এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার কথা ও গল্পগাছা 

    Mousumi Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২০০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পর্ব ৪
    বেনারস পর্ব ৪

    দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে একটি রিক্সা নিয়ে বেরোন হল। উদ্দেশ্য নৌকাবিহার। একটি রিক্সা নিয়ে পৌঁছলাম অসি ঘাটে। বিকেল হয়ে আসছে তখন। দরাদরি করে একটি নৌকায় গিয়ে বসা হল। নদীতে নানা আকারের নৌকার ভীড়। একে একে পার হয়ে যাচ্ছে এক একটি ঘাট। নতুন করে সংস্কার হওয়া সত্ত্বেও প্রাচীনতা এতটুকুও হারায় নি যেন ! আমার ভিতরের 'আমি' টা যেন বলে উঠল – ' আবারও এমনভাবে দেখছ? কত শতবার এই নদীতে, নদীর ঘাট গুলোতে আসা যাওয়া করেছ – ভুলে গেলে? মন দিয়ে দেখ দেখি! ঐ যে সিঁড়ির উপরেই ঘাটের মোটা থামগুলো... যেগুলোতে ফাটল ধরেছে আর ফাটলের মধ্যে দিয়ে কত কত গাছপালা বেরিয়েছে – সেবারেও ছিল। তার আগেও ছিল। মন দিয়ে দেখ না বলেই এই হাল' –। যা বাবা! কি বলে এ??? সবে তো এলাম! জ্ঞানবধি এ যাচ্ছে বেনারস তো সে যাচ্ছে বেনারস, শুনেই গেলাম। জীবনের পাঁচ দশক পেরিয়ে তো আসবার সুযোগ পেলাম। কি জানি বাপু!

    মেজাজটা একটু কেমন যেন হচ্ছিল এমন সব আজগুবি কথায়। নৌকা চলছে। চুপচাপ দেখছি, হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লাগছে চোখে মুখে। মনের আজগুবি কথা নিয়ে ভাবছি। ধীরে ধীরে কেমন মনেও হতে লাগল – না, এ আমার প্রথম আসা নয়। তাহলে কি ছবি দেখে মেলাচ্ছি? না, তা তো নয়। এসেছিলাম আমি, ঠিকই – মনটা যেন কোথায় চলে যাচ্ছিল! মাঝিভাইয়ের 'আও আও' ডাকে মন ফিরে এল বাস্তবে।

    ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখিদের ভীড় নদী বক্ষে। ধবধবে সাদা খুব সুন্দর এই পাখিরা। নৌকা কাছে আসতেই দলবদ্ধভাবে একটু ফাঁকা জায়গায় উড়ে চলে যাচ্ছে। নৌকার মাঝিরা 'আও আও' করে ডাক দিলেই আবার পুরো দল এসে হাজির হয়ে যাচ্ছে। দিনের আলো পড়ে আসছে একটু একটু করে। শিরশির করে হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে – শরীর, মন জুড়ানো! হাওয়ার পরশে গঙ্গার বুকে জলে ঝিরিঝিরি আঁকিবুকি – ভারী চমৎকার সবকিছু!

    দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল ধোঁয়ায় ঘেরা মণিকর্ণিকা ঘাটের আবছা আভাস। নৌকো কাছাকাছি পৌঁছল। প্রাচীনতম ঘাটের মধ্যে অন্যতম এই ঘাট। গুপ্তযুগের শিলালেখ এ ও এই ঘাটের উল্লেখ পাওয়া যায়। একান্ন শক্তিপীঠের মধ্যে একটি হল মণিকর্ণিকা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মৃতদেহের সৎকার এই ঘাটে হলে মৃতের আত্মা মোক্ষলাভ করে থাকেন – পুনর্জন্ম আর হয় না। এই বিশ্বাসে ভর করে শত শত মৃতের সৎকার এই মণিকর্ণিকা ঘাটে প্রতিদিন হয়ে থাকে। শ্মশান অতি পবিত্র জায়গা বলে জেনে এসেছি। ইহজগতের সবকিছু ত্যাগ করে শেষ সম্বল রক্ত মাংসের দেহটিকে জীবনের শেষ যজ্ঞে আহুতি দেওয়ার স্থান এটি। নৌকো থেকেই প্রণাম করলাম। মাঝি ভাইয়ের কথামতো নদীর জল হাতে নিয়ে মাথায়ও ছিটিয়ে নিলাম। সন্ধ্যা হতে কিছু দেরী। দিনের আলো কমে আসছে। ঘাটের জ্বলন্ত চিতাগুলির দিকে দেখে কত প্রশ্ন মাথায় ভীড় করে আসছে। ঐ চিতায় উৎসর্গিত দেহের অধিকারী যাঁরা কিছু ঘন্টা আগেও এই মায়াময় পৃথিবীর বাসিন্দা ছিলেন সত্যিই কি তাঁরা সকলেই এই মায়া ত্যাগ করতে পারেন? এত কম সময়ে সত্যিই কি সব শেষ হয়ে যায়? যে তরতাজা যুবকটি আগের দিন পথ দুর্ঘটনায় ধরাধাম ছাড়তে বাধ্য হল , তার দেহও তো এখানেই দাহ হয়েছিল। দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তেও তো তার মনে, চোখে ছিল আগামীর দিনগুলোর কত স্বপ্ন! সে সব? কিছুই তো হল না তার! প্রশ্ন মনেই থেকে গেল। একটু জোরাল সেহাওয়ার ঝাপটা এসে মুখে লাগল। কেন যেন মনে হল নদীর বাতাসে, জলে মিলেমিশে আছে কত মানুষের কত আশা, আকাঙ্ক্ষা। নদীই জানে সে কথা। ঘাটের সিঁড়িতে ধাক্কা খেয়ে নদীর জল 'ছলাৎ' শব্দে বলে চলে যায় সে সব কথা – আবহমান কাল ধরে। সে কথা বোঝার বা শোনার জন্য আমার মন এখনও তৈরী হয় নি।

    নৌকো এবার এগোল দশাশ্বমেধ ঘাটের দিকে। কিছুক্ষণ পর শুরু হবে গঙ্গা আরতি। আমরা নৌকা থেকে নেমে নিজেদের পছন্দের একটি জায়গায় চেয়ারে গিয়ে বসলাম। আরতির প্রস্তুতি চলছে। বসবার জায়গাও ভরে উঠছে। আমাদের পাশের চেয়ারে এসে বসলেন সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত এক দম্পতি। সামান্য পরিচয় পর্বও চলতে থাকল।

    আরতির শেষে হাঁটা পথেই পৌঁছলাম গোদোলিয়ার মোড়। সেই গরুর ছবি আঁকা "Kashi Chickan Centre" বন্ধই রয়েছে। এ দিনেও আমার কৌতূহলের নিরসন হল না। বেনারসে গিয়ে চাট তো খেতেই হবে। খাওয়াও হল বিরাট লাইন পেরিয়ে "কাশী চাট সেন্টারে"। অদ্বৈত আশ্রমে পৌঁছে একটু মন্দিরে বসা হল। পরেরদিন ৺বিশ্বনাথ মন্দিরে কিভাবে ভালোভাবে পূজো দেওয়া যায় সেসব আলোচনা ও হল অধ্যক্ষ মহারাজের সঙ্গে।

    ক্রমশঃ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ৪
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb91:140e:8383:bb81:b6d8:a881:e869 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৪523713
  • আমার একটা প্রশ্ন আছে। এই যে বিশ্বনাথের নামের আগে চন্দ্রবিন্দু দেওয়া হয়, এর কারণ কী? এটা শুনেছি যে 'ঈশ্বর' বোঝাতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয়, যেমন মানুষ মারা গেলে। কিন্তু বিশেষ ভাবে এই অক্ষরটাই কেন? এর পেছনে কি কোনো গল্প আছে? আর এটাও প্রশ্ন যে 'ঈশ্বরী' বোঝাতেও কি চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার আছে? আমি কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পড়ছেনা।
  • :|: | 174.251.162.60 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৬523729
  • হ্যাঁ দেবীদের নামের আগেও বিশেষ করে শুভ বিজয়া লেখার সময় ঁ দেওয়া হয়। কোনও গল্প আছে কিনা জানিনা, তবে মনে হয়, আফটার অল অইটিই তো শেষ বর্ণ -- এই জীবন ফুরালে যে চিহ্নটা সুদূরের চাঁদ তারা হয়ে যাবার ঈঙ্গিত বহন করে আনে।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:০৩523730
  • অনুস্বার বিসর্গ আর চন্দ্রবিন্দু---একেবারে খাসা জিনিস। এই শেষ তিনটি বর্ণ। ং, ঃ ঁ। গুরুচন্ডা৯র কলে তো গোলকসমেত আসে। ঃ-)
  • aranya | 2601:84:4600:5410:f40e:8a43:d9a:e738 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩০523732
  • মানুষ মরে গেলে, স্বর্গে যায় তো (নেহাত পাপী তাপী রা ছাড়া )। স্বর্গের বাসিন্দাদের জন্য রিজার্ভ্ড , ঐ চন্দ্রবিন্দু. 
    দেব দেবীরাও স্বর্গে থাকেন। তাই তাদের নামের আগে ব্যবহৃত হয়। মৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হয়, তারা স্বর্গে গেছেন, ধরে নিয়ে :-)
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন