এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ডগম্যাটিজম্

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৭৬ বার পঠিত
  • "Dogmatism" এর আভিধানিক অর্থ যা পাওয়া যায় সেইগুলো হলো, গোঁড়ামি, নির্বিচারে আত্মমত প্রচার, প্রশ্নাতীতভাবে কোনো কিছুকে স্বীকার করে নেওয়া, মত সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাস। "Dogmatism" শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে অভিধানে যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলো:

    arrogance :-(noun) অহমিকা
    authoritarianism :-(noun) কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্র, স্বেচ্ছাচার
    bias :-(verb) প্রবনতা
    bigotry :-(noun) ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি,
    discrimination :-(noun) প্রভেদ, পক্ষপাতিত্ব
    entrenchment :-(noun) প্রতিরোধ করিবার উদ্দেশ্যে কাটা পরিখা
    fanaticism :-(noun) ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস, অন্ধ গোঁড়ামি, অন্ধ অনুরোগ
    high-handedness :-(noun) স্বেচ্ছাচারপূর্ণতা
    inflexibility :-(noun) অনমনীয়তা, কাঠিন্য, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, অপরিবর্তনশীলতা
    injustice :-(noun) অবিচার, অন্যায়
    intolerance :-(noun) অসহিষ্ণুতা, পরমত-অসহিষ্ণুতা
    narrow-mindedness :-(noun) অনুদার অবস্থা, অনুদারতা, খাটো নজর, কুসংস্কার

    হয়তো মনে হতে পারে যে, গোটা অভিধানটাই তুলে নিয়ে আসা হলো একটা সামান্য কথার মানে বোঝাতে। কিন্তু এর পেছনে একটা যুক্তি আছে এবং সেটা হলো, কোনো না কোনোভাবে "Dogmatism" শব্দটির কোনো ভালো অর্থ হয় কিনা সেটা দেখার উদ্দেশ্যেই নিজস্ব শব্দের অর্থ (meaning) এবং প্রতিশব্দগুলোর অর্থ (synonyms) এখানে তুলে আনা হয়েছে। সমস্ত কিছু দেখেও, সমস্ত শব্দের অর্থ খুঁজেও একটা ভালো অর্থ খুঁজে পাওয়া গেলো না। যাতে করে বলা যায় যে, শব্দটির একটি হলেও ভালো অর্থ আছে। অদ্ভুতভাবে আজকের দিনে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও Dogmatism শব্দের প্রতিটি অর্থকেই খুব সুন্দরভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

    অহমিকা - এদের ধর্মের নামে অহেতুক অহমিকা। সমস্ত কাজকর্ম ফেলে দিয়ে সারাদিন পরে আছে নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য। এর পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। তোমার ভালো না লাগে তুমি পালন কোরো না, কেউ তোমাকে জোর করবে না।

    কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্র, স্বেচ্ছাচার - এদের জীবন, দৈনন্দিন জীবন, সমাজ সব জায়গায় চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্র আর স্বেচ্ছাচার বিরাজ করছে। খুনোখুনি, মারপিট, তালাক, মেয়েদের দমিয়ে রাখা ইত্যাদি হলো সবচেয়ে ভালো উদাহরণ।

    ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি - এটা তো নতুন করে বলার মত বিষয় নয়। পৃথিবীর মধ্যে যদি কোনো ধর্ম থেকে থাকে যে ধর্মের মানুষেরা ধর্মান্ধ আর গোঁড়া তাহলে সেটা ইসলাম ধর্ম।

    প্রভেদ, পক্ষপাতিত্ব - জাতিতে-জাতিতে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে এত প্রভেদ অন্য কোনো ধর্মে দেখা যায় না। শিয়া-সুন্নি ছাড়াও হাজারো প্রভেদ আর মারপিট, খুনোখুনি। আবার শরিয়ত আইনে মুসলিম মহিলাদের প্রতি নিতান্তই অন্যায় করা হয়েছে। এককথায় বলতে গেলে সম্পত্তির অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে মহিলাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

    ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস, অন্ধ গোঁড়ামি, অন্ধ অনুরোগ, স্বেচ্ছাচারপূর্ণতা - ধর্মের প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত গোঁড়া এরা। প্রত্যেক ধর্মেই যেমন বলা হয় যে, তাদের ঈশ্বরই এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তেমনি এই ধর্মেও তাই বলা হয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হলো বেশীরভাগ ধর্মের লোকেরা এই মতকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সেইরকম তৎপর নয়। কিন্তু এই ধর্মের লোকেরা তাদের জীবন দিতে রাজী, এটা প্রমাণ করার জন্য যে তাদের ঈশ্বরই এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, অন্য কোনো ধর্মের ঈশ্বর নয়। তাদের ধর্ম যে মাত্র ১৪০০ বছরের পুরনো এবং পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্মই তার চেয়ে বহু পুরনো, সেটা তারা কোনোভাবেই স্বীকার করে না। তাদের ঈশ্বরই এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা - এই কথার মধ্যে দিয়ে তারা এটাও প্রমাণ করতে চায় যে তাদের ধর্মই সবচেয়ে পুরনো ধর্ম। অর্থাৎ ধর্মীয় গোঁড়ামি দেখাতে গিয়ে এরা ইতিহাসকেই অস্বীকার করে।

    অনমনীয়তা, কাঠিন্য, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, অপরিবর্তনশীলতা, অবিচার, অন্যায় - তারা কোনো যুক্তির ধার ধারে না। তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে বলে তাদের ধর্মের মুরুব্বীরা যা কিছু বলে সেইগুলোই তাদের কাছে বেদবাক্য। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী খুনোখুনি হয় পাকিস্থানে এবং সবচেয়ে বেশী মুসলমান খুন হয় বা দাঙ্গায় মারা যায় যে দেশে, সেটাও পাকিস্থান। তবুও এরা বলবে পাকিস্থান মুসলমানদের কাছে জন্নত।

    অসহিষ্ণুতা, পরমত-অসহিষ্ণুতা, অনুদার অবস্থা, অনুদারতা, খাটো নজর, কুসংস্কার - পৃথিবীর মধ্যে কোন জাতির রক্ত সবচেয়ে গরম যদি বলা হয় তাহলে উত্তর হলো মুসলমান। বোধহয় রক্ত গরমের কারণেই এরা চরম অসহিষ্ণু। একটি উদাহরণ দিলে খুব ভালো হয়। তামিলনাড়ুর পেরাম্বুর জেলার কোলাত্তুর গ্রামে একটা সময়ে হিন্দু বা সনাতন ধর্মালম্বীদের সংখ্যা বেশী ছিল। কিন্তু কালক্রমে বিভিন্ন কারণে সেই গ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা ৭০ শতাংশ হয়ে যায়। এরপরেই তারা সেই গ্রামে পুজো, মন্দির নিয়ে আপত্তি তোলে। তাদের কাছে মন্দিরের মন্ত্রধ্বনী বা পুজাপাঠ শোনা পাপ। সুতরাং তারা সেই গ্রামের অবশিষ্ট হিন্দুদের পূজা করতে, মন্দির খোলা রাখতে বারণ করে। সেই নির্দেশ তারা জোর করে চালুও করে দেয়। হিন্দুরা বাধ্য হয় আদালতে যেতে। এরপরে মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দেয়, এটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এখানে পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানোটাই কর্তব্য। আর আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, খুন করে, ধর্মান্তরিত করে খাদের কিনারায় এনে ফেলেছে। এটাও পরমত-অসহিষ্ণুতারই লক্ষন।

    চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় ভারতবর্ষের যে বিশাল আকার ছিল, সুদূর আফগানিস্থান থেকে বার্মা অব্দি, সেই ভারতবর্ষই কালক্রমে ব্রিটিশদের হাতে যায়। এমনকি সুদূর ইয়েমেনও একটা সময়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অংশ ছিল। এত ভৌগলিক বৈচিত্র্য, ভাষার বৈচিত্র্য, জাতির বৈচিত্র্য, খাদ্যের বৈচিত্র্য, জীবনধারার বৈচিত্র্য, পোশাক-আসাকের বৈচিত্র্য, তবুও সেখানে ঐক্যের সুর ছিল। পরবর্তীতে যখন ব্রিটিশ রাজত্বের স্বর্ণযুগ চলছে ভারতবর্ষে (ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বিভিন্ন বিদ্রোহ থাকলেও বিভিন্ন রাজাকে নিজেদের বশ্যিভূত করে, নিজেদের সরাসরি শাসন ব্যবস্থা আর ৫৪৫ দেশীয় রাজ্যের আপন-আপন শাসন ব্যবস্থা মিলিয়ে লুটপাটের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁচেছে তারা) তখনও ঐক্যের সুরে বেতাল লক্ষ করা যায়নি।

    বিশ্বে যত ইসলামিক রাষ্ট্র আছে তাদের ক্ষেত্রে ইসলামের চেহারা আর আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামের চেহারার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে অসহিষ্ণুতা এত বেশী পরিমাণে কেনো, এর বোধহয় কোনো উত্তর নেই। এক হতে পারে, এরা সিংহভাগ সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মে গিয়েছে বলে মুল ধর্মের ওপর রাগ বেশী। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা দেখা যায় না। সুতরাং এই যুক্তি কতটা সঠিক বলা মুশকিল। নইলে ভারতবর্ষে দ্বিজাতি-তত্ত্বের যে বীজ ব্রিটিশরা বুনেছিল, সেখানে মূলতঃ ক্ষমতার লোভ কাজ করেছিল। কলকাতার চেয়ে ঢাকার গুরুত্ব কম এবং সেই নিয়ে সুরাবর্দী বা ফজলুল হক বা ঢাকার নবাবের মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা করাকে ক্ষমতার লোভ ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে? যদিও সুরাবর্দী বা ফজলুল হকেরা তখন ক্ষমতার অলিন্দেই বাস করছিলেন তবুও একচ্ছত্র ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতেই তারা লীগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কারণ পুরো বাংলায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং সেই কারণেই ভবিষ্যত যে সুরক্ষিত ছিল তা বলা যাবে না। দেশভাগের পর লীগের ক্ষমতা সুরক্ষিত হলেও দ্বিজাতি-তত্ত্বের প্রভাব কিন্তু কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রগতি কেনো হলো না, শুধুই তারা ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকলো আজও, তার সঠিক উত্তর দেওয়া বোধহয় সহজ নয়। পূর্বদিকের প্রতিবেশীর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও প্রধানতঃ সেই অগ্রগতি সাহিত্য-সংস্কৃতিতে যতটা বিজ্ঞানে তার সিকিভাগও নয়। সেখানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান হলেন একজন কৃষিবিজ্ঞানী। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশের মহাকাশ গবেষণা আমাদের চেয়ে আগে শুরু হলেও আজ অব্দি তারা বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে ওপরে উঠতে পারেনি।

    শুধু শুধু ধর্মের নামে কথা বললেও অন্যায় হবে কারণ আমাদের দেশের মুসলিমদের বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতি হয়নি, একথা বলা যাবে না। আমাদের দেশের অনেক মুসলিম বিজ্ঞানী আমাদের দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করছেন। আমাদের দেশের মহাকাশ গবেষণা এবং সমরসজ্জার মান এত উঁচুতে পৌঁছাত না যদি না এইদেশে হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা এবং এ পি জে আব্দুল কালাম সাহেব থাকতেন। সুতরাং মুসলিম মানেই বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী নয়, এটা ভাবলে ভুল হবে। গলদটা বোধহয় রাষ্ট্র-ব্যবস্থায়। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার আঙিনায় যদি বিজ্ঞান, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি না থাকে তাহলে সেই দেশের নাগরিকদের সেইসব ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা থাকবে না, এটা বলাই বাহুল্য। আমরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে আণবিক গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছিলাম এবং ক্রমান্বয়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলেই আজকে আমাদের পরমাণু বিজ্ঞানে এত উন্নতি। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলেই শিক্ষিতের হার ঊর্ধ্বমুখী। বিক্ষিপ্তভাবে ক্ষুদ্র কোনো জাতি বা উপজাতির ক্ষেত্রে ধর্মান্ধতা বা গোঁড়ামি বা অসহিষ্ণুতার নিজস্ব কারণ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু বৃহৎ কোনো গোষ্ঠী বা জাতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বোধহয় আর অন্য কোনো কারণ হতে পারে না।

    অসহিষ্ণুতা ব্যাপারটি বিজ্ঞানে এবং দর্শনে বহুল আলোচিত বিষয়। বিজ্ঞান এবং দর্শনে ব্যাপারটি মতানৈক্য হিসেবেই বর্ণনা করা হয়ে থাকে এবং এর সাথে সুস্থতার সম্পর্ক টানা হয়। সুস্থতা বলতে শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতা। পৃথিবীতে অনেক ধরনেরই অসহিষ্ণুতা বা মতানৈক্য আছে এবং থাকবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা ভালোও বটে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে খারাপ হলেও তার মাত্রা চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামি, মানসিক সুস্থতা এবং সামাজিক সুস্থতা ও সামাজিক স্থিরতার ক্ষেত্রে খুবই বিপদজ্জনক। তাই মূলতঃ বিজ্ঞানীরা ও দার্শনিকেরা এই ধর্মীয় গোঁড়ামির বিষয়েই আলোচনা করে থাকেন এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ২০১৫ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন-এর বিজ্ঞানীরা এই অসহিষ্ণুতা ও সুস্থতার বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। ইরানের তেহরানে বসবাসকারী ৩০-৫০ বছর বয়সী সমস্ত লোকেদের এই গবেষণার সাথে স্যাম্পল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১৮০টি প্রশ্নকে নমুনা হিসাবে প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছিল, যার উত্তরের ওপর ভিত্তি করে গবেষণার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল খুব উচ্চ মানের যাতে হয় সেইকারণে অক্সফোর্ডের "সুস্থতার (অর্থাৎ মানসিক সুস্থতার) প্রশ্নপত্র" এবং "রোকেচ ডগমেটিজম" স্কেল ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরে "পিয়ারসন পারস্পরিক সম্পর্ক" পরীক্ষা দ্বারা গবেষণায় প্রাপ্ত ডেটাসমুহ বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। গবেষণার ফলাফল হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল, গোঁড়ামি এবং সুখের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে (α=০.০৫)। যার ফলে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, গোঁড়ামি একটি কারণ যা সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় গোঁড়ামি হল সুস্থতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিপজ্জনক কারণ। গোঁড়া ব্যক্তিদের একটি অনমনীয় জ্ঞানীয় ব্যবস্থা থাকে যা একটি স্থিতিশীল ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং পরিবেশের সাথে তাদের সমন্বয় হ্রাস করে। কার্যকরী সুস্থতা এবং জ্ঞানীয় সুস্থতা পৃথক সমন্বয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। অতএব, কম সমন্বয় সহ গোঁড়া ব্যক্তিদের মধ্যে, আবেগপূর্ণ সুস্থতা এবং জ্ঞানীয় সুস্থতার হ্রাস অনিবার্য। এই প্রক্রিয়ার ফলে সুস্থতা হ্রাস এবং আগ্রাসন বৃদ্ধি পায়। এই গবেষণা পাকিস্থান বা আফগানিস্থানে করলে নিশ্চিত করে বলা যায়, α, ০.০৫-এর থেকে অনেক বেশী হবে।

    বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরাও এই অসহিষ্ণুতা অর্থাৎ ধর্মীয় গোঁড়ামি (Dogmatism) নিয়ে চিন্তিত কারণ সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আবহাওয়া এবং সুস্থ পরিবেশকে ক্রমশঃ পাল্টে দিচ্ছে এই ধর্মীয় গোঁড়ামি। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ বোধহয় পাকিস্থান-আফগানিস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জিহাদ, তালিবানের ইতিহাস। অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায়ে গেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলা যায়, সেটা সহজেই অনুমেয়। বর্তমান ও আগামী বিশ্বের মানুষের মানসিক সুস্থতার কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার Dogmatism।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2401:4900:6349:baa1:259c:bfb4:7325:559b | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৪528024
  • এমনিতে তো লেখাটা পুরোটাই খোরাক, সে নিয়ে কিছু বলার নেই। 
     
    কিন্তু এইটা একেবারে আর্বিট খোরাকঃ "এই গবেষণা পাকিস্থান বা আফগানিস্থানে করলে নিশ্চিত করে বলা যায়, α, ০.০৫-এর থেকে অনেক বেশী হবে"। আলফার মানে কি সেটাও না বুঝে একটা লেখা নামিয়ে ফেলেছে laughlaugh
     
    মগজে এতোখানি গোবর নিয়ে এই লোকটা হাঁটাচলা করে কিভাবে রে ভাই? 
     
     
  • Surajit Dasgupta | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০৭528025
  • দাদা, আপনি যদি একটু বুঝিয়ে বলেন এই আলফা'র ব্যাপারটা তাহলে উপকৃত হই। আমি না জেনেই এটা লিখে ফেলেছি, একদম সত্যি বলছি দাদা। আপনি ধরে ফেলেছেন এবং এরপরেও যে সামান্য গালাগাল করে আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন এটা আপনার মহানুভবতা। আপনি বুঝিয়ে দিলে আমি লেখাটা সংশোধন করে দেবো। 
  • হোমি | 117.194.78.145 | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০৪528026
  • ভাবা  পার্সি ছিলেন। মানে অগ্নি উপাসক , টাওয়ার অফ সাইলেন্স ইত্যাদি .
  • Arindam Basu | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:২৭528029
  • https://ijph.tums.ac.ir/index.php/ijph/article/view/9386/5643
     
    সুরজিৎ বাবু, আপনি এই পেপারটির কথা লিখেছেন। এরা স্বাস্থ্য নয়, হ্যাপিনেস* দেখতে চাইছিল। এদের এই কোরিলেশন স্টাডি বা তার রেজাল্ট থেকে ডগমা এবং হ্যাপিনেসের কার্যকারণগত যোগাযোগের কোন সম্পর্ক নির্ণয় করা অসম্ভব। 
    * এই কথাটার যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ প্রায় নেই, সুখানুভূতি বলা যেতে পারে। 
  • অরিন  | 210.48.190.75 | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:২৫528031
  • "২০১৫ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন-এর বিজ্ঞানীরা এই অসহিষ্ণুতা ও সুস্থতার বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। ইরানের তেহরানে বসবাসকারী ৩০-৫০ বছর বয়সী সমস্ত লোকেদের এই গবেষণার সাথে স্যাম্পল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। "
     
    না গবেষণাটি আমেরিকানরা করেন নি ইরানের গবেষকরা করেছিলেন |
    "Population of study includes all people (30-50 yr)  that come from Tehran, Iran, in 2015."
     
    এ কথার অর্থ যে সমস্ত মানুষের ওপর এই গবেষণাটির ফলাফল প্রযোজ্য স্যাম্পল ​​​​​​​নয় | স্যাম্পল ১৮০ ​​​​​​​জন ​​​​​​​মানুষ, ১৮০ ​​​​​​​টি প্রশ্ন ​​​​​​​নয় |
     
    "১৮০টি প্রশ্নকে নমুনা হিসাবে প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছিল, যার উত্তরের ওপর ভিত্তি করে গবেষণার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়।"
     
    না, তা হয়নি |
     "The OHI comprises 29 items, each involving the selection of one of four points (Likert scale) that
    are different for each item ...  The 66 items form of Rokeach dogmatism scale  was used."
     
    দুটো মিলিয়ে ৯৫ টি প্রশ্ন ছিল ১৮০ টি নয় ১৮০ জন মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে | 
     
     গবেষণার ফলাফল খুব উচ্চ মানের যাতে হয় সেইকারণে অক্সফোর্ডের "সুস্থতার (অর্থাৎ মানসিক সুস্থতার) প্রশ্নপত্র" এবং "রোকেচ ডগমেটিজম" স্কেল ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরে "পিয়ারসন পারস্পরিক সম্পর্ক" পরীক্ষা দ্বারা গবেষণায় প্রাপ্ত ডেটাসমুহ বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। গবেষণার ফলাফল হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল, গোঁড়ামি এবং সুখের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে (α=০.০৫)। 
     
    এটাও ঠিক নয়, dogmatism ও  happiness এর কোরিলেশান ছিল -0.644 যে কারণে নেগেটিভ কোরিলেশান এর কথাটি উঠেছে | 
     
     
    "যার ফলে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, গোঁড়ামি একটি কারণ যা সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।"
     
    না এ ​​​​​​​সিদ্ধান্তে ​​​​​​​তাঁরা আসেন নি , তাঁরা লিখেছিলেন 
    "Dogmatism has negative effects on wellbeing High levels of dogmatism lead to low level of happiness"
     
    কারণ বা cause কথাটা ​​​​​​​কোথাও লেখা ​​​​​​​নেই |
     
     
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন