এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা এবং আজাদ হিন্দ সরকারের কোষাগার লুঠ

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২৭৯ বার পঠিত
  • নেতাজীর আজাদ হিন্দ সরকারকে বহু দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিলো কারণ একটা দেশের সরকারের যা যা থাকা দরকার সবই নেতাজীর সরকারের (Arzi Hukumat-e Azad Hind বা Provisional Government of Free India) ছিলো। তারমধ্যে প্রধান হলো আজাদ হিন্দ ব্যাংক (আবার Independence Bank-ও বলা হতো)। মূলতঃ বার্মা (রেঙ্গুন) এবং সিঙ্গাপুর থেকে আজাদ হিন্দ ব্যাংকের কাজ হতো জাপানের সহযোগিতায়। প্রধান কার্যালয় ছিল রেঙ্গুনে। শ্রী দেবনাথ দাস ছিলেন চেয়ারম্যান। এর নিজস্ব currency note ছিলো। আবার নিজস্ব ডাক টিকিটও ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যখন নেতাজী সাইগণ, মঞ্চুরিয়া হয়ে রাশিয়া চলে গেলেন তখন আজাদ হিন্দ ব্যাংকের মোট সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক $7,00,000। এছাড়াও ছিলো বিপুল পরিমাণে সোনা, রূপো, হীরে, জহরত, যা বলা হয় নেতাজীর ওজনের চেয়েও বেশি। যেমন আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোনো দেশপ্রেমিককে (এঁদের সেনা বললে মনে হয় সবটা বলা হলোনা, যদিও দুই দলই দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ তবুও) ভারতীয় সেনার অংশ করা হয়নি, তেমনই আজাদ হিন্দ ব্যাংকের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ভারতের কোষাগারে স্থান দেওয়া হয়নি। ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ লুঠ করে নেওয়া হয়েছিল। যদিও কিছু টাকা মনিপুর, আন্দামান ইত্যাদি রাজ্যে ১৯৫২ সাল অব্দি চলেছে। আর তথ্য অনুযায়ী, নেতাজী কিছু টাকা এবং অন্যান্য কিছু মূল্যবান জিনিস রাশিয়া যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়েছিলেন। বাকী অর্থ ও সম্পদ লুঠ করে নেওয়া হয় মূলতঃ দুইজনের নেতৃত্বে, প্রথমজন হলেন নেতাজীর সরকারের Propaganda Minister Shri S A Ayer আর দ্বিতীয় জন হলেন Shri Munga Ramamurti, Head of Indian Independence League (IIL) in Tokyo। প্রধানমন্ত্রীর অফিস (PMO) এবং বিদেশ মন্ত্রকের (Ministry of External Affairs) মোট ৩৭ টা classified ফাইল থেকে জানা যায় যে, টোকিওর তিনজন Mission Heads এর কাছ থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে তিনবার বিস্তারিত রিপোর্ট নেহেরু সরকারের কাছে এসেছিলো, যেখানে স্পষ্টভাবে বলাছিলো যে নেতাজীর INA র Treasury লুঠ হচ্ছে, সন্দেহভাজন লোক হিসেবে Ayer ও Ramamurti-র নাম ছিলো। শ্রী আর ডি শাঠে, তদানীন্তন বিদেশ মন্ত্রকের Under Secretary (পরবর্তীতে Foreign Secretary) রিপোর্টগুলো কড়া নোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর (যিনি বিদেশমন্ত্রীও ছিলেন) কাছে পাঠিয়েছিলেন। নেহেরু কিন্তু কোনোরকম ব্যবস্থা নেননি, এমনকি কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করেননি। নেহেরু ০৫.১১.১৯৫১ তারিখে ওই ফাইলে সই করেন এবং তদানীন্তন Foreign Secretary, Subimal Dutt ফাইলে নোট দেন "PM has seen this note. This may be placed on the relevant file," এবং সই করেন। পরবর্তীতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার Publicity Advisor হিসেবে Shri S A Ayer কে নিয়োগ করে নেহেরু, এটা জেনেও যে সে আজাদ হিন্দ ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত। এটা কোনো দান-প্রতিদান নয়তো? আর রামামূর্তি প্রথমে জাপান ও পরে ইংল্যান্ডে রাজকীয়ভাবে বসবাস করা শুরু করেন। এটাই ক্ষমতা হস্তান্তর পর্বের পরের প্রথম আর্থিক কেলেঙ্কারি। আবার শুধু এই দুইজন সব ভান্ডার লুঠ করে নিয়েছে ভাবলে অতি সরলীকরণ হয়ে যায়। পেছনের পাকা মাথাটা কে বোঝা যাচ্ছে কি? আয়ার আর রামমূর্তি বাদ দিয়ে যে তৃতীয় ব্যক্তি বা সংস্থার নাম উঠে আসে তা হলো একটি পত্রিকা, "ন্যাশনাল হেরাল্ড" (সূত্র - ডঃ জয়ন্ত চৌধুরীর লেখা "ক্ষমা করো সুভাষ")। পত্রিকার মালিকানা হলো অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড এবং শিব পাবলিকেশন্স। সংস্থার অফিস হেরাল্ড হাউস, 5-A, বাহাদুর শাহ জাফর মার্গ, নিউ দিল্লি।

    ৯ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিষ্ঠাতা জহরলাল নেহেরু। কিন্তু এই পত্রিকার সরাসরি মালিক নন নেহেরু কারণ এটি প্রায় 5,000 স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে শুরু হয়েছিল, যারা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর শেয়ারহোল্ডার ছিলেন শুরু থেকেই। কোম্পানির প্রাথমিক মূলধন ছিল ₹ 5 লক্ষ (US$ 6,300) যা প্রতিটি ₹ 100 (US$ 1.30) মূল্যের 2,000 অগ্রাধিকার শেয়ার এবং ₹ 10 (13¢ US) মূল্যের 30,000 সাধারণ (ইকুইটি) শেয়ারে বিভক্ত ছিল। নেহেরু ছাড়াও, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশনে পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন, আচার্য নরেন্দ্র দেব, কৈলাশ নাথ কাটজু, রফি আহমেদ কিদওয়াই, কৃষ্ণ দত্ত পালিওয়াল এবং গোবিন্দ বল্লভ পন্তের মতো নেতারা স্বাক্ষর করেছিলেন। অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড, ন্যাশনাল হেরাল্ড ছাড়াও আরও দুটি পত্রিকা প্রকাশ করত (কোয়াম-ই-আওয়াজ এবং নবজীবন)। কিন্তু ২০০৮ সালে কার্যত সংস্থাটি বন্ধ হওয়ার মুখে চলে আসে। মোট ৯০ কোটি টাকার ঋণ ছিল বাজারে সেইসময়ে, যার পুরোটাই কংগ্রেস দলের কাছে ঋণ ছিল। ২০১০ সালে ইয়ং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড বলে একটি কোম্পানি (যার ৭৬% শেয়ার হোল্ডার রাহুল গান্ধী এবং বাকী শেয়ার হোল্ডার সোনিয়া গান্ধী) অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (সেইসময়ে সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০০ কোটি টাকা, সূত্র উইকিপিডিয়া) অধিগ্রহণ করে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকায়। ফলে সেই ৯০ কোটি টাকার দায়ভার এসে পরে ইয়ং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ওপর। একবছরের মধ্যেই তারা ঘোষণা করে তাদের ঋণ মেটানোর মত অবস্থা নেই এবং কংগ্রেস দল পুরো ঋণটাই মুকুব করে দেয়। সুতরাং অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের পুরো সম্পত্তিটাই মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সরাসরি সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর ঘরে চলে এলো।

    অর্থাৎ নেহেরু শুরুটা করেছিলেন একটু বেঁকাভাবে, লোকের চোখে ধুলো দেওয়ার সুযোগ রেখে। হয়তো বর্তমান প্রজন্ম ভেবেছে ৭৭ বছর পর লোকে ওসব ব্যাপার ভুলে গেছে, এবার সরাসরি নিজেদের ঘরে ঢুকিয়ে নিই। ১৯৩৮ সালে ৫ লক্ষ টাকা মূলধন এলো কোথা থেকে বা মাঝের সময়ে সম্পদ বেড়ে ৫০০০ হাজার কোটি টাকায় গেলো কি করে, আবার এত সম্পদ থাকা সত্বেও মাত্র ৯০ কোটি টাকা ঋণ শোধ করা গেলনা কেনো - এসব আদালতের বিচার্য। আমরা বর্তমানে মন্তব্য করতে না পারলেও সন্দেহ করতেই পারি। আজাদ হিন্দ সরকারের ছিল জনগণের টাকা এবং অনেক অনেক স্বপ্নে রাঙানো ছিল সেই টাকা। সেই সম্পদের যথার্থ হিসেব একদিন হবেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন