এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হোবিবি পোস্ট "বুদ্ধিজীবীদের  প্রতি জবাব।"-এর জবাব

    Argha Bagchi লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৪ | ৪৪৫ বার পঠিত
  • আই টি সেলের কিছু প্রচার দেখলে হাসিও পায়, রাগও হয়। যে লেখাটা নিয়ে এখানে আলোচনা করব, তার প্রতিপাদ্য হল, মূল লেখা অনুযায়ী, "স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানের অংশগ্রহণ? দালাল ছাড়া কেউ এ কথা বলবে না - - - - ।" এরা নাকি দেশভক্ত, অথচ নিজের হাঁড়ির খবর নিজেরা রাখতে পারে না।

    এদের কথা মানলে বলতে হয়, এরা নিজেদের প্রধাণমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'দালাল' বলছে। কেননা, শুধু পূর্ব ভারতেই মুসলমান শহীদের সংখ্যা কমপক্ষে ২৪২ জন, বর্তমান ভারত সরকারের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, স্বয়ং প্রধাণমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই তালিকা প্রকাশ করেছেন সরকারী ওয়েবসাইটে, ২০১৯ সালে। সমগ্র ভারতের তালিকাই সেখানে মোট ৬টি খণ্ডে দেওয়া আছে। যে কেউ ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।
     
    সূত্র: ভারত সরকার দ্বারা প্রকাশিত রাজ্যভিত্তিক শহীদ অভিধান

    যে বিষাক্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক হোয়াট্‌সঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের (সংক্ষেপে হোবিবি-র) পোস্ট পাওয়া গেল, তার শুরুতে লেখকের নাম "মাননীয় তপন ঘোষ" এবং শেষে বন্ধনীর মধ্যে ভুল বানানে লেখা, "(সংগৃহিত)"। বোল্ড ফন্টে পোস্টটির শিরোনাম, "বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জবাব।"

    এতে প্রথম সাতটি বাক্য প্রোপাগান্ডামূলক স্লোগান, বা অসভ্য চিৎকার বা উদগ্র ঘোষণা, হয়ত পাঠকের মুড সেট করার জন্য। সেখানে আলোচনার যোগ্য কোন যুক্তি বা তথ্য নেই। অবশ্য পরেও যে খুব একটা আছে তা নয়। তবে অর্ধেক ও বিকৃত ইতিহাস জ্ঞানের যথেচ্ছ উল্লেখ আছে, সেগুলোর প্রতি সুস্থ মস্তিষ্কের পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। কেননা, অতি বড় স্থিতধী মানুষও জঙ্গী (বা সঙ্ঘী)-দের এহেন কদর্য অশালীন বাগাড়ম্বরের সামনে পড়লে হত-বাক হয়ে যেতে বাধ্য, তখন মাথা কাজ করা থামিয়ে দেয়। তাই সেই পোস্টের থেকে যে কথাগুলো আলোচনা করতে চাই, সেগুলো সময় করে পড়ুন, বুঝুন এবং জলাতঙ্ক ও মুসলামানাতঙ্ক ছড়ানো মনুষ্যেতর প্রাণীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।

    [১ম উক্তি] - "পরাধীন যুক্ত বাংলায় ৫৪% মুসলিম আর ৪৬% হিন্দু ছিল। বঙ্গপ্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং হিন্দু সংখ্যালঘু প্রদেশ ছিল। তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রামে উভয়ে অংশগ্রহণ করলে — শহীদ হওয়া এবং এবং জেলে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম বেশি হিন্দু কম হওয়া উচিত ছিল! ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল চাকী থেকে বাংলায় যে শহীদ হওয়ার পরম্পরা শুরু হয়েছিল তাতে কতজন মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে ব্রিটিশের গুলিতে বা ফাঁসিতে শহীদ হয়েছিল? মোট শহীদ সংখ্যার ৫৪% কি? আন্দামান সেলুলার জেলে কয়জন মুসলিম গিয়েছিল? মোট কারাবাসীদেরর ৫৪% কি?"

    আমরা ধরে নিচ্ছি হিন্দু-মুসলিম ভাগটা ওরা যা বলছে সেরকমই ছিল। কেননা তথ্যসূত্র উল্লেখ হোবিবি-র রীতিবিরুদ্ধ। কিন্তু ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পাটীগণিত পড়ে যদি পড়াশুনা ছেড়েছুড়ে স্বয়ংসেবক হওয়া যায়, তাহলে এই প্রশ্নগুলি যথার্থ বলে মেনে নেওয়া যায়। প্রথম আপত্তি, পরাধীন যুক্ত বাংলায় হিন্দু ও মুসলিম ছাড়া কি অন্য কোন ধর্মের মানুষজন ছিল না? ওরা তো বলছে ৫৪+৪৬=১০০ শতাংশের কথা। আবার ওরাই মিশনারিদের ধর্মান্তরীকরণের অভিযোগে গ্রাহাম স্টেইনসদের মত নিরীহ খ্রিস্টানদের জ্যান্ত পোড়ায়। তাহলে, প্রকৃত কথাটা ওরা প্রথমেই গোপন করছে, হিন্দু-মুসলিম ভাগটা ৪৬/৫৪ হতে পারে না। ঘৃণা ছড়াতে গেলে এসব ইচ্ছাকৃত বিকৃতি দরকার হয়। দ্বিতীয় আপত্তি, 'শহীদ হওয়ার পরম্পরা' বাক্যবন্ধ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যাদের নাড়ির যোগ নেই, তারাই এতটা অশ্রদ্ধার সাথে শহীদদের বলিদানকে হেয় করতে পারে। তৃতীয়ত, সমসত্ত্ব মিশ্রণের যেকোন অংশ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করলে মিশ্রণের উপাদানগুলির অনুপাত নমুনার অনুপাতেও অপরিবর্তিত থাকে। ক্লাস সেভেনের ভৌতবিজ্ঞানে এটি পড়ানো হয়। সেই জ্ঞানকে সম্বল করে জঙ্গীরা সমাজের হিন্দু-মুসমান মিশ্রণকেও সমসত্ত্ব বলে দেখাতে চায়। বাস্তব অভিজ্ঞতা কি আদৌ সে কথা বলে? এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, 'কতজন মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে... আন্দামান সেলুলার জেলে গিয়ে...' ইত্যাদি। সে প্রশ্নের উত্তর আগেই দিয়ে দিয়েছি। এই লেখার শুরুতে। এবং তথ্যসূত্রও দিয়েছি, কেননা এই লেখাটা হোবিবি-র নিয়ম মেনে লেখা পোস্ট নয়। এখন বরং অন্যান্য উক্তিগুলি বিচার করা যাক।

    [২য় উক্তি] - "আচ্ছা হিন্দুরা না হয় পুজো টুজো করে। তা মুসলিমরা আল্লাহ্- আল্লাহ্ করে নামাজ-টামাজ পড়ে একটা আলাদা বিপ্লবী সংগঠন তৈরি করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করল না কেন? তারাই তো ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ।  ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রথম দায়িত্ব তো তাদেরই ছিল। করল না কেন?"

    আবার বলি, স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যাদের দূর-দূরান্তের যোগও নেই, তারাই উক্ত এই কথাগুলোকে যুক্তি বলে মেনে নেবে, বাকিরা মানতে পারবে না। পারিবারিক ঝামেলায় বড় ভাই মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেবে, অনেকটা এইরকম চিন্তাভাবনার উপরে ওই যুক্তিটা সাজানো। সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে (অর্থাৎ বড় বলে) ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রথম দায়িত্ব তাদের। এটা কোন যুক্তি হল! এর সাথে টেনে, নিজে নিজেই ঝগড়া চালানোর তাগিদে, পোস্টে এল পরের সঙ্ঘী যুক্তি, বাংলায় মুসলিম শাসনে হিন্দু নারীদের বিপন্নতা, এবং মুসলিমদের বহুবিবাহের ও বহু-বহু সন্তান জন্মের কারণে নিরক্ষরতা বৃদ্ধি। এর জবাব একটা বহু পুরনো গানে আছে, তার একটা লাইন বলি। ছাগলে কামড়াল সীতায়, কেঁদে মরে দুঃশাসনঅর্থাৎ কার্যকারণবিহীন যুক্তিপরম্পরা। সম্ভবত এই কারণেই সঙ্ঘীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়নি, বরং গান্ধীজীর মত হিন্দু-সংগ্রামীদের হত্যা করার কাজে লিপ্ত হয়েছিল। কেননা, ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রাম তো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দায়িত্ব, সংখ্যালঘু হিন্দু স্বয়ংসেবকেরা সে কাজে প্রাণ খোয়াতে যাবে কেন!

    [৩য় উক্তি] - "আচ্ছা- ঠিক আছে, ওরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রামে ওদের অংশগ্রহণ না হয় কিছুটা কম হবে। *শূন্য তো হওয়ার কথা নয়!* সুতরাং মোট শহীদের মধ্যে ওদের সংখ্যা ৫৪% হবে না।  কিছুটা কম হবে। অর্ধেক হোক ২৭%, আরো কম করে ধরলে ২০% হোক বা ১০% হোক। কই ? একজনও বাংলার মুসলমান শহীদের নাম বলুনতো। পারবেন না।  যুক্তবঙ্গের প্রায় ৩০০ শহীদের একজনও মুসলমান শহীদ নেই।... পাঞ্জাবেও একই অবস্থা।  পরাধীন ভারতে পাঞ্জাব ও বাংলা এই দুটো প্রদেশ থেকেই সব থেকে বেশি শহীদ হয়ে ছিল। আবার এই দুটি  প্রদেশেই মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল। অথচ এই দুটি প্রদেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে থেকে একজনও শহীদ হয়নি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে।  সমস্ত শহীদ হয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখদের মধ্যে থেকে।"

    এইবারে এল সেই মোক্ষম জায়গা, ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার পালা। পাঠক যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে বলি, এর উত্তর হল, না, শূন্য নয়। এই কথাগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। শহীদদের মধ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা শূন্য তো নয়ই, বরং অনেক অনেক বেশী। শতাংশের হিসেব করতে উচ্চ গণিতের ধারণা লাগে না। উদাহরণ দিয়েছি, এই লেখার শুরুতেই।

    [৪র্থ উক্তি] - "স্বাধীনতার আগে দুবার  (১৯৩৭, ১৯৪৬) নির্বাচন হয়েছিল এবং মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল।  মোট তিন জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিল।  তা হিন্দুরা শিক্ষায় এত এগিয়ে ছিল, এত ডাক্তার- উকিল- ব্যারিস্টার-শিল্পী-সাহিত্যিক-জমিদার-রায় বাহাদুর নেতা— সব হিন্দুরা ছিল, কিন্তু তিন জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একজনও হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী হলো না কেন? পাঞ্জাবেও তাই। বাংলায় তিন জন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন, ফজলুল হক এবং সুরাবর্দী। শিক্ষায় যতই পিছিয়ে থাক,  স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে যতই দূরে সরে থাক,  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে কোনো অমুসলমানকে মুখ্যমন্ত্রী তারা মেনে নেবে না। তাহলে রাজনীতি সচেতনতার কি কোন ঘাটতি ছিল? ও— শুধু শহীদ হওয়ার সময়, জেলে যাওয়ার সময়, আন্দামান জেলে যাওয়ার সময় ওদের সচেতনতার অতি অভাব নজরে পড়ে? মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সময় সচেতনতার অভাব হয় না? এই সব ছেঁদো যুক্তি আর কতদিন চলবে ?"

    সত্যিই এদের মূর্খতায় হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। প্রথমত, যে নির্বাচনের কথা এখানে বলা হয়েছে, তাতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নয়, প্রধাণমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন মোতাবেক এই নির্বাচন হয় প্রথম ১৯৩৭ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ-বিরোধী অবস্থানের কারণে কংগ্রেস পার্টি (সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পার্টি) এই নির্বাচন বয়কট করেছিল। নির্বাচনে জয়লাভ করে মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল কৃষক-প্রজা পার্টি, সমর্থন করেছিল মুসলিম লীগ এবং প্রথম প্রধাণমন্ত্রী হয়েছিলেন এ কে ফজলুল হক। ১৯৪১ সালে মুসলিম লীগ তাদের সমর্থন তুলে নেয়, ফলে মন্ত্রীসভা বাঁচাতে ফজলুল হক জোট বাঁধেন, কাদের সাথে জানেন? হিন্দু মহাসভার সাথে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নেতৃত্বে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। সঙ্ঘীদের গডফাদার শ্যামাপ্রসাদ, বি জে পি-র মাদার পার্টি হিন্দু মহাসভার জনক, ফজলুল হকের জোট সরকারের অংশীদার হন, সেই জোট চলে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত। বাকি ইতিহাসটা নাহয় একটু গুগল সার্চ করে জেনে নেবেন।

    সুতরাং, জলাতঙ্ক ও মুসলামানাতঙ্ক ছড়ানো মনুষ্যেতর প্রাণীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:1537:a69c:9d9a:6f7c | ২২ মে ২০২৪ ২১:০৭532185
  • বিজেপির অবস্থা বেশ খারাপ মনে হচ্ছে, নাহলে প্রধানসেবক থেকে আইটিসেল এভাবে মরিয়া হয়ে ওঠার কারন খুঁজে পাচ্ছিনা। এই ধরনের ফেক বাস্টিং লেখাগুলো খুব দরকার। 
  • এলেবেলে | ২২ মে ২০২৪ ২২:৩৬532190
  • হোবিবির বিরুদ্ধে যে কোনও লেখায় তথ্যের সম্পর্কে আরেকটু নিষ্ঠাবান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই যে লেখা হয়েছে "১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন মোতাবেক এই নির্বাচন হয় প্রথম ১৯৩৭ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ-বিরোধী অবস্থানের কারণে কংগ্রেস পার্টি (সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পার্টি) এই নির্বাচন বয়কট করেছিল।" - এইটা আদ্যন্ত ভুল তথ্য।
     
    ভারত শাসন আইন মোতাবেক নির্বাচনী প্রক্রিয়া মেনে নেওয়ার জন্য কংগ্রেসকে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি প্ররোচিত করেন, তার নাম ঘনশ্যামদাস বিড়লা। আর কংগ্রেস ওই নির্বাচনে পুরোদস্তুর অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনী ফলাফলের পরে দেখা যায় বাংলার মোট ২৫০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৫৪, লিগ ৩৯ এবং কৃষক প্রজা পার্টি ৩৬টি আসন পায়। অন্য দিকে নির্দলীয় মুসলিম প্রার্থীরা ৪৩টি আসনে জয়লাভ করেন। নির্বাচনের পরে ত্রিপুরা কৃষক সমিতির ৫ জন নির্বাচিত মুসলমান সদস্য কংগ্রেসে যোগদান করেন। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের মোট আসন সংখ্যা হয় ৬০। লিগেরও ৬০ এবং কৃষক প্রজা পার্টির ৫৯।
     
    এর অর্থ, তখন কংগ্রেসই বাংলার আইনসভায় সবচেয়ে বড় একক পার্টি ছিল। ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গেই কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গড়তে চেয়েছিলেন যদিও কংগ্রেস সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
     
    তবে হোবিবির ৫৪+৪৬-এর অনুপাতটা অনৈতিহাসিক নয়। ম্যাকডোনাল্ড রোয়েদাদ যখন ঘোষিত হয় তখন বাংলার ৫৪.৮% মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ হয় ১১৯টি আসন অর্থাৎ মোট আসনসংখ্যার শতকরা ৪৭.৬ ভাগ এবং শতকরা ৪৪.৮ ভাগ হিন্দুর জন্য বরাদ্দ হয় ৮০টি আসন বা মোট আসনসংখ্যার শতকরা ৩২ ভাগ।
  • friendly advice | 148.72.172.244 | ২২ মে ২০২৪ ২৩:০৩532192
  • ইতিহাসের নিটপিকিং এখন বন্ধ রাখুন এলেবেলবাবু। দিস ইজ নট দা টাইম ফর ইওর পেটি ডিস্কোর্সেস।
  • দীপ | 2402:3a80:a14:ba71:0:55:8f46:3701 | ২২ মে ২০২৪ ২৩:২৩532196
  • ১৯৩৭ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, তার অন্যতম ভিত্তি ছিল সাম্প্রদায়িকতা। অবিভক্ত বাংলার বিধানসভায় মোট আসন ছিল ২৫০টি। এর মধ্যে মুসলিমদের জন্য আসন ছিল ১১৭ টি, অন্যদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পারসী, ইহুদী- এদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮২টি আসন। এই আসনগুলির মধ্যে আবার ৩০টি আসন সংরক্ষিত ছিল তপশিলী সম্প্রদায়ের জন্যে। বাকী আসনগুলি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, ভারতীয় খ্রিস্টান, জমিদার শ্রেণী, শ্রমিক, বিশ্ববিদ্যালয়- এদের জন্য নির্দিষ্ট অনুপাতে সংরক্ষিত থাকে। অর্থাৎ এই কম্যুনাল অ্যাওয়ার্ড তৈরী হয়েছিলো যাতে একটি বিশেষ সম্প্রদায় অবিভক্ত বাংলার রাজনীতিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে! অন্যরা যাতে শাসনক্ষমতায় কোনোভাবেই প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এই বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল।
    এই সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিরুদ্ধে 
    টাউন হলে এক সভা আহূত হয়, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই সভায় সভাপতির অভিভাষণ প্রদান করেন। কবি অসুস্থ ছিলেন, তা সত্ত্বেও এসে এই অন্যায় সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্রতিবাদ করেন।
  • এলেবেলে | ২২ মে ২০২৪ ২৩:৪৯532198
  • কোনটা পেটি ডিসকোর্স কিংবা কোনটা নিটপিকিং - সে ব্যাপারে অতটা জাজমেন্টাল না হলেও চলবে। তবে তথ্যবিকৃতির বিরোধিতা করে কোনও লেখায় তথ্যের ভুল থাকলে সেটার উল্লেখ জরুরি বলে মনে করি।
     
    ম্যাকডোনাল্ড রোয়েদাদ সমস্ত রাজনৈতিক দল মেনে নিয়েছিল। হ্যাঁ, এখানে হিন্দুরা যেমন বঞ্চিত হন (প্রায় ১২%), তেমনই মুসলমানরাও বঞ্চিত হন (প্রায় ৭%)। কিন্তু কংগ্রেস বা লিগ - দুই দলের কেউই মাত্র ০.০২৫% ইউরোপীয়দের জন্য মোট আসনের ১০% বা ২৫টি আসন বরাদ্দ করার বিপক্ষে একটি কথাও বলেননি।
     
    যদি একটি সম্প্রদায়কেই 'অবিভক্ত বাংলার রাজনীতিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ' করার সুযোগ দেওয়া হত তাহলে সেই সম্প্রদায়ের ভোট ত্রিধাবিভক্ত হত না। পাশাপাশি একটিও মুসলিম আসনে প্রার্থী না দেওয়া কংগ্রেসও প্রদেশের একক বৃহত্তম দল হত না।
  • রঞ্জন | 223.177.123.16 | ২৩ মে ২০২৪ ০৮:১৫532215
  • এটা খোলাপাতা। কোন একটি বিশেষ মতের মুখপাত্র নয়। এখানে কাউকে মুখ বন্ধ রাখুন বলে ধমক দেওয়া ?
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:8d42:81f2:aa59:2d77 | ২৩ মে ২০২৪ ০৮:২১532217
  • ফ্যাক্টস আর ফ্যাক্টস, অ্যান্ড অল টাইমস আর গুড টাইমস ফর ডিসকাসিং দেম। এইটাই আরেসেস বোঝেনা :-) 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন