এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মেটেলকোভা মেসটো

    Nabhajit লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ৬২২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আমার তখন ৯-১০ বছর বয়েস, রাজনীতি বুঝি না, কোনো প্রলোভনও নেই, একটু হিরো হিরো ভাব শুধু ছিল, আজকের দিন হলে বলতো ADHD (আটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিসর্ডার)। একটা ফ্লাট ব্রাশ রঙে চুবিয়ে ক্যালিগ্রাফি করতে শিখে গেছিলাম। এক টানে অনেক বড় লেখা লিখতে পারতাম, দেওয়ালে। আমাদের পাড়ায় তখন কিছু দাদারা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে থাকতো আমাদের বাড়ির পেছনে একটা ভাঙা ঘরে। আমি শুনতাম ওরা প্রেসিডেন্টকেই পাল্টে দিতে চায়। একদিন আমাকে ডেকে একটা লম্বা কাগজে লিখতে বললো 'চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান'। দু মিনিট ও লাগেনি। আমি যে ঘরে শুতাম সেই ঘরের একটা দরজা রাস্তার ধারে ছিল। সেদিন রাতে আমার দরজায় টোকা। দাদারা ডাকছে, উঠতে হবে, রাত একটা বাজে। চুপি চুপি ওদের সাথে বেরুলাম। পাড়ার দেওয়ালে ফুটিয়ে তুললাম প্রেসিডেন্ট পাল্টানোর হুমকি। আমি দু একবার জিজ্ঞাসাও করেছিলাম চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান হলে আমাদের কোনো লাভ হবে কি? গাট্টা ছাড়া কিছুই কপালে জোটে নি। দাদাদের নির্দেশ ছিল কারোর কাছে মুখ খুললে প্যাদানি আছে কপালে, আর যদি কিছু না বলি তাহলে চকলেট পাবো। এই কাজ চললো প্রায় এক মাস, তারপর সব দাদারাই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আমার দেয়াললিখন ওখানেই শুরু ওখানেই শেষ।

    ইংরেজিতে দেওয়াল লিখনকে বলে গ্রাফিটি। আমি গ্রাফিটি করতে পারিনি কিন্তু বড় হয়ে পৃথিবীর এতো দেশে গ্রাফিটি দেখতে দেখতে আমার উৎসাহ বাড়তে থাকে। এমন এমন সব বিপদজনক জায়গায় গ্রাফিটি দেখছি যে আর্টিস্টদের জন্য উৎকণ্ঠা হতো। মাইকেল এঞ্জেলো যেমন সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদে ঝুলে ঝুলে গ্রাফিটি বানিয়েছিলেন ঠিক তেমন কিছু আর্টিস্ট এর কাজ দেখেছি ব্রাতিস্লাভা থেকে বুদাপেস্ট ট্রেনে যেতে যেতে, রেল লাইনের ওপর যে মেটাল ব্রিজ থাকে তার গায়ে।

    হঠাৎ একদিন নজরে এলো একটা দেওয়াল চিত্র, প্যালেস্টাইনের ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের এক দেয়ালে, আর্টিস্ট 'বাঙ্কসি' (BANKSY)। এর কথা শুনেছিলাম, আমাদের দেশের একজন ছদ্মনামি আর্টিস্ট, আমাদের দেশ মানে আমি ইংল্যান্ডের কথা বলছি। ছবির দাম বাড়ছিল, গ্রাফিটি কে কেনে জানিনা, ছবিটা একটা আতঙ্কির যে একটা ফুলের তোড়া ছুড়ছে। ছবির নাম 'ফ্লাওয়ার থ্রোইং'। ছবিটা এই প্রতিবেদনে দিয়েছি। এর পর আমি ভক্ত হয়ে গেলাম বাঙ্কসির। কখনো ব্রিস্টলে যাচ্ছি, কখনো বার্সিলোনা। কাউকে বলছি না কেন এদেশ সেদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি কিন্তু আসল উদ্দেশ্য বাঙ্কসির গ্রাফিটি আর অন্যান্য গ্রাফিটি দেখা।



    আজকের গল্প বাঙ্কসি কে নিয়ে নয়, আজ বলবো একদল গ্রাফিতি আর্টিস্টদের যারা লুকিয়ে গ্রাফিতি বানায় না, দিনের আলোয় সকলের সামনে গ্রাফিতি আঁকে।

    একটা ভ্রমণ কাহিনী দিয়ে শুরু করছি, কেমন?

    ভোরবেলা ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে উঠলে সাধারানত বিরক্ত লাগে কিন্তু যদি কোনো ছুটির দিন অ্যালার্ম বেজে উঠে, যদি রাত থাকতে উঠে বেড়াতে যাওয়ার তাড়া থাকে তাহলে উত্তেজনা ষোলো আনা। আমার মেয়ে অহনা ছুটির প্ল্যান বানায় আর সবসময় ভোরে যাত্রা শুরুর প্ল্যান থাকে। এতে নাকি ছুটির আগে একটা অ্যাড্রেনালিন রাশ শুরু হয়ে যায়।

    বাড়ি থেকে বেরলাম সকাল চারটে। সেপ্টেম্বরে শীত শুরু হয় নি এখনো ইংল্যান্ডে, দিন বেশ তাড়াতাড়ি শুরু হয়। সকালের সূর্য দেখা যাছে না, কিন্তু পুবের আকাশে কে জেনো একটা হাল্কা সোনালি আভার গ্রাফিটি এঁকে দিয়ে গেছে।

    আমাদের বাড়ী লিফুক গ্রামে, লন্ডনের দাক্ষিনে হাম্পশাইর কাউন্টিটে আমাদের গ্রাম। হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৪৫ মাইল। গাড়ি চলছে ৭০-৮০ মাইল স্পীডে, পেছনের আকাশের সোনালি আভাটা আমাদের তাড়া করেছে। ধরতে পারেনি এখনো।

    গাড়ি এয়ারপোর্টের পার্কিং কোম্পানি কাছে পার্ক করে ওদের বাসে চড়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেখি ভোর আমাদের ধরে ফেলেছে।

    কিন্তু আমরা যাবো কোথায় সে কথা তো এখনো হয় নি। আমাদের গন্তব্য দুটো দেশ - স্লোভেনিয়া আর ক্রোয়েশিয়া। আমাদের প্লেন নিয়ে যাবে ইতালির উত্তরে ট্রিয়েস্টে, সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে যাবো স্লোভেনিয়া। প্রথমে থাকবো স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুব্লিয়ানা, সেখানে দু দিন। তারপর একটা লেকের ধারে নাম 'লেক ব্লেড'। লেক ব্লেডে দু দিন, তারপর এক ছুটে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেব। একদিন সেখানে থেকে আমরা যাবো লম্বা ড্রাইভে। ক্রোয়েশিয়ার দ্রষ্টব্য হল ওদের দ্বীপপুঞ্জ। তিন দিন ধরে দ্বীপগুলো ঘুরে বেড়িয়ে আবার ট্রিয়েস্ট, সেখান থেকে ফিরতে হবে লন্ডন।

    ট্রিয়েস্ট এয়ারপোর্টেই ভাড়া গাড়ির দোকান। গাড়িটা বুঝে নিতে একটু সময় লাগে, ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে একটু খাওয়া দাওয়া করার ইচ্ছা ছিল, অহনা বাদ সাধল, বলল - একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তায় সার্ভিসে খেলে কেমন হয়?

    সার্ভিস হল রাস্তার ধাড়ে পেট্রল পাম্প আর কিছু খাওয়াদাওয়া-র জায়গা, একটু রেস্ট নেওয়া যায়, বাংলায় ধাবা, কিন্তু অত্যন্ত পরিষ্কার পরিছন্ন।

    ট্রিয়েস্টে এই সকালে দেখার কিছু নেই। শুধু আছে একটা কালচারাল মিল মেলাপ, লোকজন কিছু ইতালিয়ান, কিছু স্লোভেনিয়ান, অনেক লোক ইংলিশ বলে। আমরা ট্রিয়েস্টের রাস্তায় কিছুটা ঘুরে বেড়ালাম, রাস্তার ধারের কাফেগুলোতে ভিড় বাড়ছে, লোকজন দোকানের বাইরে রাখা চেয়ার টেবিলে বসে আড্ডা মারছে, আজ শনিবার, তাই।

    বেলা বারোটা নাগাদ আমরা বেড়িয়ে পরলাম শহর ছেড়ে। অহনা আমাদের নেভিগেটর আর আমি ড্রাইভার। আইফোনের ম্যাপ আমাদের নিয়ে চলেছে এক অজানা দেশে। মিনিট ২০ র মধ্যে আমরা ইটালির সীমানা পার করলাম। বর্ডারে একটা চেক পোস্ট, যেখানে জনা চারেক লোক আমাদের পাসপোর্ট দেখে পার করতে দিলো, আমরা গাড়িতেই বসে আছি। একজন জিজ্ঞাসা করল আমারা দেখতে ইন্ডিয়ান কিন্তু পাসপোর্ট ব্রিটিশ কেন। জবাব দেওয়ারআগেই আর একজন সামলে নিলো। আমাদের মাথায় ভ্রমণ পোকা ঢুকে গেছে, আমরা রোজ রোজ পাসপোর্ট হাতে ভিসার লাইনে দাঁড়াতে পারব না। তাই ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু আলু পোস্ত, শুক্তো, মাছের কালিয়া ছাড়তে পারিনি। তার সাথে যোগ দিয়েছে দেশি বিদেশি খাবার, ইতালিয়ান পাস্তা, লাসানিয়া, হাঙ্গেরিয়ান গুলাস, মেক্সিকান বুড়িতো। ইন্টারন্যাশনাল জিভ তৈরি হয়েছে, এখন শরীরের ওজন টাই সামলানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েছি কিন্তু কোন শহরের দেখা নেই, মাঝে মাঝে ছোট খাটো গ্রাম, তাও খুব কম, দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম Ljubljana ( লুব্লিয়ানা)।

    আমরা ইউরোপের অনেক শহরে ঘুরেছি, পুরোনো শহর গুলোর মধ্যে কোথায় একটা মিল আছে। মোটামুটি সব শহর এর উত্তরে একটা পুরোনো কাসল, ছোট্ট নদী, পাথর বাঁধানো রাস্তা, সারি সারি দোকান, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। এ ছাড়াও আছে মেমেন্টো-র দোকান। সব মেমেন্টো তৈরী হয় চীন বা ইন্ডিয়া তে, কিন্তু বেড়াতে আসা টুরিস্ট রা এই ভেবে কেনে যেন ওই শহর এর স্মৃতি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এর একটা স্বভাব আছে, আমরা জিনিস এর সাথে সম্পর্ক বেশি তাড়াতাড়ি তৈরী করি, মানুষ এর কথা, প্রকৃতির কথা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাই।
    আমাদের এক বন্ধু তার একটা জুতো দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন একদিন,
    - বলুন তো এই জুতোটা কোথায় কেনা?
    আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি বাটার জুতো, তাই বললাম
    - কলকাতা হবে
    হেসে বললেন
    - না মশাই, এটা প্রাগ থেকে কেনা, বাটা czech কোম্পানি।
    আমি মনে মনে বললাম জুতো কিনতে প্রাগে না গেলেও পারতেন।

    ইউপরোপের বেশির ভাগ শহর নদী কেন্দ্রিক, লন্ডনে আছে টেমস, প্যারিসে শ্যেন, বুদাপেস্টে দানিউব, প্রাগে ভ্লাটাভা, ওয়ারশতে ভিস্তুলা, মস্কো তে মস্কোভা তেমনি লুবলিয়ানা-র নদীর নাম Ljubljanica, উচ্চারণ লুবলিয়ানিকে। শহরে নদীর পার বাঁধানো, সরু নদী, খান তিনেক ব্রিজ আছে সরু নদীর ওপর। লুবলিয়ানিকে এই শহরের প্রাণ কেন্দ্র। শহর এর মাঝখানে নদীর দুধারে শুধু কাফে, রেস্টুরেন্ট আর রাস্তার দুধারে পার্মানেন্ট বসার চেয়ার। একটা মার্কেট আছে নদীর ধারে, যেখানে সকাল সকাল গ্রাম থেকে চাষিরা নিজেদের জিনিস এনে দোকান খুলে বসে, বিকেলে সেই হাট ভেঙে যায়, পরে থাকে কিছু ফেলে যাওয়া পাতা, কাগজ এর টুকরো আর একটা ভিড় ভাঙা গ্রামের গন্ধ। লোকাল কাউন্সিল এর গাড়ি এসে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে, পরের দিনের বাজারের জন্য তৈরী করে রাখে।

    নদীর কথা বলতে গিয়ে আমার গঙ্গা বা ব্রহ্মাপুত্রর কথা মনে পরে। নদীর এপার ওপার অনেক দূর, নদীর পারে দাঁড়ালে 'চিতা কাঠ ডাকে, আয়'। ছোট বেলায় গঙ্গার পারে বেড়াতে যেতাম, সে দৃশ্য আলাদা, বাতাসে শ্মশানের গন্ধ, মাটির পার ভেঙে যাওয়ার আওয়াজ, শো শো করতো হওয়া, বর্ষা কালে বড়ো বন্যা হতো আমাদের দিকে। সে বড়ো কষ্টের দিন ছিল হে। নদীর পার ভেঙে জল ঢুকতো গ্রামে। সে বড়ো কেয়ামতের দিন ছিল। আমি প্রার্থনা করতাম হে ভগবান, একবার যাও ওসমান বিবির বাড়ি, একটা আস্ত দেশলাই বাক্স দিও ওকে, যাও মিজানুরের বাড়ি, ওকে একটা শক্ত বাঁশ এর খুঁটি দিও। নদী ওদের সব কেড়ে নিয়েছে। এদিকে বন্যায় সব ভেসে যায়, বড়ো সর্পভয় এই সময়। তাও আবার মিজানুর আর ওসমান বিবিরা এই গ্রামেই থাকতে চায়। নদী ছেড়ে যেতে পারে না। সে এক অন্য টান।
    লুবলিয়ানিকে নদীর সে রূপ নেই, সে কাউকে ভাসায় না, এ নদী সেই বাংলা গানের নদী 'ছোট্ট নদীটি, পটে আঁকা ছবিটি'- র মতো।

    আজ রবিবার, তাই লোকজন ভিড় করছে রাস্তার ধরে সারি সারি পাবগুলোর বাইরে, সবাই এসেছে তাদের বন্ধু নিয়ে, আমরা তিন জন এগিয়ে গেলাম একটা পাব কাম রেস্টুরেন্টের দিকে। চারদিকে লোকজনের কৌতূহলী দৃষ্টি। আমাদের দেখে স্বভাবতই ভারতীয় লাগে, এখানে ভারতীয় টুরিস্ট খুব একটা দেখা যায় না তাই কৌতূহলের কারণ স্বভাবিক। কাউন্টারে গিয়ে একটা ড্রিঙ্কের অর্ডার দেব ভাবছি, একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো,
    - ভারতীয়?
    - হা, কিন্তু আমরা থাকি ইংল্যান্ডে
    - কেমন লাগছে আপনাদের?
    - খুব ভালো লাগছে তো বটেই তার ওপর কেউ আমাদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে এসেছে দেখে আরো ভালো লাগছে, ইংল্যান্ডের পাবে আপনি একা একা গেলেও কেউ এসে কথা বলে না, যদিও স্কটিশ বা আইরিশ দের কথা আলাদা। ওরা আপনাদের মতো।
    আলাপ জমে উঠেছে, লোকটার নাম Jožef কিন্তু উচ্চারণ জোসেফ। ইভা ওর বৌ, দুজন এসেছে পাবে আড্ডা মারতে। ইভা এসে যাওয়ায় আড্ডা জমে উঠলো।
    এর পর টিটোর শাসনের কিছু গল্প বললো ইভা আর জোসেফ। কে কতটা বায়াস বলা মুশকিল।

    এবার একটু ইতিহাস কপচে নিই। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ কম্যুনিস্ট দেশ ছিল যুগোস্লাভিয়া। মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে ভালো চলছিল সেই দেশ। যুগোস্লাভিয়ার টিটো আর রাশিয়ার স্তালিনের মধ্যে ঝগড়া বাঁধল, ১৯৫৫-য় গিয়ে দুই নেতৃত্ব আলাদা হয়ে গেল নিতিগত ভাবে। মানে কেউ কারো ব্যাপারে মাথা গলাবে না, কেউ কাউকে অযাচিত সাহায্য বা কাঠি করবে না। এই অবস্থায় দু দেশ নিজের নিজের রাজত্ব সামলাতে থাকল। যুগোস্লাভিয়া ছিল খুব বড় দেশ। মার্শাল টিটো সামলাতে পারছিল না। জায়গায় জায়গায় অসহযোগ, বিরক্তি, ভাষা আর ধর্ম নিয়ে ঝগড়া। টিটোর মৃত্যুর পর অনেক নেতৃত্ব এসেছে কিন্তু ঝগড়া কমে নি। দেশের কিছু প্রভিন্স ছিল যারা নিজেরা মিলে মিশে চলতে পারছিল না। স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সারভিয়া, মাসিদনিয়া সব প্রভিন্সের নিজেদের আর্মি ছিল কিন্তু YPA জূগোশ্লাভ পীপূলশ আর্মি এদের উপর দাদাগিরি করতো।

    এর পর ১৯৯০-এ ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলো। সার্ভিয়া আর যুগোস্লাভিয়া তে তখন প্রেসিডেন্ট মিলোসোভিচের রাজত্ত্ব। তিনি ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী, পরে রাজনীতিতে এসে তিনি রিফর্ম করলেন মার্ক্সিস্ট লেনিনিষ্ট কমিনিস্ট পার্টি। দুর্জনেরা বলেন তিনি নাকি জেনোসাইড করিয়েছিলেন সার্বিয়াতে, যার জন্য তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট, হেগ এর কারাগারে পাঠানো হয়। বেচারা নিজেই নিজের কেস লড়ছিলেন। কারাগারে ওনার হার্ট এটাক হয়ে একদিন মারা গেলেন, বিচার হয় নি। এর পেছনে কে আছে কেউ জানে না কিন্তু আমার বিশ্বাস রাশিয়ার KGB নেহাত ধোয়া তুলসী পাতা নয়। পরে কখনো আমার মস্কোর গল্প বলবো তখন শোনাবো KGB-র 'সুকীর্তি' র গল্প।

    যাই হোক ১৯৯০ এ স্বাধীনতা পাওয়ার পর দু দেশে যুগোশ্লাভ পিপুল আর্মির যত ব্যারাক ছিল সব খালি হতে লাগলো। স্লোভেনিয়ান আর্মি দখল করতে লাগলো সব গুলো ব্যারাক। কিন্তু এতো সেনা কোথায় স্লোভেনিয়াতে? একটা ব্যারাক ছিল লুবলিয়ানা শহরের মাঝখানে নাম 'মেটাল কোভা'। তখন রাত চারটে বাজে। শীতের রাত, কোনো পুলিশ বা লোকাল আর্মি নেই। যেই না যুগোস্লাভিয়ান পিপুলস আর্মি ব্যারাক ছেড়ে বেরিয়েছে, সুযোগ বুঝে কিছু ভবঘুরে এসে জুটে গেলো সেই ব্যারাকে। যে যেখানে পারলো বিছানা দখল করে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। সকাল হলে দেখবো। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার আর্মির ফেলে যাওয়া মদের বোতল পেয়ে উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। দেখতে দেখতে নাইট ক্লাবের আসর বসে গেলো। কেউ কেউ বের করলো গাঁজার পুড়িয়া। সকাল হওয়ার আগে মেটাল কোভা হয়ে গেলো এক ভবঘুরেদের দের বস্তি। সকালে পুলিশ এলো, কাউকে নড়াতে পারলো না, গাঁজার ধুমকি, মদ এর নেশায় সব বুঁদ হয়ে আছে। লোকাল পুলিশ কিছু বললো না কিন্তু নজরদারি রইলো। কিছুদিন পর সেই সব নেশাখোর ভবঘুরেরা কোথা থেকে যেন বের করলো তাদের লুকিয়ে রাখা রং আর ব্রাশ। মেটাল কোভা-র দেওয়াল ভরে উঠতে থাকলো তাদের গ্রাফিটিতে। কি অদ্ভুত সেই শিল্প কর্ম!! চোখ জুড়ানো নিখুঁত কাজ। সারা ব্যারাকের দেওয়াল হয়ে উঠলো ওদের ক্যানভাস। রাস্তায় তৈরী হলো বিভিন্ন অবাস্তব সব কাল্পনিক মডেল। একটা অদ্ভুত মিল দেখতে পেয়েছি আমি সব শিল্পকর্মে, তা হলো কোনো ছবির বা মডেল এর মাথায় চুল নেই। অনেক পর বুঝেছিলাম যুগোশ্লাভ পিউপিলস আমরি র বেশির ভাগ সৈন্য ছিল মাথা কামানো টেকো।

    কিছুদিন নজরদারির পর পুলিশ ঢুকলো ব্যারাকে। সব অবাঞ্চিত দের ভাগানোর জন্য। পুলিশের বড়ো কর্তা র তো মাথা ঘুরে গেছে ততক্ষনে। এতো এক বিশাল গ্রাফিটির প্রদর্শনী। তিনি একটু ভাবলেন, তারপর ঠিক করলেন সব ভবঘুরেরা এক জায়গায়, গাঁজা খাক, মদ খাক কিন্তু শহরে বাওয়ালি তো করবে না, তাহলে থাকুক ব্যাটারা এখানেই, মাঝে মাঝে পুলিশ এর নজরদারি থাকলে একটু সামলে থাকবে। তাছাড়া তিনি আরো ভাবলেন যে এই জায়গায় টুরিস্টরা আসলে শহরের কিছু আমদানি হবে।

    এই ভাবে গড়ে উঠলো 'মেটাল কোভা মেসটো'। এখন এই আখড়ায় দেশ বিদেশের শিল্পী রা আসে, পুরোনো গ্রাফিটি মিটিয়ে নতুন গ্রাফিটি বানায়, রাত বাড়লেই শুরু হয় উল্লাস, কিন্তু কেউ টুরিস্টদের বিরক্ত করে না, বরং আমন্ত্রণ জানায় তাদের সাথে এক পাত্র মাল খাওয়ান্য। বেশির ভাগ টুরিস্ট এদের এড়িয়ে চলে কিন্তু কিছু লোক জন আছে আমাদের মতো যারা মনে প্রাণে বোহেমিয়ান কিন্তু সমাজ আর পরিবার এর কথা ভেবে এতটা বেপরোয়া নয়, তারা এগিয়ে গিয়ে মেটেলকোভার শিল্পীদের দলে মিশে যায়, হয়তো কিছুক্ষনের জন্য হলেও ভেসে যাওয়ার আনন্দ উপেক্ষা করতে চায় না।

    সারা ব্যারাক ঘুরে আমি তখন ক্লান্ত। অপু আর অহনা তখনও ব্যারাকের অলি গলিতে ঘুরছে। আমি রাস্তার ধারে একটা চেয়ার দেখে বসলাম, একটা সিগারেট ধরিয়ে চোখ বুঁজে দেখতে চেষ্টা করলাম এই ব্যারাকের আরো গল্প, ঠিক তখন আরো কিছু লোকজনের কলরব শুনে চোখ খুললাম। দেখি দুটো ছেলে আর তাদের দুই সঙ্গিনী এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি এক গাল হেসে ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। ওরা এসে বসলো খালি চেয়ার গুলো তে। তিনটে চেয়ার খালি ছিল, তাই একটা মেয়ে বলসো তার বই ফ্রেন্ড এর কোলে। কথা শুরু হলো -

    - তুমি কি টুরিস্ট ?
    - ঠিক তাই
    - ভারতীয় না পাকিস্তানী?
    - আমি ভারতীয়।
    ওদের দুজন ছেলের নাম ইয়াকুব আর ডমিনিক, মেয়ে দুটো ইভা আর লেনকা। সকলেই কনটেম্পোরারি ইতিহাসের ছাত্র চেক রিপাব্লিকের নাগরিক।
    - you guys are very intelligent ! ইভা বলে উঠলো।
    আমি গর্বিত কিন্তু বিনম্রতা দেখালাম। কিছুক্ষনের মধ্যে সিগারেট বিনিময়, তারপর এক সাধারণ একটা ওয়াইনের বোতল থেকে শেয়ার করে সকলেই চুমুক মারতে থাকলাম।
    ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা তখন তুঙ্গে।
    কিছুক্ষন এভাবে আড্ডা চললে আমি ভুলে যাবো আমি কোথায়, আমার বন্ধুদের আড্ডা হতো নৈহাটী স্টেশনে বা খড়দা কলেজ এর ক্যান্টিনে। ভাষা ছাড়া তেমন কোনো তফাৎ নেই এই দুই আড্ডায়। আমি ভেসে যাচ্ছিলাম আড্ডার স্রোতে।
    অহনা আর অপর্ণা হঠাৎ এসে যাওয়ায় আমি সম্বিৎ খুঁজে পেলাম। ওরাও যোগ দিলো সেই আড্ডায়, তারপর সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এলাম ব্যারাক থেকে। কিছু গ্রাফিতি এখনো মনে দাগ কেটে আছে। একটা সিমেন্টের পা আর তাতে পোড়ানো একটা হাওয়াই চপ্পল, কি সিম্পল কিন্তু কি অসাধারণ।

    কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবরে এক সকালে হাটছি, দেখি সেই এক ধরণের একটা পা, সিমেন্ট-এর, অবাক হয়েছিলাম এই মিল দেখে। অভাব এর মানসিকতা সর্ব দেশে সর্ব কালে বোধ হয় এক রকম। কে জানে !














    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:c5e4:bfd6:bab5:f55f | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৬525484
  • 'পা' এর স্কাল্পচার দুটো বেশ ভালো লাগলো। আর অন্য একটা যেটায় অনেকগুলো স্কেলিটাল মূর্তি, সেটাও। গ্রাফিতি জিনিষটা আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। ডিটেলে এই নিয়ে পড়তে পারলে ভালোই লাগবে।
  • Nabhajit | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩৩525510
  • গুগুলে টাইপ করুন 'বেলুন গার্ল ', বেশ কিছু গ্রাফিটি দেখতে পাবেন। বাঙ্কসি ওপর একটা বই আছে পরে দেখতে পারেন।
  • দীমু | 182.69.178.81 | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৯525512
  • লেখাটা ভালো লাগল। ব্যাঙ্কসির ওপর একটা ডকু দেখেছিলাম অনেকদিন আগে, এখানে দিয়ে যাই -
     
  • দেবব্রত দাস | 2405:201:802a:e042:dc6b:d389:5a57:c2df | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৭525527
  • অসাধারণ ডিটেলস ...গল্প বলার ভঙ্গিটা ও অপূর্ব
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৩১525542
  • ল্যুব্ল্যানা তে আমি তিন মাস ছিলাম। পুরো শীতকাল। তখন যুগোশ্লাভ ভিসা করে যেতে হয়েছিল। গিয়ে মনে হল স্লোভিন রা উন্নাসিক একটু বড় লোক সার্বিয়ানরা ওদের দেখতে পারত না। পোস্তয়না কেভ বোহিঞ্জ আড্রিয়াটিক কোষ্টের কিছু শহর বেলগ্রেড জাগরেব এসব ট্রেনে বাসে করে ঘুরে নিয়েছিলাম। ভিয়েনা ক্ল্যাগেনফুর্ট ট্রিয়েস্তা ভেনিস রোম গেছিলাম। সবই হারিকেন ট্যুর। আপনার ভ্রমণ কাহিনী আমার স্মৃতি উস্কে দিলো। 
  • Nabhajit | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪১525725
  • চলে আসুন আরেকবার গাড়ী নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার দ্বীপগুলো দেখি। 
  • প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত | 122.161.72.170 | ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৪526424
  • অল্প সময় অনেক জায়গার সম্বন্ধে জানতে পারলাম। এই লেখাটি আমায় আবার পড়তে শেখালো। মনটা ভরে গেলো। 
  • Aparna Sinha-Mukherjee | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:০৩526433
  • খুব ঝরঝরে লেখা - এক নিশ্বাসে পড়া শেষ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন