একইসাথে এই ঘটনার প্রবল অভিঘাত আমাকে যেমন প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল, আমি যৌন প্রবণতার বিভিন্ন যে রূপ, স্বরগুলি সম্বন্ধে সচেতন ও হয়ে উঠেছিলাম ধীরে ধীরে, কলেজে উঠে মনের পরিণতি ঘটেছিল, কলকাতার নাগরিক সুসংস্কৃত পরিবেশে ধীরে ধীরে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই মেলামেশা, বন্ধুত্ব, বই পড়া কিছুটা আগ্রহ, ঔৎসুক্য আর অনেকটাই অনুশোচনার বশে-এগুলোর মাধ্যমে জেনেছিলাম অনেক কিছু, অনুভব করেছিলাম অনেক এমন অনুভূতি ও উপলব্ধি যেগুলো ক্ষুদ্র পরিসরে আমার পক্ষে, মফস্বলী সমাজের সংকীর্ণ বিচারবুদ্ধির গন্ডিতে, বোঝা সম্ভব হয়নি। আমার ভেতরের বাই-কিউরিয়াস সত্তার অস্ত্বিত্বকেও অনুভব করি কলকাতায় চলে আসার পরেই, তখন অনেকদিন হয়ে গেছে।
তখন নতুন করে লজ্জা হয়েছিল, ভয় লেগেছিল, ধিক্কার দিয়েছি নিজেকে বারংবার, ক্ষমা চেয়েছিলাম- কার কাছে জানি না, কিন্তু নিজের মিথ্যা জানার, সীমিত খর্ব জ্ঞানের গর্বটা ধূলিসাৎ হয়ে গেছিল.....কিন্তু আফশোস হয় এই ভেবে যে, আমার চোখ খোলার জন্য বড়ো বেশি মূল্য দিতে হয়েছিলো তোকে আর আমারও।
...........
বসে বসে ঘোর এসে গেছিল, স্কুলের সামনের আমরুল গাছের বাঁধানো বেদিটাতে, কতো পুরনো ভাবনা আর অপরাধবোধ....এইসব গ্লানি কি কোনদিনও পিছু ছাড়বে না, এভাবেই ভার বয়ে নিয়ে যাব, এখনো যেন মনে হচ্ছে মোড় ঘুরলেই দেখব.....কোনো ভালো থেরাপিস্টের কাছে সত্যিই যাওয়া দরকার, সু ও বলেছে কতোবার, আর ওকেও এবার আনতে হবে এই বাড়িতে। বাড়ি ফিরি এখন, কাল চলে যেতে হবে, সু একা আছে, চিন্তা করবে খুব। অফিসেও ছুটি নেই।
সুনীত, আমায় ক্ষমা করিস, আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দিস, সরি, আমি ভুল করেছিলাম, এতো তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলি তুই, এতো অভিমান ছিল তোর, এত্তো অভিমান, এতো কেন কষ্ট দিস আমায়?
গলার কাছে কতো কথা জট পাকাচ্ছে, ঠোঁটে নোনতা চটচটে স্বাদ, গালের উপর গরম জলের আভাস যেন নামছে ধীরে।
সুনীত, সুনীত, তুই শুনতে পাচ্ছিস? যদি শুনিস, তবে জেনে রাখিস সন্তু, আমি তোর বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি রে, আমি ভুল করেছিলাম, আমায় ক্ষমা করিস রে।
ফাঁকা রাস্তায় শুকনো উত্তুরে হাওয়া এল একঝলক, কটা পাতা খসে পড়লো শুকনো, শীত আসছে।
||সুমেধ||আজ আমরা চন্দননগর এসেছি দুজনে, সাজ এর বাড়িতে যাব, ওর মণিমা ডেকেছেন আমাদের দুজনকে একসাথে, ফোনে কথা হবার পর। মাথার ওপর ডিসেম্বরের শান্ত উজ্জ্বল নীল আকাশ কার প্রসন্ন আঁখিপাতের মতোই সুন্দর, একঝাঁক ব্রাহ্মণী হাঁস উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে। আজ আমরা অনেক জায়গায় ঘুরব, মণিমার সাথে দেখা করব, স্ট্র্যান্ডে যাব, শতদ্রুর স্কুল দেখব- হাজার হোক, আমার শ্বশুরবাড়ির শহর!!
সাজ নিজেই এসে বলার পর আমি আর ও, দু'জনে মিলে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে গেছিলাম, সেখানেই সাজের মুখে শুনলাম সুনীতদার ট্র্যাজেডিটার কথা, বুঝতেও পারিনি যে ও এতো কষ্ট এতো বছর ধরে বুকের মধ্যে চেপে রেখে দিয়েছে, আহা!
ডক কিছু মিল্ড সিডেটিভ ও স্ট্রেস রিলিভারের কথা বলেছেন প্রয়োজন পড়লে খেতে, আর এই যে অপরাধবোধ, অনুশোচনা তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান ওষুধ- কমিউনিকেশন, শেয়ারিং এন্ড কেয়ারিং, সে কথাই বলেছেন। এখনো পর্যন্ত চারটে সেশন হয়েছে কাউন্সেলিং এর এবং বলতে নেই, ফল যথেষ্ট সদর্থক, আগের তুলনায় এখন শতদ্রু অনেক হাসিখুশি থাকে, অনেক সজীব দেখায় ওর চোখমুখ, সেই গ্লানির ভারটা যেন কিছুটা হলেও কেটেছে, আর দুঃস্বপ্ন ও আসে না রাতের বেলা, গাঢ় ঘুম হয় দুজনেরই। আমরাও দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাকি জীবনটা একসাথেই কাটিয়ে দেবার, তাই জানাতেই আজ এখানে আসা, হয়তো একদিন আমার মামণি, বাবাকেও আমি জানাতে পারব সাজের কথা, ওঁদের মুখোমুখি দুজনে দাঁড়িয়ে।আপাতত আমি শতদ্রুর হাতটা শক্ত করে ধরলাম, চেপে ধরে রেখেছি হাতের মুঠো, ডালিয়া ফুটেছে রাস্তার ধারে কারোর বাগানে, দোকানপাট খুলে গেছে অনেকই, বর্ধিষ্ণু মফস্বলের জমজমাট জীবনযাত্রা,লেবুরঙা রোদে সুবাস ছড়াচ্ছে আতপ্ত জীবন।
ভালো থেকো সুনীতদা, যেখানেই আছো ভালো থেকো।
[ভেবেছিলাম ছোটগল্প লিখব, এই পুজোর মধ্যেই প্লটটা মাথায় এলো, খুব নতুনত্ব হয়তো নেই, জানিনা, এই প্লটের উপর বেস করে একটা বড়ো ইংলিশে বিএল নভেল লেখার ইচ্ছে আছে ওয়াটপ্যাডে, কিন্তু তার আগে একবার বাংলায় গল্প আকারে লিখে দেখলাম, বড়োগল্পের মতোই হয়ে গেল, কেমন হয়েছে সবাই পড়ে, যদি অভিমত জানানোর থাকে, অবশ্যই জানাবেন, ভালো-খারাপ সবরকম যুক্তিগ্রাহ্য সমালোচনাই স্বাগত, আর গালাগাল দিতে হলে বা আলোচনা করতে হলে বা এমনিই যোগাযোগ করতে হলে ইমেল তো আছেই :-
[email protected] : )))।
ভালো থেকো/থাকবেন/থাকিস সকলে।
বাসুদেবম সর্বম।।]