এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাহিত্য আলোচনা 

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ মে ২০২২ | ৩৩৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সাহিত্য সম্পর্কে প্রথম আসে আলোচনা, তারপর সমালোচনা, তারপর ব্যাক্তিগত আক্রমণ...

    সুস্থ আলোচনাটা চাপা পড়ে যায়। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সবাই বাংলা সাহিত্যিক ছিলেন। এখন বিভিন্ন জঁর অনুযায়ী সাহিত্যিকদের শ্রেনীবিভাগ হয়েছে। যেমন থ্রিলার সাহিত্যিক, ভৌতিক সাহিত্যিক, সামাজিক সাহিত্যিক আরও অনেক আছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে এই শ্রেনীবিভাগটা করল কারা? 

    পাঠক, লেখক নাকি প্রকাশক?

    আমার প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর সামাজিক উপন্যাস "পথের পাঁচালী" আজ‌ও বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু তাই বলে তাঁর "তারানাথ তান্ত্রিক" কি বাঙালি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল? না, বাঙালি তাঁর সামাজিক ও ভৌতিক দু'টোকেই আপন করে নিয়েছিল। এবার আসি মূল কথায়। প্রথমেই বলে রাখি আমি সেকাল আর একালের সাহিত্যিকদের মধ্যে তুলনা করছি না। সেকালের সাথে একালের তুলনা কোনক্রমেই চলেনা বলেই মনে করি আমি। 

    যাই হোক, একালের কিছু লেখক আছেন যাঁরা  তন্ত্র-মন্ত্রের গল্প লিখতে গেলেও পড়াশোনা করে তথ্য দিয়ে লেখেন আবার কিছু লেখক আছেন যাঁরা পাঠককে ভুলভাল যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তার লেখা তথ্যটি সঠিক। আবার অন্যদিকে কিছু সামাজিক লেখা আছে, যেগুলো দুটো পর্ব পড়ার পর আর পড়তে ইচ্ছে হয়না, আবার কিছু সামাজিক উপন্যাসের রেশ রয়ে যায় বহুদিন, দাগ কেটে যায় মনে‌। তো, একালেও ভালো খারাপ মিশ্রিত সাহিত্যিক আছেন। তবে ওই যে, জঁর অনুযায়ী বিভক্ত তাঁরা।

    একজন পাঠক দোকানে ব‌ই কিনতে গেলেন। দোকানী বললেন " দাদা অমুক লেখকের একটি নতুন ব‌ই বেরিয়েছে, পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে।"

    পাঠক সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করবেন "সামাজিক না থ্রিলার?"

    দোকানী বললেন "সামাজিক।"

    পাঠক বললেন "ধুস, ওঁর আবার সামাজিক? ওঁর থ্রিলার গল্প সেরা।"

    আবার অপর দিকেও কিছুটা এক‌ই ব্যাপার। আসলে এই শ্রেনীবিভাগ এর পেছনে কিছুটা পাঠকের‌ হাত‌ও রয়েছে। 

    তবে দ্বিতীয় হাত হচ্ছে প্রকাশকের। তেড়ে আসার আগে কিভাবে দেখুন?
    একজন সামাজিক লেখক যদি একটা থ্রিলার উপন্যাসের পান্ডুলিপি প্রকাশ করতে চান, তাহলে প্রকাশক বলবেন "দাদা সামাজিক হলে ভালো হত।" ঠিক অপর ক্ষেত্রে একজন থ্রিলার লেখক‌ যদি সামাজিক উপন্যাস প্রকাশে আগ্রহী হন, তাঁর‌ও প্রকাশক জোটা মুশকিল। আসলে এক্ষেত্রে প্রকাশককে বই বিক্রীর ব্যাপারটা দেখতে হয়। 

    আর তাছাড়া মার্কেটিং এর ব্যাপারে বলাই বেকার। প্রথমে আসি প্রকাশকদের মার্কেটিং এর প্রসেস এ।
    একজন প্রকাশকের‌ কাছে সেল্ফ হোক কিংবা নিজের খরচে দুটো ব‌ই সমান হ‌ওয়া উচিত, কিন্তু আদতে তা হয়না। সেলফ পাবলিস ব‌ইয়ের লেখা, বিক্রি এবং মার্কেটিং এর সিংহভাগ এসে পড়ে লেখকের উপর (সব প্রকাশক একরকম নয় যদিও)।

    তবে এই বাঙালি জাতির একটা প্রবাদ আজ‌ও বর্তমান। "রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি।"
    একজন লেখকের ব‌ই পাবলিস হ‌ওয়ার পর যদি ফেবুতে তার মার্কেটিং পোস্ট দেখেন বুঝতে পারবেন। এক শ্রেণির মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন আবার অন্য আর এক শ্রেণির মানুষ নেগেটিভ রিপ্লাই এ ভর্তি করছে সেই পোস্ট। না, সবার পছন্দ এক নয় জানি,‌ কিন্তু কিছু লোক ইচ্ছে করে সেই পোস্টে ভুলভাল কমেন্ট করে। এটা প্রমানিত। 

    সুষ্টুভাবে বাংলা সাহিত্যের আলোচনা কোনদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্ভব বলে মনে হয়না। আমরা এসব করে বরং বাংলা সাহিত্যকে কলুষিত করছি।  মনে রাখতে হবে দিনশেষে বইও একটি পণ্য। এবং সেই পন্য বিক্রি হলে তবেই কারোর উনুনে হাঁড়ি চরে।

    একান্তই ব্যাক্তিগত মতামত।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন