এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • উন্নয়নের চেনা একটি মডেল

    অর্পণ চৌধুরী
    আলোচনা | বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০০৭ | ৬১১ বার পঠিত
  • এখন চারিদিকে বসন্তের বাতাস বিশ্বাস ভাঙ্গার গন্ধে ভারী হয়ে আছে, ক্রমাগত পাড় ধ্বংস হবার আওয়াজের মাঝে নদীর চড়ায় জেগে উঠছে না কোনো বিকল্প আশ্রয়ের জায়গা, নন্দীগ্রামের তাজা ঘা এখনো শুকোয়নি। বাদ-প্রতিবাদের রাজনীতিতে লাশের সংখ্যাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কতগুলো মানুষকে মারলে পরে তবে গণহত্যা বলা যায় তাও প্রশ্ন উঠছে আনাচে কানাচে। তা চলুক, আমরা বরং চোখ রাখব খুব একটা সাম্প্রতিক ঘটনায়, নন্দীগ্রাম কান্ড উত্তর সময়ে মনে রাখেনি হয়ত বেশি কেউ, এই অস্থির বেদনাময় সময়ে ছোটখাটো অন্য অনেক ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখলেও নিউরন ফেল মেরে যায়, কিন্তু তাতে বিষয়টি পাল্টায় না, পাল্টে যায় শুধু বলার ভঙ্গী। আশা রাখি বৃহৎ ক্যানভাসে ছবি আঁকার দরকার ভবিষ্যতে পড়বে একদিন, তখন এসব টুকরোটাকরা অনেক কোলাজ জোড়া দিতে হতে পারে বৈকি।

    এটা প্রাক ১৪/৩/২০০৭ সময়ের কথা। গত ১লা মার্চ, যখন সুশীতল ছিল ধরাতল, অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী বৌদ্ধ ছিলেন এবং ব্র্যান্ড বুদ্ধ তাঁর পূর্বসূরীকে ইতিহাসের পাতায় পাঠিয়ে দেবার কাজ মোটামুটি সম্পন্ন করে এনেছেন, সেই আপাতনিশ্চিন্ত দিনকালে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী জমিয়তে উলামায়ে বাংলা আয়োজিত এক কনভেনশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। কোন আগাম পূর্বাভাস না থাকা সত্ত্বেও সভায় ঈষৎ গোল বাঁধে, উপস্থিত কতিপয় নাচার জমিয়তে সদস্য নানা কূট প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকে যারপরনাই বিব্রত করছিলেন, বক্তৃতা চলাকালীন বেশ কয়েকবার, দৃশ্যত বিব্রত ও বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী আর পুরো বক্তব্য শেষ না করেই তাঁরই এক মন্ত্রীসভার সদস্যকে বাকিটা বলার ভার দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত ওই কনভেনশানের আয়োজক জমিয়তে উলামায়ে বাংলা আর অধুনা নন্দীগ্রাম কাণ্ডে হঠাৎ মিডিয়ার প্রচার পেয়ে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর জমিয়তে উলেমা হিন্দ এক সংগঠন নয়, দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথমটি নেহাতই ম্যাড়মেড়ে সংগঠন, তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তিও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের বাইরে নেই বললেই চলে। যথারীতি মোটামুটি সব সংবাদপত্রেই পরদিন ঘটনাটি কভার করা হয় যে অত:পর এদের সরকারী "অনুগ্রহপ্রাপ্ত" সংখ্যালঘু মানুষের মুখপাত্র হিসাবে তুলে ধরে সিদ্দিকুল্লাকে রাজনৈতিক ভাবে একঘরে করার প্রক্রিয়া শুরু হল।

    তবে এমন গটআপ খেলাতেও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাধাদানের বেয়াদবি কোন অশুভ শক্তির প্ররোচনায় হতে পেরেছিল তা এক গবেষণার বিষয় হতে পারত বটে। পরিতাপের বিষয় এতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থেকেও সবাইকে বাম সুশাসনের মর্মের বাণী পৌঁছনোর কাজটি সমাপ্ত করা যায় নি। কিছু মূঢ় বিভ্রান্ত মানুষ মাঝে মাঝেই মূর্খতার বশে উল্টোপাল্টা কাণ্ড ঘটিয়ে সুবিধাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলির হাত শক্ত করে বসে, অতি সম্প্রতি সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে, তাই তাদের চিহ্নিতকরণ ও "বোঝানো"র কাজটি আশু কর্তব্য। বস্তুত জমিয়তে উলমায়ে হিন্দের কিছু সদস্য জমিয়তে উলমায়ে বাংলার সভায় গিয়ে উক্ত সাবোতাজ কম্মোটি করে থাকতেই পারে, কিন্তু নি:সন্দেহ হবার জন্য কোন সিআইডি তদন্ত এই বাজারে আর হবার সুযোগ নেই। সে যাক, সংখ্যালঘু উন্নয়নকল্পে ওই সভার আয়োজন হয়েছিল এবং মহৎ কর্ম করতে গেলে বিস্তর বাধাবিঘ্ন আসে, আমরা বরং চোখ রাখব মুখ্যমন্ত্রী ওই সভায় কী ঘোষণা করেছিলেন: সাধারণ স্কুলের গুণগত মান রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতেও আনা হবে, মুসলিমদের জন্য আলাদা "সাব প্ল্যান"-এর দাবি তোলা হবে, ১২৯টি জুনিয়র মাদ্রাসাকে হাই এবং ২৬টি হাই মাদ্রাসাকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের মাদ্রাসায় উন্নীত করা হবে, আলিমগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হবে, কলেজ ও স্কুল সার্ভিস কমিশনে মুসলিম প্রতিনিধি রাখা হবে। বুদ্ধবাবুর আরো ঘোষণা ছিল: আসানসোল, ইসলামপুর ও মেটিয়াবুরুজে সরকারি কাজকর্মে উর্দুর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

    কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কল্পতরু হয়ে এমন একগুচ্ছ ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন? কিসের তাড়নায়? যতদূর অনুমান করা যায় তাড়নার নাম এককথায় সাচার রিপোর্ট আর নন্দীগ্রামে সংগঠিত হত্যার পূর্ববর্তী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর জঙ্গী আন্দোলনের ইতস্তত হুমকি। সাচার রিপোর্ট থেকে রাজ্যগুলির মুসলিম সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কিছু কিছু আনুপাতিক তুলনা পাওয়া যায়। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনঘনত্ব ২৫% আর সরকারী ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধি মাত্র ২.১%। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক গুজরাতে জনসংখ্যার ৯% আর সরকারী চাকুরেদের ৫.৪% মুসলিম। মুসলিমদের মধ্যে সাক্ষরতার হার পশ্চিমবঙ্গে ৫৭.৫%, জাতীয় গড় ৫৯.১%, গুজরাতে ৭৩.৫%। পশ্চিমবঙ্গে ৫০.৩% মুসলিম প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১১.৯% মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, যেখানে জাতীয় গড় যথাক্রমে ৬০.৯% ও ২৩.৯%। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত অর্থের আনুপাতিক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ ৫.৫%, গুজরাত ৮.৯%, জাতীয় গড় ৭.৪%। এবার দেখা যাক আমাদের রাজ্যে মাথাপিছু মাসিক ব্যয়ের হিসাব। গ্রামাঞ্চলে হিন্দু পরিবারের মাথাপিছু ব্যয় যেখানে ৬১০ টাকা সেখানে একটি মুসলিম পরিবারে সেটি দাঁড়ায় ৫০১ টাকা। শহরে বৈষম্যের চিত্রটি আরো বেশি, হিন্দুদের মাথাপিছু ব্যয় ১২১৪ টাকা, মুসলিমদের মাত্র ৭৪৮ টাকা। এই বৈষম্যের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে দেরিতে হলেও মহানুভব সরকার বাহাদুর বিচলিত হন (নিন্দুকেরা অবশ্য ভোটব্যাঙ্কের গল্প বলে), সাচার রিপোর্টের বীক্ষণ বঙ্গীয় কমরেডদের শেষবেলায় হয়তো সত্যিই ভাবতে শেখায় গুজরাতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এ বঙ্গে না হতে দিলেই কর্তব্যের সমাপ্তি ঘটে না। খালি পেটে যে বিপ্লব হয় না, উল্টে মানুষ ধর্মের আফিমটি বেশি করে খেতে শেখে এই পবিত্র উপলব্ধিও হয়তো ঘটে।

    এবার সিদ্দিকুল্লা প্রসঙ্গ। বিগত কয়েক বছর ধরে যে উন্নয়নের সাধনা উন্নততর বামফ্রন্ট সরকার করে আসছে তা বস্তুত বিশ্বায়িত ধনতন্ত্র ও পুঁজিবাদের সাধনা, অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগের আহ্বান, সে উন্নয়নের চেনা মডেল। সেই মডেলে রাস্তাঘাট, উপনগরী, কেমিক্যাল হাব, অটোমোবাইল শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি সবকিছু হবে, চাষের জমি নির্বিচারে নিয়েই, কারণ কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। যেহেতু বামপন্থীরা খেলতে নেমেছেন অনেক দেরিতে, তাঁরা খেলার নিয়মকানুন বুঝে উঠতে না উঠতেই অন্য রাজ্যগুলি এগিয়ে গিয়েছে অনেক, তাই তড়িঘড়ি শিল্পায়নে রাজ্যকে মুড়ে দেবার তাগিদও তাঁদের বেশি। কিন্তু উদ্দেশ্য মহৎ হলেও তার প্রয়োগটিও যথাযথ হওয়া চাই। তার জন্য দরকার কি ছিল না যথাযথ প্রস্তুতির? যে রাজ্যের অর্থনীতি মূলত দাঁড়িয়ে আছে কৃষিকে ভিত্তি করে, সেখানে শিল্পের জন্য কৃষিজমিতে হাত পড়বেই আর তার জন্য মানুষের মনে জমিজিরেত জীবিকা হারানোজনিত নিরাপত্তাহীনতাও কাজ করবে, এই সারসত্যটুকু বোঝা বোধহয় উচ্চমার্গের দর্শন নয়। দোফসলি তিনফসলি কৃষিজমির ম্যাপ বানানো সেই প্রস্তুতিরই একটা পর্ব। সঠিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নীতি প্রণয়ন আরেকটি পর্ব। আর মানুষকে বোঝানোর কাজও চারটি ক্যাডার বা লোকাল কমিটি নামিয়ে রাতারাতি হয় না, বিশেষ করে যাদের জমি যাচ্ছে, তারা কিন্তু দেখছে উন্নয়ন একমুখী হচ্ছে, মাল্টিপ্লেক্স, শপিংমল, ফ্লাইওভার, পিৎজা হাট, বারিস্তা কিছুই তাদের জন্য নয়, একলাখ টাকার গাড়ির কারখানায় চাকরিও তাদের জন্য নয়। এইসব পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যায়, যেতে থাকে রোজ, জমি রক্ষা কমিটির মত ভুঁইফোঁড় ও জমিয়তের মত ধর্মীয় সংগঠন ওইসব মানুষের মসীহা হয়ে দেখা দেয়। "আইন শৃঙ্খলা" ফেরানোর নামে নন্দীগ্রামে সংগঠিত হত্যা তাতে অনুঘটকের কাজ করে মাত্র। এহ বাহ্য।

    তবে নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি তো একদিনে হয়নি, গুজরাত, ইরাকে আমেরিকা হানা ও সাদ্দামের ফাঁসি ইত্যাদির নিন্দায় যখন বঙ্গীয় বুদ্ধজীবীরা পবিত্র মানববন্ধন গড়ে তুলছিলেন এ বঙ্গের প্রতিটি পবিত্র কোণে, গোকুলে বাড়ছিল এইসব ক্ষোভ ও তাদের ঢাল করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়বাড়ন্ত। প্রশ্ন ওঠে কী করছিল তখন শাসক দলের সুশৃঙ্খল ইনফর্মেশন নেটওয়ার্ক আর কিই বা করছিলেন পার্টির কিংবদন্তীপ্রতিম কৃষকসভা ও আলিমুদ্দিনের তাত্ত্বিক মগজেরা? বুঝতে বাকি থাকে না তিরিশ বছরের স্থবিরতা তাঁদের মেদ-মজ্জা-মাংসে ঢুকে গিয়েছে, ক্ষমতায় থাকার অঙ্ক কষে বেশ চলে যায় পাঁচটি বছর, বছরের পর বছর, নিয়ম করে "শক্তিশালী" বিরোধীপক্ষ শক্তির প্রমাণ দেয় বিধানসভায় বাজেট পেশ করার সময় সেখানকার অ্যান্টিক চেয়ার টেবিলের ওপরে, মাঝে মাঝে শুধু আপুলিশ খেলে জনযুদ্ধের গেরিলারা বা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মতো চরিত্ররা। গ্রামবাংলা চিনি না, মিডিয়াও আজকাল বড়বেশি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো দেখায়, কিন্তু আশ্চর্য লাগে না যখন দেখি সামান্যতম অস্বস্তি দেখা দিলেই বামফ্রন্ট নেতাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার চেহারাটি বেআব্রু হয়ে যায়। নাট্যপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী অনবধানে মন্তব্য করে বসেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন, অন্য এক ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো দাপুটে নেতা সেটি মিথ্যা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগেন, অবশেষে একটি "সাম্প্রদায়িক" সংখ্যালঘু সংগঠনের মোকাবিলা করতে আরেকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের হাতটি ধরতে হয়। সেজন্য বামফ্রন্টকে দোষও দেই না, তারা ভোটের হিসাব কষেন, জোটের রসায়ন বোঝেন, এক নির্বাচন সমাপ্ত হলে অন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেন। শ্রেণীবৈষম্য ও শ্রেণীবিভাজন না থাকলে তার জুজুও দেখানো যায় না, তাই হঠাৎ ঠেকায় পড়লে জমিয়তের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে হয় মার্ক্সবাদ নামক বিজ্ঞান দ্বারা নয়, বিষে বিষক্ষয় কৌটিল্যের এই আপ্তবাক্যটি মেনেই। এবং তাতেও শেষপর্যন্ত মরিচঝাঁপি, বরানগর বা কাশীপুরের ভূতকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না।

    যেরকম দেখা যায় পুরুলিয়া পশ্চিম মেদিনীপুরে মাওবাদী জনযুদ্ধের সন্ত্রাসের সময়। জনযুদ্ধের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রতিবার তাঁদের তীব্র অনীহা, এই পুঁজির আবাহনের যুগে তা সম্ভবও নয়, যদিও মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা বা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা যে অলীক নয় ঘরের পাশে নেপাল বা অন্ধ্রপ্রদেশে অবামপন্থী রাষ্ট্রশক্তি তা ইতিমধ্যে করে দেখিয়েছে। পুলিশি সন্ত্রাস দিয়ে যখন বান্দোয়ান রানিবাঁধের মুক্তাঞ্চল "মুক্ত" করা গেল না, তখন রাষ্ট্রের সেই দমন পক্রিয়াটি নেমে আসে জনযুদ্ধের তাত্ত্বিক নেতৃত্ব বা আদর্শের অনুসারীদের উপর, এই গর্বের সাংস্কৃতিক রাজধানীতে, টার্গেট হন অতিবাম চিন্তাধারায় বিশ্বাস রাখা শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ। পাশাপাশি স্বর্গত অনিল বিশ্বাসের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় করা সাধু সঙ্কল্পটিও জায়গা করে নেয় খবরের কাগজের পাতায়, "৩০ বছরের বেশি এই সমস্যার মোকাবিলা করছে সিপিএম। এটা রাজনৈতিক আদর্শগত সমস্যা। সেই ভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে" (আবাপ, ১৩/৭/০২)। চেনা স্বর, আমাদের আশ্বস্ত করার স্বর। তাই পুলিশি দমনের পাশে পাশে সেখানে কিছু কিছু উন্নয়নও হয় বৈকি, নলকূপ বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যদফতরের সমীক্ষকদল বান্দোয়ান সফর করে। ইতিমধ্যে ভোটের দামামা বেজে যায়, উন্নততর বামফ্রন্টের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়, উন্নয়নের জয়ঢাকের মাঝে হঠাৎ করে সিদ্দিকুল্লা নামক আপদটি বেয়াড়া গাইলে তবেই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মান্ধাতা আমলে পড়ে আছে, তাকে টেনে তুলতে হবে এসব খেয়াল হয়। অতিবিপ্লবী আর প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে একসাথে রুখতে রাজ্যজোড়া অভিন্ন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলে শিল্পায়নের মোড়কে। কিছু মানুষ সার্বিক কল্যাণের এই সহজ সত্য বুঝতে না পেরে রাস্তা কেটে অবরোধ করলে অস্ত্রধারী পুলিশ আর ক্যাডার নামিয়ে টের পাইয়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের জন্য কত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

    যা বলছিলাম, ওই নলকূপ আর মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য অনুদানও উন্নয়নের অঙ্গ, মাল্টিপ্লেক্স আর শপিং মলের বিপ্রতীপে এরাও উন্নয়নের চেনা মডেলেই পড়ে। হ্যাঁ, ১৪ই মার্চ, ২০০৭, নন্দীগ্রাম গণহত্যার আগে এবং পরেও।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩০ মার্চ ২০০৭ | ৬১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন