এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অনন্যা নারী

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুন ২০২২ | ৪৮৪ বার পঠিত
  • পর্ব ৭ 

    জয়িতা তুতুলের কপালে হাত দিয়ে উষ্ণতা মাপার চেষ্টা করলো। তুতুল জ্বরের ঘোরে চোখ বন্ধ করে আছে। কোল থেকে নামালেই কাঁদছে। জয়িতা অসহায় ভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ঘড়ির দিকে একবার তাকাচ্ছে, একবার মেয়ের দিকে। অর্ণবকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে, পায় নি। অর্ণব গেছে স্ট্যানফোর্ডে সেমিনারে। গতকাল অর্ণব বেড়িয়ে যাবার সময় তুতুল ভালোই ছিলো। আজ সকাল থেকে অল্প গা গরম। জয়িতা ভেবেছিলো সেরে যাবে। মেয়ের এরকম প্রায়ই হয়। কিন্তু বেলা যত বেড়েছে তুতুলের জ্বরও বেড়েছে। মেয়ে কেমন যেন ঝিমিয়ে গেছে। জয়িতা দেরি করে নি। মেয়েকে নিয়ে সোজা চলে এসেছে ডাক্তারের কাছে।

    ক্লিনিকে অল্প ভিড় আছে। কয়েকজন মা বাবা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে অপেক্ষা করছে। বেশির ভাগ আফ্রিকান আমেরিকান। একবছর হতে চলল জয়িতারা কলম্বিয়া স্টেটে শিফট করেছে। অর্ণব এখানকার ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে  জয়েন করেছে। এই এলাকাটায় আফ্রিকান আমেরিকান বেশি। জয়িতা প্রথম প্রথম একটু ভয়েই ছিলো। পরে বুঝেছে এরা নিজেদের নিয়ে থাকে। বিশেষ কারো বিষয়ে অযথা নাক গলায় না। জয়িতাদের এক প্রতিবেশী কাথি, তার বর আর তিন বাচ্চাও এদেরই স্বাজাতি। ক্যাথির সাথে জয়িতার ভাবও হয়েছে।

    এই ক্লিনিকটা জয়িতাদের নতুন বাড়ির কাছেই। জয়িতা ম্যাপ দেখে গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছে। অর্ণব আসবে কাল। জয়িতা রিস্ক নিতে পারে নি।  তুতুলের বয়েস দেড়বছর হতে চলল। আধো আধো কথা বলতে শিখেছে। তার মধ্যে বাবা বেশি বলে। ভালো করে হাঁটতে শেখেনি। একটু হেঁটেই ধপ করে বসে পড়ে। মেয়ের পিছনে জয়িতার বেশির ভাগ সময়টা চলে যায়। বোস্টনে জয়িতার কাছে ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ার ডাক এসেছিল। কিন্তু অর্ণবের জব নতুন জায়গায়। জয়িতার আর নিজের বিষয়ে ভাবার সুযোগ হয়নি। অর্ণব অনেক পরে জানতে পেরেছিল।  জয়িতাকে বলেছিল “আমার জন্যই তোমার ভবিষ্যতটা ঠিক হল না”। জয়িতা কিছু উত্তর করতে পারে নি। নিজের ভাগ্য ছাড়া আর কাকেই বা এর জন্য দায়ী করবে। তবে মনের আক্ষেপটা মাঝে মাঝে টের পায়। কি জানি তার পর থেকেই অর্ণবের প্রতি একটা অভিমান যেন তার মনে গড়ে উঠেছে। সামান্য বিষয়েও সেটা জেগে ওঠে। তুতুলের জ্বর নিয়েও আজ অর্ণবের ওপর চাপা অভিমানে মনটা ভার হয়ে আছে। কেন জানিনা শুধু মনে হচ্ছে অর্ণব যেন স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের ক্যারিয়ার ছাড়া আর কোন কিছুকে প্রাধান্য দেয় না। তুতুলের সব দায় যেন তার একার।

    ডাক্তার ভাইরাল ফিভারের কিছু মেডিসিন দিলেন। সব কিছু সেরে জয়িতা যখন বাড়ি ফিরল তখন বিকেল প্রায়। তুতুল খেতে চাইছিল না। জোর করে জয়িতা খাইয়ে দিল। ওষুধও খাইয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর তুতুল ঘুমিয়ে গেল। জয়িতা মেয়েকে শুইয়ে কিচেনে এলো। সারাদিন জয়িতার  কিছু খাওয়া হয়নি। ফ্রিজে কালকের রান্না আছে। খেতে ইচ্ছে করল না। পাউরুটি আছে। জয়িতা দুধ গরম করে পাউরুটি ভিজিয়ে  খাবার টেবিল এসে বসল। অমনি টেলিফোনেটা বেজে উঠল। ফোন তুলতেই ওপাশে অর্ণব।
    - অনেকবার কল করলাম। কোথায় ছিলে?
    জয়িতা চুপ করে থাকে।
    - মেয়ে কোথায়?
    - ঘুমোচ্ছে। জয়িতা সংক্ষেপে সারে। ভিতরের অভিমানটা ঠেলে উঠতে চায়। জয়িতা জোড় করে সেটাকে দাবিয়ে রাখে। অর্ণব বলে চলে।
    - আমার সম্ভবত কাল ফেরা হচ্ছেনা। এরা প্রোগ্রামটা এক্সটেন্ড করেছে। পরশু সকালে একটা ইনটারাকশন সেশন রেখেছে। আমি পরশু সন্ধ্যের ফ্লাইট  ধরব।
    জয়িতা কি বলবে ভেবে পায় না। অর্ণব কি জয়িতাকে একটুও বোঝে না। এতদিনেও কি বোঝেনি যে জয়িতার নিস্তব্ধতার মধ্যে অনেক না বলা কথা থেকে যায়। অর্ণব কি এমনই অনুভুতিহীন ছিল, না ইদানিং হয়ে গেছে, না জয়িতা বুঝতে পারে নি এতদিন। অর্ণব সেমিনারের কথা বলে যাছছিল। জয়িতার কানে কিছু ঢুকল না। জয়িতার ক্লান্ত লাগছিল। কোনমতে বলল - কাল পারলে এসো। আমি ফোন রাখছি।

    অর্ণব বোধহয় আরও কিছু বলছিল। জয়িতা রেখে দিল ফোনটা। টেবিলে এসে খাবার মুখে দিতে দেখল ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। জয়িতা খেতে পারলনা আর। সব নিয়ে সিঙ্কে ফেলে দিল। বেডরুমে এসে তুতুলের কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপার চেষ্টা করলো। নাহ এখন ঠাণ্ডা আছে। জয়িতার একটা ভার যেন বুক থেকে নেমে গেল। তুতুলের পাশে শুয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর মেয়ে আলতো করে জড়িয়ে চোখ বুঝল। জয়িতা বুঝতে পারল তার চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমেছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:d89a:54c:a4b0:ed1b | ১৪ জুন ২০২২ ১৯:৪৮509005
  • ঐ এলাকায় আফ্রিকান আমেরিকান বেশি বলে "ভয়ে ভয়ে" ছিলো কেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন