এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাংলা সাহিত্যের ঝড়ের পাখি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

    gautam roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৯৩৫ বার পঠিত
  • দূরদর্শনের দিলীপ পাল, মন্দিরা পালেদের বাড়ি থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর তাঁর পত্নী সুরাইয়া ইলিয়াস যাচ্ছেন বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাড়িতে। সময়টা নয়ের দশকের মাঝামাঝি। একটা মিনি বাসের সাওয়ারি হয়েছেন তাঁরা। তখনো 'খোয়াবনামা' বই আকারে প্রকাশিত হয় নি। বাংলাদেশের ছোটখাট কয়েকটি পত্র পত্রিকায় ইতিউতি বেরিয়েছে। যাঁদের বাংলাদেশের সঙ্গে খুব নিবিড় সংযোগ নেই, তাঁদের পক্ষে সেই লেখা পড়বার সুযোগ ঘটে নি। কারন, পশ্চিমবঙ্গ তো কোন ছাড়, বাংলাদেশের ও সেইসময়ের নামীদামী পত্রপত্রিকাগুলির তাঁকে ঘিরে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। ইলিয়াস লেখার নেশাতে লিখে যেতেন। বাজার চলতি লেখক হওয়ার কোনো নেশাই তাঁর কোনো কালে ছিল না। আর রাজনৈতিক অবস্থান ও ছিল একটু অতি বামঝোঁক সম্পন্ন। ফলে বাংলাদেশেও একটা অংশের মানুষের বাইরে ইলিয়াস, তাঁর নিজের ভাষাতেই ,'অনেকটা আমার ধাঁচে লেখেন' শওকত আলি বা তাঁদের অভিন্নহৃদয় বন্ধু বদরুদ্দিন উমর, অর্থনীতিবিদ আনু মহম্মদ প্রমুখদের ঘিরে খুব একটা আগ্রহ তৈরির প্রবণতাকেই তখন রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহত করা হত। কলকাতাতে তখন 'প্রতিভাস' প্রকাশ করেছিল ইলিয়াসের 'চিলেকোঠার সেপাই'। নয়ের দশকের একদম শুরুর দিকে। বইটির আলোচনা খবরের কাগজের পাতায় করেছিলেন অধ্যাপিকা সুমিতা চক্রবর্তী। কলকাতা থেকে বইটি প্রকাশিত এবং একটি বড় কাগজে সেটির আলোচনা প্রকাশিত হওয়ার পরেও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, তখনো এপার বাংলার পাঠকদের কাছে বহুল পঠিত নয়।

    সেইদিন মিনিবাসের একদম পিছনের সিটে বসেছেন ইলিয়াস। বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের ভিতরে সেই সময়ে যেমন এপার বাংলায় আসা একটা নিয়মিত বিষয় ছিল, ইলিয়াসের ক্ষেত্রে তেমনটা ঠিক ছিল না। তাই এপার বাংলাতে তাঁর বন্ধুর সংখ্যাও তখন খুব একটা বেশি নয়। বাসে বসেই তিনি যখন শুনলেন ইলা মিত্রের ফ্ল্যাটের দূরত্ব অন্নদাশঙ্করের সুধাময়ী অ্যাপার্টমেন্ট থেকে খুব একটা দূরে নয়, তখন ই তাঁর 'খোয়াবনামা' ঘিরে ভাবনার রশদে সংযুক্ত হয়ে গেলেন ইলা মিত্র। সে যাত্রায় কেন, পরবর্তীতেও ইলা মিত্রের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া আর হয়ে ওঠে নি ইলিয়াসের। তাই শেষবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পরেও এই দেখা না হওয়া নিয়ে আপশোষ করেছিলেন চিঠিতে। সেই চিঠি যখন সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে আসে, ইলিয়াস তখন তাঁর জন্মভূমি বগুড়ার জলেশ্বরী তলায় ঘুমের সাম্রাজ্যে চির শান্তিতে।

    অন্নদাশঙ্করের বাড়িতে ঢোকার মুহূর্ত ছিল ইলিয়াসের কাছে একটা অনুভূতির দোলার মতো। পুনরুক্তি ইলিয়াসের জীবনে লুনেছেন, এমন খুব বেশি মানুষ নেই। কিন্তু অন্নদাশঙ্করের বাড়ি যাওয়ার পথে, মিনি বাসে বসে ইলিয়াস প্রথম বললেন - আজ যদি আমার আব্বা বেঁচে থাকতেন, শুনতেন, অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাড়িতে গেছি, খুব খুশি হতেন। আব্বার নিজস্ব সংগ্রহে অন্নদাশঙ্করের অনেক বই ছিল। ছোটবেলায় ওঁর ছড়া খুব পড়েছি।

    আবার অন্নদাশঙ্করের ফ্ল্যাটের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে সেই একই কথার পুনরুক্তি। তাঁর পিতা জীবিত থাকলে, অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে পুত্রের দেখা হওয়া ঘিরে কেমন আনন্দ পেতেন, সেই কথা। একই কথা অন্নদাশঙ্করের সামনেও তিনি উচ্চারণ করলেন।

    জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার এই মেধাবী ছাত্র আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কে যাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন, তাঁদের কাছে সত্যিই অবাক হওয়ার পালা এই ভেবে যে, এক কথা ইলিয়াস কখনোই প্রায় দুবার বলতেন না। তাঁর লেখায় যেমন কছনো পুনরুক্তি, পৌনঃপৌনিকতা ছিল না, তেমনিই ব্যক্তি ইলিয়াসের জীবনেও কখনো রিপিটেশন বলে কোনো বস্তুর ঠাঁই ছিল না। এহেন মানুষটি যখন অন্নদাশঙ্করের কাছে যাওয়া কেন্দ্র করে, জীবিত থাকলে তাঁর পিতা বদিউজ্জামান ইলিয়াসের মুগ্ধতার কথা বার বার উচ্চারণ করলেন, সেই উচ্চারণ থেকেই বোঝা যায়, বাংলা সাহিত্যের ঝড়ের পাখি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জীবন এবং সৃষ্টিতে তাঁর পিতা এবং অন্নদাশঙ্কর কতোখানি জায়গা জুড়ে ছিলেন। তাই ইলিয়াস যখন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলের কংগ্রেস এক্সিবিশন রোডে সাংবাদিক নাজেশ আফরোজের খালার বাসায় রয়েছেন, তখন বয়সের বাঁধা অতিক্রম করে অন্নদাশঙ্কর তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। শেষবার ঢাকা গিয়ে, ইলিয়াসের চিরবিদায়ের মাসখানেক আগে, অন্নদাশঙ্করের খুব ইচ্ছে ছিল ইলিয়াসকে দেখতে যাওয়ার। সময়ের অভাবে তাঁর সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায় শেষপর্যন্ত।

    ইলিয়াসকে কি আমরা কাফকার সঙ্গে তুলনা করব? তাঁকে কি সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীভূক্ত করা যায়? নাকি ইলিয়াস যাঁর 'মহিষকূড়ার উপকথা' পড়ে মুগ্ধতার রেশ আজীবন ধারণ করেছিলেন, আর যিনি ইলিয়াসের 'খোয়াবনামা' পড়ে বলেছিলেন, 'উপন্যাসটা উৎড়েছে', তাই ইলিয়াসের আরো লেখা পড়তে চেয়েছিলেন, সেই ধ্রুপদীয়ানার সাধক অমিয়ভূষণ মজুমদারের উত্তরসূরী বলা যায় তাঁকে? বলা যায় সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বা আবু ইসসাকের সার্থক প্রবাহী মানবপ্রকৃতিবেত্তা?

    সমরেশ বসুর মতো অভিজ্ঞতা, সেলিনা হোসেনের মতো বৈদগ্ধ আর অন্নদাশঙ্কর, সুফিয়া কামালদের মতো অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অবশ্যই ভন্ডামি বিহীন একজন মানুষ আর স্রষ্টা ছিলেন ইলিয়াস। কলকাতায় যখন শেষবার চিকিৎসার জন্যে রয়েছেন, সেই সময়েই খুনি খোন্দকার মোশতাকের মৃত্যু হয়।খবরটি কলকাতার কাগজে প্রায় ছিলই না। মোশতাক মৃত এটা শোনার পর প্রথম ইলিয়াসের প্রতিক্রিয়া ছিল - ওই শয়তানটার স্বাভাবিক মৃত্যু তো আমি চাই নি। আমি চেয়েছিলাম, ও ব্যাটা অপঘাতে মরুক।

    ক্রুব্ধ ইলিয়াস সেদিন ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কথা বলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেছিলেন, যে দেশে অমন একটি আইন থাকতে পারে, সেই দেশের শিরোপা তে থাকা দরকার নরকঙ্কাল।

    ইলিয়াস আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল বিশ্বাসী, আস্থাবান, শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ। তাঁর বন্ধু বদরুদ্দিন উমর যেভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে উন্নাসিক, নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে থাকেন, সেইভাবেই লেখেন, তেমন কোনো উন্নাসিকতার বিন্দুমাত্র ঠাঁই ইলিয়াসের জীবনে ছিল না। তাই আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবের বিরোধী হয়েও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধু কে ঘিরে ইলিয়াসের ছিল অন্তহীন শ্রদ্ধা। সেই কারনেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করবার প্রধান ষড়যন্ত্রী খুনি মোশতাককে ঘিরে তাঁর ওই ধরণের প্রতিক্রিয়া ছিল। সেই সঙ্গে উনি খুব ঘৃণা করতেন মোশতাকের মন্ত্রীসভার ফণিভূষণ মজুমদারকে। ইলিয়াস বিশ্বাস করতেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মহানিষ্ক্রমণের পর তাঁর নাম করে, তাঁর একদল সমর্থক কমিউনিষ্ট খতমের খেলায় মেতেছিলেন। সেই দলে শ্রীসঙ্ঘের লীলা রায় (নাগ) থেকে ফণিভূষণ মজুমদারের সংযোগ ঘিরে ইলিয়াসের ছিল ভয়ঙ্কর ঘৃণা। সোমেন চন্দ কে হত্যা করা ঘিরে সেই সময়ের ঢাকা শহর কেন্দ্রিক আরএসপি নেতৃত্ব সহ। শ্রীসঙ্ঘ, লীলা রায় (নাগ), ফণিভূষণ মজুমদার -- এঁদের ভূমিকা ঘিরে ব্যক্তি আলাপচারিতায় কখনো তদাকথিত ভদ্রলোকোচিত রাখঢাক রাখতেন না ইলিয়াস। ফণিবাবুকে নিজের মন্ত্রীসভায় নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কলকাতায় বসে, মার্কিন উপদূতাবাসের সঙ্গে কনফৃডারেশন তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খুনি মোশতাককে নেওয়ার মতোই বঙ্গবন্ধুর একটি শুভবুদ্ধির মাসুল বলে মনে করতেন ইলিয়াস।

    নিজে ব্যক্তিজীবনে যেমন কখনো কোনো ভন্ডামোর আশ্রয় নেন নি ইলিয়াস, তেমনিই তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন একজন ভন্ডামি বিহীন অকপট স্রষ্টা। ইলিয়াসের প্রথম গল্পগ্রন্থ 'অন্যঘরে অন্য স্বর' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। সেই সময়কালটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সপরিবারে শাহাদাত বরণের পর বাংলাদেশ কে যখন আবার পাকিস্থানপর্বে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত চলছে, সেই গ্রহণকালে ভাষার স্বাতন্ত্রে, বাক্য এবং শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে একটা নোতুন ধারার প্রকাশ ঘটিয়ে, শৈলি এবং ভঙ্গি - এই দুইটির ভিতরে লক্ষণরেখাকে সুস্পষ্ট করে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে ইলিয়াসের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। কথাসাহিত্যে বিষয়ের সংবীক্ষণে প্রশ্নে ব্যক্তি অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক মনন, বিশেষ করে শ্রেণী অবস্থানের প্রশ্নে পরিস্কার অবস্থান যদি না লেখকের থাকে, তাহলে সেই লেখা একধরণের আরোপিত বিষয় হয়ে যায়। সংবিক্ষণ তখন হয়ে ওঠে সংবিক্ষিপ্ততার পরিচয়বাহী। ইলিয়াসের শ্রেণী অবস্থানের পরিস্কার পরিচয়টি তাঁর প্রথম লেখা থেকে স্পষ্ট ছিল। এই লুকোছাপার পথ না ধরে, সাহিত্যের প্রয়োজনে তথাকথিত ভদ্রসমাজে যেসব শব্দের ব্যবহারের গায়ে 'অশ্লীলতা'-র তকমা সেঁটে দেওয়া হয়, সেই ধরণের শব্দাবলী অবলীলায় ব্যবহার করে গিয়েছেন ইলিয়াস তাঁর প্রথম থেকে শেষ লেখায়। ফলে তাঁর লেখায় এই সংবীক্ষণ কখন যে একটি আত্মমগ্ন চেতনায় পাঠককে নিয়ে চলে যায়, তা শব্দ ব্যবহার ঘিরে ভিক্টোরিয়ান যুগের 'মিসেস গ্রান্ডি'-দের বাঙালি সংস্করণেরাও সব সময়ে বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে, ইলিয়াসের লেখা ঘিরে নাক সিঁটকানি নিয়ে পড়তে বসা একজন পাঠক, তাঁর লেখা শেষ করেন অপার মুগ্ধতা দিয়ে। আত্মমখ্নতার ভিতর দিয়ে বাস্তব এবং পরাবাস্তবের যে চিত্রাবলী ইলিয়াস রচনা করে গিয়েছেন, তা এক কথায় অপার বিস্ময় জাগায় পাঠক কে। তাই এই জায়গা থেকেই বোধহয় সমরেশ বসুর মতো মানুষ ও নিজের স্বল্পায়ু জীবন আর দীর্ঘায়ু সৃষ্টির মাঝে জীবন উপান্তে ইলিয়াসের লেখা পড়ে অনুভব করেছিলেন, এঁদের ভিতরেই নিজের অবিনশ্বতার কথা।

    ১৯৪৩ থেকে ১৯৯৭ ইলিয়াসের এই স্বল্পায়ু জীবনে উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র দুটি। অধ্যাপনা ছিল তাঁর পেশা। সাবেক জগন্নাথ কলেজের তিনি ছিলেন ছাত্র এবং শিক্ষক। স্থায়ী পেশা থাকার কারনে, সমরেশ বসুর মতো তাঁকে কেবলমাত্র লিখে সংসার নির্বাহ করতে হয় নি। সেই কারনেই হয়তো একাংশের সববোদ্ধা রাজনীতিকদের যেমন আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল সমরেশ কে, ততটা দুর্ভাগ্যের রাজটিকা ভাগ্যদেবী ইলিয়াসের কপালে লেখেন নি। সেই কারনে সৈয়দ শামসুল হকদের মতো 'সব্যসাচী' লেখকের শিরোপা ইলিয়াসের ঝুলিতে আসে নি। তাবলে সব্যসাচীত্বে নিজেকে মেলে ধরতে ইলিয়াস কিন্তু কখনো তাঁর সৃষ্টির প্রশ্নে আপোষ করেন নি। একটিবারের জন্যে শিল্পসুষমার বাস্তব মাটি থেকে তিনি নিজেকে কল্পনার জগতের বাসিন্দাতে পরিণত করেন নি। তাই উজ্জ্বল আর সজীবতার স্পর্শ থেকে তাঁর সৃষ্টি কখনো বঞ্চিত হয় নি।

    বাংলা আর বাঙালির আদি অকৃত্রিম বিষয়গুলিকে সময়োপযোগী ভঙ্গিমাতে, মূল সুরটিকে এতোটুকু নষ্ট হতে না দিয়ে, সেই ভিয়ানে নোতুন সৃষ্টি হল ইলিয়াসের কথাসাহিত্যের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য। যে রচনাশৈলি তিনি ব্যবহার করেছিলেন, সেই রচনাশৈলি বাংলা গদ্যে একটি নোতুন ধারার শুভ মহরৎ ঘটিয়েছিল। অতিভক্তের দল স্বীকার না করলেও, এই ক্ষেত্রে বলতেই হয়, কথাসাহিত্যে ভাষাশৈলির ইলিয়াস প্রবর্তিত ধারাটিরই অনুসারী ছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য। তবে ইলিয়াসের সঙ্গে তাঁর মৌলিক ফারাক হল, ইলিয়াসের সৃষ্টিতে কোনো অসুন্দরের ঠাঁই ছিল না।নবারুণ শ্ল্যাং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্যত একজন নেশাগ্রস্থ মানুষের মতো আচরণ করে সাহিত্যে বহু ক্ষেত্রেই অসুন্দরের আবাহন করে গিয়েছেন। সমরেশ বসু বলতেন, যে দেশে আঠারো খন্ড পুরাণ আছে, সেই দেশে আর নোতুন করে অশ্লীল কিছু হতে পারে না। তবে সাহিত্যে অশ্লীলতা থাকলেও, অসুন্দরের যে কোনো ঠাঁই নেই, তা নিয়ে স্পষ্ট অভিমত ছিল 'বিবর', 'প্রজাপতি', 'পাতক' এর লেখক সমরেশ বসুর। তাই তিনি ইলিয়াসের লেখার সৌন্দর্যের অভিযানকে দুইহাত তুলে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। যদিও সমরেশ ইলিয়াসের দুটি ছোট গল্পের বইই পড়বার সুযোগ পেয়েছিলেন। 'দুধেভাতে উৎপাত' ('৮৩) তিনি পড়তে পারেন নি নিজের 'দেখি নাই ফিরে'-র উপকরণ সংগ্রহ আর লেখার ব্যস্ততায়। 'দোজখের ওম' ( '৮৯) যখন প্রকাশিত হয়, তখন সমরেশ প্রয়াত। ভাবতে ইচ্ছে করে, 'চিলেকোঠার সেপাই', 'খোয়াবনামা' পড়ে উত্তেজিত সমরেশ বসু আলোচনায় মেতে উঠেছেন তাঁর পাড়ার সরস্বতী বুক স্টলে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:6147:fe7b:6fce:7db7 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০২:৪০102344
  • বেশ 

  • শাহাব আহমেদ | 2600:8807:c80d:5600:a06b:3bf1:458b:8834 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৪৭102366
  • খুবই সুন্দর আলোচনা,পড়ে ভালো লাগলো।

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 42.110.138.188 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:১৪102368
  • ভালো লেগেছে, তবে কোনো লেখকের লেখা পড়ে সমসাময়িক বিখ্যাত অন্যান্য লেখকদের কেমন লেগেছে এটা সাধারণ ভাবে মূল্যায়ন এর পদ্ধতি হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে আমার সংশয় আছে। কৌতুহল অন্য প্রসঙ্গ।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন