব্যক্তিক তত্ত্বের কোঠায় পড়ে না, সেই কারণে তার আনন্দ বৃহৎ তত্ত্বের আনন্দ নয়; এমন - কি মেয়েদের নৈপুণ্য যদিও বহন করেছে রস কিন্তু সৃষ্টির কাজে আজও যথেষ্ট সার্থক হয় নি।
    তার বুদ্ধি, তার সংস্কার, তার আচরণ নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার দ্বারা বহু যুগ থেকে প্রভাবান্বিত। তার শিক্ষা, তার বিশ্বাস বাহিরের বৃহৎ অভিজ্ঞতার মধ্যে সত্যতা লাভ করবার সম্পূর্ণ সুযোগ পায় নি। এইজন্যে নির্বিচারে সকল অপদেবতাকেই সে অমূলক ভয় ও অযোগ্য ভক্তির অর্ঘ্য দিয়ে আসছে। সমস্ত দেশ জুড়ে যদি দেখতে পাই তবে দেখা যাবে এই মোহমুগ্ধতার ক্ষতি কত সর্বনেশে, এর বিপুল ভার বহন করে উন্নতির দুর্গম পথে এগিয়ে চলা কত দুঃসাধ্য। আবিলবুদ্ধি মূঢ়মতি পুরুষ দেশে যে কম আছে তা নয়, তারা শিশুকাল থেকে মেয়ের হাতে গড়া এবং তারাই মেয়েদের প্রতি সবচেয়ে অত্যাচারী। দেশে এই যে-সব আবিল মনের কেন্দ্রগুলি দেখতে দেখতে চারি দিকে গড়ে উঠছে, মেয়েদের অন্ধ বিচারবুদ্ধির উপরেই তাদের প্রধান নির্ভর। চিত্তের বন্দীশালা এমনি করে দেশে ব্যাপ্ত হয়ে পড়ছে, এবং প্রতিদিন তার ভিত্তি হয়ে উঠছে দৃঢ়।
    এ দিকে প্রায় পৃথিবীর সকল দেশেই মেয়েরা আপন ব্যক্তিগত সংসারের গণ্ডি পেরিয়ে আসছে। আধুনিক এসিয়াতেও তার লক্ষণ দেখতে পাই। তার প্রধান কারণ সর্বত্রই সীমানা-ভাঙার যুগ এসে পড়েছে। যে-সকল দেশ আপন আপন ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রিক প্রাচীরের মধ্যে একান্ত বদ্ধ ছিল তাদের সেই বেড়া আজ আর তাদের তেমন করে ঘিরে রাখতে পারে না– তারা পরস্পর পরস্পরের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। স্বতই অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়েছে, দৃষ্টিসীমা চিরাভ্যস্ত দিগন্ত পেরিয়ে গেছে। বাহিরের সঙ্গে সংঘাতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, নূতন নূতন প্রয়োজনের সঙ্গে আচার-বিচারের পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
    আমাদের বাল্যকালে ঘরের বাইরে যাতায়াতের আবশ্যকে মেয়েদের ছিল পালকির যুগ। মানী ঘরে সেই পালকির উপরে পড়ত ঘটাটোপ। বেথুন স্কুলে যে মেয়েরা সর্বপ্রথম ভর্তি হয়েছিলেন তার মধ্যে অগ্রণী ছিলেন আমার বড়দিদি। তিনি দ্বারখোলা পালকিতে ইস্কুলে যেতেন, সেদিনকার সম্ভ্রান্তবংশের আদর্শকে সেটা অল্প পীড়া দেয় নি। সেই একবস্ত্রের দিনে সেমিজ পরাটা নির্লজ্জতার লক্ষণ ছিল। শালীনতার প্রচলিত রীতি রক্ষা করে রেলগাড়িতে যাতায়াত করা সহজ ব্যাপার ছিল না।
    আজ সেই ঢাকা পালকির যুগ বহু দূরে চলে গেছে। মৃদুপদে যায় নি, দ্রুতপদেই গেছে। বাইরের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন আপনিই ঘটেছে– এ নিয়ে কাউকে সভাসমিতি করতে হয় নি। মেয়েদের বিবাহের বয়স দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল,

    সেও হয়েছে সহজে। প্রাকৃতিক কারণে নদীতে জলধারার পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তবে তার তটভূমির সীমা আপনিই হটে যেতে থাকে। মেয়েদের জীবনে আজ সকল দিক থেকেই স্বতই তার তটের সীমা দূরে চলে যাচ্ছে। নদী উঠছে মহানদী হয়ে।
    এই যে বাহিরের দিকে ব্যবহারের পরিবর্তন এ তো বাইরেই থেকে যায় না। অন্তরপ্রকৃতির মধ্যেও এর কাজ চলতে থাকে। মেয়েদের যে-মনোভাব বদ্ধ সংসারের উপযোগী, মুক্ত সংসারে সে তো অচল হয়ে থাকতে পারে না। আপনিই জীবনের প্রশস্ত ভূমিকায় দাঁড়িয়ে তার মন বড়ো করে চিন্তা করতে বিচার করতে আরম্ভ করে। তার পূর্বতন সংস্কারগুলিকে যাচাই করার কাজ আপনিই শুরু হতে থাকে। এই অবস্থায় সে নানারকম ভুল করতে পারে, কিন্তু বাধায় ঠেকতে ঠেকতে সে ভুল উত্তীর্ণ হতে হবে। সংকীর্ণ সীমায় পূর্বে মন যেরকম করে বিচার করতে অভ্যস্ত ছিল সে অভ্যাস আঁকড়ে থাকলে চারি দিকের সঙ্গে পদে পদে অসামঞ্জস্য আনতে থাকবে। এই অভ্যাস-পরিবর্তনে দুঃখ আছে, বিপদও আছে, কিন্তু সেই ভয় করে আধুনিক কালের স্রোতকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।
    গৃহস্থালির ছোটো পরিধির মধ্যে মেয়েদের জীবন যখন আবদ্ধ ছিল তখন মেয়েলি মনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলি নিয়ে সহজেই তাদের কাজ চলে যেত। এজন্যে তাদের বিশেষ শিক্ষার দরকার ছিল না বলেই একদিন স্ত্রীশিক্ষা নিয়ে এতই বিরুদ্ধতা এবং প্রহসনের সৃষ্টি হয়েছে। তখন পুরুষেরা নিজে যে-সব সংস্কারকে উপেক্ষা করত, যে-সব মত বিশ্বাস করত না, যে-সকল আচরণ পালন করত না, মেয়েদের বেলায় সেগুলিকে সযত্নে প্রশ্রয় দিয়েছে। তার মূলে তাদের সেই মনোবৃত্তি ছিল যে মনোবৃত্তি একেশ্বর শাসনকর্তাদের। তারা জানে, অজ্ঞানের অন্ধ সংস্কারের আবহাওয়ায় যথেচ্ছশাসনের সুযোগ রচনা করে; মনুষ্যোচিত স্বাধিকার বিসর্জন দিয়েও সন্তুষ্টচিত্তে থাকবার পক্ষে এই মুগ্ধ অবস্থাই অনুকূল অবস্থা। আমাদের দেশের অনেক পুরুষের মনে আজও এই ভাব আছে। কিন্তু কালের সঙ্গে সংগ্রামে তাদের হার মানতেই হবে।
    কালের প্রভাবে মেয়েদের জীবনের ক্ষেত্র এই-যে স্বতই প্রসারিত হয়ে চলেছে, এই-যে মুক্তসংসারের জগতে মেয়েরা আপনিই এসে পড়ছে, এতে করে আত্মরক্ষা এবং আত্মসম্মানের জন্যে তাদের বিশেষ করে বুদ্ধির চর্চা, বিদ্যার চর্চা, একান্ত আবশ্যক হয়ে উঠল। তাই দেখতে দেখতে এর বাধা দূর হয়ে চলেছে। নিরক্ষরতার লজ্জা আজ ভদ্রমেয়েদের পক্ষে সকলের চেয়ে বড়ো লজ্জা, পূর্বকালে মেয়েদের ছাতা জুতো ব্যবহারের যে লজ্জা ছিল এ তার চেয়ে বেশি, বাট্‌না-বাটা কোটনা-কোটা সম্বন্ধে অনৈপুণ্যের অখ্যাতি তার কাছে কিছুই নয়। অর্থাৎ, গার্হস্থ্য বাজার -দরেই মেয়েদের দর, এমন কথা আজকের দিনে বিয়ের বাজারেও ষোলো - আনা খাটছে না। যে বিদ্যার মূল্য সার্বভৌমিক, যা আশু প্রয়োজনের ঐকান্তিক দাবি ছাড়িয়ে চলে যায়, আজ পাত্রীর মহার্ঘতা-যাচাইয়ের জন্যে অনেক পরিমাণে সেই বিদ্যার সন্ধান নেওয়া হয়।
    এই প্রণালীতেই আমাদের দেশের আধুনিক মেয়েদের মন ঘরের সমাজ ছাড়িয়ে প্রতিদিন বিশ্বসমাজে উত্তীর্ণ হচ্ছে।
    প্রথম যুগে একদিন পৃথিবী আপন তপ্ত নিশ্বাসের কুয়াশায় অবগুণ্ঠিত ছিল, তখন বিরাট আকাশের গ্রহমণ্ডলীর মধ্যে আপন স্থান সে উপলব্ধি করতেই পারে নি। অবশেষে একদিন তার মধ্যে সূর্যকিরণ প্রবেশের পথ পেল। তখনই সেই মুক্তিতে আরম্ভ হল পৃথিবীর গৌরবের যুগ। তেমনিই একদিন আর্দ্র হৃদয়ালুতার ঘন বাষ্পাবরণ আমাদের মেয়েদের চিত্তকে অত্যন্ত কাছের সংসারে আবিষ্ট করে রেখেছিল। আজ তা ভেদ করে সেই আলোকরশ্মি প্রবেশ করছে যা মুক্ত আকাশের, যা সর্বলোকের। বহু দিনের যে-সব সংস্কারজড়িমাজালে তাদের চিত্ত আবদ্ধ বিজড়িত ছিল যদিও আজ তা সম্পূর্ণ কেটে যায় নি তবু তার মধ্যে অনেকখানি ছেদ ঘটেছে। কতখানি যে, তা আমাদের মতো প্রাচীন বয়স যাদের তারাই জানে।
    আজ পৃথিবীর সর্বত্রই মেয়েরা ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন এই বৃহৎ সংসারের দায়িত্ব তাদের স্বীকার করতেই হবে; নইলে তাদের লজ্জা, তাদের অকৃতার্থতা।

    আমার মনে হয়, পৃথিবীতে নূতন যুগ এসেছে। অতিদীর্ঘকাল মানবসভ্যতার ব্যবস্থাভার ছিল পুরুষের হাতে। এই সভ্যতার রাষ্ট্রতন্ত্র অর্থনীতি সমাজশাসনতন্ত্র গড়েছিল পুরুষ। মেয়েরা তার পিছনে প্রকাশহীন অন্তরালে থেকে কেবল করেছিল ঘরের কাজ। এই সভ্যতা হয়ে ছিল একঝোঁকা। এই সভ্যতায় মানবচিত্তের অনেকটা সম্পদের অভাব ঘটেছে; সেই সম্পদ মেয়েদের হৃদয়ভাণ্ডারে কৃপণের জিম্মায় আটকা পড়ে ছিল। আজ ভাণ্ডারের দ্বার খুলেছে।
    তরুণ যুগের মানুষহীন পৃথিবীতে পঙ্কস্তরের উপর যে অরণ্য ছিল বিস্তৃত সেই অরণ্য বহুলক্ষ বৎসর ধরে প্রতিদিন সূর্যতেজ সঞ্চয় করে এসেছে আপন বৃক্ষরাজির মজ্জায়। সেই-সব অরণ্য ভূগর্ভে তলিয়ে গিয়ে রূপান্তরিত অবস্থায় বহুযুগ প্রচ্ছন্ন ছিল। সেই পাতালের দ্বার যেদিন উদঘাটিত হল, অকস্মাৎ মানুষ শত শত বৎসরের অব্যবহৃত সূর্যতেজকে পাথুরে কয়লার আকারে লাভ করল আপন কাজে; তখনি নূতন বল নিয়ে বিশ্ববিজয়ী আধুনিক যুগ দেখা দিল।
    একদিন এ যেমন ঘটেছে সভ্যতার বাহিরের সম্পদ নিয়ে, আজ তেমনি অন্তরের সম্পদের একটি বিশেষ খনিও আপন সঞ্চয়কে বাহিরে প্রকাশ করল। ঘরের মেয়েরা প্রতিদিন বিশ্বের মেয়ে হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই উপলক্ষে মানুষের সৃষ্টিশীল চিত্তে এই-যে নূতন চিত্তের যোগ, সভ্যতায় এ আর-একটি তেজ এনে দিলে। আজ এর ক্রিয়া প্রত্যক্ষে অপ্রত্যক্ষে চলছে। একা পুরুষের গড়া সভ্যতায় যে ভারসামঞ্জস্যের অভাব প্রায়ই প্রলয় বাধাবার লক্ষণ আনে, আজ আশা করা যায় ক্রমে সে যাবে সাম্যের দিকে। প্রচণ্ড ভূমিকম্প বার বার ধাক্কা লাগাচ্ছে পুরাতন সভ্যতার ভিত্তিতে। এই সভ্যতায় বিপত্তির কারণ অনেক দিন থেকে সঞ্চিত হয়ে উঠছিল, অতএব ভাঙনের কাজ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। একটিমাত্র বড়ো আশ্বাসের কথা এই যে, কল্পান্তের ভূমিকায় নূতন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে– প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়– যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে। যে মানবসমাজে তারা জন্মেছে সেই সমাজ আজ সকল দিকেই সকল বিভাগেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠল তাদের দৃষ্টির সম্মুখে। এখন অন্ধসংস্কারের কারখানায় গড়া পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবপালিনী বুদ্ধি, কেবল ঘরের লোককে নয়, সকল লোককে রক্ষার জন্যে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে।
    আদিকাল থেকে পুরুষ আপন সভ্যতাদুর্গের ইঁটগুলো তৈরি করেছে নিরন্তর নরবলির রক্তে– তারা নির্মমভাবে কেবলই ব্যক্তিবিশেষকে মেরেছে কোনো একটা সাধারণ নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে; ধনিকের ধন উৎপন্ন হয়েছে শ্রমিকের প্রাণ শোষণ করে; প্রতাপশালীর প্রতাপের আগুন জ্বালানো রয়েছে অসংখ্য দুর্বলের রক্তের আহুতি দিয়ে; রাষ্ট্রস্বার্থের রথ চালিয়েছে প্রজাদের তাতে রজ্জুবদ্ধ করে। এ সভ্যতা ক্ষমতার দ্বারা চালিত, এতে মমতার স্থান অল্প। শিকারের আমোদকে জয়যুক্ত করে এ সভ্যতা বধ করে এসেছে অসংখ্য নিরীহ নিরুপায় প্রাণী; এ সভ্যতায় জীবজগতে মানুষকে সকলের চেয়ে নিদারুণ করে তুলেছে মানুষের পক্ষে এবং অন্য জীবের পক্ষে। বাঘের ভয়ে বাঘ উদ্‌বিগ্ন হয় না, কিন্তু এ সভ্যতার পৃথিবী জুড়ে মানুষের ভয়ে মানুষ কম্পান্বিত। এইরকম অস্বাভাবিক অবস্থাতেই সভ্যতা আপন মুষল আপনি প্রসব করতে থাকে। আজ তাই শুরু হল। সঙ্গে সঙ্গে ভীত মানুষ শান্তির কল বানাবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত, কিন্তু কলের শান্তি তাদের কাজে লাগবে না শান্তির উপায় যাদের অন্তরে নেই। ব্যক্তিহননকারী সভ্যতা টিকতে পারে না।
    সভ্যতাসৃষ্টির নূতন কল্প আশা করা যাক। এ আশা যদি রূপ ধারণ করে তবে এবারকার এই সৃষ্টিতে মেয়েদের কাজ পূর্ণ পরিমাণে নিযুক্ত হবে সন্দেহ নেই। নবযুগের এই আহ্বান আমাদের মেয়েদের মনে যদি পৌঁছে থাকে তবে তাঁদের রক্ষণশীল মন যেন বহু যুগের অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাকে একান্ত আসক্তির সঙ্গে বুকে চেপে না ধরে। তাঁরা যেন মুক্ত করেন হৃদয়কে, উজ্জ্বল করেন বুদ্ধিকে, নিষ্ঠা প্রয়োগ করেন জ্ঞানের তপস্যায়। মনে রাখেন, নির্বিচার অন্ধরক্ষণশীলতা সৃষ্টিশীলতার বিরোধী। সামনে আসছে নূতন সৃষ্টির যুগ। সেই যুগের অধিকার লাভ করতে হলে মোহমুক্ত মনকে সর্বতোভাবে শ্রদ্ধার যোগ্য করতে হবে, অজ্ঞানের জড়তা এবং সকলপ্রকার কাল্পনিক ও বাস্তবিক ভয়ের নিম্নগামী আকর্ষণ থেকে টেনে আপনাকে উপরের দিকে তুলতে হবে। ফললাভের কথা পরে আসবে– এমন কি, না আসাতেও পারে– কিন্তু যোগ্যতা - লাভের কথা সর্বাগ্রে।

    শান্তিনিকেতন। ২ অক্টোবর ১৯৩৬।
  • PP | 159.142.103.12 | ১০ মে ২০১৭ ০৬:২৮533084
  • শিব্রামের বাবু গোলকেন্দ্রপ্রসন্ন পুরকায়স্থ কে মনে পোরে গেল। বেশ হোয়েছে।
  • অভিষেক | 52.110.183.104 | ১০ মে ২০১৭ ২৩:৫১533085
  • অসামান্য টই। এক ঘন্টা সময় দিয়ে এর পুরোটা পড়া সার্থক হোলো!!
    রবীন্দ্রনাথের শেষ রচনার সেই ছলনাময়ীর কথা মনে এসে গ্যালো নানা ধারার দর্শন নিস্নাত নারীভাবনার কথা পড়ে..
    সবাইকে ধন্যবাদ..
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন