এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নীল মানুষ- হলুদ মানুষ

    P
    অন্যান্য | ০৩ মার্চ ২০০৯ | ৩৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • P | 213.202.180.85 | ০৩ মার্চ ২০০৯ ১৭:৪৬407508
  • ছোটো একটি নিঝুমঝুমে শহর। আর ছোটোখাটো , কালোকোলো কিম্বা রংচঙ্গে কিছু মানুষ-মানুষী। এরা সব তিলেতিলে বাঁচে কিম্বা তিলে তিলে মরে। এরা অধপেটা ভাত খায় আর খায় ফুলপেট মদ বা ছ্যাতলা পড়া পুরোনো মাটীর কলসির জল। আর শুধু খাটে , উদয়াস্ত খাটে। তবু এদের জীবন ও জীবন , মরণ ও মরণ।
    এরা সবাই বাস্তব , মানুষের অস্থিমজ্জায় জড়িয়ে থাকা জীবনের মতো ঘোর বাস্তব।
    কিম্বা ,
    হয়তো উপন্যাসের চরিত্র .....

  • P | 213.202.180.85 | ০৩ মার্চ ২০০৯ ১৭:৫০407517
  • সদর দিয়ে ঘর ঢুকলেই একটা হা লম্বা মতন গলি। দুমানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারে না। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া হয়ে ভাগাভাগি হয়ে বাপ-ঠাকুর্দা আমলের সরু গলি আরো সরু হলো। তা গলি ভালো, রাস্তার লোকেদের চোখ থেকে একটু আব্রু। গলি শেষ হলেই বেবাক ফাঁকা উঠোন। উঠোন নামেই, গোটা গেরস্তালি ই সেখানে। তার বাঁ হাতে ঠাকুরদালান, তার ডান হাতে সার সার দু-তিনটে খুপচি খুপচি ঘর। ঘরের মালিকের ছিরি ঘরের মতন। হাভাতে মার্কা চেহারা , কালো-কুঁচকোনো গালে খরখরে সাদা দাঁড়ি , কোটোরে ঢোকা শ্রান্ত-ক্লান্ত দুটো ভ্যালভ্যালে চোখ। শরীরটা দিনকে দিন নুইয়ে ই পড়ে মাটীর দিকে , খানিক বয়সে ভারে আর বাকি ঘরের মালকিনের গালাগালিতে।এক কালে ভরভরন্ত ঘর ছিল খুব , বড় এক ছেলে , দুই মেয়ে। সব ইশ্‌কুল ড্রেস পড়ে বেরত টুকটুক পায়ে , দেখলেও চোখ জুড়িয়ে আসতো বাপ-মায়ের। শান্তি ছিল ঘরে আর ছিল শ্রী। বছর কয়েক পর ছেলে একদিন মুখে আধফোঁটা বেলকুঁড়ির মতন হাসি নিয়ে জানান দিয়ে গেল রেলের চাকরির খবর , আর সেই ডিপারে্‌ট্‌মনেটের বাঁ-ডান হাতের রোজগারের ভারসাম্য। ঠাকুরদালানের পুজো হয়েছিল সেদিন পুরুত ডাকিয়ে , কাঁসর বগি থালায় তেকোনা টোকো আপেলকুচি , গোল হড়হড়ে কালচে কলার টুকরো আর বুঁচিময়রার দোকানের ছোট্টো ছোট্টো ছানা-কম-সুজি-বেশি রসগোল্লা বিলি হয়েছিল এপাশ-ওপাশের বাড়িতে বাড়িতে। শুধু ঘরের মালিকের বুকে কু ডেকেছিল বারবার , তার বাপ মরেছিল সেই রেলে কাটা পড়ে। এক কুয়াশা শীতের ভোরে। অনেক পরে রোদ উঠলে খবর পেয়ে দেখতে গিয়ে কার-না-কার একটা লুঙ্গি ঢাকা দিয়ে ঘরে এনেছিল বাপকে , শ্মশানে নিয়ে যাবে বলে। রেললাইনের ধারে রেখে এসেছিল দলা দলা রক্ত আর ছিটকে পরা থকথকে ঘিলু।
    কু ডেকেছিল ঠিক ই , রেল ছেলেকে খেলই। না মরে নাই। বেঁচেবুঁচে আছে বেশ , বৌ-বেটী নিয়ে। রেলের কোয়ার্টারেই। রেলই রেখে দিয়েছে তাকে আদ্রা না কোথায়। বাপ-মায়ের কাছে আসতে দেয় না , আসতে দেয় না ন্যাতানো কটা পঞ্চাশ টাকার নোট ও আগের মতন মাস শেষে। শালার রেল।
    মেয়ে ও নাই । নতুনবাজারের এক বইয়ের দোকানের ছোকরা মালিকের সাথে প্রেম এবং বিয়ে। ভালো ই আছে বরং, এ বছর পুজোয় আবার বাপ-মাকে মোবাইল দিয়েছে শখ করে।
    শুধু মালকিনের ছেলের দু:খ কিছুতেই ঘোচে না। সারা জান-জীবন , আসমান-জমিন জুড়ে সে দু:খ ছড়াতেই থাকে , ছড়াতেই থাকে। প্রতিটি নি:শ্বাস পড়ে বুকখালি করা ফোঁপানির রেশ নিয়ে। শুধু ফোঁপানি , কান্না কখওনো নয়। গুমরে গুমরে সে ফোঁপানি শেষ হয় গালবাখানে। তীব্র থেকে তীব্রতর হয় গালাগালি , খরখরে গলায় সারাদিন গাল পাড়ে মালকিন । কখোনো দুনিয়ার মালিকের প্রতি আর বেশিরভাগটায় মোড়াতে বসে ঝিমোতে থাকা ঘরের মালিকের প্রতি। আর সব আক্রোশ গিয়ে পড়ে শালা রেলের উপর আর তীক্ষ্ণ হয় গালাগালির তীর।
    মোড়ায় বসা মালিকের গায়ে এসে এসে লাগে " রেলকাট্টার বেট্টা ,শালা রেলকাট্টার বেট্টা , আমার সারা জীবন জ্বালিয়ে দিলে গো , মর তুই , মর ....................
    তাদের বেবাক ফাঁকা উঠোনে দিনমানের ঝিমঝিমোনো কাঠফাটানো রোদ , পূর্ণিমার হলদে আলো কিম্বা আমাবস্যার ঘনঘোর অন্ধকার সব ঘুরে ঘুরে যায়। স্থির থাকে শুধু কবেকার বেতের মোড়াটিতে বসে থাকা কুব্জ-নুব্জ আলো-রং হীন লোকটা আর তাকে ঘুরে ঘুরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় কটি কথার তীর " রেলকাট্টার বেট্টা , শালা রেলকাট্টার বেট্টা ......................."

  • Paramita | 63.82.71.141 | ০৪ মার্চ ২০০৯ ০৩:৩৪407518
  • থামলি কেন? বাজা বাজা ..
  • P | 213.202.158.254 | ০৪ মার্চ ২০০৯ ২০:৪৬407519
  • -------------------------------------------------------

    কাত্তিক রিকশো চালায়। আর তার বৌ কাজ করে কালীপাড়ার এক বুড়ো-বুড়ির ঘরে। কাজ কম , বুড়ো-বুড়ি থাকে একা একা, দোকা দোকা।তাদের ছেলে সেই কোন বিদেশে , টুকটুকে স্কার্ট পরা বৌ আর আপেল-আপেল গাল ছেলে নিয়ে আসে নমাসে-ছমাসে আর বৌ-এর মাইনে বাড়িয়ে দিয়ে যায়। বুড়ো-বুড়ি ভালবাসে খুব বৌকে আর বৌএর কচি কচি ছেলেমেয়েগুলোকেও। বাজারফেরত বুড়ো বৌকে এসে হেসে বলে "ওলো , তোর কাত্তিককে দেখলুম ময়ূর চড়ে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে খুব বাজারে বাজারে"। বৌ হাসে মিটিমিটি। চুকচুকে তেলালো চুলে সযতনে সিঁথি কাটা , গায়ে পরিষ্কার জামা আর প্যান্টে কাত্তিককে সবাই বলে কাঁচা কাত্তিক। খুব চেহারায় নজর। পুকুরে চান সেরে এসে চুল আঁচড়ানো আর শেষই হয় না , ভাবতে ভাবতেই বৌ দ্যাখে কোলের মেয়েটা আর কোলের কাছে নাই , কাজের মধ্যে টুকটুকিয়ে চলে গেছে কোথায় ।
    "বুনি , ও বুনি ......... কোথায় গেলি"।
    রিনরিনে মিষ্টি গলা হাওয়ায় ভেসে ভেসে আসে " এই তো আমি , বাগানে চট পেড়ে শুয়ে আচি"।হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যায় কটি শব্দ বুড়ো-বুড়ির কানেও। হাসির হররা ওঠে বসার ঘরে। "এই বুনি , পেড়ে নয় পেড়ে নয় , পেতে বল"।
    এর মাঝেই বুড়ো-বুড়ির মেয়ে আসে দুয়েকদিনের জন্যে , পাটনা থেকে। সাথে আসে বৌএর জন্যে পুরোনো নরম তাঁতের শাড়ি , বুনির জামা , কাত্তিকের জন্যে কাঁধের-কাছে-অল্প-ফুটো-ওয়ালা দামী পুরোনো সোয়েটার।

    শেষমেষ বুড়ো-বুড়ির অনেক তদবির আর পাটনার দিদির বোঝানোতে কাত্তিক রাজী হল বুনিকে পাটনায় পাঠাতে। কাজ তো নেই কিছু , শুধু হাতাটা-খুন্তিটা হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়া। খাবে-পরবে ভালো , সাথে কয়েকশো মাইনে। আর ভালমানুষ দিদি বলেছে সন্ধ্যেবেলায় পড়াবেও বুনিকে একটু-আধটু। ভালো ই করেছিল কাত্তিক আর বোয়। পুজোতে বুনিকে আর চেনা যাচ্ছিল না। ম্যাড়ম্যাড়ে বাদামী-রঙ্গা উড়োচুলে এখন চুকচুকে তেলালো বিনুনি আর তাতে বেগনেরঙ্গা মোটা গার্ডার পরেছে আবার ওড়না দেওয়া পুঁটকে সালোয়ার।" কেমন দেখলে মেয়েকে , কোলছাড়া করতে দিতে না , সে এখন কত কাজ শিখেছে , ও বুনি নিজের নাম লিখে দেখিয়ে দিস তোর বাপকে একবার"। মেয়ের লজ্জা-লজ্জা হাসি দেখে কাত্তিকের বুকে তখন চড়াইপাখীর তুরুক-তুরুক নাচন।

    সেই বুনি। সেই একই বুনি হারিয়ে গেল। না , বোধহয় চুরি হয়ে গেল। এক ভেজালেবুপাতার গন্ধভরা ঝিমঝিমি বৃষ্টির বিকেলে পাড়ার দোকান থেকে ছটা ডিম কিনতে গিয়ে মিলিয়ে গেল কোথায়। কেউ দেখল না , কোথায় গেল। কিন্তু সেবারে গোটা বর্ষাটা জলের বিন্দু র টুপ টুপ আওয়াজের সাথে যুগলবন্দী করে গেল গোটা পাড়ায় কটা ফিসফিসে কথা , একটা জীপের কথা, আর দুটো না তিনটে জীন্সপরা ভদ্রমতন দেখতে ছেলের কথা। কোত্থাও কিন্তু কোনো আওয়াজ উঠলো না।যদিও উঠলো সে কে অনেক পাটনা থেকে অনেক দুরে , বৌ কাঁদল খুব মাথা কুটে কুটে। রুখু চুল হাওয়ায় উড়িয়ে উড়িয়ে।তারপর সব শান্ত হলে কোলের কচি ছেলেটাকে দুধ দিতে বসল বুকে চেপে ধরে।
    কাঁদল না শুধু বুনির বাপ। ঠায় বসে রইল বারান্দার ধাপির একধারটিতে। জড়োসড়ো আর শীতশীত। আর তারপর কাত্তিকও হারিয়ে গেল একদিন। আবার ফিরল ও। দু-হপ্তা রিকশা নিয়ে গেল এদিক ওদিক , আবার হারিয়ে গেল। বৌ জানল না কিছু , কোথা গেল। শুধু তার আগের হপ্তায় ডমপাড়ার পচুই এ দোকানদার শুনল মদের ঘোরে কাত্তিক বিড়বিড় করছে " সোনাগাছি , এবার সোনাগাছি........ লিয়ে আসব তকে ঠিক খুঁজে একদিন , থাক যেখেনে আছস। আমি তকে লিতে আসবই একদিন"।
    বৌ রয়ে গেল একা কটি উদোম ছেলেপুলে নিয়ে , তাদের লোহারপাড়ার পুকুরের ধারঘেঁষা ছোটো খালি খালি ঘরটিতে। শুধু মজা জল-কচুরীপানা পচা-গু-গোবরের গন্ধ , ভরসন্ধ্যের হঠাৎ হঠাৎ কান্না আর বুনির ছোটোখাটো মানসকায়াটি ভরে ভরে রাখে তাদের ঘরটিকে।

    -------------------------------------------------------------

  • pi | 128.231.22.89 | ০৪ মার্চ ২০০৯ ২১:৪৩407520
  • কেমন মন খারাপ আর মন ভালো করে দেওয়া গল্প ...
  • Riju | 121.241.164.22 | ০৫ মার্চ ২০০৯ ১০:০২407521
  • পাল্লিন কেন আরো বেশী বেশী লেখে না :-(
  • Tim | 71.62.2.93 | ০৫ মার্চ ২০০৯ ১১:৫৮407522
  • ছুঁয়ে দেখা যায় এমন লেখা।
  • d | 117.195.41.171 | ০৫ মার্চ ২০০৯ ২৩:৪২407523
  • কখন থেকে বসে আছি ....
  • Arijit | 61.95.144.123 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ০৯:৫৫407524
  • ও বুড়ি - থামলি ক্যানে রে?
  • Shn | 123.201.130.118 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ১৩:০৬407509
  • আশায় আশায় বসে আছি...
  • P | 78.16.130.60 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ১৭:২৮407510
  • ---------------------------------
    শান্তনু শেষমেষ পাগল হয়ে গেল। একটু এক্সেϾট্রক বরাবরই , কিন্তু এমন বদ্ধ পাগল হবার তো কোনো লক্ষণ ছিল না আগে। অগা কলেজের অ্যাকাউন্টেসিতে অনার্স ভাই এর দুই দাদাই ডাক্তার বলে চাপ ছিল একটু , কিন্তু তাই বলে পাগল হয়ে যাবে ! বছরকয়েক যদিও চলল চাপাচুপি দিয়ে , কিন্তু তারপ গোটা শহরে ঢি ঢি , শান্তনু ক্ষেপে গেছে। ততদিনে ময়লা ময়লা জামা প্যান্ট পরে বিড়বিড় করে বকতে বকতে হনহনিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখেও শহরের লোকে অভ্যস্ত। কাউকে ঘাঁটায় টাঁটায় না ,শান্তনু এক শান্ত শিষ্ট পাগল।
    ওদের বাড়িতেও বদল এসেছে কিছু। আদি বাড়ির এক অংশ রেনোভেট করে হয়েছে ক্লিনিক। এক অংশে ঝাঁচকচকে মার্বেল এর কিচেন-ডাইনিং-লিভং ইত্যাদি। আর পুরোনো অংশে থেকে গেছে কিছু অদরকারী তালাবন্ধ গেস্টরুম আর বাথরুমের কাছের বড়ঘর।চুপচাপ খায় , থাকে , হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে ইতিউতি ঘুরে বেড়িয়ে আবার ফেরে। শান্তনু এক শান্ত শিষ্ট পাগল।
    শুধু একদিনই রাস্তায় কিছু ছেলেপুলে তার বিড়বিড়ানি নিয়ে বিরক্ত করলে ক্ষেপে উঠে সে কি চিৎকার। "শালা , শালা বাঞ্চোতের বাচ্চা , এস টি ডি লাগিয়ে দোবো , এস টি ডি , বুঝবি তখল ঠ্যালা " ।
    সেদিন পাড়ার বাচ্চাগুলো বিকেলে খেলার মাঠে একে অপরকে ঠেলা দিয়ে খিলখিলিয়ে হাসে বলে "এস টি ডি লাগিয়ে দোবো , লোকাল নয় , সোজা এস টি ডি"।
    এর মুখ তার মুখ থেকে পাড়ার বড়দের কানে আসতেও সময় নেয় না। এস টি ডি যে শুধু ফোনকলের ব্যাপার নয় তা মোটামুটি সবই বোঝে এবং শান্তনুর দাদাদের ও বোঝানো হয়। শান্তনু নাকি আগের মত শন্তশিষ্ট আর নেই , একটু যেন ফেরোশাস , গালাগালি ও করছে বাচ্চাদের , সেগুলো বাচ্চারা শিখছেও এবং পাড়ার পরিবেশ না কি একটু হলেও কাদাতে-ঘোলাটে হচ্চে।
    শান্তনুর দুই দাদা বুঝুক না বুঝুক , বৌদিরা বোঝে খুব। বোঝায় ও খুব। তারপর একদিন তালা পড়ে শান্তনুর বড়ঘরটিতে। একদিন চুপ্‌চাপ , দুদিন ধাক্কাধাক্কি আর তিনদিনের দিন থেকে ভেসে আসে অজস্র গালাগালি কিম্বা অনুনয়-বিনয়।সারা দিন , সারা রাত। তারপর আবার চুপ আর খানিকবাদের বিড়বিড়িয়ে গালাগালি আর গলা ফাটিয়ে গালাগালি।

    শেষমেষ সমস্যার সমাধান হয়। বাঁধাছাঁদাও । বড় গাড়ি বলা হয় সেদিন , সকাল সকাল খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়া। তোড়জোড় গোটা বাড়িতেইআর এমনসময়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসে পড়লেন ওবাড়ির জেঠীমা। ছলছলো চোখে শান্তনুর ঘরের জানলার কপাট খুলে দেখেও এলেন একবার , ডাক্তার দাদাদের প্রণামের সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেলেন কতশত " তোর বাবার বড় প্রিয় বৌদি ছিলাম আমি রে আর আজ তার শ্মশানযাত্রা দেখে আবার তার ছোটো ছেলের শ্মশানযাত্রা দেখতে হাচ্চে আমাকে।"
    বড়বৌ অবাক হয় খানিকটা। " এ কি জেঠীমা শ্মশানযাত্রা বলছেন কেন। শান্তনুকে তো রাঁচীতে নিয়ে যাওয়া হচ্চে চিকিৎসার জন্যে। কোলকাতার ডাক্তারের ঐ গাদাগাদা ঘুমের ওষুধের থেকে তো ভালো হবে"।
    "দেখো বড়বৌমা কিছু মনে কোরো না , এই বয়সে যদি ভাবি শান্তানু পাগলাগারদে গিয়ে সুস্থ হয়ে ঊথবে আর তারপরে তোমরা আবার এরকম বড় গাড়ি ভাড়া করে তাকে ফেরত আনতে যাবে , সে হয়তো আমি এ জীবনে দেখবো না। যাগ্গেযাক তোরা বেড়িয়ে পড়। আমার না এলেও হতো , কিন্তু কেমন যেন টানে চলে এলুম রে , আমার কথা ধরিস না। "।

    দুই দাদা দুদিকে ধরে ধরে শান্তনুকে গাড়িতে তোলে। চুপচাপ উঠেও পড়ে সে । তারপর বায়না ধরে মাঝখানে না বসে জানলার পাশে বসবে সে। শুরু হয় পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি। শেষমেষ মেজদাদা ঠিক করে বসলেও বা ক্ষতি কি , সে¾ট্রাল লকিং তো আছে।
    খুব খু শি হয় শান্তনু জানলার ধারে বসতে পেয়ে , হেঁচকি তুলে তুলে হাসে একচোট। দু বৌদি আর জেঠীমা সদরে দাঁড়িয়ে দেখে হাল্কা কালো ঘোলাটে কাঁচের ওপারে শান্তনুর হাসি-হাসি-খুশি-খুশি মুখ। শান্তনু বিড়বিড় করে বলেই চলে কি সব। খুব ধীরে ধীরে , আর ফিকফিক করে হাসতে হাসতে। পাশে বসে বড় দাদা মুখের কাছে কান এনে শুনতে চায়। তারপরে হেসে ওঠে , ভেসে ওঠে । মেজোর দিকে তাকিয়ে বলে পাগল কি আর সাধে বলে কি বলছে শুনছিস ?
    শান্তনু , শান্ত শিষ্ট পাগলটা তখন ঝাঁকড়াচুলো মাথাটা তখনো ফিকফিকিয়ে হাসে , আর হাল্কা হাল্কা আগে পিছে দোলে , সাপের মতন দোলে আর দোলার ছন্দে ছন্দে ফিসফিসিয়ে বলেই চলে " দন্ত্য ন , পায়খানায় নেমন্তন্ন ............ দন্ত্য ন , পায়খানায় নেমন্তন্ন ............... দন্ত্য ন , পায়খানায় নেমন্তন্ন"।

    ---------------------------
  • vikram | 193.120.76.238 | ১২ মার্চ ২০০৯ ১৯:৩৩407511
  • বাড়ে তুললাম
  • vikram | 83.147.169.191 | ০৪ এপ্রিল ২০০৯ ২৩:৪০407512
  • তুললাম।

    বিক্রম
  • I | 59.93.162.202 | ০৫ এপ্রিল ২০০৯ ১২:৪৩407513
  • এই মেয়েটা বড় ভালো গপ্পো বলে।
  • benil | 122.160.115.202 | ০৭ এপ্রিল ২০০৯ ১২:৪৫407514
  • খুব ভলো গোল্পো।।। সেশের গোল্পো ত খুব ই ভলো লেগেচে।।।
  • d | 117.195.35.252 | ২৪ নভেম্বর ২০০৯ ২১:০১407515
  • ও পাল্লিইইইইইইইইইন ..................
  • . | 159.53.78.142 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০০:১৪407516
  • মিয়াও
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন