এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • বিষাদবৃক্ষ

    Indrani
    বইপত্তর | ০৫ জানুয়ারি ২০০৬ | ১৭৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • indo | 62.6.139.14 | ০৫ জানুয়ারি ২০০৬ ০১:০০451150
  • আহাহা বরিশাইল্যা অনীক, আরো লিখুন ।
  • Indrani | 202.128.112.254 | ০৫ জানুয়ারি ২০০৬ ১৯:০৬451144
  • মিহির সেনগুপ্তর লেখা বিষাদবৃক্ষ গতবছর আনন্দ পুরস্কার পেয়েছে; বইটির প্রকাশক সুবর্ণরেখা, দেড়শো টাকা দাম।
    মলাটে লেখা আছে,' বিষাদবৃক্ষ একখানি শক্তিশালী এবং বিষাদময় আত্মস্মৃতি যা এই উপমহাদেশের এক ভয়াবহ সময়ের প্রতিবিম্বিত দর্পণমাত্র।'
    অবতরণিকাতে মিহির লিখছেন,'যাঁরা পঞ্চাশের ছিন্নমূল কাফেলা, তাঁদের জীবনভর দু;খ সংগ্রাম, হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়র কথা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে কত লেখা, ছবি, ছায়াছবি। আজও উপমহাদেশ জুড়ে বন্ধ হয়নি তার হাহাকারি চর্চা, রোমন্থন। কেউ সামগ্রিকতায়, কেউনা ব্যক্তিক খন্ডিত গন্ডিতে অব্যাহত রেখে চলেছেন সেই দু:স্বপ্নের ব্রতকথা।
    ....স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম যারা,...যাদের অভিভাবকদের এপারে কোনও সহায়-সম্পত ছিল না চলে এসে স্থায়ী হয়ে, থিতু হয়ে বসার মত, তারা সেদিন কীভাবে তথাকার স্বাধীনভূমিতে বেড়ে উঠেছিল বা কতটা নাগরিক অধিকার লাভ করেছিল, এ গ্রন্থ তারই একটি আলেখ্য রচনার প্রচেষ্টা। একটি সঙ্কীর্ণ এলাকার পটভূমিতে ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার দলিল হলেও তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানে সাধারণ বাঙালী হিন্দু জীবনের চিত্র যে এমনটিই ছিল...শুধুমাত্র রাষ্ট্র, সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একাংশের নির্যাতন, নৃশংসতা, লোভ বা একচোখোমিই নয়, স্ব-সমাজ, স্ব -গোষ্ঠী এবং নিজ নিজ পরিবারের কর্তাদের অপদার্থতা, অকর্মণ্যতা এবং অবক্ষয়ী মনোভাবের জন্যও এই প্রজন্মকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল তার আলেখ্যও এই রচনা...'

    আত্মজৈবনিক এই লেখা যার পরিসর ১৯৫১/৫২ থেকে ১৯৬১/৬২,খুব একটা গুছিয়ে গাছিয়ে লেখা তা নয়, আগের কথা পরে, পরের কথা আগে এবং পুনরাবৃত্তি লেখাটির সুপাঠ্য হওয়ার পথ আটকে দাঁড়িয়ে।
    মিহির নিজেই লিখেছেন,'পুরোনো কথা বলার এই মুশকিল, কথা ক্রমবিন্যাসে আসে না।'
    লেখা শুরু হয়েছে মিহিরের জমস্থান বরিশালের ঝালোকাঠির কেওড়া গ্রামের প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির কথা দিয়ে যাকে মিহিররা বলতেন'পিছারার খাল'। এই খাল দিয়ে দক্ষিনের মহাল থেকে আগত নৌকা ও তদ্বাহিত সামগ্রীর বর্ণনায় জানা যায় মিহির ছিলেন সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী পরিবারের সন্তান।
    এই পিছারার খাল আর সেই খালের পাড়ের জোড়া রেনট্রী এই লেখার ধুয়ার মত ফিরে ফিরে এসেছে।
    পিছারর খাল ঘেরা সেই খন্ডভূমিতে বাইরের খবর বিশেষ আসত না, বাসি খবরের কাগজ আসত মাঝে মাঝে, এই মাত্র। মিহিরদের বৈঠকখানায়, 'বড়বাবু দরাজকন্ঠে তা পাঠ করে গ্রামের মানুষকে মোহিত করে দিতেন।
    ...-বাবু, কাগজে ল্যাখছে কি?
    ...-ল্যাখছে? ল্যাখছে খুব খারাপ। ব্যায়াকে সাবধান হও। খুব খারাপ দিন আইতে আছে।
    ...এমত সময়ে, একদিন বাসি কাগজের খবর,"জমিদারী প্রথা বিলুপ্তিকরণ আইন অচিরেই চালু হইতেছে।" জনৈক মিঞাসাহেব এই খবরের নির্যাস নিয়ে বড়বাবুর দরবারে হাজির।....বড়বাবু, বড়বাবু, খবরের কাগজে কয় কি?
    -...কয় তো খুব খারাপ
    : হেয়া ক্যামন?
    :কাগজে কয় পাকিস্তানে দারি রাখা চলবে না।
    :অ্যাঁ: অ্যাতো মেন্নত করইয়া পাকিস্তন হাসেল অইল আর মোরা দারি রাখথে পারমু না? তয় এ পাকিস্তান লইয়া মোরা কি করমু?
    :...আয়চ্ছা কও দেহি এই যে পাকিস্তান পাইলা হেথে তোমাগো কতহানি মুশকিল আসান অইল?
    :...এহন কেরমে কেরমে হগ্গলি অইবে।
    :অইবে?
    :... এহন আমাগো পোলাপানেরা সারকারি চাকরি আশন পাইবে, ডাক্তার ইনজিনিয়ার অইবে...
    বড়বাবু বললেন, শোনতে খারাপ শোনায় না... যা অউক, তোমরা পাকিস্তান পাইছ, ফাউকাও।তয়, আমি ভালো ঠেকি না।"

    এই বড়বাবু লেখকের জেঠামশাই, লেখকের মতে যিনি'ঐ সময়কার হিন্দু মধ্যস্থভোগী উচ্চ বর্ণীয় মানুষদের একজন প্রকৃষ্ট প্রতিনিধিমূলক চরিত্র।'
    বাবা মা-র কথা লিখতে আবেগ বর্জিত হতে পারেন নি মিহির,হয়ত ঠিক এ'কারণেই বা-মার প্রসঙ্গে বারেবারেই পাঠককে পাশে পাবেন লেখক।
    ....সুগায়িকা মা " সামনের বারান্দার সিঁড়ি-পোস্তায় অর্থাৎ একতলার প্রলম্বিত উঁচু দলুজে বসে, চাঁদনি রাতে গাইতেন-
    সেথা গিয়াছেন তিনি
    সমর আনিতে মায়েরও চরণে
    প্রাণ বলিদানে-
    বাবা তখন তাঁর রোম্যান্টিক স্বভাববশত: খুবই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়তেন।
    বলতেন-কর তো, গানটা পুরাই কর।...
    মা গেয়ে যেতেন....'
    পরবর্তীকালে,মধ্যসঙ্কÄপ্রথা বিলোপের পরে লেখকএর আর্থিক অবস্থা যখন চরম খারাপ, নাটকের 'সীন কাটা ' জামাকাপড় পরতে হয়('কারো ইজেরের পাছায় মুর্শিদাবাদের প্রাসাদের খানিকটা, কারুর সামনের দিকটায় বর্গিরা ঘোড়সওয়ার হয়ে লড়াকু...)আসবাবপত্র বিক্রি করে দিতে হচ্ছে, সেই সময়,
    "বাবা বলছেন,'শ্মশান দেইখ্যা আইলা?...ask for your forgiveness? /do you but mark how this becomes the house,/dear wife, I confess I am old...বাবার ঐ আবৃত্তি, মা কী বুঝেছিলেন জানি না। আবৃত্তি শেষে বাবা বলেছিলেন, কিছু গাও, মা তাঁর কান্না জড়ানো কাঁপা কাঁপা গলায় গেয়েছিলেন...ঝড়েতে বাঁধন টুটে/দিশাহারা ধেনু ছুটে/তাই তরী তব তটে লাগিল এবার'।...বাবা আবৃত্তি করে যান,'..দিন দিন পলে পলে কত সহি?... কষ্টার্জিত ধন নিত্য দেয় রণব্যয়ে,/ জায়া পুত্র অন্নবিনা মরে।'
    ....মা গাইলেন,' এজীবনে মিটিল না সাধ/ভালবাসি।'

    নীলগাজন, কুমীরপুজো অনুষ্ঠান-দাঙ্গার প্রকোপ তখনও তেমন নয়, হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসব আনন্দে ভরপুর-রতনদা, কাঞ্চুদা, তৈয়ব, নাজির দাড়িয়াবান্দা, হাডু ডু খেলার জন্য হাঁক দিচ্ছে-'লোনতা এক/লোনতা দুই, লোনতা তিন'... মুসলমান তালুকদার হিন্দু বক্সীবাবুকে বলছেন,'আপনের মাইয়া, আমার মাইয়া জুদা না।ইন্সাল্লা, যদি কোন হারামীর পোয় মোর মায়গো দিকে চায়...'বক্সীবাবুরা কতটা আশ্বস্ত হতেন বলা যায় না, কারণ'বেশ কয়েকটা বনেদী পরিবার.. বাড়ি তালা বন্ধ করে বা কোনো মিঞা সাহেবদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে ওপারে কিছু ব্যবস্থা করতে গেছেন...কোথাও টিনের চালা, কাঠের ফ্রেমের বাড়ির ভিতগুলি পড়ে আছে। সামান্য পয়সায় কিনে অথবা জবরদখল করে সেইসব বাড়ির আশপাশের গাছপালা কেটে নিয়ে... ঘরের ভেতরটাকে যেন চিতার আকৃতি দিয়েছে...নগেনমশায়ের বাড়ির ভিতটা যখন চিতা হল...' ঐ ক্রীড়াস্থানে 'লোনতাদশ' অবধি ডাকে কেউ আর সাড়া দিল না ।
    দাঙ্গার প্রকোপ শুরু হয়ে গেল-'সদ্য আহৃত স্বাধীনতা, হিন্দু সমাজের উচ্চ বর্ণীয়দের প্রাক্তন ভেদাচারের যন্ত্রণা,যৌবনিক প্রদাহ প্রশমনের সহজ উপায় এবং সর্বোপরি প্রতিশোধ স্পৃহাজনিত রিরংসা-যা প্রতিনিয়ত পত্র-পত্রিকায় প্রচারিত সংবাদালেখ্য থেকে আহৃত, তার প্রকোপ এড়ানো ... খুব সহজ ছিল না।পিছারার খালের আশপাশের হিন্দু সমাজটি তখন একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল।... পারিবারিক শাসন আলগা, অভিভাবকরা উদাসীন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই... সে এক মাৎসন্যায়ী অবস্থা।... তাই যা ঘটবার ঘটেই আর্সেই সংঘটন জন্ম দেয় অন্য এক প্রদাহের....যে যুবতীটি শহর থেকে আসা তথাকথিত মামাদের সাথে সম্পর্ক করতে পারে, সে যদি কোন মুসলমান যুবকের সঙ্গে একদিন সম্পর্ক করেই বসে, তাতে কি?... কিন্তু তাতে যে অনেককিছু... যুগ একটা ব্যাপার এবং তখন সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ব্যাপারটাকে করে তুলেছিল আরো জটিল... এই সময়টিতে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের জাতধর্ম বড় নাজুক ছিল। সামান্য কারণেই তা ভেঙে পড়ত।কারণ তারা সংখ্যালঘু।অন্যপক্ষে মিঞাপুত্ররা যারা উঠতি তারা হিন্দুদের এই সামাজিক অবক্ষয়জনিত অবস্থাটির যথাসাধ্য সদ্ব্যবহার করতে কিছুমাত্র ত্রুটি করছিল না।'
    ..'ঐ সময়টাতে আমাদের ওখানের কোন হিন্দুই মনে করত না যে কোন মুসলমান দাঙ্গা বিরোধী .. হতে পারে... ।হিন্দুদের মুসলমানদের প্রতি অপ্রীতি আমি শিশুকাল থেকেই দেখেছি... কি মুসলমান কি নম:শূদ্র সকলকেই উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজ সমবিচারে নিয়েছিল।আমাদের ওখানের মুসলমান এবং নিম্নবর্ণীয় মানুষ উচ্চবর্ণীয়দের কাছে কোনদিনই ভালো ব্যবহার পায় নি..'
    এদিকে মুসলমানরা যারা বেশিরভাগই গরীব চাষী, 'পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পর ভেবেছিল এভাবেই হয়ত তাদের মুক্তি হবে, তারা জমি জিরাত সাচ্ছল্য গাড়স্থ পাবে.. তা তারা পায় নি।.. হিন্দুদের জমি জিরেত বাগান তারাই পেয়েছিল, যাদের কিছু ছিল। যারা ভূমিহীন তারা পায় নি.. সাময়িকভাবে কিছু বখরা পেয়েছিল, কায়েমিসত্ব কিছুই পায় নি'
    মিহির লিখছেন,'বড় ইতিহসকাররা অনেক ব্যাপকতায় দেশভাগ এবং দাঙ্গাজনিত অনেক কাহিনী লিখেছেন,বলেছেন.. বেশির ভাগই শহর বন্দরের কাহিনী..সেসব ঘটনা উজানিখালের জীবনকে স্তব্ধ করে নি-তখনও আমরা দিব্য ছিলাম। পঞ্চাশ একান্নর দাঙ্গাই .. প্রায় পাঁচশো বছরের সামাজিক ভিতে ফাটল ধরালো। এতকাল ভেদ বিভেদ নিয়ে আমরা একটা বিকাশের স্তরে ছিলাম, হয়ত সেটা একটা সময় সাম্যে আসতেও পারত..'
    অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আরো অনেক বিশ্লেষণ আছে এই বইতে।বিস্তারিতভাবে আছে বরিশালের নানা লোকাচারের কথা-কুমইর পুজা, কাখ্‌ড়া পুজা, কিলিকিলি বাওনঝির গল্প, আপদনাশিনীর ব্রত, সেই সময়কার বাড়ী ঘরের গঠনশৈলী, নাট্যচর্চা, দুর্ভিক্ষ,আর বিবিধ চরিত্র-দাদীআম্মা, হাতেম মাঝি হেডস্যার,প্রসন্নকুমার বিদ্যালয়ের রেক্টর স্যার অশ্বিনীবাবু, মাসিমা, অহীন..
    স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মিহির লিখছেন,'বস্তুত আমাদের ঐ পিছারার খালের সোঁতার আশপাশে গাঁও গ্রামগুলিতে স্বাধীনতা একটা তাৎক্ষণিক উৎসব মাত্রই ছিল..গ্রামীন প্রেক্ষাপটে হয়ত ব্যাপারটা এরকমই হয়। শহরে নগরে ব্যাপারটা আলাদা।' এর রূপকল্প খুঁজে পান মিহির , আখতারাজ্জুমান ইলিয়াসের এই কবিতাংশে:
    'ক্লান্ত চোখে ক্লান্ত চোখের পাতা
    তারো চেয়ে ক্লান্ত আমার পা
    যেথায় দেখি সাধের আসন পাতা
    "একটু বসি" জবাব আসে,-"না'।'
    এই সময়ে বাংলা ভাষা/সাহিত্যকে হিন্দুয়ানি মুক্ত করার প্রচেষ্টার কথা লিখেছেন মিহির-'নজরুলও রেহাই পান নি.. নবজীবনের গাহিয়া গান/সজীব করিব মহাশ্মশান-কলিটির মহাশ্মশান পরিবর্তিত হয়ে হোলো গোরোস্তান।'
    পড়তে পড়তে অসহায় লাগে যখন মিহিরের পিসিমা বলছেন,'ও বড়ো নসু, ও ছোডো নসু, কাইল রাত্তিরে সপপন দ্যাখলাম.. হিন্দুস্তান পাকিস্তান বেয়াক ভাগাভাগি মিডইয়া গেছে।বেয়াক কিছুই আবার আগের ল্যাহান। গোলায় ধান, পুহইরে মাছ,কদম আলি আবার আগের ল্যাহান খাডি দুদ দেওয়া আরম্ব করেছে।'
    মিহির লিখছেন,'হয়ত একদিন আমাদের এই জনপদের কারুর কোনো উত্তর পুরুষ কোনওদিন এই মহাবৃক্ষের যে শিকড়ে নৌকোর কাছি বাঁধা ছিল, তার সন্ধান পাবার জন্য আকুল হয়ে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে পৌঁছবে...সেদিনই হয়ত এই অভিশাপের কাল শেষ হয়ে বুড়ি পিসিমায়েদের আকাঙ্খা পূর্ণ হবে... '

    বইটিতে বানানভুল প্রচুর, বরিশালী কথ্য ভাষা বেশ কিছু জায়গায় রীতিমত অবোধ্য, কোনো ফুটনোট দেওয়া নেই আর লেখায় সাহিত্য খুঁজতে যাওয়া বৃথা(উদ্ধৃত অংশ থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে)-তবু হঠাৎ হঠাৎ সামান্য দু একটি অংশ সাহিত্য হিসেবে মনে থেকে যায়-
    'প্রায় বৃদ্ধকালেও নববর্ষাগমে অধ্যাপকের শ্লোকোচ্চারণ আমার কন্ঠ থেকে নির্গত হয়ে মেঘকে আরো রমণীয় এবং উপভোগ্য করে তোলে-জাতং বংশে ভুবনবিদিতে পুষ্করাবর্তকানাং-যদিও আকাশের এই মেঘ আদৌ পুষ্করাবর্ত মেঘ নয়। সে এক নিতান্ত ছোটলোক নিম্নচাপীয় ঘনঘটা.. অধ্যাপকের মুখখানি উঙ্কÄয়িনীর কবির মুখের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়।'
  • indo | 62.6.139.14 | ০৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০৩:৪৪451145
  • ইন্দ্রাণীদি কেন যে পেশাদার কলমচি হল না বুঝি না। এই কি সাজে তোমারে , এই কি হে তোমার ভূষণ, দিদিভাই!
    তপন(?মোহন) রায়চৌধুরীর লেখা বরিশালের মেমোয়ার্স মনে আছে, দেশ-এ বেড়িয়েছিল! বরিশালের ব্যাপারে আমি একটু স্পর্শকাতর, বাবা-মা দু তরফেই বরিশাল। যদিও যাইনি কখনো।
  • indo | 62.6.139.14 | ০৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০৩:৪৮451146
  • অনেক পুরনো বেদনা হৃদয় খুঁড়ে জাগিয়ে তুললে। বাঙ্গালীর বিষাদজন্ম , শাপজন্ম হয়তো একদিন শেষ হবে। ঋত্বিক, জীবনানন্দ তো আর ফিরে আসবেন না।
  • Indrani | 202.128.112.252 | ০৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০৫:৩৮451147
  • তপন রায়চৌধুরীর ' রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা'।মোহন তপন বোধ হয় চট্টোপাধ্যায়-যাঁর লেখা 'যীশুচরিত', স্মৃতিরঙ্গ'ইত্যাদি।
    আরেকখানি বই বরিশালজাতিকা শান্তা সেনের 'পিতামহী'-প্রতিক্ষণ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বছর দশেক আগে, মোটামুটি এইরকম দেশভাগের সময়টুকুকে কেন্দ্র করেই।
    হাতের কাছে এই দুটি বই-ইএর কোনটি-ই নেই, নইলে একটা তুলনামূলক আলোচনার চেষ্টা করা যেত-আপশোষ হচ্ছে, বিষাদবৃক্ষর সঙ্গে সঙ্গে এই দুটি বই বাড়ী থেকে কেন নিয়ে এলাম না!
    যাঁদের কাছে এই মুহূর্তে তপন রায়চৌধুরি/শান্তা সেনের বইখানা আছে বা অন্য কোন বই-লিখুন না...
  • vikram | 134.226.1.136 | ২১ জানুয়ারি ২০০৬ ০০:৪২451148
  • বহুদিন বাদে এতো ভালো বই পড়লাম।

    বিক্রম

  • aneek | 221.134.179.29 | ২৭ জানুয়ারি ২০০৬ ২২:০৬451149
  • ইন্দ্রনীল একটি অতি প্রিয় দলিল বা বইয়ের নাম করেছেন। রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা বইটি আনন্দ পাবলিশার্স ১৯৯৩ সালে প্রকাশ করে। দ্বিতীয় মুদ্রণ ১৯৯৪ সালে, যার কপি আমার কাছে এই মূহুর্তে দেখছি। দাম তিরিশ টাকা। লেখক অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী (জন্ম ১৯২৬) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ইতিহাসের অধ্যাপক এবং সেন্ট এন্টনী'স কলেজের ফেলো।

    এই লেখাটি ১৯৯২ সালে শারদীয়া দেশ পত্রিকায় বেরোয়। বইটির প্রচ্ছদে লেখাটি সম্বন্ধে মন্তব্য থেকে আংশিক উদ্ধৃতি -

    "এযুগের বাংলা সাহিত্যের আনকোরা স্বাদ যোজনা করল এই গ্রন্থ। তিরিশ আর চল্লিশের দশকে পূর্ববঙ্গের একটি অঞ্চল - বরিশাল জেলা - অর কলকাতার ছাত্রজীবন এর পটভূমি। ........

    সংস্কৃত-ঘেঁষা গুরুগম্ভীর শব্দের সঙ্গে বরিশালী ভাষা মিশিয়ে এক নতুন ও বিশেষভাবে স্বকীয় রচনাশৈলী সৃষ্টি করেছেন এখানে সুরসিক লেখক। তাঁর উপাদেয় ভঙ্গিতে একদিকে যেন হুতোমী, অন্যদিকে সৈয়দ মুজতবা আলীর অনন্য অনুরণন। ................ "

    লেখকের নিবেদন থেকে আংশিক উদ্ধৃতি -

    "............ পাশ্চাত্য দেশে এক নির্লজ্জ প্রথা আছে - পত্নীকে বই উৎসর্গ করা এবং অন্তহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। যে সব মনুষ্য রাস্তাঘাটে খালে-বিলে আলিঙ্গন-চুম্বনে অভ্যস্ত তারা যে ছাপার অক্ষরে বেলেল্লাগিরি করবে এ আর বিচিত্র কি? কিন্তু বলি ব্যাপারটা কি? পত্নীপ্রেম সাধারণ্যে শিঙা ফুঁকে ঘোষণা না করলেই নয়? এ লাইনে যারা বেশী বাড়াবাড়ি করে তাদের বিবি তালাক অবশ্যম্ভাবী। বৌকে ধন্যবাদ দিতে হয় ত ল্যাভেণ্ডার রঙের "যাও পাখী বোলো তারে সে যেন ভোলে না মোরে" - মার্কা কাগজে চিঠি লেখ, লিখে বালিশের পাশে রেখে দে। আমাদের জ্বালাবার হেতু কি?

    এই মনোভঙ্গী সঙ্কেÄও বর্তমান রচনাটির প্রসঙ্গে স্ত্রী ও কন্যার উল্লেখ করতে হল। গত বত্রিশ বছরে স্ত্রী এবং বোধোদয় হওয়া অবধি কন্যা আমার অক্লান্ত ব্যাজর ব্যাজরে উত্যক্ত। লিখতে বসে যেসব অকথ্য কথন আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তার অনেকগুলি তাঁরা মনে করিয়ে দিলেন। সুতরাং এই লেখার দায়ীত্ব অংশত তাঁদের। ......."

    এই বইয়ের একটি অংশের উদ্ধৃতি আমি প্রতিষ্ঠিত কিছু লেখকের মুখে শুনেছি, এবং সম্প্রতি আনন্দবাজারের রবিবাসরীয়তে উল্লেখ হতেও দেখেছি। টইপত্তরের পাঠক-পাঠিকাদের জন্য সেই অংশটি -

    " বরিশালের কৃষকজীবন নিয়ে একটা কিংবদন্তী তখন খুব চালু ছিল। ক্ষেতে বর্ষা নেমেছে, হাঁটু অবধি জল, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দুই চাষী ধানের চারার রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রথমের প্রশ্ন, ' ক দেহি, মহারাণি ভিক্টোরিয়া এহন কি করতে আছে?[ বল দেখি মহারাণি ভিক্টোরিয়া এখন কি করছে?] উত্তর, " হে কি আর আমাগো মত? পাণি নাবতেই পান্থাভাত খাইয়া কাঁথামুড়ি দিয়া উব্বুত।"[সে কি আর আমাদের মত? বৃষ্টি শুরু হতেই পান্তাভাত খেয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে উপুর হয়ে শয়ন করছে] - "বড়হিস্যার বাড়িতে কাঁথা না, লেপ-তোষকের বাহার, আহার্য পান্তাভাত না, পাডার মাংস, দই-মেসডো। মা ঠারইনদের গা ভরা গয়না।" - "ওগুলা হোনার?" - "তয় কি ? এ কি তর আমার মত? এততেও যদি ম'আরাZ না হয়, তয় আর কিসে হবে?" মনুষ্যের কল্পনা আর কতদূর যেতে পারে?"

    ইন্দ্রানীর বক্তব্যের থেকে টেনে নিয়েই পাঠক-পাঠিকাদের জন্য কিছু আরও - রোমন্থন .... পুনর্মুদ্রিত হবার সময়ে বিষাদবৃক্ষের প্রকাশ জরুরী হয়ে পড়ে, এই দুই বইয়ের প্রকাশের পরে অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী ভাষার বিবর্তন স্বরূপ নামে আরেকটি বই লেখেন যাতে তাঁর অপূর্ব রম্যভাষায় বাংলা ভাষার উপর এক অমূল্য রচনা প্রকাশিত হয়েছে।

    চেষ্টা করব যাতে এই বইগুলির সব কটিরই কিছু কিছু অংশ টইপত্তরের মত অসামান্য বিভাগে পেশ করতে পারি।

    ধন্যবাদ ইন্দ্রানী !! ধন্যবাদ ইন্দ্রনীল!! ধন্য বরিশাল!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন