এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পাহাড়ের ছোট কাগজ

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ মার্চ ২০২২ | ৬৭১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)


  • বন্ধুজন পল্লব চাকমা  একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে তাদের সম্পাদনায় প্রকাশ করতেন  পাহাড়ের ছোট কাগজ "জুম"। বলা ভাল, জুম হচ্ছে   পাহাড়ের ঢালে হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ চাষাবাদ পদ্ধতি, যার সংগে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিস্বত্ত্বার সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে। 

    সে সময় আমার সৌভাগ্য হয়েছে প্রাণের বন্ধু রোনাল্ড চাকমার সূত্রে  "জুম" এর কয়েকটি সংখ্যায় লেখা দেয়ার পাশাপাশি এর নেপথ্য কারিগরদের সংগে মেশার।



    স্বীকার করি, ২০০৪-৫ সালের দিকে পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে বোধগম্য কারণে প্রথমেই "জুম" গোষ্ঠীকে আস্থায় নিতে পারিনি, এর আদর্শ ও মান যাচাই করতে চেয়েছি। এ জন্য এর কয়েকটি পুরনো সংখ্যা আগে চেয়ে নিয়ে পড়েছি। সম্ভবত বন্ধুজন হিরণ চাকমা  আমাকে সে সময়ের কর্মস্থল নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ "জুম" এর কয়েকটি কপি পৌঁছে দিয়েছিলেন। রোনাল্ডও তখন বিডিনিউজের সহযোগী পত্রিকা "সাপ্তাহিক ৭১" এর সাংবাদিক সহকর্মী ছিলেন। 

    কয়েকটি সংখ্যা পড়ার পর আমাদের ভেতরে আর দূরত্ব থাকেনি। "জুম" গোষ্ঠীর চিন্তার গভীরতা আমাকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে তখন সরাসরি জগন্নাথ হলে "জুম" এর কার্যালয় কাম সম্পাদক মণ্ডলীর আবাসিক কক্ষে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়েছি। এরপর দীর্ঘদিন  আলাপচারিতা, আড্ডা, এমনকি রাত্রিযাপনও হয়েছে এক আধবার। 



    শান্তিচুক্তির আগে নয়ের দশকে অশান্ত পার্বত্য পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনের শুরুতে দীর্ঘদিন কাজ করছি সাপ্তাহিক পত্রিকায়। তখন বিঝুকে কেন্দ্র করে রাংগামাটির "জাক" থেকে তো বটেই, পাহাড়ের আনাচে কানাচে অসংখ্য ছোট কাগজ স্মরণিকা ইত্যাদি প্রকাশ পেত; আর এসব সংখ্যায় লেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন পরিচিত, স্বল্প পরিচিত, এমন কি অপরিচিত জনের অনেক  অনুরোধ পেতাম। 

    সূত্রটিকে আস্থায় নিলে ডাক যোগে লেখা পাঠিয়ে দিতাম, আর না হয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কর্মীদের হাতে হাতে লেখা পৌঁছে দেয়া হতো। শর্ত থাকতো একটাই, কোনো লেখা সম্পাদনা বা পরিবর্তন করা যাবে না, লেখা প্রকাশ করতে হবে হুবহু। তবে যোগাযোগ সীমাবদ্ধতায় অনেক সময়ই এসব লেখা আদৌ প্রকাশ হয়েছে কি না, তা জানার উপায় ছিল না। আবার প্রকাশিত সব পত্রিকার লেখক কপিও হাতে এসে পৌঁছাত না। বরাবরই এসব লেখালেখিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন সহকর্মী প্রিসিলা রাজ। 

    তখন পিসিপির মুখপত্র "কেওক্রাডং", ছোট কাগজ  "রাডার", "স্যাটেলাইট", "জুম্মকণ্ঠ" ইত্যাদি রাজনৈতিক পত্রিকায় লিখেছি অকপটে। তবে দু চার সংখ্যা প্রকাশের পর শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে এসব পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়। 



    শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সম্ভবতঃ সবচেয়ে আলোচিত ছোট কাগজ  ছিল বন্ধুজন দীপায়ন খীসা সম্পাদিত "মাওরুম"। যেমনই ছিল এর প্রচ্ছদ, তেমনই ছিল মান। সাহসী লেখনির কারণে শিগগিরই ছোট কাগজটি পাহাড়ে ও সমতলে খুবই জনপ্রিয়তা পায়।

    সে সময় অনিল চাকমা গোর্কি, অভিলাষ চাকমাসহ 
    ইউপিডিএফ-এর কয়েকজন দলছুট নেতা (তাদের অনেকেই পরে দলত্যাগ করায় নির্মম হত্যার শিকার হন) "মাওরুম" এ  সংগঠনটির তীব্র সমালোচনা করে কিছু সাহসী লেখা লিখেছিলেন। এরমধ্যে গোর্কি তিন বিদেশি অপহরণের নেপথ্য কথা,  টাকা ভাগাভাগির চিত্রও তুলে ধরে "মাওরুম" এ একটি দীর্ঘ স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখেছিলেন। থলের বেড়াল ফাঁস হওয়ায় এরপরই খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়িতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে! অভিলাষও হত্যার শিকার হয়েছেন একইভাবে। 

    এসব কারণে পাহাড়ে অঘোষিতভাবে " মাওরুম" ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। দীঘিনালায় "মাওরুম" বিক্রি করতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্র মারধরের শিকার হয়েছেন, আবার বেশ কয়েক জায়গায় পত্রিকাটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। 



    বছর চারেক ধরে অনিয়মিতভাবে নিয়মিত প্রকাশের পর 
    সম্ভবতঃ আর্থিক অনটন ও সম্পাদকের ব্যস্ততায় "মাওরুম" আর প্রকাশ হতে পারেনি। অন্যদিকে, ছাত্র জীবন শেষে সম্পাদকদের পেশাগত জীবনের চাপে "জুম" প্রকাশনাও উঠে গেছে অনেকদিন।

    কিন্তু এখনো "জুম" এবং "মাওরুম" পত্রিকা দু'টির অনুপস্থিতি আমাকে পীড়া দেয়। পাহাড়ে এত মান সম্পন্ন, এত সাহসী, এত নান্দনিক ছোট কাগজ আর হবে না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Jharna Biswas | ২৩ মার্চ ২০২২ ২১:০৫505325
  • একটি গ্রুপেও জেনেছিলাম। ভালোলাগলো।.. 
  • বিপ্লব রহমান | ২৫ মার্চ ২০২২ ১০:১২505487
  • @ ঝর্ণা, 
    সাথে থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন