এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শাহাজাদা দারা শুকোহর জ্বর

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮২ বার পঠিত
  • এরপর শাজাহানের আদেশে শাহাজাদা দারা শুকোহ, নাদিরা বানু বেগম আর নবজাতককে নিয়ে শাহী বহর আবার বেরিয়ে পড়ে আগ্রা থেকে  লাহোরের দিকে। পৌঁছতে সাড়ে ছশো কিলোমিটার রাস্তা মাস আড়াই লাগার কথা। পথেই নাদিরার মেয়েটা মারা গেল তখন তার মাত্র দু মাস বয়স।পবিত্র রমজানের শেষে ঈদ উল ফিতরের সময়েই ঘটনাটা ঘটে। এই ঈদ খুশির না হয়ে এক দুঃখের উদযাপন হয়ে গেল। ভেঙে পড়লেন দারা, হয়ে পড়েন ভালো রকম অসুস্থ। যথারীতি নাদিরার ব্যাপারে মোঘল তারিখকাররা স্পিকটিনট ! যেন শাহজাদার দুঃখের বর্ণনাই থেকে যায় এমন ব্যবস্থা সব করেছেন। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক নাদিরার জন্য প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়া ছাড়া আরো একটা মহিমান্বিত চাপ তো ছিলই সেটা হল জ্বরগ্রস্ত স্বামী দারা শুকোহকে দিনরাত এক করে সেবা করা। এসবও অবশ্য চরম আন্দাজ করা ছাড়া গতি নেই। শাহী প্রকল্প থেকে নাদিরার দুখখু বাদ ! বাদশাহ দারার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে খুবই চিন্তায় পড়লেন।

    নিজের তাঁবুর পাশেই শাহাজাদা দারার তাঁবু পাতা হল যাতে শাহী মহলের কর্ত্রী শাহাজাদী  জাহানারাও দারার দেখভাল করতে পারেন। শাহাজাদা দারার জ্বরের আর উপশম হয় না। সে জ্বর যেন বাড়বে বলেই ঠিক করেছিল। শাহী বহরের সঙ্গে থাকা সব হেকিমরা ফেল মেরে যাচ্ছে। বাদশাহ খুবই চিন্তায় পড়ে ভাবতে শুরু করলেন, ভাবছেন তো ভাবছেন।
    ------- কী হচ্ছেটা কী !
    ------- কেন ?
    ------- দারার প্রবল জ্বর, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে শাহজাদার আর বাদশাহ শুধু ভাবছেন?
    ------- এখানে গল্প আছে।
    ------- গল্প তো একটাই, দারার জ্বর। ব্যাস, গল্প শেষ।
    ------- কিন্তু জ্বর কি থেকেই যায়?
    ------- জ্বর কি থাকার জন্য?  জ্বর আসবে যাবে, মিটে গেল।
    ------- এত সহজ নয় দারার জ্বর সারা।
    ------ কেন?
    ------- দু রকম বয়ান আছে।
    ------- কীরকম?
    ------- একটা পাদশানামায় লাহোরির ভাষ্য…….
    ------- আবার লাহোরি !
    ------- কিছু করার নেই শাজাহান পদে পদে তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন আর তিনিও খসখস করে সব লিখে রাখছেন পাদশানামায়।
    ------- আর একটা কার ভাষ্য?
    ------- সেটা দারার নিজের, আট  বছর পর ষোলোশো বিয়াল্লিশে সাকিনাত উল আউলিয়া - সাধুসঙ্গে প্রশান্তি বই লেখার সময়  দারা জ্বর সারায় লাহোরের বাসিন্দে - লাহোরি, তাঁর মুর্শিদ  পির মিয়াঁ মির বা হিন্দভিতে মিয়াঁ জিওর মিরাকল - অলৌকিক ক্ষমতার কথা বলেছেন। সেখান থেকেই গহীন সুফি পন্থায় তাঁর যাত্রা শুরু।
    -------- জ্বর সারা নিয়ে কত কথা!
    -------- এসব জ্বরেরই কথা, যার ………
    -------- যার?
    -------- অন্যথা হবার নয়!
    -------- হবার নয়?

    **পাদশানামায় লাহোরির ভাষ্য
    -------------------------------------------------------
    শাহাজাদা দারা শুকোহর জ্বর সারেই না। এমনিতে প্রথম সন্তান মারা যাওয়ায় মানসিক অবসাদ তার ওপর জ্বরের প্রকোপে দারা কাহিল। হেকিমরা কিছুই করতে না পারায় চিন্তিত বাদশাহ লাহোর যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পথেই সেখান থেকে তাঁর বিশ্বস্ত বিখ্যাত হেকিম ওয়াজির খানকে এত্তেলা দিলেন। বাদশাহের হুকুমে তড়িঘড়ি লাহোর থেকে আসছেন ওয়াজির খান। এতদিন হেকিমরা যেসব ভুল করছিলেন তা শুধরে দিলেন ওই বিখ্যাত হেকিম। শাহাজাদা দারা সুস্থ হয়ে উঠলেন। বাদশাহ শাজাহান বেজায় খুশ। শাহজাদার জ্বর  ছাড়াউপলক্ষ্যে মোচ্ছব হল। তাতে কত টাকা খরচ হয়েছিল লাহোরি লেখেন না।  একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে যা আবুল ফজল বা অন্য কেউ  হলে হয়তো  নিখুঁত কথায় লেখা টাকায় / দামে ( আকবরের আমলের তামার মুদ্রা, জাহাঙ্গীরের সময় থেকে নথিতে সব টাকায় হিসেব আছে)। খরচের বিবরণ থাকত, হয়তো এ বাবদ আদায়েরও।
     
    **সাকিনাত উল-আউলিয়াতে শাহাজাদা দারা  শুকোহর ভাষ্য
    ---------------------------------------------------------

    দারা তাঁর জ্বর সারাতে হেকিম ওয়াজির খানের কোন উল্লেখ করছেন না। সেটা কি শাহী দরবারের বানানো গল্প? আট বছর পর লিখতে বসে তিনি প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার দুঃখের কথাও লেখেন না। ওই বইটার উদ্দেশ্যের কথাও অবশ্য মাথায় রাখা উচিত, সে হিসেবে তিনি পির মিয়াঁ মিরের সঙ্গের কথাই বর্ণনা করলেন।
    বলা হচ্ছে : ষোলোশো চৌতিরিশের সাতই এপ্রিল, চার মাস ধরে জ্বরে ভুগে কাহিল শাহাজাদা দারা শুকোহ, হেকিমরা কিছুই করতে পারে না। এখানে দারা মাসের জায়গাটায় গণ্ডগোল করেছেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর দিন ধরলে অসুস্থতা মাস তিনেকের হওয়ার কথা। নাকি মেয়ে মারা যাওয়ার আগে থেকেই ওনার মানসিক অবসাদগ্রস্ততা চলছিল? সে যাই হোক আরো বলা হচ্ছে বইটায় যে শাজাহান বড় ছেলের আরোগ্যের জন্য, তাঁকে সঙ্গে করে, লাহোরে পির মিয়াঁ মিরের বাড়িতে গেলেন। বলা হচ্ছে ইতিমধ্যেই শাহাজাদা পিরের একজন ভক্ত বনে গিয়েছিলেন। বাদশাহ শাজাহান পির বাবার কাছে প্রার্থনা করছেন, ''হজরত মিয়াঁ জিও, আমার ছেলে আপনাকে খুব মানে। হেকিমরা ওর রোগ সারাতে পারেনি। দোয়া করুন যাতে সেরে ওঠে। ''
    পির মিয়াঁ মির এক হাতে দারার হাত নিলেন।  অন্য হাতে নিলেন তাঁর জল খাবার মাটির সরা। সেই সরায় পানি ভরে কোরানের প্রথম সূরা আল -ফাতিহা পাঠ করে ফুঁ দিলেন। দারাকে বললেন সেই জল পান করতে। বাদশাহকে বললেন এক হপ্তার মধ্যে ভালো হয়ে যাবেন তাঁর বড় ছেলে। হলোও তাই - সব রোগ উধাও। ভরসা করে  এক সহকারীকে পির বাবার কাছে পাঠালে, সেও ঝাড়ফুঁকে সেরে উঠল এমনটাই লিখলেন শাহাজাদা দারা শুকোহ।

    লাহোরির বর্ণনাতেও শাহী বহর লাহোর ঢোকার পর কাছেই এক সুফি সাধকের দর্শনে বাদশাহ যাচ্ছেন এমনটা বলা আছে। ঝাড়ফুঁকের কোন উল্লেখ নেই, রোগ সারা তো দূর কি বাত!
    তখন ছাপার যুগ আসেনি। শাহী তারিখের সঙ্গে আলাদা সুরে কথা বলা বা লেখা বেয়াদবি এ জেনেও দারা তাঁর  মন মতো এই ন্যারেটিভ  শাজাহানের চোখের আড়ালেই বানিয়ে কয়েকটা প্রতিলিপি ঘনিষ্টদের মধ্যে বিলি করেন এ অনুমান হচ্ছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন