এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • P=NP

    Pradhanna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৮২ বার পঠিত
  • “It’s not a simple thing, so it’s hard to give you a simple answer; but if I had to sum it up in one word, I’d say it’s a matter of camouflage. Subterfuge, even. The investigators have been fooled by the criminals’ camouflage. Everything they think is a clue isn’t. Every hint they uncover is merely a breadcrumb set in their path to lure them astray.”

    Jaane Jaan সিনেমাটা দেখলাম সদ্য। চমৎকার একটি থ্রিলার। অভিনয় এবং অন্যান্য সব কিছুই সাধারণের থেকে অনেকটাই উঁচু সুরে বাধা। কিন্তু এই সুর উঁচু তখনই হয় যখন তার ‘বেস’ সুরটি, অর্থাৎ, ‘সা’ উঁচু স্কেলে হয়। এই সিনেমার গল্পই এর ‘সা’। অথচ, এই গল্পের বিন্যাসে বেশ কিছু গলদ চোখে পড়ল। এতএব, আজকের এর জেরক্স কপির যুগে, খুঁজে পেলাম, একই বিষয়বস্তুর আবহে মূল জাপানী সিনেমাটা। সিনেমাটা দেখার জন্যে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটি ইন্টারভিউতে, পরিচালক সুজয় ঘোষ বললেন, মূল যে বইটির অ্যাডাপ্টেশান, তার কথা --- দ্য ডিভোশান অফ্‌ সাসপেক্ট এক্স। লেখক কিয়োগো হিগাশিনো। এই হিগাশিনো ভয়ঙ্কর জাপানী ভূতের সিনেমা ‘দ্যা রিঙ’-এর লেখক। এতএব, আমার মন চলে গেল উৎস সন্ধানে। আমি পড়া শুরু করলাম। এবং টানা দেড়দিনে বইটা শেষ করলাম। সিনেমা যদি ডাল-ভাত হয়, মূল উপন্যাসটা তাহলে বিরিয়ানি-চিকেন চাপ।

    খুনটা হয়ে গেছে দ্বিতীয় অধ্যায়েই। এবং নিখুঁতভাবে তার বর্ণনাও করা হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু আসল খেলা। এ যেন খানিকটা ‘সোনার কেল্লা’ মনে পড়িয়ে দেয়। আততায়ীরা ঘুরছে গোয়েন্দার পাশে পাশে, দর্শক সমস্তটাই জানেন, কিন্তু তবুও, টান টান রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না। 

    ইয়াসুকো আর তার মেয়ে মিশাতো থাকে এক মফস্বলে। মিশাতো স্কুলে পড়ে, ইয়াসুকো একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। ইয়াসুকোর অতীত ছিল একটু গোলমেলে। সে কাজ করত একটা নাইট ক্লাবে। তার স্বামীর অত্যাচার আর নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামী টোগাশিকে ডিভোর্স দেয় এবং চলে আসে শিনোহাসিতে। জুয়াড়ি এবং কর্মহারা টোগাশি, তাকে খুঁজতে খুঁজতে, পাঁচ বছর পরে এসে দেখা করে, তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করতে থাকে। এই সময়েই মেয়ের গায়ে হাত তোলা এবং কুৎসিত চিন্তা প্রকাশের কারনে, বাঁচার আর কোন উপায় না দেখতে পেয়ে মা-মেয়ে মিলে খুন করে ফেলে টোগাশিকে।

    খুনটা জেনে যায় টিচার ইশিগামি। যিনি তাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। তিনি তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের সাহায্য করেন মৃতদেহের ‘ব্যবস্থা’ করতে। অতঃপর দিন দুয়েক বাদে আধপোড়া মৃতদেহ আবিস্কার করে তার উৎস খুঁজতে খুঁজতে ইয়াসুকোর কাছে হাজির হয় গোয়েন্দা কুসানাগি। আপাতদৃষ্টিতে কুশানাগি বুঝতে পারে যে এই হত্যাকান্ডের সাথে ইয়াসুকোর যোগ আছে, কিন্তু প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে যায়, একটাই কারণ, সঠিক তিনটে অ্যালিবাই – হত্যার দিন সন্ধ্যায় মা-মেয়ে ছিলে যথাক্রমে সিনেমায়, নুডলস শপে এবং তারপরে কারাওকে বারে। কুশানাগিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ইউকাওয়া, ফিজিক্সের এক প্রফেসর, যিনি, ঘটনাক্রমে ইশিনাগির কলেজ ফ্রেন্ড। দীর্ঘ কয়েক দশক বাদে তাদের দেখা হয়। 

    এবং একসময়, ইশিগামি আর ইউকাওয়া --- দুজনেই এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এক বিশাল মাপের মাইন্ড গেম খেলতে শুরু করে। এ যেন দাবার খেলা। নিজের একটি চালকে প্রতিপক্ষের আগামী দশ চাল দেখে নিয়ে খেলা।

    আমি যতটা ঘটনা বললাম, তা কিন্তু এর মাত্র পাঁচটি অধ্যায়। পরবর্তী চোদ্দটি অধ্যায় জুড়ে কেবলমাত্র দুই শিক্ষকের বৌদ্ধিক লড়াই। এর মাঝে ইয়াসুকো আর কুসানাগির সাপ-লুডো। আমি, সমগ্র ঘটনাটাকে সূত্রাকারে এক ছকের মধ্যে ফেলেছি, তা এই লেখাটার সাথে যোগ করলাম। কৌতুহলী পাঠক যদি এই সূত্র থেকে পড়তে উৎসাহী হন তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক।

    আমার যেটা সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে, আমি খুনটা জানি, শুধু খুনটাই নয়, খুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানি, কিন্তু তবুও, খুন পরবর্তী চোর-পুলিশ খেলার মধ্যে খুনটাই একটা রহস্য হয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই বোঝা যায় টোগাশির মৃতদেহ আর যেন টোগাশির মৃতদেহ হয়েও হচ্ছে না। আমি যা পড়ছি, আমাকে যা পড়ানো হচ্ছে, লেখক যেটা পড়াতে চাইছেন সেটাই পড়ছি, না তো কি লেখক যেটা বলতে চাইছেন সেটা। ওই একটা খুনের মধ্যে দিয়ে ইশিগামির প্রেমের সাথে সাথে ইশিগামির জীবনের উদ্দেশ্য সাধনের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার এক ঠান্ডা মাথার ছক, যে ছকের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন ইউকাওয়া, অথচ, ইয়াসুকো কিম্বা কুসানাগির কাছে তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই। 

    এই উপন্যাস কোথাও যেন, রহস্যের পাশাপাশি এক রোমান্টিক কাহিনীও। যে রোমান্টিসিজমে ইশিগামি ভেসে যাচ্ছেন ইয়াসুকোর প্রতি, সেই রোমান্টিসিজমের ছাঁইচাপা আগুনে পুড়ে অবশেষে খাঁক হয়ে যায় ইয়াসুকো নিজেই। আর আমাদের জন্যে পড়ে থাকে একটাই তত্ত্ব, P=NP-র তত্ত্ব। তত্ত্বটা কি?

    “It’s a famous one, the P=NP problem. Basically, it asks whether it’s more difficult to think of the solution to a problem yourself or to ascertain if someone else’s answer to the same problem is correct.”

    এই উপন্যাসটির ইংরাজি অনুবাদ করেছেন আলেকজান্ডার ও. স্মিথ এবং এলি জে. আলেকজান্ডার। সহজ সরল পাঠ্য, ঝরঝরে অনুবাদ। সার্থক অনুবাদ কি না আমার বলার ক্ষমতা নেই। কিন্তু, বাংলাদেশের যে অনুবাদটি করেছেন সালমান হক, চোখ বুলিয়ে বুঝলাম, সেটা আক্ষরিক এবং ভাবানুবাদের মাঝামাঝি হওয়াতে বেশ সুখপাঠ্য।



    =========================
    The Devotion Of Suspect X
    Author: Keigo Higashino
    Little Brown Book Group
    Price: 499/-

    বঙ্গানুবাদঃ সালমান হক
    বাতিঘর প্রকাশনী
    মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা

    ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা এবং ইন্টারনেট
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন