এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দত্ত জুয়েলার্স - ৯ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ২৯৭ বার পঠিত
  • সন্ধে সাতটা বাজে । বিদ্যুৎ তরফদারের কাছে প্রিয়দর্শিনীর আজব কিস্যা বর্ণনা করছিল কলতান  বউবাজার থানায় বসে । নেকলেসটাও থানার জিম্মায় জমা করে দিল সে । এখন পুলিশের দায়িত্ব যথাযথ জায়গায় এটা হস্তান্তর করার । প্রয়োজন হলে তারা প্রিয়দর্শিনীকে এবং সতীনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে । কলতান বলল, ' প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পার, সে ওদের মুখোমুখি বসে বয়ান দেবার জন্যই হোক বা লিখিত বয়ান দেবার জন্যই হোক ... লিগ্যাল কোন লুপহোল না থাকে ... '
    ----- ' আরে দূর ... ছাড় তো ... তোমাকে ডিপার্টমেন্টে কে না চেনে ... এর জন্য আবার ডিপোজিশান লাগবে ? এখন আইটেম তো 
    বউবাজার থানার কাস্টডিতে । আইটেম হ্যান্ড ওভার করার ভার আমি নিলাম । দত্ত  জুয়েলার্সের খোদ বড়কর্তাকে ডেকে পাঠাব । ওসব সতীনাথ টতীনাথের চক্করে আমি নেই । ওর নামে কেসটা অবশ্য ফাইল করাতে হবে পশুপতি দত্তকে দিয়ে । তা যদি না হয় প্রিয়দর্শিনী দেবীকে ডাকতে হবে । তোমার  কাছে তখন বয়ান দিয়েছে , থানাতেও বয়ান দিতে তার আপত্তি থাকার কথা নয় । ইন কেস সেও যদি ব্যাক আউট করে আমরা সুও মোটু কেস রেজিস্টার করব । সতীনাথ দত্তর এফ আই আর বাই ডিফল্ট নালিফায়েড হয়ে যাবে ।
    যে কমপ্লেন্যান্ট সে নিজেই যদি সাসপেক্টেড অফেন্ডার  হয় .... নো প্রবলেম অ্যট অল ।
    যাক..... এখন আসল কথায় আসা যাক । মহুয়া মিত্রের ডেথ কেসটার ব্যাপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করছ নাকি .... মানে কেসটা নেবে কি  নেবে না সে ব্যাপারে কিছু ভাবলে ? ' 
    ----- ' হমম্ .... কেসটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং। কিন্তু আমাকে অ্যপয়েন্ট করবে কে ? আমি তো আর তোমাদের মতো সুও মোটু নাক গলাতে পারিনা ... '
    ----- ' তুমি করতে চাও কি চাও না সেটা বল ... বাকি দায়িত্ব আমার ... '
    ----- ' হ্যা... দেখ ... দেখ ... '
    ----- ' দারুন ...ডান ... '
    তারপর মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বলল, 
    ' লেক থানার পার্থসারথি চক্রবর্তীকে ধরছি .... ও তোমার আনঅফিসিয়াল অ্যসাইনমেন্টের ব্যাপারটা অ্যপ্রোপ্রিয়েট অথরিটিকে জানিয়ে দেবে ... নো প্রবলেম ... ' 
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... ফর্ম্যালিটি কমপ্লিট কর তুমি । আমাকে স্পটটা একবার দেখতে হবে । আমি মহুয়া মিত্রের ফ্ল্যাটে ঢুকিনি এখনও । লেক থানা থেকে ফ্ল্যাট সিল করা হয়েছে নিশ্চয়ই ? '
    ----- ' শিওর শিওর ... খবর নিয়েছি পার্থর কাছে ... '
    ----- ' সতীনাথ  কাল যদি নিউ হরাইজনে গিয়ে থাকে , কখন ঢুকেছিল এবং কখন বেরিয়েছিল সবার আগে সেটা জানার দরকার ... আচ্ছা আমি উঠি এখন .... কাল সকাল থেকে কাজ শুরু করব ..... সবার আগে পোস্ট মর্টেম  রিপোর্টটা জানার দরকার .... '
    ----- ' ওকে ওকে ... পার্থকে সব বলা আছে আমার । তবু তুমি একবার গিয়ে দেখা করলে ভাল হয় । '
    ----- ' হ্যা... নিশ্চয়ই করব ... ' 
    কলতান থানা থেকে বেরিয়ে যায় । 

        সকাল সাড়ে নটা নাগাদ লেক থানার ওসি পার্থসারথি চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে নিউ হরাইজনে হাজির হল কলতান । পার্থবাবু সঙ্গে এলেন কারণ ঘরের সিল খোলার দরকার । কলতানের সঙ্গে কলকাতার কোন পুলিশ অফিসারের কোন রেষারেষি নেই , যে ধরণের ব্যাপার বাংলা গল্প উপন্যাসে পড়া যায় । 
     
        থ্রি বি এইচ কে ফ্ল্যাট । দরজা খুলে ঢুকে ডাই নি কাম ড্রইং রুম । তারপর বাঁ দিকে গেলে তিনটে বেডরুম । দুপাশে দুটো বাথরুম আছে । একপাশে বাথরুমের পাশে কিচেন ।  দুজন কনস্টেবল বাইরে দাঁড়িয়ে রইল । কলতান আর ওসি পার্থসারথি ভিতরে ঢুকল । ভিতরে লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হল । জানলা গুলো বন্ধই রইল। 
    কলতান দরজা দিয়ে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ল । তার গোয়েন্দা সত্ত্বা কাজ শুরু করে দিল । সামনে সোজা গেলে একটা জানলা । তার আগে একটা ডিম্বাকৃতি ডাইনইং টেবিল । ঘুরতে ঘুরতে  টেবিলের চারদিকের মেঝেতে নজর বোলাতে লাগল কলতান । 
    একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল সে । ফ্লোর টাইলসে শুকিয়ে যাওয়া ঝোলের দাগ । সাদাটে পলিথিনের টেবল ক্লথের ওপরেও টেবিলের ওই  জায়গাতেই ঝোলের দাগ দেখা গেল । কলতানের মনে হল, মাংসের ঝোল । খেতে গিয়ে কিংবা পরিবেশন করতে গিয়ে অসাবধানে পড়েছে । কলতান অনুমান করল খুব বাসি দাগ নয় । মোটামুটি টাটকা । খুব সম্ভবত কাল রাত্রেই এখানে বসে খাওয়া দাওয়া করা হয়েছে।  
    দেয়ালে একটা জমকালো ঘড়ি লাগানো রয়েছে । কিন্তু ঘড়ির কাঁটা নিশ্চল । বোধহয় ব্যাটারি শেষ । ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে নটা সাঁইত্রিশ । সকাল না রাত্তিরের সময় বোঝার কোন উপায় নেই ।   
    ঘরে একটা দামি সোফা রয়েছে । সোফার ওপর  তিনটে কুশন রয়েছে এলোমেলো ছড়ানো ছেটানো অবস্থায় । সোফার কাছে গিয়ে কলতান নীচু হয়ে আগাগোড়া চোখ বোলাতে লাগল খুব মনোযোগ দিয়ে । কমলা রঙের সোফা । একপাশে গুটিয়ে সুটিয়ে পড়ে আছে কটা লম্বা চুল । কোন মহিলার চুল সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই । সোফাটার মাঝামাঝি জায়গায় শুকিয়ে আবছা চুনের দাগ দেখা গেল দু এক ফোঁটা । কলতান বুঝতে পারল ওটা মোটেই  চুনের দাগ নয়  ।  তবে ওতে ক্যালসিয়াম আছে অবশ্যই । এ দাগও টাটকা । নিশ্চিতভাবেই কাল রাত্রের । ওসি পার্থসারথিবাবু দিব্যি কলতানের ওপর সব ছেড়ে দিয়ে দু পা ছড়িয়ে একটা রকিং চেয়ারে বসে দোল খেতে লাগলেন। কলতান সোফাটার ধারে উবু হয়ে বসলো । নাকে এসে ঢুকল পারফিউমের হাল্কা মিস্টি গন্ধ । কলতান ক'বার জোরে শ্বাস টানল।  
    কলতান বলল, ' মিস্টার চক্রবর্তী..... কাল সতীনাথ দত্ত ফ্ল্যাটে ক'টায় ঢুকেছিল , ক'টায়   বেরিয়েছিল রেকর্ড করা হয়েছে ? '
    ----- ' হ্যা হ্যা... এই তো ... দুপুর দুটো বত্রিশে এন্ট্রি , নটা চল্লিশে এক্জিট .... অ্যজ পার অ্যপার্টমেন্ট রেজিস্টার অফ কোর্স .... '
    ----- ' এমন কেউ আছে যে সতীনাথবাবু বেরিয়ে যাবার পর মহুয়া মিত্রকে দরজা বন্ধ করতে দেখেছে .... মিস্টার চক্রবর্তী ? '
    ----- ' সেটা বলতে পারব না .... আচ্ছা দেখছি এনকোয়্যারি করে ... '
    ----- ' হ্যা .... এটা একটু দেখুন প্লিজ .... এই কেসে এটা মোস্ট ইম্পর্টান্ট ফ্যাক্টর .... '
    ---- ' হমম্  ... '
    ----- ' আচ্ছা চলুন এবার ভিতরে বেডরুমে যাওয়া যাক আমাদের কেরামতির আসল পরীক্ষা সেখানেই হবে ... ' 
    ----- ' হ্যা.... চলুন মিস্টার গুপ্ত ... '   

         ভিতরে তিনটে ঘর ঘুরে দেখল । দুটো ঘরের খাটে বিছানা বালিশ একদম ছিমছাম পরিপাটি অবস্থায় আছে । তৃতীয়  ঘরটায় ওই একই রকম মিস্টি পারফিউমের হালকা গন্ধ পেল কলতান । পার্থবাবু পেলেন কিনা ঠিক বোঝা গেল না । পারফিউমের গন্ধটা দুদিন সময় পেয়েও পালাতে পারেনি , ঘরের দরজা জানলা বন্ধ থাকায় । বদ্ধ ঘরের আটকা হাওয়ায় ঘুরে মরছে শরীরি কামনা মাখা সুরভি ।
    এই ঘর থেকেই পুলিশ উদ্ধার করেছে মহুয়া মিত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ । ঘরের বেডকভার তোলা । বিছানার চাদরও এলোমেলো । বোঝা যাচ্ছে  বিছানা ব্যবহার করা হয়েছে । কলতান ঘাড় নীচু করে বিছানার দিকে সন্ধানী চোখ মেলে বিছানার চারদিকে ঘুরতে লাগল । এখানে কোন ক্ষারবিন্দু চিহ্ন চোখে পড়ল না ।কর্ম যা হবার সোফার গদিতেই হয়েছে । কলতানের চোখ হঠাৎ চকচক করে উঠল। 
    তার চোখ আটকে গেল একটা বোতল সবুজ রঙের বোতামে । বিছানার ওপর সিলিং ফ্যানের ঠিক নীচে পড়ে আছে । কলতান তার সাইড  ব্যাগ খুলে একটা টিস্যু পেপার বার করে  বোতামটা মুড়ে সাইড ব্যাগে রাখল । 
      ঘরের সিলিং বেশি উঁচুতে নয় । খাটের ওপর একটা টুল রেখে দাঁড়ালে একজন মাঝারি উচ্চতার মানুষের পক্ষে সিলিং ফ্যানে দড়ি বা বা অন্য কিছু বাঁধা কঠিন কাজ নয় । ঝুলন্ত অবস্থায় মহুয়ার গলায় একটা সূতির শাড়ির ফাঁস ছিল । পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে গলায় 
     ' ব্রুইজ মার্ক' -এর ধরণ সম্বন্ধে কি রিপোর্ট দেয় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে , সুইসাইড না হোমিসাইড ... । 
        পার্থবাবু ফ্ল্যাটের দরজার বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন । এসব উটকো ঝামেলা তার ভাল লাগে না । কেসটা ঘাড় থেকে নামলে বাঁচেন তিনি । এই বেসরকারি ভদ্রলোকের
     এত যখন উৎসাহ তিনিই হ্যাপা ঘাড়ে নিন না । কলতান ওদিকে ঘাড় নীচু করে মেঝের দিকে  তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল মহুয়া মিত্রের মৃত্যুটা সেদিন দুপুর দুটো বত্রিশ থেকে রাত নটা চল্লিশের মধ্যে হয়েছিল কি হয়নি সেই উত্তরের মধ্যে লুকিয়ে আছে এ মৃত্যরহস্যের চাবিকাঠি । তাছাড়া নিশ্চিত হওয়ার জন্য , আর একটা জিনিস জানা খুব দরকার ---- সতীনাথ দত্ত বা অন্য কাউকে পরশু রাত্রে কেউ মহুয়া মিত্রের ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে স্বচক্ষে দেখেছে কিনা । 
     
         কলতান বাইরে বেরিয়ে এল । পার্থসারথি বাবু সিগারেটে শেষ টানটা মেরে নীচে ফেলে 
    পা দিয়ে চেপে দিলেন । কলতান বলল, ' ঘর সিল করে দিন .... চলুন নীচে যাই .... ' 
    ----- ' হ্যা ... চলুন ।  মনোজ ... ঘর বন্ধ কর ... '
    কনস্টেবল দুজন গেল ঘরে তালা লাগাতে । 
    নীচে নামতে নামতে কলতান পার্থসারথিকে বলল, ' চলুন সিকিউরিটি কিয়স্কে যাই ... ওদের কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে... '
     ---- ' হ্যা  চলুন ... '  
    ----- ' আর একটা কাজ করতে হবে  ইমিডিয়েটলি .... একবার ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্টে খবর পাঠান । সোফায় সিমেন স্টেনের স্যাম্পেল নিতে হবে । এটা খুব জরুরী ।সিমেন ইজাকুলেশানের নিয়ারেস্ট পসিবল টাইম এবং স্যাম্পেলের  ডি এন এ রিপোর্ট   আর্জেন্টলি দরকার । দিস ইজ গোয়িং টু বি দা মোস্ট ইম্পর্টান্ট ক্লু মিস্টার চক্রবর্তী ।  তাছাড়া আর একটা ফরেন্সিক রিপোর্টও চাই .... টেবল কভার এবং ফ্লোরে মাংসের ঝোলের দাগের টাইমটা । মোস্ট প্রেসাইজ টাইম অব অকারেন্স পেলে সুবিধে হয় । 
     

        নীচে কিয়স্কের পাশে কতকগুলো চেয়ার রাখা আছে । তার একটাতে দেখা গেল সুনীল ধাড়া বসে আছে । সুনীল ধাড়া মানে, সেই যে ... প্রথম দিন কলতান এখানে এসে যার কাছ থেকে টাকা পয়সা দিয়ে সন্তুষ্ট করে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল । 
    সুনীল খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিল । পুলিশের লোক দেখে কাগজ রেখে উঠে দাঁড়াল সে । থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কলতানকে দেখে সে একটু চমকে গেলেও সে খুব অবাক  হয়নি । সে সেদিনই  আন্দাজ করতে পেরেছিল যে কলতানের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ আছে।
    কলতান সুনীলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
     ' কি ... ভাল আছ তো ? ' 
    ----- ' আপনি এখানে স্যার ! ' 
    ----- ' এ..ই আসতে হল ... তোমরা কি সব ঝঞ্ঝাট পাকিয়ে রেখেছ ... হ্যা ... তোমার নামটা কি যেন ? '
    ------ ' সুনীল স্যার... সুনীল ধাড়া । '
    ----- ' ও আচ্ছা ... ' 
    কলতান পার্থসারথির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মৃদুস্বরে বলল , ' আমি এর সঙ্গে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই ... ' 
    পার্থবাবু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন  । বললেন, '  শিওর ...শিওর .... আপনি কথা বলুন ... আমি ততক্ষণ ব্যাক সাইডটা রাউন্ড মেরে আসি ... '
     কলতান বলল, ' আরে বস বস ... দাঁড়িয়ে আছে কেন ? '
    সুনীল ধাড়া কলতানের সামনাসামনি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল ।
    ----- ' আচ্ছা সুনীল প্রথমে বল ... পরশুদিন দুপুর আড়াইটে থেকে রাত নটা চল্লিশের মধ্যে তোমাদের মধ্যে কার ডিউটি ছিল  ? '
    ----- ' দুটো থেকে রাত নটা পর্যন্ত নরেন আর সুজন ছিল । আর রাত নটা থেকে হোল নাইট ডিউটি ছিল আমার আর বিদ্যানন্দর । '
    ----- ' আচ্ছা ... একটা কথা বল তো সতীনাথবাবু বেরিয়ে যাবার পর আর কেউ কি ফাইভ সি-তে এসেছিল ... মহুয়া মিত্রের সঙ্গে দেখা করতে বা কোন কিছু ডেলিভারি দিতে ? '
    ----- ' না আর তো কেউ আসেনি ... আমি তো এখানেই ছিলাম সারাক্ষণ .... '
    বিদ্যানন্দ সাউও জানাল যে সেও কাউকে আসতে দেখেনি । 
    ----- ' এন্ট্রি রেজিস্টারটা একটু দেখাও তো .... '
    সুনীল ধাড়া রেজিস্টার বার করে সেদিনের এন্ট্রির পাতাটা খুলে ধরল । তারিখ,  প্রবেশকারির নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর , বাঞ্ছিত মানুষের নাম , ফ্ল্যাট নং, ঢোকার সময় এবং সাক্ষর  রয়েছে বিভিন্ন কলামে । কলতান মোবাইল বার করে  সতীনাথ দত্তর নাম এবং এবং তার আগে পিছে দু একটা এন্ট্রির তিন চারটে ছবি নিল নানাভাবে  । তারপর বলল 
    ------ ' হুঁ... আচ্ছা ঠিক আছে । আমি চলি এখন .... পরে দরকার পড়লে তোমাদের সঙ্গে 
    আবার কথা বলব .... ' 
    ----- ' ঠিক আছে স্যার .... আমরা গরীব মানুষ ... আমাদের দিকটাও একটু দেখবেন ... '
    কলতান প্রথমে ঠিক ধরতে পারে না । সুনীল ধাড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । সুনীলকে দাঁত বার করে বিগলিত বদনে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরল ব্যাপারটা বুঝে নিল । 
    ----- ' আরে হ্যা হ্যা .... ও নিয়ে চিন্তা করো না । ঠিক সময়ে পাবে ... ভালভাবে ওয়াচ রেখ ...'
    ----- ' হ্যা স্যার ... কোন অসুবিধে হবে না ... আমরা দুজন আছি ... '
    এই সময়ে সুনীলের মোবাইলে একটা কল এল।
    সুনীল ফোন কানে লাগিয়ে বলল, '  ও আচ্ছা .... যাচ্ছি যাচ্ছি ... '
    কলতানকে বলল, ' আমি যাচ্ছি স্যার ... অফিসে ডাকছে ... ' 
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে .... এস ... '
    সুনীল ধাড়া অফিসঘরের দিকে চলে গেল । কলতানের চোখে পড়ল সুনীলের হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে । মনে হচ্ছে , একটা পায়ে কোনভাবে চোট লেগেছে । ডাক্তার দেখিয়েছে কিনা কে জানে । 

    কলতান গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়াল ।  পার্থসারথিবাবু হেলেদুলে বিল্ডিং- এর পিছনে দিক থেকে কলতানের দিকে আসছে । 
    ----- ' ওদিকটা দেখলেন ? কিছু চোখে পড়ল ? '
    ----- ' না : ... তেমন তো কিছু চোখে পড়ল না । তবে, ফার্স্ট ফ্লোরে এই ফ্ল্যাটটার ঠিক নীচে কিছু বোতল ভাঙা কাঁচের টুকরো পড়ে আছে ... ওয়াইনের বোতল মনে হল .... '
    ------ ' তাই নাকি ! ওখানে ... মানে, পিছন দিকে তো বাথরুম .... তার নীচেই ... কই চলুন তো দেখি ... '
    কলতান ওখানে গিয়ে দেখল মদের বোতলের  ভাঙা টুকরো পড়ে রয়েছে । সাইড ব্যাগ থেকে 
    একটা কাপড়ের টুকরো বার করে রুমাল দিয়ে  ধরে কয়েকটা টুকরো সাবধানে তুলে নিল তাতে । মুড়ে ব্যাগের ভিতর রাখল । বিল্ডিং-এর পিছন দিকটা ঘাস, আগাছায় ভরা এবং নির্জন। এ দিকটা কেউ আসে না । 
    কলতান ওপর দিকে মুখ তুলে দেখল বাথরুমের পিছনের জানলায় ঘসা কাঁচের স্লাইডিঙ শার্টার। কোন গ্রিল বা রড নেই । একজন ছোটখাটো চেহারার মানুষের পক্ষে শরীর গলিয়ে দেওয়া সম্ভব । মাটি থেকে জানলার উচ্চতা অন্তত চোদ্দ ফুট । একজন শারীরিক নমনীয়তা এবং প্রতিবর্তীক্রিয়াসম্পন্ন মানুষের পক্ষে ওখান থেকে লাফ দিয়ে নামা কোন অসম্ভব কাজ নয় ।  
    কলতানের মনে ঝট করে একটা ঝাঁকুনি লাগল। 
    ----- ' আরে পার্থবাবু ... একটা বিরাট ভুল হয়ে গেছে । আর একবার ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে হবে ... চলুন তো .... বাথরুমটা দেখা হয়নি ... '

      আবার দরজা খোলা হল । কলতান ঘরে ঢুকে বাথরুমের দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকল । পিছনের জানলার কাছে গেল । ঘসা কাঁচের শার্টার একপাশে সরানো । জানলা খোলা । যা ফাঁক আছে , একটা ছোটখাটো চেহারার গলে যেতে পারে । জানলার কার্নিশে আর তার ঠিক নীচের মেঝেতে সন্ধানী চোখ বোলাতে লাগল কলতান । জানলার ঠিক নীচে কলতানের চোখ আটকে গেল । পড়ে রয়েছে একটা বটল গ্রীন রঙের ছোট বোতাম । একটা টিস্যু পেপার দিয়ে 
    তুলে নিল কলতান । জানলার ঠিক নীচে একটা প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু টুল উল্টে পড়ে আছে । 
    বেরোবার সময় বাইরের ঘরে ডাইনিঙ টেবিলের পাশের দেয়ালে লাগানো ঘড়িটার দিকে  তাকিয়ে দেখল । নটা সাঁইত্রিশে কাঁটা দুটো আটকে রয়েছে । রাত নটা সাঁইত্রিশ, না সকাল নটা সাঁইত্রিশ কে জানে । এ ঘড়িটায় ডেট দেখায় । কলতান খুব কাছে গিয়ে দেখল পঁচিশে এপ্রিল । মানে, মহুয়া মিত্রের মৃত্যুর দিন। 
    কলতান বলল, ' একটু দাঁড়ান পার্থবাবু ....'
    বলে জুতো খুলে একটা চেয়ারের ওপর উঠে ঘড়িটা দেয়াল থেকে খুলে আনল । পিছন দিকে ঘুরিয়ে দেখল ঘড়ির ব্যাটারিটা খুলে নেওয়া হয়েছে । সহজ হিসেব বলে, ব্যাটারিটা খোলা হয়েছে নটা সাঁইত্রিশে ।  
    কলতান বলল, ' হ্যা ... চলুন এবার ... '  

       পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট তাড়াতাড়িই পাওয়া গেল । ছড়ানো ব্রুইজ মার্ক দেখে হোমিসাইডের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে । সুইসাইড ঘটলে গলার ওপর ঘসটানি চিহ্ন গলার মাঝ বরাবর পাওয়া যায় । স্টম্যাকে ফুড এবং অ্যলকোহল দুটোই পাওয়া গেছে । মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে রতিক্রিয়ার স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে ফরেনসিক পর্যবেক্ষণে ।  একটা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য অবশ্য এখনও আসেনি । সেটা হল স্ট্র্যাঙ্গুলেশানের মোটামুটি সঠিক সময়টা জানা । বোধহয় দুদিন অপেক্ষা করতে হবে সেটার জন্য । 
      
        কলতান পার্থসারথিকে বলল, ' কাল সকালে একবার বালীগঞ্জে সতীনাথবাবুদের বাড়ি  যাওয়ার দরকার । আপনি একটা ফোন করে রাখতে পারেন ....  সবাই যেন বাড়ি থাকে .... এমনকি কমলা এবং বীরবাহাদুরও যেন থাকে । আর এই কাঁচের টুকরোগুলো.... আচ্ছা ঠিক আছে এগুলো আমার কাছেই থাক ... ঠিক আছে , ওই কথাই রইল । আমি সকাল  এগারোটা নাগাদ ওখানে পৌঁছে যাব। আপনারাও ওই সময়ে ওখানে চলে যাবেন আলাদাভাবে ..... ঠিক আছে ? আসছি তা'লে  ... '
        কলতান তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে পড়ে । হাতে সময় কম । তাকে এখন যেতে হবে সুকিয়া স্ট্রীটে এপকন স্যাম্পেল টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ।
        (ক্রমশঃ)  
    ***********  *********** ************ *****
       
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন