এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অগস্ত্য 

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ৬২৩ বার পঠিত

  •          উপমহাদেশের রাজধানী এই শহরে সে আছে দুবছর ধরে। এখানে অলিতে গলিতে নানা মন্ত্রালয় , বড় বড় সরকারি দপ্তর , বিদেশি দূতাবাস। তাকে এখানে পাঠিয়েছে এদেশের এক অঙ্গ রাজ্যের একটি প্রাদেশিক ভাষার সংবাদসংস্থা, তার কাজ রাজনৈতিক খবর সংগ্রহ করা।
              প্রসঙ্গত, এখন এই দেশে সমস্ত অঙ্গরাজ্য , পঞ্চায়েত , শহরাঞ্চলে একই সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় চার বছর পর পর। মানুষ নির্বাচন করেন দলকে, কোনও প্রার্থীকে নয়। ব্যালটে শুধু রাজনৈতিক দলের রং থাকে। দলীয় কর্মীরা প্রচার করেন নিজস্ব দলীয় পার্টি লাইন, কিন্তু তারা ভোটে দাঁড়ান না। প্রতিটি দল যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তাদের আলাদা আলাদা ইশতেহার আছে।
               দলপতিরা সেইসব ইশতেহার তৈরি করেন সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে, গণ সমীক্ষার মাধ্যমে | কিছু পেশাদার পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞ সংস্থা অর্থের বিনিময়ে দলগুলিকে সাহায্য করে | তারা সবসময় নানা সমীক্ষার আয়োজন করে, যাতে ইচ্ছে করলেই যেকোন নাগরিক অংশ নিতে পারেন | এতে বোঝা যায় কোনো বিশেষ ঘটনা দেশে ঘটলে ও তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে কোন দল সমীক্ষাতে ওঠে বা নামে, যার ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা যায় কোন দল নির্বাচনে জিততে চলেছে |
               তবে অনেক সময় অঘটনও ঘটে | সমীক্ষায় তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে থাকা দলকেও প্রথম স্থানে উঠে আসতে এবং সরকার গঠন করতে দেখা গেছে |
                কাল সেই পঞ্চদশতম নির্বাচনের ফলাফল | ভোরে তাকে পৌঁছে যেতে হবে হলুদ দলের প্রধান পার্টি অফিসে | দুবছরে এই প্রথমবার তাকে গুরু দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়েছে হলুদ দলপতির সাক্ষাৎকার নেবার | এবারের জনমত সমীক্ষায় তারাই উঠে এসেছে সবচেয়ে ওপরে | মানুষ দৃঢ় ভাবে তাদের ইশতেহারের অধিকাংশ বিষয়ের সাথে সহমত পোষণ করছেন, সম্ভবত তারাই এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হবেন মনে করা হচ্ছে |
                সকালে উঠে চা খেতে খেতে নানা রকম স্ক্রিনে সে দেখে নিচ্ছিল আজকের সমস্ত সংবাদ | নিজের সংবাদসংস্থা ছাড়াও অন্য সমস্ত মিডিয়া হাউসে প্রকাশিত ছোট বড় সংবাদ খুঁটিয়ে জানতে হয় তাকে | আজ সমস্ত জায়গায় নির্বাচনের ফল কি হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা | কিছু কিছু সংবাদ সংস্থা অবশ্য তাদের নিজস্ব সমীক্ষা অনুযায়ী অন্য কিছু দল জিতবে বলে জানাচ্ছে | আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সংবাদ পড়লেও বোঝা যায় অন্য দেশগুলিও তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের দিকে |
                 অন্য আরেকটা খবরও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংবাদে প্রাধান্য পেয়েছে আজ, দুটো দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে যুদ্ধ | যদিও সেই যুদ্ধক্ষেত্র এখান থেকে অনেকটা দূরে, তাও নতুন সরকার নির্বাচিত হয়ে এলে আন্তর্জাতিক এই যুদ্ধের ক্ষেত্রে কি প্রভাব পড়তে পারে এবং নতুন সরকার কোন পক্ষ নেবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যাবে কালকের নির্বাচনের ফল ঘোষণার সাথে সাথেই |
                তার বস, যিনি সংবাদপত্রের রাজনৈতিক বিভাগের সম্পাদক ইতিমধ্যে ইমেলে তাকে হলুদ দল অনুমোদিত কালকের প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন | যেকোনো দলের প্রধানের সাক্ষাৎকার নেবার জন্য আগে থেকেই তাদেরকে প্রশ্ন পাঠিয়ে দিতে হয় | সেইসব প্রশ্ন অনুমোদিত হলে তবেই সাক্ষাৎকারের সময় মেলে | অনুমোদনের সাথে কিছু মডেল উত্তরও আগাম দিয়ে দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে, যাতে সাংবাদিক কোন প্যাঁচালো প্রশ্ন করে বসার সুযোগ না পায় |
                ইন্টারভিউয়ের রিহার্সাল আর কয়েকটা প্রতিবেদন লিখতেই সেদিন চলে গেল | একটা চাপা টেনশন কাজ করছে বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল সে |

                  সে এখন বসে আছে হলুদ দলের অফিসে দলপতির সামনে, সারা ঘরে নানা স্ক্রিনে ফুটে উঠছে সমস্ত সংবাদ চ্যানেল | সেখানে ভেসে উঠছে নির্বাচনের ফলাফল, নানান রঙের সুন্দর বার চার্ট পাই চার্ট | হলুদ দলপতির মুখে স্মিত হাসি | সে প্রশ্ন শুরু করে -
    "কেমন লাগছে বলুন জিততে পেরে?"
    "আমি তো শুধু একটা রেকমেন্ডেশন ইঞ্জিন, সেই এলগোরিদম তো মানুষের জনসমীক্ষার ওপরেই তৈরী, এই যে জনসমীক্ষা গুলো হয় সারাবছর ধরে, সেইসব ইনপুটের ওপরেই তো নির্ভর করে আমার ইঞ্জিন, মানুষই আসল... "
    উত্তরটা ভুলভাল এবং কালকের মেলে পাঠানো উত্তরের সাথে মিলছে না দেখে সে অবাক হল | ঝুঁকি নিয়ে পরের প্রশ্নটা করে ফেলল সে -
    "ইঞ্জিন? আপনি মানুষ নন?”
    "একসময় দেশে রাজনীতির হাল এত খারাপ হয়ে গেছিল যে স্কুলে কলেজের সব অল্পবয়সীরা কেউ রাজনৈতিক নেতা হতে চায় নি, তাহলে দেশ চলবে কি করে? সিস্টেম চলবে কি করে? তাই বড় বড় কর্পোরেশনরা আমার মতো রোবটদের বানিয়েছে, আমাদের ভেতরে প্রোগ্রাম করা আছে পুরোনো রাজনৈতিক ইতিহাস আর হাজারো মতাদর্শ, যা ব্যবহার করে মডেল ট্রেন করা হয়েছে, সমস্ত সমীক্ষা দিয়ে সেই মডেল টিউন করা হয় | সরকারের কোন কাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে অবস্থা বুঝে মডেলে সূক্ষ পরিবর্তন করা হয় | আমার দলের মডেলের আউটপুট হচ্ছে আমার দলের ইশতেহার |"
    "আর আপনার প্রতিপক্ষরা? কমলা, কালো, বেগুনি এইসব দলপতিরা?"
    "তারাও রোবট, তাদের লবি আলাদা, কর্পোরেশন আলাদা | ট্রেনিং ডেটাটা আলাদা বলে তাদের ইশতেহারটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে | পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাই তো এখন রোবটদের হাতে | তুমি যখন ছোট ছিলে মনে নেই কত খুনোখুনি হত নির্বাচনের সময়? এখন নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ |"
    "আপনার কথা সত্যি হলে রোবট যদি কোনোদিন মানুষের ক্ষতি না করতে পারে, তাহলে দেশে দেশে যুদ্ধ হচ্ছে কি করে? "
    "হ্যাঁ, রোবট কখনো মানুষকে মারে না, কিন্তু একটা রোবট আরেকটা রোবটকে মারতে পারে | যুদ্ধে তো এখন যায় মানুষের তৈরি রোবট, মানুষ নিজে ঘরে বসে থাকে | দেশে দেশে যুদ্ধ হয়, রোবটের কলকব্জা ভাঙে | রোবটের বিক্রি বাড়ে, দেশগুলো কর্পোরেশনদের নতুন হাজার হাজার রোবট বানানোর বরাত দেয়..."

                সে ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে উঠে বসল | ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে বিছানার চাদর | বাইরে ভোররাতের আলো, একটা পাখি ডাকছে | এটা কত তারিখ যেন? কোন সাল? ধীরে ধীরে সে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘাম মুছতে মুছতে বাথরুমে ঢুকে গেল, অগস্ত্যর সাক্ষাৎকার নেবার জন্য বেরোতে হবে |
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন