এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আলো আঁধারী

    Swapan Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মে ২০২৪ | ৯৫ বার পঠিত
  • সেবার গিয়েছিলাম ঘাটশিলা। আজ থেকে অনেক বছর আগে। তখন আমার বয়স কতই বা হবে ! আট কি নয়। কিন্তু সেখানে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা এখনো আমার স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে । 

    ১৯৬৪ সালের কথা। এপ্রিল মাস। সবে দাদার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাবা একদিন কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এসে মাকে বললেন - “ চল, ক’দিনের জন্য ঘাটশিলা ঘুরে আসি। আমার সহকর্মী ব্যানার্জির এক আত্মীয়ের ঘাটশিলায় একটা বাড়ী আছে। কেউ থাকে না সেখানে। ব্যানার্জি সপরিবারে যাচ্ছে। ওর কাছে শুনে আমারও যাবার ইচ্ছা হল। আমার কথায় ব্যানার্জি ত’ একপায়ে খাড়া। স্ত্রী আর দুটো মেয়েকে নিয়ে যেতে একা একা ও একটু ভয়ই পাচ্ছিল। আমরা গেলে ওর সুবিধাই হয়। আর তোমারও শরীরটা কিছুদিন যাবত ভাল যাচ্ছে না। ছেলেটার ওপর দিয়েও পড়াশুনার খুব ধকল গেল। চল, কদিন একটু বিশ্রামও হবে, ঘাটশিলার স্বাস্থ্যকর জলহাওয়ায় শরীরটাও চাঙ্গা হবে তোমার। “ কিছুদিন আগে মায়ের পাকস্থলীতে একটা অস্ত্রোপচার হয়। ফলতঃ সেইসময় মায়ের শরীরটা বেশ দুর্বল ছিল। 

    অতএব যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। লটবহর নিয়ে ঘাটশিলা রওনা হয়ে গেলাম। বাবা, মা, দাদা , আমার থেকে বয়সে সামান্য বড় দুই দিদি আর আমি। সঙ্গে ব্যানার্জি কাকু , কাকিমা আর তাঁর দুই মেয়ে যাঁরা আমার দিদিদের থেকে বয়সে কিছু বড়ই ছিলেন। 

    আজকের ঘাটশিলার সাথে তখনকার ঘাটশিলার ছিল আকাশপাতাল তফাত। খুব বেশী লোকবসতি ছিল না। আর সেই কারণে বাড়ীও কম ছিল। রাস্তায় বৈদ্যুতিক আলোও যথেষ্ট ছিল না। তবে তখন অনেক ধনী লোকজন ঘাটশিলায় অবকাশ যাপনের জন্য বাড়ী তৈরী করে রাখতেন। আর বাড়ীগুলিতে বৈদ্যুতিক আলোরও কিছু কিছু ব্যবস্থা থাকত। নিজেরা যেমন মাঝে মাঝে সেখানে কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আসতেন, ঠিক তেমনি তাঁদের আত্মীয়স্বজন থেকে বন্ধুবান্ধবেরাও প্রয়োজনে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেন।

    ঘাটশিলায় এমনই একটি দোতলা বাড়িতে আমরা সকলে গিয়ে কিছুদিনের জন্য ঠাঁই নিলাম। নীচের তলায় আমরা রইলাম দুটি ঘরে আর ওপরের দুটি ঘরে ব্যানার্জি কাকুরা। বাড়িটি পুরোনো হলেও বেশ ছিমছাম,পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। তবে শহরের একেবার শেষপ্রান্তে। ফলে আশেপাশে কোন মানুষজনের বসতি ছিল না বললেই চলে। কেবল খানিক দূরে দুএকটা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ছোটখাটো দোকান ছিল। 

    বাড়ীটি যিনি দেখভাল করতেন সেই পাণ্ডেজী মানুষটি বেশ সদাশয়, অমায়িক প্রকৃতির। তাঁর কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে গত প্রায় সাড়ে তিন বছরের বেশী সময় বাড়িটিতে কেউ না আসলেও, তিনি কিন্তু বাড়িটির পরিচর্যায় কোন ত্রুটি রাখেন নি। আর তাঁর কথা যে মিথ্যা ছিল না সেটি বাড়িটিতে পা রেখেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি একজন সহকারী এবং সহকারিণীও ঠিক করে দিয়ে গেলেন মায়েদেরকে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্য। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। অবশ্য বিকাল হতে না হতেই তাঁরা চলে যেতেন। শত চেষ্টাতেও তাঁদেরকে আটকে রাখা যেত না।কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলতেন যে তাঁদের বাড়ী ছিল নাকি অনেক দূরে। কিন্তু আমাদের মনে হত অন্য কিছু কারণও আছে, যেটা আমাদের কাছে তাঁরা গোপন রাখতেন। বাড়ীটিতে আরও একটি অসুবিধা ছিল। সেটি হল বৈদ্যুতিক বাতির অপ্রতুলতা। রাত্রির অন্ধকার নেমে আসার পর একটা গা-ছমছমে আলো-আঁধারী পরিবেশ যেন আমাদের গিলে খেতে আসত।

    যাই হোক, সব মিলিয়ে আমাদের ছুটির আনন্দে কোন খামতি ছিল না। টাটকা দুধ, মাছ, শাকসবজি-একেবারে যাকে বলে বিশুদ্ধ আহার। এর সাথে ঘাটশিলার ও তার আশেপাশের  বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানগুলি যেমন রঙ্কিনীদেবীর মন্দির, ফুলডুংরী  টিলা,বুরুডি হ্রদ, ধারাগিরি ঝরনা, সুবর্ণরেখা নদী, গালুডি বাঁধ,পঞ্চপাণ্ডব পাহাড় আমাদের মন কেড়ে নিয়েছিল। মায়ের শরীরটাও দেখলাম কদিনেই অনেকটা ভাল।

    কিন্তু তারপরেই ঘটল এমন কিছু ঘটনা যা আমাদের ছুটির আনন্দটাই যেন মাটি করে দিল। একদিন রাত্রে হঠাৎ রান্নাঘর থেকে একটা শব্দ কানে আসতে মা ঘরের দরজা খুলে বাইরে এলেন। মায়ের ছিল অসীম সাহস। বাইরে এসে আলো জ্বালিয়ে মা দেখলেন যে রান্নাঘরের দরজার শিকলটি বন্ধ । অথচ একটি কিশোরী যেন রান্নাঘর থেকেই বেরিয়ে দুতলায় উঠে গেল। মা কিছুটা অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি বাবাকে ডেকে পুরো ঘটনাটি বললেন। কিন্তু বাবা হেসে উড়িয়ে দিলেন। মা আলো আঁধারী পরিবেশে কিছু ভুল দেখে থাকবেন আর রান্নাঘরে ঢোকার জন্য  কোনো বিড়াল হয়ত দরজায় ধাক্কা মেরেছিল যার শব্দই মা শুনেছিলেন-এই ছিল বাবার অভিমত। মা কোন তর্কে গেলেন না। এমনকি পরের দিন যখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যানার্জীকাকুও মাকে নিয়ে হাসিমস্করা করলেন, তখনও মা চুপ করে রইলেন। 

    এমন করে আরো দুদিন কেটে গেল। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা সকলে একটা ঘরে বসে গল্প করছিলাম। আমরা মানে বাবা, মা, দাদা, দুই দিদি আর আমি। ব্যানার্জীকাকুরা একটু আগেই দোতলার ঘরে চলে গেছেন। জানালা থেকে সামনে উঠোনটা দেখা যাচ্ছিল আলোয় আলোকময়। 

    উঠোনে একটা ইঁদারা ছিল আর তার পাশে একটি শিমূলগাছ যেখানে একটা দোলনা টাঙান ছিল। হঠাৎ আমার নজরে পড়লো একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি। কে যেন সেখানে পিছন দিক ফিরে বসে দোল খাচ্ছে। ঠিক যেন আমার বড়দিদির মত। কিন্তু কি করে সেটা সম্ভব ! বড়দিদি ত’ আমার পাশেই বসে আছে। ইতিমধ্যে মনে হয় বাবা মা, দাদা, দিদিদেরও নজর পড়েছিল দোলনার দিকে। বাবা ত’ উত্তেজনায় চিৎকারই করে উঠেছিলেন বোধহয় - কে, কে ওখানে ! কিন্তু তারপরই আমরা কারোকে সেখানে দেখতে পেলাম না। সবারই যেন কেমন একটা ভয়ের অনুভূতি হচ্ছিল বোধ হয়। কারণ কেউই আর কোন কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না। আর ঠিক তখনই দুতলা থেকে ব্যানার্জিকাকুর মেয়েদের আর্তনাদ শুনতে পেলাম। হুড়মুড় করে আমরা সকলে দোতলায় উঠে দেখলাম যে ব্যানার্জিকাকুর দুই মেয়ের যেন কেন বিহ্বল অবস্থা। চোখগুলো ভয়ে সাদা, ঠকঠক করে কাঁপছে। কোন কথা বলার অবস্থায় বুঝি নেই। ইতিমধ্যে কাকু কাকিমাও ওদের ঘরে চলে এসেছিলেন । 

    কিছুক্ষণ বাদে একটু ধাতস্থ হয়ে তারা যা বললে তা তাদের ভাষাতেই বর্ণনা করি - “ আমরা দুই বোন গল্প করতে করতে সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎই দেখি খাটের পাশে যে চেয়ারটা রাখা আছে সেখানে একটি মেয়ে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমরা চিৎকার করার সাথে সাথে সে যেন কোথায় মিলিয়ে গেল।”

    ব্যানার্জিকাকু যথারীতি তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন যে এসব হচ্ছে অলীক চিন্তা, বেশী গল্পের বই পড়ার কুফল। কিন্তু বাবা এবার তাঁর কথার প্রতিবাদ করে কিছুক্ষণ আগে আমরা যা দেখেছিলাম তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন। কিন্তু এবারেও কাকু বিশ্বাস ত’ করলেনই  না, উপরন্তু বাবাকেও ভীতু আখ্যা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু তারপরেই শুনতে পেলাম তিনি যেন চিৎকার করে কারোকে জিজ্ঞাসা করছেন - “ এই কে তুমি ! এত রাতে তুমি কোথা থেকে এলে ? এখানে দাঁড়িয়েই বা কি করছ ? “  তাঁর চিৎকার শুনে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম বটে, কিন্তু কারোকে কোথাও দেখতে পেলাম না। কাকু বললেন - “ সত্যিই ত’ ! মেয়েটা কোথায় গেল। এই ত’ সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। “ বাবা বললেন - সেটাই ত’ প্রশ্ন, যার উত্তর একমাত্র পাণ্ডেজীই দিতে পারেন। কাল সকাল হলেই তাঁর বাড়ীই হবে আমাদের প্রথম গন্তব্য।” এবার দেখলাম কাকু একেবারে চুপ। বাবার কথার কোন প্রতিবাদ করলেন না। সে রাত্রে আমরা সকলে একটা বড় ঘরেই বসে রইলাম একসাথে । ঘুম আর হোলো না কারো। 

    পরদিন সকাল হতেই আমরা সদলবলে চললাম পাণ্ডেজীর বাড়ি। প্রথমে তিনি ব্যাপারটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও পরে সকলের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হলেন সত্য ঘটনাটি জানাতে। প্রায় চার বছর আগে একটি পরিবার ঐ বাড়িটিতে বেড়াতে আসে। বাবা, মা, দুই ছেলে, দুই মেয়ে । ছোট মেয়েটি একদিন দুতলা থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ মাথায় চোট পেয়ে তার মৃত্যু হয়। তখন থেকেই মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা ঐ বাড়ীতেই ঘুরে বেড়ায়। শান্তি স্বস্ত্যয়ন থেকে শুরু করে এক বছর পরে গয়ায় পিণ্ডদান অবধি করা হয়েছে, কিন্তু মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা এখনও অবধি মুক্তি পায়নি । সে মাঝে মাঝেই দেখা দেয়, আর বিশেষ করে যদি ওর সমবয়সী কোন মেয়েদের দেখে, তাহলে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। ও কিন্তু কারো কোন ক্ষতি করে না। পাণ্ডেজী আরও বললেন যে তিনিও দুএকবার ঐ আত্মাটির মুখোমুখি হয়েছেন, যদিও ভয়ের কোন কারণ ঘটেনি। তাঁর কথায় এটাও বোঝা গেল যে কেন  কাজের মানুষদুটির বিকাল হতে না হতেই বাড়ী ছাড়ার এত তাগিদ ছিল প্রতিদিন॥

    সব শোনার পর ব্যানার্জি কাকু ঐ বাড়ীতে আর থাকতে রাজি হলেন না। তিনি সপরিবারে ফিরে গেলেন। কিন্তু মায়ের জেদাজেদির জন্য আমরা আরো পনের দিন ঐ ভূতুড়ে বাড়িতেই রয়ে গেলাম। বাবা বেশ কিছু জোরালো বৈদ্যুতিক আলো লাগিয়ে দিলেন আর বাইরের আলো সারা রাত্রি জ্বালা থাকত। তা সত্বেও মাঝে মাঝে মেয়েটির আত্মাটিকে দেখতে পেতাম। সে কিন্তু আমাদের কাছে আসত না বা আমাদের কোন ভয়ও দেখাত না কোনদিন। পাণ্ডেজী ঠিকই বলেছিলেন যে হতভাগ্য মেয়েটির আত্মাটি অতৃপ্ত হলেও ক্ষতিকর ছিল না। তবে আমরা রাত্রে সকলে একটা ঘরেই থাকতাম। আর মা যা রান্না করতো , তার কিছুটা প্রতিদিন রাতে পাশের ঘরে চাপা দিয়ে রেখে দিতো। পরের দিন সকালে দেখতাম সেই আহারের ভুক্তাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে। অবশ্য রোজ যে এমনটি ঘটতো তা নয়। 

    এইভাবেই দেখতে দেখতে আরো পনেরটা দিন কেটে গেল। 

    কিন্তু ফিরে আসার আগের দিনে এমন একটা ঘটনা ঘটল যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বোধহয় মাঝরাত্রি তখন। আমরা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা জোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি পায়ের দিকের জানালাটা খুলে গিয়ে প্রচণ্ড হাওয়ায় দোল খাচ্ছে আর পাশের দেওয়ালে বারবার ধাক্কা লাগছে। তার ফলেই অত  জোর শব্দ। কিন্তু জানালাটা খুললো কি করে ! ভিতর থেকে ত’ ছিটকানি দেওয়া ছিল। তবে কি খুব জোর ঝড় উঠেছে আর ঝড়ের দাপটে ছিটকানি খুলে গেছে। হয়ত’ আলগা করে লাগান ছিল। কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আকাশে ত’ মেঘের লেশমাত্র নেই। আর বাইরে কোনো গাছের পাতাও নড়ছে না। তাহলে ! এর পরে এমন একটা ঘটনা ঘটল যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
    ধীরে ধীরে একটি ছায়ামূর্তি ঘরের বাইরে জানালার পাশে এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমরা সকলে নিশ্চল, নির্বাক। এমন করে প্রায় দশ মিনিট সেই মূর্তিটি এক জায়গায় স্থির হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবার পর ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর আবার একটা দমকা হাওয়ায় জানালার খোলা কপাট দুটো আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেল। তবে কি সেই অতৃপ্ত আত্মা বুঝতে পেরেছিল যে আমরা আগামীকাল সকালে চলে যাব। তাই কি সে আমাদের দিকে ঐরকম ভাবে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে ছিল ! তার উত্তর আমাদের জানা ছিল না। সে রাত্রে আমরা আর কেউ দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। 

    এবার আমাদের ফেরার পালা । পাণ্ডেজি এসে হাজির আমাদেরকে ‘ট্রেনে’ তুলে দেবার জন্য । আমরা তাঁকে গতরাত্রের ঘটনা সব বললাম। তাঁর চোখদুটো দেখলাম জলে ভরে উঠল। দেখাদেখি আমাদেরও। তিনি বারবার আমাদের সাহসিকতা ও মানবিকতার প্রশংসা করলেন।  ঘাটশিলা ‘স্টেশনে’ রওনা দেবার জন্য টাঙ্গা অর্থাৎ ঘোড়ার গাড়িতে উঠছি। হঠাৎ দূরে বাড়ির ছাদের দিকে নজর পড়তে চমকে উঠলাম। হয়ত আমার আগেই আর সবায়ের নজর পড়েছিল। কারণ সবারই নজর ছিল ছাদের প্রতি। ছাদের ওপর থেকে একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম সেই মেয়েটি। হয়ত আমরা চলে যাচ্ছি বলে তার কষ্ট হচ্ছে। আমাদের সবার মনও খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের ত’ কিছু করার ছিল না। 

    কাল বহমান। পুরাতনকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে নতুন নতুন সৃষ্টির উন্মেষ। কর্ম থেকে অবসর নেবার পর আবার ঘাটশিলা গেলাম। প্রায় বাহান্ন বছর বাদে। অতীতের ঘাটশিলার সাথে নবীন ঘাটশিলার কোন মিলই খুঁজে পেলাম না। যেমন খুঁজে পেলাম না আমাদের সেই তিন সপ্তাহের আস্তানাটিকে। সেখানে এখন এক বিশাল বহুতল, সামনে তেমনই বিরাট এক বিপণী। জানি না সেই মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মার কিভাবে মুক্তি হল। তবে আজো কোন পূর্ণিমার রাতে বাড়ির চন্দ্রালোকিত উঠানের দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকলে বুঝি সেই ছবিটাই চোখের সামনে ভেসে আসে-একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন দোলনায় বসে ধীরে ধীরে দোল খাচ্ছে।
    —————————
    স্বপন চক্রবর্তী
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন