এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি

    Atanu Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৫৮৪ বার পঠিত
  • Give me back my childhood, yes .. my childhood

    আমি খুব সাধারণ মাপের লোক, আজকের চলতি ভাষায়, একদম ‘আম আদমি’। আলাদা করে সেরকম কিছু বলার মতন রং বে রঙ্গের ঘটনা নেই। তবে, অনেকের মতন আমার ছোটোবেলা বেশ আনন্দে কেটে গিয়েছিল, সেই কথাটাই একটু, সাহস করে আজ বলব। বড় হয়ে আনন্দেই আছি, তবে অতটা, না, সত্যি কথা বলতে বাধা কোথায়।

    অনেকদিন ছোটোবেলার শিশুটাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম, তাকে ইচ্ছে মতন খেলতে দি নি, ছুটোছুটি করতে দি নি, কেন যানি এতদিন বড় সেজে বসে ছিলাম। আজ ওকে আবার ছেড়ে দিলাম, সে খেলে বেরাক, ঘুরে বেরাক, খোলা আকাশের নীচে, গাছগাছালির মাঝখান দিয়ে, পুকুরের ধারে, সাদা কাশফুলকে পাশে রেখে।

    (যখন ছোটো ছিলাম, ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯)

    থাকতাম কলকাতার দক্ষিণে।একটা দোতলা বাড়ীর দোতলায়।মাথার ওপর খোলা ছাদ। বেশ বড়সড়।সেখানে বিকেলে রাবার বলে ফুটবল খেলা হত। আমাদের আসেপাশের প্রতিবেশী ছেলেরা এসে জড়ো হত। আমি সবচেয়ে বয়সে ছোটো, তাই সবার করুণার পাত্র।বড় দাদারা গোলের সামনে আমায় বল এগিয়ে দিত, আমি মনের সুখে গোল দিতাম, অথবা মিস করে বকুনি অথবা গাট্টা খেতাম। শুনেছি মারাদোনার প্রথম জীবনে রাস্তার ফুটবলে হাতেকড়ি। আমাদের ছাদ ফুটবলে অত বড় ফুটবলার তৈরি হয়নি, তবে, একজন ময়দানের প্রথম ডিভিসনে পৌঁছেছিল।

    ফুটবল শুরু হবার আগে, কোনো কোনো দিন, দুপুর থেকে ঘুড়ি ওড়ানো। আমার স্কুল থেকে আসতে বিকেল হয়ে যেত, তার মধ্যেই ছাদ জমজমাট।অনেকেই এসে ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়েছে।আকাশ ঘুড়িতে ঘুড়িতে ছয়লাপ। আশেপাশে ছাদ ভরতি ছেলেরা, নানান বয়সের, নীল আকাশে, মেঘের মাঝে মাঝে ঘুড়ির লড়াই চলছে। ভোকাট্টা আওয়াজে আকাশ বাতাস মুখর, কাউর মুখ শুকনো, কাউর মুখে, যুব্ধ জয়ের হাসি। আমিও আমার সযত্নে রাখা ঘুড়িটা উড়িয়ে দিতাম। নিজের মনেই ওড়াতাম, অনেক দূরে, আরও দূরে। বেশী ঘুড়ি হাতে নেই, তাই কাটাকুটির ইচ্ছে নেই, কেটে গেলে আবার কিনতে যেতে হবে, সে সময় কোথায়।তারপর অন্ধকার নেমে আসতো, আকাশের তারা একটা একটা করে ফুটে উঠতো, বাদিকের আকাশে মেঘের ফাক দিয়ে চাঁদ বেরিয়ে আসত, আমি বিষণ্ণ মনে ঘুড়ি নামিয়ে নিতাম। নীচে নামলেই তো পড়তে বসা, কেন যে এত পড়া,পড়া,পড়া, কে জানে।

    শীতকালে রাস্তায় ইটের উইকেট পেতে ক্রিকেট।আড়াআড়ি রাস্তার মাঝে, কারও কোনো অসুবিধে না করে।লেক প্লেস বেশ চওড়া রাস্তা, উইকেট পাতা হোতো চার রাস্তার মোরে, যাতে চারিদিকেই বল মারা যায়। রবিবার দুপুরে প্রতিবেশী পাড়ার সঙ্গে ম্যাচ। চারিদিকের বারান্দা কানায় ভরতি, টেস্ট ম্যাচের থেকে কোনো ভাবে কম না।

    তবে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় যায়গা বাড়ির নীচে পাথরে বাধানো সবুজ রক। সে বড় সুখের যায়গা, দিবারাত্রি আড্ডা, পড়াশোনাকে পাশ কাটিয়ে। বিকেলে থেকেই, সবাই জড়ো হতো, চলত অনেক রাত অবধি। আমরা যারা স্কুলে পড়তাম, বাড়ীর বড়োরা, সন্ধে হলেই হাত ধরে [কখনো কান ধরে], সেই পরম সুখের জায়গা থেকে টেনে নিয়ে যেত।কলেজ পড়ুয়ারা আরো অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিত, ভাবতাম কবে যে কলেজে পড়ব, নিজের খুশিমতন, যখন খুশি আড্ডা দেব, যখন খুশি পড়ব, কেউ মাথা ঘামাবে না, জীবন তো একটাই।

    তবে বাড়ীটাও বেশ আনন্দের যায়গা ছিল। একান্নবরতী বড় পরিবার, তাছারা আত্মীয় সজন যখন তখন।গিজগিজে লোক, কতটা পড়লাম, কতটা ফাকি দিলাম, কতটা খেললাম কেউ মাপার নেই। সবাই আনন্দে নিজের মতন করে দিন কাটাচ্ছে, এর থেকে আর ভাল কি হতে পারে।একদিক থেকে বলা যায়, পুরো পাড়াটাই একটা পরিবার, সবার চিন্তা ভাবনা একই সুরে বাঁধা।সবার সদর দরজা হাট করে খোলা, যখন খুশী ঢোকো বেরোও। ঢুকলেই কোথাও সন্দেশ, সিঙ্গাড়া, কোথাও বা মুরুক্কু আর স্টীলের কাপে ফিলটার কফি, ভাগ্য সহায় হলে গরম মুচমুচে সাদা দোসা।

    তাছারা সারা বছর তো উৎসব তো লেগেই থাকতো। প্রথমে বিশ্বকরমা, তার পর,পাড়ার দুরগা পূজো বেশ বড়সড় নামকরা পূজো, তার ভলানটিয়ার বাহিনীতে যোগ দেওয়া। সারা রাত প্রতিমা দেখা, বির্সজনে যোগ দেওয়া, রীতিমতন হই হই ব্যাপার।এরপর কালীপুজো তো মজার মজা, বাজী কেনা, তুবড়ী বানানো, তারপর আকাশে উড়িয়ে দেওয়া [তখনও এটা বেআইনী হয়নি]। পাঁচ মিনিট আগে ওষুধ খেলাম কিনা ভুলে যাই, অথচ তুবড়ির ফরমুলা এখনো মনে আছে।

    বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে সরস্বতী পুজো, সারা বছরের অপেক্ষা ... ফেস্টুন টানানো দিয়ে শুরু, তারপর চাঁদা তোলা, প্রতিমা আনা, প্রতিমা সাজানো, বির্সজন, আর পরের দিন আমাদের ছাদে মাংস ভাত।

    বৃহষ্পতি বার ছিল, পুরোপুরি আমার দিন। স্কুল ছুটি, পড়াশুনোর জন্য... প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক পরীক্ষা, কিন্তু আমার কাজটা ছিল একেবারে নিজের মতন করে কাটানো। ঘুড়ি ওড়ানো, সাইকাল চালানো, আর জানালায় বসে, রাস্তার গাড়ী দেখা আর গল্পের বই পড়া। তখন রোজ কলকাতার রাস্তা ধোয়া হত, ঠিক তিনটের সময় আমাদের বাড়ীর সামনে... সব রাস্তার নোংরা, গঙ্গা জলে ধুয়ে যেত, চেয়ে চেয়ে দেখতাম, কে যানে কোথা থেকে যে জল আসছে, আবার গড়িয়ে গড়িয়ে কোথায় যে চলে যাচ্ছে।চারটের সময়, আইস্ক্রিমওয়ালা, পা টিপে টিপে বেড়িয়ে, একটা আইস্ক্রিম রুমালে ঢেকে লুকিয়ে নিয়ে আসা।একটু পরেই, কালো বাস্ক নিয়ে, কেকওয়ালা হাজির, তার বাস্কে নানান রকম, নানান রঙ্গের কেক সাজানো।

    একদিকে মিশনারী স্কুলের ৯ টা থেকে দুপুর ৩ টে অবধি, কঠোর অনুশাসন, বেশ কয়েকটা, বিরক্তিকর ক্লাস, অন্নদিকে পাড়ার হইহুল্লোর, এইভাবে নরমে গরমে দিনগুলো কেটে যেতে লাগল।
    আমার মনের ক্যানভাসে এখনো সেই ভালোবাসার, সেই স্নেহের , মানুসগুলোর ভীড়। তারা সবাই নিজ নিজ যায়গা দখল নিয়ে বসে আছে। তারা অতি সাধারণ, অথচ তারা সব ছাপিয়ে, গিয়ে, আমার কাছে, তারা অসাধারণ, তারা মহান, তারা আমার প্রাণের আরাম।তখন, এখন, সবসময়। আমার পাড়ার দাদারা, সেই ১৯৬৯ সালে ইডেন গারডেন্সের গেটের মুখে যারা আমায় স্ট্যাম্পেড থেকে প্রাণে বাঁচাল, ক্লাসে ৯এর বাংলা স্যার, যিনি পরম যত্নে আমাদের সাহিত্য পড়াতেন, স্বপ্ন ছিল তার ছাত্ররা একদিন নামজাদা সাহিত্যিক হবে, আমার আপন সব সহপাঠীরা, সুখে দুঃখে যারা সবসময় পাশে পাশে, এমনকি, দেশপ্রিয় পারকের মোড়ে সেই ঘুঘনিওয়ালা, যার জন্য আমার তর সইত না, স্কুল ফেরত চলন্ত ৮ব বাস থেকে লাফিয়ে নামতাম ... লেক রোডের হাবু দা, অতি যত্নে যে আমায় ঘুড়ি বেছে দিতেন, সেই বাপ্পা দা যে নিজে হাতে আমাকে ক্রিস্টাল রেডিও বানাতে শিখিয়েছিলো ... তা দিয়ে সবাইকে একদম তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম, তারা আজ অনেকেই নেই, কিন্তু আজো তারা আমার বড় কাছের মানুস, নেই বলেই তারা বেশী করে পাশে আছে।

    সবার কথা বলতে গেলে তো, মিলন মহাভারত হয়ে যাবে, আর আমাকে হতে হবে কাশীরাম দাস... সেটি হবার নয়, ছোটোবেলার গল্প বেশী বড় করে লাভ নেই, এডিটর কে রাগিয়ে দিয়ে কি লাভ, তার থেকে বরং, হঠাৎ বড় হয়ে যাই

    (যখন বড় হলাম – ১৯৮৬ থেকে...)

    সময়ের আবর্তে, একদিন বড় হলাম, সবাই হয়, আমিও হলাম। আমার ভিতরের ছেলেমানুষটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, অনেকের মতন, একটা বড়দের মুখোশ কিনে পড়ে ফেল্লাম।গম্ভীর হয়ে গেলাম। সর্বক্ষণ মাপামাপি চলতে থাকল। কথা মেপে, বুঝেশুনে বলছি, মেপে মেপে মেলামেশা করছি, ঘর মাপছি, টিভি মাপছি, নতুন পাড়ার প্রতিবেশীদের মাপছি, গাড়ী মাপছি, পকেটে যেন একটা ফিতে নিয়ে ঘুরছি।সেই হাসি খুসি উচ্ছলতার দিন বিদেয় নিলো, রোবোটিক নকল হাসির দিন শুরু। আসল পিছিয়ে পড়ল, নকল এগিয়ে এল। আন্তরিকতা কখন যেন হারিয়ে গেল।

    মুখোশটা মাঝে মাঝে আলগা হয়, ছেলেমানুষটা বেরিয়ে আসতে চায়, আমি আবার তাকে বকুনি দিয়ে, বন্ধ ঘরে তালা মেরে দি। রবিঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির’, মাথা থেকে মুছে ফেললাম, সেই যায়গায় লাগিয়ে দিলাম ডারুইন তত্ত্ব ‘অ্যাডাপট অর এক্সটিঙ্কট’। মাথা কখনো পুরো উচু, সেরকম বুঝলে কখনো একটু নীচু, বা একদম নুয়ে, ঠিক জুতোর ফিতে বাধার স্টাইলে।কিন্তু ছেলেমানুষটা বড় বেয়ারা, খালি চেচায়, হাত তুলে প্রতিবাদ করে, কোন দিকে যাব, বুঝে উঠতে পারিনা, খুব অসহায় লাগে, এই করে চলতে থাকে।

    কলকাতাও আমার সঙ্গে সঙ্গে চরচর করে বড় হতে থাকল। আকাশছোয়া বাড়ী, [তখন দশ বারো তলা মানে আকাশছোয়া], সদর্পে মাথা তুলে দাড়াল, দোতলা, তিনতলারা ভয়ে মুখ লুকোলো। আমি কলকাতা ছেড়ে এদিক এদিক কিছুদিন ছুটোছুটি করলাম, তারপর, আবার ব্যাক টু কলকাতা।

    একটা এরকম ১২ তলা বাড়ির খপ্পরে পড়লাম। ৮২ মতন ফ্লাট, সেইখানে প্রায় তিনশো লোকের বাস একদিকে গড়িয়াহাটা ট্রাম ডিপো অন্যদিকে একটা বেশ বড়সড় স্কুল, বড় রাস্তার ওপর। আশেপাশে কোনো দু বা তিনতলা বাড়ী নেই, কোনো পাড়া নেই, পুরো বারিটাই একটা যেন পাড়া।বারান্দা দিয়ে একফালি আকাশ কোনোমতে দেখা যায়। একদিন ছাদে উঠেছিলাম, ৮২ টা টিভি অ্যান্টেনার মাঝখান দিয়ে আকাশ দেখতে গিয়ে, আমার চোখের পাওয়ার বেড়ে গেল।বুঝলাম, বিশ্বকরমা ভুলে যেতে হবে, ঘুড়ি ওরাবার আর চান্স নেই।ভেতরের ছেলেমানুষটা কেঁদে উঠল, আমি আবার বকুনি দিয়ে চুপ করালাম।বড়ই থেকে যেতে হবে, আর কোনো উপায় নেই, ভাই।

    কোথায় ছিল আমার সেই সাদামাটা, ভালবাসার, স্নেহ ভরা, লেক প্লেস, আর কোথায় এই শুষ্ক হাই রাইজ...খালি হাইফাই মানুষ, আর বড় চাকুরীদের ভীড়...সবাই যে খুব বড় বড়, মুখে ভারী ভারী চকমকে কথা, ছেলেমানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বেশ কিছু বছর, ওখানে থেকেছি, সেই নীতি নিয়ে, ‘অ্যাডাপট অর এক্সটিঙ্কট’...এখন ভাবি, কি করতে গেলাম... লেক প্লেসের বাড়ী প্রমটারের নজরে পড়েছে, বেশীদিন তার আয়ু নেই...কিন্তু ওই লেক প্লেস এলাকার মধ্যেও তো কত বাড়ী ছিল, একটা খুঁজে নিলেই হত।

    এটা ঠিক, মানুষ যে কত রকম হয়, ওখানে না গেলে বুঝতে পারতাম না, কত রকমের লোক, কত রকমের প্রশ্ন, কত রকমের কথা, খানিকটা হুবহু তুলে দিলাম... নীচের ফরমাটে...।ছোটো বেলা আর বড় বেলা প্রতিবেশীদের মধ্যে তফাৎটা হয়তো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

    ---তাহাদের কথা +++ আমার উত্তর
    --- আপনার গাড়ীটা ফাস্ট হ্যানড না সেকনড হ্যানড +++ আমি ফাস্ট হ্যানড, আমার গাড়ী সেকনড হ্যানড
    --- আজ কি বাজার করলেন +++ অনেক কিছু করেছি, সব ভুলে গেছি, অনেক দেরী হয়ে গেছে, আজ চলি
    --- আমার সঙ্গে একদিন গড়িহাট বাজারে আসবেন, গৌড়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব, ওর মাছ একদম সেরা, আমি পরিচয় করিয়ে দিলে, আপনাকে ওজনে কম ঠকাবে +++ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, বেশী লোককে পরিচয় করাবেন না, গৌড়ের ব্যবসা উঠে যাবে, লোক ঠকানো একটা সলিড ব্যবসা, যুগে যুগে
    --- দূরদরশনের কোনো দূরদৃষ্টি নেই, একটাও বিদেশী ছবি দেখায়না, আমরা তাহলে কি করে চলচ্চিত্র শিখব ++ ফ্লিম ক্লাবের মেম্বর হয়ে যান, অনেক কিছু দেখবেন, শিখবেন, কাজে লাগবে
    --- আপনি মশাই কি করেন, আমি যেমন সারাদিন বাজারে কাটাই, সকালে গড়িহাট বাজার, দিনের বেলায় শেয়ার বাজার +++ সকালে বাজারে যাই কিনতে, আর দিনের বেলা যাই কাজের বাজারে যাই বেচতে
    --- আপনি তো শুনেছিলাম সিএ, তাহলে অডিট, ট্যাক্স ছেড়ে কম্পুটার নিয়ে কি সব করেন+++ আমার যেটা ভাল লাগে, আমি সেটাই করি [নিরলিপ্ত ভঙ্গীতে, অনেকটা যেন ঐ গানটা, ‘আমি বাংলায় গান গাই’]
    [এটা অনেক জন] --- আচ্ছা, কম্পুটার শিখতে কদিন লাগে, আমার ছেলেটাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব +++ নিরভর করছে কেমন ছেলে, কতখানি শিখতে চায়, কিছু কম্পুটার স্কুল খুলেছে, ওখানে খোঁজ নিন, দেরী করবেন না
    --- বার্লিন ওয়াল তো পড়ে গেল, সমাজবাদ কি শেষ +++ যাদের শেষে ‘বাদ’ আছে, সবাই একদিন বাদ পড়বে, খুব শীগগিরি পুঁজিবাদ
    --- বিশ্বায়ন কি মানুষের ভাল করবে +++ এটা খুব কঠিন প্রশ্ন, উত্তর জানা থাকলে, এই বাড়ীটায় আর থাকতে হোতো না, সারা বিশ্ব চষে বেড়াতাম

    [১৭ই সেপ্টম্বর ২০১৫, হয়তো বা ঘুমের দেশে ]

    রোজকার মতন ফোনে অ্যালার্ম বেজে উঠলো, ৬ টা বেজে ৪৫, ভোর হচ্ছে, আস্তে আস্তে, সিঙ্গাপুরে। মনে পড়ে গেল, বিশ্বকরমা পুজোর দিন এরকম ভোর বেলা, উঠে পরতাম, ঘুড়ি লাটাই নিয়ে।

    আরে, কি অবাক কান্ড, আজ তো ১৭ই সেপ্টম্বর, একটু আকাশটা দেখিতো, আরো অবাকের পালা, সারা আকাশ ঘুড়িতে ঘুড়িতে ঢাকা পরে গেছে।কত ধরনের ঘুড়ি, চাঁদিয়াল ... ঠিক আমি যেমন ওড়াতাম, এখানকার তৈরি ঘুড়িও আছে, বাক্স, মাছ, পাখী, সবরকম।

    নিজেকে ধিক্কার দিলাম, ছিঃ ছিঃ, অতনু, তোমার এত অধঃপতন, শেষ কালে বিশ্বকরমা পুজোর দিন ভুলে গেলে। ঘুড়ির সঙ্গে এতদিনের সম্পরক, এক নিমেষে শেষ। বা গালে একটা সপাটে চড় মারলাম, ডান গাল বাঁচিয়ে, সেখানে একটা দাত নড়বড়ে, ডেন্টিস্টের কাছে গেলেই এক গাদা টাকা যাবে।

    খাটের তলায় দেখি নানা রকমের ঘুড়ি, একটা বেশ বড় লাটাই। আরে, এইজন্যইতো সিঙ্গাপুর স্মার্ট সিটি, ‘সে যে মনের কথা ধরতে পারে, বুঝতে পারে’। তারপর একদম সটাং ছাদে, আঃ... কি আনন্দ, কতদিন বাদে আবার ছোটো হলাম।প্যাঁচ খেলার জন্য হাত নিশপিশ করছে, শনশনে সমুদ্রের হাওয়া, আশেপাশে প্রচুর ঘুড়ি ফড়ফড় করছে, নীচ থেকে টানব, একবারে তিন চারটেকে কাটব। তারপর ভাবলাম, দরকার কি ভাই, এখানে যা কড়া আইন, একটা ঘুড়ি কাটলে একটা কাউন্ট, পাঁচটা কাটলে হয়তো পাঁচটা কেইন, পাঁচ মাস চাঙ্গি জেল ...ওই লাইনে নেই
    হটাৎ অন্ধকার নেমে এল, আবার স্মার্ট সিটির খেলা, আমার ঘুড়িটায় আলো জ্বলে উঠল। আমি লাটাই আলগা করে দিলাম, দূরে...অনেক দূরে একদম তারাদের ছুঁয়ে ফেললাম...

    তারপর... একটা রাস্তার আওয়াজ... ঘুম ভেঙ্গে গেল... মেজাজটা একদম খারাপ হয়ে গেল, বেশ ভাল ছিলাম, ছোটো ছিলাম, আবার বড় হতে হবে, কি মুস্কিল

    অনেক দিন আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল। বিশ্বকরমা পুজোর দিন, সন্ধে নেমে এসেছে, ঘুড়ি নামিয়ে ফেলেছি। মন খারাপ করে ছাদের ধারে, দাঁড়িয়ে আছি। একতলার সন্টু দা, কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ‘মন খারাপ করছিস কেন, সামনে দূরগা পুজো, চল সামনের রবিবার তোকে কুমোরটুলী নিয়ে, যাব, দেখবি কেমন আমাদের আদি লেক পল্লীর ঠাকুর তৈরি হচ্ছে।এবার ডাকের সাজ। এক নিমেষে মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল।

    আজকেও তাই ভাবলাম, আরেব্বাস, সামনে তো পুজো, চার পাঁচদিন আড্ডা, হইহই, মন খারাপ করার কি আছে। মনে মনে বললাম...ক্যাচ আপ... ক্যাচ আপ... মাই বয়...
    ছুটে গিয়ে একটা, কাজের কাজ করলাম, বড়দের মুখোসটা একটানে খুলে, ডাক্ট দিয়ে বিদেয় করলাম, কি আনন্দ, আবার আমি ছোটো হয়ে যাব, ফিরে পাব আবার সেই মধুর ...হারানো শৈশব। আর কোনোদিন বড় হতে যাবনা, আর কোনো দিন মুখোস পড়তে হবে না।

    কত দিন যে নষ্ট হয়ে গেল...নানা রংএর দিনগুলি আমার হারিয়ে গেল...কত দিন... কত দিন... কে জানে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন