এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • রূপকথা লোককথা উপকথা ইত্যাদি

    Shuchismita
    বইপত্তর | ২২ আগস্ট ২০১০ | ১৮৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২২ আগস্ট ২০১০ ১৯:১৪462348
  • মাঝে-মধ্যে টুকটাক অনুবাদ করব।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২২ আগস্ট ২০১০ ১৯:২০462359
  • সত্যি-মিথ্যের গপ্পো
    ---------------

    [গুগল বুকসে বই সার্চ করতে গিয়ে এই লোককথাটি পেলাম। ইংরিজি নাম "TheOldLadyintheCave" , তবে লোককথাটি কোন দেশের তার উল্লেখ ছিল না। ঈষ্‌ৎ মেল-শভিনিজম আছে। কি আর করা যাবে। লোককথা এমনই হয়]

    এক যে ছিল ছেলে। আর ছিল এক মেয়ে। গোলা ভরা ধান, দীঘি ভরা মাছ, অতিথ-স্বজন, ভজন-পূজন, সাত-মহলা বাড়ি – কিচ্ছুটি নেই অভাব। তবুও ছেলের বাউন্ডুলে স্বভাব। একলা বসে দীঘির পাড়ে আকাশ-পাতাল ভাবে। মনেতে নাই সুখ। দেখে মেয়ের ভয়েই কাঁপে বুক।

    “আচ্ছা শুনি, ব্যাপারটা কি তোমার?”, শুধোয় মেয়ে, “সারাটা দিন আপন মনে অতই বা কি ভাবো? এমন বাড়ি, জমিদারী, লোকে মান্যি করে কত! কোথায় তোমার মন? মুখের কাছে খাবার ধরি – মাছের মুড়ো, মন্ডা-মেঠাই, গব্য ঘৃতে তপ্ত ভাজা লুচি। কিচ্ছুতে নেই রুচি! মেজাজ যেন লাট সাহেবের নাতি! গা জ্বলে যায় দেখলে এমন উলটপানা বাতিক!”

    “একটি কথাই ঘুরে ফিরে আসে আমার মনে।”, বললে ছেলে, “‘সত্য’ কোথায় থাকে? তার মুখের কেমন আদল? কোন দেশেতে বসত বারোমাস? কেমন ধরন, কেমন চলন, কেমন বেশবাস? জানতে বড় সাধ হয় রে মেয়ে! কে জানে কোথায় লুকিয়ে আছে পথের বাঁকে! অথবা কোন দীঘির মায়ায়, স্তব্ধ নিবিড় হিজল ছায়ায় পাতার ফাঁকে! ছুঁতে গেলেই হারিয়ে যায় শিশিরফোঁটা! তার খোঁজেতেই আমার ছোটা।”

    “মরনরোগে ধরছে তোমায় ছোঁড়া! খণ্ডাবে কে লিখন তোমার পথে পথেই ঘোরা! তবে যাওয়ার আগে হিসেব-নিকেশ চোকাও ষোলোআনা। টাকা-কড়ি, গয়না-গাঁটি, জমির মালিকানা – প্রাপ্য বুঝে নেবো। তারপরেতে যাও যেখানে খুশী। খোঁজ নেবো না মোটে। কপাল আমার! এমন মানুষ আমার ঘরেই জোটে!”

    যেমন কথা, সেইমত কাজ। তালুক-তুলুক, মালুক-মুলুক – যা কিছু তার ছিল, লিখে দিয়ে মেয়ের নামে, ছেলে বেরোয় পথের টানে। কুয়াশালীন পাহাড়ি পথ, তরুণ উপত্যকা, আলো-ছায়ার মায়াবী দিন, রামধনুতে ঢাকা – পেরিয়ে গেল। তারপরেতে মস্ত শহর, ব্যাস্ত সবাই ভারী, ঝলমলানো আলোর মালা, আকাশ-ছোঁয়া বাড়ি – দেখলো তাও। তবুও ছেলে সত্য পায় না খুঁজে। পথ দেখাল সাঁঝের পিদিম, সবুজ মোড়া মখমলী গ্রাম, ছোট্ট নদী খামখেয়ালী, বেগুনী ফুল অচেনা নাম – যেইখানে যায় – সবজেটে-নীল বনের ধারে, ঝিনুক-ছেঁচা সাগরপারে, জোছনাহীন অন্ধকারে ঢেউ আছড়ায় খরস্রোতা – কোত্থাও নেই, যার খোঁজেতে এতটা পথ, সেই মেয়েটা কোত্থাও নেই!

    দিনের পর দিন কাটে। মাসের পর মাস। পথের পর পথ বয়ে যায়। ছেলের মলিন বেশবাস। এইভাবেতে অনেক দিনের, অনেক পথের শেষে, সন্ধ্যা যখন তারার আলোয় মেশে, ক্লান্ত ছেলে থামল এসে পাহাড়চুড়োয়। একলা সে দেশ নিথর কালো আকাশ ছোঁয়া। পাথর ঘেরা অপরিসর ছোট্ট গুহা। সেই গুহাতে বাস করে এক বুড়ি। ফোকলা বুড়ি, একখানি দাঁত মোটে। শনের নুড়ি চুলের গুছি পিঠ ছাপানো, জোলো হাওয়ায় উড়ছে এলোমেলো। হাড় ক’খানি চামড়া দিয়ে ঢাকা, তীক্‌ষ্‌ঞ সে মুখ – ছেলে দেখতে পেল। কে এই বুড়ি! কুদর্শনা, দৃষ্টি কেমনতর! ভাবছে ছেলে। এমন সময় বাড়িয়ে হাত, শীর্ণ আঙুল, হলদেটে নখ দীর্ঘ অতি – বুড়ি তাকে ডাকছে ইশারাতে। ছেলেও তখন বেভুল কেমন, চলছে বুড়ির পিছু পিছু, গুহার পথে। আনমুনি গান গাইছে বুড়ি, অবাক সে সুর, শোনেনি কেউ কোথাও। বলছে কথা ছেলের সাথে, গলার আওয়াজ নদীর স্বরের মত, নিখাদ নিটোল, জগতে যা কিছু খাঁটি, বুড়ির গলায় পড়ছে ঝরে, অটুট পরিপাটি। একেই খুঁজতে আসা – বুঝল ছেলে। পাহাড়-নদী-অরন্যপথ, অথই সাগর, নীল জনপদ – অনেক ঘোরার পরে, এবার পেলাম দেখা। ‘সত্য’ বলেই চিনছি তাকে। নিখুঁত স্বরলেখা।

    ছেলে ক’দিন সেইখানেতেই থাকে। প্রশ্ন যত জমাট ছিল মনে, চলা-ফেরায় আনা-গোনায় একলা ঘরের কোণে, শুধোয় তাকে। সত্য-বুড়ি যত্ন করে বোঝায়। ছেলের মনে পোষ মেনেছে ঝড়, শুনে কাঁচের মত স্বচ্ছতোয়া, অপূর্ব সে স্বর। দিন কেটে যায়, মাস কেটে যায়। বছর ঘোরার পরে, ভাবছে ছেলে, এবার বাড়ি টানে, ফিরব দেশে। বিদায় নিতে বুড়ির কাছে আসে।

    “অনেক কিছু শিখেছি তোমার কাছে”, বলছে ছেলে, “এবার ঘরে ফেরা। ফেরার আগে আমায় বল বুড়ি, যদি কোন ইচ্ছে থাকে তোমার, যদি কোন কাজে লাগতে পারি?”

    ফোকলা বুড়ি ঘাড় বেঁকিয়ে ভাবে। প্রাচীন নখের ইশারাতে আবার তাকে ডাকে। “শোনো হে ছেলে, ফিরবে যবে ঘরে, বলবে যখন আমার কথা বন্ধু-স্বজনেরে, সেসব কথা কেমন হবে বুঝতে ভালৈ পারি। আমার কেমন মুখের গড়ন, চামড়া কোমল কিনা, হাসলে পরে মুক্তো ঝরে নাকি, এসব নিয়ে চলবে বাড়াবাড়ি। দোহাই ছেলে, এই কথাটি রেখো”, সত্য-বুড়ি কাতর হেসে বলে, তীক্‌ষ্‌ঞ চোখে আবেশ জড়ায় ভারী, জানায় মনের ইচ্ছে গভীর গোপন, “বোলো তাদের, সত্য হল চিকন, সুদর্শনা লাবণ্যময় যুবতী এক নারী।”
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২২ আগস্ট ২০১০ ১৯:২২462366
  • * তীক্ষ্ণ

    (ইউনিকোড থেকে পেস্ট করতে গিয়ে ঘেঁটে গেছে)
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২২ আগস্ট ২০১০ ২০:২৯462367
  • টই-এর কোমা-দশা কাটাতে...
  • Ishan | 122.162.42.121 | ২২ আগস্ট ২০১০ ২২:১১462368
  • ঠিক হয়েছে?
  • M | 59.93.175.95 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ১১:৫২462369
  • দারুন।

    রেড ইন্ডিয়ানদের রূপকথাতে দেখলাম মেয়েদের বেশ প্রধান্য রয়েছে।
  • de | 59.163.30.6 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ১১:৫৯462370
  • বা:! খুব সুন্দর, শুচিস্মিতা!
  • byaang | 122.172.59.115 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ১৩:২৭462371
  • শুচিস্মিতার সোনার কলম অক্ষয় হোক।
  • kk | 67.187.112.132 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ২০:০৯462372
  • শুচিস্মিতার লেখার স্টাইলটা খুব সুন্দর। এটা একটা ভালো কাজ করছো। এরকম গল্প আরো পড়তে চাই।
  • aka | 168.26.215.13 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ২১:৩৯462349
  • বা: সুন্দর হয়েছে এটা।
  • ps | 117.201.113.198 | ২৩ আগস্ট ২০১০ ২৩:৪০462350
  • খুব সুন্দর।
  • Tim | 198.82.22.225 | ২৪ আগস্ট ২০১০ ০১:৪৭462351
  • ভালো হয়েছে খুব। আর হোক।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ আগস্ট ২০১০ ০৩:৪৬462352
  • :-)
  • aranya | 144.160.226.53 | ২৪ আগস্ট ২০১০ ০৬:৫৮462353
  • বড় ভাল লেখা।
  • Nina | 67.133.199.254 | ২৪ আগস্ট ২০১০ ২২:১৩462354
  • আগেও পড়েছি, আবারও পড়লাম--আবার পড়ব---যতবার পড়ছি ততবার আরও ভাল লাগছে--:-))
  • bhulbhal lok | 193.222.161.6 | ২৭ আগস্ট ২০১০ ১৫:৩১462355
  • কিছু বুজলাম না। না বোঝার আনন্দ ই আলাদা।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১১ অক্টোবর ২০১০ ০৬:৩৬462356
  • উরশিমা নামের জেলেটি
    ----------------
    [একটি জাপানী রূপকথার ছায়ানুসারে]

    অনেক অনেক দিন আগে জাপান দেশে উরশিমা নামে এক জেলে থাকত। সারাদিন ধরে সে সমুদ্রে মাছ ধরে বেড়ায়। ঢেউয়ের পিঠে চেপে মাছের পিছু পিছু সে চলে যায় বহু বহু দূর। একবার হয়েছে কি, দিনের পর দিন যায়, মাছের বড় আকাল। উরশিমা সকাল থেকে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল ডুবে রাত – সারাবেলা জাল বিছিয়ে বসে থাকে, কিচ্ছুটি পায় না। এইভাবে অনেক দিনের পর উরশিমা দেখে এক পাঁচরঙা কাছিম গুটি গুটি উঠে এসেছে তার জালে। মাছের বদলে কাছিম, তো তাই সই! পাঁচরঙা কাছিমটিকে নৌকোর খোলে রেখে, অনেক রাত পর উরশিমা খুব ঘুমোল।

    ঘুম থেকে উঠে উরশিমা তো তাজ্জব। কোথায় কাছিম! এতো এক পরমাসুন্দরী কন্যে বসে আছে তার শিয়রের কাছে! কন্যে মিষ্টি হেসে বলল,

    - “আকাশ থেকে দেখতে পেলাম অথৈ সাগর জলে
    ডিঙি চেপে বেড়ায় ঘুরে একলাটি এক ছেলে
    তোমার সাথে কইতে কথা ইচ্ছে হল ভারী
    মেঘে চড়ে, হাওয়ায় উড়ে এলাম তাড়াতাড়ি”

    - “দাঁড়াও দাঁড়াও। মেঘে চড়ে? হাওয়ায় উড়ে? সে আবার হয় নাকি? সত্যি করে বল দেখি, কন্যে তুমি কে?”

    - “আমি হলাম আকাশলীনা, মেঘের দেশে বাস
    অজর অমর সবাই সেথায়, ফাগুন বারোমাস
    আমার সাথে যাবে ছেলে, দেখবে নাকি ভেবে?
    থাকব সাথে যদ্দিন না চন্দ্র-সূর্য নেভে।”

    এমন সুন্দরী কন্যে! সে থাকে আকাশপারে! প্রস্তাব শুনে উরশিমার তো চোখে পলক পড়ে না। সে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, অবিশ্যি অবিশ্যি। নিশ্চয়ই যাব তোমার সাথে”। এই বলে সে আকাশলীনার হাতটি ধরে দুই চোখের পাতা বন্ধ করল। আর নিমেষের মধ্যেই তারা দুজনে পৌঁছে গেল মেঘের দেশে।

    এমন দেশ উরশিমা কখনও দেখে নি। সে দেশের মাটি জেড পাথরের মত হাল্কা সবুজ আভায় উঙ্কÄল। সে দেশের আকাশ বর্ণনাতীত। তারা পৌঁছনো মাত্র পরীর মত সুন্দর ছ’টি মেয়ে ছুটে এল তাদের দিকে। “আকাশলীনার বর এসেছে। শুনছ সবাই, আকাশলীনার বর এসেছে”– বলতে বলতে তারা কলকল করে ছুটে গেল জেড পাথরের শোভায় স্নিগ্‌ধ, সবুজ এক প্রাসাদের দিকে।

    - “এরা কারা?” উরশিমা জানতে চাইল।

    - “বুঝলে না? কৃত্তিকারা ছ’বোন। একই সাথে সারাটি দিন এবং রাতের স্বপন।”

    উরশিমা ভাবে বাহ রে! আকাশের ছ’টি তারা – কৃত্তিকা – তারাও কিনা আকাশলীনার বন্ধু! বলতে বলতেই এক ভারী সুন্দর সৌম্য দর্শন পুরুষ আর তেমনই সুন্দর এক মহিলা বেরিয়ে এলেন প্রাসাদ থেকে। তাঁরা আকাশলীনার মা-বাবা। আকাশপারের অধিবাসীদের সাথে পৃথিবীর মানুষের মিলন – এ ভারী বিরল ঘটনা। আকাশলীনার মা-বাবা বার বার বলতে লাগলেন কত খুশী হয়েছেন তাঁরা উরশিমাকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে। দেখতে দেখতে আরো লোক জড়ো হল। সকলেরই দিব্যকান্তি। এদেশে বার্ধক্য নেই। সকলেই ভারী হাসিখুশি। আকাশলীনা আর উরশিমার বিয়ে উপলক্ষ্যে সক্কলে মিলে খুব আনন্দ করল। নাচে-গানে, অপূর্ব সব খাদ্য-পানীয়ে মেঘের দেশে উরশিমার প্রথম দিনটি ঝলমল করতে লাগল।

    ***********

    দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেছে। উরশিমা আর আকাশলীনা মনের সুখে সংসার করছে। জেড পাথরের দেশটি তার সবুজ দীপ্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে উরশিমার সবুজ মনে, মেঘে মেঘে, আকাশলীনার চোখের তারায়। তিনটি বছর পরে উরশিমার হঠাৎ একদিন ফেলে আসার গ্রামের কথা, পৃথিবীর কথা মনে পড়ল। আহা, সেখানে বিকালগুলি কেমন হলুদ! সাগরের ঢেউয়ে নাচতে নাচতে মাছ ধরতে যাওয়ার সেই দিনগুলি! রাতের আঁধারে সাগরের ফেনা কেমন আলেয়ার মত জ্বলে! সেইসব পুরোনো কথা ভারী মনে পড়ে উরশিমার। তার গভীর দুই চোখে কুয়াশা ঘিরে আসে।

    উরশিমার মনের ভাব আকাশলীনার নজর এড়াল না। সে জানতে চাইল কি হয়েছে। উরশিমা বলল, “গ্রামের কথা, আমার সেই ফেলে আসা পৃথিবীর কথা বড্ড মনে পড়ছে। সে দেশ এমন ঝলমলে নয়। এমন সবুজ আভা ছড়ায় না সেখানে। মানুষেরাও নয় এমন দেবতার মত সুন্দর। তবু তার কথা বড় মনে পড়ছে। খুব ইচ্ছে করছে নিজের বুড়ো বাপ-মাকে একটিবার দেখি।”

    আকাশলীনা বুঝল উরশিমাকে বাধা দিয়ে কোনও লাভ হবে না। দুটিতে মিলে হাত ধরে অনেকক্ষণ হাটঁল চুপচাপ। মেঘের দেশে তখন দিন শেষের ঝিকিমিকি বেলা। অস্ত সূর্যের গোলাপী আলো যখন সন্ধ্যাতারার নীলে মুখ লুকালো তখন আকাশলীনা তার প্রিয়তম উরশিমার হাতে হীরে-মানিক গাঁথা একটি ছোট্ট কৌটো তুলে দিয়ে বলল,

    - “উরশিমা, সবুজ ছেলে, নিজের ঘরে যাও
    সাগরজলে ভাসাও গিয়ে ফেলে আসা নাও!
    আকাশপারের দেশের কথা পড়েই যদি মনে
    ফিরতে যদি ইচ্ছে করে জেড পাথরের বনে,
    কৌটো ছুঁয়ে আমার কথা একটুখানি ভেবো
    মেঘে চড়ে, হাওয়ায় উড়ে ঠিক পৌঁছে যাব।
    কিন্তু বলি একটি কথা, দোহাই তোমার শুনো,
    কোনমতেই এই কৌটো খুলবে না কক্ষনো ”

    আকাশলীনার বাবা-মা ভারী দু:খ পেলেন উরশিমার চলে যাওয়ার সংবাদে। কৃত্তিকারা ছ’বোন সেদিনের মেঘে ঢাকা আকাশে ম্লান আলোর ইশারা হয়ে জেগে রইল। আকাশলীনা হাসি মুখে উরশিমাকে তুলে দিল তার পুরোনো নৌকায়। বুজিয়ে দিল তার চোখের পাতা। নিমেষের মধ্যে আকাশের দেশ ফিকে হয়ে গিয়ে ফুটে উঠতে লাগল সবুজ পৃথিবী। উরশিমার ফেলে আসা গ্রাম। নীল সাগরের ঢেউ তার কিনারে আছড়ে পড়ছে।

    কিন্তু সব কেমন নতুন লাগে। যে পাথরটিতে বসে উরশিমা তার চাঁদের আলোর মত চিকণ জালের পরিচর্যা করতো সেটা সমুদ্রের কত কাছে চলে এসেছে! রাস্তাগুলূ কেমন বদলে গেছে। এই বাড়িগুলৈ বা এখানে এল কোথা থেকে! উরশিমা ভাবে ভুল জায়গায় এসে পড়েছে নাকি! কিন্তু সমুদ্রের গন্ধ যে নির্ভুল বলে দিচ্ছে এ তারই গ্রাম।

    - “আচ্ছা, উরশিমাদের বাড়িটা কোন দিকে বলতে পারো আমায়? ওর বুড়ো বাপ, ওর মা – কেমন আছে তারা? আমায় সন্ধান দিতে পারো তাদের?”

    সাগরপারে জটলা করা কিছু ছেলে উরশিমার প্রশ্নে অবাক হয়ে তাকায়। দূরে এক শ্যাওলা ধরা পাথরের ওপর বসে ছিল এক বুড়োমত লোক। গোলমাল শুনে সে তার জীর্ণ হাতখানি তুলে উরশিমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকল।

    - “তুমি কে হে বাপু? কোত্থেকে আসছ? এসব পুরোনো দিনের কথা জানলেই বা কেমন করে? শুনেছি বটে আমার বাপ-ঠাকুর্দার কাছে উরশিমা নামের এক জেলের কথা। সে নাকি সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে হারিয়ে গেছিল। তাকে আর কেউ কোনদিন দেখেনি। কিন্তু সে তো প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। এতদিন পর উরশিমার খোঁজ করছো, কে হে তুমি?”

    তিনশো বছর! তিনশো বছর কেটে গেছে! উরশিমা ঘাড় নেড়ে বুড়োর কাছ থেকে চলে আসে। ঘুরে বেড়ায় তার পুরোনো গ্রামের পথে পথে। কিচ্ছুটি আর আগের মত নেই। একটা চেনা মানুষ নেই। চেনা বাড়ি নেই। তার ফেলে যাওয়া দেশটি সম্পূর্ন বদলে গেছে। শুধু সমুদ্রটা সেই আগের মতই সশব্দে আছড়ে পড়ছে পাথরের বুকে। দেখতে দেখতে দশটা দিন, দশটা রাত কেটে গেল। উরশিমা বসে আছে সাগরতীরে। হঠাৎ তার মনে পড়ল আকাশলীনার দেওয়া কৌটোটার কথা। আকাশলীনা কথা দিয়েছিল ঐ কৌটো ছুঁয়ে তার কথা ভাবলেই সে চলে আসবে উরশিমার কাছে। আর তাহলেই তো আকাশলীনার সাথে উরশিমা আবার চলে যেতে পারবে মেঘের পারে। এই আত্মীয়-স্বজনহীন নির্বান্ধব দেশে আর থাকতে হবে না তাকে। আনন্দের চোটে উরশিমা ভুলেই গেল আকাশলীনা তাকে কৌটোটা খুলতে বারন করেছিল। সে তড়িঘড়ি হীরে-মানিক জড়ানো সেই মহামূল্যবান কৌটো খুলে বসলো। আর খোলা মাত্রই আকাশলীনার আবছায়া অবয়ব ধূপের ধোঁয়ার মত পাক খেতে খেতে মিশে গেল হাওয়ায় হাওয়ায়, মেঘে মেঘে।

    উরশিমা বুঝল নিজের দোষেই সে চিরকালের মত হারালো আকাশলীনাকে। আর কোনদিন সে আকাশলীনার হাত ধরে মেঘের রাজ্যে হাঁটতে পারবে না, জেড পাথরের আভা মাখা সেই আকাশপারের দেশ তার কাছে আর নেমে আসবে না।

    ***************

    অনেক দিন কেটে গেছে। সাগরপারের ছেলে উরশিমা তার প্রিয় পাথরটিতে বসে তিনশো বছরের পুরোনো গ্রামটির কথা ভাবে। ছেলেবেলার কথা ভাবে। ঘোর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা ভাবে। একবার কেমন মাছের আকাল হয়েছিল আর তার জালে ধরা পড়েছিল এক পাঁচরঙা কাছিম – সেই কথা ভাবে। মাঝে মাঝে এক অদ্ভুত মায়াবী আলোয় আকাশ ভরে যায়। নীলচে ধূসর মেঘের ফাঁক দিয়ে এক ফালি আলো এসে উরশিমার কপাল ছোঁয়। ঝোড়ো সমুদ্রও সেই আলো পেয়ে জেড পাথরের মত সবজে আভায় মসৃণ হয়ে ওঠে। উরশিমা বুঝতে পারে মেঘের ওপার থেকে আকাশলীনার তাকে মনে পড়েছে। সে গলা ছেড়ে গান গেয়ে ওঠে। সবজেটে সমুদ্র শোঁ শোঁ শব্দে সঙ্গত করতে থাকে তার সাথে।
  • Lama | 203.99.212.53 | ১১ অক্টোবর ২০১০ ০৯:১৪462357
  • আমরা সবাই যেন উরশিমা...

    আমরা সবাই কেমন উরশিমা...

    কবে যেন, কোথায় যেন...
  • omg | 151.141.84.194 | ১১ অক্টোবর ২০১০ ২০:৪২462358
  • শুচিস্মিতা, খুব ভালো লাগলো উরশিমা তারোর গল্পের নবরূপায়ন। সবচেয়ে ভালো লাগলো আকাশলীনাকে।
  • jhiki | 233.255.225.73 | ১৭ মার্চ ২০১৪ ২০:৫২462360
  • এই টইটা আগে দেখিনি, দারুণ তো!!
  • rabaahuta | 84.90.225.117 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৫:৫৫462361
  • এইটা আগে ছাপা হয়েছে অন্যত্র, কোথায় মনে নেই। জহর দেবনাথ ধলাই জেলার বাসিন্দা, গল্পকার। এই গল্পটি ত্রিপুরার লোককাহিনী অবলম্বন করে।

    গল্প হিসেবে মূল্য কি জানি না, তবে ত্রিপুরার, বা উত্তরপূর্বের লোককথা নিয়ে তো বেশী কাজ হয় নি।

    আর তাছাড়া উপকথা হিসেবে, আমার ব্যতিক্রম মনে হয়েছে, শিশুপাঠ্য নয়, ঘটনার ঘনঘটা ইত্যাদি।

    ------------------------------------
    সুমতিয়েনের গল্প
    জহর দেবনাথ
    ------------------------------------

    কয়েকদিন হল পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে জামাই-খাটার মেয়াদ শেষ। থানাবুল এবার প্রিয়তমা সুমতিয়েনকে নিয়ে পৃথক এবং সম্পূর্ন স্বাধীনভাবে একান্ত নিজেদের মত করে সংসার পাতবে। ওর পাতানো শ্বশুর পাড়ার গালিম নেইজিরজয় অনুমতি দিয়েছে নিজেদের মানের মতো সংসার পাততে। অবশ্য এরই মধ্যে ওদের একটা পুত্রসন্তানও এসে গেছে।

    নেইতিনসিয়েল-এর বয়সও তিন বছর হয়ে গেল। থানাবুলের অনেক স্বপ্ন। বউ সুমতিয়েন আর ছেলে নেইতিনসিয়েলকে নিয়ে নিজেদের সুন্দর সংসার পাতবে। আগে হলে শশুরবাড়িতে জামাই-খাটনি ছিল সাত বছর। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের অনেক কিছুই পাল্টাচ্ছে। বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হলে গালিম নেইজিরজয় রীতিমত একটা অনুষ্ঠান করেই সর্বসমক্ষে পাতানো মেয়ে আর মেয়ে-জামাইকে আলাদা সংসার পাতার ছাড়পত্র দেয়। সঙ্গে বনজঙ্গল কাটা বিশাল আয়তনের একটি জুমের টিলাও তাদের দান করে। সেইসঙ্গে পরিমাণমত ধান,কার্পাস,তিল ও অন্যান্য সবজি বীজও দেওয়া হয় জুমে লাগাতে।

    সারারাত আনন্দে উত্তেজনায় থানাবুলের ভালো করে ঘুম হয়নি। টাই খুব ভোরে উঠেই তৈরী হয়ে নেয় জুমের টিলার উদ্দেশে পা বাড়াতে। সুমতিয়েন ভোরে একটা কাতরাতে চাল,লংকা আর বার্মার মুঠা বেঁধে সাজিয়ে দেয়। হাঁড়ি-বাসনের কোনো প্রয়োজন নেই। এমনকি আগুন জ্বালাবার জন্য একটা দেশলাই কাঠিরও কোনো প্রয়োজন হয়না। জুমের টিলায় কাজ করতে করতে ক্ষুধার্ত হলে প্রখর রৌদ্রে শুকিয়ে যাওয়া বাঁশে-বাঁশে ঘষে আগুন জ্বালিয়ে, সেই আগুনে বাঁশের চোঙ্গায় ভাত আর বেরমা গুদক তৈরী হবে। আর সেই গুদকেই পরম তৃপ্তি। পিঠে খাড়া ঝুলিয়ে হাতে জঙ্গল কাটার চকচকে ধারালো তাক্কাল নিয়ে নেংটি পরা থানাবুল জুমের টিলার দিকে পা বাড়ায়।

    জুম টিলার বড় বড় গাছ, বাঁশবনসহ অন্যান জঙ্গল আগেই কাটা হয়ে গেছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসের প্রখর রৌদ্রে লুকিয়ে পড়া গাছগাছালি শুকিয়ে খরখরে হয়ে এলে চিত্রের শেষ দিকে আগুনে পুড়িয়ে সব কিছু ছাই করে দিতে হবে। এসব ছাইই হবে জুম ফসলের উত্কৃষ্ট সার। বৈশাখের প্রথম বারিবর্ষণের আগেই জুমিয়ারা নারী-পুরুষ সবাই ছোট বা মাঝারি থুরুং-এ ধান তিল কার্পাসের মিলিত দানাশস্য নিয়ে টাক্কাল দিয়ে ঢালু টিলার গায়ে ছোট ছোট গর্ত খুঁড়ে বীজ বপন শুরু করবে। একটানা পাহাড়ি গানের সুরের তালে বীজ বপনের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে যুবক-যুবতীদের মধ্যে ঠাট্টা মস্করা। গানের সুরই ওদের হৃদয়ের ভাষা। আর জুমের টিলাই হচ্ছে তাদের হৃদয়ের লেনদেনের স্বর্গোদ্যান। থানাবুলের একখান প্রথম কাজ হচ্ছে জুম্তিলার একদম উপরদিকের চূড়ায় একটা অস্থায়ী টংঘর বানানো। জুম লাগানো থেকে শুরু করে একদম ফসল তোলা পর্যন্ত এই অস্থায়ী টংঘরেই বউ সুমাতিয়েনকে নিয়ে স্বাধীনভাবে সংসার করবে। অবশ্য জুমের নিড়ানির পর ফসল পাকতে শুরু করার আগে পর্যন্ত সামান্য বিরতি।
    সেই কোন সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে থানিবুল। ভারী পরিশ্রমের কাজ শুরু করার আগে বাঁশে বাঁশ ঘষে আগুন জ্বেলে দুটি বাঁশের চোঙ্গায় ভাত আর বেরমা চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল নুন নেই। নুন ছাড়া গুদক-ভাত খাওয়া যে কতটা অসহনীয় তা একমাত্র ভুক্তভুগীরাই বলতে পারে। পাড়ার গালিম গাবুরদের কাছে শোনা, এখানকার তিপরা রাজার সঙ্গে প্রতিবেশী কোনো এক রাজার নাকি বিরোধ লেগেছে। আর সেই বিরোধ থেকে যুদ্ধ। এই একটা ব্যাপারে জুমিয়া পাহাড়িরা সমতলের উপর নির্ভরশীল। জুমের তিল-কার্পাস আর সুগন্ধি চাল সমতলের মহাজনের কাছে বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে কিনে আনে লবণ আর বেরমা। কেউ কেউ আবার সুগন্ধি তামাকও কিনে আনে।

    জুমের টিলার নিচের দিকে একটা পাহাড়ী ঝরনার মতো ছোটো ছড়া বয়ে গেছে। আর এই ছড়ার পাড়েই একটা উইঢিবির উপর বসে থানাবুল রোজই মৃত্তিংগা বাঁশ চিরে বেত তলে। টংঘরের কাজে বেত একটা অপরিহার্য উপকরণ। বাঁশফালির উপরের অংশকে ধুক্কা বলে। সেটাকে ফেলে দিয়ে ভিতরের অংশ থেকেই চমত্কার দক্ষতার সঙ্গে বেত তলে থানাবুল। জুমের টংঘরের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসছে। থানাবুলের সুখের স্বপ্ন ভেসে যায়। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওর ফেলে আসা অতীত। থানাবুল আর সুমাতিয়েন উভয়ের জীবনেই একটা অতীত রয়েছে। সেই অতীত যেমন ছিল রোমান্সে ভরা তেমনি বিপদ আর আতংকও কম ছিলনা। রাজপুরুষ তথা খোদ রাজকুমার- ভাবী রাজার মুখের গ্রাস থেকে লোভনীয় শিকার ছিনিয়ে নেওয়াটা কম দুঃসাহসিকতার কাজ নয়।
    ধলাই তখনও এত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি। অবশ্য লংতরাই-এর ঢাল-আবডাল থেকে এঁকে বেঁকে নেমে আসা অসংখ্য ছোট-বড় ছড়ার মিলিত প্লাবনের রূপ দেখলে ধলাইকে সত্যিই সমীহ করতে হয়। ধলাইয়ের পুর্বপাড়ের কাঞ্চনছড়ার পাশে আমাবাসা-বাড়ি গ্রাম। মূলত হালাম অধ্যুষিত এলাকা। আর এই হালাম পাড়ারই যুবক থানাবুল। যেমন তার বলিষ্ঠ চেহারা তেমনি অসীম শক্তি। জুমের টিলায় যখন সে দ্রুত হাতে কুড়াল চালায় তখন সবাই ওর প্রসংসায় পঞ্চমুখ। চোখের পালকে বিশাল বিশাল গাছকে সে ধারাধায়ী করে দেয়। আবার রাতে বাঁশের বাঁশি হাতে অন্য থারাবুল। জ্যোত্স্নারাতে ঝর্নার কিনারে থানাবুলের বাঁশির সুর শুনে আমবাসার সেরা সুন্দরী যুবতী সুমতিয়েন পাগল হয়ে ওঠে। হৃদয় ওর নেচে ওঠে বনময়ুরীর মতো। স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে থানাবুলের কলে নিজের প্রেমের ডালি তুলে দেয়। থানাবুল নিজেও অভিবুত,পুলকিত। পাহাড়িকন্যা সুমতিয়েনের রূপের প্রসংশা আমবাসা-বাড়ি ছাড়িয়ে অন্যান্য পাড়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এহেন সুন্দরীর প্রেমের পরশে থানাবুলের বাঁশির সুরে শিহরণ জাগে। বন-পাহাড়ের পশু-পাখিরাও এমন হৃদয় শিহরিত সুরে মাতোয়ারা।

    মেয়ের পছন্দকে সুমতিয়েনের বাবাও প্রশংসা ণা করে পারেনা। কারণ থানাবুলের কর্মোদক্ষতা আর বীরত্বের কাহিনী সবারই জানা। এমন পাত্রকে মেয়েজামাই করে ঘরে তুলতে অনেক মেয়ের বাবা-ই মুখিয়ে আছে। এমন জামাই ঘরে এলে জুমের ফসলও উঠে আসবে অনেক বেশী। তাইতো সুমতিয়েনের বাবা ঠিক করে সামনের আঘনে জুমের ফসল ওঠার আগেই থানাবুলের বাবার কাছে মেয়ের বিয়ের কথাটা পাড়বে ।

    জুমের টিলায় এখন নিড়ানির কাজ চলছে। এমনি এক দুপুরে জুমের টিলায় নিড়ানির কাজ শেষে একদল যুবতী বাড়ি ফেরার পথে নদীতে স্নান করতে নামে। নিজেদের হাতে বনা মত সুতোর পরনের কাপড়গুলি একবার ভেজালে অনেক সময় লেগে যায় শুকাতে। টাই ওরা পরনের কাপড় খুলে রেখে উদম গায়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে ধলাই-এর বুকে। উদ্দাম আনন্দে নিজেদের মধ্যে জলকেলিতে মত্ত হয়ে ওঠে। পাহাড়ি ঝরনার মতো যুবতীদের মনমাতানো হাসির সুরে ধলাই=এর দুই পারের আকাশ বাতাস শিহরিত হয়ে ওঠে আনন্দে।

    এমনি সময়ে গবয় (বাইসন) শিকার অন্বেষনে রাজকুমার অর্জুন বাহাদুরের আগমন ঘটে। গবয়ের পিছু ধাওয়া করে সাঙ্গপাঙ্গসহ যুবরাজ অর্জুন বাহাদুর বিশালদেহী ঐরাবতের পিঠে চড়ে ধলাই পারে উপস্থিত। টলটলে স্বচ্ছ ধলাই-এর বুকে জলকেলিরত সুন্দরীই যুবতীদের দিকে চোখ পড়তেই রাজকুমার নির্বাক নিস্পলক। ভুলে যায় গবয় শিকারের কথা – এমনকি সঙ্গীসাথীদের কথাও ভুলে গিয়ে যুবরাজ সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকে জলক্রীড়ারত জলপরীদের দিকে। চোখ আর ফেরাতে পারেনা। পলক ফেলতেও ভুলে যায়।

    পার্বতীয়াদের জলক্রীড়া আচমকাই থমকে যায়। নদীর পারে একদম অপরিচিত পুরুষদের দেখে লজ্জায় আরক্ত হয়ে ওঠে যুবতীরা। কিন্তু ওরা নিরুপায়। কী আর করা। শিকারীদের লোভাতুর দৃষ্টির আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে দুই হাতে উন্মুক্ত বুক ঢেকে হাঁটু গেড়ে ওরা ধলাই-এর জলেই বসে পড়ে। এহেন অবস্থায় জলপরীদের সর্বাঙ্গে চোখ বোলাতে গিয়ে সুমতিয়েনের উপর রাজকুমারের চোখ চুম্বকের মত আটকে যায়। পলকহীন চোখে একাগ্র চিত্তে রাজকুমার তারিয়ে তারিয়ে সুমতিয়েনের নগ্ন দেহসৌষ্ঠব উপভোগ করতে থাকে। কোন সুন্দরীটি যুবরাজের মান কেড়েছে তা সাঙ্গপাঙ্গদের বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়না। সুমতিয়েনের দিকে তাকিয়ে সবাই মুচকি হাসে। রাজকুমারের পছন্দকে বাহবা দিতে হয়। এই মেয়েটি সত্যিই সবার চেয়ে সেরা।

    ধলাই-এর পূর্বপারে খুব কাছেই বেশ উঁচু টিলার উপর লাঙ্গাই গোষ্ঠীর আমবাসাপাড়া । রাজকুমার তার গবয় শিকার বাহিনীকে আদেশ করলেন এই পাড়াতেই সাময়িক আস্তানা গড়তে। রাজকুমারের আগমনে তো এই পাড়ার মানুষ আনন্দে অভিভূত। নিজেদের ওরা ভাগ্যবান মনে কারছে। যুবরাজ, মানে, আগামীদিনের মহারাজ স্বয়ং পা রাখার কথা ঘোষণা করেছেন – সে যে কতবড় সৌভাগ্য! পারার গালিম নিজের বাড়িতে বেশ বড় আকারের একটা টংঘর তৈরির কাজ সবেমাত্র শেষ করেছে । অতি হয়ে গেলে রাজকুমারের কর্তামহল। গালিম-গাবুরদের নির্দেশে পাড়ার চালক চাতুর দক্ষ যুবকেরা কাজে হাত লাগে। নতুন ঘরটাতে বেড়া দিয়ে পৃথকভাবে একটা অন্দরমহল তৈরী করা হল। পুরো ঘরটাতেই বাঁশ-বেতের কারুকাজ করে সাজানো হল। ক্রমে ক্রমে যুবরাজের আগমনবার্তায় প্রতিবেশী অন্যান হালাম, কুকি পাড়াতেও সারা পড়ে যায়। রাজদর্শন করতে পড়ে যায় লাইন। অন্যান্য পাড়ার গালিম গাবুররাও মদ,পাঁঠা, মোরগ,সুগন্ধী চাল এবং অন্যান্য নজরানা সহযোগে রাজদর্শনে বেরিয়ে পড়ে। কয়েক ঘর পরেই সুমতিয়েনকে দেখে একজন গালিমকে জানিয়ে দেয় রাজকুমারের পছন্দের কথা। এই পাড়া থেকে রাজকুমার তার মনের মতো ভেট গ্রহণ করবেন শুনে বৃদ্ধ গালিম দারুন খুশী।

    সঙ্গে সঙ্গে সুমতিয়েনকে জানিয়ে দেওয়া হল রাজকুমারের পছন্দের কথা। ওকে বলা হল, সে যেন ভালোমতো চুল আঁচড়ে খোঁপায় রং-বেরং-এর ফুল গুঁজে, রুপার টাকার গয়না পরে সন্ধ্যারাতেই রাজকুমারের অস্থায়ী কর্তামহলে চলে আসে। পাড়াবাসীদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে রাজপুরুষের আগমন ঘটেছে। আকাশের তারা যেন ছিটকে পড়েছে এই আমবাসার লাঙ্গাইদের পাড়ায়। সুমতিয়েন রাজকুমারের মন কেড়েছে এই কথাটা বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। পাড়ার যুবতীরা সব হিংসায় জ্বলে। আর প্রৌড়রা মুচকি হাসে। বৃদ্ধ গালিম সুমতিয়েনের মাকে দেকে বলে - মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে রাজকুমারী বানিয়ে রাজকুমারের মহলে পাঠিয়ে দে। আজকের রাতে সেটা হারাজ্কুমারের সেরা ভেট। গালিম হাসিমুখে আরও বলে- দেখবি, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হয়তবা আমাদের সুমতিয়েনের পেটে রাজবংশের চারাও আসতে পড়ে।এ যে আমাদের পরম সৌভাগ্য।

    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই সমস্ত আকাশ জুড়ে সাদা-কালো মেঘে চেয়ে ফেলে। পূর্বদিকে তাকালে মনে হয় আকাশের মেঘেরা সব লংতরাই-এর জুমের টিলাগুলির উপর নেমে এসেছে। দেখতে দেখতে শুরু হয়ে যায় অঝোর বর্ষণ, বিরামহীন। এর যেন কোন শেষ নেই। কার্তিক মাসের এসময় এই ধারাবর্ষনে জুমিয়ারা সব শংকিত হয়ে ওঠে। জুমের তিল সবে পাকতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় বৃষ্টি যদি তার খেয়ালিপনা বন্ধ না করে তাহলে যে সর্বনাশ! বৃদ্ধ গালিম বাঁশের হুঁকোয় একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলে- জুমের তিল কিছু নষ্ট হবে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের পাড়ায় বসে বাড়িঘরে আগামীদিনের রাজাকে কাছ থেকে দর্শন করা সেও কম পুণ্যকর্ম নয়।

    এই বিরামহীন অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যে সুমতিয়েন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। পাড়া থেকে অনেকটা দূরে নির্জন পাহাড়ের খাদের পাশে থানাবুল আর সুমতিয়েন পাশাপাশি হাতে হাত রেখে বসে। অঝোর ধারায় শীতল বৃষ্টির মধ্যেও থানাবুল তার প্রিয়সীর দু-চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া তপ্ত অশ্রুবর্ষণ অনুভব করে। সুমতিয়েনের চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপে, দৃষ্টিতে ওর আগুন। থানাবুলের বিশাল বলিষ্ঠ কাঁধ খামচে ধরে সুমতিয়েন।
    -এল থানাবুল, আমি এখন কি করব?
    -কেন, সোজা রাজকুমারের অন্দরমহলে চলে গেলেই পার। ওখানে তোমার জন্য কত সোহাগ, কত আনন্দ অপেক্ষা করে আছে। আমি তো আর এমন যোগ্য পাত্র নই!

    থানাবুলের অমন খোঁচা দেওয়া কথায় রেগে ওঠে সুমতিয়েন- দেখো থানাবুল, আমি তোমার তেরচা কথা শুনতে আসিনি। রাজকুমারের সোহাগ খেতে হলে এখানে আসতামনা তোমার অনুমতি নিতে। আমার এই দেহ এবং মন কাকে দেব সেটা আমিই ঠিক করব। আমি জুমের টিলা নই যে ইচ্ছে করলেই কেউ আমার দখল নিয়ে নেবে।
    -তাহলে আমি কী করব বলো? রাজকুমারের সঙ্গে লড়াই করব! তুমি যদি বল, আমি তৈরী। পাশের পাথরের উপর রাখা ধারালো টাক্কালটা বাগিয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায় থানাবুল।
    -না, থানাবুল, তোমাকে লড়াই করতে হবেনা।

    সুমতিয়েন থানাবুলের হাত চেপে ধরে- তার চেয়ে বরং চলো এক্ষুনি আমরা পালাই। এখান থেকে দূরে, অনেক দূরে। যেখানে রাজ্কুমান, রাজা কেউ আমাদের খুঁজে পাবেনা।
    -সত্যি বলছ সুমতিয়েন! সবকিছু ফেলে তুমি পালাবে আমার সঙ্গে! থানাবুল প্রিয়তমার হাত দুটি নিজের হাতে শক্ত করে চেপে ধরে।
    -চলো থানাবুল, গালিম আর রাজকুমারের পাইকরা আমাদের খুঁজে পাওয়ার আগেই আমরা পালাই।

    মাথার উপর বিরামহীন বৃষ্টি। বিকেল থেকে রাতভোর । বৃষ্টির যেন একটুকুও ক্লান্তি নেই। পাহাড় গড়িয়ে কলকল শব্দে প্রচন্ড বেগে বৃষ্টির জল ছুটছে নিচের দিকে। সামনেই ক্ষুদে নদী তিতেংছড়া। তিতেংছড়ার পাড়ে দাঁড়িয়ে সুমতিয়েন আর থানাবুল ভাবছে- যেমন করেই হোক বৃষ্টি থামার আগেই এলাকা ছেড়ে ওদের পালাতে হবে। খুঁজে বার করতে হবে নতুন করে বাঁচার পথ। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টির জল ছড়ার পাড় ডুবিয়ে উপর দিকে ফুলে ফেঁপে ওঠে। ণা, আর দেরী করা যায় না । ওরা পরস্পরের হাত চেপে ধরে দ্রুত পায়ে চালাতে থাকে। আর কিচুক্ষন যেতে পারলেই ধলাই নদী। তখনকার ধলাই এখানকার মতো এত বিশালাকার ছিল না । খুবই সরু কিন্তু অনেকটা গভীর। ধলাই লংতরাং-এর বুক থেকে নেমে আসা অনেক দুরন্ত সব ছোট ছোট ছড়ার জলকে নিজের দায়িত্বে বহন করে অজগরের মতো এঁকেবেঁকে সো-সো গর্জন তুলে ছুটে চলেছে কোনো এক অজানা পথে সাগর সন্ধানে। ঐ ক্ষীণাকার ধলাই এক্ষুনি পার হতে না পারলে ফুলে ফেঁপে ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। যেমন করেই হোক ওরা ধলাই-এর তীরে এসে দাঁড়ায়। ধলাই তখন ক্ষুদ্র সর্পিণীর মতো ফুঁসতে শুরু করেছে। দুরন্ত ধলাই উজান পাহাড় থেকে দুর্বার স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাঁশ আর গাছের লগ।

    ধলাই-এর পাড়ে এসে থানাবুল আর সুমতিয়েন হাতে হাত ধরে কয়েকটা মুহূর্ত নীরব নিস্তব্ধ। কিন্তু হাতে সময় খুব কম। যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। থানাবুল সুমতিয়েনের হাতটা টেনে নিয়ে তাকে ওর মুখের দিকে। আবছা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সুমতিয়েনের চোখের তারা।

    -সুমতিয়েন, আমি ঐ উঁচু ঢিবিটা থেকে লাফ ম্মারছি। নেংটি পরিহিত থানাবুল এক হাতে টাক্কালটা চেপে ধরে। সুমতিয়েনকে বলে- আমি উঁচু ঢিবি থেকে লাফ মেরে ওপারের কাশবন ধরে তীরে উছে যাব। ঘুর্নিপাক খাওয়া প্রচন্ড ঢেউয়ের উপর দিয়ে সাঁতরে নদী পেরোতে গেলে তলিয়ে যেতে হবে অজগরের মতো ধলাই-এর বুকে। কিন্তু সুমতিয়েন, তুমি কি পাড়বে লাফ মেরে ওপারের কাশবন আঁকড়ে ধরতে!

    ভীত হরিনীর মতো সুমতিয়েন চকিতে কয়েকটা মুহূর্ত ভেবে নেয়। মৃত্যু ওর পেছন দিক থেকেও ধাওয়া করে আসছে। এই মুহুর্তে লাফ মেরে ওপারের খাগড়া কিংবা কাশবন ধরে উপরে উঠে পালাতে না পারলে রাজকুমার আর জালিমের লোকদের হাতে ধরা পড়তে হবে। আর ধরা পারলে সেটা হবে খুবই মর্মান্তিক কৃত্যু। যৌবনভরা এই দেহটাকে দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে খন্ড-বিখন্ড করা হবে। সুমতিয়েন মারতে চায়না। খরস্রোতা নদীর সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে চায়, দেখতে চায় আগামীদিনের নতুন সুর্য। - শোনো থানাবুল। নিচু কন্ঠস্বর অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে বলে সুমতিয়েন। দুরে গিয়ে উঁচু ঢিবিটার উপরে ওঠে সে। পরনের পুনবমটা খুলে থানাবুলের দিকে ছুঁড়ে দেয়। গায়ে পোশাক থাকলে লাফানো কিংবা জলে লড়াই করাটা বড়ই কঠিন কাজ। পোশাকটা থানাবুলের দিয়েকে ছুঁড়ে দিয়ে মুহুর্তে একবার লংতরাই দেবতার স্মরণ নিয়ে দীর্ঘ একটা লাফ মেরে দেহটাকে শুন্যে ছুঁড়ে দেয়। থানাবুল নিজেও আর দেরি করে না । ঝাঁপিয়ে পড়ে ভয়ংকর খরস্রোতা ধলাই-এর বুকে। যথেষ্ট লড়াই করে ওপরে উঠেই নলখাগড়া মাড়িয়ে ছুটতে থাকে ভাটির টানের দিকে। অন্ধকারের বুক চিরে নদীর জলের গর্জন ছাপিয়ে থানাবুলের আতংকিত চিত্কার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সুমতিয়েন! সুমতিয়েন! থানাবুলের একটানা চিত্কারের প্রতি উত্তরে এটি ক্ষীণ কন্ঠে সুমতিয়েন সাড়া দেয় – উঃ উঃ ।
    সুমতিয়েনের সাড়া পেয়ে আনন্দে আত্মহারা থানাবুল। কম্পমান সুমতিয়েনকে জলকাদা থেকে টেনে তুলে বলিষ্ঠ দুই হাতে নিজের প্রশস্ত বুকে চেপে ধরে সে।

    বাকি সরারাত আর পরদিনের এক দুপুর পায়ে হেঁটে উত্তরদিকে অনেক দূরে হালাম সম্প্রদায়েরই ডাব উপগোষ্ঠীর এক পাড়ায় গিয়ে সুমতিয়েনকে সঙ্গে নিয়ে থানাবুল আশ্রয় চায়। এরা ক্ষুধার্ত। নিরাপদ একটু বিশ্রামের জন্য আশ্রয় চায় এরা। দুজনের মুখে সমস্ত কাহিনী শুনে পাড়ার গালিম নেইজিরয় গম্ভীর হয়ে কি যেন ভাবে। দেকে পাঠায় পাড়ার অন্যান্য গাবুরদের। পাড়ার ছোট-বড়ো সব সর্দারারাই একসঙ্গে মন্ত্রণাসভায় বসে। ব্যাপার খুবই জটিল। বিপান্নাকে আশ্রয় দেওয়াটা তাদের একটা নৈতিক কর্তব্য। কিন্তু এদের আশ্রয় দিয়ে যদি আবার রাজপুরুষ এবং লান্গাই গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পারতে হয়? অনেক বিচার বিশ্লেষণের পর ঠিক হয়, বিপন্ন এই যুবক-যুবতীকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদের ধর্ম রক্ষা করতেই হবে। আর যেহেতু নাইজেরয়ের কোনো কন্যা নেই, সুতরাং সুমতিয়েনকে গালিম তার কন্যারূপে গ্রহণ করুক। ওরা দুজনেই শক্ত সমর্থ, জুমের টিলায় কাজও করতে পাড়বে। বসে বসে তো আর খাবে না। থানাবুলের অনেক বীরত্বের কাহিনি এই পাড়ার লোকজনেরাও জানে। থানাবুল বীর বলেই নিজের প্রেমিকার ইজ্জত বাঁচাতে রাজদ্রোহী হওয়ার সাহস দেখিয়েছে।

    গালিম যুবা ছেলে পালিয়ে আসা সুমতিয়েন আর থানাবুলকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজেদের মেয়েকে রাজকুমারের ভোগে ভেট দেওয়ার ব্যাপারটা সে সহজভাবে মেনে নিয়ে পারে না। তবে সুমতিয়েনকে নিজের বনরূপে গ্রহন করতে আপত্তি নেই তার। ওরা পালিয়ে এসেছে বেশ করেছে। সেই থেকে সুমতিয়েন পাড়ার বৃদ্ধ গালিমের কন্যা এবং থানাবুল জামাতা হিসেবে গালিমের বাড়িতেই আশ্রয় পায়।

    থানাবুল হারিয়ে গিয়েছিল নিজের অতীত জীবনের ঘটনাপ্রবাহে। অতীতের তন্ময়তার ফলে হাতের ধারালো টাক্কাল আচমকা বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলকে ধারালো আঘাত করে। আঘাত খুব মারাত্মক কিছু না হলেও চমকে ওঠে থানাবুল। অতীতের ভাবনার জগতকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা বুড়ো আঙ্গুলের রক্ত বন্ধ করতে, সে যে ঢিবিটার উপর বসছিল, তারই পাশে মাটির তলা থেকে উঠে আসা ফোয়ারার মতো স্ফটিকজলে রক্তাক্ত বুড়ো আঙ্গুলটা ডুবিয়ে দেয়।

    কিন্তু একি! বরফ-শীতল স্ফটিক জলের সংস্পর্শে আঙ্গুলটা যে আরো বেশী জ্বালা করছে। এমানটাত হবার কথা নয়। চমকে উঠে থানাবুল অজান্তেই স্বাভাবিক নিয়মে রক্তাক্ত বুড়ো আঙ্গুলটা মুখে ঠেসে দেয়। কিন্তু আবার চমক! আঙ্গুল বের করে মুখ থেকে একদলা থুতু ছেটায় সে। ঘটনাটা কি হালা! জলের স্বাদ অমন লাগছে কেন? থানাবুলের সারা শরীরে বিদ্যুতের ঝিলিক। কৌতুহল নিবৃত্ত করতে এবার সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে ফোয়ারার জলের পাশে। ডান হতে এক কোষ জল তুলে মুখে দেয়। কয়েকটা মুহুর্ত। পরক্ষনেই থানাবুল বিস্ময় আর আনন্দে নেচে ওঠে। ভুলে যায় কর্তিত আঙ্গুলের জ্বালা। এ যে লবণ জল! দিনের পর দিন এই অঞ্চলের পাহাড়িরা লবণের অভাবে অতিকষ্টে আলুনি ভাত গিলছে। আর এখানে এই ছোট্ট ফোয়ারা কিনা অফুরন্ত লবণ জলের ভান্ডার! থানাবুল আর দেরি না করে মৃত্তিকা বাঁশের বড়ো বড়ো তিনটে চোঙ্গাতে লবণ তুলে নেয়। কেউ যাতে এর সন্ধান না পায় তার জন্য উপর থেকে বেশ বড়ো চ্যাপটা একটা ক্লু এনে ফোয়ারার মুখে চাপা দিয়ে রাখে।

    এই অসময়ে জামাইকে জুমটিলা থেকে ফিরে আসতে দেখে শ্বশুর বৃদ্ধ নেইজিরজয় বিরক্ত হয়। কিন্তু থানাবুল শ্বশুরের বিরক্তি ভাব উপেক্ষা কার তার পাশেই বসে পড়ে। জলপানের ছোট একটি লাইফেল টেনে এনে চঙ্গা থেকে জল ঢেলে শ্বশুরকে পান করায়। বৃদ্ধ নেইজিরজয় জামাইয়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেও কৌতুহলের সঙ্গেই লাউয়ের জলে চুমুক দেয়। চুমুক দিয়েই “মা চি, মা চি” বলে অধীর আনন্দে লাফাতে থাকে।

    থানাবুলের লবণজল আবিস্কারের গোপন কথাটি এটি সংগোপনে পাহাড়ি হালাম উপগোষ্ঠীর পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এসে লাইনে দাঁড়ায় সেই লবণজলের ফোয়ারার পাশে। থানাবুল নিজের হাতে অকাতারে দিতে থাকে এই লবণজল। থানাবুলের আবিস্কৃত এই নোনাজলে পাহাড়ের হালাম কুকিদের দুষ্প্রাপ্য লবনের চাহিদা মেটাবার গর্বে গরবিনী সুমতিয়েন। কিন্তু এই গর্বের উপরও অচিরেই নেমে আসে অবাঞ্ছিত আঘাত।

    বাতাসে লবণজলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে লান্গাইগোষ্ঠীর গালিম এই নেইজিরজয়পাড়ায় এসে উপস্থিত। সঙ্গে আবার রাজকীয় পাইকবাহিনী। এদের উপস্থিতিতে পাড়াশুদ্ধ সবাই অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত। গালিম নেইজিরজয় সাধ্যমতো পাকবাহিনীকে সমাদর করার চেষ্টা করে কিন্তু পাইকসর্দার এ সব আথিতেয়তার ধারেকাছে না গিয়েই এই পাড়ার গালিম আর গাবুরদের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজদ্রোহিতার অভিযোগ হানে। অভযোগ, রাজদ্রোহী থানাবুল এআর সুমতিয়েনকে ওরা রাজকুমারের হাতে তুলে না দিয়ে এখানে লুকিয়ে রেকেহ্ছে। দ্বিতীয় অভিযোগ – রাজাকে উপযুক্ত কর না দিয়েই পাহাড়ের লবণজল নিজেরা ভোগ করছে।

    পাইকসর্দারের কথা শুনে বৃদ্ধ গালিম এবং পাড়া প্রতিবেশী সমস্ত নারী-পুরুষের বুক কেঁপে ওঠে। এই রাজদ্রহিতার খেসারত না জানি কীভাবে দিতে হবে। সর্দারের এদেশে পাকবাহিনী শক্ত দড়ি দিয়ে থানাবুলকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলে।
    -শোনো গালিম, রাজপুরুষের রোষানল থেকে বাঁচে চাইলে এই থানাবুলকে বন্দী করে যেতে দাও। আর চলো, সেই লবণজলের উত্স আমাদের দেখাও।
    বৃদ্ধ গালিম এবং পাড়াশুদ্ধ সবাই নিস্তব্ধ; বোবা। কারো মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরোয় না। কিন্তু সুমতিয়েনের নাসারন্ধ্র স্ফীত হয়ে ওঠে। দুচোখ দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে বেরোতে চাইছে। নিঃশব্দে ফুঁসতে থাকে সুমতিয়েন।

    রাজার প্রতিনিধির আদেশ অমান্য করার মতো সাহস কারোর নেই। তাই গালিম নিঃশব্দে চলতে থাকে লবণজলের ফোয়ারার দিকে। আর পাইকরা বন্দী থানাবুলকে মাঝে রেখে চলতে থাকে, সঙ্গে বস্তিবাসীরা। সবাই প্রতিবাদহীন, কারণ রাজার প্রতিনিধিদের কোনো কাদের প্রতিবাদ করতে নেই।

    কিন্তু একি! লবণজ্বর ফোয়ারার মুখে চাপা দেওয়া ক্লু-এর উপর দাঁড়িয়ে যে বীরাঙ্গনা সুমতিয়েন।আর সুমতিয়েনকে চারদিকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাড়ার সব প্রমিলা বাহিনী। থানাবুলের বন্দিদশা থেকে এহাত বাঘিনীর মতো গর্জে ওঠে সুমতিয়েন। পাইক সর্দারকে উদ্দেশ্য করে বলে – তোমরা রাজার লোক হাত পার, কিন্তু এই লবণজলের ফোয়ারা তোমাদের কোনো রাজা বানায়নি। এই পাহাড় আমাদের। এই পাহাড়ের সম্পদ আমাদের। তোমাদের যদি লবণজলের স্বাদ নিতে ইচ্ছা থাকে তো এই নাও- পায়ের জোর আঘাতে লোনা জল ছিটিয়ে দেয় রাজার পাইকদেরউদ্দেশ্যে। তারপর আবার বলে- তোমাদের রাজার যদি লবণ জলের স্বাদ নেওয়ার বাসনা থাকে তবে এই নাও- সুমতিয়েন নিজের পরনের কাপরের এক টুকরো ছিঁড়ে সেটাকে লোনাজলে ভিজিয়ে ছুঁড়ে দেয় সর্দারের দিকে। তোমাদের রাজাকে বলো এটাকে ছেঁকে দেখতে।

    সুমতিয়েনের অমন দুঃসাহসিক কর্মকান্ড দেখে উপস্থিত জনতা থমকে দাঁড়ায়। পাইকসর্দার নিজেও স্তম্ভিত।
    -শোনো সর্দার, যদি এখান থেকে প্রান নিয়ে জ্যান্ত ফিরে যেতে চাও, তাহলে এই মুহুর্তে থানাবুলের বাঁধন খুলে দাও। আর তোমরাও পিছু ফিরে দৌড়ে পালাও। নতুবা সব কাটাকে কচুকাটা করে ধলাই-এর জলে ভাসিয়ে দেব। সুমতিয়েন হাতের চকচকে ধারালো টাক্কালটা উপরে তুলে চিত্কার করে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত পাহাড়ি প্রামীলাবাহিনী যার যার হাতের টাক্কাল তুলে রণহুন্কার দিয়ে ওঠে। প্রমাদ গোনে পাইকবাহিনী। গালিম গাবুরেরাও কিছু বুঝে উঠতে পারে না। ওদের এই কিংকর্তব্যবিমুরতা পার্বতীদের সহ্য হয় না। দুই যুবতী টাক্কাল হাতে এগিয়ে আসে। নিজেরাই থানাবুলের হাতের বাঁধন কেটে দেয়। প্রমীলাদের রণচন্ডী মূর্তি দেখে পাইকবাহাদুরদের হাত-পা কেঁপে ওঠে। সর্দার বুঝতে পারে এই পরিস্থিতিতে পিছু হটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। থানাবুল নিজের বন্ধনমুক্ত হাত দুটির দিকে একবার তাকিয়ে নেই। এবার পরনের নেংটি ঠিকঠাক করে নিয়ে উপস্থিত পাহাড়বাসীদের মুখের উপর চোখ বুলিয়ে নেয়।

    তারপর বুক ছিটিয়ে একটা উঁচু ঢিবির উপর উঠে দাঁড়ায়- “ভাইসব, আজকের এই ঘটনাটা কী হল এবং কেন হল? কী অন্যায়টা করেছি আমি? নারীছগী রাজার কাছে আমার বউকে ভেট পাঠাইনি বলে আমি রাজদ্রোহী হলাম? আমরা পর্বতবাসীরা যখন লবনের অভাবে অতিকষ্ট আলুনিভাত গিলছিলাম, তখন কথায় ছিলেন আমাদের রাজাবাহাদুর? কথায় ছিল এই পাইকবাহিনী?”

    থানাবুল গলাখাঁকারি দিয়ে আরো দৃঢ় কন্ঠে বলতে থাকে- রাজার অন্যায় আবদার আর নারী ভোগবিলাস আমরা মুখ বুজে সহ্য সইব না।

    সামনে ফোয়ারার চারদিকে ঐক্যবদ্ধ নারী বাহিনীর দিকে আঙ্গুল তুলে থানাবুল বলে চলে – এই নারীরা রাজার অবিচার আর এই অত্যাচারী পাইকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে। আর তোমরা পুরুষরা? ছিঃ! তোমরা অন্যায় আবদারের কাছে মাথা ঝুঁকিয়েছ। ছি ছি! তোমাদের পরনের নেংটি ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে শুয়ে পার। নতুবা ঐ নারীদের দুপায়ের তলা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলো।

    থানাবুলের বজ্রকন্ঠে সমস্ত পাহাড় গমগম করে ওঠে। একঝাঁক পাখি উড়ে যায় আকাশে। থানাবুল সেদিকে তাকিয়ে গম্ভীর উদাস কন্ঠে বলে – ওই পাখি আর কীটপতঙ্গদের দেখেও তোমাদের শেখা দরকার। দেখতে পাও না, বন্যার সময় হাজার হাজার লাখ লাখ পিঁপড়েরা একসঙ্গে দলবেঁধে মরণপণ লড়াই করে কীভাবে বাঁচে? আমাদেরও তেমনি সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে একসাথে লড়তে হবে- এমরেং ইনসুমখাত অমর।
  • ranjan roy | 192.64.117.122 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ১৭:৪৩462362
  • দারুণ লেগেছে! জাস্ট অসা!

    জেগে ওঠো হুতো! অনেকদিন হল কলম ধর নি। এমন লোককথা/ উপকথা আরও দাও।
  • rabaahuta | 84.90.225.117 | ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ২১:৩৩462363
  • রঞ্জনদা, থ্যাংকিউ, পড়ার আর মন্তব্যের জন্যেঃ) তবে এই গল্পে কিন্তু আমার কলম একটুও নেই, জহর দেবনাথ নামে ত্রিপুরার গল্পকারের লেখা আমি তুলে দিয়েছি এখানে। হ্যাঁ, সন্ধান পেলে অবশ্যই দেবো, আমারও ইচ্ছে আছে।
  • র২হ | 233.186.212.199 | ১৭ মে ২০১৮ ১৬:৪২462364
  • জুমের কথা পড়ে সুমতিয়েন মনে পড়লো।
  • | ১৭ মে ২০১৮ ১৭:৩৮462365
  • আরে হুতো ভাগ্যিস তুললে। দাঁড়াও হুচি ফিরলেই ধরতে হবে চেপে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন