এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পশুলোকে মানুষ বড়ই বেমানান

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩০ বার পঠিত
  • মানুষের চরিত্রগত গুণাবলী সম্পর্কে মূলতঃ দুটি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়, এক মনুষ্যত্ব আর দুই পশুত্ব। মনুষ্যত্ব বলতে মানুষের উৎকৃষ্ট গুণাবলীকে বোঝায়। আর পশুত্ব বলতে মানুষ ছাড়া এই পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের গুণাবলীকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য জীবদের কোনো উৎকৃষ্ট গুন নেই। তাদের মধ্যে যা যা গুন বিদ্যমান সবগুলোই নিকৃষ্ট শ্রেণীর। আমাদের দৈনন্দিন উদাহরণ মূলক কথাবার্তায় হাজার হাজার এইরকম শব্দ ব্যবহার করা হয়। এতে পশুদের কতটা ক্ষতিবৃদ্ধি হয় জানা নেই তবে মানুষকে পশুদের স্তরে নামিয়ে এনে এক পাশবিক আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আমাদের। ছোটবেলায় কতবার যে শিক্ষকদের মুখ থেকে 'গরু' কথাটি শুনতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। কোনো ছাত্র পড়া না পারলে বা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে বা অঙ্কের ক্লাসে অঙ্ক ভুল করলে শিক্ষকেরা ছাত্রকে গরুর সাথে তুলনা করতেন। আবার এই ভুলের পরিমাণ যদি আরও নিম্নমানের হতো তাহলে তাঁরা ছাত্রকে 'ছাগলের' সাথে তুলনা করতেন। সমাজে কারুর গায়ের রং কালো হলে নিশ্চিতভাবে তার নামকরণ হতো 'মোষ'। এছাড়াও গাধা, শুয়োর, বানর, হনুমান, বাঘ, কুকুর ইত্যাদি অনেক পশুর সাথেই মানুষের তুলনা টানা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অবশ্য কিছু কিছু ভালো উদাহরণও পাওয়া যায়। যেমন 'কোকিল কণ্ঠী', 'রয়াল বেঙ্গল টাইগার', 'চিতার মত ক্ষিপ্র', হরিণের মতো ছন্দ' ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ভালো উদাহরণের চেয়ে খারাপের জন্যেই বিভিন্ন পশুর নাম করা হয় বেশী। আবার উভয় উদাহরণের ক্ষেত্রেই কি বলতে চাওয়া হয় তাও যে খুব স্পষ্ট সবসময় তা বলা যায় না। গরু বা ছাগলের সাথে যখন তুলনা টানা হয় যেমন 'তুই একটা গরু' বা 'তুই একটা ছাগল' তখন আমাদের বুদ্ধির সাথেই তুলনা করা হয় ওই পশুদের বুদ্ধির। কিন্তু বাস্তবে সব প্রাণীর বুদ্ধিই তো আমাদের চেয়ে কম। মানুষ তো এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং উন্নত প্রাণী। তাহলে 'তুই একটা বাঘ' বললেও তো হতো। কিন্তু 'তুই একটা বাঘ' বলা হয় সমাজের বা দেশের একজন সেরা লোককে যার ভয়ে দুনিয়া কাঁপে। যেমন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে আমরা 'বাংলার বাঘ' বলি। একইভাবে দাউদ ইব্রাহিমকে 'মহারাষ্ট্রের বাঘ' বলা যায়। দাউদকে কিন্তু এইরকম বলা হয় না, অর্থাৎ ভালো অর্থেই ব্যবহার করা হয় এই তুলনাটা। মানে বাঘ যেমন জঙ্গলের রাজা তেমনি যাকে বাংলার বাঘ বলা হচ্ছে তিনি বাংলা নামক জঙ্গলের রাজা। তাহলে আবার সেই একই সমস্যা, তুলনাটা ভালো না খারাপ? কোকিল কণ্ঠী মানে কোকিলের মত সুরেলা গলা, যা ভালো অর্থেই, কোনো খারাপ অর্থ পাওয়া যায় না। আবার হরিণের মত ছন্দের মধ্যেও কোনো খারাপ অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু চিতার মত ক্ষিপ্র বলতে কি ভালো বোঝানো হয়? চিতা তো ক্ষিপ্রতার সাথে অন্য পশু শিকার করে। তাহলে কি যে মানুষ অতিরিক্ত ক্ষিপ্র (অবশ্যই একটা গুন) তার শিকার করার (অবশ্যই একটা দোষ) অভ্যাসের কথাও যুক্ত এই উদাহরণের সাথে? ঠিক স্পষ্ট হওয়া যায় না। এইরকম শত শত উদাহরণ দেওয়া যায়। অর্থাৎ মানুষ চেষ্টা করে পশুত্বকে নকল করতে, আত্মসাৎ করতে, মনুষ্যত্বকে পশুত্বে উন্নীত করতে।

    পশুদের কথা আমরা বুঝি না। তাই বুঝতে পারিনা তারা একইরকম ভাবে তাদের প্রজাতির মধ্যে মানুষের উদাহরণ দেয় কিনা। কুকুরের মত বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা কর, মানুষের মতো বিশ্বাসঘাতক হোস না। ময়ূরের মত নাচতে শেখ, জগৎকে আনন্দ দিতে শেখ, মানুষের মতো নাচিয়ে ছেড়ে দিতে শিখিস না। কাকের মত পৃথিবীকে আবর্জনা মুক্ত করার চেষ্টা কর, মানুষের মতো আবর্জনায় পৃথিবীকে ভরে দিতে শিখিস না। গাছের মতো পৃথিবীকে নির্মল করতে শেখ, মানুষের মতো বিষাক্ত করতে শিখিস না। এইরকম করে কি তারাও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শেখায়? নেহাত আমরা তাদের ভাষা বুঝি না, বুঝলে জানতে পারতাম ঠিক এই ভাষাতেই তারা পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেয়। আবার এইরকম উদাহরণও হাজারো দেওয়া যায়।

    আসলে আমরা কাউকে পশুর সাথে তুলনা করে কি বোঝাতে চাই, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো স্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি পশুরই অনেক গুণ আছে, হয়তো কিছু দোষও আছে। আর মানুষের অনেক দোষ আছে, হয়তো কিছু গুন আছে। মানুষ চেষ্টা করে চিতার মত ক্ষিপ্র হতে, বাঘের মত শিকার করতে, বানরের মত এক ডাল (দল) থেকে অন্য ডালে (দল) লাফিয়ে বেড়াতে। গরু, ছাগলের দুধ খাবো, মাংস খাবো, চামড়া দিয়ে অনেকরকম জিনিস বানাবো আবার তাদের নিকৃষ্ট জীব হিসেবে টিপ্পনী কাটবো। বানরদের দিয়ে রাম সেতু বানাবো আবার বাঁদর বলে টিপ্পনীও কাটবো। কিন্তু কোনো পশুকে এখনও দেখা যায়নি মানুষের আচরণকে নকল করার চেষ্টা করতে বা আত্মসাৎ করতে। কারণ তারা জানে মানুষ তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট জীব। তাই কোনো পশুই কিন্তু পশুত্ব ছেড়ে কোনদিনই চেষ্টা করে না মনুষ্যত্বে উন্নীত হতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন