এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গ্রহকাল... 

    Binary লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭০ বার পঠিত
  • ১৯৭৮ সালে গ্রহণের সময় দুরদর্শনে পথের পাঁচালী দেখাচ্ছিল ফিলার হিসেব। আর আমাদের পাশের বাড়ির সদ্য সন্তান সম্ভবা কাকিমা, শোয়ার ঘরে আষ্টেপৃষ্টে জানালা বন্ধ করে বসে ছিলেন, শ্বশুর মশাইয়ের ডিক্টাম পালন করতে। "কুসংস্কারে কান দেবেন না" এসব স্লোগান জানালা ভেদ করে বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। তারপর ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে সকাল নটায় গ্রহণ ছিল। পুরোনো এক্সরে প্লেট কেটে পকেটে নিয়ে অপিস যাচ্ছিলাম।  যদি অপিসে ঢোকার আগে চট করে দেখে নেওয়া যায়। সকালের দিকে গ্রহণের সময় ছিল। সেদিন অফিস টাইমে বাস ট্রাম একদম খালি ছিল। সবাই গ্রহণে চামড়া টামড়া পুড়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়িতে বসে জানালা বন্ধ করে মাংসভাত খাচ্ছিলো। 
     
    সে যাই হোক। এইসব পুরোনো গ্রহণ নামক অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইভেন্ট গুলো সবই ছিল টোটাল সোলার ইকলিপ্স, বা পুর্ণগ্রাস।  গ্রহণের যে অপ্টিকাল বেল্ট বা পূর্ণগ্রাস দেখার জিওগ্রাফিকাল বেল্ট, সেটা কলকাতার ওপর দিয়ে ছিল। ১৯৯৫ পরে আর কোন পুর্ণগ্রাস দেখার মত জিওগ্রাফিকাল বেল্টে ছিলাম না।  দেখাও হয় নি।
     
    গত ফেব্রুয়ারিতে,  আমার সাবস্ক্রাইব করা একটা অ্যাস্ট্রোনমি ওয়েবজিন থেকে এবছরের উল্লেখ যোগ্য অ্যাস্ট্রোনমি ইভেন্টএ চোখ বোলাতে বোলাতে জানতে পারলাম, ১৪ই অক্টোবরে বলয় গ্রাস সূর্য্য গ্রহনের কথা। আর তার জিওগ্রাফিকাল বেল্ট উত্তর আমেরিকা আর মধ্য আমেরিকাতেই। আরিজোনা, নেভেদা, ইউটা আর টেক্সাস বেল্টে। ওরেব্বাস! এতো পরে পাওয়া চোদ্দয়ানা। একে বলয় গ্রাস,  মানে রিং ইক্লিপ্স আর সেটা কাছাকাছি কোথাও। দু এক জন বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, একজন রাজী হয়ে গেল। আমার মতই হুজুকে বলে।
     
    সেইমত গত ১২ই অক্টোবর দুপুরের ফ্লাইটে সাস্কাতুন থেকে লাস ভেগাস এলাম। ওরা এল স্যান হোসে থেকে। সেদিন রাত্তির ২টো পর্যন্ত ক্যাসিনো আর সংলগ্ন বারে বসে টেকিলা খেয়ে পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে ঊঠতে দেরী হয়ে গেল। তবে সেরকম তাড়া ছিলনা সেদিন। হেলেদুলে চীজ ওম্লেট দিয়ে প্রাত:রাশ সেরে, আগের দিনের এয়ারপোর্ট থেকে ভাড়া করা টোয়োটা র‍্যাভ নিয়ে হাইওয়ে তে ঊঠলাম তখন সকাল সাড়ে এগারোটা। আমাদের নাক বরাবর উত্তরে যেতে হবে সাড়ে ছশো কিলোমিটার মত। এল্কোতে। এল্কো একটা মাঝারি সাইজের টাউন। এল্কো যাওয়ার উদ্দেশ্য,  এই টাউন থেকেই বলয় গ্রাস দেখা যাবে। আমাদের প্ল্যান ছিল এই সাড়ে ছশো কিলোমিটার ড্রাইভ করে, ১৩ তারিখ এল্কোতে রাতে থাকবো। পরের দিন সকালে আরাম করে গার্ডেন চেয়ারে বসে সূর্য দর্শণ হবে। গ্রহণের সময় ছিল সকাল ৮:০৬ থেকে ১০:৪০। এর মধ্যে বলয় গ্রাস ৯:২২ থেকে ৯:২৬।
     
    কিন্তু পনেরো দিন আগে এল্কোর প্রায় ২৫টা হোটেলে ফোন।করে কোত্থাও বুকিং পাইনি। অবশ্য সেটা কিছু আশ্চর্য্য মনে হয়নি। শেষে চল্লিশ কিলোমিটার মত পুবে একটা প্রোলেতারিয়েত মোটেল বুক করে রেখেছিলাম। সেখানে পোঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০টা হয়ে গেল। রাস্তায় কনস্ট্রাকশনের জন্য সব মিলিয়ে ঘন্টা দুয়েক বসে থাকতে হয়েছিল বলে। 
     
    মোটেলে ঢোকার আগে, একটা প্যালেস্টানিয়ান রেস্টুরেন্টে রাতের খাওয়া খেলাম।  একটা আইতেম বন্ধুর সাজেসানে নিয়েছিলাম। তার নাম 'বাবা গানুস"। লে পচা। এ মাইরি সিদ্ধিদাতা মেডিটেরিয়ান বাবা। তবে খেয়ে দেখলাম বেশ স্বাদু। বৌ বল্ল ও নাকি আগে বাড়িতে বানিয়েছিল আমি নাকি ভুলে মেরে দিয়েছি। আর এটা নাকি বেগুনের আইটেম। তাছাড়া বন্ধু এই প্যালেস্টানিয়ান রেস্টুরেন্ট সিলেক্ট করার জন্য আমায় আওয়াজ দিলো। আমি নাকি গাজার সাথে সলিডারিটি দেখাতে পণ করেছি। কি কেলো।
     
    পরদিন সকালে আকাশ ভরা মেঘ দেখে সবাই বেশ পিন ফোটানো হাওয়া বেলুনের মত চুপসে আছি। ম্যাকডোনাল্ডে বসে সকাল ৮টায় ব্রেকফাস্ট বেগেল খাচ্ছি, আর নিজেদের ভাগ্যের পিন্ডি চটকাচ্ছি। বাইরে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সেই সময় এক লালমুখো এসে জিজ্ঞেস করল "আর ইউ ইক্লিপ্সিং? "। এ  আবার কি রকম ইংরেজি। বন্ধু বৌ বললে " ইয়েস"। শুনে লালমুখো বল্ল এক ঘন্টা দূরে উত্তরে যেতে। ওখানে ক্লাউড কভার নাকি মাত্র পনেরো শতাংশ। 
     
    পড়িমরি করে গাড়ি হাঁকালাম। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি দেখে,  বন্ধু কোঁতকা মেরে সোজা করে দিল। যাইহোক মিনিট পঁয়তাল্লিশ চলার পরে দেখালাম আকাশ মোটামুটি পরিস্কার। মেঘ আছে তবে সূর্য্যদেবের অবয়ব পষ্ট। হাইওয়ের ধারে একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লুম। দেখি আরো অনেকে আমাদের মত এখানে গাড়ি থামিয়েছে। ট্রাইপড বসিয়ে গামা সাইজের টেলিফটো লেন্সের ক্যামেরা ফিট টিট করছে। ভরসা পেয়ে আমরাও ক্যামেরা বসিয়ে সোলার ফিল্টার লাগিয়ে রেডি হলাম। 
     
    সূর্য দেব হতাশ করেন নি। 
     
    এখানে বলে রাখি এটা পূর্ণ গ্রাস নয়।  বলয় গ্রাস। চাঁদের আম্ব্রাল ছায়া দীর্ঘাইত। এবং অবশ্যই পূর্ণগ্রাসের থেকেও অনেক বেশী দৃষ্টনন্দন।
     
    ইস, তুই উঠেছিলি ভাগ্যিস।
     
    (ছবি কিছু ক্যামেরায় আর কিছু মোবাইলে তোলা)
     
     
     
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন