এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • বঙ্গে কলোনিয়াল শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

    রঞ্জন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৬ আগস্ট ২০২০ | ১৫৭০ বার পঠিত
  • খুব সংক্ষেপে ১৮৩৫ নাগাদ বাংলার প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এবং তার কিছু বৈশিষ্ট্য।

    ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা পুরোমাত্রায় চালু হওয়ার আগে, এমনকি তার পরেও, এ দেশে লেখাপড়ার যে চল ছিল তা ব্রিটিশ প্রবর্তিত পাশ্চাত্য শিক্ষার মতো প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা কেন্দ্রীভূত ছিল না। বরং এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় চালু ছিল দুটি সম্পূর্ন ভিন্ন ধারা। একটি উচ্চবর্ণের ও উচ্চশ্রেণির মানুষের জন্য সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শিক্ষাধারা। অন্যটি সাধারণ মানুষের অর্থে পরিপুষ্ট ও তাঁদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সাধারণ মানুষের কথার ভাষায় লেখা, পড়া আর অঙ্ক শেখার ধারা। প্রথম ধারায় সংস্কৃত উচ্চশিক্ষার জন্য ছিল টোল এবং আরবি-ফারসি শিক্ষার জন্য ছিল মাদ্রাসা। যদিও উত্তর ভারতে বাংলার সংস্কৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চতুষ্পাঠী নামে পরিচিত ছিল ও সেখানে বেদবিদ্যা অধ্যয়ন আবশ্যিক ছিল, কিন্তু বাংলার টোলগুলিতে প্রধানত নব্যন্যায়ের পরাক্রমের কারণেই বেদ পাঠের তেমন প্রচলন ছিল না। এই ধারার শিক্ষাব্যবস্থার খরচ চলত প্রধানত রাজা-জমিদাররা পণ্ডিত-মৌলবিদের যে নিষ্কর লাখেরাজ ও বদদ্‌-ই-মাশ ভূমি দান করতেন, তার আয়ের ওপর নির্ভর করে।

    সংস্কৃতর মতোই বাংলার ফারসি শিক্ষার বিদ্যালয়গুলোও ঠিক মাদ্রাসার পর্যায়ভুক্ত ছিল না। মূলত রাজভাষা ফারসি শেখার গরজেই এগুলি গড়ে উঠেছিল। মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে রাজসরকারের উচ্চপদগুলি বাংলার ফারসি জানা হিন্দুদের হাতে আসে। ফলে মুসলমানরা ছাড়াও হিন্দুদের মধ্যে ফারসি শেখার রেওয়াজ ক্রমশ বাড়তে থাকে। অবশ্য হিন্দুদের কেউ কেউ ফারসি শেখার পাশাপাশি বাড়িতে বাংলাও শিখত। রামমোহন রায় তখনকার রীতি অনুসারে আরবি-ফারসি ও সংস্কৃত শিখেছিলেন এবং বাড়িতে গুরুমশাই-এর কাছে কিছু বাংলাও শিখেছিলেন।

    অন্যদিকে পাঠশালার শিক্ষা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। শুধু তাই নয়, পাঠশালার শিক্ষা যে পুরোপুরি ব্যবহারিক শিক্ষা ছিল সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। কৃষি, কুটিরশিল্প, কারিগরি আর ব্যবসাই ছিল তখন সাধারণ মানুষের প্রধান জীবিকা। চাকরির খুব একটা সুযোগ তাঁদের জন্য ছিল না। কিছু কৃষিজীবী একই সঙ্গে জমিদারি সেরেস্তায় বা মহাজনের খাতা লেখার কাজও করতেন, কারণ সরকারি কাজকর্মে ফারসি ভাষা চালু থাকলেও বাংলায় জমিদারি সেরেস্তায় রাজস্ব ও খাজনার হিসেব বাংলাতে রাখা হত। পাঠশালা শিক্ষা ছিল এই কৃষিজীবী, কারিগর, দোকানদার, জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী ইত্যাদি সাধারণ শ্রেণির মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ এক সাধারণ শিক্ষাধারা। পাঠশালার ক্ষেত্রে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই শিক্ষাব্যবস্থায় জাতি বা ধর্মের কোনও ভেদাভেদ ছিল না। তাই পাঠশালার ছাত্র এবং শিক্ষক যে কোনও জাত বা ধর্মের হতে পারতেন, সেই নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনও রক্ষণশীল মনোভাব ছিল না। পাঠশালাগুলো বসত সাধারণত কোনও চণ্ডীমণ্ডপ, বা কারও বৈঠকখানা কিংবা কখনও খোলা মাঠে। গুরুমশাইরা ছিলেন পুরোপুরি পড়ুয়াদের দেওয়া বেতন ও সিধের উপর নির্ভরশীল। উনিশ শতকের প্রথম দিকে সরকারি-বেসরকারি বিবরণ ও নথি থেকে বোঝা যায়, এ শিক্ষা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং বাংলা ও বিহারের অধিকাংশ গ্রামে এ ধরনের পাঠশালা ছিল।

    বর্ধমানের ৬২৭ জন হিন্দু শিক্ষকের মধ্যে ১০৭ জন ব্রাহ্মণ ও ৩৬৯ জন কায়স্থ ছাড়াও অন্য বর্ণের শিক্ষক ছিলেন ১৫১ জন বা ২৪%। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ৫০ জন সদ্‌গোপ; ৩০ জন আগুরি; ১৩ জন বৈষ্ণব; ১০ জন তেলি; ৯ জন ভট্ট; ৬ জন গন্ধবণিক; ৫ জন কৈবর্ত; ৪ জন চণ্ডাল; ৩ জন করে কুমোর ও নাপিত; ২ জন করে সুবর্ণবণিক,‌ গোয়ালা ও বাগদি এবং নাগা, তাঁতি, দৈবজ্ঞ, বৈদ্য, যুগি, বাড়ুই, কামার, ময়রা, ধোপা, রাজপুত, কলু ও শুঁড়ি একজন করে। এ ছাড়াও ছিলেন ৯ জন মুসলমান ও ৩ জন খ্রিস্টান শিক্ষক।

    শিক্ষকদের মতো পড়ুয়ারাও বিভিন্ন ধর্ম বা বর্ণসম্প্রদায়ের ছিল। ব্রাহ্মণ-কায়স্থ ছাত্রের সংখ্যা মোট ছাত্রসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি ছিল না। বিহারের দুটি জেলায় এই সংখ্যাটা ছিল আরও কম, ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। যেমন, বীরভূমে মোট ৬, ১২০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১,৮৫৩ জন ব্রাহ্মণ ও ৪৮৭ জন কায়স্থ ছাড়াও অন্যান্য বর্ণের ছাত্র ছিল ৩৭৮০ জন বা প্রায় ৬২%। বর্ধমানের ৬২৯টি পাঠশালার মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজারের কিছু বেশি। এদের মধ্যে ৩,৪২৯ জন ব্রাহ্মণ ও ১,৮৪৬ জন কায়স্থ ছাড়া বাকি সবাই ছিল সমাজের একেবারে নীচের স্তরের বিভিন্ন বর্ণের মানুষ। এ ছাড়াও পাঠশালায় ছিল ৭৬৯ জন মুসলমান ও ১৩ জন খ্রিস্টান। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, দক্ষিণ বিহার ও ত্রিহুতের আরবি-ফারসি বিদ্যালয়গুলির মোট ৭২৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৪ জন হিন্দু ছাড়া বাকিরা ছিলেন মুসলমান। কিন্তু এই সব স্কুলের মোট ৩,৬৬৩ জন পড়ুয়ার মধ্যে ২,০৯৬ জন ছিল হিন্দু।

    একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় মাদ্রাজেও। সালেম, তিন্নেভেল্লি ও উত্তর আর্কটে শূদ্রসহ অন্যান্য নিম্নবর্ণের ছাত্র ছিল মোট ছাত্রসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০%; বেলারি ও গঞ্জামে ৬৩% এবং মালাবারে ৫৪%। তাছাড়া মালাবারে জ্যোতির্বিদ্যার ৮০৮ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৭৮ জন ছিল ব্রাহ্মণ, চিকিৎসাশাস্ত্রে আরও কম – ১৯৪ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৩১ জন। এই পরিস্থিতিতে উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, এমনকি ১৮৩৪ সালেও অধিকাংশ জাতীয় স্কুলেই পাঠক্রম সীমাবদ্ধ ছিল মূলত ধর্মীয় শিক্ষা এবং লেখা-পড়া-অঙ্ক (The three ‘R’s) শেখার ওপর। অনেক গ্রামীণ স্কুলে অমঙ্গলের আশঙ্কায় লেখা অবধি শেখানো হত না।

    অ্যাডাম তাঁর তৃতীয় প্রতিবেদনের উপসংহারে দেশজ ভাষায় দেশজ শিক্ষার প্রচলনের জন্য জোরালো সওয়াল করে বলেন

    I, however, expressed the opinion that, as far as my information then enabled me to judge existing native institutions from the highest to the lowest, of all kinds and classes, were the fittest means to be employed for raising and improving the character of the people — that to employ those institutions for such a purpose would be “the simplest, the safest, the most popular, the most economical, and the most effectual plan for giving that stimulus to the native mind which it needs on the subject of education, and for eliciting the exertions of the natives themselves for their own improvement, without which all other means must he unavailing”

    বলা বাহুল্য, ইংরেজি শিক্ষা চালু করার প্রবল তাগিদে তখন অ্যাডামের কথা শোনা হয়নি। পরে ডালহোউসির আমলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ছোটলাট টোমাসনের 'হলকাবন্দি বিদ্যালয়'-এর চরম সাফল্য নজরে পড়ায় অ্যাডাম-অনুসৃত পথে বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিদ্যাসাগর সেই নির্দেশ অমান্য করে (ছোটলাট হ্যালিডের মদতে) চারটে জেলায় চালু করেন ২০টা মডেল স্কুল। যদিও তাতে প্রাথমিক শিক্ষার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। অবশেষে লর্ড মেয়ো ও ছোটলাট ক্যাম্পবেল আংলার প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজান ওই অ্যাডামের দেখানো পথেই। হান্টার কমিশনের পরে বাংলা তখনও অবধি টিকে থাকা প্রায় ৫০ হাজার পাঠশালাকে কেন্দ্রীভূত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়। যে কাজ ৫০ বছর আগে করা যেত অনায়াসে, সে বিষয়ে অযথা কেঁচে গণ্ডুষ করে ৫০টা বছর নষ্ট করা হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sm | 42.110.130.38 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৩:৪৬732550
  • পাঠ শালায় কতদূর অবধি পড়ানো হতো? আই মিন আজকের হিসাবে কতো ক্লাস অবধি?

    উচ্চশিক্ষা কি খালি বর্ন শ্রেষ্ঠ দের জন্য বরাদ্দ থাক তো?

    আপনি বলছেন, অ্যাডাম সাহেব,দেশজ ভাষায় দেশজ শিক্ষার ওপর জোর সওয়াল করেছেন।তাহলে উচ্চ শিক্ষা কি ভাষায় লাভ করবে? মানে ডাক্তারী,ইঞ্জিনিয়ারিং কি ভাষায় পড়বে? বাংলায়?গুজরাটি তে?

    বিদ্যাসাগর এতো বর্ণ পরিচয়, সীতার বনবাস,শকুন্তলা,কাদের জন্য লিখলেন?এগুলো তো বাংলা তেই লিখেছিলেন! ঘুলিয়ে যাচ্ছে,সব কিছু।

    নারী শিক্ষা নিয়েই বা অ্যাডাম সাহেব কি বলেছেন?

  • এলেবেলে | 202.142.71.118 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৪:৩২732551
  • ১. পাঠশালায় ছেলেরা পড়ত কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর। শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন ---পাঠশালে পাঠনার রীতি এই ছিল যে, বালকেরা প্রথমে মাটিতে খড়ি দিয়া বর্ণ পরিচয় করিত; তৎপরে তালপাত্রে স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, যুক্তবর্ণ, শটিকা, কড়াকিয়া, বুড়িকিয়া প্রভৃতি লিখিত; তৎপর তালপাত্র হইতে কদলীপত্রে উন্নীত হইত; তখন তেরিজ, জমাখরচ, শুভঙ্করী, কাঠাকালী, বিঘাকালী প্রভৃতি শিখিত; সর্বশেষে কাগজে উন্নীত হইয়া চিঠিপত্র লিখিতে শিখিত। সে সময়ে শিক্ষা-প্রণালীর উৎকর্ষের মধ্যে এইটুকু স্মরণে আছে যে, পাঠশালে শিক্ষিত বালকগণ মানসাঙ্ক বিষয়ে আশ্চর্য পারদর্শিতা দেখাইত; মুখে মুখে কঠিন কঠিন অঙ্ক কষিয়া দিতে পারিত। চক্ষের নিমিষে বড় বড় হিসাব পরিষ্কার করিয়া ফেলিত। এক্ষণে যেমন ভৃত্যের দশ দিনের বেতন দিতে হইলেও ইংরাজী-শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের কাগজ ও পেন্সিল চাই, ত্রৈরাশিকের অঙ্কপাত করিয়া কাগজ ভরিয়া ফেলিতে হয়, তখন সেরূপ ছিল না।

    ২. উচ্চশিক্ষা কেবল বর্ণশ্রেষ্ঠদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। লিখেছি দেখুন --- মালাবারে জ্যোতির্বিদ্যার ৮০৮ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৭৮ জন ছিল ব্রাহ্মণ, চিকিৎসাশাস্ত্রে আরও কম – ১৯৪ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৩১ জন।

    ৩. উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে অ্যাডামের মত ছিল  --- To make the superstructure lofty and firm, the foundation should be broad and deep; and, thus building from the foundation, all classes of institutions and every grade of instruction may be combined with harmonious and salutary effect. দুর্ভাগবশত সেটা হয়নি। ভিত না তৈরি করেই সুপারস্ট্রাকচার বানাতে গিয়ে গোটা ব্যবস্থাটা সেই যে তাসের বাড়ির মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে, সে বাড়ির হাল আজ অবধি ঠিক হয়নি।

    ৪. নারীশিক্ষার হাল ভালো ছিল না, তবে মেয়েরা বাড়িতে লেখাপড়া করত যাকে অ্যাডাম বলেছেন 'domestic instruction'।

    বিদ্যাসাগর নিয়ে এখানে কিছু বলব না।

  • sm | 42.110.131.14 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৭:০৪732552
  • চিকিৎসা বা প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদ মূলত ক্ষত্রিয় শ্রেণী বা বৈদ্যরা করতো।অশ্বিনী কুমার গণ দেবতাদের মধ্যে উচ্চশ্রেণীর ছিলেন না।
    শল্য কথাটির মানে হলো তীর।যেহেতু সার্জারি করতে ধারালো জিনিষ প্রয়োজন,তাই এটিকে শল্য চিকিৎসা বলে।সুতরাং এখানেও ক্ষত্রিয় গণ এসে যাচ্ছে।
    জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে কোন আই ডিয়া নেই।

    কিন্তু মূল কথা হলো,ক্লাস ফাইভ বা সিক্স অবধি সকলের জন্য শিক্ষা।তার পর উচ্চ শিক্ষা মূলত উচ্চ শ্রেণীর দখলে!
    যতোই বলুন,ইংরেজরা না উদ্যোগ নিলে উচ্চশিক্ষা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা থেকে দূরে থাকতো। শুভঙ্করী শিখলেও, ট্রিগণমেট্রি,ক্যালকুলাস, এসব শেখ হতো না।পাশ্চাত্য দর্শন,সাহিত্য অনাস্বাদিত থেকে যেতো।
  • রঞ্জন | 182.69.52.171 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ২০:১১732554
  • মাইরি! ১৯৫৪ সালে আমার বয়েস ৪ বছর। বাবার সঙ্গে গেছি বর্তমান ঝারখন্ডের নতুন গড়ে ওঠা বোকারো পাওয়ার হাউস জনপদে। কোলকাতা থেকে আনা হল ওয়ার্ড বুক , সহ্জ পাঠ দুই ভাগ এবং ধারাপাত। ১ থেকে দশের নামতা মুখস্থ কর । আর কড়াকিয়া, গন্ডাকিয়া, শতকিয়া ও শুভংকরের আর্যা শেখ।

    কুড়োবা কুড়োবা কুড়োবা লিজ্জে,

    কাঠায় কুড়োবা কাঠায় লিজ্জে,

    কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ,

    বিশ গণ্ডা হয় কাঠার সমান।।

    এর মানে আমি আজও জানিনা। কী গভভোযন্ত্রণা!

  • ar | 96.230.106.154 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ০৯:৫৪732560
  • @রঞ্জন

    ছড়াটি জমির ক্ষেত্রফল মাপা বা কালি করার ছড়া।

    কুড়োবা অর্থে বিঘে। ২০ কাঠায় ১ বিঘে (বাঙ্গলাতে, বিহারে বেশি ছিল)।
    লিজ্জে হল, "ধর" বা "লিবে"
    ধূল হল এক গণ্ডা।

    কুড়োবা x কুড়োবা = (ক্ষেত্রের) কুড়োবা লও
    যার মানে হল,
    ১ বিঘে x ১ বিঘে = জমির মাপ ১ বিঘে
    কাঠা x কুড়োবা = (ক্ষেত্রের) কাঠায় লও
    কাঠা x কাঠা = (ক্ষেত্রের) ধুল (বা গণ্ডায়) লও
    যত মোট ধূল বা গণ্ডা হবে তার প্রতি ২০ গণ্ডা ক্ষেত্রকে (জমিকে) ১ কাঠা ধরে নিতে হবে।
    বাংলাতে জমির মাপে এখনও বর্গ কথাটা ব্যবহার করা হয় না।

    সূত্রঃ হরির চরণ ছুঁয়ে সিরাজের চাঁদ সহায়!!
  • নীপা | 217.115.112.198 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১৬:৫৬732568
  • এলেবেলে | 202.142.71.118 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৫:০১453576

    অরিন, যথা আজ্ঞা। আগে জোন্সের সংস্কৃতচর্চার ইতিহাস।

    ষোড়শ শতক থেকেই ইউরোপীয় দার্শনিকরা মানুষের ‘আদি’ ভাষার সন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল পৃথিবীর সমস্ত ভাষাই সেই আদিভাষা থেকে উদ্ভূত। এই আদিভাষাকে তাঁরা ‘পবিত্র’ ও ‘অভিজাত’ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, ফলে সমগ্র ইউরোপের জন্য এই আদিভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল লাতিন, গ্রিক ও হিব্রু।

    এই ধারণা আরও জোরালো হয় ১৭৬৯ সালে হার্ডার-এর Essay on the Origin of Language প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পরে, যেখানে তিনি সমস্ত ভাষার একটিমাত্র ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখান। শ্বেতাঙ্গদের (বর্তমানের পরিভাষায় ককেশিয়ান) সমস্ত বর্ণের মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করে প্রথম কেতাবি কিতাব প্রকাশিত হয় জার্মানির গোটিঙ্গন (Gottingen) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ব্রিটিশরা এই তত্ত্ব লুফে নেয়। শ্বেতাঙ্গদের ভাষাকে শ্রেষ্ঠতম বিবেচনা করে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর নির্মাণ শুরু হয় এবং সেমেটিক (মূলত আরবি) ও হ্যামিটিক (উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত) ভাষাসমূহকে অ-শ্বেতাঙ্গদের (মূলত বাদামি বর্ণের মানুষজন) ভাষা হিসেবে চিহিত করা হয়। এই ভাষাশ্রেণির একদম শেষ স্তরে আশ্রয় নেয় ‘কালা আদমি’-দের নিগ্রিটিক (জুলু) বা সুদানিক (ইথিওপিয়া থেকে সেনেগাল অবধি প্রচলিত) ভাষাগুলি। এইভাবে তিনটি স্তরে থাকবন্দি হয় পৃথিবীর যাবতীয় ভাষা।

    সংস্কৃতকে এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীতে স্থান দেওয়া হলেও, তাকে অতীত ভারতবর্ষের লুপ্ত গরিমা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে ইংরেজরা এ কথা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে যে, সংস্কৃত ‘মৃত’ ভাষা এবং তার সঙ্গে বর্তমান উপমহাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতির যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে দেশে চালু সমস্ত ভাষাই হয় ‘তদ্ভব’ (dialects) নতুবা অপকৃষ্ট ‘দেশি’ (vernacular) ভাষা মাত্র। অর্থাৎ সেই তিনটি স্তরে থাকবন্দি করে ফেলার প্রক্রিয়া এখানেও অব্যাহত থাকে। ভারতবর্ষে এই কাজ প্রথমে শুরু হয় এশিয়াটিক সোসাইটি ও পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বিদেশি সাহেবদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেশি মোসাহেবদের সক্রিয় সহযোগিতায়।

    চলবে...

    এলেবেলে | 202.142.71.118 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৫:০৫453577

    ১৮১১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সঞ্চিত অর্থে সংস্কৃতের অধ্যাপকপদ প্রতিষ্ঠা করেন কর্নেল বোডেন। একদা ওই পদে অধিষ্ঠিত স্যার মনিয়র উইলিয়ামস ১৮৯৯ সালে রচিত সংস্কৃত থেকে ইংরেজি অভিধানের ভূমিকায় বলেছেন, বোডেন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে এই পদ স্থাপনে তাঁর লক্ষ্য সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল-অনুবাদের উন্নয়ন, যাতে তাঁর স্বদেশীয়রা ভারতবাসীকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারে। এই মানসিকতা থেকেই হ্যালহেড সাহেব কড়া নির্দেশ দেন, সংস্কৃত ভাষাটার চর্চা এমনভাবে করতে হবে যাতে ভাষাটা ব্রিটিশদের কাছে হয়ে ওঠে ‘a general medium of intercourse between the Government and its Subjects; between the Natives of Europe who are to rule, and the Inhabitants of India who are to obey’।

    A Grammar of the Bengali Language গ্রন্থে হ্যালহেড রীতিমতো গর্বভরে জানান যে, তিনিই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ‘আবিষ্কার’ করেছেন ‘the Bengal language merely as derived from its parent Shanscrit’। আর জোন্সকে তাঁর ভবিষ্যতের ‘আবিষ্কার’-এর পথ মসৃণ করে দেন এই ধরতাইটুকু দিয়ে যে, তিনি চরম বিস্মিত হয়েছেন ‘the similitude of Shanscrit words with those of Persian and Arabic, and even of Latin and Greek’ দেখে। বাধ্য ছাত্রের মতো ‘ভারততত্ত্ববিদ’ উইলিয়াম জোন্স মহাজন হ্যালহেডের দেখানো পথ অনুসরণ করে ১৭৮৬-র ২ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটির এক বক্তৃতায় ‘আবিষ্কার’ করেন শাসকের সেই বহুপ্রার্থিত তত্ত্বটি। তিনি বলেন,

    The Sanscrit language, whatever be its antiquity, is of a wonderful structure; more perfect than the Greek, more copious than the Latin, and more exquisitely refined than either, yet bearing to both of them a stronger affinity, both in the roots of verbs and in the forms of grammar, …there is a similar reason, though not quite so forcible, for supposing that both the Gothick and the Celtick, though blended with a very different idiom, had the same origin with the Sanscrit; and the old Persian might be added to the same family ….

    চলবে...

    এলেবেলে | 202.142.71.118 | ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৫:১৩453578

    এহেন জোন্সের সংস্কৃত চর্চার সামান্য হদিশ নেওয়া যাক। তিনি লন্ডনে নানা ভাষা শিখলেও সংস্কৃত জানতেন না। কলকাতায় আসার আগে, অক্সফোর্ডে শিক্ষক রেখে আরবি শিখেছেন তিনি – এমনটা অবশ্য জানা গেছে। ১৭৮৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন বটে, অথচ তখনও অবধি সংস্কৃতর ‘স’ জানেন না। মুনশিদের দিয়ে আরবি, ফারসি আর হিন্দুস্তানি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কোনও ক্রমে। কলকাতায় আসা ইস্তক সংস্কৃত নিয়ে তাঁর কোনও উৎসাহের কথা জানা তো যাচ্ছেই না, বরং উইলকিন্সকে ১৭৮৪-র ২৪ এপ্রিল তিনি জানাচ্ছেন ‘life is too short and my necessary business too long for me to think at my age of acquiring a new language’। এদিকে আদালতে সংস্কৃত শাস্ত্রবিচার করে রায় দিতে হয়, জোন্সের যাকে বলে একেবারে বেইজ্জত অবস্থা! তো হিন্দু শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের খপ্পর থেকে নিজেকে বাঁচাতে এবং সে ভাষাটার পকড় নিজের হাতে তুলে নিতে ১৭৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উইলিয়াম পিট (জুনিয়র)-কে জানান তাঁর সংস্কৃত শেখার আসল মনোবাসনার কথা। ভাষা হিসেবে সংস্কৃত শেখা তাঁর উদ্দেশ্যে নয়, আসলে তিনি ভাষাটা শিখতে আগ্রহী যাতে তিনি ‘may check on the pandits in the Court’। সময়কালটা খেয়াল করুন দয়া করে।

    ভারতে পদার্পণ করার প্রায় বছরখানেকের মধ্যে এই উদ্দেশ্যে তিনি হাজির হয়েছেন কাশী, যদিও সেখান থেকে তাঁকে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এবারে ১৭৮৫-র সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সংস্কৃত শিক্ষায় হাতে খড়ি নিতে পাড়ি জমান নবদ্বীপ। ৮ সেপ্টেম্বর রাসেলকে চিঠি লিখে তিনি জানাচ্ছেন যে সেখানে তাঁর যাওয়ার একমাত্র কারণ হল এমন একজন উপযুক্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্ধান করা, যাঁর থেকে তিনি ‘the rudiments of that venerable and interesting language’ আয়ত্ত করে স্মৃতিশাস্ত্র অনুবাদ করতে পারেন। কিন্তু দুর্গাপুজোর কারণে নবদ্বীপের ব্রাহ্মণেরা তখন নবদ্বীপ ছেড়ে দূরস্থ যজমানদের বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে ব্রাহ্মণ পণ্ডিদের কাউকে না পেয়ে অগত্যা অক্টোবর মাসে কলকাতা ফেরেন অব্রাহ্মণ (বৈদ্য) রামলোচন পণ্ডিতকে সঙ্গে নিয়ে। কৃষ্ণনগর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর উইলকিন্সকে চিঠিতে জানাচ্ছেন, তিনি এবারে রামলোচনের থেকে হিতোপদেশ পড়া শিখবেন। হিতোপদেশ মানে সংস্কৃতের বর্ণপরিচয় হওয়ার পরের ধাপ! মাত্র মাসখানেকের সংস্কৃত ভাষাশিক্ষার সঙ্গে ফারসি ভাষার জ্ঞান মিলিয়ে আদালতে পণ্ডিতদের মত উলটে দিয়ে জোন্স নিজের রায় দেওয়া শুরু করেন। শুধু তাই নয়, রামলোচনেরর যাদুগুণে মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি সংস্কৃততে এত পারদর্শী হয়ে ওঠেন যে, ১৭৮৬ সালের ২৩ অক্টোবর হেস্টিংসকে জানাচ্ছেন তিনি ‘tolerably strong in Sanskrit’ এবং ‘Menu, the Minos of India’ অনুবাদ করতে সক্ষম!

    এই লোক কি না ১৭৮৬-তে সংস্কৃতর সঙ্গে মিল পাচ্ছেন লাতিনের! তখনও ওর দুধেভাতে দশা কাটেনি। এর পরে পরেই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার 'অপরাধ'-এ আরবিকে তাড়ানো হবে। আর ফারসি সেই গোষ্ঠীভুক্ত হলেও তাকেও তাড়াবে ফোর্ট উইলিয়ামের কেরি ও তার মুনশিরা। একেই বলে কলোনিয়াল নির্মাণ।

    শেষ 

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ০৯:৫৮453718

    এমনিতেও কোভিডকালে কারও পেচুনে আঠা লাগানোর কাজও নেই। তো কী আর করা। আমার অবর্তমানে আমার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে এখানে যে বিভিন্ন তরঙ্গ উঠেছে সেটার সামান্য উত্তর দিয়ে নিই বরং।

    বিবাদভঙ্গার্ণব, পুঁজি কি ওই দুটোই? মানে অতুল সুর আর শোধগঙ্গার রিসার্চ পেপারটা? নাকি আরও আছে? ধরে নিচ্ছি আছে, সেগুলো হয়তো পরে প্রকাশ করবেন। আপাতত যেটুকু দিয়েছেন সে বিষয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।

    ১. //'জজ পন্ডিত' পদটি কতদিন পর্যন্ত এদেশীয় আদালতে (সুপ্রীম কোর্ট?)  বহাল ছিল? "Gentoo Code" বা "A Digest of Hindu Law on Contracts and Succession" নামে হিন্দু স্মৃতিশাস্ত্রর সারাৎসার গুলি ইংরিজিতে অনুবাদের পর কি এই তোল্লাই দেওয়া পদটি বন্ধ হয়ে যায়?//

    ১৮৬৪ পর্যন্ত। তোল্লাই দেওয়া অনুবাদের সময়েই বন্ধ হয়ে যায়। যে জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন নিয়ে অতুল সুর উলুতপুলুত, তাঁকে কোলব্রুক ‘frivolous’ বলতেও দ্বিধা করেননি। পুরো বিষয়টা কব্জায় নিয়ে নেয় ব্রিটিশরা, পণ্ডিতরা তাদের অধস্তন কর্মচারী হিসেবে থাকে মাত্র। মেকলে তাঁর মিনিটে সেটাও বন্ধ করে দিতে বলেছেন। তারপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আরও বছর তিরিশেক টিকে ছিল মাত্র।

    ২. //শুধু মনু কেন? এমন ধারণা কোথা থেকে এল যে বিবাদভঙ্গার্ণব বা তার ইংরেজি অনুবাদ মূলত বা শুধুই মনুস্মৃতি?//

    মনে হওয়ার  কিছু নেই। স্মৃতিশাস্ত্রের শেষ কথা মনু। মনুতে না থাকলে বাকিরা। এটাই দস্তুর। ওই কারণেই বিদ্যাসাগর পরাশরকে পাকড়ান বি.বি.তে, মনুকে ব.বা.তে। অথচ মনু বলে গেছেন সবার ওপরে রাজ আইন। কেউ সেই রাস্তায় হাঁটেননি। রামুও না, বিদু তো আরও না।

    ৩. //এইটা তো একটু রেফারেন্স সহ প্রমাণ করতে হবে। জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের করা স্মৃতিশাস্ত্রসার ম্যানুফ্যাকচার্ড ছিল একথা সেযুগের-এযুগের কোনো সংস্কৃতবেত্তা বলার সাহস দেখিয়ে উঠেছেন? বা, তার ইংরেজি অনুবাদে ফাঁক ছিল এমনটাও কেউ কখনো বলেছেন? ইংরেজি অনুবাদ ঠিকঠাক না হয়ে থাকলে আদালতের জজ-পন্ডিতেরা তার মীনাংসা করতেন না, এমন কোনো উল্লেখ কোথাও রয়েছে?//

    তার ইংরেজি অনুবাদে ফাঁক ছিল কি না তা রেফারেন্স সহ দেখানো হবে। অন্তত খান দশেক উদাহরণ সহ। সেখানে ইন্টারপোলেশন ও এক্সট্রাপোলেশন - দুটোই থাকবে। স্রোতের বিরুদ্ধে যাঁরা সাঁতার কাটেন, তাঁদের কেচ্ছা ঘাঁটলে চলে না। সলিড রেফারেন্স লাগে। সেসব আছে বিস্তর। যথাসময়ে যথাস্থানে দেওয়া হবে। আদালতের জজপণ্ডিতরা ব্রিটিশের বেতনভুক কর্মচারী। আপনি আপনার বসকে অমান্য করতে পারেন?

    ৪. //ইংরেজদের আগে দেশীয় আইন (রাজাদের দরবারে, তা ধরুন নবকৃষ্ণ দেবের সভাতেই) কীভাবে এসমস্ত ডিসপিউটের মীমাংসা করত? স্মৃতিশাস্ত্র অনুযায়ী নয়?//

    সারা ভারতবর্ষ = নবকৃষ্ণ দেবের সভা নয়। আইনের ফলে সেটাই হয়। সেটা ভালো হয়েছিল না মন্দ তা-ও আলোচনায় আসবে।

    এলসিএম, //না, না, সংস্কৃত কলেজে কি পড়ানো হত সে তো অনেক ডিটেইলস এর ব্যাপার, একদম কিস্যু জানি না। //

    আপনি কেন, তামাম ভারতবর্ষের কেউ জানেন না। বহুকষ্টে তাঁর আমলে প্রাচ্য দর্শনের সিলেবাস পেয়েছি। লোকে এইরকম বলে থাকে, দশচক্রে ভগবান ভূত এভাবেই হয়। তবে এর জন্য লজ্জা পাবেন না। খিল্লি তো করবই না।

    ~~, //এলেবেলের বিদ্যাসাগর অ্যাসেসমেন্ট কোনদিকে যেতে পারে স্বপন বসু অশোক সেনের নাম উল্লেখে একটা ধারণা পাওয়া গেল। অশোক মুখোপাধ্যায় সেই ধারার অ্যাসেসমেন্টের ঐতিহ্য নিয়ে বড় লেখা লিখেছেন। এটা এই প্রসঙ্গে পড়ে দেখা যেতে পারে।//

    এর আগে রামকেষ্ট ভটচাজের প্রসঙ্গে মন্তব্য করায় এক পূর্ণকুম্ভ স্পেকুলেশন করেছিলেন। আপনার তো সে দোষ ছিল না? পরমেশ আচার্য বিদ্যাসাগরের বোধোদয় নিয়ে মিথ ভেঙে খানখান করে দিয়েছেন। সেই সংস্করণ আমার হাতে আছে, মানে বোধোদয়-এর দ্বিতীয় সংস্করণটা। একদম প্রাইমারি রেফারেন্স। কাজেই...

    স্বপন বসু বাল্যবিবাহ নিয়ে প্রচুর তথ্য দিয়েছেন। ওটুকু ভালো। অশোক সেন মার্ক্সিস্ট ঘরানা থেকে বিদ্যাসাগরকে ধরেছেন। কাজেই আলাদা মূল্য আছে। অশোকদা আমার বন্ধু। পুরনো হোলটাইমার এসইউসি-র। আমার ফ্ল্যাটে এসে একসঙ্গে আড্ডা মেরেছেন। পন্ডিত কিন্তু পুরনো ঘরানার। ও লেখা বহু আগে পড়া। নস্যাৎ করতে সময় লাগবে না। এবং অশোকদা আমাকে অসম্ভব স্নেহ করেন, আমার এই বিষয়ে মনোভাবও জানেন। কিন্তু কোনও দিন খিল্লি করেননি। কিছুদিন আগেও ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। কাজেই ও প্রসঙ্গ থাকুক।

    //স্বপন বসু - সমকালে বিদ্যাসাগর - পুস্তক বিপণি ১৯৯৩// সফট কপিতে প্রচুর পাতা নেই। বইটি নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে বাঙলার মুখ থেকে। হার্ড কপি ছাড়া গতি নেই।

    অমিত, //মনু পরাশর থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন বলে বিদ্যাসাগর রামমোহনকে রিগ্রেসিভ বা এযুগের মনু পরাশর বলাটা জাস্ট হাস্যকর. সে যুগে, সমাজপতিদের দাপট মোকাবিলা করে এসব নোংরা প্রথা সরাতে হলে অন্য কি রাস্তা ছিল , সেটা জানা আছে কি ? নাকি ঢিল ছোড়াটাই মুখ্য উদ্ধেশ্য ?.//

    না, ঢিল ছুঁড়ে লাভ হয় না। ক্রিটিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট করতে হয়। এই গুরুপুজোর দেশে যার খুব অভাব। এখানে তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি মাইক্রো লেভেলে। জীবনের শেষদিনে ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রেও সহবাস সম্মতি বিল প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর শাস্ত্রবচন আউড়াচ্ছেন! মানে ওই ফাঁস থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। ১৮৫০এ বাল্যবিবাহের দোষ লিখেছিলেন যে বিদ্যাসাগর, তাঁকে আমি সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করি। কিন্তু পরাশরকে মান্য করার পরে এমন ফাঁসা ফাঁসেন যে জীবনে আর বাল্যবিবাহ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে পারেননি। পরাশর বাল্যবিবাহ নিয়ে কী লিখেছেন, সেটা আলটপকা মন্তব্য করার আগে দেখে নেবেন দয়া করেন। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন - মনু যেহেতু বলেছেন নারী কেবল কন্যাসন্তান প্রসব করলে বহুবিবাহ জায়েজ, উনি তাকে মেনেছেন। এমনকি নারী যদি অপ্রিয়বাদিনী হয়, তবেও জায়েজ। বঙ্কিম আচ্ছাসে কড়কেছিলেন তাঁর এই স্টান্সকে। পড়ে নেবেন। বি.বি-তে উপকার হয়েছিল না অপকার - তার অনেক লেখা আছে। ঢিল ছোঁড়ার আগে সেগুলো পড়ে নেবেন। যেমন পড়ে নেবেন উইডো রিম্যারেজ অ্যাক্ট। দেখতে পাবেন সেখানে বিদ্যাসাগরের শাস্ত্রবচনকে আদৌ পাত্তা দেওয়া হয়েছিল কিনা। প্রচলিত চিন্তার দাসত্ব করতে চাইলে অন্য কথা।

    রঞ্জনবাবু, ক্লিনচিট দিলাম! কিছু বলব না!!

    //ঠিক যেমন অনেকে ঐতিহাসিকের ভান করেন, কিন্তু র সোর্স থেকে ইন্টারপ্রিটেশনের জন্যে যে ট্রেনিং দরকার সেসব না থাকায় শেষ পর্যন্ত সবই হাস্যকর রকমের পর্বতের মূষিকপ্রসব হয়ে যায়। //

    বিনয় ঘোষ আর ইন্দ্রমিত্তিরকে মান্য করলে এই দশাই হয়! প্রথম জন বলেছেন ইয়ং গর্ডনের সঙ্গে খটাখটির জোরে বিদ্যাসাগর চাকরি ছাড়েন! কোনও রেফারেন্স ছাড়াই আপ্তবচন। আর মিত্তিরে অ্যানেকডোটে ছয়লাপ। পূর্ণকুম্ভ যে ব্রজেন বন্দ্যোর কৃশতনু বইটি পড়েননি সে কথা হলফ করে বলা যায়!

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১০:১৬453724

    রঞ্জনবাবু, নাঃ পারলাম না। আমি লেখার আগেই দেখি বিস্তর ভাটিয়ে ফেলেছেন! রামেন্দসুন্দর ও রবীন্দ্রনাথের সেই ঘিসিপিটি কোট এবং বিদুর বেদান্ত বিরোধিতা নিয়ে। তিনটেরই ঘাড় মটকে দিই?

    ১. রামেন্দ্রসুন্দর --- পুরো প্রবন্ধটা পড়েছেন নাকি ওই এলসিএমের মতো কানে শুনেই??? নাকি অশোকদার লেখা থেকে। আপনি যেখানটা থেকে তুলেছেন তার অব্যবহিত পরেই আছে বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্তের যুগপৎ ব্রিটিশপ্রীতি ও ইসলামোফোবিয়ার চরম নমুনা। পড়ুন দিকি।

    একটা কথা আজকাল অহরহঃ শুনিতে পাওয়া যায়। ইংরাজগণের শুভাগমনের পর হইতে চারি দিকে আমাদিগের জাতীয় অভ্যুদয়ের লক্ষণ দেখা দিয়াছে। অবশ্য অতি প্রাচীন কালে যখন হিন্দু রাজা হিন্দু রাজ্যে শাসনদণ্ড পরিচালনা করিতেন, তখন আমাদের জাতীয় অবস্থা সমধিক উন্নত ছিল, অনেকে এ কথা স্বীকার করেন; অন্ততঃ হিন্দুজাতির পুরাবৃত্তের অভাব সত্ত্বেও এ কথা লইয়া তর্ক-বিতর্ক যতক্ষণ ইচ্ছা চালান যাইতে  পারে। কিন্তু সেদিনকার মোসলমানি আমলে আমাদের দুর্দশার যে একশেষ ঘটিয়াছিল, এবং ইংরাজ বাহাদুর আমাদের সামাজিক জীবনটাকে সঙ্কটাপন্ন মুমূর্ষু অবস্থা হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছেন; এবং তাঁহাদের দেশ হইতে আমদানি রাজনৈতিক ব্রাণ্ডি ও কুইনাইন যথেষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করিয়া সমাজশরীরে বলাধান ও নবজীবনের সঞ্চার করিয়াছেন, ইহা একরকম  সর্ববাদিসম্মত সত্য।

    রবীন্দ্রনাথ --- এইটা পড়েছেন? এইরকম অসংখ্য কথা (রবীন্দ্রনাথের থাকবে ওই বিদ্যাসাগরচরিতকে কাউন্টার করতে) থাকবে।

    ...যে-চাষা তাহার ছেলেকে প্রাইমারি স্কুলে পাঠায়, তাহার একটিমাত্র উদ্দেশ্য এই যে, তাহার ছেলে নিতান্ত চাষা না থাকিয়া কিঞ্চিৎপরিমাণে ভদ্রসমাজ-ঘেঁষা হইবার যোগ্য হয়; চিঠিটা পত্রটা লিখিতে পারে, পড়িতেও পারে, জমিদারের কাছারিতে দাঁড়াইয়া কতকটা ভদ্রছাঁদে মোক্তারি করিতে পারে, গ্রামের মোড়লি করিবার যোগ্য হয়, ভদ্রলোকের মুখে শুনিতে পায় যে, “তাইতো রে, তোর ছেলেটা তো বলিতে-কহিতে বেশ”!

    চাষা একটু সম্পন্ন অবস্থার হইলেই ভদ্রসমাজের সীমানার দিকে অগ্রসর হইয়া বসিতে তাহার স্বভাবতই ইচ্ছা হয়। এমন-কি, তাহার ছেলে একদিন হাল-লাঙল ছাড়িয়া দিয়া বাবুর চালে চলিবে এ সাধও তাহার মনে উদয় হইতে থাকে। এইজন্য সময় নষ্ট করিয়াও, নিজের ক্ষতি করিয়াও ছেলেকে সে পাঠশালায় পাঠায় অথবা নিজের আঙিনায় পাঠশালার পত্তন করে।

    কিন্তু চাষাকে যদি বলা হয়, তোর ছেলেকে তুই চাষার পাঠশালায় পাঠাইবি, ভদ্রের পাঠশালায় নয়, তবে তাহার উৎসাহের কারণ কিছুই থাকিবে না। এরূপ স্থলে ছেলেকে পাঠশালায় পাঠাইবার উদ্দেশ্যই তাহার পক্ষে ব্যর্থ হইবে।

    শুধু তাই নয়। পল্লীর মধ্যে চাষার পাঠশালাটা চাষার পক্ষে একটা লজ্জার বিষয় হইয়া দাঁড়াইবে। কালক্রমে ভাগ্যক্রমে যে-চাষাত্ব হইতে তাহারা উপরে উঠিবার আশা রাখে, সেইটাকে বিধিমতো উপায়ে স্থায়ী করিবার আয়োজনে, আর যেই হউক, চাষা খুশি হইবে না।

    বিদ্যাসাগরের বেদান্ত বিরোধিতা --- সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন, এমনকি অবসর নেওয়ার পরেও, বিদ্যাসাগর পাঠক্রম থেকে বেদান্তকে বাদ দেওয়ার কোনও ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। বিদ্যাসাগরের অবসর গ্রহণের কিছু দিন পরে, ১৮৫৯ সালে জনশিক্ষা অধিকর্তা (Director of Public Instruction) সংস্কৃত কলেজের দর্শন পাঠ্যক্রমের সংস্কার সংক্রান্ত এক প্রস্তাব বাংলা সরকারের কাছে পেশ করেন। এই প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি উড্রো, রোয়ার (Dr. Roer) ও সংস্কৃত কলেজের নতুন অধ্যক্ষ কাওয়েল (E.B. Cowell) সাহেবের সেই সম্পর্কিত মন্তব্যগুলিও জুড়ে দেন। সরকারের তরফে ছোটলাট এ বিষয়ে বিদ্যাসাগরের পরামর্শ চাইলে তিনি ১৮৫৯-এর ১৭ এপ্রিল লেখেন, Mr. Cowell appears to take objection to the study of the Smriti and Vedanta in the College. I am sorry that I must differ from him on this point. ...The Vedanta is one of the systems of philosophy prevalent in India. It is of a metaphysical character, and I do not think there can be any reasonable objection to its use in the College. Both the branches, as at present taught, are free from objection on religious grounds. In my humble opinion, the discontinuance of these subjects would make the college course a very defective one.

    কাজেই উড়ো কথায় কান দেবেন না।

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১২:১৩453739

    ক্যানন গুলে খাওয়া আছে। কারও বিরোধিতা করতে হলে আগে সেই সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলা বইগুলো পড়ে নিতে হয়। কী কী পড়িতে হইবে বলে দিয়েছি। আগে পড়ে আসুন , তারপরে কথা হবে।

    বিনয় ঘোষের দয়ায় বিদুর ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রমাণ করার দশায় আসিনি এখনও। এই দেখুন ---

    ১৮৬৩ সালের সরকারি নথিপত্র। 

    In view of such sanction, Brahmins, Vaidyas, Kayasthas and the castes known as Nabasakh were admitted to the Sanscrit College. The privilege however was not extended to students belonging to castes of a lower grade than the Nabasakh.

    বিনয় ঘোষে আছে এই প্রাইমারি রেফারেন্স? ইন্দ্রমিত্তিরে? চণ্ডীচরণ-বিহারীলাল-সুবল মিত্তিরে? 

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১২:১৬453741

    ১৮৬৪। কাওয়েল তাঁর রিপোর্টে জানান, কলেজে ১৩ জন সুবর্ণবণিক, ৩ জন করে তাঁতি ও গোপ এবং একজন কৈবর্ত সম্প্রদায়ের ছাত্র মিলিয়ে মোট ২০ জন ছাত্র পাঠরত যাঁরা তাঁর মতে ‘would have been excluded by the former rule’।

    বিনয় ঘোষে আছে এই প্রাইমারি রেফারেন্স? ইন্দ্রমিত্তিরে? চণ্ডীচরণ-বিহারীলাল-সুবল মিত্তিরে? 

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১২:৪৫453746

    বিহারীলাল সরকার ১৮৯৫। চরম হিন্দুত্ববাদী, সুবল মিত্রের মতোই। বিধবা বিবাহকে মানেননি। বহুবিবাহ না হওয়ায় খুশি হয়েছেন। কোনও রেফারেন্স ছাড়া খানিক গপ্পোগাছা লিপিবদ্ধ করেছেন। চণ্ডীচরণ এবং সুবল মিত্রতে তবু দু-চারটে ইংরেজি চিঠিচাপাটি আছে যার জন্য বইগুলো আস্তাঁকুড়ে ফেলা যাবে না। যদিও বইয়ের বাকি অংশে রেফারেন্সবিহীন গপ্পো ছাড়া আর কিছু নেই। তাই। বরং যুক্তিবাদী অবস্থান থেকেই বিহারীলালকে লাথি মেরে তাড়ানো উচিত। বিদ্যাসাগর-জীবনীগুলোর মধ্যে ওটাই নিকৃষ্টতম বিদ্যাসাগরের মৃত্যুসময়ের বিবরণ পড়বেন, হাসি চেপে রাখতে পারবেন না। তাই।

    এলেবেলে | 202.142.71.49 | ২৭ আগস্ট ২০২০ ১৩:৩৩453758

    প্রথমত আমি সুশীল কিবা সুসি - কিছুই নই। আমি হচ্ছি জাতীয়তাবাদী তৃণমূল স্তরের গেরুয়াপন্থী বাম (মাওবাদী) দলের একমাত্র জীবিত সদস্য, সুতরাং শাখা থাকার সিনই নেই। 

    দ্বিতীয়ত পূর্ণকুম্ভ বিহারীলালও পড়েননি! তাহলে 'প্রিডিটারমিনড ন্যারেটিভে' মিললেও বিহারীবাবুর এই বক্তব্য সে ব্যবহার করবেন না কারণ রেফারেন্স নেই! হে হে পূর্ণকুম্ভ চুলকুনি কবে থেকে?

    বিহারীলাল লিখেছেন, [সিপাহী] বিদ্রোহ প্রশমিত হইলে পর, মহারাণীর অভয়বাণীর ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেই ঘোষণাপত্র নানা ভাষায় অনুবাদিত হইয়াছিল। বীডন সাহেব, সেই ঘোষণাপত্র বাঙ্গালায় অনুবাদ করাইবার জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়কে পত্র লিখিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পদত্যাগ করিবার এক মাস পূর্বে বীডন সাহেব নিম্নলিখিত মর্মে পত্র লেখেন, – আমার ইচ্ছা, আপনি ঘোষণাপত্রটি, বাঙ্গালায় অনুবাদ করেন। আগামী কল্য ১১টার সময় অফিসে আসিলে ভাল হয়। কাগজ-পত্র পাঠাইবার নিয়ম নাই; নতুবা পাঠাইতাম। এই চিঠির মর্ম কাহাকেও বলিবেন না। আপনি যে ইহার তর্জমা করিতেছেন, এ কথা কেহই যেন জানিতে না পারে। ১১৬৫ সালের ৭ই কার্তিকে (১৮৫৮ সালের ২২শে অক্টোবর) এই পত্র লিখিত হয়।

    শালা এমন জিনিস কেউ ছেড়ে দেয়!!!

  • রঞ্জন | 182.68.33.150 | ২৮ আগস্ট ২০২০ ০০:১০732570
  • বিদ্যাসাগরের বেদান্তবিরোধিতাঃ

    এটা কী কথা হল? আজকের এই ২০২০ সালে যদি আপনাকেই  সংস্কৃত কলেজে ভারতীয় দর্শনের পাঠ্যক্রম তৈরি করতে তাতে বেদান্তকে বাদ দিতে পারবেন? যতই রিগ্রেসিভ দর্শন হোক। সেখানে প্রায় ১৭০ বছর আগে একজন ব্রাহ্মণ পন্ডিত হঠাৎ করে কোর্স বদলাবেন কিসের ভিত্তিতে? ব্যালান্টাইনকে লেখা চিঠিতে( সম্ভবতঃ মৃত্যুর অনেক পরে ১৯২৮ সালে উদ্ধার হয়েছে) নিজেই কি বলেননি যে বেদান্ত ও সাংখ্য ভুল দর্শন কিন্ত হিন্দুর জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে আছে যে বাদ দেয়া যাবেনা। ফলে প্রতিষেধক হিসেবে মিলের লজিক পড়াতে হবে? একই ভাবে উনি ব্র্যাডলি (যা ইউরোপীয় দর্শনে অদ্বৈত বেদান্তের সঙ্গে তুলনীয়)  কোর্সে ঢোকাতে বাধা দিয়েছেন।

  • রঞ্জন | 182.68.33.150 | ২৮ আগস্ট ২০২০ ০০:১৪732572
  • ar,

    অনেক ধন্যবাদ। খুব আনন্দ পেলাম। টুকে রেখেছি।

  • সিএস | 2405:201:8803:bf86:e527:5a63:aa23:57 | ৩১ আগস্ট ২০২০ ১১:২৭732593
  • এলেবেলে এই কমেন্টগুলো করেছিলেনঃ

    "অ্যাডাম তার জেলাপিছু শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য খরচ ধরেছিলেন বছরে দশ হাজার টাকার চেয়েও কম। কাজেই খরচ নয়, মানসিকতাটাই আসল ছিল। "

    "আজ্ঞে না, অ্যাডাম দেশজ শিক্ষাপদ্ধতিকেই সামান্য অদলবদল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। "

    আমার ধারনা এই দুটি কথাই সম্পর্কিত।

    দশ হাজারের হিসেবটা কীভাবে পাওয়া যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। রিপোর্টে ৩৫৬ - ৩৫৭ পাতায় অ্যাডামস অনুযায়ী এরকম হিসেব পাচ্ছি -

    - থানা প্রতি যত শিক্ষক লাগবে, তাদের মাইনের খরচ বছরে ১৫,৯৬০ টাকা।
    - প্রতি জেলায় থানার সংখ্যা দশ থেকে উনিশের মধ্যে থাকে। দশটি থানা ধরে নিলেও জেলা প্রতি খরচ ১,৫৯,৬০০ টাকা।
    - সে সময়ে বেঙ্গল প্রভিন্সে ছেষট্টিটি জেলার কথা লিখেছেন, যদিও সেই সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। তাহলে মোট খরচ = ১,৫৯,৬০০ * ৬৬ = ১ কোটি টাকার ওপরে।

    বছর প্রতি এই খরচটি শুধুই শিক্ষকদের মাইনে দেওয়ার জন্য। এর ওপরে স্কুলবাড়ী তৈরী ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ , বই ও অন্য জিনিসের জন্য খরচ, সুপারিটেন্ডেন্ট ব্যবস্থাটি চালু রাখার জন্য খরচ, এসবের দর্কারও বলা হয়েছে। অ্যাডামস জানতেন যে খরচের বহর কম নয়, মন্তব্য করছেন যে যদিও খরচ বেশী এবং কী ফল পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চিত নয়, অন্য সমস্যাও তৈরী হতে পারে কিন্তু গভর্নমেন্ট যদি national education-এর কথা ভাবে তাহলে খরচের ব্যাপারে কুন্ঠিত হলে চলবে না ! খরচের এই ব্যাপ্তি ঘটছে কারণ দেশীয় শিক্ষাপদ্ধতিটিকে সামান্য বদল করে চালাবার কথা অ্যাডামস বলছেন না। গ্রামবাংলায় প্রচলিত লেখাপড়ার পদ্ধতিটির সমালোচনা রিপোর্টে আছে, ঐ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের উন্নতি বিশেষ হয়না এরকম কথা আছে এবং উদ্দেশ্য হল সেই ব্যবস্থার উন্নতি করা। কলকাতায় প্রচলিত বিভিন্ন রকমের স্কুলগুলির কথা রিপোর্টে রয়েছে যেমন স্কুল সোসাইটি পরিচালিত স্কুলগুলির কথা যেগুলির প্রশংসা আছে অথবা মিশনারিদের পরিচালিত স্কুলগুলির তথ্য আছে, কলকাতার বাইরের বড় শহরের স্কুলের তথ্য আছে এবং এই সব স্কুলগুলিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন নিয়ম ব্যবহার করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটির উন্নতি সাধন করাই ওনার উদ্দেশ্য।

    কোম্পানীর মধ্যে অ্যাডামসের রিপোর্টকে impractical বা এরকম কিছু বলা হয়েছিল, রিপোর্টটিকে কাজে পরিণত করা যাবে না এবং খরচের প্রসঙ্গও আনা হয়েছিল। সে তুলনায় মেকলের পদ্ধতিটি সহজ, মডেল স্কুল তৈরী করা ও সকলের জন্য শিক্ষার উন্নতির চেষ্টা না করে সমাজের অল্প কিছু লোকের নতুন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। মেনে নিতে অসুবিধে নেই যে মেকলের পথকে সেই সময়ে চালু করার পেছনে কলোনিপ্রভুদের স্বার্থ ছিল, তাদের এটা উদ্দেশ্য ছিল না যে সকলের জন্য জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হবে, উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে দেশটিতে অনেকখানি জায়গা নিজেদের শাসনে আনার পরে কীভাবে সেই শাসনকে নিজেদের স্বার্থে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় (মেকলের তো সেই মতেই বিখ্যাত উক্তিটি ছিল)। ফলে অ্যাডামসের পথ যে একটি বিকল্প মডেল সেটা বলা যায় কিন্তু সেই মডেল সেখানেই প্রচলিত হতে পারে যা কলোনি শাসনের অন্তর্গত নয়। কলোনিয়ালিজম এটাই যে বিদেশী শাসক দেশের সর্ব স্তরের মানুষের কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থটুকুই দেখে (সেটা শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, আরো অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সত্যি) কিন্তু সেই দেখাও যে আবার সব সমস্যার সমাধান করে দেয় অথবা নতুন কোন সমস্যা তৈরী করে না সেও বলা যায় না। মেকলের পথও নির্বিঘ্নে চলেনি, ক্রমাগত ফাঁক-্ফোকর ভর্তি করার চেষ্টা করা হয়েছে, আরো পরে গিয়ে নেটিভদের মধ্যে থেকেই শিক্ষাপদ্ধতির সমালোচনা করা হয়েছে এবং তার পরিবর্তনের কথা ভাবা হয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন