এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পরকীয়া মরণের ফাঁদ। ছোট গল্প 

    SANKAR HALDER লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ৪৯৭ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • পরকীয়া মরণের ফাঁদ।
     
    লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
    ◆ গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে ত্রিশ বছর বয়সের শ্যামলী লেডিস সাইকেল চালিয়ে পাশের গ্রামের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ মা গো বলে চিৎকার করে রাস্তায় মাঝে পড়ে যায়।
     
    ◆ পিছন দিক থেকে আসা বাইশ বছরের এক যুবক অরিন্দম চিৎকার শুনে সাইকেল দাঁড় করিয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে আর শ্যামলী অনাবৃত বুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ঘুরিয়ে নেয় কিন্তু সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।
     
    ◆ অরিন্দমের হাত ধরে শ্যামলী একবার ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায়। শ্যামলীর পিছন দিক থেকে দুই বগলের নিচে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে অরিন্দম উঠানোর চেষ্টা করতেই কিন্তু শ্যামলীর শরীরের মধ্যে শিহরন সৃষ্টি হয় আর উঠে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে তার দেহের শাড়ি কাপড় ঠিক করতে করতে ধুলোবালি ছাড়তে শুরু করে।
     
    ◆ সাইকেল পরীক্ষা করে অরিন্দম বলে :- আপনার সাইকেলের অনেক দিনের পুরাতন চেইন কেটে গিয়েছে। 
     
    ◆ শ্যামলী মুচকি হাসি দিয়ে বলে :- জীবিত মানুষের জীবনের চেইন তো কেটে যাচ্ছে আর জড় পদার্থের সাইকেলের কি দোষ?
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- আচ্ছা; আপনি যাবেন কোথায়! আপনার কোথাও আঘাত লাগেনি তো!
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- আঘাত তো লেগেছে মনে প্রাণে রাত হলে ব্যথা অনুভব হবে আর পাশের গ্রামের বণিক বাড়ির বউ আর সামনের গ্রামের আত্মীয় অনন্ত বণিকের বাড়ি যাচ্ছি। 
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- সামনেই তো আমাদের গ্রাম তাহলে চলুন আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- সাইকেল কি হবে?
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- এই শস্য শ্যামলা বসুন্ধরা মাঠের মাঝে তো আর সাইকেল রাখা যাবে না কিন্তু কষ্ট করে সাথে করে সাইকেল গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে ।
     
    ◆ দুজনে চলতে চলতে বিভিন্ন কথা আলোচনা করতে করতে শ্যামলীর এক প্রশ্নের উত্তরে অরিন্দম বলে :- আমি এখনো অবিবাহিত কিন্তু বিধবা মাকে নিয়ে দুজনের সংসার।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- দশ বছরে ছেলে আর আট বছরের এক মেয়ে আর বিধবা শাশুড়ি ও স্বামী কে নিয়ে আমার সংসার।
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- দাদা কি করেন?
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- গ্রাম থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের শহরে ব্যবসা করেন আর আমাদের চাষবাস আছে ।
     
    ◆ কথা বলতে বলতে গ্রামের মধ্যে এক সাইকেলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে আর অরিন্দম দোকানদারকে নতুন চেইন লাগিয়ে দেওয়ার হুকুম করে।
     
    ◆ শ্যামলী ইতস্তবোধ করে বলে :- ভাই ; সাইকেল পরে মেরামত করে নেব।
     
    ◆ অরিন্দম মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বলে :- বৌদি; চিন্তা করবেন না, আপনি আমাদের গ্রামে অতিথি আর টাকা কম থাকলে পরে এক সময় দিয়ে দেবেন। 
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- ধার বাকি কাজ একদম ভালো না । তাহলে আমি কিন্তু আত্মীয়র বাড়ি চলে যাচ্ছি আর তুমি সাইকেল নিয়ে আসবে।
     
    ◆ প্রায় ঘন্টাখানেক পর অরিন্দম সাইকেল নিয়ে অনন্ত বণিকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে অনন্ত দা অনন্ত দা অনন্ত দা বলে ডাকতে থাকে।
     
    ◆ ঘর থেকে এক জন ৩৫ বছর বয়সের বৌ বেরিয়ে বলে :- আরো অরিন্দম কি মনে করে! তোমার দাদা বাড়িতে নেই।
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- শ্যামলী বৌদির সাইকেল দিতে এলাম।
     
    ◆ শ্যামলী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলে :- তোমার মহান উপকারের কথা চিরকাল মনে রাখবে। ঘরে এসে বস আর এই দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া করে তবে যাবে।
     
    ◆ অরিন্দম বিদায় বেলা বলে :- বৌদি; আপনার নাম্বারটা পাওয়া যাবে।
     
    ◆ শ্যামলী মুচকি হেসে অরিন্দমের স্মার্ট মোবাইল হাতে নিয়ে তার নাম্বার টাইপ করার পর নিজের স্মার্ট মোবাইলে কল করে। তারপর অরিন্দমের একটি ছবি তুলে নাম সংরক্ষণ করে। তারপর অরিন্দম কে পাশে নিয়ে শ্যামলী সেলফি তোলে।
     
    ◆ এরপর একদিন দুদিন তিনদিন চারদিন এক সপ্তাহ ফোনে ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে। তারপর ভিডিও কলের মাধ্যমে দুজনের অন্তরে জমে থাকা ভালোবাসার কথা আলোচনা আর শ্যামলী তার মনের দুঃখের কথা বলতে থাকে।
     
    ◆ শ্যামলী একদিন বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম করে কিন্তু দূরের কোন শহরে গিয়ে লজ ভাড়া নিয়ে দুজনে মিলিত হয়।
     
    ◆ অন্তরঙ্গ মুহূর্তে শ্যামলী বলে :- সংসারের মাঝে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কিন্তু অন্তরে আমার দৈহিক কামনা বাসনা পূরণ করার মতো ক্ষমতা স্বামীর অনেক কম । আজ আমি তোমাকে পেয়ে ভীষণ ভাবে খুশি হয়েছি। বাকি থাকা জীবন এভাবে আমাকে খুশি রাখবে তো ।
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- তোমাকে পেয়ে কিন্তু আমি ভীষন ভাবে খুশি আর সঙ্গ লাভ করে আরো বেশি আনন্দিত। 
    চিরদিন তোমার বুকের মাঝে রাখো আর তোমার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।
     
    ◆ শ্যামলী আরো জোরে অরিন্দম কে জড়িয়ে বলে :- জীবন নেবে না দেবে তা কিন্তু সময় বলে দেবে। খুব খিদে পেয়েছে চলে হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়া করে আসি।
     
    ◆ আরো কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন শ্যামলীর স্বামী তার দুই ছেলেমেয়ে কে নিয়ে দূরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে নেমন্তন্ন রক্ষা করতে যায়, আর বৃদ্ধা শাশুড়ি তাঁর ঘরে শুয়ে আছে। সেই সুযোগে রাতে শ্যামলী তার প্রেমিক কে নিজের ঘরের বিছানায় নিয়ে আসে। সমাজের বুকে বসবাস করে কতদিন আর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা যায়। কারোর না কারোর নজরে তো পড়তে হবেই। 
     
    ◆ একদিন স্বামীর কাছে ধরা পড়ে আর তাই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুমুল অশান্তি সৃষ্টি হয়। পাড়া পড়শী সহ দুই গ্রামের লোকজন জেনে যায়। শ্যামলীর স্বামী সব কিছু জানা সত্ত্বেও মানবতা দেখিয়ে স্ত্রীর অপরাধ ক্ষমা করে সংসারে ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু যৌবন জ্বালায় কে শুনে ধর্মের কাহিনী। বার বছরের ছেলে তার মায়ের কীর্তিকলাপ ও মানুষের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে কিন্তু তার মামা বাড়ি চলে যায়। এক মাস চুপচাপ থাকার পর হঠাৎ একদিন শ্যামলী নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে।
     
    ◆ শিলিগুড়ি শহরের থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে এক মিনি শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে দুজনে বসবাস করতে থাকে। আনন্দে জোয়ারে ভেসে কাম কামনা চরিতার্থ করতে করতে কয়েক মাস কেটে যায়। 
     
    ◆ হঠাৎ একদিন দুপুরে শ্যামলীর মোবাইল বেজে উঠে আর কল ধরতেই তার ১১ বছরের কিশোরী মেয়ে কান্নাকাটি করে বলে :- মা; তুমি ফিরে এসো, মা; তুমি ফিরে এসো। আর যদি ফিরে না আসো তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো । 
     
    ◆ শ্যামলী মেয়ের কথার কোন জবাব দিতে না পেরে চোখের জলে বুক ভাসাতে থাকে আর সেই মুহূর্তে 
    শ্যামলীর পরকীয়া প্রেমের প্রেমিক অরিন্দম ঘরে আসে। শ্যামলী আঁচল দিয়ে চোখ মুছে কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। 
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- কে ফোন করেছিল।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- কোম্পানির ফোন।
     
    ◆ কয়েকদিন অস্বস্তির মধ্য দিয়ে প্রেমিক অরিন্দম সাথে বসবাস করতে থাকে। এক রাতে দুজনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- আমার দৈহিক মিলনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন তোয়াক্কা না করে কিন্তু কয়েকদিন ধরে জোর জুলুম করে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। তাহলে তোমার কাছে আমার শরীরটা কি সবকিছু?
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- শরীরের চাহিদা পূরণ করার জন্যই তো স্বামীর ঘর ছেড়ে বাইরে এসেছো, আবার বড় বড় কথা বলছে।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- তোমাকে ভালোবাসার কারণে তো স্বামী ছেলে মেয়ে রেখে পালিয়ে এসেছি ।
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- আমাকে দিয়ে তো ঘানির বলদের মতো ঘানি ঘুরিয়ে চলেছো, তবুও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। বলে শ্যামলী কে জড়িয়ে ধরে।
     
    ◆ আর সেই মুহূর্তে আবার মোবাইল বেজে উঠে আর শ্যামলী মোবাইল হাতে নিয়ে মেয়ের নম্বর দেখে অরিন্দম কে ঢেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফোন ধরে আর অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে তার কিশোরী মেয়ের কন্ঠে, মা; সত্যি যদি তুমি ফিরে না আসো তাহলে আমি পুকুরের জলে ঝাঁপ দিয়ে মরে যাবো। আমি পুকুরের জলে ঝাঁপ দিয়ে মরে যাবো।
    বলে কান্নাকাটি করতে থাকে। 
     
    ◆ শ্যামলী কান্না জড়িত কন্ঠে বলে :- মামণি ; আমি আসছি কিন্তু এমন কাজ করো না মা।
     
    ◆ আর সেই মুহূর্তে অরিন্দম মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলে :- এই মেয়েটার জন্য আমাদের আনন্দ ফুর্তি মাঠি হয়ে যাচ্ছে । ঘর ছেড়ে যখন বাইরে এসেছ তখন ঘরে চিন্তা করলে হবে। বাদ দাও এসব ঝামেলা আর চলো আমরা আনন্দ ফুর্তি করি।
     
    ◆ শ্যামলী উত্তেজিত কন্ঠে বলে :- তোমার কাছে ভালোবাসা মানেই শুধু আমার শরীরটা কিন্তু সন্তান ও মায়ের জ্বালা যন্ত্রণা, তুমি বুঝতে পারবে না। থাকলো তোমার ভালোবাসা আমি চললাম আমার মেয়ের কাছে। 
     
    ◆ শ্যামলীর পথ অবরোধ করে অরিন্দম বলে :- কোন ভাবেই তোমার যাওয়া হবে না। আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে দেবে না। 
     
    ◆ অরিন্দম জোর জবরদস্তি করে শ্যামলী কে ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়, আর তর্ক বিতর্ক করতে করতে জোর কদমে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয় ।
     
    ◆ কিছু সময় পর শ্যামলী ক্লান্ত হয়ে বিছানার উপর লুটিয়ে পড়ে ভাবে, এই রাতে মারামারি করে কিন্তু অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না। ভালো ব্যবহার করে নাটক করতে হবে। 
     
    ◆ সকালে শ্যামলী ঘুম থেকে উঠে অরিন্দমের সাথে ভালো ব্যবহার করতে করতে বলে :- দৈহিক আনন্দ পূর্তি করতে হলে দেহের পুষ্টি চাই কিন্তু যা দারিদ্র্যের মতো খাওয়া-দাওয়া চলছে, তাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে আর চিকিৎসার টাকা পাওয়া যাবে না। যদি শেষে আবার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে হয়, তাহলে তোমার সাথে পালিয়ে আমার লাভ হলো কি?
     
    ◆ অরিন্দম চুপচাপ থাকার কারণে শ্যামলী বলে :- আমার শরীরটা অনেকদিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না কিন্তু চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করতে পারলে না। আবার আমার শরীর নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে চাও।
     
    ◆ অরিন্দম দ্রুত বিছানা থেকে উঠে জামা প্যান্ট পড়তে পড়তে বলে :- বাজার থেকে ঘুরে আসি আর কিছু সবজি বাজার ও মাছ কিনে নিয়ে আসি। 
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- চা পান করে যাও।
     
    ◆ অরিন্দম কোন কথা না বলে হাতে ব্যাগ নিয়ে ঘরের বাইরে এসে হনহন করে চলতে শুরু করে।
     
    ◆ শ্যামলী ভাবে :- এইতো পালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময় কিন্তু আর দেরি করা ঠিক হবে না।
     
    ◆ শ্যামলী ঘরে তালা লাগিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করে আর অটোরিকশা উঠে বলে :- 
    বাস স্ট্যান্ড চলুন।
     
    ◆ রাত সাতটার সময় তার বাড়িতে মেয়ের কাছে ফিরে আসে। কিশোরী মেয়ে তার মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। 
     
    ◆ শ্যামলী তার মেয়েকে আদর করতে করতে বলে আমি আর কোনদিন তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
     
    ◆ আর সেই মুহূর্তে তার স্বামী বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে দেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলে :- তুমি কেন আবার এসেছো? বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও।
     
    ◆ শ্যামলীর মেয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে :- বাবা ; মাকে আমি এখানে আসতে বলেছি কিন্তু আমার মাকে তুমি তাড়িয়ে দিও না। তাহলে আমি আত্মহত্যা করে সারা জীবনের মতো তোমাদের কাছে থেকে চলে যাব।
     
    ◆ শ্যামলী কান্না জড়িত কন্ঠে তার স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে বলে :- আমি অন্যায় করেছি স্বীকার করছি কিন্তু আমাকে ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দাও। তুমি আমাকে অস্বীকার করলে কিন্তু করতে পারো, আমি মা-মেয়ের সম্পর্ক কে অস্বীকার করতে পারবো না।
     
    ◆ শ্যামলীর স্বামী উত্তেজিত ভাবে অন্য ঘরে চলে যায়। শ্যামলী তার মেয়েকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলতে শুরু করে।
     
    ◆ এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই অরিন্দম ফোন করতে শুরু করে। শ্যামলী বিরক্ত হয়ে ফোন ধরে বলে :- আমার পক্ষে আর সম্ভব নয় তোমার সাথে মিলিত হওয়া। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে অতীতের স্মৃতিগুলো ভুলে যাও। আমি স্বামী সংসার ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতে চাই। 
     
    ◆ শ্যামলী ফোন না ধরার জন্য অরিন্দম বার বার whatsapp ও মোবাইলে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। যা শ্যামলীর জন্য আরো বিপদ ঘনিয়ে আসতে শুরু করে।
     
    ◆ আরো কয়েক মাস এভাবে চলে যায় একদিন রাতে বারবার ফোন আসতে শুরু করে শ্যামলী বিরক্ত হয়ে ফোন ধরে আর অপর প্রান্ত থেকে অরিন্দম বলে :- আজকের এই রাতে আমার সাথে ঘোষ পুকুরে দেখা করো, তাহলে আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করব না। আমি চেন্নাই কাজে চলে যাচ্ছি শুধু একবার তোমাকে দেখতে চাই।
     
    ◆ শ্যামলী ভাবে যদি আজ রাতে দেখা করি তাহলে হয়তো আর বিরক্ত করবে না। ভাবতে ভাবতে ঘরের দরজা খুলতে থাকে। আর পাশে থাকা তার স্বামী দরজা খোলার আওয়াজ শুনে চুপিচুপি লক্ষ্য করতে থাকে। শ্যামলী বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কিছু সময় দেখতে থাকে তারপর দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। 
     
    ◆ শ্যামলী স্বামী ভাবে তাহলে পরকীয়া প্রেম এখনো শেষ হয়নি কিন্তু আজ দুটোকেই মজা দেখাবো। বলে একটি লাঠি হাতে নিয়ে শ্যামলীর পিছনে পিছনে চলতে থাকে।
     
    ◆ শ্যামলী অন্ধকার আচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে গ্রামের রাস্তা বাদ দিয়ে চাষের জমির মধ্যে দিয়ে ঘোষ পুকুরের ধারে আসতেই, রাস্তায় একটি ইকো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে চমকৃত হয়ে মোবাইলের আলো জ্বেলে চারিদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর শ্যামলীর স্বামী একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।
     
    ◆ অরিন্দম গাড়ির পাশে থেকে সামনে এগিয়ে এসে বলে :- তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। গাড়ি নিয়ে এসেছি চলো এই রাতেই আবার পালিয়ে যাই।
     
    ◆ শ্যামলী বলে :- তাহলে তুমি চেন্নাই যাচ্ছ না, আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য মিথ্যা বলে নাটক শুরু করেছে। আমি তোমাকে অনেক আগেই বলেছি, ভুল মানুষ একবার করে কিন্তু বারবার কখনোই করে না। 
    ভুলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই সংসারে ফিরে এসেছি কিন্তু আমি না থাকলে আমার মেয়ে আর বাঁচবে না। তোমার কারনে আমার স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
     
    ◆ অরিন্দম বলে :- আমি তোমাকে ছাড়া কোন প্রকার বাঁচতে পারব না আর তোমার মেয়েকে আমারদের সাথে নিয়ে চলো।
     
    ◆ শ্যামলী উত্তেজিত কন্ঠে বলে :- এক গাছের ছাল আর এক গাছে কোনদিনই লাগেনা কারন আমার মেয়েকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। এখন আমার দেহকে পাবার জন্য আমার মেয়ের প্রতি নকল ভালোবাসা দেখাচ্ছ। মা মেয়ে দুজনকেই ভোগ করার জন্য কিন্তু সেই অপরাধ আমি আর হতে দেব না। কয়েক বছরের মেলামেশার মাধ্যমে কিন্তু তোমাকে চিনতে আমার আর বাকি নেই। বলে বিপরীত দিকে ঘুরে চলতে শুরু করে।
     
    ◆ শ্যামলী পথ অবরোধ করে অরিন্দম বলে :- আমার ভালোবাসা কে প্রত্যাখ্যান করে তুমি চলে যেতে পারো না। যেকোনো মূল্যে আমি তোমাকে চাই। বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে যায়।
     
    ◆ শ্যামলী জোরে ধাক্কা দিয়ে অরিন্দমকে ফেলে দেয় আর অরিন্দম দ্রুত উঠে উত্তেজিত হয়ে শ্যামলী গলা চেপে ধরে বলে :- জীবিত থাকতে যখন তোমাকে পেলাম না। বেইমান বিশ্বাসঘাতক নারী, তোকে আজ মেরেই ফেলবো।
     
    ◆ শ্যামলী বাঁচার জন্য ছটফট করতে করতে চিৎকার করে ওঠে আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। 
     
    ◆ শ্যামলী স্বামী উত্তেজিত হয়ে হুংকার দিয়ে দ্রুত ছুটে এসে অরিন্দমের মাথায় কয়েক বার আঘাত করে বলে :- আরে পাপিষ্ট যে ভালো হতে চায় তাকে ভালো হতে দিতে চাস না।
     
    ◆ অরিন্দম ওমা বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর শ্যামলী স্বামী লাঠি ফেলে দিয়ে শ্যামলী কাছে এসে হাত ধরে বলে, তুমি ঠিক আছো তো। 
     
    ◆ শ্যামলী কোন কথার জবাব না দিয়ে দুই চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। প্রকৃতির নিয়মে গাছে গাছে পাখি গণ গুঞ্জন করে ওঠে আর সেই মুহূর্তে কয়েকজন প্রতিবেশী প্রকৃতির আহব্বানে সাড়া দেওয়ার কারণে প্রাত কার্য করার জন্য পুকুর পাড়ে উপস্থিত হয়। 
     
    ◆ রক্তাক্ত অবস্থায় অরিন্দম কে পড়ে থাকতে দেখে একজন ব্যক্তি দ্রুত গ্রামে পৌঁছিয়ে খবর দেয়। সকাল বেলা পুকুর পাড়ে বহু নর নারীর সমাগম ঘটে। একজন প্রতিবেশী ঘটনা শোনার পর তার মোবাইল থেকে থানায় খবর দেয়। 
     
    ◆ কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। পুলিশ অফিসার ঘটনা শোনার পর উভয় পক্ষকেই থানায় তুলে নিয়ে যায়। শ্যামলী রাজ সাক্ষী হয়ে অরিন্দমের নামে আদালতে মামলা দায়ের করে।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    রচনাকাল :- ১২ অক্টোবর ২০২৩ সালে।
    দত্তপুলিয়া যুব গোষ্ঠী ক্লাব থাকাকালীন সময়ে।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫৪524752
  • যেন ঢাকাই ছবির চিপ স্ক্রিপ্ট! কী যে এক্টা অবস্থা!? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন