এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মোদির অর্ডিনান্স রাজ

    সৌভিক
    অন্যান্য | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ | ৪৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৌভিক | 24.99.121.77 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:৪৬657767
  • ২০১৪ র মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর মোদির প্রিয় বাচন ছিল ‘ছোট সরকার, বড় পরিচালন পরিসর’। বছরের শেষে এসে সেই বাচনের প্রকৃত অর্থটি পরিস্কার হয়েছে। সেটা দাঁড়িয়েছে ‘কম সংসদকাজ বেশি অর্ডিনান্সরাজ’। মোদি সংসদে কমই আসেন আর তার সরকার অর্ডিনান্স জারীর মধ্য দিয়ে সংসদে জরুরী সব আইন পাশ বা পরিবর্তন করাতে যত্নবান হয়। বাজেট অধিবেশনের আগেই মোদি সরকার প্রায় গণ্ডা দুয়েক অর্ডিনান্স জারী করেছে। অর্ডিনান্স সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টই বলেছে বিশেষ জরুরী ভিত্তিতেই কেবল এর ব্যবহার হওয়া দরকার। খবরে প্রকাশ রাষ্ট্রপতি এই অর্ডিনান্স আধিক্যে অসন্তুষ্ট হয়েও শেষপর্যন্ত সরকারের সঙ্গেই থেকেছেন এবং এই বিতর্কিত পদ্ধতিতে তার সম্মতি দিয়েছেন।
    এই অর্ডিনান্সগুলির মধ্যে অন্তত তিনটিকে নিয়ে এর মধ্যেই দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা, যাকে বারাক ওবামার প্রজাতন্ত্র দিবস সফরের প্রাক্কালে মার্কিন বিমা কোম্পানিগুলিকে ভেট বলেই মনে করা হচ্ছে। কয়লা খনিকে ব্যক্তিগত মালিকানায় দিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত অর্ডিনান্সটিও ভালোরকম বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তবে ২০১৩ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনকে বদলে ফেলে জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে জারী করা অর্ডিনান্সটিই এর মধ্যে সবচেয়ে কর্পোরেট বান্ধব, মারাত্মক ও স্বৈরতন্ত্রী বলে বিবেচিত হচ্ছে।
    বিরোধী আসনে থাকার সময়ে বিজেপি বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছিল, ঔপনিবেশিক পর্বের ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনকে বদলের বিষয়ে সম্মতিও জানিয়েছিল। কিন্তু এখন নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি যেভাবে নতুন করে আইন রচনায় উদ্যোগী হয়েছে তা সংসদের ভেতর ও বাইরের গণবার্তাকে উপেক্ষা করার চরম দৃষ্টান্ত হিসেবেই সামনে আসছে।
    জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অর্ডিনান্সটি অনেকগুলি ক্ষেত্রকেই সম্মতিগ্রহণ বা সামাজিক প্রভাব বিবেচনার মতো বিষয়গুলি থেকে ছাড় দিয়েছে আর ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের মোড়কে বহুফসলি উর্বরা কৃষিজমি অধিগ্রহণের পথকে সুগম করে দিয়েছে। বলা হয়েছে অধিগ্রহণের পর জমি ফেলে রাখলেও তা আর প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরে যাবে না। শুধু অর্ডিনান্স জারীর মধ্যেই সরকারের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নেই। বন সংরক্ষণ আইন ও পঞ্চম সিডিউলের মধ্যে দিয়ে অর্জিত আদিবাসী এলাকার গ্রামসভাগুলির অধিগ্রহণ বিষয়ক বিশেষ ক্ষমতাকেও নানাভাবে খর্ব করতে সে উদ্যোগী হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের ছোট নাগপুর ও সাঁওতাল পরগণা প্রজা আইনের মতো অনেক কিছুকেই বদল করে আদিবাসীদের জমির ওপর যেটুকু পরম্পরা ব্যাপী অধিকার আছে তাকে কেড়ে নেবার চেষ্টা করা হচ্ছে।
    মোদি সরকারের উন্নয়ন বিষয়ক নীতিটি এসবের মধ্য দিয়ে ভালোভাবেই সামনে এসেছে। তারা শিল্প করিডর, খননকাজ, নগরায়ন বা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়, হোটেল, আবাসন তৈরির নামে কৃষিজমি ও আদিবাসীদের জমিকে ব্যাপকভাবে অধিগ্রহণ করতে চায়। অন্যদিকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মত মোদির প্রিয় স্লোগান সব সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের চারপাশেই কেবল ঘুরপাক খায়। মোদি যখন তার চাহিদা, জনবিন্যাস ও গণতন্ত্রর থ্রিডি ফর্মুলায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়গের পক্ষে ওকালতি করেন তখন তার প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায় ভারতের ক্রেতাসাধারণ, শিক্ষিত ভারতীয় যুবকদের মধ্যে থেকে প্রস্তুত দক্ষ শ্রমিক ও ভারতের আইন ব্যবস্থাকে বিদেশি পুঁজির কাছে বন্ধক রাখা ও বিদেশি পুঁজির যথেচ্ছ গতি ও মুনাফাকে নিশ্চিত করা। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ নির্ভর জমি অধিগ্রহণ নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই উন্নয়ন মডেলের আসল বৈশিষ্ট্য হল ভারতের সমস্ত নাগরিক, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক ও চাকুরী প্রত্যাশী যুবদের অধিকারের ওপর এবং দেশের সম্পদের ওপর এক যুদ্ধঘোষণা।
    বাজেট অধিবেশনের পর্বে অর্ডিনান্সগুলিকে সংসদে বিতর্কের মুখোমুখি হতে হবে। বাস্তবের মাটিতে প্রতিটি অধিগ্রহণকে সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা করার পাশাপাশি সরকার ও সংসদের ওপর এই অর্ডিনান্সগুলি বাতিলের দাবিতে চাপ বাড়াতে হবে এবং অর্ডিনান্সগুলিকে আইনে পরিণত করার চেষ্টাকে বাতিল করতে হবে। মোদি সরকারের প্রথম বাজেট সামাজিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বরাদ্দ হ্রাসের চেষ্টা করেছিল, চেয়েছিল বিগত কয়েক বছরে যেটুকু সামাজিক সুরক্ষা বন অধিকার, কর্মনিশ্চয়তা বা খাদ্য সুরক্ষা আইনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল তাকে ব্যাপকভাবে কাটছাট করতে। সমস্ত ইঙ্গিৎ থেকে মনে হচ্ছে আগামী বাজেট সামাজিক সুরক্ষা ও নাগরিক অধিকারের ওপর আরো বেশি আক্রমণ আনবে। শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের লড়াকু সংগঠনগুলিকে অবশ্যই এই সমস্ত আক্রমণের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের চেষ্টাকে পেছনে ঠেলে দিতে হবে।
  • adhuli | 190.148.69.210 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:০০657768
  • তবে সংসদে আলোচনার পরিবেশ টাও তো থাকার দরকার। বিরোধী দল যদি আলোচনার বদলে হাড়ি, কলসি নিয়ে মুখে রং মেখে, চাদর জড়িয়ে রোজ নেত্য করে বেড়ায় তো সে দোষ কার ? মোদির ? আজকাল তো দেখছি ইভেন তাপস পাল ও কুকথার প্রতিবাদে ধরনা দিচ্ছে, পাচ্ছে হাসি বলছি তাই।
  • দেব | 135.22.193.150 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:১১657769
  • সৌভিকবাবু মোটের ওপর খুব ঠিক কথা লিখেছেন কিন্তু 'পুঁজি' (দেশী হোক বা বিদেশী) ছাড়া চলবে কি করে সেই পথটা বাতলাতে হবে যে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন