এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জলছবি

    Jhil
    অন্যান্য | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ২৪৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • pipi | 141.80.168.152 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ০১:১৪728864
  • B, বড় লজ্জায় ফেললেন। এমন তারিফ করলে আর লেখা যায়?
    সনাতন মৌলিরা আমার বড় প্রিয় মানুষ। কোথা থেকে আসে তারপর একদিন কোথায় চলে যায় ... আর ফেরে না। শুধু ভেঁপুদের মনে সময় থমকে থেমে থাকে।
  • pipi | 141.80.168.152 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ০১:৪০728865
  • আপাতত চার মূর্তি বেজায় বিপাকে। ভেঁপুর কান্না থেমেছে কিন্তু ধরে বসেছে বাড়ি যাবে বলে। ভেঁপুকে সাথে নেওয়াটা আত্মহত্যার সামিল জেনেও তারা নিয়েছিল, দোষটা ঠিক কারোরই নয় কিন্তু দোষারোপ করার জন্য এখন কাউকে তো একটা চাই। অতএব চার মূর্তি এ ওর দিকে গাদাবন্দুক দাগছে সমানে।
    ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে টাকনা দিয়ে তেঁতুল খাওয়ার মত করে ভেঁপু গোটা ব্যাপারটা উপভোগ করে। বাড়ি ফিরে যাবার কোন ইচ্ছেই তার নেই। এসবই সনাতনদাকে ছোট করার শাস্তি। ভেঁপুর মনের ভাবটা এখন অনেকটা সেই আরেকবার সাধিলেই খাইব-র মতন। আরেকবার জোর করলেই চলতে শুরু করব। কিন্তু বাকীরা এখন ভেঁপুকে বেমালুম ভুলে ঝগড়ায় ব্যাস্ত। ভেঁপু অতএব রাস্তার ধূলোর উপরেই বসে পড়ল।
    - অ্যাই, তুই ধূলোয় বসলি যে? ছুটকুন তেড়েফুঁড়ে আসে।
    - পা কনকন করছে বোধহয়। পারে নাকি অ্যাতোখানি রাস্তা? তখনই বলেছিলাম....
    ফুলি সুর চড়াল।
    ছুটকুন কথা বাড়ায় না। ভেঁপুটা যে এমন বিপাকে ফেলবে কল্পনাও করতে পারে নি। এতখানি রাস্তা উজিয়ে এসে ফিরে যেতেও মন করছে না। তাহলে উপায়? ভেঁপুকে কাঁধে নেওয়া।
    ছুটকুন উবু হয়ে বসে। ভেঁপুকে তুলে ঝেড়েমুছে ধরাধরি করে তার কাঁধে বসিয়ে দেয় বাকীরা। ল্যাগব্যাগ করতে করতে ছুটকুন চলা শুরু করে। শান্তি:।

    দূর থেকে উঁচু পাকা সড়কটা চোখে আসে। সবাই এবার তাড়াতাড়ি পা চালায়। কলেজবাড়ির দিক থেকে এসে তাদের মাটির রাস্তাটাকে আড়া আড়ি কেটে ময়াল সাপের মত এঁকে বেঁকে বনের দিকে চলে গেছে পাকা সড়কটা। দুপুর শেষের রোদ পড়ে ঝিকমিক করে কালো সর্পিল শরীর। ফরেস্ট আপিসের জিপ ছাড়া এ রাস্তায় বড় কেউ একটা পা রেখে না। ফরেস্ট মানে ইউক্যালিপ্টাস আর ক্যাসুরিনার অদ্ভুত সুন্দর বন। এ বনে বনবিবি নেই, দক্ষিণরায় নেই, শাজংলী, গাজি সাহেব কেউ নেই। আছে খালি নদীর বুক ছুঁয়ে উঠে আসা নোনা হাওয়া। শনশন আওয়াজ তুলে সে হাওয়া বনের পথে নেচে যায়। এ দ্বীপকে দুহাত দিয়ে পরম মমতায় আগলে রাখে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া। তারপর আস্তে সুস্থে গড়িয়ে গড়িয়ে সেই বুড়োবুড়ির চরে গিয়ে শেষটায় মাথা রাখে মুড়িগঙ্গায়।
    মোটামুটি এই পাকা সড়কটাই আজ পর্যন্ত ছিল অপু ফুলিদের সীমানা। তার ওধারে কখনো পা বাড়ায় নি তারা। যদিও এই অবধিও এর আগে কখনো বিশেষ আসে নি কেউই এক ভেঁপু ছাড়া কিন্তু সে কথা কারোর জানার নয়।

    ভেঁপুর কাছে এ রাস্তার কিছুই প্রায় অজানা নয়। প্রায়দিন ইস্কুল ছুটির পরে সনাতনদার হাত ধরে কলেজবাড়ি ধানকল পিছনে ফেলে পাকা সড়ক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এইদিকেই তো আসে সে। তারপর যেই না তারা মাটির রাস্তায় উঠবে অমনি ভেঁপুর সনাতনদার কাঁধে চড়া চাই। কাঁধে চড়ে ভেঁপুর মনে হয় আকাশটা কত কাছে, দুনিয়াটা কত ছোট। দূর দূর অবধি দেখতে পায় সে। আর সনাতন তাকে গল্প শোনায়। বনবিবির গল্প, দক্ষিণরায়, গাজী সাহেবের গল্প, বাদার গল্প, মামার কথা, চাকভাঙ্গা, মাছমারা আর গাংয়ের গল্প......
    গল্পে গল্পে সনাতন ফিরে যায় সেইখানে। নোনা হাওয়ার ঝাপটা লাগে মুখে। গল্পে গল্পে সনাতন মুনিষ ফের সনাতন মৌলি হয়ে যায়। দেখতে পায় চাকভাঙ্গার দল ঢুকছে বনের গহীনে। দলের সামনে..... কে আবার? সনাতন মৌলি। দেখতে পায় রাতের আঁধারে নাও নিয়ে মাছমারাদের ভাঁটির টানে বয়ে যাওয়া। হাল ধরে জেগে থাকে কে? সনাতন মৌলি। গায়ে তার অসুরের বল। আসুক না ঐ বনবেড়ালটা সামনে, বৈঠা দিয়ে দেবে না শালোর খুলিটা ফাটিয়ে?
    এইসব সময়ে ভেঁপুর সর্বশরীর সর্ব অস্তিত্ব শ্রবণেন্দ্রিয়ে পরিণত হয়। শুনতে শুনতে ভেঁপু দেখতে পায় অচিনপুরীর কোন সে এক রাজপুত্তুর - যার পক্ষীরাজ নেই, ঢাল তরোয়াল বর্ম চর্ম কিছু নেই, নাও ভাসিয়ে বৈঠা হাতে যায় বনের দত্যির সাথে যুদ্ধু করতে। সে রাজপুত্তুরের মুখটা বড় চেনা চেনা ঠেকে।
    গল্পে গল্পে পথ শেষ হয়। গোধূলির ছায়া ঘনায়। পাখপাখালী বাসায় ফেরে। ছাতের ঘরে ফেরে কবুতরের ঝাঁক। উতলা হয়ে গরু বাছুরের দল ঘন ঘন ডাক পাড়ে। মাঠ থেকে গরু নিয়ে সনাতন ঘরে ফেরে। আর সনাতনের হাতের থাবায় পরমনির্ভরতায় পরমনিশ্চিন্ততায় তার ছোট্টো হাতখানি গুঁজে বাড়ি ফেরে ভেঁপু। দুই কালোমানুষ, দুই সহমর্মী, সমব্যাথী কালো মানুষ একবুক সুখ নিয়ে ঘরে ফেরে।

    রাতের বিছানায় বাদাবন তার হাজার পসরায় ভেঁপুর চোখে জাঁকিয়ে বসে। আর সনাতন? নিকষ কালো আঁধারে সনাতনের দুই চোখ উল্টোদিকের দেওয়ালে জোনাকী হয়ে থির বসে থাকতে থাকতে একসময় নিভে যায়। স্বপ্নেরা আজ আর সনাতনের মরা চোখে ভীড় জমায় না।
  • Riju | 172.18.18.170, 203.197.96.50 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ১১:৫১728866
  • সবুরে মেওয়া ফলে। পিপির লেখার জন্যে কতদিন অপেক্ষা করেছি , অবশেষে এইরকম দুরন্ত একটা লেখা পেলাম।
    ঝিল দি, সেলাম।
  • M | 59.93.243.222 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:০২728868
  • ও না, ভ্যাঁপো!:P
  • M | 59.93.243.222 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:০২728867
  • এই দারুন লেখাটা আমার মতো নতুনদের জন্য তুলে দিলাম।

    আর আমারো একটা কেলে ভেঁপু আছে।
  • Nina | 66.240.33.37 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২১:৩২728869
  • এত ভাল লেখা এত সহজে পাচ্ছি, জাস্ট কটা কিবোর্ডে কুটকুট করে---ভাবা যায়না!!
    ভাষাহীন মুগ্‌ধতা জানাই।

  • Samik | 219.64.11.35 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২১:৪৫728870
  • পিপি রে, এই রকমই লিখিস। এই সব লেখা পড়ার জন্যেই তো বেঁচে থাকা, শুধু এই সব লেখাগুলোর জন্মমুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারি বলেই তো বুক ভরে এত গর্ব হয় এই সাইটটার জন্য।

    এইয্‌যা:, তুই-তোকারি করে ফেললাম। :-)
  • Titir | 128.210.80.42 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২২:৪৪728871
  • হাতানিয়া দোয়ানিয়ার মতো মনকেমনিয়ার গল্প। কি সুন্দর সহজ ভাষায় উঠে এসেছে নোনা জলের কথা। স্বাদ কিন্তু ভারী মিষ্টি!
  • a x | 143.111.108.33 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০১:০৪728872
  • ঠান্ডা বাতাসের মত লেখাটা।

    আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত ভেঁপু। তার দাদা সানাই, সানাইএর ছেলে চেলো :-)

    এদেরকে অনেকে চেনে এখানে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন