এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যারা লাফিয়ে বেড়ায়

    প্যালারাম লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • এ কথা প্রায় সকলেই জানেন—বাদবাকি অর্বাচীনদের জন্যে লেখা...


    শুভাকাঙ্খীরা সতত বলেন, "ধীরে চলো"। তাঁরা যে কথাটা জানেন না—ধীরে চলতে আমায় বেশি কষ্ট করতে হয়। এ সমস্যা আজকের নয়, শৈশব থেকেই দুরন্ত, চঞ্চল – এইসব দুর্নাম আছে। কোনো একটি বিষয়ে লেগে থাকতে রীতিমতো মানদিক পরিশ্রম করতে হয়েছে চিরকাল। বরাবর মনে হয়েছে, আমারই কোনো দুর্বলতা হবে নিশ্চয়ই। পরিচিত ফিডব্যাকে সেই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। কিন্তু অস্তিত্বের সমস্যা হল, কিছুতেই নিজেকে অপাংক্তেয় ভাবতে দেয় না। তাই সবকিছুর সঙ্গে আত্মানুসন্ধানও চলছিল।

    অবশেষে বছর ছয়-সাত হল ছকটা বোঝা গেছে। একটানা একটা-দুটো কাজ আমি করতে পারি না।  চারটে, পাঁচটা কাজ একসঙ্গে? দিব্যি পারি! হ্যাঁ, একসঙ্গেই। শুধু নিয়মিত স্যুইচ করতে থাকি একটা থেকে অন্যটায়। আপনার মগজের সার্কিটও যদি আমার মতো সামান্য বেয়াড়া হয়, তবে এই লেখা আপনার উদ্দেশেই।

    এবারে, সমস্যা কি এতে নেই? আছে। যাঁদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক, তাঁদের কাউকে বলা যাবে না—আপনার কর্মপদ্ধতি। সকলেই নিজের কাজকেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেন। এতে কোনো অন্যায় নেই—এইটে আপনাকে প্রথমেই বুঝে যেতে হবে। তাঁদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে—আপনি তাঁর/তাঁদের কাজই করছেন। সত্যিই কি করছেন? আলবত! আপনি লেপ-মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছেনও না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থেকে অলস দুপুরও কাটাচ্ছেন না (কাটালে কোনো ক্ষতি নেই, এমনকি নিয়মিত কিছু সময় ওভাবে কাটালে মগজ সুস্থ থাকে), শুধু কিছু সময় অন্তর সম্পূর্ণ অন্যরকম কিছু কাজ করে আবার ফিরে আসছেন প্রথম কাজে। নিরলস কোনো একটি কাজে লেগে থাকলে যে সময়টা লাগতো, তার থেকে আপনার সময় কিছু বেশি লাগবে ঠিকই, কিন্তু আপনার স্বাভাবিক কাজের পদ্ধতিতে এগোচ্ছেন বলে কাজটা হবে নিখুঁত, আপনার মানসিক ক্লান্তি প্রায় হবেই না।

    আর একটা সমস্যাও অবশ্য আছে। আমার মতো অগোছালো হলে, আপনার অধিকাংশ ব্যান্ড-উইডথ খরচা হবে এই নানারকম কাজ জাগল্ করতে। সতর্ক না হলে – ডেডলাইন মিস করবেন, উদোর কাজ বুধোর ঘাড়ে চাপবে, আর এইসব করতে গিয়ে মোজা উলটো পরবেন, দাড়ি কাটতে ভুলে যাবেন, বাজারের আইটেম মিস করা তো সোজা কথা—বাজারটাই করতে ভুলে যাবেন।

    মোদ্দা কথা, কার্যকর জীবন কাটানো খুব কঠিন। 
    শুরুতেই তো সতর্কবার্তা ছিল—এ কথা প্রায় সকলেই জানেন। laugh

    বেশ। তাহলে শেষ করি এমন একটা গল্প দিয়ে, যা সম্ভবত সকলে জানেন না। 

    দুশো বছর আগের বিলেত। বি-শা-আ-ল ধনী ও রাজনীতিক হাডসন গার্নি তাঁর পুরোনো বন্ধু থমাস ইয়ংকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন—সম্প্রতি তাঁর মন ভালো নেই, জীবন উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে। ব্যাপার অস্বাভাবিক নয়, ভদ্রলোক অর্বুদপতি হলেও, এককালে স্বপ্ন দেখতেন ভালো কবিতা লেখার। বন্ধু ইয়ং-এর বয়স তখন ৪৭। ১৮২০ সালের এক বিষণ্ণ বিকেলে মধ্য লন্ডনের বাড়িতে বসে, ইয়ং তাঁর বন্ধুকে মনের জোর দিতে চিঠি লিখলেন। তাতে তিনি জানালেন—তিনি নিজেও অতীতে এই রোগের কবলে পড়েছেন, আর এর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হল গুচ্ছ গুচ্ছ কাজ করা (উদ্বেগ বা ক্লান্তিতে ধরাশায়ী না হয়ে)। তারপরে লিখলেন সেই সময় তাঁর নিজের কাজের ফিরিস্তি আর জীবন সম্পর্কে দু-চারটে উপলব্ধির কথা। পড়ে দেখুন, অহং-এর চিকিচ্ছে আর মোটিভেশন–দুইই হবে।

    "About this time last year I was giving myself a holiday of a few weeks, and I fell into a sort of fidgety languor and fancied I was growing old; it went off very soon however, and I am convinced there is no remedy so effectual for this and other intellectual diseases as plenty of employment, without over-fatigue or anxiety. This autumn I have been in fact going on with the work which I was then almost frightened at having undertaken, "Elementary illustrations of the celestial mechanics of Laplace", and am already printing the first part of it – being only a translation with a commentary, it will do better without my name than with it. I am also writing over again my article on lan- guages in the Quarterly Review with many additions for the next supplement of the Encyclopaedia Britannica – and a biographical memoir on Lagrange will be almost as long, requiring a list of 100 different papers on the most abstruse parts of the mathematics. I have then the business of the Board of Longitude to manage, and some of the Royal Society. The Arctic expedition is now settled; but we are fitting out our astronomer for the Cape of Good Hope with all his books and instruments, then there is a committee of elegant extracts to consider of the tonnage of ships, appointed by the Royal Society, the Admiralty, the Board of Trade, and the Treasury—which will not take long, but I shall have the onus – then there is my hospital—to speak modestly of my private patients who are very discreet at this time of the year. By the way, such a day as this would make one glad to be anywhere rather than in London. I was forced to read by the fire and write in the dark at 1 o'clock: for I thought if I had candles I should scarcely have resolution to take my ride. Then I must not forget that I must very shortly fulfill my promise to do a little more to the hieroglyphics, and after one number more I shall be able to judge if the thing is worth continuing or not....

    It is well for me that I have not to live over again; I doubt if I should make so good a use of my time as mere accident has compelled me to do. Many things I could certainly mend, and spare myself both time and trouble: but on the whole, if I had done very differently from what I have, I dare say I should have repented more than I now do of anything and this is a tolerable retrospect of 40 years of one's life....

    I have learned more or less perfectly a tolerable variety of things in this world: but there are two things that I have never yet learned, and I suppose I never shall-to get up and to go to bed. It is past 12, and literally Monday morning as I have dated my letter, but I must write for an hour longer."

    — The Last Man Who Knew Everything
    Andrew Robinson


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • π | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১৩528120
  • আরে এতো আমারও গল্প!! 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৪528129
  • কি শান্তি যে পেলাম! এমন নয় যে ক্রমাগত লাফিয়ে চলে আমি বলবার মত কিছু করে উঠতে পেরেছি কিন্তু আমি যে ফেকলুদের দলের সদস্য নই, এ বড় আনন্দের কথা। laugh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন