এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাবরি মসজিদের রাজনীতি 

    Simanta Nandi লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪২২ বার পঠিত
  • আরএসএস তার হাজার রকমের সহযোগী সংগঠন এবং রাজনৈতিক অঙ্গ বিজেপিকে নিয়ে '৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপ ঘিরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদি শিবিরের যে কাঙ্খিত অভিষ্পা ছিল, সেটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে তারা পেয়ে গেছে। গোটা বিশ্বের মতোই, আমাদের দেশ, ভারত যখন কোভিড ১৯ জনিত অতিমারীতে জর্জরিত, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর তথাকথিত রামমন্দিরের ভিত স্থাপন করেছেন। আরএসএসের রাজনৈতিক কর্মসূচি 'সাম্প্রদায়িকতা'-র পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগের পথে এই ভাবে দেশের সরকার আত্মনিয়োগ করেছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর এই তথাকথিত রামমন্দিরের ভিতপুজো আমাদের দেশকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের এক ভয়ঙ্কর যুগের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে।
     
    ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস বা সেই ধ্বংসস্তুপের উপরে মন্দির তৈরি এগুলির কোনোটার সঙ্গেই ধর্ম বা আধ্যাত্মিক চেতনার বিন্দু মাত্র সম্পর্ক কোনো দিন ছিল না। নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন; হিন্দুত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, মুসলিম বিদ্বেষ - এগুলির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাবরি মসজিদকে বোড়ের দান হিশেবে নিয়েছিল আরএসএস, বিশ্বহিন্দুপরিষদ, বজরং দল সহ গোটা সঙ্ঘ পরিবার এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। মসজিদ ধ্বংসের ভিতরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো ধর্মীয় দ্যোতনাই ছিল না। কারণ, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই অপর ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস করে, সেখানে নিজের ধর্মের স্থাপত্য নির্মাণকে সমর্থন করে না। হিন্দুত্ববাদীদের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে একমাত্র কাজ করেছিল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের তাগিদ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী ঘটনাক্রম হিশেবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সাম্প্রদায়িকতাকে হিন্দুত্ববাদীরা এমন একটা স্তরে এনে ফেলতে পেরেছে, যার জেরে পর পর দুইবার, একক গরিষ্ঠতা নিয়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে।
     
    হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এখন লক্ষ্য নির্বাচনের ভিতর দিয়ে যে রাষ্ট্রক্ষমতা তারা লাভ করেছে, সেই ক্ষমতাকে এবার তারা চিরস্থায়ী করতে চায়। সেই লক্ষ্যে এখন তাদের একমাত্র টার্গেট হল, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে অবলুপ্ত করে, তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্রের বিষভারে জর্জরিত একটি সংবিধান কায়েম করা। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক ওই ভিতপুজোর এটিই হল সবথেকে প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক বিন্যাস। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হল আরএসএস-বিজেপির সবথেকে বড় রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। সেই পথেই স্বাধীনতার পর থেকে গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি নিজেদের পরিচালিত করেছে। সেই পথকে আটের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালের শেষ দিক থেকে তারা তীব্রতর করে তোলার রাস্তায় নামে। ইন্দিরার জীবিতাবস্থায় যদি পরবর্তী লোকসভা ভোট হত, তাহলে সেই ভোটেই আরএসএস, তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির সাফল্যের তাগিদে এই বাবরি মসজিদের ইস্যুটিকে তীব্র করে তুলত। কারণ, শ্রীমতী গান্ধীর জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে আরএসএসের শাখা সংগঠন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে যে 'ধর্ম সংসদ' গুলি পরিচালিত হতে শুরু করেছিল, সেখান থেকেই পরবর্তী লোকসভার ভোটে হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িক কৌশল বুঝতে পারা যাচ্ছিল।
     
    শ্রীমতী গান্ধীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সাম্প্রদায়িকতার প্রচার, প্রসার এবং প্রয়োগের ভিতর দিয়ে, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য 'হিন্দু রাষ্ট্র' গঠনের পথকে পরিস্কার করতেই ভীতপুজোর এই রাজনৈতিক সমারোহ। ভিতপুজোর ভিতর দিয়ে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যের পথে লক্ষ্যে গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির নেমেছে, বস্তুত নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসবার পর থেকেই তার প্রেক্ষাপট হিন্দুত্ববাদী শিবির তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যে পরিস্থিতির দিকে গোটা দেশকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির ধীর অথচ তীক্ষ্ণ গতিতে নিয়ে এসে ফেলেছে, তারই ফলশ্রুতি হল - নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
     
    আর এস এসের আদর্শগত ভিত্তি তৈরির অন্যতম ব্যক্তিত্ব এম এস গোলওয়ালকর যে ভাবে তার 'সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে' তত্ত্বের ভিতর দিয়ে দেশকে কেবল মুসলমান শূন্যই নয়, বহুত্ববাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানুষশূন্য করবার ফর্মুলা দিয়েছিলেন, এনআরপি, এমপিআর ইত্যাদির ভিতর দিয়ে সেই ফর্মুলার বাস্তবায়নের পথে ইতিমধ্যেই হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল - ভারতকে আরএসএসীয় হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা। কোনো ধর্মীয় আকুলতা কখনো অপর ধর্মের উপাসনালয়ের ধ্বংসস্তুপের উপর নিজের ধর্মের উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে না। যারা ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার করে দেশকে, গোটা সমাজব্যবস্থাকে মধ্যযুগীয় ক্রুসেডের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, অপর ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস, তাদেরই অভিপ্রায়। আরএসএস-বিজেপি এবং তাদের সঙ্গী সাথীরা, কেবল ভারতকেই নয়, গোটা উপমহাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা 'ক্রুসেডে'-র নতুন করে অবতারণা করতে চায়। তাই বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে, দেশের মানুষকে বিভাজিত করতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তৈরি করেই ক্ষান্ত হয় নি। ধর্মের নামে মানুষের মাথা নিয়ে গেন্ডুয়া খেলার পৈশাচিক অভিপ্রায়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর একটি রাজনৈতিক অভিপ্রায় সিক্ত মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছে, তাদের এককালের হিন্দুত্বের পোষ্টার বয়, তথা দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে।
     
    এই গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যাকে হিন্দুত্ববাদী শিবির ধর্মীয় আবেগ ইত্যাদি শব্দের ভিতর দিয়ে প্রকাশ করতে চাইছে, এসবেরই তাদের সময়োপযোগী লক্ষ্য হল - গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পাওয়া ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। সেই লক্ষ্যের পদক্ষেপই ছিল দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই, লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার অবলুপ্তি। এসবেরই ধারাবাহিক প্রবণতা হল কোভিড ১৯ জনিত অতিমারির ভিতরেও শ্রম আইন শিথিল করা, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন শিথিল করা, কৃষি আইনের সংশোধন। আর এইসব অর্থনৈতিক ব্যাভিচার সম্পর্কে যাতে মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হতে না পারে, প্রতিবাদী না হয়, প্রতিরোধী না হয় - সেই জন্য সংখ্যাগুরুর আধিপত্যকে ধর্মীয় বটিকা হিশেবে মানুষের গলার্ধকরণ করানো।
     
    '৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালে হিন্দুত্ববাদী শক্তি যে জায়গায় ছিল, আজ প্রায় সাত বছর রাষ্ট্র ক্ষমতা এককভাবে দখল করে রাখার পর, তারা কিন্তু আর সেই জায়গাতে নেই। এমন কি অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে, এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোট সরকার চালানোর সময়েও আরএসএস, বিজেপি যে জায়গায় ছিল, এখন আর তারা সেই জায়গাতে নেই। রাষ্ট্রক্ষমতা এককভাবে করায়ত্ত করে বিচার ব্যবস্থার উপরে তারা কতোখানি প্রভাব বিস্তার করেছে -- এটাই এখন দেশবিদেশের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে আসছে। কারণ, মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার অল্প কিছুকাল পরে এনআরসি-র বিরুদ্ধে শাহিনবাগের ঐতিহাসিক আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনকে কেবলমাত্র 'মুসলমান পরিচালিত' আন্দোলন বলে দেগে দিয়েও আন্দোলনের ঝাঁঝ দিল্লি গণহত্যা, অতিমারী, লকডাউনের পরেও নিভিয়ে দিতে পারে নি আরএসএস-বিজেপি। এই অবস্থাতেই বাবরি মসজিদের জমির মালিকানার রায় দিতে গিয়ে, যুক্তি, তথ্য প্রমাণ ব্যাতিরেকে, কিছু লোকের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত হনুমান গড়ির আখরার অধীন 'রামমন্দিরে' র রামলালা', যেটিকে '৪৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদের তালা ভেঙে , সঙ্ঘ কর্মীরা ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তার বলে সাব্যস্ত করেছে।
     
    এই পর্যায়ক্রমটি ভারতের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধর্বংস করবার হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের কোনো অঙ্গ কি না, তা নিয়ে কেবল ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরে যাঁরা মানবাধিকার নিয়ে সরব, সংখ্যালঘুর অধিকার ঘিরে লড়াই করেন, তাঁদের ভিতরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ ধরণের একটা সংশয়ের ভিতরেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাবরি মসজিদের ধ্বংস স্তুপের উপর আরএ এস নিয়ন্ত্রিত হনুমাগড়ি আখড়ার পরিচালনাধীন মন্দিরের ভিত পুজো করেন। তার অল্প কিছুদিনের ভিতরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত যে ফৌজদারি মামলাটি চলছিল, সেটি রায় ঘোষিত হয়। বলা বাহুল্য, এই রায়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী সহ যেসব বিজেপি নেতা এবং আরএসএস, বিশ্ব হিন্দুপরিষদের নেতা মসজিদ ধ্বংসে অভিযুক্ত ছিলেন, প্রত্যেকেই বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। লিবেরাহান কমিশন থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ধরণের মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণকে বিশেষ আদালত ন্যুনতম স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয় না। দেশে এবং বিশ্বে এই প্রশ্নই জোরদার হয়ে ওঠে যে, মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর মন্দির তৈরির ভিত্তি স্থাপন করে যে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের যুগ হিন্দুত্ববাদীরা তৈরি করেছে, তার প্রভাব কি বিচার ব্যবস্থার উপরেও ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করে দিল?
     
    অতিমারি জনিত সঙ্কটে গোটা দেশে অর্থনীতির অবস্থা বেহাল। অর্থনীতিবিদেরা ইতিমধ্যেই বলছেন, ভারতে মন্দা শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে অতিমারির সঙ্কটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষুধার সঙ্কট ঘিরে সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, অতিমারীর পর ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা, অতিমারীর মৃতের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সেই সঙ্কটের ভয়াবহ আভাস আমাদের দেশের সর্বক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বিজেপির শ্রেণিসখ্যতা প্রথম থেকেই যাদের সঙ্গে, সেই মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়ে, মুনাফাখোর, মজুতদার, খাদ্যের চোরাকারবারিরা এই অতিমারির কালে প্রশাসনে নিজেদের লোক থাকার সুবাদে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তাই বাজারে আলু, পেঁয়াজ থেকে ভোজ্য তেল, জীবনদায়ী ওসুধ - সবকিছুর দামই প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বহু ক্ষেত্রেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ খোলা বাজারে অমিল। দুই গুণ, তিন গুণ দাম দিয়ে সেইসব জোগার করতে হচ্ছে চোরা বাজার থেকে। তেতাল্লিশের মন্বন্তর কালে যে ভয়াবহ চিত্রের ইতিহাস আমরা পড়েছি, জয়নুল আবেদিন, চিত্তপ্রসাদের চিত্রমালায় দেখেছি -- তার যেন ধীরে ধীরে আবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলছে। কর্মহীনতা, বেকারি, ব্যাপক ছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের প্রকোপ এতকাল পড়ত কেবলমাত্র নীচুতলার কর্মীদের উপর। এখন বেসরকারি, বহুজাতিক সংস্থায় উঁচু দরের কর্মী, যাঁরা লক্ষাধিক টাকার উপর বেতন পান, তারাও শিকার হচ্ছেন ছাঁটাইয়ের।
     
    কেন্দ্রের বিজেপি বা রাজ্যের তৃণমূল, কোনো সরকারই এসব নিয়ে একটা কথা বলছে না। আরএসএস-বিজেপি বাবরি মসজিদ ভেঙে যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করেছিল, সেই বিভাজনকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভিতরে গেঁথে দিয়ে ভোট রাজনীতিতে বিজেপির সুবিধা করতে সব রকমের চেষ্টা করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের নরম সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতাকে শক্তি যোগাচ্ছে ভাষা-জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার ভিতর দিয়ে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের পর বাঙালি - অবাঙালি বিষয়ের অবতারণা করেছিলেন। এখন বিজেপি র সাংগঠনিক দিক সামলাতে এই রাজ্যে আরএসএস, নিজেদের যে সব প্রচারকদের পাঠাচ্ছে, সেইসব বিজেপি নেতাদের, রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস একটি বারের জন্যেও রাজনৈতিক আক্রমণ করছে না। করছে জাতিগত আক্রমণ। ভাষাগত আক্রমণ। ফলে একদিকে বাঙালি-অবাঙালি বিষয়ের ভিতর দিয়ে বাবরি ধ্বংসের মূল যে রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতার প্রসার, সেই কাজটি আরএসএস-বিজেপি খুব ভালো ভাবেই সফল করতে সচেষ্ট। অপরপক্ষে বিজেপির বিরুদ্ধে একটিও রাজনৈতিক আক্রমণ করছে না তৃণমূল।আরএসএসকে তো তারা ফুলের ঘাও কখনো দেয় নি। বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণের বদলে, তাদের বিরুদ্ধে জাতি, ভাষাগত বৈষম্যের কথা বলে যে বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী শক্তি, সেই নষ্ট চেতনাকেই মদত দিচ্ছে তৃণমূল বাঙালি শ্যভিনিজিমের নাম করে আঞ্চলিকতাবাদের প্রসারের ভিতর দিয়ে। নরেন্দ্র মোদি 'এক দেশ, এক ভোটে' -র ডাক দিয়ে দেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামো বদলে দিয়ে, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙার রাজনৈতিক অভিলাষ, হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আর বাংলায় বাঙালি ছাড়া কেউ রাজনীতি করতে পারবে না, এই ঘোরতর আঞ্চলিকতাবাদী মানসিকতার প্রসার কৌশলে ছড়িয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য, আরএসএস-বিজেপির ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং সেই ধ্বংসস্তুপের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রাধীন তথাকথিত মন্দির তৈরির আসল রাজনীতিকে সফল করা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন