#হাসিরগল্প
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে মজার গল্প আর হাসির গল্পের বইয়ের রেকমেন্ডেশন খুঁজতে গিয়ে দেখলাম সমসাময়িক সময়ে হিউমার মিশিয়ে হাসির গল্প প্রায় লেখাই হয়নি। কয়েকটা উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাদে সবই হয় ভৌতিক নয় থ্রিলার। বাদবাকি ঐতিহাসিক বা অন্যান্য জনরা। হাসির বই নিয়ে প্রশ্ন উঠে এলে অধিকাংশ পুরোনো বইয়ের কথাই সামনে আসে। যেমন ভ্রমণের বই খুঁজলে উমাপ্রসাদ আর শম্ভু মহারাজ বাদে সমসাময়িক ভ্রমণ লেখকদের নিয়ে তেমন কথা হয় না।
গত দু' তিন বছরে নির্মল হাসির যে বইগুলো পড়ে মেজাজ খোলতাই হয়েছে, সেই বইগুলো নিয়েও বিশেষ আলোচনা দেখি না। আমি নিজেই একটা ভালো বইয়ের সন্ধান দিয়ে গেলাম। না পড়ে থাকলে পড়ে দেখবেন।
এটা তো আর রিভিউ নয়, কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়। এই বইয়ের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, নিখাদ বৈঠকী চালের এই গল্পগুলো রিসেন্ট সময়ের হলেও লেখক ইচ্ছে করেই সেইগুলো সাধু ভাষায় লিখেছেন। ফলে ভাষার ব্যবহারে নিতান্ত সাধারণ হিউমারও অসাধারণ হয়ে উঠেছে। পড়তে গেলে মুখে হাসি লেগেই থাকে। আমি বরং একটা অনুচ্ছেদ স্যাম্পল হিসেবে দিলাম। পড়ে দেখুন। এই কঠিন সময় এরকম বই হাতে পেলে অনেকেরই মন ভালো হবে বলে আমার বিশ্বাস।
"অতঃপর তর্কপঞ্চানন তাঁহার হুঁকায় গুড়ুক গুড়ুক শব্দসহযোগে দুইখানি টান মারিয়া ধূম্রনিঃসরণকালে কহিলেন – বিশেটা যে একদিন এরকম একখান কান্ড ঘটাবে সে আমি আগেই জানতুম। বিশে অর্থাৎ বিশ্বনাথ ক্ষীণ কন্ঠে বলিবার চেষ্টা করিল- আমার কি দোষ। তাহার কথা শেষ না হইতেই তর্কপঞ্চানন খ্যাঁক খ্যাঁক করিয়া উঠিলেন – না না, তোমার আর দোষ কি, দোষ তো গবমেন্টের যে তোমায় এখনো চিড়িয়াখানায় না ভর্তি করে ছেড়ে রেকেচে।
কথা হইতেছিল গাঙ্গুলীদের বৈঠকখানার আড্ডায়। আপিস-কাছারী সারিয়া সন্ধ্যার ঝোঁকে গুটিকয় তরুণ আর এক-দুজন প্রৌঢ় প্রায়দিনই সেখানে জড়ো হইয়া রাজা-উজির মারিয়া থাকেন। গাঙ্গুলীমহাশয় সরকারী উচ্চপদে চাকুরী করিতেন। যেমন রাজকীয় চেহারা তেমনি দিলদরিয়া স্বভাব। খুবই আমুদে লোক। অবসরগ্রহণের পর তাহার সুবিশাল বৈঠকখানা ঘরটিতে ঢালাও ফরাস পাতিয়া, হেলান দিবার নিমিত্ত কয়খানি তাকিয়া, তাম্বাকু সেবনের নিমিত্ত গড়গড়া, ইত্যাদি রাখিয়া মনোরম এক আড্ডাস্থল বানাইয়া ফেলিয়াছেন। মুড়ি-তেলেভাজা এবং অফুরন্ত চায়ের জোগান ভিতরবাড়ি হইতে আসিতেই থাকে।"
বৈঠকী
প্রিয়ঙ্কর চক্রবর্তী
সৃষ্টিসুখ
মূল্য - ১৩৯/-