এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দেবেশ রায়ের সঙ্গে একটু সময় 

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ জুলাই ২০২৩ | ২৫৫ বার পঠিত
  • 'চিহ্ন' বাংলাদেশের স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত পত্রিকা দেবেশ রায়ের একটা ছবি দেওয়ায় মনে পড়ল, ছোটগল্প নিয়ে আলোচনা চলছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা আমের মুকুল ভরা প্রাঙ্গণে। দেবেশ রায় ছিলেন শ্রোতার আসনে। বক্তারা সকলেই বিব্রত। দেবেশ রায় শ্রোতা। আমিও কুন্ঠিত। একটু আগেই ফর্মান জারি করেছে, চিহ্নপ্রধান শহীদ ইকবাল।
    তুমিও বলবা।
    দুরুদুরু বুকে বললাম।
    রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত দিশাহীনতা প্রকট হচ্ছে। 'হাম তুম এক কামরে মে বন্ধ হো' মার্কা প্রবণতা বাড়ছে -- এই সব কথা।
    তর্ক হল। জোর। বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান গল্পকার মঞ্চে।
    হঠাৎ উঠে এলেন, দেবেশ রায়।
    বললেন, আমি কিছু বলতে চাই।
    বললেন, এই আমের মাতাল গন্ধে আমাকে প্রেমে পেয়েছে। আমি একটা কবিতা বলব, বললেন।

    উদাসীন তোমারে ডাকিনু যবে কুঞ্জবনে 
    তখনো আমের বনে গন্ধ ছিল,
     জানি না কী লাগি ছিলে অন্য মনে
     তোমার দুয়ার কেন বন্ধ ছিল
     একদিন শাখা ভরি’ এল ফলগুচ্ছ, 
    ভরা অঞ্জলি মোর করি গেলে তুচ্ছ, 
    পূর্ণতাপানে আঁখি অন্ধ ছিল। 

    বৈশাখে অকরুণ দারুণ ঝড়ে 
    সোনার বরণ ফল খসিয়া পড়ে ; 
    কহিনু, “ধূলায় লোটে মোর যত অৰ্ঘ্য, 
    তব করতলে যেন পায় তার স্বৰ্গ,” 
    হায়রে তখনো মনে দ্বন্দ্ব ছিল ৷ 

    তারপর, আমাকে বিস্মিত করে বললেন, গল্পের দায়বদ্ধতা বলে কিছু হয় না।
    আমি অবাক। বলেন কী? এতদিনকার বলা তাহলে মিথ্যা?
    তর্ক করতেও ভুলে যাচ্ছি।
    শুধু বললাম, আমি দ্বিমত। দেবেশ রায় আবেশে আছেন। তাই নিজের চিন্তার বিপ্রতীপে এখন। এ নিয়ে দেবেশ রায় 'আজকালে' তাঁর অনবদ্য গদ্যে লিখেছিলেন।
    এরপর, মঞ্চে থেকে নেমে তর্কে অগ্রসর হতে বললেন, আজ আমি প্রেমে আছি।

    যাওয়া হল সেদিন দুপুরেই নাটোর।
    তাঁর বাল্যের ক্রীড়াভূমি।
    সঙ্গী কয়েকজন, দেরি করছেন, বললেন, ভেবেছেন কী, চলুন। চলে যাই।
    নাটোরে যাব বলেই তো আসা।

    খেলেন না কিছুই। সারা দুপুর।
    কাল রাতে খলশে মাছের চর্চরি মুখ থেকে অবসর নিক চান না।
     ভুল করে চালক নিয়ে গেলেন দীঘাপতিয়া রাজবাড়ি।
    বললেন, এটা নয়।
    সারা রাস্তা বর্ণনা দিচ্ছেন, ইতিহাস বলছেন, প্রগলভ বালক ফিরছে বাল্যে।
    নাটোরে রাজবাড়িতে সেদিন ছুটি বা দেরি হয়ে যাওয়ায় বন্ধ।
    উনি বললেন, বলো রাজপুত্র এসেছে।
    নাটোরের রাজবাড়ির পুরোহিতের প্রিয় নাতি। রাজারও প্রিয় ছিলেন।
    ঘুরে ঘুরে দেখলেন, দেখালেন ছোট তরফ বড় তরফ।
    শোনালেন অকথিত জলের মিনার পর্ব।
    খান নি কিছুই।
    খেলেন, নাটোরের ঠাকুরবাড়ির ওখানে দোকানে।
    মাখা সন্দেশ।
    বিশ্বাস হবে না কারও, প্রায় ৫০০ গ্রাম সন্দেশ খেলেন আর বলতে লাগলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাঁচা গোল্লা। আমার অবশ্য তেমন লাগে নি। আমার কাছে হুগলির বড়াল সেরা।
    দোকানদার বসে খেতে দেবেন না।
    ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে যায় কাঁচা গোল্লা। তাই বসে খাওয়া নিষেধ।
    কে শোনে কার কথা?
    তিনি এক অন্য জগতের মানুষ।
    আমরা বললাম, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক এখানে। ছবি তুলে রাখুন। লিখিয়ে নিন। কাজে লাগবে।
    দোকানদারের হেলদোল জাগল না।
    প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্তাক, ছোটগল্পকার সালমা ছিলেন ।
    আরও কয়েকজন।
    কারও কাছে যদি ছবি থাকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন