এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রামকৃষ্ণ ফার্মেসী

    Krishnendu Talukdar লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • বাজারে যেখানে ক্লাবের ছেলেরা ডিজে বাজিয়ে লাড্ডু বিলোচ্ছে   সেখানে এক সময় একটা ওষুধের দোকান ছিল তা কেউ মনে করতে চাইছে না। পুরোনো কাসুন্দিটা চপ বা পকোড়া বিক্রি করার ধান্দা থাকলে ঘেঁটে লাভ ছিল।  পুরোনো পরচায়  লেখা  শ্রেণী পুকুর; সর্ব সাধারনের ব‍্যবহার্য‍্য। যেখানে আস্ত নদী চুরি হয়ে যায় সেখানে একটা পুকুর নিয়ে কে কবে ভেবেছে। লোকজন  খুসি মনে নতুন বাজারে বাজার  করতে গেল। অন‍্যান‍্য জিনিসের সঙ্গে একটা ওষুধের দোকানও হল। রামকৃষ্ণ ফার্মেসী। ওষুধের দোকানেই সুলভ মূল‍্যে ডাক্তারকে দেখানোর ব‍্যবস্থা হল। মিশনের ছাত্র ডাক্তারবাবু  গরিবের কাছ থেকে টাকা নিতেন না। শ্বেত পাথরের রামকৃষ্ণমূর্তির পায়ের কাছে প্রণামী থালায় যা সম্ভব দিয়ে যেতে বলতেন। পয়লা জানুয়ারিতে ভোগ বিতরণ হতো।   সকাল সন্ধে ভক্তিমূলক রাগাশ্রয়ী গান বাজতো। ডাক্তারবাবু মারা যাবার পর থেকেই দোকানে লোক আসা কমে গেল। জমির মালিক ঠিক করলো বোজানো পুকুরের জমিটায় মন্দির করবে। কোর্টকাছারীর  দীর্ঘ ক্লান্তিকর লড়াই চালাতে চালাতে রামকৃষ্ণ ফার্মেসীর মালিক মারা গেল।। জমির মালিক জনতা সঙ্ঘের আর পার্টির ছেলেদের শরণাপন্ন হতেই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল। মন্দির হয়ে গেলে আর কোনো অসুখ বিসুখ থাকেনা। তাই লোকেও ভুলে গেল নতুন মন্দিরের পিছনে একটা রামকৃষ্ণ মূর্তি ছিল।

    গবা পাগলা

    গবাকে কেউ লোক বলে ধরেনা।  এমনকি নাগরিক ও না। কারণ ভোটের সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে সে শোনে ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। গবা তার মা কে নিয়ে একটা ভাঙা বাড়িতে  থাকতো। ওর অন‍্য ভাইরা মা কে দেখতো না। গবাকে দেখার তো প্রশ্নই নেই। লকডাউনে চাকরি চলে যাবার পর থেকেই মাথার গোলমাল বাড়ে ওর। মা লকডাউনে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবার পর পুরো পাগল। দাদারা বাড়ি প্রমোটিং করতে দিয়ে গবাকে বাড়ি ছাড়া করে। গবা  সেই থেকে কেয়ার অফ ফুটপাথ। বাজারে লোকে যা দেয় খায় আর রাতে রায়বাড়ির গাড়ি বারান্দায় শোয়। চাকরি যাওয়া, মা কে চিকিৎসা দিতে না পারা আর বাড়ি ছাড়া হওয়া সব মিলে একটা জটিল গিঁট নিয়ে পাগলামো করে বেড়ায়। 

    পাঁচু মাতাল

    “পাঁচু দেয় পচা মাছ”- বললেই ফ্রি তে খিস্তি শোনা যাবে। পাঁচুর খিস্তির স্টক হেভি। পেটে কয়েক পাত্র পড়লে তো কথাই নেই। কলেজ ছাড়ার পর ব্ন্ধুরা যখন চাকরির চেষ্টা করছিল পাঁচু গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভারের কাজ নিয়েছিল।  চলে যাচ্ছিল কোনোমতে। কাজ গেল লকডাউনে। সেই থেকে ভ‍্যানে করে মাছ ফিরি শুরু। প্রথমে মাছ কাটতে গিয়ে পিত্তি গলিয়ে ফেলতো। পরে শুধরে নিয়েছে। ঘরে ফ্রিজ না থাকায় মাছ মাঝে মাঝে পচে যেত। লোকে যাতা বলে চলে যেত। একদিন তিওয়ারিজীর ফেলা গুটখা মেশানো থুতু গায়ে পড়তেই পাঁচু প্রচুর খিস্তি করেছিল। রেগে না গিয়ে তিওয়ারিজী জানতে চেয়েছিল তার ফেসবুকে একাউন্ট আছে কিনা? আছে শুনেই বলল-“ ইয়ে গন্ধা ধান্দা ছোড়কে হামারে সেলমে কাম করো। গালিয়া দেনেকে লিয়ে তুমহে পেমেন্ট মিলেগা। পার গালি দো রুপয়া।“ সুযোগটা না চাইতেই পেয়ে আঁকড়ে ধরেছিল। 
    ক্রেতাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ‍্যাপে গ্রুপ করে মাছ বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছিল। সেলের কাজও করছিল রাত জেগে।
    তার নিজের ভাষায় “দিনে হোয়াটস্ আপ/ রাতে খাপে খাপ।“  

    গবা পাঁচু সংবাদ

    গবা পাগলা রামকৃষ্ণ ফার্মেসী থেকে মা এর জন‍্য ওষুধ নিয়ে যেত। মা মারা যাবার পর ও মাঝে মাঝে এসে বলতো-“ মায়ের জন‍্য একটু গঙ্গাজল দেবে? আমার মা তো ভাগের মা....” রাতারাতি অন‍্য কিছু দেখে জনতা সঙ্ঘের লোকেদের কাছে বারবার জিজ্ঞাসা করে-  “রামকৃষ্ণ মূর্তিটা কোথায় গেল? প‍্যান্ডেলের ওপারে কি দোকানটা আছে? সব মন্দিরের বাইরে এরকম মূর্তি বসেছে কেন? দোকানদারটা খুব ভালো বাসতো গো আমাকে|” পাড়ার একটা ফাজিল ছেলে ইয়ার্কি মারে  -“ এটা আপাতত রামের দোকান। প‍্যান্ডেলের পিছনে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কৃষ্ণ মূর্তি পেলে তখন এটা আবার রামকৃষ্ণ ফার্মেসী হয়ে যাবে|” গবা কি বুঝলো কে জানে, বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল।

    তিওয়ারিজী বারবার বললেও মাছের ব‍্যাবসা ছাড়েনি পাঁচু। কমেন্ট প্রতি দু’টাকায় তো সংসার চলেনা। সেলের অনেকেরই পেমেন্ট বাকি থাকে তাও। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন পাশের মঞ্চে পাঁচুকে উঠতে দেয়নি তিওয়ারিজী। শালা মছলিখোর বাঙ্গালী বলে খিস্তি করে নামিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকেই মেজাজ খিঁচড়ে ছিল পাঁচুর। বাংলা মদের বন্ধুদের ঠেকে গিয়ে রটিয়ে দিল রামকৃষ্ণ ফার্মেসীতে ফ্রিতে ওল্ড মঙ্ক, ক‍্যাপ্টেন মর্গান, বাকার্ডি বিলোচ্ছে। আর কাদামাটি মাখা বাল গোপালের মৃর্তির ছবি পোস্টিয়ে সবাই কে জানিয়ে দিল রামকৃষ্ণ ফার্মেসীর নিচে গুপ্তযুগের বিষ্ণু মন্দির  পাওয়া গেছে। শোনা যাচ্ছে গুপ্তধন ও পাওয়া যেতে পারে। 

    রাতের দিকে যখন জনতা সঙ্ঘের ছেলেরা  লাড্ডু শেষ করে প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে, এক দল মাতাল রাস্তায় গবা পাগলাকে জিজ্ঞেস করলো রামের দোকানটা কোথায়? গবা বললো-“প‍্যান্ডেলের পিছনে|” মাতালের দল প‍্যান্ডেল তছনছ করছে এমন সময় গুপ্তধনের হুজুগে মাতা একটা ভিড়কে নিয়ে পাঁচু সেখানে হাজির। তাদের সঙ্গে শাবল, গাঁইতি আর বেলচা। খোঁড়া খুঁড়ি শুরু হল। রামকৃষ্ণ ফার্মেসীর শ্বেত পাথরের মূর্তি পাথুরে দৃষ্টিতে দেখতে থাকলো টাকার লোভে মানুষ কত মাটি মাখতে পারে। খুঁড়তে খুঁড়তে তখন ভোর হয়ে এসেছে,  মাটির নিচ থেকে পুরোনো পুকুরটা উঠে এসেছে।  দু অণু  হাইড্রোজেন আর এক অণু অক্সিজেন মেশানো একটা তরলে সূর্যের লাল আভা পড়েছে---তাকে কেউ বলে ওয়াটার, কেউ বলে পানি,;কেউ বলে জল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন