এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • Tukitaki

    joldip
    অন্যান্য | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৩৮০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • nina | 78.37.233.36 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:৪৫648366
  • খুব ভাল হচ্ছে জল্দীপ -জল্দি জল্দি হাত চালা
  • jol_dip | 213.147.90.9 | ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:১৮648367
  • (১৯)

    অবসর

    **********

    সময় যেন অতি দ্রুততালে বয়ে চলেছে | দিন-মাস-বছর যেন মনের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছে | দেখতে দেখতে মাস ছয় হয়ে গেল সুপর্ণ প্রবাসে | প্রথম প্রথম রোজ কথা হত স্কাইপেতে | এখন আর রোজ হয় না | কিছুটা সময়ের অভাব‚ কিছুটা সময় মিল খায় না | তবে সপ্তাহে তিনদিন তো হয়ই | মাঝে মাঝে অবশ্য ফোনেও কথা হয় |

    সুপর্ণ বা স্থিতিকে নিয়ে সমস্যা হয় না | সমস্যা হয়‚ পত্রাকে নিয়ে | বড় ছেলেমানুষ | নিয়ম করে রোজ সে আসে | একটা চাবি ওর কাছে দিয়েই রেখেছে প্রথমা | মাঝে মাঝেই দেখা হয় না | কোনদিন ফিরতে দেরি হয়‚ আবার কোনদিন ফেরাই হয় না প্রথমার | আসলে পান্থশালা নিয়ে এতটাই নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলেছে যে পত্রা বা দাদুভাইকে সময় দিতে পারে না কখনও কখনও | পত্রার রাগ হয় | কিন্তু মুখে কিছু বলে না | বলে পিকুন | একটু বড় হয়েছে তো সে | ঠোঁট ফুলিয়ে পিকুন বলে দিদুন আমাদের জন্য কোন স্পেস নেই তোমার লাইফে‚ য়্যু আর টূ বিজি | বলার ধরণে হাসি পায়‚ কিন্তু খারাপ লাগে | পিকুনের শব্দভান্ডার ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হচ্ছে‚ যদিও স্পেস আর টাইম‚ দুটো যে এক নয়‚ সেটা এখনও বোঝার মত বয়সে আসে নি সে | হয়ত মায়ের খেদ থেকে অনাবধানে উচ্চারিত কিছু শব্দ তার তাজা মস্তিষ্কে ঠাঁই করে নিয়েছে | এইসব সময়ে সে ভাবে আর বেশি যাবে না পান্থশালায় | পত্রার ভার মুখ‚ দাদুভাই-য়ের ওল্টানো ঠোঁট দেখতে ভালো লাগে না | কিন্তু ঐ ভাবনাই সার | পান্থশালার মানুষগুলো কি যে এক মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে তাকে ভেবে পায় না | ওদের একটু ভালো রাখার জন্য পরিশ্রমও তো কম হয় না | কিন্তু সর্বোপরি সবকিছুর ওপর আছে তৃপ্তি | ওদের ভেঙ্গেচুরে যাওয়া মলিন মুখের হাসি অনেক বড় পাওয়া তার জীবনে |

    তাই যাওয়া কমাব করেও পান্থশালা যাওয়া কম করতে পারেনি‚ যদিও আজ সে যায়নি সেখানে | আজ সে রান্নায় মন দিয়েছে | এখন তো পরমাও তার সাথে পান্থশালার নিয়মিত স্বেচ্ছসেবিকা | আগের পরমার সাথে এখনকার পরমার অনেক পার্থক্য | এই তো কিছুদিন আগেও সে ছিল তার দিদির মুখাপেক্ষী‚ আশ্রয়প্রাথী | বড় অসহায় লেগেছিল পরমাকে | অবলম্বন না থাকলে জীবন এমন অসহায় মনে হয় | প্রথমা তাই চেয়েছিল পরমাকে পান্থশালার সাথে জড়িয়ে দিতে | আজ নিজেকে অনেক নিশ্চিন্ত লাগে |

    ইলিশের পাতুড়ীতে মন দেয় প্রথমা | পত্রার অভিমানী মুখটা দেখতে যে ভালো লাগে না | তাই আজ দুপুরে ওদের বাড়িতে খেতে বলেছে | আয়োজন সামান্যই | কিন্তু সবই পত্রার প্রিয় পদ | পরমাকেও আসতে বলেছে | পিউ-কেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল‚ কিন্তু সে আসতে পারবে না | তার মায়ের শরীরটা খারাপ | রাঁধতে রাঁধতেই পান্থশালার আবাসিকদের জন্য মনখারাপ লাগে | ওদের খাওয়াতে পারলে ভাল লাগবে | আজকাল ইলিশ মাছ যেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে | ইচ্ছে হলেও কেনার উপায় থাকে না | তবু একদিন পান্থশালার আবাসিকদের করে খাওয়াতে হবে দাম যাই হোক |

    দরজার বেলটা বেজে ওঠে | পিকুন নিশ্চয় | মাথায় খুব দ্রুত লম্বা হচ্ছে | দরজার সামনের দুটো সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পা উঁচু করলেই আজকাল হাত পেয়ে যায় বেলটার |

    দাদু দরজা খোলা তো? বারন্দায় উঁকি না দিয়েই চেঁচিয়ে বলে প্রথমা | না হলে একনাগাড়ে বেলটা বাজিয়েই যাবে | বড় হচ্ছে যত‚ দুষ্টু হচ্ছে তত |

    ধুপধাপ করে সিঁড়ি পেরিয়ে কিচেনে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিকুন প্রথমাকে | বড় ভালো লাগে এই মুহুর্তগুলো | ছোট ছিল যখন পত্রা ঠিক এমন করেই জড়িয়ে ধরত তাকে পিছন থেকে |

    মা পাতুড়ী করছ তো | যা গন্ধ বেরিয়েছে‚ আমার তো আর তর সইছে না | পত্রা নাক উঁচু করে গন্ধটা আস্বাদন করতে করতে সোফায় বসে | বেলা যদিও বেশি হয়নি |

    তুই না চিরকালে হ্যাংলা | হাসতে হাসতে বলে প্রথমা | কদিন থেকেই একটা আষাঢ়ে মেঘ জমেছিল পত্রার মুখে | সেটা সরিয়ে একটা ঝকঝকে রোদ খেলা করে পত্রার মুখে | মনটা ভালো হয়ে যায় | অনুভব করে মাঝে মাঝে এই ব্রেকগুলো বড় জরুরী |

    তোমার বোন আসবে কখন? জানতে চায় পত্রা |

    আবার আমার বোন? মাসি বলে তো ডাকতে পারিস | মৃদু তিরস্কার প্রথমার কন্ঠে |

    সরি মা | কিন্তু আমি যে ওঁনাকে মাসি বলে ডাকতে পারছি না | আমি না হয় সম্বোধন ছাড়াই কথা বলব প্রয়োজন হলে | পত্রা বলে |

    পান্থশালা তাদের দুই বোনের সম্পর্ক কে আগের থেকে অনেক সহজ করেছে | কিন্তু মুছে দিতে পারেনি বিগতদিনের সব বিদ্বেষকে | পত্রাকে কিছু বলে না প্রথমা |

    দরজায় বেল বাজে আবার | এবার নিশ্চয় পরমা | পত্রা আসার সময় লকটা টেনে দিয়েছে | ওপর থেকে চাবিটা ফেলে দেয় প্রথমা | দরজা খুলে উঠে আসে পরমা | আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ | সুগার-প্রেশার-বাত নিয়ে আর অত পঙ্গু নয় | পায়ে পায়ে এসে ডাইনিং-এ বসে সে | এক অদ্ভুত নীরবতা | অস্বস্তি লাগে প্রথমার | পিকুনকে ডাকে | ছোটরা পারে সব সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে | দাদুভাই এটা তোমার আর একটা দিদুন | ছোট দিদুন |

    আর একটা দিদুন? আগে তো দেখিনি দিদুন | বলে পিকুন প্রথমাকে |

    না তুমি আগে আমায় দেখনি | আমি তোমার দিদুনের বোন দাদুভাই | তোমার মায়ের মাসি আর তোমার দিদুন | মৃদু হেসে বলে পরমা |

    দিদুন এ তোমার সিস্টার? সন্দেহ উঁকি দেয় পিকুনের মনে | ভাবতেই পারেনা বুঝি তার দিদুনের একটা বোন থাকতে পারে |

    হ্যাঁ দাদু | আর এ বলতে নেই | বলতে হয় ইনি | বুঝেছ | প্রথমা নাতিকে আশ্বস্ত করে শুধরে দেয় |

    মা ইনি তোমার মাসি? সন্দেহ নিরসন হয় না পিকুনের | পত্রাকে প্রশ্ন করে সে নিশ্চিত হতে চায় |

    পিকুনকে উত্তর দেয় না পত্রা | মা পিকুনকে খেতে দাও | ওর খেতে খুব দেরি হয় | বলে পত্রা সোফা থেকে উঠে চলে যায় কিচেনে খাবার আনতে | অসহায় চোখে তাকায় পরমা‚ প্রথমার দিকে | প্রথমা পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় কিচেনে পিকুনের ভাত বেড়ে দিতে | সময়ের ওপর ছাড়া থাক | সময় আর পরিস্থিতি যেমন তাদের সম্পর্ককে কিছুটা সহজ করেছে তেমনই হয়ত আজকের পর এদের সম্পর্কও সহজ হবে |

    (ক্রমশ)
  • de | 69.185.236.51 | ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:৩৬648368
  • পড়ছি - আরেকটু তাড়াতাড়ি আসতে পারে না? পর্বগুলো?
  • jol_dip | 233.29.204.178 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৩৮648369
  • আমি চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি পর্বগুলো দেবার। ধন্যবাদ।
  • jol_dip | 233.29.204.178 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:৫৯648370
  • (২০)

    অবসর

    ******

    এক একটা সময় হয় অন্যরকম | খুব কঠিন | আবার সেই কঠিন সময়টা মানুষ পেরিয়েও যায় ঠিকই‚ তবু সেই সময়ের ভিতর দিয়ে যাওয়ার ক্ষণগুলো হয় শীতল‚ কঠিন | প্রতি মুহুর্ত হয় অসহনীয়‚ অথচ মানুষ সহন করে যায় |

    ঠিক এমনই একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পিউ | শুধু পিউ একা নয় | প্রথমাও যাচ্ছে | পিউ-এর মা মাঝে অসুস্থ ছিলেন‚ দ্রুত সেরেও উঠছিলেন | কিন্তু কয়েকদিন আগেই পড়ে গিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখন হসপিটালে ভর্তি | অবস্থা বিশেষ ভালো না | একটা দিক আগেই পুরো প্যারালাইসড হয়ে গেছে | পিউ দিনরাত সেখানে | পান্থশালার পুরো দায়িত্ব এখন প্রথমার | বাড়ি ফেরাই হয় না বেশ কতগুলো দিন হয়ে গেল | এতগুলো মানুষের পালনের দায়িত্ব সহজ না | তার ওপর আবাসিকদের বেশীরভাগই বয়স্ক‚ কেউ কেউ রোগে জীর্ণ | তাদের সেবা-শুশ্রষার জন্য লোক আছে ঠিক কথা‚ কিন্তু তাদের মাথার ওপর কেউ একজন না থাকলে কোন কাজটাই ঠিকঠাক এগোবে না | এই এতবড় কর্মকান্ড ঐ পুঁচকি মেয়েটা কি করে সামলায় ভাবতে যেমন অবাক লাগে তেমনি গর্ব হয় পিউ-এর জন্য |

    মনটা ভারী হয়ে আছে | সন্ধেবেলা পিউ খবর নিচ্ছিল পান্থশালার | তখন বলেছিল তার মায়ের অপর সাইডটাও প্যারালাইসড হয়ে গেছে | জ্ঞান নেই | ডাক্তার কিছু আশা দেয়নি | শোনা অবধি মনটা খারাপ | ঈশ্বর বলে কিছু আছে কিনা জানা নেই‚ কিন্তু সন্ধ্যে থেকেই তার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছে মানুষটার কষ্ট প্রশমিত হোক |

    মা খাবার এনেছি | খেয়ে নাও অল্প কিছু | জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবার মাঝেই গলা শুনে মুখটা ফেরায় প্রথমা | পার্বতী | খুব নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করে | সেই যেদিন কাজে বহাল হল সেদিন থেকেই পান্থশালাকে বড় আপন করে নিয়েছে পার্বতী | পান্থশালায় যোগ দেবার পর থেকে আর একদিনও সে তার ছেলের কোন কথা বলেনি | | কেমন যেন ভুলে যেতে চেয়েছে নিজের অতীতকে | মাঝে মাঝে তাই পার্বতীকে তার সামান্য মেয়ে বলে মনেই হয় না | পিউ ওকে ভালো টাকাই মাহিনা দেয়‚ কিন্তু পার্বতী নেয় না | বলে জমিয়ে রাখো দিদি তোমার কাছে‚ যেদিন লাগবে চেয়ে নেব | পিউ ওকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে চেয়েছে‚ রাজী হয়নি পার্বতী | বলেছে তোমার কাছে রাখ | তোমার কাছে থাকা মানে তো ব্যাঙ্কেই থাকা | সুদ আমার চাই না | তোমাদের ভালোবাসাই আমার কাছে সুদ |

    ঘরে আনতে গেলে কেন? আমি তো বল্লাম আমার খেতে ইচ্ছে নেই | মৃদু স্বরে বলে প্রথমা |

    আজ ঘরে ঘরেই খাবার দিয়ে দেওয়া হয়েছে মা | তাই তোমারটাও নিয়ে এলাম | আর মা ইচ্ছে- অনিচ্ছেটা কথা নয়‚ কথা হল খাবারটা না খেলে যে শরীরটার ক্ষতি হবে | অল্প দুধ আর খই আছে | ওটুকু খেয়ে নাও |

    পিউ-এর মায়ের অবস্থা ভালো না | মেয়েটা বড় মুষড়ে পড়েছে |

    জন্মালেই তো মরিতে হবে‚ অমর কে কোথা কবে - শোনোনি মা? যেতে যে সবাইকেই হবে গো | তবে বলতে পার মানুষটা বড্ড কষ্ট পাচ্ছে | আর পিউদিদিকে চিনি আমি | দেখবে ঠিক সব সামলে নেবে | দুঃখ-কষ্ট সব মা দুদিনের | তোমরা শিক্ষিত মানুষ | তোমরা যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু বিচার কর | তোমাদের মা মন খারাপ করে থাকলে চলে? আমার আগেও কিছু ছিল না আর আমার পরেও কিছু থাকবে না | সব তো মায়া মা |

    তুমি গীতা পড়েছ? একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করে প্রথমা | যত দেখছে পার্বতীকে তত অবাক হচ্ছে প্রথমা |

    না মা পড়িনি | অত বিদ্যা আমার পেটে নেই | এ সবই জীবন থেকে শেখা | হাসে পার্বতী | এবার তুমি খেয়ে নাও মা | তুমি খেয়ে নিলে বাসনগুলো আমি খেয়ে মেজে নেবো |

    জানে পার্বতী কথা শুনবে না | খাইয়ে তবে নিজে খেতে যাবে | বাধ্য মেয়ের মত খেয়ে নেয় প্রথমা | বাসন নিয়ে চলে যায় পার্বতী |

    একটা ফোন করবে পিউকে ভাবে প্রথমা | না থাক | চরম মুহুর্ত আসার আগে মনকে প্রস্তুত হবার সময় দিতে হয় | থাক মেয়েটা নিজের সাথে | আজ খুব বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে | বাবা হঠাৎ করেই চলে গেছিলেন | পত্রা তখন পেটে | যেতে পারেনি | খুব কেঁদেছিল | একটা সময় ভাবত বাবাকে ছাড়া কি করে বাঁচবে সে | অথচ ঠিক বেঁচে আছে সে | মাকে অবশ্য নিজের সামনেই চলে যেতে দেখেছে | বাবা চলে যাবার পর নিজের জীবনে যখন বিপর্যয় নেমে এসেছিল তখন মা পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল | সেই মা-ও ছেড়ে চলে গেল একদিন | মনটা বড় আদ্র হয়ে আছে | মনের মধ্যে মন খারাপের তুফান | ঢেউ-এর মত তাদের আসা-যাওয়া | এমনটাই বুঝি হয়‚ মন সৈকতে লুকিয়ে থাকা শোকগুলো ঢেউ-এর ধাক্কায় এমন করেই বুঝি উঠলে ওঠে | উপছে পড়ে চোখ বেয়ে লোনাজল | বয়ে যেতে দেয় প্রথমা |

    রাত একটু একটু করে এগিয়ে চলে মধ্যরাতকে অতিক্রম করার দিকে | নিশুতি রাতে ভেসে আসে দূর থেকে কয়েকটা কুকুরের চিল-চিৎকার | পুরোনো বাড়িটার আলসেতে ডানা ঝাপটায় ঘুমিয়ে থাকা পায়রারা বিরক্তি জানিয়ে | দূর থেকে রোডলাইটের আলোতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া কয়েকটা কাকও কা কা করে ডেকে ওঠে | পিউ-এর খাটে বসে বই পড়ছিল প্রথমা | চোখটা জ্বালা করে | চশমাটা চোখ থেকে খুলে চোখটা বন্ধ করে প্রথমা | মাথাটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা | কদিন ধরেই এখানে আছে | রাতে তাই তেমন ঘুম হয় না | কেমন একটা ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম | ঘুমের মধ্যেই হাবি-জাবি স্বপ্নেরা আনাগোনা করে | আজ রাতে ঘুম আসেনি | আসবে না জানত প্রথমা | তাই বই নিয়ে বসেছিল | আরোগ্যনিকেতন | তার প্রিয় একটি বই | পড়তে পড়তে চোখদুটো ক্লান্ত লাগছিল |

    মোবাইলটা সেই সময়েই সুরেলা শব্দে বেজে ওঠে | একটু বুঝি ঝিমুনি এসেছিল | থই পায় না | স্কিনে পিউ-এর নাম্বার | হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে | পেটের মধ্যে একটা গুড়গুড়ানি পাক দিয়ে ওঠে | কলটা অ্যাকসেপ্ট করে সেটটা তুলে কানে দেয় | ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে শান্ত সমাহিত এক কন্ঠস্বর - সব শেষ মাসিমা | কেটে যায় লাইনটা |

    ঠিক ঠিক এই মুহুর্তগুলো বড় অসহায় লাগে প্রথমার | মনে হয় অনেক অনেক লোক থাকুক তার পাশে | একটা হাঁপানীর মত কষ্ট বুক ঠেলে উঠে আসতে চায় | অস্থির লাগে নিজেকে | ঠিক ঠিক এমনটাই লেগেছিল বাবার সংবাদটা শোনার পর |

    মা |

    পার্বতী | পিউ-এর মা আর নেই | বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে প্রথমা |

    জানি মা | তোমার ফোনটা আসতেই বুঝতে পেরেছি | অদ্ভুত শান্ত স্বরে বলে পার্বতী |

    অবাক হয়ে তাকায় প্রথমা | কি করে পারে এরা এত শান্ত থাকতে? কই সে তো পারছে না |

    কেঁদো না মা | উনি যে কষ্টটা পাচ্ছিলেন সেটা থেকে তো মুক্তি পেলেন | তুমি কাঁদলে আবাসিকদের সামলাবে কে মা? ওরা তো শেষ স্টেশনের যাত্রী গো | যত্ন করে মুছিয়ে দেয় পার্বতী প্রথমার ভিজে চোখদুটি | তারপর টেনে নেয় তার মাথাটা নিজের বুকে |

    জীবনের অভিজ্ঞতাই বুঝি পার্বতীকে এত স্থিতধী হতে শিখিয়েছে | জীবন প্রতি মুহুর্তে কিছু শেখায় | মনে মনে ভাবে প্রথমা | পুবাকাশে তখন পাপড়ি মেলছে গোলাপী সকাল পিউ-এর মায়ের মত এমনই অনেক মানুষকে শেষ বিদায় জানিয়ে |

    (ক্রমশ)
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:০৪648371
  • বাঃ! খুব সুন্দর লিখছিস রে। আজ একসঙ্গে পড়লাম। তোর লেখার বাঁধুনি দিনকে দিন সুন্দর হচ্ছে ........... বুঝলেন জলোদেবী।ঃ)
  • jol_dip | 233.29.204.178 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:৩৯648372
  • (২১)

    অবসর

    ********

    পারলৌকিক কাজকর্ম শেষে পিউ পান্থশালার দায়িত্বে ফিরে এসেছে | বেশ কদিন পরে তাই আজ প্রথমা বাড়িতে | নিজের বাড়ির মত শান্তির জায়গা বুঝি পৃথিবীতে কিছু হয় না | গতকাল বাড়িতে ঢোকার সময় এমনটাই মনে হয়েছিল প্রথমার | প্রতিবার বেড়িয়ে ফেরার সময় মনে হত‚ কিন্তু বাড়ির কাছাকাছি থেকেও যে বাড়িকে এত মিস করেছে সে ভেবেই অবাক লাগছিল |

    আজ সারাদিনে অনেক কাজ | কদিন বাড়িতে ছিল না | ধুলো পড়ে গেছে | সব ঝেড়ে মুছে পরিস্কার করতে হবে | একদিনে পারবে না | দিনকয় পান্থশালা থেকে ছুটি নিয়েছে সে | কিছু কাজকর্ম আছে নিজস্ব | সেগুলো সারতে হবে | শারীরটাও ঠিকঠাক নেই | বাতের একটা ব্যাথা কদিন ধরেই চাগিয়েছে | স্প্রে করে কিছু হচ্ছে না | একবার ডাক্তার দেখাতে হবে | এই রকম টুকটাক কত কাজ বাকি |

    এক কাপ চা করে এনে ডাইনিং-এ বসে প্রথমা | চাটা খেয়ে কাজে হাত দেবে | ঘরে তো কিছুই নেই | ডালে-ভাতে চরিয়ে দেবে | গরম গরম বানিয়ে তার ওপর ঘি ছড়িয়ে দিলেই হবে | সাথে পাঁপড়ভাজা | মন্দ হবে না | ভাবতে ভাবতেই দরজার বেলটা বেজে ওঠে | চাটা নিয়ে বারান্দা দিয়ে উঁকি দেয় প্রথমা | পরমা এসেছে | একটু বিরক্ত হয় মনে মনে | ঠিক এই সময়টাতে কাউকে চাইছিলো না সে | কোন কোন সময় নিজের সাথে একলা হতে মন চায় | আজ যেন তেমন একটা দিন চেয়েছিল সে |

    দরজা খোলা তো | বলে বারান্দা থেকে ডাইনিং-এ ফিরে আসে প্রথমা | চায়ের কাপটা টেবলে রেখে কিচেনে গিয়ে ফ্লাক্সে রাখা চা আরও একটা কাপে ঢেলে ফিরে আসতে আসতে পরমা ওপরে চলে আসে | আজ একটু বেশি করেই চা করে রেখেছিল | ফ্লাক্সে ঢেলে রেখেছিল পরে পরে লাগলে খাবে বলে |

    দাও দাও মনটা চা চা করছে | সাকালে আজ চা বানাইনি | ভাবলাম একেবারে তোমার বাড়িতে এসেই খাব | রোজ রোজ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হতে ভালো লাগে না | চায়ের কাপটা হাত থেকে নিতে নিতে বলে পরমা | পরমার মুখটা বেশ খুশী খুশী |

    পরমা এখন আর ফোন করে আসে না | সময়-সুযোগ হলেই চলে আসে এইরকম সকাল সকাল | জানে এত সকাল সকাল প্রথমা কোথাও বেড়োয় না | মাঝের সময়টা কি অদ্ভুত ছিল | কেউ কাউকে সহ্য করতে পারত না | অথচ এখন সম্পর্কের মরচে ঝরে পড়তে শুরু করেছে |

    দিদি আজ কি পান্থশালাতে যাবে? জানতে চায় পরমা |

    না | কদিন পান্থশালা থেকে ছুটি নিয়েছি | কিছু কাজ জমে গেছে | প্রথমা বলে |

    খুব জরুরী কিছু? আজ না করলেই নয় এমন কিছু কাজ কি?

    না‚ তেমন কিছু জরুরী না যে আজই করতে হবে | কেন বলো তো?

    না তেমন কিছু না | আসলে আজ মন বাড়িতে থাকতে চাইছে না | চলো না দিদি কোথাও আজ ঘুরে আসি | হুটহাট করে বেড়িয়ে পড়তে ভারী ভালো লাগে | পত্রকের এসব শখ তো কোনকালেই ছিল না | চলো না দিদি | পরমার কন্ঠ থেকে আব্দার ঝরে পড়ে

    নীরব থাকে প্রথমা | সত্যি কথাই বলেছে পরমা | পত্রকের এসব শখ ছিল না | অবশ্য তাই বলে যে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়োত না এমনটাও না | প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে বেড়োতে ভালোবাসত |

    কিন্তু পরমা দেখছ তো বাড়িতে কি ধূলো পড়েছে | এগুলো পরিস্কার না করলে হয় বল? আর আমার ঠিক শরীরটা ভালো নেই | কদিন পান্থশালাতে বেশ খাটুনি গেল তো | যতই অস্বীকার করি না কেন‚ শরীরের বয়সটা তো বাড়ছে | বলে প্রথমা |
    চুপসে যায় পরমা | চুপ করে মুখটা নীচু করে থাকে |

    এ যেন সেই ছোট্ট পরমা | কিছু বললেই চোখে জল চলে আসত | মাথাটা নীচু করে ঘন্টার ঘন্টা বসে থাকত | মনটা কেমন করে ওঠে প্রথমার | বাড়িটা না হয় কাল পরিস্কার করবে | আজ না হয় ঘুরে এল পরমার সাথে | একদিনে কি বা যায় আসে |

    বেশ চলো তবে | কিন্তু যাবে কোথায় সেটা তো স্থির করতে হবে? বলে প্রথমা |

    সত্যি যাবে দিদি | বেড়িয়ে তো পড়ি | তারপর না হয় গন্তব্য স্থির করা যাবে | উচ্ছল হয়ে ওঠে পরমা | আমি বরং তোমার হাতে হাতে কিছু কাজ সেরে দি |

    হাসে প্রথমা | একলার সংসারে এত কিছু কাজ না‚ যে তোমাকেও হাত লাগাতে হবে | আমি নিজেই করে নেব | আর আজ যখন বেড়োবো তখন আর কাজে হাত দিয়ে লাভ কি | কয়েকটা বাসন আছে ও আমি ধুয়ে নিচ্ছি | বলে চলে যায় প্রথমা | স্নান সারতে একটু যা সময় লাগবে | প্রথমা এমনিতে বেশ চটপটে |

    দরজার বেলটা আবার বেজে ওঠে | কে এল এই সময় ? স্নান করতে করতে ভাবে প্রথমা | তাড়াতাড়ি স্নানটা করে বেড়িয়ে আসে সে | ডাইনিং-এ পত্রা | নিশ্চয় খাবার দিতে এসেছে | কালই শুনে গেছিল আজ প্রথমা বাড়ি পরিস্কারের কাজে ব্যস্ত থাকবে | আগে থেকে মুখে কিছু বলে না‚ একদম এনে হাজির করে | কখনও কখনও পত্রার এই গিন্নীপনা বেশ ভালো লাগে | মায়ের কথা খুব মনে পড়ে | এখনও ভালো লাগল |

    তোমরা যে বেড়োবে সেটা তো আগে বলনি? জানতে চায় পত্রা | পরমাকে মাসি বলে না ডাকলেও ইদানীং দু-চারটে কথা বলে পত্রা পরমার সাথে | সেই সূত্রেই বুঝি পরমা পত্রাকে বলেছে তাদের বেড়াতে যাবার কথা |

    না দিদি তো জানত না | আমি এসে বল্লাম যে চলো কোথাও ঘুরে আসি | আমতা আমতা করে বলে পরমা | পত্রাকে একটু সমঝে চলতে চায় সে |

    সারাদিন যে বাইরে ঘুরবে-ফিরবে তা খাবেটা কি? আগে জানা থাকলে কিছু বানিয়ে নিতে বা আমি বানিয়ে দিতেও পারতাম | একটা অসন্তোষ কি ঝরে পড়ে পত্রার গলা দিয়ে? কানে যেন তেমনটাই ঠেকে | আসলে অসন্তোষ না‚ মায়ের প্রতি কর্তব্যবোধ | মেয়েটা একদম তার মত হয়েছে | সেও ঠিক এমনটাই ছিল |

    অত ভাবিস না | দোকান তো আছে রে বাবা | বলে প্রথমা | একদিন না হয় দোকানে খেলাম | একটু ধরকাট করে খেলেই হবে | আমরা তো আর বাচ্চা না |

    দোকানের খাবার খেয়ে শরীর খারাপ করলে তখন কি হবে? ভুলে যেও না বয়সটা বাড়ছে | যা বোঝ তাই কর | আমি চল্লাম | বলে সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ করে নেমে যায় পত্রা |

    পত্রা রেগে চলে গেল দিদি | থাক বরং অন্য কোনদিন যাওয়া যাবে | মুখটা করুণ করে বলে পরমা |

    ওসব নিয়ে ভেবো না | ছেলেমানুষী ব্যাপারটা এখনো আছে ওর | বরং এসো পত্রা যা এনেছে খেয়ে তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়ি | নাহলে বেলা হয়ে যাবে আরও |

    বেশি সময় লাগে না প্রথমার | তারপর তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়ে দুজনে সারাটা দিনের জন্য অনেক অনেক দিন পর সেই ছোটোবেলার মত | কলেজ কেটে বন্ধুদের সাথে কত ঘুরেছে | মাঝে মাঝে পরমাকেও সাথে নিত | বড় সুন্দর ছিল সেসব দিন |

    আজ পরমার কি হয়েছে‚ সমানে বকে চলেছে | দিদি অনেকদিন গঙ্গার ঘাটে যাই না | আজ কিন্তু যাব | তুমি তো নৌকা চরতে ভয় পাও | স্টিমারে চড়বো | আর সারাদিন যা ইচ্ছে করব‚ যা ইচ্ছে খাব‚ কি মজা যে হবে | ভেসে যেতে থাকে প্রথমাও পরমার সাথে |

    বয়সটা যেন হঠাৎ করে কমে গেছে দুজনের |

    (ক্রমশ)
  • de | 69.185.236.51 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০৫648373
  • তারপর?
  • jol_dip | 213.147.90.227 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:৫৬648374
  • (২২)

    অবসর

    ******

    কদিন ধরেই হাঁটুতে একটা ব্যথা হচ্ছিল | হাঁটতেও একটু অসুবিধা হচ্ছিল | বেশি হাঁটলে বা বেশিক্ষণ দাঁড়ালেও ব্যথা হচ্ছে | প্রথমা বাতের ব্যথাই ভেবেছিল | কিন্তু ব্যথাটা না কমাতে ডাক্তার দেখাতে গেছিল | ডাক্তার বললেন আর্থারাইটিস তো আছেই তার সাথে মনে হচ্ছে হাড় ক্ষয়ে যাচ্ছে | কিছু টেষ্ট করতেও দিয়েছেন | বেশ কিছু ওষুধ দিয়েছেন | কদিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন | আর দেখিয়ে দিয়েছেন কিছু ব্যায়াম যেগুলো ঠিক এখনই করতে হবে না | টেষ্টের রিপোর্টগুলো আসলে ডাক্তারকে দেখাবার পর তিনি সাজেস্ট করবেন | তাই এখন কিছুদিন বাড়িতেই বন্দী | রান্নাবান্নাও করতে হচ্ছে না | পত্রা সকালের খাবারটা পাঠিয়ে দেয় আর রাতের খাবারটা আসার সময় নিয়ে আসে | প্রথমা বলার চেষ্টা করেছিল আমি নিজেরটা নিজে ফুটিয়ে নিতে পারব | কিন্তু পত্রা শোনে নি | বেশি বলতে সাহস পায়নি | ইদানীং মেয়েটা খুব অভিমানী হয়ে উঠেছে |

    এই কদিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছে সে | কোথাও যেতে-আসতে পারছে না |যদিও নিয়ম করে রোজ বেরোয় না‚ তবুও মাঝে মাঝে তো বের হয় | এইরকম নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত ধরে যাচ্ছে | কিন্তু কিচ্ছুটি করার নেই | জোরদার নজরবন্দী সে এখন | বয়স যত বাড়ছে‚ মেয়েটা যেন তত বেশি তার ওপর খবরদারি করে চলেছে | ওদিক থেকে সুপর্ণ আর স্থিতিও আছে | নিজেকে নিয়ে অন্যদের ব্যতিব্যস্ত করতে যদিও ভালো লাগে না‚ তবু নিজের কাছে অস্বীকার করতে বাধা নেই আজ এই পত্রার খবরদারি‚ সুপর্ণ-স্থিতির এই কনসার্ণ কিন্তু ভালো লাগে | আমার জন্য কেউ ভাবছে‚ আমার কেয়ার করছে এটাও একরকম ভালো লাগা | সেই ছোটবেলায় জ্বর-জ্বালা হলে মা যেমন ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকত‚ সারাক্ষণ গায়ে হাত দিয়ে দিয়ে দেখত |

    পরমাও আসেনি বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল | ইদানীং তো হুটহাট করে চলে আসছিল | হয়ত ব্যস্ত আছে | কয়েকদিন ধরেই পরমার একটা কথা মাথায় ঘুরছে | পরমার বাড়িটার একটা সুবন্ধোবস্ত করা | সেদিন এই কথাটা অনেকবার বলেছে পরমা | সারাটা দিন টো টো করে ঘুরেছে দুজনে | কখনও ট্যাক্সিতে‚ কখনও বা টানা রিক্সায় | মাঝে মাঝে হেঁটেছেও অল্প দুরের পথ | বইপাড়াতে ঘুরে ঘুরে বই দেখেছে‚ যদিও কিনেছে কম | গঙ্গার ঘাটে বসে থেকেছে অনেকক্ষণ | সিনেমা দেখেছে | উল্টোপাল্টা কিনে খেয়েছে রাস্তার ধারের দোকান থেকে | শরীর-টরীর খারাপ করল না তো? একটু চিন্তা হয় | একটা ফোন করে দেখতে হবে |

    দিনটা বেশ ভালো কেটেছিল | সারাটাদিন টো টো করে অনেকগুলো দিন এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ঘুরে বেরিয়েছে শাড়ি-পোশাকের বোঝা নিয়ে | তবে বয়সের ভার আর মাঝের কিছুদিনের অনভ্যাসে মাঝে মাঝেই হাঁপিয়ে পড়ছিল | সারাদিন অবাক হয়েছে পরমাকে দেখে | মেয়েটা যেন তার কিশোরী বেলায় ফিরে গেছে | অবশ্য তার যখন বিয়ে হয়ে যায় তখনও পরমা কিশোরী | তাই পরমার শৈশব থেকে কৈশোর পর্য্যন্ত স্মৃতি বেশি প্রথমার কাছে |

    পত্রক বাড়ির অংশ দিতে চেয়েছে সুপর্ণ আর পত্রাকে | ওরা নিতে চায়নি খুব স্বাভাবিকভাবেই | পরমা-পত্রকের নিজের সন্তান থাকলে হয়ত সুপর্ণ-পত্রার প্রসঙ্গ আসত না | পরমা হয়ত ভেবেছিল এভাবে কিছুটা হলেও ওদের মনের কাছে পোঁছাতে পারবে | কিন্তু সে প্রচেষ্টা কাজে আসেনি | তাই বাড়িটার ভবিষ্যত নিয়ে বেজায় চিন্তিত পরমা | বাড়ি তো শুধু ইঁট-পাথরের খাঁচা নয় | সময়ের তরণী বেয়ে বয়ে যাওয়ার স্মৃতিখন্ডও বটে | বাড়িটা একসময় প্রথমারও বড় প্রিয় ছিল |

    সেদিন বিকালে সারাদিনের ধকলের পর যখন তারা গঙ্গার ঘাটে বসেছিল সেই সময় পরমা পত্রকের ইচ্ছার কথা বলেছিল | দিন তখন নিভু নিভু | আকাশের কোল ঘেঁষে অন্ধকার ধীরে ধীরে বেলা শেষের ক্ষীণ আলোকে শুষে নিতে এগিয়ে আসছিল | এই দিন শেষের মরা আলোকে তখন খুব আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করে | পরমা বলছিল দিদি জানো তো পৈতৃকসূত্রে পাওয়া এই বাড়িটার প্রতি বড় মায়া ছিল পত্রকের | জীবনে তো মা-বাবাকে তেমন করে পায়নি | এই বাড়িটা যেন অনেককিছু ছিল তার কাছে | বলেছিল কেউ যদি বাড়িটা না নিতে চায়‚ কোন ভালো কাজে দান করে দিয়ে যেও | আমার শরীরও তেমন ভালো তো নয় | কবে বলতে কবে কিছু একটা হয়ে যাবার আগে একটা বন্দোবস্ত করে যেতে হবে |

    পরমার বলা কথগুলোর মধ্যে যেন কি একটা ছিল | খুব স্পর্শ করে যাচ্ছিল তাকে | চুপ করে শুনছিল পরমার কথাগুলো | তারপর বলেছিল - সেসব না হয় পরে ভেব | এখনি এত ভাবার কি আছে?

    উত্তর না দিয়ে হেসেছিল পরমা | হাসিটা ছিল অন্যরকম | গাটা শিরশির করে উঠেছিল প্রথমার | জোর দিয়ে বলেছিল এখন তো তুমি আগের থেকে অনেক ভালো আছ | তাহলে ওসব নিয়ে ভাবছো কেন | ওসব নিয়ে না হয় পরে ভাবা যাবে |

    এবারও কোন উত্তর দেয়নি পরমা | অন্যমনস্ক হয়ে জলের দিকে তাকিয়েছিল | ফেরার পথে বলেছিল কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে সেটা মাথায় রেখ |

    তারপর থেকে ঐ চিন্তাটাই মাথায় ঘুরছে | পান্থশালার পরিধি যে হারে বেড়েছে তাতে আর একটা বাড়ি হলে মন্দ হয় না | পত্রকদের বাড়িটা খুব একটা ছোট না | কিন্তু পান্থশালা আর পত্রকের বাড়ি দুটোর অবস্থান পুরো উল্টো | এই মুহুর্তে পান্থশালার আলাদা করে ব্রাঞ্চ খোলাও সম্ভব না | আবার আজকাল যে ধরনের দুর্নীতির কথা শোনা যায় তাতে অন্য কোন সংস্থাকে বাড়ি দান করলে সেটা যে কতটা কার্যকরীভাবে ব্যবহৃত হবে জানে না প্রথমা | পিউ-এর সাথে কথা বলতে হবে |

    মাথায় অবশ্য আরও একটা ভাবনা কাজ করছে | সেটাকে যদি বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে কিন্তু বেশ হয় | সেদিন গঙ্গার ঘাটে বসে থাকার সময় ভাবনাটা মাথায় এসেছিল | খুব একটা সহজ কাজ যদিও না‚ তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? পিউ নিশ্চয় সাহায্য করবে |

    সন্ধ্যে হয়ে এসেছে | আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে পড়ে প্রথমা | কদিন ধরে বাড়িতে থেকে এই এক বদভ্যাস হয়েছে তার | দুপুরবেলা একটু গড়িয়ে নেওয়া | লাইটের সুইচগুলো জ্বালাতে হবে | পায়ে পায়ে এগোতে থাকে প্রথমা |

    হঠাৎ ল্যান্ডফোনটা তারস্বরে যেন চিৎকার করে ওঠে | বুকের ভিতরটা যেন কি এক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে | মন বলে খারাপ কিছু সংবাদ আছে |

    (ক্রমশ)
  • jol_dip | 233.29.204.178 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০১648376
  • (২৩)

    অবসর

    **********
    দুটো ট্যাকা দাও না | খিদে পেয়েচে খাবো | পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে প্রথমা একটা বাচ্চা ছেলে | নোংরা আর কালিঝুলি মাখা | মুখখানা মন্দ না | শুধু চোখদুটো কেমন ঘোলা ঘোলা | এই রকম কত ছোট বাচ্চাই কতবার পয়সা চেয়েছে | প্রথমা পয়সা দেয়নি হাতে | খেতে চাইলে খাবার কিনে দিয়েছে | একবার এক অন্ধ মানুষকে পয়সা দিয়ে ঠকেছিল | বাসে পয়সা চাইছিল | বাস থেকে নেমে চোখটা খুলে পয়সা গুনতে গুনতে গটগট করে হেঁটে চলে গেল | দুটো নিখুঁত চোখ | তারপর থেকে কাউকে আর পয়সা দেয় না | খাবার কিনে দেয় |

    কি খাবি বল কিনে দিচ্ছি | বলে প্রথমা | খিদের জ্বালা যে বড় জ্বালা |

    দুটো টাকা দাও না | আমি নিজে কিনে খাবো | ছেলেটা বলে | বেশ টকটক করে কথা বলে তো |

    দিও না মাসিমা | টাকা নিয়ে খাবে না | নেশা করবে | বলে পিউ |

    আজ পরমাকে ছুটি দেবে নার্সিংহোম থেকে | সেদিন সন্ধ্যেবেলা পরমার কাজের মেয়েটি ফোন করেছিল বলে এ যাত্রা বেঁচে গেল সে | একটা অ্যাটাক হয়ে গেল | খবরটা পাওয়ার পর খুব আফশোষ হয়েছিল প্রথমার | কেন যে কদিন খবর নিল না? হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছিল | মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছিল | ধাতস্থ হয়েই ফোন করেছিল পিউকে‚ পত্রাকে | খুব করেছে ওরা সবাই মিলে |

    কি বলিস এইটুকু বাচ্চা নেশা করবে? দুটাকায় কি নেশা করা যায় পিউ? একটু অবাক হয়েই প্রশ্নগুলো করে প্রথমা |

    হাসে পিউ | মাসিমা তোমার মত অনেকেই দয়া করে দুটাকা- একটাকা দেবে | সেগুলো একত্র করলে নেশার বস্তু আয়ত্ত করাটা কি খুব কঠিন ? আর তুমি জানো না মাসিমা এইটুকু বাচ্চারাও কতরকমের নেশা করে | এদের কেউ কেউ পাতাখোর‚ কেউ আবার ডেনড্রাইটের নেশা করে | এসব নিয়ে বলতে গেলে দিন কাবার হয়ে যাবে | পরে কোন একদিন না হয় বলব | এখন চলো তুমি |

    বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না | ছেলেটাকে ডেকে বলে‚ আমার সাথে যাবি? আমি তোকে খেতে দেব‚ স্কুলে পড়াবো‚ জামা-কাপড় দেব | ছেলেটা মুখ ভেঙ্গিয়ে চলে যায় | খারাপ লাগে প্রথমার |

    আজ পরমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে প্রথমা | কয়েকটা দিন একটু ধরকাটে রাখা উচিত | একা একটা বাড়িতে থাকাটা ঠিক না | পত্রা একটু অসন্তুষ্ট হয়েছে | একে তার নিজের শরীর খারাপ যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে‚ তার ওপর পরমা এসে থাকলে যে ঝক্কি বাড়বে বারবার করে পত্রা তাকে বলেছে | প্রথমা বলেছে কয়েকটা দিনের ব্যাপার তো সব সামলে নিতে পারবে | রাগ হয়েছে পত্রার | আজ তাই আর আসেনি পরমাকে নিতে | কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যেগুলো সোজাসুজি হৃদয়ঘটিত‚ ব্যাখ্যা করে বোঝানো সম্ভব না | সে চেষ্টাও করেনি প্রথমা | পত্রা এখনও বড্ড ছেলেমানুষ |

    চল মাসিমা আমরা এগিয়ে যাই | ছোটমাসিমাকে ওরা গেটে পৌঁছে দেবে | পান্থশালার একটা অ্যাম্বুল্যান্স নার্সিংহোমের গেটে দাঁড়ানো | সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দান করেছে সেবাযানটি | তবে পিউ বলে ঐ দানটি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে | লাইনে অনেকেই ছিল | এইসব জটিল তত্ত্ব ঠিক বোঝে না প্রথমা |

    পরমা তাদের আগেই এসে পৌঁছে গেছে গেটে | যত্ন করে তুলে দেয় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নার্সিংহোমের কর্মীরা | কদিনেই বড্ড রোগা হয়ে গেছে | কিন্তু বেশ ঝরঝরে লাগছে | পিউ সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছে | পরমা আর প্রথমা পিছনের সিটে | অ্যাম্বুল্যান্স চলতে শুরু করে | পরমা মাথাটা প্রথমার কাঁধে রাখে | চোখে জল এসে যায় প্রথমার | মনে পড়ে অনেকগুলো দিন ঠিক এইভাবে পরমা‚ প্রথমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ত |

    কাঁধটা ভিজে ভিজে লাগে | পরমার বন্ধ চোখের থেকে গড়িয়ে পরা নোনতা জলে ভিজে যাচ্ছে প্রথমার কাঁধ | বয়ে যেতে বাঁধা দেয় না প্রথমা | চুপচাপ রাস্তাটা পেরিয়ে যেতে থাকে ওঁরা |

    বাড়ির কাছে এসে থামে সেবাযান | পত্রা‚ ভুষণ সবাই বারন্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য | মেয়েটা এসেছে তাহলে | বুদ্ধি করে ভুষণকেও এনেছে | দোতলায় পরমাকে তুলতে ওর হেল্প লাগবে | একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বুকে ঠেলে উঠে আসে | মাঝে মাঝে মেয়েটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না আজকাল |

    ভুষণ যত্ন করে পরমাকে নামায় সেবাযানটি থেকে | তারপর তাকে নিয়ে ভিতরে যায় | পিউ আসে না‚ বিকালে আসব বলে চলে যায় | প্রথমা ওপরে গিয়ে সোজা বাথরুমে গিয়ে ঢোকে | বেরোবার আগেই বাথরুমে ধোয়া পোষাক রেখে গেছিল | ধোয়া শাড়ি পড়ে ডাইনিং-এ এসে দেখে পরমার পোশাক বদলানো | চেয়ারে বসে আছে | সামনে এক কাপ চা | আর এক কাপ চা চাপা দিয়ে রাখা | প্রথমা চায়ের কাপটা তুলে নেয় |

    আজ আর রাঁধতে হবে না | আমি খাবার তৈরী করেই এনেছি | আর বিকালে তবাসুমকে পাঠিয়ে দেব | ও তোমার এখানে কদিন থাকবে | হাতে হাতে কাজ করে দেবে | তোমার সুবিধাই হবে | আমি এখন আসছি | কাঠ কাঠ কথাগুলো বলে ভুষণকে ডাক দিয়ে বেড়িয়ে যায় পত্রা | ভুষণ হাসে | প্রথমাও হাসে | মেয়েটা সত্যি পাগলী |

    তোমার জামাই বেশ ভালো হয়েছে দিদি | পরমা বলে |

    হাসে প্রথমা | মেয়েটাও তো ভালো পরমা | একটু অভিমানী‚ অবুঝ | বাকি সব ভালো | ওমন একটা মেয়ে লাখে হয় | নিজের মেয়ে বলে বলছি না সত্যি ও ভালো | জান ওর শ্বশুর-শ্বাশুড়ী তো ওকে বেটি বলেই ডাকে |

    হাসে পরমা | তারপর বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম দিদি |

    হু | তোমার শরীর খারাপ কি আগে থাকতে বোঝোনি?

    না দিদি বুঝিনি | বুঝলে কবেই তো ডাক্তার দেখিয়ে নিতাম |

    ছাড়ো | ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করে নেবে চলো | বলে প্রথমা |

    চেয়ার ছেড়ে ওঠে পরমা | তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না | আমি একাই চলে যাব | বলে পরমা ঘরের দিকে এগিয়ে চলে |

    কাজ কিছু নেই তেমন | বসে থাকে চেয়ারে | সকালের দেখা সেই ছেলেটা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করে | এদের যদি একটা ভালো পরিবেশ দেওয়া যায় তাহলেও কি ওরা এমন নেশাগ্রস্থ থাকবে? মানুষের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পরিবেশ একটি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা নেয় | এদের জন্য কিছু করতে পারা যায় কি? পিউ এর সাথে আলোচনা করে দেখতে হবে |

    (ক্রমশ)
  • jol_dip | 233.29.204.178 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:২৯648377
  • (২৪)

    অবসর

    *******

    দেওয়ালের গায়ে পড়া বিকেলের মরা রোদে একটা ঝিমুনি ভাব | ভরা ভাদ্রমাসের চিটচিটে গরম যেন বিরক্তিকর | পাখার হাওয়াতে ঘাম শুকায় না | অলস বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুরন্ত পাখার ব্লেডের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রথমা | যথেষ্ট জোরে ঘুরছে‚ তবু হাওয়া যেন গায়ে লাগছে না | চোখে ঘুম আসছে না‚ অথচ বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না | ছাদেতে মেলা কাপড়-চোপড় শুকোতে পড়েছে | তুলতে হবে সেগুলো | ঝেড়ে উঠে পড়তে চায় প্রথমা |

    আজকাল আর অত চট করে উঠে পড়তে পারে না | বিছানায় শুয়ে উঠতে একটু সময় লাগে | হাঁটুর ব্যথাটা যদিও কম এখন তবু একটু বেশি ওঠানামা বা হাঁটাচলা হলে ব্যথাটা বাড়ে | শুধু হাঁটু না শরীরটাও মাঝে সাঝেই ঠিক যায় না | বয়সের ভার বলে একটা কথা আছে | আজকাল মনে হয় শরীর একটা উন্নত ধরণের যন্ত্রাংশের জটিল সংমিশণ | প্রাণ নামক পদর্থটা আছে বলেই বুঝি এই যন্ত্রাংশ জড় নয় | অদ্ভুত সব চিন্তা-ভাবনা | কেউ শুনলে হাসবে | তাই এসব কথা সে কারও সাথে আলোচনা করে না | সবকিছু সবাইকে বলার নয়‚ কিছু কিছু একান্তই নিজের |

    ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই দেখা হয়ে যায় পরমার সাথে | হাতে জামাকাপড় নিয়ে নামছে |

    আমি তো যাচ্ছিলাম | কাপড়গুলো হাত থেকে নিতে নিতে বলে প্রথমা |

    দেখলাম তোমার চোখ বন্ধ | ভাবলাম তুমি ঘুমোচ্ছ | তাই ভাবলাম আমি নিয়ে আসি | তোমার শরীর তো তেমন ভালো না‚ তার ওপর অমি এসে জুটেছি | তোমার কাজ একটু কমাতে পারলে আমার ভালো লাগে দিদি | এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে পরমা | উত্তরে কিছু বলে না প্রথমা | শাড়িগুলো পাট করতে থাকে দুই বোনে |

    বেশ দিন কেটে যাচ্ছে দুজনের | পরমা এখন অনেক সুস্থ | শরীর আর মন দুটো-ই সুস্থ | কিছুটা নিশ্চিন্তও লাগে আজকাল পরমাকে | হাতে হাতে কাজ করতে এগিয়ে আসে | প্রথমা করতে দেয় না | তবাসুম রোজ আসে | থাকে না | মাজা-ঘষা-কাচা-ধোয়া-মোছামুছি করে দিয়ে যায় | শুধু তো রান্না করা | ওটা তার একান্ত প্রিয় কাজ | ওটি সে কারও হাতে ছাড়তে পারবে না | দুটো মানুষের কত আর রান্না | বাকি সময়টা গল্প করে‚ টিভি দেখে কাটে | পত্রা আসে রোজ সন্ধ্যেবেলা | পিকুন আসে মাঝে সাঝে | পত্রা দিব্যি মিলেমিশে গেছে পরমার সাথে | সুপর্ণ আজও ফোন করলে বা স্কাইপেতে কখনও জানতে চায় না পরমার কথা | এখানে পরমার থাকা নিয়েও তার কোন আপত্তি জানায় না | পরমা যেন একটা বিস্মৃত চ্যাপ্টার | সেই সময়গুলোতে একটা খারাপলাগা প্রথমাকে ছুঁয়ে গেলেও ছেলেকে কিছুমাত্র জানতে দেয় না | পরমাও সযত্নে এড়িয়ে যায় সুপর্ণর কথা | কোথাও একটা অদৃশ্য দাগ মনের গভীরে আছে‚ থাকে | মিলিয়ে যায় না | মাঝে মাঝে অতর্কিতে হানা দেয় স্মৃতির গহন গভীর তল থেকে | তখন যেন আজকের সব হিসেব-নিকেশ জোলো মনে হয় |

    পরমাকে একা রেখে পান্থশালা যাওয়া হয়ে ওঠে না | এখন রীতিমত অনিয়মিত হয়ে পড়েছে প্রথমা পান্থশালাতে | অবশ্য ফোনে খোঁজ-খবর নেয় | আবার কখনও কখনও পান্থশালার কোন কোন আবাসিক তার সাথে ফোনে কথা বলে | তার অনুপস্থিতির জন্য তারা অভিযোগ জানায় | যেতে পারে না‚ সময় দিতে পারে না বলে একটা খারাপ লাগা যেমন থাকে‚ একটা ভালো লাগা সেইসবদিনে ছুঁয়ে থাকে প্রথমাকে |

    পিউ মাঝে একদিন এসেছিল | দেখে গেছে পরমাকে | পান্থশালা ফেলে ওর পক্ষে প্রায় আসা তো সম্ভব না | দেখে চলে যেতে দেয়নি সে পিউকে | খাইয়ে ছেড়েছে | সাথে আবাসিকদের জন্য চটজলদি কিছু ডিস বানিয়েও দিয়েছে | ওরা ভালোবাসে প্রথমার হাতের রান্না খেতে |

    নার্সিংহোম থেকে ফেরার পর থেকে ভেবেই চলেছে একটা অন্যরকম কিছু করা যায় কিনা ঐসব বচ্চাদের জন্য | পিউকে বলতে সে বলছিল‚ এত সহজ নয় | উদ্দেশ্য মহান তোমার তাই নিয়ে কোন কথা বলব না | তবে কি জান‚ ওদের কাউন্সিলিং করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেবার জন্য অনেক সংস্থাই কাজ করছে | তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে‚ ধৈর্য্য ধরে তারা এগুলি করে | তুমি না হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা না ঘামালে | তোমাকে নিবৃত্ত করছি এমনটা ভেবো না | তারপর হেসে বলেছিল‚ মাসিমা সমাজ সেবাটা করাও একটা নেশার মত | মাথায় চাপলে রক্ষে নেই | তোমার দেখছি এখন সেই অবস্থা |

    প্রথমা এতটাই আবেগগ্রস্থ ছিল যে বলেছিল তাহলে ছোট বাচ্চাদের‚ যাদের দেখার কেউ নেই‚ তাদের জন্য একটা আশ্রম খুললে কেমন হয়? পরমার বাড়িটাতো আছে |

    পিউ বুঝিয়েছিল এত সহজ নয়‚ যদিও দৃহবদ্ধ থাকলে কোনকিছুই কঠিন নয়‚ কিন্তু একটা আশ্রম আবেগ দিয়ে চলে না | তার জন্য প্ল্যান-প্রোগ্রামিং লাগে | শুধু বাড়ি থাকলে হয় না‚ অর্থের প্রাথমিক সংস্থানটাও জরুরী | সেটা কিন্তু আমি যতদূর জানি তোমাদের পক্ষে সম্ভব না | এছড়াও আরও অনেক কিছু আছে মাসিমা |

    পিছিয়ে এসেছিল প্রথমা | সত্যি কথাই বলেছে পিউ | অর্থের সংস্থান বলতে তাদের জমানো কিছু টাকা‚ সেগুলি ব্যতীত প্রাথমিক সংগ্রহ তো কিছু নেই | এতকিছু ভাবা উচিত ছিল তার | এতদিন সে পান্থশালার কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে আছে | অফিসিয়াল কিছু কিছু জিনিস তো সে নিজেই দেখেছে পিউ যখন অনুপস্থিত ছিল | তবু কিছু করার একট ইচ্ছে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে | সুপর্ণের সাথে একটা কথা বলে দেখবে নাকি? জানে ও না করবে না | আজই কথা বলবে সুপর্ণর সাথে | কিছু একটা সমাধান তো বেরোবেই |

    (ক্রমশ)
  • jol_dip | 213.147.90.87 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৫০648378
  • (২৫)

    অবসর

    *******

    নীচের ঘরটাতে নানান বয়সী খুদেগুলোর কিচিরমিচিরে কান পাতা দায় | শান্ত করে বসানোটাই মুশকিল | অভিযোগের অন্ত নেই | হিমশিম খায় প্রথমা ও পরমা | তবু ঐ কচিগুলোর অফুরন্ত জীবনীশক্তি নিজেদের মধ্যে ভরে নিতে নিতে পিছনের ব্ল্যাকবোর্ডে চকের আকড়ে ফুটিয়ে তোলে অ‚ আ‚ ই | সমস্বরে পড়তে থাকে খুদেগুলো | বেশ কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় ওদের একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছে পিউ‚ ভুষণ‚ পত্রা |

    অনেক অনেক বছর পর এই বাড়িটাতে পা রেখেছে প্রথমা | একটা বাধো বাধো বোধ ছিল না প্রথমটায় তা নয় | তবে বিগতকালের সম্পর্ক আজ মলিন | এ বাড়ি আজ ও আগামীকাল গড়ে তুলবে এক নতুন সম্পর্কের বুনিয়াদ | তাই বুঝি বাধো বাধো বোধটা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে নি | বাড়িটাতে অনেকদিন পর চুনকাম করা হয়েছে | দিনের আলোতে চুনকাম করা ঘরগুলো যেন চকচক করছে | বিগত স্মৃতি পিছনে ফেলে এ বাড়িতেই শুরু হয়েছে নতুন জীবনের নতুন পথ চলা | পান্থশালার নতুন শাখা নতুন জীবন |

    সেদিন রাতে সুপর্ণর সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছিল নিজের মনের ইচ্ছে‚ পিউ যা বলেছে সবকিছু | শুনে সুপর্ণ বলেছিল পিউ খুব ভুল কিছু বলে নি | তার চেয়ে তুমি পান্থশালা নিয়েই থকো না | বেশ তো আছ |

    কিন্তু রাজি হয়নি প্রথমা | পান্থশালা তার অতি পছন্দের একটি জায়গা | সেটা সে কেউ না বললেও যাবে | তার যা দায়িত্ব সে ঠিক পালন করবে | কিন্তু তার সাথে এইসব বাচ্চাদের জন্য কিছু করার একটা আন্তরিক ইচ্ছা তার | একটা ছেলেমানুষী যেন পেয়ে বসেছিল প্রথমাকে | কিম্বা পিউ-এর কথামত সমাজসেবার নেশা |

    সুপর্ণ তার মাকে বেশ চেনে | তাই খানিকটা নিরস্ত করার জন্যই বুঝি একটা সমাধান দিয়েছিল | আবাসিক আশ্রম গড়ে তোলাটা এই মুহুর্তে সম্ভব নয় মা | কিন্তু ধর এদের মনের অন্ধকার দুর করে যদি আলোতে আনা যায়‚ যদি বোঝানো যায় ঐসব নেশার কুফল একদম ছোটবয়স থেকে তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে এদের অনেককেই তাদের পারিবারিক নেশার কবল থেকে মুক্ত করা যেতে পারে | আর তার জন্য দরকার শিক্ষা | তাহলে মোদ্দা কথাটা হল এদের তোমরা পড়াতে পার | তার জন্য নতুন কোন সংস্থা গড়ার দরকার নেই | আর যদি তেমন কোন সংস্থা গড়ে তুলতেই চাও তবে পান্থশালার অধীনে গড়ে তোলো | আইনী জটিলতা অনেক কম হবে |

    কথাটা বেশ মনঃপুত হয়েছিল প্রথমার | পার্বতীর কথা খুব মনে পড়ছিল | পার্বতীও তো চেয়েছিল তার ছেলেটা মানুষ হোক | কিন্তু শুধু পড়ালেই তো হবে না‚ ওদের পরিবেশটাও তো উন্নত করতে হবে |

    সুপর্ণ বলেছিল একটু একটু করে যত ওরা শিখবে‚ বুঝবে তত দেখবে নিজেরাই নিজেদের পরিবেশ উন্নত করতে উদ্যোগী হবে | শুধু ওদের মধ্যে জ্বালিয়ে দিতে হবে একটা জ্ঞানের আলো | তুমি শুধু পথটা দেখিয়ে দাও | হেঁটে যাবে ওরা নিজেরাই |

    শুরু করব বললেই তো হয় না | তারপর শুরু করতে গিয়ে বুঝেছিল ডাকলেই ওরা আসে না | বাড়ির একটু দুরেই একটা বস্তি | কয়েকদিন ধরে ওখানে অন্তত দশটা ঘর ঘুরেও একটা বাচ্চা যোগাড় করতে পারে নি | খুব মুষড়ে পড়েছিল | আর ঠিক তখনই দেবদূতের মত এসেছিল ময়ূর | জানত না প্রথমা যে ময়ূরের মা গত হয়েছেন | মায়ের শেষকৃত্য করতেই দেশে এসেছে সে | আসলে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল এই ব্যাপারটা নিয়ে যে কোনকিছু খোঁজখবর রাখাই হয়নি | আর তাছাড়া মনে মনে পিউ-এর ওপর একটু রাগও হয়েছিল | পিউ‚ ময়ূরকে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে‚ সেদিন প্রথমা বেড়িয়েছিল কাছের বস্তিটায় | পরমা ছিল বাড়িতে | পরমার মুখে শুনেছিল ময়ূর | তারপর বসে অপেক্ষা করেছিল তার ফেরার জন্য |

    ফেরার পর সব শুনে বলেছিল ভালো প্রস্তাব মাসিমা | আমি যতটা পারি আপনাকে সাহায্য করব | কিন্তু আপনি পারবেন তো? বয়সও বেড়েছে | এই বয়সে কি ঐ পরিশ্রম সইবে? বাচ্চা জোগাড় করাটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন | মনে রাখবেন ওদের সামলানো কিন্তু কম ঝক্কির কাজ না | ভেবে দেখুন কয়েকটা দিন‚ আমি আছি এখানে বেশ কিছুদিন | আমি এদিকে দেখি কি করতে পারি |

    ময়ূর চলে যাবার পর প্রথমা নিজের সাথে কথা বলেছিল | মন বলেছিল পারবে সে | অন্যান্যবার পত্রা সবেতে বাধ সাধে‚ এবার পত্রাও সাথে থাকবে বলেছিল | পরমাও খুব আগ্রহ দেখিয়েছিল

    পত্রাই জোগাড় করে এনেছিল দুটো বাচ্চা লজেন্স আরও কিছুর লোভ দেখিয়ে | শুরু করেছিল পরমা তাদের একটু একটু করে অক্ষরজ্ঞানের সাথে পরিচয় করাতে নিজের বাড়িতে | পড়তে চাইতো না‚ পালিয়ে যেতে চাইত | পত্রা ওদের বসিয়ে রাখত | বাড়ি ফেরার সময় কোনদিন বিস্কুট‚ কোনদিন লজেন্স‚ কোনদিন কেক দিয়ে বশ করে ফেলল একরকম | সেই শুরু করে আজ পরমার নতুন জীবনে দশটি বাচ্চা পড়ে | নিজের বাড়ি থেকে বাচ্চাদের নিয়ে উঠে এসেছে তারা পরমার বাড়িতে |

    ময়ূর প্রাথমিকভাবে পান্থশালার বরাদ্দ অর্থের একটা অংশ দিয়ে এদের পড়ানোর একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে | শুধু পড়শুনা নয়‚ যারা পড়তে আসবে তাদের জন্য যাতে দিনে একবার সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায় সেটারও ব্যবস্থা করেছে ময়ূর | যদি কেউ পড়াশুনাতে ভালো হয় তার জন্য স্কুলের ব্যবস্থাও করবে পান্থশালা |নতুন জীবনের যাবতীয় খরচ-খরচা যোগাবে পান্থশালা ততদিন‚ যতদিন না নতুন জীবন অর্থনৈতিকভাব স্বাধীন হচ্ছে |

    উৎসাহে ফুটছে প্রথমা | পাশে পেয়েছে সে ব্রীজমোহনজীকে | তিনি আশ্বাস দিয়েছেন নতুন জীবনের কাজ সন্তোষজনক হলে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন | পরমার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন প্রথমার চোখে | জানে এগিয়ে যাবার পথে কেউ না কেউ আসবেই পায়ে পা মিলিয়ে চলার টানে | অবসর নেবার সময় নেই | যতক্ষণ শরীরে শক্তি আছে আর মনে বল ততদিন অবসর নেবার কথা মনেও আনবে না সে | এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়া দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে যে একদিন এই দশজনের জায়গায় একশজন পড়ুয়ার কলকাকলিতে মুখরিত হবে নতুন জীবন | একদিন নতুন জীবন আক্ষরিক অর্থেই তাদের নতুন জীবনের সন্ধান দেবে |

    (শেষ)
  • de | 24.139.119.172 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৫৯648379
  • ভালো হচ্ছে -
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন