এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সংক্রান্তি সংক্রান্ত গল্প:

    Farha Kazi
    অন্যান্য | ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ | ১০৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Farha Kazi | 55.248.176.147 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ১৪:০৯726749
  • পর্ব:এক

    সংক্রান্তির দিনে বাড়িতে থাকতে হয়। মফস্বলের মানুষের মধ্যে কিছু সংস্কার এখনো রয়ে গেছে, এটাও তারমধ্যে একটা। তাই এখনো চেষ্টা করি এই দিনে বাড়িতে থাকার। গতকালকেই অফিস করে ফেরার কথা ছিলো, ফিরতে রাত হওয়ায় তাই কাল আর ফিরিনি। কচি বলেছিলো ও নাকি ভোর ছয়টার বাসে বর্ধমান ফিরবে। ও এটাও জানিয়ে দিলো আমি উঠতে না পারলে ও ওয়েট করবে না!
    আমি তো চিনি আমার ভাইয়ের দৌড়! ভোর পাঁচটার ঐ অন্ধকারে শীতে কত উঠবে জানাই ছিলো! খালাকে বলে দিয়েছিলো যেন পাঁচটায় এসে বাড়ির কাজকর্ম গুলো করে দিয়ে যায়! সে বেচারা ভোরে এসে লাইট ফাইট জ্বালিয়ে হুটোপাটি লাগিয়ে দিলো! তার হৈ চৈ এ আমার ঘুম ভেঙে গেলেও আমার কুম্ভকর্ণ ভাইয়ের ঘুম যথারীতি ভাঙেনি! শেষঅবধি সাড়ে বারোটার বাস ধরে বর্ধমান পৌঁছতে তিনটে বেজে গেলো! শেষ পৌষ আর মাঘের শুরুতে বেশ ঠান্ডা পরেছে, হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে!
    আজকে বর্ধমানে ঘুড়ির মেলা। সে এক রৈ রৈ ব্যাপার! স্কুল, কলেজ , অফিস সব ছুটি! আজকে বর্ধমানের লোকেরা ঘুড়ি ওড়ায়! প্রতি বাড়ির ছাদে লোকজন....ছানা , পোনা, বুড়ো, বাচ্চা সবাই ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। কেউ কেউ ছাদে তারস্বরে মাইক বাজাচ্ছে। বর্ধমানের অলিতে গলিতে আজকে ছেঁড়া ঘুড়ির টুকরো, গিঁট লেগে যাওয়া মাঞ্জা দেওয়া রঙিন সুতোয় ছয়লাপ। সাবধানে না চললে জুতোয় সুতো আটকে ধপাস, নিদেনপক্ষে পা তো কাটবেই!'
    আমাদের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মোটামুটি কান ঝালাপালা মাইকের চোটে! মাইকে ভেসে আসছে ভোকাট্টা!
    আম্মু বলে সংক্রান্তির দিনে স্নান করতেই হয় যতই ঠান্ডা পরুক! অতএব পাগল করা কনকনে ঠান্ডায় স্নান সেরে ইলিশ মাছ, চিকেন কোর্মা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে ছাদে উঠে দেখি আকাশ ঘুড়িময়। লাল নীল হলুদ কতরকম রঙয়ের চাঁদিয়াল, মোমবাতি, পেটকাটি হরেক কিসিমের ঘুড়ি!
    মিঠে রোদ আর হাড় কাঁপানো বিদায়ী পৌষের হাওয়া... হুঁ হুঁ বাবা এক পৌষে শীত যায় না!
    আশেপাশের ছাদ গুলোতে ভর্তি লোক!
    আমার শৈশব, কৈশরের একটা বড়ো অংশ এই ঘুড়ির মেলার স্মৃতিমাখা.... ছাদের কার্ণিশে আটকানো ঘুড়ির ঝটপটানিতে আম্ ফিরে চলে যাচ্ছি ইসকুল জীবনের অতল স্মৃতির পাতায়....

    পর্ব: দুই
    ভোর রাত্রি...চারপাশ বেশ অন্ধকার। হঠাৎ আম্মুর হৈ চৈ। এতো ভোরে কিসের চেঁচামেচিরে বাবা! ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম বারান্দায় ছাদের সিঁড়ির কাছে আম্মু দাঁড়িয়ে, ট্যাঁকে তিনি প্রবল হাত পা ছুঁড়ছেন। জানা গেলো তিনি ঘুমের ঘোরে ছাদে চলে গেছেন প্রবল উৎসাহে। তিনি হলেন আমার ছয় বছরের ছোটো ভাই।
    আজকে ঘুড়ির মেলা... ছাদে পাওয়া গত একমাস ধরে জমানো ঘুড়িগুলো আজকের দিনে একএক করে আকাশ ছুঁতে পারবে। কচি আর জ্যোতি...দুই অসম বয়সের বন্ধু। দুজনেই ঘুড়ি ওড়াতে পারেনা, তবু একমাস ধরে তাদের ঘুড়ির মেলার প্রস্তুতি চলে। কাউকে ছুঁতে দেয় না সেইসব জমানো ঘুড়ি। আমাদের সমরস্যার মজা করে বলতেন মোটু আর শোঁটু। মোটু হলো জ্যোতি আর সোঁটু কচি। কচিকে স্যার আদর করে আর একটা নামে ডাকেন "কচিবুড়ো"!
    প্রতিটা ছাদের বাচ্চারা এমনিতে বন্ধু হলেও ঘুড়ির ব্যাপারে একে অপরের মহাশত্রু। ঢিল লঙ্গা করে একে অপরের ঘুড়ি ছিঁড়ে নেবে ছাদের কাছে এলেই। ঢিল লঙ্গা হলো ঘুড়ির সুতোর ডগায় ভালো করে বাঁধা ঢিল, যা ছুঁড়ে ছাদের কাছাকাছি ওড়া ঘুড়ি গুলোকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসা হয়।
    এই ঢিল লঙ্গা দিয়ে ঘুড়ি নিয়ে আসা সাধারণ বাচ্চারাই করে। একটু বড়ো যারা ঘুড়ি ওড়াতে পারে তারা প্যাঁচ কষে ঘুড়ির লড়াই লড়ে, আর আরো এক্সপার্ট যারা তারা কেটে যাওয়া ঘুড়িকে ঠিক নিজের ঘুড়ির সাথে পেঁচিয়ে নিয়ে চলে আসে... যুদ্ধবিজয়ীর মতো।
    একবার বাজারে শক্তিমান ড্রেসের খুব চল হলো। তখন আমরা বেশ ছোটো, কচি আরোই ছোটো!
    কচি আবার শক্তিমান আর ভগবান বিষ্ণুর হেবি ফ্যান! ছবি তোলার সময় ভগবান বিষ্ণুর কাল্পনিক সুদর্শন চক্রওলা হাতের পোজে দাঁড়িয়ে যায়!
    শক্তিমানের পোষাক পরা ভগবান বিষ্ণু! কি ভয়ানক কম্বিনেশন!
    তা সেইবারে ঘুড়ি মেলায় সব ছাদে শক্তিমানের মেরুন রংয়ের আর বুকে সোনালী চক্র দেওয়া পোষাক পরা ছানাদের দল ঘুড়ি ওড়াচ্ছে!
    যেদিকেই তাকাও ছোটো ছোটো শক্তিমান....
    ভোকাট্টা!!!!!!!
    চিৎকারে সম্বিত ফিরলো.... পাশের বাড়ির সুরোজ কার যেন একটা ঘুড়ি কাটলো.... কাটা যাওয়া ঘুড়িটা আকাশে গোঁত্তা খাচ্ছে!
    সেই শক্তিমানের পোষাক পরা ছোট্টছেলেটা এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে,তার ঘুড়ির নেশা বদলে গেছে সময়ের সাথে সাথে..... সময় বড্ডো তাড়াতাড়ি চলে যায়, পিছনে ফেলে রাখে একরাশ সোনালী স্মৃতি।
    সামনের বাড়ির ছাদে একটা অচেনা বাচ্চা ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টা করছে! আগে ঐখানে একটা বিশাল শিউলি গাছ ছিলো! ঘুড়ির মাসে গাছটার ইতিউতি ঝুলে থাকতো ছেঁড়া রঙিন ঘুড়ি।
    হেমন্তের শিশির পড়ে একসময় সেটা বিবর্ণ পাতলা কাগজের টুকরো হয়ে যেতো, ঠিক বহু পুরোনো স্মৃতির মতোই!

    (চলবে)
  • রৌহিন | 37.63.180.207 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ১৪:১৩726750
  • চলুক। পরের পর্বগুলো এখানেই এপেন্ড করে দিন।
    খুব ভালো লাগছে।
  • pi | 233.176.3.242 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৯:১০726751
  • ভাল লাগছে। পরের পর্ব কই ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন