এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিতর্কিত দেওয়াল লিখন জেএনইউ-তে

    Zaheed Rudro লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৪৯ বার পঠিত
  •  
    আবারও বিতর্ক ঘিরে দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউ ( Jawahar Lal Nehru University) । এবারের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে কোন অজ্ঞাত পক্ষের দ্বারা দেয়াল লিখন হয় --- ক্যাম্পাসের ভেতরে স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দেওয়ালে কারা যেন লাল কালিতে লিখে রাখল ফতোয়ার ঢং-এ একাধিক বিতর্কিত বার্তা। কোথাও লেখা হয়েছে ‘ব্রাহ্মণরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাও’, কোথাও লেখা ‘বানিয়ারা (বৈশ্য) দূর হটো’, কোথাও বা ‘শাখায় (সংঘ) ফিরে যাও’, ‘আমরা বদলা নিতে আসছি’ ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে৷ 
     
    অজ্ঞাতনামাদের কুকীর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের দেওয়াল ব্রাহ্মণ তথা বৈশ্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগানে ভরে উঠল। রীতিমতো শাসানি দিয়ে বলা হল ‘ব্রাহ্মণরা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাও’, ‘ব্রাহ্মণ ভারত ছাড়ো’ আবার কোনওটিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘এখানে রক্ত ঝরবে’, ‘ব্রাহ্মণ-বৈশ্য, আমরা তোমাদের জন্য আসছি। আমরা সংখ্যায় বেশি রয়েছি।’ ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিনীত জিন্দাল দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনত দণ্ডবিধির ধারা ১৫৩এ/বি, ৫০৫, ৫০৬, ৩৪ এর অধীনে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিশের দাবি।
     
    এমনিতেই দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেএনইউ বা জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ডান ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে কথায় কথায় হরদম সংঘাত সেখানে রোজকার বিষয়। গেরুয়া শিবিরের তরফে জেএনইউ-র বামমনস্ক ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়াদের কখনো ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’, কখনও ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় শাসক দলীয় শিবিরের কাছে আজও জেএনইউ পঠনপাঠনের পীঠস্থান নয়, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের আঁতুরঘর’ বলে চিহ্নিত করা হয়। জেএনইউ দেয়াল লিখন কোন নতুন বিষয় নয়। সময়ে সময়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্কে বেশ চর্চায় রয়েছে। কিন্তু এবারের বিতর্কের ঝড় বেশ তাৎপর্য বহন করছে। বিশেষ করে দুটো সম্প্রদায়কে কোন অজ্ঞাত পক্ষ আক্রমণ করার জন্য বেছে নিয়েছে। তবে এবারের বিষয় ব্রাহ্মণ ও বানিয়া সমাজে আক্রমণ করায় এর তীব্র প্রতিক্রিয়া সংবাদ শিরোনাম দখল করেছে।
     
    দেশে সাম্প্রতিক সময়ে চলা বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন তথা আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে বলে বুদ্ধিজীবী মহলে সরগোল চলছে। যদিও এই ধরণের ইস্যুর বাস্তব ভিত্তি নেই, তদুপরি একটা জাতিয়তাবাদী বিষয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এনে একে অপরের সাথে সংঘাত বাঁধানো কি কোন সংকীর্ণতার কাজ নয় ? মানে, দেয়াল লিখন দিয়ে কি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ?
     
    আচ্ছা, বিশ্লেষণের সুবিধার্থে ব্রাহ্মণ-বানিয়া (বৈশ্য) বিরোধী শ্লোগান লিখা পক্ষকে যদি বামপন্থা বা দলিত সংগঠনের বিচারধারার মানুষ ধরে নেয়া হয়, তবে এই ধরণের শ্লোগান লেখার পেছনে লুকিয়ে আছে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার ঐতিহাসিক পটভূমির সাথে বর্তমান উচ্চবর্ণের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মানসিকতা এবং বিশেষ করে সংবিধানের ১০৩ নং সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চবর্ণের আর্থিকভাবে দুর্বলদের দেয়া ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চিন্তা বা নির্বাচনে দলিত বামপন্থী এবং অন্য শ্রেণীর ব্যাক্তিকে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট করার চিন্তা। যেখানে তাদের বিচারধারা দরশায় জাত-পাত, উচ্চ - নীচের বিভাজনে ব্রাহ্মণ্যবাদের নামে ব্রাহ্মণ বানিয়া শ্রেণী শৈক্ষিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বা আরও বিভিন্ন দিকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণী থেকে বহুগুণ অগ্রসর হয়ে আছে তা বিভিন্ন প্রতিবেদনে লক্ষিত। তবু বামপন্থী বা দলিত বিচারধারার কারোর দ্বারা যদি এইধরণের দেয়াল লিখন হয় তবে এটা জাতিগত আক্রমণ। এইধরণের সংকীর্ণ মানসিকতা এবং কাজ নিন্দনীয়।
     
    অপরদিকে, এই দেয়াল লিখনের কাজ যদি এবিভিপি বা বিজেপি সমর্থিত কারো কাজ হয়ে থাকে, ধরে নেয়া হয়, তবে একটা অযৌক্তিক বিষয় নির্বাচনে ইস্যু বানিয়ে উচ্চবর্ণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা বা জেএনইউ-র বামপন্থী বা দলিত গতিবিধি সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে দেখিয়ে দেশের জনগণকে বামপন্থী বা বিজেপি বিরোধী সমর্থন থেকে নিজেদের দিকে টেনে আনার অভিপ্রায়। অথবা দেশে জাতিবাদ বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা। যদি এবিভিপি বা এই ধরনের কারো দ্বারা এই দেয়াল লিখন হয় তবে এটাও নিন্দনীয়।
     
    এখন কথা হলো এই দেয়াল লিখন কি কোন বামপন্থী- দলিত বা এবিভিপি ছাড়া কোন তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র। এইধরণের বিভেদমূলক মন্তব্য কারা করেছে, নিশ্চয় রাতের অন্ধকারে লিখা দেয়াল লিখন দিনের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। কিন্তু নীরব দর্শক গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা থেকে এই আশা করতে পারে কি একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য সিনাক্তকরণ হবে ?
     
    আসলে এইধরণের ঘটনা কোন রাজনৈতিক মুনাফা না দেশহীতের কাজে ঠিক কোনটা তা স্পষ্ট ফুটে উঠছে না। এইধরণের বিভেদকামী বিষয় নিয়ে ভারতবর্ষে শান্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কোনভাবেই 'জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন' নেয়া সম্ভব নয়। যেকোন উন্নয়নশীল দেশ বিকাশ ও উন্নয়নে তাদের ফোকাস সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণ, জাতীবাদ, নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা বাদ দিয়ে মননশীল প্রগতির পথে। তাই বিকাশ ও উন্নয়ন হোক প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। দল - পন্থা নির্বিশেষে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংগঠন এক গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল কাজে দেশের উন্নয়নে দূরদর্শী এবং দায়িত্বশীল হওয়ার সময় এখনই।
     
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন