এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৯১৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:০৩741886
  • আমার স্বামীর মনমেজাজ ভালো নেই। আমাদের তো কোনও জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তাই টাকা পাঠাই যখন নিজের অ্যাকাউন্টেই পাঠাই, তখন সে শুধু টেলর মেশিন থেকে ক্যাশ তুলতে পারে। সেটারও কী একটা লিমিট আছে। কিন্তু বড়ো অঙ্কের টাকা তুলতে হলে বা ট্রান্সফার করতে গেলে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক বলেছে চিন্তা নেই, আমি একটা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি পাঠিয়ে দিলেই হবে। সেটা ভারতীয় দূতাবাস থেকে করতে হবে। তাই আমায় আবার যেতে হলো রাজধানী বের্ণে।
    এবার সেই বাঙালি সেকেন্ড সেক্রেটারিই আমার কাগজ তৈরি করে দিলেন। বাংলাতেই কথা বলছিলাম। কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে আসছি, দেখি অপেক্ষারত এক বৃদ্ধ পরিষ্কার বাংলায় আমাকে জোরে জোরে বলছেন - বাঙালী বুঝি?
    সেই আমার আলাপ হলো প্রথম এক বাঙালির সঙ্গে যিনি এম্ব্যাসির লোক নন, খাঁটি স্থানীয় লোক।
    উনি হচ্ছেন মিস্টার বোস।
    মিস্টার বোস বললেন, তোমাকে তুমি করেই বলছি, চলো একসঙ্গেই ফেরা যাক। আমিও জুরিখেই যাব। তবে তার আগে চলো কোথাও একটা গিয়ে বসি। বের্ণ স্টেশনের কাছে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম দুজনে। উনিই লাঞ্চ খাওয়ালেন, মাছের কী একটা প্রিপারেশন উইথ হোয়াইট ওয়াইন। তারপরে জুরিখ অবধি আমরা একই ট্রেনে ফিরলাম।
    ভদ্রলোক আমাকে ওঁর ঠিকানা দিলেন, বললেন আগামী শনিবার দুপুরে ওঁর বাড়িতে আমার নেমন্তন্ন।
    আমি তো দেখেই বুঝেছিলাম উনি রিটায়ার্ড, তবু জিজ্ঞাসা করে ফেলেছি, আপনি কী করেন?
    জানা গেল, উনি জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র। অ্যান্থ্রোপোলজিতে কী একটা টপিকে গবেষণা করছেন।
    ভালোই হলো, একজন বাঙালি পাওয়া গেল।
  • যোষিতা | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৪741887
  • লাঞ্চব্রেকে হেলেনের সঙ্গে আমি বাইরে যাই খেতে। অধিকাংশ দিনই বিভিন্ন ধরণের পিৎসা খাই। আমরা যেটা করি, সেটা হচ্ছে মিগ্রোস বলে একটা সুপারমার্কেট চেইন আছে, সেটার টেক অ্যাওয়ে থেকে পিৎসা কিনে, নিউ মার্কেটের পেছনের দিকে এসকালেতরের পাশের সিঁড়িতে বসে গল্প করতে করতে খাই।
    হেলেন যদিও সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং জার্মান নাগরিক, ওর পূর্বপুরুষেরা সব কেরালা থেকে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন কত জেনারেশন আগে হেলেন নিজেও তা জানে না। মেয়েটার মনটা টলটলে জলের মতো পরিষ্কার। যেদিন আমরা খাবার পরে নিউমার্কেটের দোকানগুলোয় জামাকাপড় দেখছিলাম, হেলেন বলছিল, ওর খুব ইচ্ছে একটা লাল সুট কিনবার, লাল মানে টোম্যাটো রেড। তখন যার যার পছন্দের রঙের কথা ওঠে। আমি বলি আমার পছন্দের গোলাপীর শেডটা কোনটা। তৎক্ষণাৎ ও ম্যাজিকের মত ঐ রঙের একটা শার্ট খুঁজে এনে আমাকে দেখায়, আমি কিনতেও চাচ্ছিলাম, কিন্তু তারপরে ভাবলাম, নাঃ আজ থাক। পরে কিনব।
    একদিন বিকেলে হেলেনের সঙ্গে বেরিয়েছি, খেয়াল হলো বেতন বোধহয় জমা পড়ে গেছে। পথেই ব্যাংক, ওর সঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে টাকা ট্রান্সফার করছি। ও বলল - একটা শূন্য বেশি দিয়েছো, চেক করো যোষিতা।
    - না, ঠিকই আছে। আমি এরকমই পাঠাই।
    - প্রত্যেক মাসে?
    - হ্যাঁ।
    - কেন?
    - বাহ, দেশে আমার সংসার রয়েছে না? আমার মেয়ে, স্বামী।
    - তোমার পার্সোনাল ব্যাপারে আমার মাথা গলানো উচিৎ নয়, তবু...
    - কেয়ারফুল হতে বলছো? আরে বাবা, আমার নিজের অ্যাকাউন্টেই তো পাঠাচ্ছি।
  • যোষিতা | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৭741888
  • আগে তো কখনও বিয়ে করি নি, তাই স্বামী ব্যক্তিটি কেমন হন, সেই নতুন অভিজ্ঞতাটুকু হচ্ছিল। এ এক অদ্ভূত বিয়ে। না! সানাই নহবৎ যজ্ঞ হোম খাওয়ান দাওয়ান লোক জন দামী শাড়ির মশমশ হৈ হল্লার কথা একেবারেই তুলছি না, ওসবে আমার বরাবরের বিতৃষ্ণা, অদ্ভূত লাগে অন্যখানে, ব্যাপারটা যেন ঠিক সওদা হয়ে গেল। অবশ্য আমার মতে বিয়ে একধরণের বিজনেস ডীল। যদিও মনে মনে আমরা কেও ই তা স্বীকার করতে চাই না, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন তাড়াহুড়োয় বাধ্য হয়ে আমাকে মেনে নিতে হলো। হয়ত নতুন চাকরিতে জয়েন করবার তাড়া না থাকলে আমি সত্যিই পিছিয়ে যেতাম।
    আমার মনে পড়ছে, বিয়ের ঠিক পরের দিন কি একদুদিনের মাথায়, সন্ধে বেলায় আলো চলে গেছে, ঘরের বাইরে একটু দূরেই বিষাক্ত সাপ দেখা গেছে, মারা হয় নি যদিও, আমাদের গেটেড সোসাইটির ভেতরে সাপ নিয়ে বড়ো উত্তেজনা, আমি আমার বরের সঙ্গে বেরিয়েছি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কার্বলিক অ্যাসিড কিনব বলে। পথে হাঁটতে হাঁটতে সে বলে, ফ্ল্যাটটা আমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিও।
    আমি মনে মনে থমকালেও মুখে প্রকাশ না করে বলি, এখনও রেজিস্ট্রি হতে বাকি আছে তো!
    সে বলে, না মানে হঠাৎ যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তোমার প্রপার্টি...

    আমি তার মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলি, কেন? বাচ্চা পাবে, পারিজাত।

    সে যে পাল্টা যুক্তিটা দেয়, সেটা শুনে নিজেকে সংযত রাখা শক্ত ছিল। সে বলল, আর বাচ্চার যদি কিছু হয়ে যায়, তখন?

    এরকম প্রশ্নের কী উত্তর দিতে পারি। আমি ধীরে সুস্থে কার্বলিক অ্যাসিডের দুটো শিশি সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছি, আর ভাবছি, সে নিশ্চয় ভেবে চিন্তে বলেনি, কথার পৃষ্ঠে কথা বলার ঝোঁকে বলে ফেলেছে।
    আমার বাচ্চার যদি কিছু হয়ে যায়, তখন আমি টাকা বাড়ি সম্পত্তি হাতড়ে কী করব? এই লোকের তো দুটো সন্তান আছে, পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের তাগড়া জোয়ান ছেলে দুটোকে নিয়ে যদি এমন উক্তিটাই ফিরিয়ে দিই, সে কি তখন চুপ থাকতে পারবে?

    নাহ। এখন তর্ক করার টাইম নয়। এর কাছে রেখে যাচ্ছি আমার প্রাণ। এ নিশ্চয় সময়ের সঙ্গে ভালোবাসবে আমার সন্তান কে। টাকার পয়সার কোনও কার্পণ্য করব না। আমার কাছে টাকা বড়ো, না সন্তান বড়ো?
  • যোষিতা | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৬741889
  • মিস্টার বোসের বাড়ি আদৌ জুরিখ শহরে নয়। কাগজের ভাঁজ খুলে ঠিকানাটা যখন দেখলাম, তখন দেখি জুরিখ শহর তো নয় ই, জুরিখ জেলাও নয়, আমাদের পাশের জেলা আরগাও এর একটি ছোটো শহরে তার বাস। শনিবারের দুপুরে রেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ট্রেন ধরে যখন সেই নির্দিষ্ট স্টেশনে নেমেছি, মাথাটা জাস্ট ঘুরে গেল।
    ট্রেন শেষ বোগি থেকে নেমে আমি নুড়িভরা সেই পথটা স্পষ্ট দেখলাম চোখের সামনে। এবার স্বপ্নে নয়। সত্যিই এগজিস্ট করে এই জায়গা, আমি বার বার দেখেছি আবছা অন্ধকারে। এখন দেখছি দিনের আলোয়। ডিসেম্বরের ঘোলাটে দুপুরে। ট্রেন লাইনে বরফ জমে নেই, এই ঠাণ্ডায় আমারও পায়ে রবারের স্যান্ডেল থাকা অযৌক্তিক, কিন্তু বাকি সমস্ত মিলে যাচ্ছে হুবহু। যাকে বাংলায় বলে দেজাভু।

    আসলে আমি ভুল স্টেশনে নেমেছিলাম, ভদ্রলোকটির বাড়ি পরের স্টেশন থেকে একদম কাছে। এক ভদ্রমহিলা আমায় গাড়িতে করে লিফট দিয়ে পৌঁছে দিলেন এলিট সিনেমার সামনে। ওটাই ল্যান্ডমার্ক। তারপরে পঞ্চাশ মিটার হাঁটলেই গন্তব্য।

    উনি প্রায় আমার বাবার মতো। আমার বাবা যদি বেঁচে থাকত, তাহলে...
    ওঁর দুই কন্যাও আমার প্রায় সমসাময়িক। একজন ডাক্তার, একজন উকিল। তারা সব জুরিখে থাকে। আর সবার ছোট পুত্র, সে বিয়ে করে থাকে সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে। ভদ্রলোকের দীর্ঘকাল আগেই বিয়ে ভেঙে গেছে, বাচ্চাদের তিনি নিজেই মানুষ করেছেন, বড়ো করে তুলেছেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। এই সমস্ত নানান গল্প হচ্ছিলো।
    আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, এদেশে ন্যাচারালাইজেশন পদ্ধতিতে নাগরিকত্বের পদ্ধতিটা কী?
    - সেসব অত সহজ নয়।
    উনি বলতে চান না। হয়ত ভালো করে জানেন ও না। ওঁর নাগরিকত্ব তো বিবাহের কারণে। কাজেই ওঁর কাছে সদুত্তর পাওয়া সম্ভব নয়।
    বড্ড যত্ন করে রান্না করেছিলেন মিস্টার বোস। অনেক গল্প হচ্ছিল। ওঁর এদেশে চাকরি করতে আসা, সামান্য অ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে, সেবারই প্রথম উড়োজাহাজে এদেশে আসা সম্ভব হয়েছিল। তাও কোলকাতা থেকে নয়, বোম্বে থেকে ছাড়ত সেই বিমান। প্রথমে থামত করাচি, আবার থামত এডেন এ। সেখানে একদিন নাকি দুদিনের বিরতি। হোটেলের খরচ টরচ সব বিমান মাশুলেই ইনক্লুডেড। আবার এডেন থেকে ইতালির কোন একটা যেন শহরে। সম্ভবত মিলান। সেখানে থেকে ট্রেনে করে এইদেশে। লম্বা জার্নি হলেও, জাহাজের মতো লম্বা নয়। এর আগে পর্যন্ত যারা এসেছিল, সবাই জাহাজে। এককথায় তাদের বলা হতো জাহাজপার্টি। এর পরেও জাহাজে লোকে এসেছে, খরচের কারণে। তখন বোম্বে থেকে টিকিটের দাম ছিল কড়কড়ে এক হাজার টাকা। মানে ওয়ান থাউজেন্ড ইন্ডিয়ান রুপিজ।
  • যোষিতা | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:০৫741896
  • হাজার টাকা দিয়ে এরোপ্লেনের টিকিট কেটে বিদেশে যাওয়া, তাও আবার বিলেত নয়, কী একটা খটোমটো নাম সুইজারল্যান্ড, ষাটের দশকের গোড়ায় সে অনেক টাকা। মিস্টার বোস বেশ কয়েক বছর আগেই যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ শিখেছেন, তখন যাদবপুরে বিই শুরু হয় নি। তারপরে চাকরি করলেন কয়েক বছর এয়ার ফেয়ার জমাতে বা জাহাজের ভাড়া, বিধবা মা যদিও গয়না বেচে বড়ো পুত্রকে বিদেশ পাঠাতে উদগ্রীব, কিন্তু সে টাকা উনি নিতে পারেন না। ষাটের দশকের গোড়ায় পাড়ি দিলেন নতুন দেশে, শিক্ষানবিশির কাজে। সেকালে সুইস ফ্রাংকের চেয়ে ভারতীয় টাকার দাম বেশি ছিল, তারপরে ক্রমশ টাকার দাম কমতে কমতে ফ্রাংকের সমান হলো, তারপরে কমতে কমতে কমতে কমতে প্রায় নব্বই ভাগের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে আজ।
    কিন্তু যেদিন মিস্টার বোসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনি এই প্রসঙ্গেই বললেন, টাকা দেশে পাঠিয়ে ব্যাংকে রাখা বোকামি। ভারতবর্ষে সাংঘাতিক মূদ্রাস্ফীতি, বাাংক তো ঐজন্যই সুদ দেয়। তাও সুদের পরিমান মূদ্রাস্ফীতির তুলনায় অনেক কম।
    — তুমি ঐ কারণেই এম্ব্যাসি থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বানাতে গেছলে?
    — হ্যাঁ। তবে ওদের আমি শিগগিরি নিয়ে আসতে চাই।
    — তারপরে?
    — তারপরে এখানেই থাকব।
    — তোমার স্বামীটি কী করবে?
    — চাকরি পাবে না এখানে?
    — তার কোয়ালিফকেশন কী?
    — ইন্জিনিয়ার বলতে পারেন, বা কনসাল্টেন্ট। ভালো অভিজ্ঞতা আছে।
    — তার পক্ষে চাকরি পাওয়া শক্ত।
    — কেন? আপনি তো পেয়েছিলেন, পান নি?
    — আমি শিক্ষানবিশি করতে এসে তারপরে চাকরিতে ঢুকেছি।
    — যদি আপনার কোনও চেনাজানা থাকে মিস্টার বোস, প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করবেন না?
    — আমার সাধ্যে কুলোলে অবশ্যই করব। আমি অবসরগ্রহণের পরে একটা দিনও বসে থাকি নি। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। এমে পাশ করলাম। এখন রিসার্চ করছি। রিসার্চের কাজে মাঝে মাঝে ভারতে যাই।
     
    আমি অবাক হয়ে ভাবি, এই সত্তরোর্ধ ভদ্রলোকেটির কী পরিমান মনের জোর আর জীবনের প্রতি আগ্রহ। আমার স্বামী এঁর হাটুর বয়সী, সবসময় নেগেটিব চিন্তা, কেবলই বলে চলে "সবাই যার যার মতো করে নিলো, আমার কিছু হলো না", কিংবা আমাকে বলে মাঝে মধ্যে "তুমি খুব লাকি! ইশ্ আমার যদি অমন লাক থাকত! আমার লাকটাই খারাপ।"
     
     
  • যোষিতা | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৪741897
  • কথায় কথায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়। আমি উঠবার তাল করি। উনি আমাকে এগিয়ে দেবার জন্য সঙ্গে বের হন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু হেঁটে এলিট সিনেমার সামনের রাস্তা ধরে ডানহাতে একটু চড়াই, ফের উৎরাই, একটা ব্রীজ মানুষের হাঁটার জন্য, তার নীচে বইছে পাহাড়ি নদী, পাশেই পুরোনো জেলখানা, সেই পেরিয়ে আরও মিনিট দশেক হাঁটার পরে সেই বড়ো স্টেশনটা, যেখানে আমার নামা উচিত ছিল আসবার সময়ে। জায়গাটা এই শীতের সন্ধেতেও বেশ গমগম করছে। আমার তেমন কোনও তাড়া নেই, কথা বলতে বলতেই হাঁটছিলাম, মাথায় চিন্তা ঢুকে গেছে নতুন করে, স্বামীর চাকরি পাওয়াটা সমস্যার হবে এদেশে।
    হঠাৎ মিস্টার বোস বলেন, তোমার কালকের প্ল্যান কী?
    — কিছুই নেই, প্ল্যান আবার কী? আজ জারমান ক্লাস চিল, ক্লাসের পরেই তো এলাম। 
    — তাহলে একটা রিকোয়েস্ট করছি তোমায়। আজ যেও না। কাল যেও। আজ আলোচনা করি, ভেবে দেখি কী করা যায় তোমার জন্য।
    আমি রাজি হয়ে গেলাম। ফিরে এসে রাতের খাবার হলে পুরো সুইস স্টাইলে। রাকলেট। সঙ্গে রেড ওয়াইন।
    আমরা ফের আলোচনায় বসলাম। মধ্যচল্লিশের স্বামীর  জনয চাকরি জোগাড় করার উপায় কীভাবে সম্ভব? সে তো ভাষাও জানে না এদেশের। তা ভাষা নাহয় কোলকাতা থেকে কিছুটা শিখে আসবে ম্যাক্সমুলার ভবনে গোয়েথে ইন্সটিটিউট আছে। কিন্তু এই দেশ স্কিল্ড লেবারের দেশ। কলের মিস্তিরি থেকে মালি, বা রান্নার কাজ, বা যে কোনও কাজের জন্য এদেশে স্বীকৃত শংসাপত্র চাই। বিলেত অ্যামেরিকার মতো নয়, যে যাহোক তাহোক করে কুছু একটা কাজ জোটানো যাবে। লুকিয়ে কাজ করাও অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভারতের অধিকাংশ ডিগ্রিই অচল। 
    এরকম জিনিস আগেও তিনি দেখেছেন। এক বাঙালি পরিবার তাদের মেয়ের জন্য কোলকাতা থেকে পাত্র এনে বিয়ে দিয়েছিল, পাত্র শিক্ষিত, তবে এদেশে এসে সে আর কোনও চাকরি পায় না। ছোটখাট কাদের দন্য তাকে শিক্ষানবিশি করতে বললেও তার সম্মানে বাধে। আবার চাকরি পায় না বলে সে সবসময় লড়াইক্ষ্যাপা হয়ে থাকে। তাকে না পারে রাখতে, না পারে ফেলতে। মেয়েটার ওপর মানসিক অত্যাচার করত। অনেক ঝামেলা বিবাদের পরে ডিভোর্স হয়েছিল।
    —কিন্তু আমি তো সংসার করতে চাচ্ছি মিস্টার বোস। আমি নিজেই বরাবরের মত সংসারের সমস্ত আর্থিক দায়িত্ব নেব। কোলকাতাতেও আমি তার পয়সা নিই নি কখনও। সে বরং ঘরেই থাকুক, সমস্যা নেই।
    — এ কথা তুমি বলছ। সে মানবে তোমার যুক্তি? পুরুষমানুষ ঘরে বসে থাকবে? হাসালে। সেই ছেলেটার মত এ ও নানান দিক থেকে নানান  বুদ্ধি নিয়ে আসবে। বুদ্ধি দেবার লোকের অভাব নাকি বাঙালি সমাজে? 
     
    আমি মুষড়ে পড়তে চাই না। এ লোক আমাকে কেন এত নেগেটিব কথা বলছে? আমি যা রোজগার করি, তাতে হেসে খেলে পুরো সংসারের দায়িত্ব নেওয়া যায়। তবু ওঁকে অনুরোধ করে যাই। উনি আমার বরের সিভি চান, কাজের নমুনা, এইসমস্ত।
     
    ওঁর বড়োমেয়ে যে ঘরটায় থাকত, সেখানেই ঘুমেলাম আমি। পরদিন জুরিখে ফিরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, যত জব এজেন্সী আছে সবখানে খোঁজ নেব আমি নিজে। স্বামীর চাকরি একটা খুঁজে বের করতেই হবে।
    সোমবারই ইমেল করলাম তাকে, জার্মান ক্লাসে জয়েন করো, এদেশে ইংলিশ চলবে না।
     
  • যোষিতা | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:২৯741911
  • ডিসেম্বর আমার কাছে একটা বিশেষ মাস। আমার জন্ম ডিসেম্বরে, আমার বাবার জন্মদিনও ডিসেম্বরে। সেইসঙ্গে ক্রিসমাস এবং নতুন বছর আসার আনন্দধ্বনিও ব্যতিব্যস্ত করে তোলে আমায় ভেতর থেকে সর্বদা। যদিও জীবনের অন্ক জন্মদিনই কেটেছে নিরানন্দে, অবহেলায়, এবারও সেরকমই কাটবে সম্পূর্ণ একাকীত্বে, তবু আমি মন ঘুরিয়ে নিই অন্য চিন্তায়। কোলকাতা থেকে আনা একটা পুরোন ডায়েরির পাতায় লিখে রাখি পরপর কী কী কাজ বাকি আছে, যেগুলো আমাকে করে ফেলতে হবে অবিলম্বে। 
    ফের কোম্পানী আমাকে একটা ট্রেনিং কোর্সে পাঠাতে চায়। হয়ত আমি ভালো জার্মান জানলে পাশেই জার্মানিতে পাঠিয়ে দিত দিন তিনেক বা পাঁচেকের জন্য, কিন্তু আমার যা জার্মান জ্ঞান, তাতে আমি সব পড়া বুঝতে পারব না, এই কোর্স গেলবারের ওয়ার্কশপের মতো নয়। তাই আমাকে পাঠিয়ে দিল লন্ডনে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য। হিথ্রো এয়ারপোর্টের একদম গায়ে লাগা আমার হোটেল, তার পাশেই ট্রেনিং সেন্টার। ট্রেনিং সেন্টারে ক্লাস চলাকালীন দেখতাম পাশেই রানওয়ে দিয়ে দৌড়ে উড়ে গেল টিয়াপাখির ঠোঁটের মত ছুঁচলো মুখওলা সুপারসনিক কনকর্ড। তখন শোনা যাচ্ছিল কনকর্ড আর বেশিদিন চলবে না, তাই সকলেই ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তাম জানলার কাচের ওপরে।
    সবই এবার আমার দ্বিতীয় দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয়বার জারমানি, দ্বিতীয়বার লন্ডন। 
    বিকেলে ক্নাসের পর বাসে করে যতদূর যাওয়া যায়। কী একটা জায়গা, নাম সম্ভবত হান্সলো, সেখানে বাস থেকে নেমে পথ টথ হারিয় এক বিদিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছিল, অথচ কেমন যেন আনস্মার্ট হয়ে যাচ্ছিলাম দিন কে দিন, কারোকে জিজ্ঞাসা করতে পারছিলাম না কেমন করে ফিরবার রাস্তা ধরব। 
    কোর্স শেষ করে জুরিখে ফিরবার পরেই একের পর এক ক্রিসমাস পার্টি শুরু হয়ে গেল অফিসে, কোনওটা ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব পার্টি, কোনওটা পুরো অফিস মিলিয়ে, কখনও সেই জাহাজে লেকের ওপর খানাপিনা উল্লাস, কখনও গোটা রেস্টুরেন্ট বুক করে খাওয়া দাওয়া নাচ গান, কখনও ব্রাজিলিয়ন নর্তকীদের খেমটা নাচ। সমস্ত পার্টিই মধ্যরাত পার করে দিত প্রায়। লাস্ট ট্রামে বাড়ি ফিরতাম।
    এরিকা, মানে আমার বাড়িউলি কাজ করত একটা কনফেকশনারি শপে। নামকরা দোকান, ষ্প্রুয়েংলি। অমন দোকানে সে সম্ভবত সুপারভাইজার ছিল বলে আমার আন্দাজ। ওই দোকানের চাকরি করে এরকম বাড়ি কেনা কল্পনার বাইরে। বাড়িটা ও পেয়েছিল দ্বিতীয়বার ডিভোর্সের সময়ে স্বামীস্ত্রীর সম্পত্তির সমান সমান ভাগাভাগির লভ্যাংশে। এরিকার আসল প্রোফেশন অন্য। ও আর্টিস্ট। তবে ছবি আঁকা বা স্থাপত্যে নয়। ও তৈরি করত চমৎকার সব ল্যাম্পশেড। নানান রঙের কাচের টুকরো ধাতব পাত দিয়ে জুড়ে জুড়ে তৈরি হত অনেক রকমের নকশা। এই সমস্ত ল্যাম্পশেড মারাত্মক দামী। ওর একটা স্টুডিও ছিল শহরের অন্য কোনও অঞ্চলে। আমি ওর বাড়িতে থাকাকালীনই ও সেই স্টুডিওটা ছেড়ে দিল। সব জিনিস সেখান থেকে এনে গুদামের মত বোঝাই করল আমার পাশের ঘরটায়। কিছু কিছু জিনিস জাস্ট পড়ে থাকত করিডোরগুলোয় কিংবা বসবার ঘরে। 
    এরিকা একা থাকত, মাঝে মাঝে ওর বয়ফ্রেন্ড মার্টিন আসত, রাতেও থাকত মার্টিন উইকেন্ডে। এর মধ্যে আমার জার্মান শেখার প্রথম পর্ব শেষ। পরের কোর্সে ভর্তি হতে পারি চাইলে, আগামী বছর সে নিয়ে ভাবব। 
    দুহাজার দুই সালে ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রচুর দেশে আসতে চলেছে একটা কমন কারেন্সি — সেটার নাম ইউরো। ইউরো আসবে জেনে অনেক ইউ দেশই খুশি, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বারেবারে কারেন্সী এক্সচেঞ্জ করবার হ্যাপা আর রইবে না। কারো কারো অবশ্য পুরোন কারেন্সীর প্রতি সেন্টিমেন্ট আছে। 
    একটা নতুন সমাজ, নতুন সংস্কৃতির মধ্যে আমি একটু একটু করে মিশতে শুরু করেছি।  অফিসের প্রায় সকলেই ছুটি নিয়েছে, অফিস ফাঁকা প্রায়। 
    কয়েকজন মাত্র ছুটি নেয় নি। যেমন আমি, যেমন কিং ওয়াং। ও অবশ্য কিং ওয়াং নামটা বলতে চায় না। ও বলে ওকে শেরী বরে ডাকতে। শেরী ওয়াং মোজের। মোজের ওর স্বামীর পদবী। স্বামী সুইস।
  • যোষিতা | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৩৫741912
  • শুক্রবারে যখন অফিসে গেছি, শেরী ছাড়া আর কেও আসে নি। আমার কোনও কাজ নেই সেদিন। চারতলায় কাচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা গল্প করেই যাচ্ছিলাম, করেই যাচ্ছিলাম। শেরী বলল, আমার সঙ্গে আমার বাড়ি যাবি?
    —যাব। কোথায় থাকিস তুই?
    — জুরিখ শহরের গা ঘেঁষে ডুয়েবেনডর্ফে।
    আজ অফিস ফাঁকা। শেরী বলল আজ ও আমাকে চাইনীজ খাবার খাওয়বে নিজে হাতে রেঁধে। সেদিন অফিস থেকে ফেন করলাম মিস্টার বোসকে। মিস্টার বোস খুব ব্যস্ত, আজ কালের মধ্যেই যাচ্ছেন কেপ টাউন।
    — ছেলের কাছে যাচ্ছেন ক্রিসমাসে?
    — একরকম। আসলে বেড়াতে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। ওকে আমি ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। ওর ওখানে চাকরি নেই। বউ সাউথ আফ্রিকান। বউকে ছেড়ে আসতে চায় না এখানে। জীবনটা নষ্ট করছে।
    মিস্টার বোস বড্ড চিন্তিত। আমি কথা বাড়াতে চাচ্ছিলাম না। জানতে চাইলাম আরও কোনও বাঙালি আছে কিনা এই শহরে। জাস্ট বাংলায় মানে মাতৃভাষায় কথা বলার যদি কারওকে পাওয়া যেত।
    হঠাৎ প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন তিনি। টেলিফোন ডিরেক্টরিতে খোঁজো। তোমার বাডিতে টেলিফোন ডিরেক্টরি নেই?
    আমি কথা বাড়াই নি। ওদিকে শেরী ডাকছে আমায়, চল চল, আর কত কথা বলবি?
  • মত | 173.62.207.237 | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৮741915
  • আচ্ছা, এটা পড়ছি কিন্তু। জানিয়ে গেলাম।  
  • | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৫741916
  • হুঁ পড়ছি। এই 'স্বামী'বাবুর ত দেখি বড় বড় রেডফ্ল্যাগ।
  • গবু | 202.8.116.152 | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:২২741917
  • অতঃপর ? 
  • যোষিতা | ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:২৪741920
  • শেরী আমাকে নিয়ে জুরিখ শহরের একটা এশিয়াশপে গেল। পুরো চাইনীজ দোকান। নানান রকমের গ্রসারি। সমস্ত অচেনা আমার। অদ্ভূত একটা গন্ধ দোকানে ঢুকলে। আগে আমি এমন গন্ধ সেনসিটিব ছিলাম না। এদেশে কটা মাস কাটার পরেই এই রোগে ধরেছে। এখানে কোত্থাও কোনও গন্ধ নেই। বড়ো বড়ো গ্রসারি শপে ঢুকলে কোন অঞ্চলেই গন্ধ নেই, খাবারের জায়গা নির্গন্ধ, সাবানের আইল নির্গন্ধ, বিস্কুটের আইল, এমনকি রুটি বা কেকের আইলও নির্গন্ধের একশেষ। রেস্টুরেন্টে কত ঢুকেছি, টেবিলে খাবার পরিবেশিত হবার আগে পর্যন্ত কোনও গন্ধ পাওয়া যায় না। এটা সুইস দেশের জাতিগত রোগ। শূচিবাইয়ের মত সমস্ত জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে চকচকে। 
    শেরী কীসব মশলা কিনল। আগেও নাকি খুঁজে গেছে, পায় নি, আজ পেয়ে মহানন্দ।
    ওর বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে ঘন অন্ধকার। একটা বাড়ির একতলার অ্যাপার্টমেন্টে ও থাকে। সেটার একটা ঘর আবার সাবলেট করেছে এক চাইনীজ কাপলকে। তারা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী। শেরী ঐ মশলা দিয়ে চিকেন ম্যারিনেট করে সেটা ভাজল যত্ন করে। ঐ ছেলেমেয়েদুটোকেও খেতে দিল। আমামাকেও দিল। সঙ্গে ছোট্ট বাটিতে করে ভাত। এমন যত্ন বুঝি এশিয়ার মেয়েরাই করতে জানে।
    ও ভেবেছে আমি আগে কখনও চাইনীজ ফুড খাই নি। খেয়েছি তো। শেরী আমরা চাওমিন খুব খাই দেশে।
    — সেটা আবার কোন খাবার?
    — চাইনীজ ফুড। তুমি জানো না?
    — ঐ নামে কোনও চাইনীজ খাবার আমার জানা নেই।
    আমি কিছুতেই ওকে বোঝাতে পারি না। শেষে ডেসক্রিপশন দিতে হলো। ইতালিয়ান স্পাগেটির মত, সরু সরু, ভেজে নানান সবজি মাংস দিয়ে ....
    — ওহহো! ছো মেন!
    শেরী হাসতে হাসতে প্রায় কেঁদেই ফেলে।
  • যোষিতা | ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৪741921
  • শনি ও রবিবারে আমার অবস্থা "দিন কাটেনা, রাত কাটেনা"। শনিবারে ক্লাস নেই, রবিবারেও কিচ্ছুটি করবার নেই। ওদিকে এরিকা প্রচুর বাজার করে এনেছে, ক্রিসমাসের দিন রান্না হবে। এমনিতে সে কিছু রাঁধে টাঁধে না। অত বড়ো রান্নার জায়গাতে আমি একাই রাঁধি প্রত্যেক দিন। আমার রান্না অতীব সিম্পল, চিকেন ভাত। 
    এরিকা ও তার বয়ফ্রেণ্ড যখন একত্রে খায়, প্রচুর ঘাসপাতার স্যালাদ, সালামি, রুটি, এইসব খায়। আমি ওদিকটায় তখন যাই না। 
    মঙ্গলবারে যেহেতু ক্রিসমাস, বয়ফ্রেণ্ড তার বাচ্চা ছেলেমেয়েদের তাদের মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আসবে, তাছাড়া এরিকার মেয়ে ও জামাই, ছেলে ও কার গার্লফ্রেণ্ড, বিশাল বাহিনির ক্রিসমাস পার্টি হবে। একটা জ্যান্ত ক্রিসমাস ট্রি ও আনা হয়েছে। সেটাকে গোল গোল  বল দিয়ে সাজিয়েছে সে নিজেই। গাছের পাতায় পাতায় রামতায় মোড়া চকোলেট ঝুলছে, সবই ষ্প্রুংলির চকোলেট। গাছের পাদদেশে প্রচুর প্রেজেন্ট চকমকে প্যাকেটে শোভা পাচ্ছে। এবং এই ক্রিসমাসের ডিনারে আমাকেও নেমন্তন্ন করে বসেছে এরিকা। 
    একটা টার্কি, একটা হরিণ ছালছাড়ানো অবস্থায় ফ্রিজের মধ্যে। এরিকা মগ্ন হয়ে কুকিং রেসিপির মস্ত একটা বইয়ের পাতায় মগ্ন। তার দুই আঙুলের ফাঁকে সিগার জ্বলে জ্বলে নিবে গেছে। এমনিতে টিভিতে ডিটেকটিব নাটক কলম্বো দেখবার সময়েই তাকে সিগার হাতে দেখা যায়, কিন্তু এখন সে মহাব্যস্ত আসন্ন উৎসবে রোস্টেড হরিণ ও টার্কির উপযুক্ত রেসিপি খুঁজতে। 
    আমি ছুটির দিনে টিভিতে সিএনএন দেখে থাকি। নাইন ইলেভেনের টাইমে যেসব বন্দীদের গুয়ান্টানামো বে তে কারাগারে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে মহম্মদ আতা র ছবিটা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে খাঁচার বাইরে থেকে ছবি তোলে সাংবাদিকেরা, কমলা পোশাক পরা বন্দীদের, কেও আবার স্ট্রেচারে। আফগানিস্তানে দুম দুম করে বোমা ফেলে আমেরিকা। রাতের দিকের বোমা ফেললে বেশি ভালো এফেক্ট হয় ফোটোগ্রাফির দিক দিয়ে। কন্ট্রাস্ট। অন্ধকারের মধ্যে আতসবাজির মতো আলো। টিভি সিরিয়ালেও এত বেশি মন দেয় না লোকে, যতটা দেয় এইসব আসল যুদ্ধের খবরে। মাঝে মধ্যে দেখা যেত আগে দাড়িওলা তালিবান নেতাদের। যুদ্ধ শুরু হবার পর তারা কোথায় পালিয়েছে কে জানে।
    সোমবার চব্বিশে ডিসেম্বর যে ছুটির দিন, তা আমাকে কেও বলে দেয় নি। শেরীও জানত না। সেদিন বোকার মত অফিসে গিয়েছি আমরা দুজন। শুধুই আমরা। কাফেটেরিয়া বন্ধ। সব আলো নেবানো। চারতলার বিশাল সেই ওয়ার্কস্পেসে আমরা জমিয়ে গল্প করছি। এক্কেবারে ইস্কুল কলেজের দিনে বন্ধুরা যেমন গল্প করে সেইরকম।
    শেরী সাত বছরেরো বেশি আছে এদেশে। ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছিলো চীনের এক মফঃস্বল থেকে। এদেশেই প্রেম, বিয়ে। বিয়ের পাঁচ বছর পরে নাগরিকত্ব অ্যাপ্লাই করেছিল। হালফিল সে একজন সুইস সিটিজেন। কিন্তু এ বিয়ে টিকবে না। বরের সঙ্গে বনে না। বর এখন সিঙ্গাপুরে কর্মসূত্রে। শেরী আলাদা থাকে, যেখানে গেছলাম গত শুক্রবার। সুন্দর অ্যাপার্টমেন্ট। ও এখন ডিভোর্সের জন্য অ্যাপ্লাই করবে। যেদিন ডিভোর্সের জন্য খোঁজ নিতে যাবে, আমি যেন ওর সঙ্গে যাই।
    কথায় কথায় দিন গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। আমি কম্পিউটার অন করে একটা বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন খুলে বসেছি। এটার নাম টুইক্সটেল। টেলিফোন ডিরেক্টরি। সব শহরের জন্য আছে। পোস্টকোড দিয়ে, পদবী দিয়ে দিয়ে সার্চ করা যায়। আমি আমার বাড়ি ও কাছাকাছি পোস্টকোড দিয়ে বাঙালি পদবী সার্চ করে চলেছি। কিচ্ছু নেই। হ্যাঁ পাওয়া গেছে ব্যানার্জি। দেবাঞ্জন ব্যানার্জি। 
    ফোন করলাম। পেয়েছি। কল ধরেছে। আমি নিজের পরিচয় দিই বাংলায়। দেখা করতে চাইবার আগে তিনি নিজেই দেখা করতে চাইলেন, পয়লা জানুয়ারি সকালে রেলওয়ে কাফেতে।
    এবার আরেকজন পেলাম, ভটচায্যি। ফেন করতেই পেয়ে গেলাম। ইনি বললেন, আপনি এখনই চলে আসুন। আমার এখানে আরও একজন বাঙালি এসেছে ফ্রান্স থেকে। বারোটায় আসুন। ঠিকানা তো আছেই। অফিসের পাশেই স্টেশন, এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটা স্টপ।
    আমি তড়াক করে উঠে পড়ি। 
    শেরী, আমার দেশের লোক খুঁজে পেয়েছি রে! যেতে বলছে এখনই।
    —আমিও যাব তোর সঙ্গে।
    — তার বাড়িতে আরও গেস্ট আছে। ফ্রান্স থেরে এসেছে।
    — ফ্রান্স থেকে! কত বয়স? হ্যান্ডসাম?
    শেরী তখনই ব্যাগ খুলে লিপস্টিক বের করে ফেলেছে।
    — দাঁড়া বাবা। চিনি না জানি না, ওরকম হুট করে তোকে নিয়ে যেতে পারি না আমি।
    — তা কেন? তা কেন? ওরা দুজন ছেলে, আমরা দুজন মেয়ে! ভালোই হবে।
    — না। পরে নিয়ে যাব। পরে। কথা দিচ্ছি। 
    শেরী মুষড়ে পড়ে।
    অফিস থেকে বেরিয়ে আমাদের দুজনের ট্রেন একেবারে বিপরীত মুখে। উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে শেরী। ওর ট্রেন ঢোকার আগেই আমার ট্রেন ঢুকছে। ওর দিকে চেয়ে হাত নাড়ি আমি।
    সেই মুহূর্ত থেকেই সম্ভবত আমার জীবন অন্য পথে চলতে শুরু করে দেয়।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৪741922
  • এখনো অবধি লেখা‌র উপস্থাপনা ও গতি টেনে রেখেছে।
     
    বিয়ের পরেই পতিদেবতার পত্নীর কেনা বাড়ি তাঁর নামে রেজেস্ট্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব শুনে অদ্ভুত লেগেছে। দেখা যাক জল কোথায় গড়ায়।
  • যোষিতা | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৯741925
  • ঠিকানা অতীব সহজ এবং সরল। ভিপকিঙ্গেন স্টেশন থেকে নেমেই রাস্তা ক্রস করে সামনের বাড়িটা। একতলার দরজায় নামের পাশেই কলিং বেল। বেল টিপলাম। কেউ খুলল না। ভদ্রতার খাতিরে দুমিনিট অপেক্ষা। ফের আরেকবার বেল টিপলাম। আরও মিনিটখানেক অপেক্ষা। সাড়া নেই। বেল খারাপ হয়ে গেল নাকি। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, দেখি হাসি হাসি মুখে দুজন লোক এই দরজার দিকেই আসছে। তাদের গায়ের রংই তাদের পরিচয়, এদেরই একজন নিশ্চয় মিস্টার ভটচাজ, অন্যজন অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং চঞ্চল ভাবভঙ্গি। মনে হচ্ছে তিনিই ফ্রান্স থেকে আগত অতিথি। এদের দুজনের হাতেই জিনিসপত্র। পাশের দোকানে কেনাকাটা করতে গেছলেন আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবার পরেই। 
    করমর্দন করে আলাপ শুরু হলো। হোস্ট কিনে এনেছেন ময়দা ও ঘি। ফ্রান্স থেকে আগত গেস্ট আজ লুচি খাবেন বলে আবদার করেছেন। তিনিও বাঙালি। আলাপ করবার পরে জানা গেল তিনি আমার চেয়ে একবছরের ছোট। আমার ছোট বোনের ব্যাচেরই ডাক্তার, তবে কলেজ আলাদা, ইনি নীলরতন থেকে পাশ। আপাতত ফ্রান্সের গ্রেনোবল শহরে আলৎসহাইমার রোগের রোগীদের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। ইনি ডক্টর সৌভিক ব্যানার্জি।
    মিস্টার ভটচাজের অ্যাপার্টমেন্টে ডাক্তারবাবু এসেছেন ছুটি কাটাতে, ছোটবেলা থেকে এঁদের দুই পরিবারের মধ্যে চেনাশোনা।
    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। লুচি এখন হবে না। এখন আমরা বেড়াতে যাব ভটচাজের গাড়িতে করে শাফাউজেন জেলায় রাইন নদীর প্রপাত দেখতে। এটা আমার প্রথম আউটিং এই দেশে। মানে সত্যিকারের বেড়ানো বলতে যা বোঝায়।
    সৌভিক খুব চনমনে ছেলে, বাচ্চাদের মতো চঞ্চল। তেমনি মাঝেসাঝে একটু আধটু বেবীটকও করছে। তার হাতে দামী ক্যামেরা। প্রচুর ফিল্মের রোল এনেছে সে। নতুন রোল ভরে নিলো ক্যামেরায়। বরফে মোড়া জুরিখ ছাড়িয়ে আমরা চললাম রাইনফাল্সের দিকে। 
    প্রপাতের কাছাকাছি যেতে হলে অনেক ধাপ সিঁড়ি নামতে হয়। পাথরের মত জমাট হয়ে আছে সিঁড়ি ধাপগুলো। পাশে লোহার রেলিং ধরে ধরে নামা। সৌভিক ফচাৎ ফচাৎ করে ফোটো তুলছে, কখনও বলছে নানান পটভূমিকায় ওর ফোটো তুলে দিতে। আজ যেহেতু চব্বিশে ডিসেম্বর, লোকজন নেই। সব সুনসান ফাঁকা। তার ওপর এটা জলপ্রপাত দেখার সীজনও নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপূর্ব ছিল সেই দৃশ্য। সেই সঙ্গে প্রতি পদক্ষেপে পড়ে যাবার আশঙ্কা। ফেরার সময়ে সব সিঁড়ি আবার উঠতে হবে পায়ে হেঁটে। এটা কম রিস্কি। মিস্টার ভটচাজ সৌভিককে বললেন — এবার আমাদের একটা ফোটো তুলে দাও। 
    সৌভিক সপ্রতিভ ভঙ্গীমায় প্রেফেশনাল ফোটোগ্রাফারের মত আমাদের পোজ দিতে বলল, আবারও ফচাৎ ফচাৎ ফচাৎ।
    — গ্রেনোবলে পৌঁছে ফোটো পাঠাতে ভুলো না কিন্তু!
    — নিশ্চয়ই। আমি সব ফোটো পোস্ট করে দেব। 
    হঠাৎ কী মনে হল, এই নতুন পরিচিত মিস্টার ভটচাজকে আমি একটা পুরোনো গল্প শোনানোর লোভ সামলাতে পারি নি।
    জানেন মিস্টার ভটচাজ, আমি ইঞ্জিনীয়ারিং পড়েছিলাম সোভিয়েত দেশে। সেখানে আমরা হোস্টেলে থাকতাম। সেসব হোস্টেলে ছেলে মেয়ে বলে আলাদা করা নয়। নানান দেশ্র ছেলে ম্য়ে এবং সোভিয়্ত ছাত্রছাত্রীরা থাকত সেখানে। আর দরজায় থাকত একজন করে চৌকিদার। এই চৌকিদারেরা সকলেই বুড়ি। সত্যি সত্যিই বুড়ি, মানে ধরুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধে গেছেন এমন, কিংবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের টাইমে যুবতী ছিলেন এমন বৃদ্ধারাও চৌকিদারি করতেন ছাত্রাবাসগুলেতে। বাইরে থেকে অতিথি এলে তাকে রাতে চলে যেতে হতো, এই ছিল নিয়ম। কিন্তু ছোকরা ছাত্ররা তাতে খুশি হতো না। এক ছাত্র তার গার্লফ্রেন্ডকে এনেছে, মেয়েটি রাতে থাকবে, তার আইডি কার্ড চৌকিদারের কাছে জমা আছে, বেরোনোর সময়ে খাতায় সই করলেই পেয়ে যাবে। কিন্তু সে তো আজ রাতে ফিরবে না। তখন ছাত্রটি নীচে এসেছে বৃদ্ধাকে রাজি করাতে। শুধু কথায় বা অনুরোধে ভবি ভুলবার নন, তখন অন্য ব্যবস্থা। রাত দশটা নাগাদ ছেলেটি ক্যামেরা নিয়ে গেটের কাছে এসে বলল চৌকিদারের ফোটো তুলবে, নানান পোজে ফেটো তুলতে লাগল সে। চৌকিদারের মন জিতে গেল। ব্যস, আইডি কার্ড দিয়ে দিল চৌকিদার। 
    এসব শুনে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেটিকে, তুই যে ফোটো তুললি, সেই ফোটো ডেভালাপ করবারও খরচ অনেক। ছেলেটি বলল, ক্যামেরায় ফিল্মই ছিল না।
    এই শুনে মিস্টার ভটচাজ বললেন, সৌভিকের ক্যামেরায় ফিল্ম আছে তো? নাকি ও ও আমাদের ঠকাচ্ছে?
     
  • যোষিতা | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৬741926
  • লুচি বেলবার সময়ে সৌভিক মেজাজ হারিয়ে ফেলছিল। 
    আহারে, বেচারা দেশে থাকতে বাড়িতে তো কখনও লুচি বেলেও নি, ভাজেও নি। মিস্টার ভটচাজও লুচি খান বলে মনে হয় না, ওদিকে সৌভিক লুচি গোল করে তো বেলতে পারছেই না, সেগুলো ভাজবার সময়ে ফুলছেও না। লুচি পুরোপুরি ঘিয়ে ভাজা হচ্ছে না। তেলের সঙ্গে সামান্য ঘি মিশিয়ে বেশ ঘি ঘি গন্ধ হয়েছে, তাতেই লুচি ছাড়া হচ্ছে। আমি প্রথমদিকটায় এসব দেখে সাহায্য করতে গেছলাম, সৌভিক উল্টে প্রচণ্ড রেগে গেল। উনুনের আঁচ কমাতে হবে, লুচি বেলবার পরে তেলে ছেড়ে হাতা দিয়ে সীমান্য চাপ দিতে হবে, এটাই লুচি ফোলানোর কায়দা। আমরা ছোটবেলা থেকে শুধু দেখে নয়, রান্না করে করে এগুলো শিখেছি। এই ছেলে জীবনে লুচি বানায় নি নিজ হাতে, এখন ফুলছে না বলে আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছে। রান্নার জায়গা থেকে আমায় সরিয়ে দিল।
    মরুকগে। আমি তো ওর অতিথি নই, আমি মিস্টার ভটচাজের গেস্ট। খাবারের গোল কাচের টেবিলের পাশে চেয়ার পেতে আমরা আড্ডা দিতে লাগলাম। ইনি বোঝেন, যে নতুন দেশে এসে মানুষ নিজের ভাষায় কথা বলবার জন্য লোক খোঁজে। এ অভিজ্ঞতা ওঁর নিজেরও আছে। ইনি জার্মানি থেকে  পাশ করা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তারপরে চাকরি করে এদেশে এসে রয়ে গেছেন। এখনও ভারতীয় পাসপোর্ট। দীর্ঘ বিশ বছরেরো বেশি এই দেশে, কিন্তু নাগরিকত্ব বদলানোর কোনও গরজ নেই। এখন অবশ্য টেক্সটাইলে কাজ করেন না। প্রেফেশন বদলে ইনশিওরেন্সে। প্রোফেশন আমূল বদলে ফেলা এদেশে বিরল ফেনোমেনন। কেন বদলালেন প্রোফেশন?
    ক্রমে ক্রমে সমস্ত টেক্সটাইল মিল গুলে উঠে যাচ্ছিল। 
    যা বুঝলাম, আরও আরও লোভের জন্য, আরও সস্তায় কাপড় বানানোর জন্য সমস্ত টেক্সটাইল মিল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই দেশ থেকে, চলে গেছে পৃথিবীর অন্যখানে, যেখানের শ্রমের মূল্য একেবারেই কম।
  • যোষিতা | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৪741927
  • লুচি খাবার পরে শুরু হলো কুইজ কনটেস্ট। মিস্টার ভটচাজ  আমাদের থেকে অনেক সিনিয়র, তার ওপরে দেশ ছেড়েছেন সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে, কুইজ কনটেস্ট বেঝেন না, এসব দেশে ওসবের তেমন চল নেই, কিছু টিভি শো হয়, যেমন জার্মানির চ্যানেলে হয় মিলিওনেয়ার, তাও হালফিলের বিনোদন, দেখতে না চাইলে টিভির চ্যানেল পাল্টে দেওয়া যায়। কিন্তু এই ছেলে অ্যাগ্রেসিভ রকমের কুইজার। এই বেড়াতে এসেও সে সঙ্গে করে কুইজের বই এনেছে। পড়ার বইও এনেছে। ছেলেবেলার অব্যেস, নইলে মা বকে দিতে পারে। সে তার ঘর থেকে মোটা একটা কুইজের বই নিয় এল, আমার পড়া ধরবে। 
    ভূগোলের কুইজে আমাকে ঠকানো শক্ত। বলেতো অমুক দেশের রাজধানী কী? আমি পারবই। বই পড়ে মুখস্থ করে নয়, নানান দেশের নানান মানুষদের সঙ্গে আমি মিশেছি ছাত্রজীবনে। 
    এই ছেলে দমবার পাত্র নয়, হরেকরকম প্রশ্ন করে আমাদের নাস্তানাবুদ করবার চেষ্টা করল। আমরা ইচ্ছে করেই মজার মজার উত্তর দিচ্ছিলাম এবং ও রেগে যাচ্ছিল। পঁয়ত্রিশ বছরের একজন ডাক্তার গবেষক, কীকরে বাচ্চাদের মত বিহেভ করতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। তবে এই টাইপটা আমি কিছুটা হলেও চিনি। ছোটবেলা থেকে পড়ার এবং ভালো রেজাল্ট করবার এত চাপ থাকে এদের, যে সারাক্ষণ চার পাঁচটা প্রাইভেট টিউটরের পড়া মুখস্থ করা, সকালে বিকেলে কমপ্ল্যান বোর্নভিটা মল্টোভা খেয়ে খেয়ে বুদ্ধি বাড়ানো, সঙ্গে হয়ত ব্রেনোলিয়ার মত সব টনিক, সেই সঙ্গে বাবা মায়ের উচ্চাশা ছেলে জয়েন্ট এনট্রান্সে ভালো নম্বর পেয়ে ডাক্তার ইনজিয়ার হবে, এই করতে করতে তুমুল প্রতিযোগিতায় কীরকম স্বার্থপর তথা বাচ্চা মতো রয়ে গেছে। এখন তো কুইজ নেই জীবনে, তবু অভ্যাস ছাড়তে পারছে না। প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হবার ব্যাপারগুলোয় খতম, তবু তবু তবু স্পটলাইট অ্যাডিকশনে ভুগছে। ওকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছি না আমি, বরং মিস্টার ভটচাজের সঙ্গে কথা বলতে অনেক ভালো লাগছে, সেটা সৌভিকের পছন্দ হচ্ছে না। ওকে কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়ে আহাউহু মাতামাতি করা হয় নি। অথচ পরিচিত মহলে পড়াশুনোয় ভালো বলে প্রশংসা পাওয়াটা ওর অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এখানে সেসব করবার কেও নেই। পঁয়ত্রিশ বছরের বালক তাই রেগে গেছে। সুযোগ পেলে বলেই দিতাম — গ্রো আপ!
    বলি নি। 
    অনেক রাত হলো, দশটায় আমাকে ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলেন হোস্ট। পয়লা জানুয়ারি বিকেলে আবার যাব ও বাড়িতে। আমন্ত্রণ পেয়েছি। তবে কালকে আমার এরিকার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে। উপহার কিনতে ভুলে গেছি। কাল সব দোকান বন্ধ থাকলেও স্টেশনের ধারে কিওস্ক খোলা থাকবেই। একবার সেখানে দেখেছিলাম দারুণ দারুণ সব মদ আছে। কাল সকালে গিয়ে কিনে আনব ভালো একটা শ্যাম্পেন।
  • যোষিতা | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৯741928
  • সক্কালবেলায় গিয়েই কিনে নিয়েছি সুন্দর ঘন নীল কাচের বোতলে ফরাসী শ্যাম্পেন। আজ ক্রিসমাস। আমার স্বামী আমায় বিয়ে করবার আগে হিন্দু হয়েছিলেন। সম্ভবত বিয়েটা হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে করবার জন্য। এসব নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কোনও আলেচনা করেন নি। করবার প্রয়োজন ছিল কি না, সে প্রশ্ন এখন অবান্তর। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে। এর আগে অবধি তিনি ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক, প্রত্যেক সপ্তাহে গীর্জার প্রার্থনায় অংশ নেওয়া, গীর্জায় দান ধ্যান করা, স্পেশাল প্রার্থনার জন্য (হিন্দুরা যেমন কারো জন্য পুজো দেয়) খরচ করা মানুষ। কেনও সপ্তাহেই গীর্জা কামাই হতো না। ক্রিসমাসের রাতের মিডনাইট মাস হোক কি গুডফ্রাইডের মাস, অ্যাবসেল্ট হবার প্রশ্নই ছিল না। উপরন্তু ক্রিসমাসের দন্য তোড়জোড় চলত অন্ততঃ মাসখানেক আগে থেকে। ক্রিসমাস কেকের উপকরণ গাঢ় রামের মধ্যে দীর্ঘদিন চুবিয়ে রাখতে হতো, কিশমিশ ইস্তক যাবতীয় ড্রাইফ্রুট অন্তত একমাস জারানো হতো গাঢ় মদে। ক্রিসমাসের আগের দিন ভোরে কেক তৈরির পালা। ঘরে নয়, পার্কসার্কাসের বেকারীতে ভোর তিনটেয় শুরু হতো কারিগর দিয়ে কেক বানানোর কাজ। তারপরে কোল্ড মীটের জন্যও একমাস আগে থেকে মাংস কিনে মাটির হাঁড়িতে নানান উপকরণ দিয়ে বন্ধ রাখার কাজ। ক্রিসমাসের কয়েকদিন আগে সে মাংস ফুটিয়ে ফেললেই জমাট কোল্ড মীট প্রস্তুত, যা খাওয়া যাবে মাসের পর মাস ধরে। এছাড়া টার্কির মাংস পাওয়া না গেলে ডাক রোস্ট হতোই। নতুন জামা পোশাক কেনা, দেওয়া থোওয়াও পুজোর মতই, সেখানেও পছন্দ অপছন্দ নিয়ে পারিবারিক রেষারেষি পলিটিক্স, কিন্তু সব শেষে উৎসব। ক্রিসমাস পারিবারিক উৎসব। ঐদিনে দলবেঁধে চিড়িয়াখান যাওয়া কি মাই লাগিয়ে পিকনিক, অথবা পার্কস্ট্রীটে ঘোরা বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেলিব্রেট করার ব্যাপারে খৃষ্টানরা থাকে বলে মনে হয় না। থাকলেও সংখ্যায় নগণ্য বলেই ধারণা। 
    সুইটজারল্যান্ড খৃষ্টান দেশ। দেশের ধর্ম খৃষ্টধর্ম, কাজেই যীশুর জন্মদিনের এই পরবে রাস্তাঘাট শুনসান, শ্মশানের চেয়েও বেশী নীরব। সবাই ঘরে। এদেশে চার্চে প্রায় কেওই যায় না। অনুদানের অভাবে চার্চগুলো ক্রমশঃ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে। এর কারণ, ধর্ম ডিক্লেয়ার করলে ট্যাক্স বেশি দিতে হয়, চার্চের ট্যাক্স, কির্খেনষ্টয়ার। লোকে তাই ধর্ম থেকে নিজেদের ডিটাচ করে ফেলছে। এর ফলে মরবার পরে ক্রিয়াকর্মের জন্য পুরোহিত পাওয়া চাপ। কিন্তু মরবার পরে কজন আর বাক্সে শুয়ে কবরে যায়? জমির দাম সাংঘাতিক কবরেও। তাই অধিকাংশই পুড়ে ছাই হওয়াটা প্রেফার করে। 
    এসবের কারণে উৎসব আটকে থাকে না যদিও। যারা ছুটিতে বেড়াতে চলে গেল অন্যদেশে, তারা একটা পার্ট, বেশ বড়ো পার্ট। যারা রয়ে গেল, তাদের নিয়ম মেনে পারিবারিক রিইউনিয়নটা করতেই হয়। এটা সেন্টিমেন্টের ব্যাপার। প্রতি বছরই এই দিনে সম্পূর্ণ একাকী কিছু মানুষ মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করে। ক্রিসমাস অসম্ভব ইমোশনের পরব।
  • গোবু | 202.8.116.152 | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:৫৪741977
  • পড়ছি! চলুক...
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৫741983
  • কেনও কাজ ফেলে রাখা আমার ধাতে নেই। শ্যাম্পেনের বোতলটা সরাসরি ধরিয়ে দিলাম এরিকার হাতে। এরিকা প্রচণ্ড ব্যস্ত রান্না করতে। নমাসে ছমাসে রাঁধে যেহেতু খুবই উত্তেজিত। টার্কির গায়ে তুলি দিয়ে একটা পেস্ট লাগানো হচ্ছে। দেখে মনে হলো ঝাঁজহীন সর্ষেবাটা গোছের কিছু, পীনাটবাটারও হতে পারে। জিজ্ঞাসা করে কৌতুহল মেটাতে গেলে বেচারির রন্ধনপ্রক্রিয়া ঘেঁটে যেতে পারে। বোকা সেজে অবজার্ভ করা অনেক নিরাপদ। তারপরে আরেকটা ব্যাপার দেখলাম, ময়দাকে ডিম দিয়ে মেখে (অবশ্যই যন্ত্রের সাহায়্যে) সেই মাখা তালকে প্রথমে বেলন দিয়ে বেলা হলো। বেলনগুলোও অদ্ভূত, কাঠের চোঙের মধ্যে একটা ডাণ্ডা। আমাদের দেশি বেলনের মত নয়। এবড়োখেড়ো খানিকটা বেলবার জন্য প্রচুর ময়দা ছড়ালো রান্নার জায়গাটায়। সেই এবড়োখেবড়ো জিনিসটা এবার চালান করল একটা হাতল ঘোরানো যন্ত্রের মধ্যে। মেকানিকাল যন্ত্র এটা। তারপরে হাতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিনিসটারে পাতলা করা হচ্ছে। আমাকে দিলে স্যাটাস্যাট বেলে দিতে পারতাম। কিন্তু না, থাক। মড়া মেরে খুনের দায়ে পড়তে চাই না। মহিলার হেভি মেজাজ। তায় ছফুট লম্বা। তেমনি তাগড়া। 
    এই বারংবার হাতল ঘুরিয়ে বেলাবেলি করতে করতে জিনিসটা সাইজে বাড়লেও ছিঁড়ে যাচ্ছিল। তখন সে ক্ষান্ত দিল। কী বানাতে চাচ্ছে? ঢাকাই পরোটা, লাচ্ছা পরোটা? নাকি রাখরখানি? এরপরে বিবিধ কাচের বোয়াম থেকে বের হলো ড্রায়েড ব্যাঙের ছাতা। দামী জিনিস। সেগুলো গরম জলে ভিজিয়ে ফুলতে দেওয়া হলো। আমি তারিফের দৃষ্টিতে এই নতুন রান্না দেখছি। হরিণও বেরিয়ে এসেছে ফ্রিজ থেকে। তার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে সেটা জানা হলো না। এরিকার ছেলে মেয়ে ও তাদের গার্লফ্রেন্ড বর, চারজনে এসে গিয়ে রান্নার জায়গায় দাপিয়ে বেড়াতে লাগল। আমি ঘরে চলে এলাম। নিজের কিছু গল্পের বই আছে, সেগুলো আবার পড়তে শুরু করলাম। ঐদিক থেকে প্রবল টিভি হাসাহাসির শব্দে বাড়ি জমজমাট।
    বিকেলের দিকে এরিকার বয়ফ্রেন্ড মার্টিন তার শিশুপুত্র ও কন্যা নিয়ে হাজির। সন্ধেবেলা ডিনার শুরু হলো। টার্কিটা রোস্ট হয়েছে। খেতে মন্দ নয়। পাতলা করে বেলা ময়দার মধ্যে দামী ব্যাঙের ছাতার পুর দিয়ে তৈরি হয়েছে ডাম্পলিং, অখাদ্য এবং তেতো। রুটি এবং স্যালাদ ভালো লাগছিল খেতে। মস্ত কাঠের টেবিলে আমরা নজন ডিনার করছি। মদ টদও ছিল। আরেকটা ঘন ডালের মত কিছু। হরিণও রান্না হয়েছে, তবে বড়ই ছিবড়ে। হাইডেলবের্গের ম্যারিয়ট হোটেলের সেই হরিণের মাংসের কাছাকাছিও না।
    ডিনারের শেষে লম্বা আড্ডা। আমি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছি না। ওরা নিজেদের নিয়েই মশগুল। খুবই স্বাভাবিক। ক্রিসমাস আউটসাইডারদের জন্য নয়।
    আমি নিজের ঘরে চলে গেলাম। ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎ দরজা ঠকঠক, মার্চিনের মেয়ে এসে আমাকে জেরে নিয়ে গেল সেই হলঘরে। প্রায় মধ্যরাত। এখন ক্রিসমাসট্রির চারপাশে রাখা উপহার দেওয়া দেওয়ি হবে। 
    ঐ একেকজন একটা একটা করে বাক্স তুলে তুলে আনবে, তার ওপর প্রাপকের নাম থাকবে, বাক্সটা বা প্যাকেটটা নিয়ে নেড়ে চেড়ে গেসওয়ার্ক চলবে কিছুক্ষণ ভেতরে কী কী আছে সে ব্যাপারে, সেই নিয়ে হাসাহাসি হবে, তারপরে প্যাকেটের মোড়ক খোলা, জিনিসটা হাতে নিয়ে খুশি অবাক ধন্যবাদ প্রশংসা আরেক প্রস্থ হাসাহাসি, ফের আরেকটা প্যাকেট। এমনি করতে করতে ঘন্টা দেড়েক লাগবে মনে হচ্ছে, প্রচুর প্যাকেট গাছের নীচে। আমার অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে।  সে এক অদ্ভূত অবস্থা।  আমি  একসময়ে বললাম, আমায় ক্ষমা করো, আমি এখন উঠি, বড্ড ঘুম পেয়েছে। এরিকা ছাড়ে না। আমার জন্যও প্যাকেট আছে নাকি! সেরেছে। অগত্যা বসতেই হলো। প্রায় ঘন্টা দেড়েকেরো পরে, গাছতলা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে, আমি ঢুলছি, এরিকা আমার হাতে একটা ডিমের বাক্স দিল। হ্যাঁ, ডিম। একটা বাক্সে ছটা কাঁচা ডিম। বাজারে যেমন বিক্রি হয়। 
    ওটা হাতে নিয়ে আমি হতভম্ব। কেসটা কী?
    সবাই হাসিহাসি মুখে আমার মুখের দিকে উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে। আমার প্রতিক্রিয়া দেখবে। কী জানি, অস্ট্রিয়ানদের এরকম নিয়ম আছে কি না জানি না, ক্রিসমাসে ডিম উপহার দেয়। ইস্টারে ডিমের মত সাইজের চকোলেট দেয় শুনেছি। এটা হয়ত অস্ট্রিয়ার রীতি, নাকি শিক্ষা?
    আমার পক্ষে ধন্যবাদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চুপ হয়ে গেছি। এরিকা হাসতে হাসতে বলে, তুই সস্তার ডিম খাস আমি দেখি, তাই দামী ডিম কিনেছি, এগুলো ভাল ডিম, দামী ডিম। 
    আমি প্যাকেটটা ওখানে রেখে চলে যাচ্ছিলাম, তখন বলছে, রেখে যাচ্ছিস কেন? নে নে , সঙ্গে নিয়ে যা। 
    বাক্সটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি নিজের ঘরে চলে গেছলাম। পুরো ঘটনাটা তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না। 
    আমাদের দেশে সাহেব মেম দেখলেই মনে করে কতো শিক্ষিত কতো ভদ্রলোক। ছ্যাহ। এরকম ছোটোলোক! 
    ও নিজেও জানে না ও কতটা ছোটোলোক। বাকি যারা ঐ ঘরে বসেছিল সবাই ওরকমই হবে, কেও প্রতিবাদ করে নি। বাচ্চাদুটোও শিখে নিচ্ছে। এই ই তো ট্রেনিংএর বয়স।
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৪741985
  • বাকি রাতটা আমি ঘুমোতে পারি নি অপমানে। মনে হচ্ছিল যা যা খেয়ছি সব বমি করে দিই, কিন্তু তা সম্ভব নয়, সমস্ত খাবার এতক্ষণে পাকস্থলীর অনেক ভেতরে ঢুকে হজম হয়ে গেছে। 
    কিছুক্ষণ কেঁদে নিলাম। কিছুক্ষণ মা সিদ্ধেশ্বরীকে বললাম, মা তুমি এর বিচার কোরো। শেষ রাতে ভাতে শুরু করলাম এর প্রতিকার কী হতে পারে? ওর মত ছোটোলোকের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে যাওয়া উচিত নয়। নতুন বছর পড়ুক, যে করে হোক আমার স্বামীর জন্য একটা চাকরি আমায় খুঁজে বের করতেই হবে। এখন ছুটির টাইম। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অনেক ছুটোছুটি আছে। আর চাই চেনা কিছু লোক এদেশে। নিজের দেশের লোক। বাঙালী। ফোনের সেই সফটওয়্যারটা দিয়ে আরো খুঁজতে হবে বাঙালি। সাতাশ তারিখ আমি অফিসে গিয়ে আবার খুঁজতে বসব নিজের লোক। ঘরে তো ইন্টারনেট নেই। এই সব ভাবতে ভাবতে ভোর হয় গেল। ঘুমও পেয়ে গেল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ আমি অনেকক্ষণ ঘুমোব, আমার আজ কোনও তাড়া নেই।
  • kk | 2607:fb91:87a:52eb:184a:8a01:dfbc:7879 | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৮741986
  • মানুষের মানুষের পার্স্পেক্টিভ কত যে আলাদা হতে পারে সেটা পড়তে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৯741987
  • নতুন বছর পড়বার আগে যে কটা ওয়র্কিং ডে ছিল, আমি রোজ অফিসে যেতাম। শেরী ওয়ং ও আসত। শুধু আমরা দুজন। শেরী আমাকে নিয়ে বের হতো নানান কাজে। কোনওদিন ব্যাংকে যেত প্রাইভেট প্রভিডেন্টফান্ডের টাকা জমা করতে, কখনও আমায় নিয়ে ঘুরত জুরিখের বিখ্যাত বানহফষ্ট্রাসসের দোকানগুলোয়। সস্তার দোকান, যেমন এইচঅ্যান্ডএম, সিঅ্যান্ডএ, চিকোরি, চার্লস ফোয়েগেলে, এসবে ও ঢুকত না। মাঝারি দামের দোকান, যেমন ম্যাংগো, জারা, বেনেটন, এসবগুলোয় ঢুকে খুঁটে খুঁটে বেছে বেছে বারবার পরে ট্রায়াল দিয়ে এক্কেবারে পছন্দের পোশাকটাই কিনত। একদিন আমায় নিয়ে গেল ষ্টাডহাউসের দোতলায়। ষ্টাডহাউস হচ্ছে মিউনিসিপাল করপোরেশনের বাড়ি। ঐ বাড়িতেই বিয়ে হয়, ওখানেই যেতে হয় ডিভোর্সের জন্যে। শেরীর একা কথা বলতে সম্ভবত টেনশন হচ্ছিল, আমি ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ডিভোর্সের দরখাস্তের জন্য সব নিয়ম ওকে বলে দিল ওখানকার কর্মচারী। স্বামীকে আসতে হবে, সিংগাপুরে বসে থাকলে হবে না।
    তবে বেশি সময় লাগবে না। এদেশে ডিভোর্স খুব সহজ। যেকোনও এক পক্ষ চাইলেই ডিভোর্স হবে। জোর করে বিবাহবন্ধনে আটকে রাখার ব্যাপার নেই। আমাদের ভারতে ডিভোর্স শুনেছি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। মিউচুয়াল না হলে বছরের পর বছর কেস চলে, উকিলে পয়সা খায়। অ্যালিমনি নিয়ে দর কষাকষি হয়। ডিভোর্সের জন্য যথেষ্ট কারণ দেখাতে হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা বিশেষ করে ডিভোর্স চায় না। সন্তান থাকলে তো আরোই না। ভারতে ডিভোর্সী পুরুষের বিয় হতে সময় লাগে না, ডিভোর্সী মেয়ের বিয়ে হওয়া কঠিন, সঙ্গে বাচ্চাকাচ্চা থাকলে আরো আরো অসম্ভব। এখানে ওসবের বালাই নেই। কেউ কারওকে জোর করে আটকাবে না। শেরী খূব খুশি। ডিভোর্স হয়ে গেলে ও পার্টি দেবে। মুক্তির আনন্দে।
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৮741988
  • আরও দুজনকে পাওয়া গেছে টেলিফোনবুক থেকে। এরা দুজনেই মেয়ে। একজন বেশ বয়স্ক মহিলা, তিনি ডক্টরেট স্ট্যাটিসটিক্সে। তিনি খুব ব্যস্ত, দেখা করতে চাইলেন বটে, তবে গরজ কম। আমি এঁকে পেন্ডিং লিস্টে রাখলাম। অন্যজন তপতী। এই তপতীর প্রসঙ্গে পরে আবারও আসতে পারে কয়েকবার।
    ডিসেম্বরের শেষদিনে আমার অফিসের কাছেই একটা কাফেতে তপতীর সঙ্গে মীট করলাম। অমায়িক মিষ্টি মেয়ে, সেই সঙ্গে কঠিনও। 
    ওর বাড়িও গেছি আমি পরে। 
    ওকে নিয়ে বাংলালাইভে লিখেছিলাম। অবশ্যই এখানে আমি কারওরই আসল নাম লিখি না। তপতী নামেই সেই লেখাটা ছিল। পরের পোস্টে সেটা দিচ্ছি।
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:১৮741989
  • পাত্রী চাই
    (তপতীর কথা)

    আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবার ঠিক পরেই, তখনও ঠিক হয় নাই, আরও পড়ব - নাকি পড়া এখানেই শেষ, আমাদের কল্যানীর বাড়িতে, সন্ধ্যেবেলা রান্নাঘরে মাকে কাজে সাহায্য করছি, মা লুচি ভাজছে, আমি বেলছি, বাবা আমাদের ছোটো ভাইটাকে নিয়ে গেছে বন্ধুর বাড়ি হরিণঘাটায়, বাবা ফিরলেই সবাই খেতে বসব, লুচি গোল হচ্ছে না, মা রেগে অস্থির। মা রাগ করে বেলনটা ছুঁড়ে মারল আমার দিকে, "এত বড় হয়েছিস, আজ বাদে কাল বিয়া দিলে শ্বশুরবাড়ি কাজ করতে হবে না?" আমি রাগ করে রান্নাঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলাম,  আমি আর আমার সেজবোন তপতী দুজনেই এবার একসঙ্গে ভালোভাবে সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেছি, মাত্র দুইদিন আগে রেজাল্ট বেরিয়েছে, মার্কশিট এখনো আসেনি।

    হঠাৎ পেছন ফিরে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি ভীষণ আলো, অত আলো কেন? আলো নয়, আগুন, মা-র শাড়িতে আগুন, সারাগায়ে আগুন ধরে গেছে, কী করে আগুন লাগল? আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে ধরব , না কী করব? চেঁচাতেও পারছি না, আমি বোবা হয়ে গেছি। মা, ঐ অবস্থায় বাইরে ছুটে আসল, মাথার চুলগুলো সব পুড়ে গেছে,  উঠানের দিকে দৌড়ে গেল, জল-জল করে চেঁচাচ্ছে, জলের বালতি রান্নাঘরে, আমি পাতকুয়ার দিকে দৌড়ে যাবার আগেই মা পাতকুয়ার মধ্যে ঝাঁপ দিল। এতক্ষণে লোকজন এসে পড়ছে, আমার ছোট্টো বোন জয়ন্তী, ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। সমস্ত ব্যাপারটা আমার চোখের সামনে ঘটল, পাতকুয়া থেকে মাকে তুলল, আশেপাশের বাড়ির লোকজন, তখনও একটু একটু জ্ঞান আছে, শুধু বলছে, জ্বলে গেলাম, জ্বালা ভীষণ জ্বালা। মা আমাদের চোখের সামনে মারা গেল, হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি। হাসপাতাল, পুলিশ, এসবের মধ্যে আমরা মায়ের জন্যে কাঁদতে পারিনি কেউ।

    মা-র মৃত্যুর পরে, বাবা একমাসের মধ্যে কী বুড়া হয়ে গেল যে কী বলব, মাথার আদ্ধেক চুল পাকা, ঠিকমত দাড়ি কামায় না, চোখের দৃষ্টি একেবারে ফাঁকা। বাবাকে আর চেনা যেত না। এই সময়ে বাবার মাথার মধ্যে ঢুকল, আমাদের বিয়া দেবার চিন্তা, আমার দিদির আগেই বিয়া হয়ে গেছে, বাকি আছি আমরা আরো তিনবোন, আমি মেজ, আমার পরে, তপতী আর জয়ন্তী। বাবার ধারণা এখন যদি তার নিজেরও কিৎছু একটা হয়ে যায়, তবে আমরা তিনবোন, ছোটভাই সব ভেসে যাব। আমার আর সেজবোন তপতীর জন্যে বাবা খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন থেকে পাত্র খুঁজতে লাগল। আমরাও নিজেরা সেখান থেকে বেছে বেছে পাত্র পছন্দ করতে লাগলাম। একটা সম্বন্ধ আমার নিজের পছন্দ হয়েছিল, বাবারও পছন্দ ছিল, সেখানেই যোগাযোগ করা হোল, পাত্রের বয়েস একটু বেশি, কিন্তু থাকে সুইটজারল্যান্ডে, বউ মারা গেছে, সেখানেই বিয়া ঠিক হোল। তপতীর বিয়াও ঠিক হল এক ডাক্তার পাত্রের সঙ্গে, আমার বিয়া ঠিক হওয়া থেকে বৌভাত, পুরো ব্যাপারটা হয়েছিলো মাত্র আট দিনে। পাত্র বাইরে থেকে আসল, আশীর্বাদ হোল, বিয়ার পুরো অনুষ্ঠান, বৌভাত, সব শেষে, বৌভাতের পরের দিন বিয়া রেজিস্ট্রি করতে গেলাম, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসে। বাবা সঙ্গে যেতে চাইছিল, আমার স্বামী বলল, আপনার কষ্ট করে আসার দরকার নাই, আমার বন্ধু বান্ধব আছে, বেশিক্ষণ লাগবে না, আপনি বাড়িতে থাকুন। সেইখানেই জানলাম, বরের বয়স আমার থেকে পনের বছর বেশি নয়, তিরিশ বছর বেশি, আমার বাবার প্রায় সমবয়সি সে, আরো জানলাম, বউ তার মারা যায় নি, ডিভোর্স হয়েছে, আরো কীকী লেখা ছিলো সেই কাগজে দেখতে পাইনি, আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল, কিন্তু ফুলশয্যাই হয়ে গেছে, এখন আর ঐ কাগজে সই দেওয়া আর না দেওয়ার মধ্যে কী পার্থক্য! বাড়ি ফিরে বাবাকে আমি কিছু বলিনি, বাবার এমনিতেই মন ভার, তাকে আর কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে নেই। বর আগেই চলে গেল বিদেশে, আমি গেলাম আরো তিন মাস পরে, পাসপোর্ট ভিসা টিকিট এইসবে সময় লেগেছিল, আর ততক্ষণে এটাও টের পেয়েছি, আমার শরীরে আরেকটা প্রাণ বড় হচ্ছে।

    সুইটজারল্যান্ডের এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করতে এসেছিলো আমার স্বামী, সঙ্গে আরেকটি ছেলে, দেখে মনে হল আমার ভাই কৌশিকের চেয়ে অনেকটাই বড়, স্বামী আলাপ করিয়ে দিলো, এ তোমার বড় ছেলে। বাহরে, আর কত মজার জিনিস দেখব? চোদ্দ পনের বছরের একটা ছেলেও আছে আমার, এই আঠার বছর বয়েসেই? কই জানতাম না তো?
    মুখে বললাম, আমার ছেলে?
    স্বামীটি উত্তর দিলো, শুধু এই ছেলে নয়, একটা মেয়েও আছে, তার বয়েস তেরো, তবে তোমার চিন্তা নাই, এরা এদের মায়ের কাছেই থাকে, মাঝেমাঝে আসে, তখন এদের ঠিকমতো যত্ন হওয়া চাই। এদের মায়ের সঙ্গে আমার ডিভোর্স।
    জানা রইল। আমি এরপরে চুপ ছিলাম বহুক্ষণ, সেই এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত।
    বাড়ি পৌঁছবার পর স্বামী আবার প্রশ্ন করে, "এত ব্যাজার মুখ কেন? এত সুন্দর একটা দেশে এসেছে, এত ভালো জায়গা, তবু এত মুখ ভার?"
    বললাম, "বিয়া হতে না হতেই আমাকে সৎমা বানিয়ে দিলে?"
    যেই না একথা বলা দুই গালে ঠাসঠাস করে দুই চড়, "মুখে মুখে কথা বলবি, তো লাথি মেরে বার করে দেব!"
    হ্যাঁ, এই আমার প্রথম স্বামীর বাড়িতে আসার অভিজ্ঞতা।

    সৎ ছেলেমেয়ে দুটো, মাঝেমাঝে আসে, আমাকে মানুষ বলেই গন্য করে না, ওদের মা সুইস, না অস্ট্রিয়ান, কী একটা যেন, বাপ ওদের বাংলা শিখিয়েছে কিছু, আর কিছুতো না, কিছু বাংলা গালি শিখিয়েছে। মুখে আনা যায় না সেসব অশ্রাব্য শব্দ; ছেলেটা ঐ সব গালি দিয়ে আমাকে ডাকে, দেশে রাস্তার কুকুরের সঙ্গেও আমরা এমন ব্যবহার করতে দেখিনি কাউকে! বাবাকে প্রথম ছয়মাস কোনো চিঠি লিখিনি। বাবা চিন্তায় অস্থির, ছোটো ভাইবোন দুটো ভাবছে, দিদি বিদেশে গিয়ে ওদের ভুলে গেছে, বাড়িতেতো মা-ও নাই, শুধু বাবা আর ছোটো দুই ভাইবোন, কী লিখব ওদের? লিখতে গেলে কান্না আসে, কতবার চিঠি লিখতে গিয়ে আর লিখতে পারিনি, লেখা যায়, বাবা তুমি জানো, আমি কীভাবে আছি? সুন্দর রাস্তাঘাট, সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি, ভালোভালো সিনারি, এসব দেখা হয়ে গেছে, শুধু লাথি ঝ্যাঁটা আর অত্যাচারই বরাদ্দ ছিলো আমার এই আঠারো বছর বয়েস থেকে? এর নাম স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক? আমার বাবাও তো আমার স্বামীর প্রায় সমবয়সি, তাকে তো কোনোদিন আমার মায়ের সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করতে দেখি নাই? ঝগড়াঝাঁটি কি হত না বাবা মা-র? হত, কিন্তু, এই বিদেশে, এই শিক্ষিত স্বামীর এ কী ব্যবহার? সব সহ্য করেই ছিলাম, প্রথমে ছেলে জন্মাল, তার পরে মেয়ে। ছেলে স্কুলে যেতে শুরু করল, আমিও তার সঙ্গে জার্মান ভাষা শিখতে লাগলাম, ভাষা না জানলে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারব না, কোনো বন্ধু থাকবে না, বিপদে আপদে কে বাঁচাবে আমাকে?

    আমার প্রথম বান্ধবী ছিলো আমাদের নীচের ফ্ল্যাটের মেয়ে, নাম সারা। ও বলল, "তোর স্বামী তোকে এত মারধোর করে, তুই পুলিশ ডাকবি!" খুব বুদ্ধি! পুলিশ তো ডাকব, তারপর? টাকা পয়সা তো কিছুই নাই আমার, দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব? ইন্ডিয়া? ডিভোর্সি বাচ্চাসহ মেয়ের কী ভবিষ্যৎ বাঙ্গালি সমাজে? তবু সারা সহ্য করতে পারে না আমার অপমান, ও বিশ্বাসই করতে পারে না, আমার স্বামী কোনোদিন একটা চুমুও খায়নি আমাকে, অথচ তার দু-দুটো সন্তানের জন্ম দিয়েছি আমি। ওরে বোকা মেয়ে, সন্তানের জন্ম দেবার জন্যে চুমু খাবার দরকার পড়ে না!

    সারা তখন বুদ্ধি দেয়, তুই চাকরি কর ব্রততী। সেকেন্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ, কে চাকরি দেবে আমাকে? কিন্তু সত্যি চাকরী পেলাম, আটবছর কষ্ট সহ্য করে, ধীরে ধীরে গোপনে ভাষা শেখার ফল পেলাম, পোস্টঅফিসের কাজ, মেল সর্টিং, এর জন্যে পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। ঘন্টায় তিনহাজার চিঠি সর্ট করতে হবে, আমি পারব, ঠিক পারব। কিন্তু এই বাড়িতে থেকে তো চাকরি করা যাবে না, আলাদা ফ্ল্যাট খোঁজা হোল, খাট আলমারি, টেবিল,  মানে যা যা লাগে সব কেনা হল, সারা হেল্প না করলে আমার একার পক্ষে অসম্ভব ছিল এসব।

    চাকরিতে জয়েন করার আগের রাত্রে স্বামীকে বললাম, "একটা চাকরি নিয়েছি, কাল জয়েন করব"।
    - তাহলে বাচ্চাদের দেখবে কে? সারাদিন বাইরে টইটই?
    - দিনে নয়, রাতে; বাড়ির কাজ সব গুছিয়ে দিয়ে, নাইট ডিউটি।
    - বা:, তলে তলে এত কাজ? কীসের চাকরি? প্রফেসর হবে নাকি?
    - না, প্রফেসর না, তবে একেবারে অশিক্ষিত মেয়েরেও বিয়া কর নাই, ভদ্র কাজই করব।
    আগে থেকেই জানতাম রাজি হবে না সে, তাই তো আলাদা হবার জন্যেই ফ্ল্যাট ঠিক করাই ছিলো, তবুও, বলে যেতে হয়, তাই বলেছিলাম।
    ব্যস, শুরু হয়ে গেল মারধোর, এসব আমার নতুন কিছু না, আট বছরের মার খাওয়া অভ্যাস, কখনো কখনো উল্টে দিয়েওছি দুঘা, কিন্তু সেদিন আমি চুপচাপ মার খেলাম, কালশিটে আর রক্ত দুটোই কাজে লাগবে।
    পরদিন সকালে, স্বামী কাজে বেরোলেই, ব্যাগ গুছিয়ে, বাচ্চা দুটোকে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়লাম, নিজের কাপড় জামা ছাড়া কিছু নিইনি, একটা চামচ ও আনিনি ঐ বাড়ি থেকে; পুলিশকে খবর দিলাম, মারধোরের দাগ দেখালাম, সব জানিয়ে, আমি স্বামীর ঘর ত্যাগ করলাম।

    অসুবিধা কি আর হয়নি? হয়েছে। দুটো ছোটো ছোটো বাচ্চা মানুষ করা, সারারাত চিঠি বাছাইয়ের কাজ, দিনের বেলা, রান্নাবান্না সব কাজ, তবু শান্তি।
    এদিকে এর মধ্যে স্বামী ঠিক খোঁজ নিয়ে এসে উপস্থিত; " চলো চলো অনেক ঢঙ হয়েছে"।
    - আমি আর ফিরব না, আমি ডিভোর্স চাই।
    - ডিভোর্স? কেন? ও বয়ফ্রেন্ড হয়েছে? তারে বিয়া করবে?
    - কী করব না করব আমার নিজের সিদ্ধান্ত, তুমি এখন যাও।

    ডিভোর্সের কেস চলছে, এমন সময়ে এক অদ্ভুত মজা হল। যা আমি কখনও কল্পনাও করিনি, আমার হাত দিয়েই শয়ে শয়ে চিঠি বাছাই হচ্ছে, সব আমার স্বামীর নামে, সে পাত্রী খুঁজতে আবার বিজ্ঞাপন দিয়েছে কলকাতার খবরের কাগজে। আটান্ন ঊনষাট বছরের ডিভোর্সি পাত্রের জন্যে রোজ শয়ে শয়ে পাত্রীর দরখাস্ত আসছে, সুইস পাসপোর্টের এমনই মধু! এসব চিঠি আমার হাত দিয়েই বাছাই হয়, খামের ওপরেই তো লেখা থাকে বিষয়বস্তু, ভাগ্যের কী পরিহাস! ডিভোর্সও হল, আর তার তৃতীয় বিয়াও হল, একমাসের মধ্যে, খবর ঠিক পেলাম আমি। এবার বউ, আমার মত আঠারো বছরের ইস্কুল পাশ মেয়ে নয়, সুশিক্ষিতা, শুনেছি লেখিকা নাকি, বাব্বা:!

    এরপরে অনেক বছর কেটে গেছে, আমার ছোট্ট ভাইটা, কৌশিক, দেশে বি.এস.সি. পাশ করে বসে ছিল, আমিই ওকে নিয়ে এলাম, তারপর এদেশে থেকে যাবার জন্যে, বাধ্য হয়ে লোকে যা করে, একটা সুইস মহিলার সঙ্গে বিয়ে। মহিলা নয়, বুড়ি, কিন্তু বাঁচতে তো হবে। পাঁচ বছর সেই বুড়ি বউকে আমার ভাই, না পারে ফেলতে, না পারে রাখতে; বুড়িটাও শয়তান, খালি ভয় দেখায় ডিভোর্স করে দেবে! আরে:, পাঁচ বছরের মধ্যে ডিভোর্স করলে, কৌশিককে তো দেশে ফিরে যেতে হবে! এখন অবশ্য সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।  খুব কষ্ট করে পাঁচটা বছর কাটিয়েছে ভাইটা। গতমাসে ডিভোর্স ও হয়ে গেছে, এবার ও পাকাপাকি থাকতে পারবে এদেশে, একটা ভালো চাকরি খুঁজছে। বাবাকে আজকাল প্রত্যেক মাসেই ফোন করি আমি। অনেক কথা হয়। আমার ডিভোর্সের কথা বাবা চেপে রেখেছিলো অনেকদিন, ছোটো বোনটার বিয়ে হওয়া অবধি। ইদানীং নাকি অনেকেই বাবার কাছে আমার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসে, ডিভোর্সি, দুটো বড় বড় ছেলেমেয়ে আমার, তবুও আগ্রহ।

    বাবা বলে, " জানিস, আজকাল সমাজ অনেক পাল্টে গেছে, আজকাল বাচ্চাসহ ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়া করতে কতলোকের আগ্রহ"।
    -  রাখো তো, ওসব! সমাজ ওরকম পাল্টায় নাকি? তোমারও যা বুদ্ধি! চিন্তা করে দেখো, ওরা কি আমাকে বিয়া করতে চায়, না আমার পাসপোর্টটাকে? ইন্ডিয়ায় কুমারী মেয়ের অভাব কবে থেকে? তার চেয়ে এক কাজ কর, কাগজে বিজ্ঞাপন দাও, আমার জন্যে নয়, আমার এখানে বয়ফ্রেন্ড  আছে।  বিজ্ঞাপন দাও কৌশিকের জন্যে।
    এইভাবে লিখো, অনূর্ধ ত্রিশ, পূর্ববঙ্গ কায়স্থ, ইউরোপ নিবাসী, সুচাকুরে পাত্রের জন্যে অনূর্ধ পঁচিশ, ফর্সা, সুশিক্ষিতা, প্রকৃতসুন্দরী, গৃহকর্মনিপুণা পাত্রী চাই। অস্ববর্ণ চলিবে। কোনো দাবি নাই।
  • যোষিতা | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:২২741990
  • তপতী নয়, ব্রততী হবে। 
  • যোষিতা | ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:৩৪742037
  • সেই নিউইয়ার্স ইভের সন্ধেয় আমি টিভি দেখছিলাম। ততক্ষণে ভারতবর্ষে নতুন বছর পড়ে গেছে। ২০০২। ইউরো নামক কারেন্সি চালু হচ্ছে পয়লা জানুয়ারি থেকে ইউরো জোনে। কয়েকটা দেশও যোগ দিল ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নে। বেশ অন্যরকম অনুভূতি।
    সকালে দেখা করতে হবে দেবাঞ্জন ব্যানার্জির সঙ্গে। আমার বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের হাঁটা পথ তার বাড়ি। তবে সেখানে মীট করব না।
    সকালে নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করলাম নিকটবর্তী রেলস্টেশন ওয়ের্লিকনের পাশে একটা কাফেতে। ইনি একজন বিজ্ঞানী। গবেষণা করছেন এটেহা (ETH)তে। সুইস বান্ধবীর সঙ্গে থাকেন, জার্মান ভাষা ভালই শিখে নিয়েছেন। আমরা কফি খেতে খেতে গল্প করলাম। ইনি বয়সে আমার চেয়ে কিছু ছোট। বেড়ানোর নেশা। মাঝেমধ্যেই ট্রেকিং করতে যান সুইস আল্পসের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে মনে হলো না এদেশে তিনি বেশিদিন থাকবেন বলে। আমাকে ঐ অল্প সময়ের মধ্যে জার্মান ভাষার ছোটোখাটো খুঁটিনাটি শিখিয়ে দিচ্ছিলেন। আমার পূর্বজীবনের মস্ত একটা অংশ সোভিয়েত দেশে কেটেছে, সেটা বলে ফেলেছি কথা পৃষ্ঠে। উনিও বেশ আগ্রহী দেখলাম কাজাখস্তান ব্যাপারে।
    মোটকথা আড্ডার ওখানেই ইতি।
    বিকেলে যেতে হবে মিস্টার ভটচাজের বাড়ি। আজ আর সৌভিক থাকবে বলে মনে হয় না। তার এতদিনে ফ্রান্সে ফিরে যাবারই কথা। সেদিন সৌভিকের দাপটে গৃহকর্তার সঙ্গে ভাল করে গল্পই করা গেল না। পাঁচটায় যেতে বলেছেন।
    কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটায় কলিং বেল টিপেছি। আমার বাড়ি থেকে এঁর বাড়ি সরাসরি একটা ট্রান্সপোর্টে যাওয়া যায় না। একবার বদলাতে হয়। ট্রাম থেকে নেমে বাসে মাত্র দুটো স্টপ। বাসের রাস্তাটা হেঁটেই মেরে দিয়েছিলাম। 
    আজ বাড়ি শান্ত। কিঞ্চিৎ অগোছালো। কিছুক্ষণ আড্ডা হলো। তারপর উনি সিনেমা দেখাতে নিয়ে চললেন আমায়। বাড়ি থেকে অনতিদূরে লিমাট নদীর ছোট ব্রীজ পেরিয়ে আমি প্রথম এদেশের সিনেমাহলে ঢুকলাম। 
    চলছে নতুন বই হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন। এতই নতুন বই, যে জার্মানে ডাবিং হয় নি, আগাগোড়া ইংরিজিতে। ইন্টারভ্যালে আইসক্রীম খাওয়া হলো। তারপরে ওঁর বাড়িতে ফিরে ডিনার।
    ফেরার সময় আমায় বাসস্টপে পৌঁছে দিলেন। তখন আমি বলছিলাম, জানেন এই হ্যারীর বয়সও এগারো, আমার মেয়েও এগারো, ওকে এই সিনেমাটা দেখাতে পারলে ও খুব খুশি হতো।
  • যোষিতা | ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৯742061
  • ২০০২ সম্ভবতঃ আমার এবং আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মানুষের কাছে "ভুলে না যাবার বছর"।
    বছরের গোড়াতেই ফের আমন্ত্রণ আমার বাসেল নিবাসী ননদির থেকে। তিনি অবশ্য সরাসরি নেমন্তন্ন করেন নি, আমার স্বামীকে ইমেইলে জানিয়ে দিয়েছেন নেমন্তন্ন কবে এবং কখন। স্বামী আমাকে জানালেন। সপ্তাহান্তে ননদির এক বান্ধবী আমায় জুরিখের একটা নির্দিষ্ট রাস্তা থেকে তাঁর গাড়িতে তুলে নিয়ে বাসেলে যাবেন, ফেরার পথেও আমায় জুরিখে নামিয়ে দেবেন। বাহ, এতো ভালোই হলো। দিনটা যেহেতু শনি কিংবা রবিবার, আমার তরফ থেকে কোনও সমস্যা নেই।
    যথেষ্ট ঠাণ্ডা সেদিন ভোরে, রাস্তায় জমেছে যথেষ্ট তুষারও। তবু, যেহেতু গাড়ি থামার তেমন কোনও জায়গা নেই ঐ স্পটে, তাই আমায় যাতে চিনতে সুবিধে হয়, আমি পরে নিয়েছি শাড়ি। পাঁচশো মিটার দূর থেকেই চেনা যাবে মনে হয়।
    ননদির বান্ধবীর গাড়িতে চললাম বাসেল। গাড়ী চালালেন ননদির বান্ধবীর স্বামী, তাঁর পাশে বসে তাঁর কন্যা, পেছনের সীটে ছিলাম বান্ধবীটির নতুন জামাই, বান্ধবী নিজে এবং আমি। জামাইটি ইজিপশিয়ান, সদ্য বিয়ে হয়েছে, ছেলেটি এখন পুরোদমে রোজ জার্মান শেখার ক্লাসে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও কথাবার্তার মাধ্যম আজ ইংরিজি।
    সেদিন খুব বেশিক্ষণ ছিলাম না ও বাড়িতে। যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, একটু কফি পান, ফিরে আসা। ননদি সম্ভবত ভেবেছিলেন, আমি আর এদেশে নেই, হয়ত ফিরেই গেছি। তাই কেমন যেন প্রমাণ নিতে, শিওর হতে আমায় ডেকেছিলেন। এবারে তাঁর বড়ো দুই মেয়েই উপস্থিত তাদের স্বামী বয়ফ্রেণ্ডসহ। সামনে কোনও একটা কনসার্ট আছে, ছোটো মেয়ে বারংবার প্র্যাকটিস করে চলেছে পিয়ানোয়। নন্দাইকে খুব অল্প দেখা যায়, আজ এবাড়ীতে কেমন যেন তাল কেটে যাওয়া পরিবেশ, আভেনের মধ্যে রাখা পাঁপড় পুড়ে গিয়ে সেই গন্ধ পৌঁছে যায় মিউজিক রুম পর্যন্ত। ননদি লজ্জিত হয়ে ওঠেন এই অঘটনে, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বলেন, সব একা হাতে সামলাতে হচ্ছে আজ, "মাই ক্লিনিং ওম্যান হ্যাজ নট কাম দিস উইক"।
    বাড়িতে নোকরানি আছে সেটা জানিয়ে দেওয়া, তারপরে নোকরানি থাকার প্রমাণস্বরূপ বাক্স খুলে এক ধরণের রঙীন টার্কিশ মিষ্টি অফার করেন সকলকে। কেউ নেয় না, শুধু দেখে। সেই দেখে আমিও নিই না। নোকরানি টার্কিশ। সে দেশে বেড়াতে গিয়েছিল যখন, তখন মনিবের জন্য নিয়ে এসেছে। এদেশে চাকরবাকর রাখতে পারা বড়লোকিয়ানার ব্যাপার, সঠিক হারে বেতন দিলে। ব্ল্যাকে কাজ করানোটা অপরাধ।
    যাইহোক, কেউ স্পর্শ করে না সেই মিষ্টি। আমার স্লাইট কৌতুহল হচ্ছিল, কিন্তু মিষ্টি আমার দুচক্ষের বিষ, তাই নিই না।
    এমন কাণ্ড আগেও দেখেছি এখানে। অচেনা কোনও খাবার এরা ছুঁয়েও দেখতে চায় না। কেমন যেন ভয় পায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন