এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বন্দিদশায়। গল্প নাম্বার :- ১৫

    লেখক শংকর হালদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৭৬ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • গল্প নাম্বার :- ১৫
     
                    বন্দিদশায় 
    (সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জিত।)
     
        গল্পকার :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
    ◆ রচনার শ্রেণী :- সামাজিক শিক্ষামূলক অনুগল্প। নোটবন্দি সমস্যায় বিপদগ্রস্ত বালকের কাহিনী।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
     
    ◆ গভীর রাতে দশ বছরের এক বালক মাঠ ঘাট পেরিয়ে পড়িমড়ি করে জোর কদমে ছুটে চলেছে। উঁচু-নিচু ও সমতল-অসমতল জায়গা পার হতে গিয়ে বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থেকে রক্ত ঝরছে তবুও আবার উঠে দৌড়াতে শুরু করে।
     
    ◆ দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় প্রধান সড়কে এসে পড়ে। এই সড়ক দিয়ে দিন-রাতে ২৪ ঘন্টায় হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে কিন্তু বালকের গাড়ির গতি দিকে কোন নজর নেই। একসময় রাতের টহলদারি পুলিশের নজরে আসে। কয়েক জন পুলিশ বালকের পথ অবরোধ করে তারপর ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। 
     
    ◆ বালকটি কান্না করতে করতে বলে :- আমাকে মারবেন না, যা বলবেন তাই করে দেবো। আমি আর বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করবে না।
     
    ◆ পুলিশ উর্দু ভাষায় বলে :- آپ کا گھر کہاں ہے؟ অর্থাৎ তোমার বাড়ি কোথায় ?
     
    ◆ একজন পুলিশ হিন্দি ভাষায় বলে :- आपका घर कहां है।
     
    ◆ অন্য একজন ইংরেজি ভাষায় বলে :- Where is your home।
     
    ◆ পুলিশের ভাষা বালক বুঝতে না পেরে জড়োসড়ো হয়ে কান্না করতে থাকে।
     
    ◆ জম্বু পুলিশের কেউ বালকের ভাষা বুঝতে পারে না। ভাষা শুনে ধারণা করে বাংলা হবে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, না আসাম, না ত্রিপুরা রাজ্যের বোঝা যাচ্ছে না।
     
    ◆ বালকটিকে জম্বু রাজ্যের কাঁটরা এলাকার কোন এক থানায় নিয়ে আসা হয় এবং একজন দোভাষী কে সন্ধান করা হয়।
     
    ◆ দোভাষী বাংলা ভাষায় বালকটিকে বোঝানোর চেষ্টা করে বিশ্বাস অর্জন করার জন্য আদর করে সান্তনা দিতে থাকে। একসময় বালকটি কান্না থামিয়ে দোভাষির সাথে কথা বলতে শুরু করে।
     
    ◆ দোভাষী আদর করতে করতে বলে :- তোমার বাড়ির ঠিকানা বলে বাবা। আমরা ভারতবর্ষের জম্মু রাজ্য সরকারের পুলিশ, তোমার বাবা-মার কাছে পৌঁছে দিয়ে আসবো।
     
    ◆ বালকটি তার বাবার নাম সহ বাড়ির ঠিকানা বলতে শুরু করে।
     
    ◆ দোভাষী বলে :- তুমি কলকাতা থেকে জম্মু রাজ্যে চলে এলে কি ভাবে?
     
    ◆ বালকটি বলে :- প্রায় এক বছর আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে দিল্লিতে বেড়াতে এসেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে নোট বন্দি শুরু হয়ে যায়। 
     
    ◆ দোভাষী তার সহযোগী পুলিশ কর্মীদের বলেন :- ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, ঠিক রাত ৮টা। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে ডিমনিটাইজেশন (Demonetization) বা নোটবন্দির কথা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন।
     
    ◆ বালকটি বলে :- বাবা; কয়েকদিনের চেষ্টায় নতুন কিছু টাকা সংগ্রহ করে এবং আমরা দিল্লি স্টেশনে কয়েকদিন অবস্থান করার পর হঠাৎ একদিন কলকাতা যাওয়ার টিকিট পেয়ে যায়। 
     
    ◆ সবাই তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠতে গিয়ে, প্রচন্ড ভীড়ের চাপের মধ্যে বাবার হাত থেকে আমার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি বিপরীত দিকের গাড়িতে উঠে পড়ি এবং ভাবনা করি বাবা-মা এই বগিতেই আছে। 
     
    ◆ আমি ট্রেনের মধ্যে বাবা মাকে অনেক বগীর মধ্যে খুঁজেছি কিন্তু দেখা পাইনি, ভেবেছিলাম কলকাতা গিয়ে নিশ্চয় বাবার সাথে দেখা হবে।
     
    ◆ একদিন ট্রেন এসে দাঁড়িয়ে পড়ে, ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্মের বাইরে এসে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি বাংলায় কোন কিছুই লেখা নেই। 
     
    ◆ তখন ভাবি মনে তাহলে আমি হারিয়ে গিয়েছি ও মনের ভয়ে আতঙ্কে কান্না শুরু করে দেয়। অনেকেই ভিখারি মনে করে পয়সা দিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যার সময় খিদের জ্বালায় জড়োসড়ো হয়ে কুকুরের মত সিঁড়ির উপরে শুয়ে পড়ি। 
     
    ◆ একজন ব্যক্তি আমার কাছে এসে খাবার দিয়ে আকার-ইঙ্গিতে বলে :- বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবে। আমি বিশ্বাস করে সেই ব্যক্তির সঙ্গে অনেক দূরের এক গ্রামের বাড়িতে যায়। 
     
    ◆ প্রথম কয়েক দিন আমাকে আদর যত্ন ভালই করতে থাকে। তারপর কুয়ো থেকে জল নিয়ে আসতে হতো এবং মাঠে নিয়ে গিয়ে চাষের কাজ করাতো, না পারলে লাঠি দিয়ে পেটাতে।
     
    ◆ প্রায় এক বছর জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে চলি কিন্তু বাবা মায়ের কাছে ফেরত যাওয়ার কথা বলতে, আমাকে প্রচন্ড ভাবে মারধর করতো। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য পালিয়ে এসেছি।
     
    ◆ দোভাষী বলে :- এখানে কেউ তোমাকে মারবে না। সব পুলিশ কাকুরা তোমার বাবা-মায়ের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে কিন্তু কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
     
    ◆ সরকারি নিয়ম অনুসারে বালকটিকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক এক সপ্তাহের মধ্যেই জম্বু রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় ও বালকটির বসবাসকারী লোকাল থানার সহযোগিতায় এবং চাইল্ড লাইনের কর্মীরা বালকের পিতা-মাতার নিকট পৌঁছে দেন। 
     
    ◆ বালকটির সাহসিকতার জন্য জম্বু রাজ্যের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয় ও বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী সহ নতুন নতুন জামা কাপড় উপহার দেয়।
     
    ◆ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উক্ত বালকের শিক্ষা লাভের জন্য তার বাবাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। বালকের দুঃসাহসিক অভিযান কে অভিনন্দন জানান।
             
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ◆ রচনাকাল :- 15 জুলাই 2018 খ্রিস্টাব্দে।
    দত্তপুলিয়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
     
    ◆ সংশোধনের তারিখ :- ১৫ আগস্ট ২০২৩ সালে। দত্তপুলিয়া বাড়ি থাকাকালীন, নদীয়া।
     
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ।। প্রথম খন্ড সমাপ্ত।।
     
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2401:4900:1cd1:4fe6:5062:5b5b:e18d:ecb0 | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০৪527295
  • কিন্তু জম্মু রাজ্যের পুলিশ কেন জম্বু রাজ্যে গেছিল? 
  • kk | 2607:fb91:87a:52eb:8db0:7e51:192d:2e58 | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪৪527316
  • লেখক শংকর হালদার,
    আপনি কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন আপনার বই বেরিয়েছে টিউলিপ পাবলিশার্স থেকে। তো, সেই বইয়ের সব গল্পগুলো এখানে যে তুলে দিলেন, তাহলে তো লোকে এখান থেকেই পড়ে নেবে। বই আর কিনবে কেন কেউ? এটা কি ভেবে দেখেছেন?
  • লেখক শংকর হালদার | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৫528685
  • টাকা খরচ করে বই কিনে খুব কম লোকেই পড়ে থাকে, আর আমি এমন কোন দামি লেখক হয়ে উঠিনি-যে আমার বই কিনে পড়বে। কয়েক বছর আগে একটি ভৌতিক বই বেরিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত এক কপি বই অনলাইন থেকে কেউ কিনে পড়েনি। বিনামূল্যে পড়ার জন্যই এখানে পোস্ট করেছি, আর কিছু না হোক কিছু পাঠক তো আমার নামটা জানতে পারবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। 
    শংকর হালদার শৈলবালা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন