এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অন্ধ তত্ত্ব প্রতিবিপ্লবের হাত শক্তিশালী করে / ফরহাদ মজহার প্রসঙ্গে

    শুদ্ধ
    অন্যান্য | ০৫ মার্চ ২০১৩ | ৩৩৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • চান্দু মিঁঞা | 127.193.47.8 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ১৮:৩১587259
  • কাঁচা বাংলায় বললে শাহবাগ হচ্ছে রোগের লক্ষণের চিকিৎসা। এ শুধুই শুরু মাত্র এর পরেই যদি মূল রোগের চিকিৎসা না হয় তাহলে এ চিকিৎসাও ফলপ্রসু হবে কিনা প্রশ্ন থাকছে। শুধুমাত্র সময়ই এর উত্তর দেবে।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ১৮:৫১587260
  • পুনশ্চ:

    ["আমি বলছি শুধু যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি দিয়ে বিশেষ কিছু অর্জন করা যাবে না। "]

    # কল্লোল,

    প্র চ ণ্ড দ্বি ম ত।।

    বাংলাদেশকে অতি অবশ্যই ইতিহাসের দায়মুক্তি পেতে হবে। একারণেই আগে বলেছি, এটি হচ্ছে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ, যে যুদ্ধটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চালাতে হয়।

    ....বিনীত আবেদন জানাই, অনুগ্রহ করে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানোর বিচারটুকু এতো শস্তা করে দেখবেন না, শাহবাগকে তো নয়ই। ...

    এর অন্যথায় যুদ্ধাপরাধ, জামাত-শিবিরকে বৈধতা দিতে হবে আগের মতোই। সেক্ষেত্রে আলোচনার খুব বেশী অবকাশ থাকে না। এতো দীর্ঘ আলাপচারিতাই অসার হয়ে পড়ে।

    ["এই যে ধর্মান্ধতা এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চাই। সেটা নাস্তিকতা দিয়ে হবে না। বরং এই স্লোগানটাকে নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আর লড়াই চাই - ধর্ম যার যার / দেশ সবার।"]

    এ বিষয়ে ওপরে আলাপ করা হয়েছে। আপনার আগ্রহটিকে স্বাগত।

    ["ফাঁসী চাই এর চেয়ে এই স্লোগানটি মুখ্য জায়গায় আসুক। এর সাথে (জানি না কিভাবে হবে) নিম্নবর্গের মানুষের দাবীকে যুক্ত করতে হবে। ধরা যাক, গারমেন্ট মজুরদের নিরাপত্তা। এই রকম।"]

    উপরিক্ত আলোচনাতেই ব্যাখ্যা করা আছে, শাহবাগের ছয় দফার ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনটি সে অর্থে নিম্নবর্গের মানুষ, শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলন নয়। আবার দেশপ্রেমের বিচারে এই ছয় দফা [প্রধান দফাই দুটি--"যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও যুদ্ধাপরাধী দল জামাত-শিবির নিষিদ্ধ"] স্বাধীন বাংলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব মানুষের প্রাণের দাবি।

    আবারো আপনাকে ধন্যবাদ।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ১৯:০৫587261
  • #চান্দু মিঁঞা

    না তো! কাঁচা বাংলায় -- এটি হচ্ছে অপারেশন। অ্যাম্পুট। :)

    শাহবাগের সফলতার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়মুক্তি ঘটবে, ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধাদের অসমাপ্ত কাজটির সমাপ্তি ঘটবে।
    এটি হচ্ছে একধাপ অর্জন।

    ইতিহাসের এই অনিবার্য মিমাংসা ছাড়া দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া এককথায় : অ স ম্ভ ব ।

    নিল আমর্স স্ট্রং চাঁদে প্রথম পা রাখার পর বিশ্ববাসীকে যেমন বলেছিলেন, এটিকে ছোট্ট একটি পদচিহ্ন হিসেবে দেখা যায়। আবার একই সঙ্গে এটি ইতিহাসও!

    চলুক।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ১৯:০৭587262
  • * টাইপো:

    নিল আমর্স স্ট্রং = নিল আর্মস্ট্রং ।
  • চান্দু মিঁঞা | 127.208.210.62 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ১৯:৫২587263
  • ঠিক ঠিক, এ সাধারণ চিকিৎসা নয় একেবারে অ্যাম্পুটেশন, তবে কি এপার বাংলায় আমরা বেশ বড় স্কেলে ঐ ধরণের প্রকল্প দেখেছি আর তার কার্যকর হয়েছিল কিনা আপনি ভালই জানেন।
  • pi | 78.48.231.217 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ২০:০৯587264
  • "আমি বলছি শুধু যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি দিয়ে বিশেষ কিছু অর্জন করা যাবে না। "

    কিন্তু কল্লোলদা, যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি (ফাঁসি কি ফাঁসি নয়, সে তর্কে যাচ্ছি না) কি একটা বড় অর্জন নয় ?
    আর এতবড় অপরাধের এতদিন বাদেও শাস্তি নাহলে তো কিছুই কিছু অর্জন করা যাবেনা। এটা কি প্রথম ধাপ নয় ?

    "এই যে ধর্মান্ধতা এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চাই। সেটা নাস্তিকতা দিয়ে হবে না। বরং এই স্লোগানটাকে নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আর লড়াই চাই - ধর্ম যার যার / দেশ সবার।"

    এই সর্বাত্মক লড়াইয়ের চেষ্টাটাও কিন্তু হচ্ছে বলেই মনে হয়। ফেবু ও ব্লগগুলোর দৌলতে অনেকের লেখা পড়ছি, তা থেকে এটাই মনে হয়েছে। বরং জামাত শিবিরই ব্যাপারটাকে নাস্তিকতার আন্দোলন বলে প্রোজেক্ট করার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ( এবং ফরহাদ মজহর এণ্ড গ্যাং ও সেই ঘেঁটে দেবার চেষ্টায় প্রচুর সাহায্য করে যাচ্ছে ) কারণটা সহজেই অনুমেয়। দেশের বেশিরভাগ লোকজনকে এর থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা। বেছে বেছে নাস্তিক ব্লগারদের উপর আক্রমণেও ( কালকে আবার হয়েছে) সেই অভিসন্ধি পরিষ্কার।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ২০:৩৪587265
  • # পাই, একদম মোদ্দা কথা বলেছেন। শাবাশ! ...এটিই আমার মত।

    চলুক।
  • pi | 78.48.231.217 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ২০:৩৪587266
  • এই স্লোগানগুলো নিয়ে এই টইতেই কিছু কথা হয়েছিল। আজ লাকি আক্তারের সাক্ষাতকারে এটা পড়ে ভাল লাগল। স্পষ্ট লিখেছেন, 'এ স্লোগান আমাদের সাথে যায় না।'

    "....‘জবাই কর’ স্লোগান শিশুদের জন্য ক্ষতিকরঃ
    শাহবাগ আন্দোলনে ‘শিবির ধর’ ‘জবাই কর’ ‘নাস্তা কর’ এই শ্লোগানগুলো কোমলমতি শিশুরাও দিচ্ছে। এ ধরনের স্লোগানে শিশুর মানসিক বিকাশ কি কোন প্রভাব ফেলতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে লাকি আক্তার বলেন, “আমরা কিন্তু অনেকদিন আগেই এই শ্লোগান বাদ দিয়েছি। কারণ এ স্লোগান আমাদের সাথে যায় না। কেন না এ স্লোগান শিশুদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ করে ফেলবে। এ কারণে আমরা স্পষ্টভাবে এটা না করেছি।”...>"

    <http://www.poriborton.com/article_details.php?article_id=13936
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ২০:৫৬587156
  • "Name: কুলদা রায়

    IP Address : 34.90.91.2 (*) Date:10 Feb 2013 -- 09:42 AM

    শাহবাগে লক্ষ লক্ষ মানুষের এই দিনরাত্রির সমাবেশে নেই--
    পাকিস্তানী পন্থী--
    বিএনপি
    জাতীয় পার্টি
    মৌলবাদী দলগুলো
    এবং চিনাপন্থী বামেরা।
    বদরুদ্দিন উমর, পিয়াস করিম, ফরহাদ মজহার প্রমুখ চিনাপন্থীরা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কলম ধরেছেন। জামায়াতের পত্রিকায় এই সমাবেশকে ফ্যাসিবাদের সমাবেশ হিসেবে অভিহিত করছেন।
    এই সমাবেশের কোথাও নেই গ্রামীণ ব্যাংকের ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস।
    সবাই নেমেছেন একাত্তরের জয় বাংলা শ্লোগান নিয়ে। গাইছেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' জাতীয় সঙ্গীতটি।"

    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1360447774165&contentPageNum=1#.UTn_-9bcoSs

    ___________________________

    পুরনো টই ঘেঁটে দেখলাম, #কুলদা রায় চীনাপন্থী বিচারে অন্যদের সঙ্গে ফরদাদ মজহার ও বদরুদ্দীন উমরকে শাহবাগের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছেন। নিছকই রায় বাবুর বিভ্রান্তি, নয়তো পাঠের ঘাটতি।

    ০১. ফ. ম. কোনো কালেই চীনাপন্থী ছিলেন না, বাম তাত্ত্বিক তো ননই। বরং তিনি বরাবরই মৌলবাদী দর্শনটিকে প্রগতির ছদ্মবেশ দিতে যত্রতত্র মার্কস ধার করেন মাত্র। স্যুগার কোটেট কুইনাইন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুইনাইন-ই, স্যুগার নয়। ফ.ম.র অবস্থান স্পষ্টতই তালেবানপন্থায় শাহবাগের বিপরীতে -- এটিও আগে আমরা আলোচনা করেছি।

    ০২. যারাই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট রাজনীতির খবর রাখেন, তারাই জানেন, বাম তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর ১৯৭১ এর চীনপন্থা অবলম্বন করলেও মুক্তিযুদ্ধ ও "খতমের রাজনীতির" প্রশ্নে তিনি হক-তোয়াহা'র রাজনীতি থেকে সরে আসেন। উমর মনে করেন, বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর প্রধান দল দুটি হলো আওয়ামী লীগ আর জামায়াতে ইসলাম, তারা উভয়েই সংকটে পড়ে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে।

    উমরের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও চিন্তা বিএনপি-জামাতের প্রতি সর্বদা বৈরি ছিল। গণআদালত গঠনে তিনি ছিলেন জাহানারা ইমামের সঙ্গের অন্যতম উদ্যোক্তা। তার ১৯৬৮-৬৯ সালের ‌'সাম্প্রদায়িকতা', 'সংস্কৃতির সংকট' ও 'সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা' নামের তিন খণ্ডের থিসিস অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় বিরাট অবদান রেখেছিল।

    তিনিই প্রথম বিশালমাপে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মুক্তিযাত্রার অনিবার্যতা দেখিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের ভূমিকা নিয়ে মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। আটের দশকের মাঝামাঝি "বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক" ব্যবহার নামক তার বইটি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মোকাবেলার ইশতেহার হয়ে উঠে।

    তার সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু তিনি আপসকামী নন। শাহবাগের বিপরীতে তার অবস্থান থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

    অর্থাৎ কুলদা রায়ের "চীনপন্থী" মারাত্নক ফোবিয়ার শিকার ফ. ম. এবং উমর দুজনেই। :পি
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৮ মার্চ ২০১৩ ২১:০৩587157
  • পুনশ্চ:

    বদরুদ্দীন উমরের অবস্থান স্পষ্টই শাহবাগের পক্ষে, খুব জোড়ালো ভাবেই। এটিই হতে হবে, সব ধরণের তকমা ও ফোবিয়া সত্বেও। উমর প্রসঙ্গে বিপ্লব রহমানের মুগ্ধতা নেই, একথা বলে নেওয়া ভাল, তবে অশ্রদ্ধাও নেই।

    পড়ুন:
    _______________________________________________

    দেশজুড়ে ফ্যাসিস্ট জামায়াতের সহিংসতা/ সমকালীন প্রসঙ্গ
    বদরুদ্দীন উমর

    প্রতিক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এখন আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। এভাবে সক্রিয় হয়ে তারা যে শুধু দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়াকে বিষাক্ত করছে তাই নয়, দেশজুড়ে সহিংসতা ও নৃশংসতার ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছে। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে ধর্মবিযুক্ততার (ঝবপঁষধৎরংস) দাবিদার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বাকশাল ইত্যাদি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহিংসতা ও নৃশংসতার যথেষ্ট ব্যবহার করে এসেছে এবং এখনও করছে। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র অবস্থানে দাঁড়িয়ে বিএনপিও তাই করেছে। কিন্তু ধর্মের ধুয়া তুলে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে সহিংসতা ও নৃশংসতাকে তাদের কার্যপদ্ধতির অঙ্গীভূত করে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে এমন আর কারও মধ্যে দেখা যায় না। আজকের দুনিয়ায় বিভিন্ন ধর্মকে অবলম্বন করে যে ফ্যাসিবাদ দেখা যায় জামায়াতে ইসলামী সেই ফ্যাসিবাদেরই একটি ধরন। এদিক দিয়ে ভারতের ভয়ঙ্কর চরিত্র সম্পন্ন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), শিবসেনা, বজরং দল ইত্যাদির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী তুলনীয়। ধর্মের বিপজ্জনক ও ঘৃণ্য ব্যবহারকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে এরা সকলেই এক গোত্রভুক্ত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় এই দলটি পাকিস্তানের সঙ্গে ইসলামকে এক করে দেখিয়ে নিজেদের দেশের জনগণের ওপরই ধর্ম নির্বিশেষে যে নৃশংস নির্যাতন, যে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, অগি্নকাণ্ড, লুটতরাজ তারা করেছিল, তার ভিত্তি রচিত হয়েছিল তাদের বিস্তৃত ধর্মচিন্তা দ্বারা। ধর্মের এই ব্যবহার দ্বারা তারা ইসলামকে জাতীয় স্বাধীনতার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল। যারা ইসলাম ধর্মে বা কোনো ধর্মেই বিশ্বাসী নয়, তাদের কাছেও জামায়াতে ইসলামীর এই চরিত্র বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকেনি। আসলে জামায়াতে ইসলামী কোনো ইসলামী সংগঠন নয়। এটা হলো মুসলমানদের মধ্যে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের ঘৃণ্য ইহজাগতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে আগ্রহী এবং উন্মত্ত তাদেরই সংগঠন। এ কারণেই ইসলামের জিগির তুলে এরা ইসলামের নামে যে কোনো রকম অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না।

    বিগত কয়েকদিন থেকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দাবির বিরোধিতা করে ইসলামের জিগির তুলে যে সহিংসতার বিস্তার ঘটাচ্ছে এর মধ্যে তাদের চরিত্র জনগণের কাছে স্পষ্টভাবেই উন্মোচিত হচ্ছে। তারা শুধু ঢাকা শহরে নয়, দেশের সর্বত্র দিনের পর দিন হরতাল ঘোষণা করে হরতালের নামে চারদিকে বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যে রাজনৈতিক দলের ব্যাপক ভিত্তি জনগণের মধ্যে থাকে, হরতাল দিয়ে তা কার্যকর করার জন্য বল প্রয়োগ এবং ধ্বংসাত্মক কাজের প্রয়োজন হয় না। এটা প্রয়োজন হয় তাদেরই যারা হরতাল ডাকলেও তার সাফল্য বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত হয়, উপরন্তু সন্দিহান। এ কারণে নিজেদের ডাকা হরতাল 'সফল' করার জন্য তারা সহিংসভাবে জনগণের ওপর চড়াও হয়, চারদিকে এমন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে যাতে মানুষ স্বেচ্ছায় নয়, ভয়ভীতির কারণে ও বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাতেই দোকানপাট বন্ধ রাখে, রাস্তায় গাড়ি বের করে না এবং অনেক স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ না করে বিরত থাকে। এভাবে জামায়াতে ইসলামী তাদের হরতালকালীন সহিংসতা তাদের দলীয় কর্মীদের সংগঠিত করে চালিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে তাদের জনবিচ্ছিন্নতার অবস্থা বোঝার অসুবিধা হয় না। এদের অর্থের জোগান আছে নানা সূত্রে, এদের অস্ত্রের জোগানও আছে। কাজেই জনগণের সমর্থন নয়, অর্থ এবং অস্ত্রের জোরে এরা নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

    গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠনের সহিংসতা আগের যে কোনো মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে তাদের নাস্তিক, বিধর্মী, ইসলামবিরোধী ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে অপপ্রচার চালিয়ে তাদের একটা অংশকে তারা কিছুটা বিভ্রান্ত করছে। এই বিভ্রান্তি সৃষ্ট সমর্থনকে তারা নিজেদের সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে।

    জামায়াতে ইসলামী এখন উন্মত্ত হয়ে যে মাত্রায় সহিংসতা করছে, এটা তাদের নিজেদের আগের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই সন্ত্রাস করতে দাঁড়িয়ে তারা দেশের সাধারণ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করছে। জনগণের সম্পত্তি ব্যাপকভাবে ধ্বংস করছে। আদালত তাদের দলীয় নেতাদের কয়েকজনকে ১৯৭১ সালে তাদের নানা অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছেন এবং অন্যদের বিচার চলছে। তারা এর বিরুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু আন্দোলনের নামে তারা যেভাবে নির্বিচারে ঘরবাড়ি, গাড়ি, অফিসঘরে আগুন দিচ্ছে, ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ধ্বংস করছে এর যৌক্তিকতা কী? এসব কি জজ সাহেবদের অথবা আওয়ামী লীগের, এমনকি এই সরকারের সম্পত্তি? এসবই হলো জনগণের সম্পত্তি। রাজশাহীতে তারা আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটিতে অগি্নসংযোগ করে ধ্বংস করেছে। এতে কার ক্ষতি? তারা নবাবগঞ্জের কানসাটে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করেছে। এর ফলে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কয়েক হাজার জমির ফসল সেচের অভাবে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব কার ক্ষতি? বাস-ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা, গ্রামে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা, কৃষকরা কীভাবে তাদের ইসলাম-বিরোধিতা করছেন? নাস্তিক বা অন্য ধর্মাবলম্বী হলেই যে তাদের আক্রমণ করতে হবে এটা বর্বরতা ছাড়া আর কী? কিন্তু তবু বলা দরকার যে, বাস-ট্রেনযাত্রী, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী লোকজন ও কৃষকরা কি নাস্তিক? তারা তো অনেকেই নামাজ-রোজা পালনকারী মুসলমান। তাহলে কোন যুক্তিতে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গ সংগঠনভুক্ত লোক ও সমর্থকরা জনগণের ওপর এই আক্রমণ পরিচালনা করছে? জনগণের কাছে কি তাদের এর হিসাব দিতে হবে না? শুধু তাই নয়, যেসব প্রচারমাধ্যম ও রাজনৈতিক দল তাদের এই কাজ সমর্থন করছে, এই কাজে তাদের উৎসাহ দিচ্ছে, তাদের কী অবস্থা? তারা কোন ধরনের গণতান্ত্রিক ও সভ্য চিন্তা থেকে এ কাজ করছে?

    এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী অন্য যে ক্রিমিনাল কাজটি করছে তা হলো, সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ পরিচালনা। তাদের বাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, মন্দিরে আগুন লাগিয়ে বা অন্য উপায়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে আবার নতুন করে আমদানি করার এক উন্মাদকর্মে তারা এখন লিপ্ত হয়েছে। তারা মনে করছে, এভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুসলমানদের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা নস্যাৎ করে মুসলমানরা তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে অল্পদিনের মধ্যেই যে উঠে দাঁড়াবে এতে সন্দেহ নেই। এর জন্য পুলিশের দরকার হবে না। জনগণই তাদের শায়েস্তা করবে। জনগণের মধ্যে তাদের যে বিশেষ প্রভাব নেই এটা তাদের ভোটপ্রাপ্তির অবস্থা থেকেই বোঝা যায়। এবার যদি নির্ধারিত সময় নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের ভোটের বাক্সের অবস্থা আগের থেকে অনেক বেশি খারাপ হবে। বাংলাদেশে চক্রান্তমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়ে নতুনভাবে সাম্প্রদায়িকতা চাঙ্গা করার চিন্তা যারা করে, তারা আহাম্মক ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের জনগণের চিন্তাভাবনা তাদের সমস্যাজর্জরিত জীবন এবং আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এই আহাম্মকদের কোনো পরিচয় নেই।

    জামায়াতে ইসলামী এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে অপরাধকে যেভাবে আশ্রয় করেছে, তাতে ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর তাদের আক্রমণ অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু তাদের মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশের সমাজভূমির অবস্থা ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলের মতো নয়। কাজেই অদূর ভবিষ্যতেই তাদের সাম্প্রদায়িক অপরাধ বুমেরাং হয়ে তাদেরকেই আঘাত করবে। এর ফলে ধর্মনির্ভর রাজনীতি, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার স্বাভাবিক কারণেই বন্ধ হবে। এ ধরনের দুষ্টের দমনের জন্য আইন করার কোনো প্রয়োজন হবে না।
    গত ২৮ তারিখের পর থেকে যেভাবে চারদিকে জামায়াত সৃষ্ট সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে তার মোকাবেলা করতে দাঁড়িয়ে সরকারের পুলিশের গুলিতে শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। জামায়াতের সশস্ত্র আক্রমণে কিছুসংখ্যক পুলিশও নিহত হয়েছে। সরকারি দল ও তাদের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে বলপ্রয়োগের রাস্তা ধরার স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবেই এটা ঘটছে। পুলিশ এখন বেপরোয়া গুলি চালিয়ে শুধু জামায়াতের সন্ত্রাসীদেরই নয়, সাধারণ ও নিরীহ অনেক মানুষকেও হত্যা করছে। পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে এ ধরনের লোকের সংখ্যা কম নয়। এদিক দিয়ে দেখলে জামায়াতে ইসলামী ও পুলিশের ফ্যাসিস্ট সহিংসতা দেশে এখন ব্যাপকভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশজুড়ে জনগণের সাধারণ নিরাপত্তা পর্যন্ত বিপন্ন করেছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে এত বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু ইতিপূর্বে বাংলাদেশে ঘটেনি। ১৯৭১ সালের পর কয়েক বছরে রক্ষী বাহিনী ও পুলিশের হাতে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও নিরীহ মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা সত্ত্বেও এত অল্প সময়ে এতজনের মৃত্যু এক অদৃষ্টপূর্বক ঘটনা। পুলিশের এই নৃশংস ও ফ্যাসিস্ট আচরণ নিয়ে আগে অনেক লেখা হয়েছে। পরে আরও লেখার প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো যেভাবে চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে, সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতা চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে, তাকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির এক অতি আবশ্যিক কর্তব্য।
    ৪.৩.২০১৩

    বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল

    http://www.samakal.com.bd/details.php?news=20&view=archiev&y=2013&m=03&d=05&action=main&menu_type=&option=single&news_id=331540&pub_no=1337&type=
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৯ মার্চ ২০১৩ ১৭:২৮587158
  • ফরহাদ মজহার এর 'ভাবান্দোলন' ও কানাগলি
    লিখেছেন: রিসাত কামাল • প্রকাশকাল: 8 মার্চ 2013 - 8:56অপরাহ্ন
    __________________________________________________

    "আপনার ‘ভাবান্দোলন” বইতে নিজেই স্বীকার করে নেন যে আওয়ামী বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হাজির হয়েছে তা শুধু মাত্র ইসলামকে পুঁজি করে ক্ষমতার রাজনীতিতে ভোট হাসিল করার জন্য।এই রাজনীতি শুধুমাত্র নিজেকে মুসলমান হিসেবেই দাবি করে আসার প্রণপণ লড়াই করে যা শেষমেষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিতে থাকে...আওয়ামীরা জন্ম দেয় ভাষাগত সাম্প্রদায়িকতা আর বিএনপি/জামাত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা..."

    http://unmochon.net/node/2174
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:১৬587159
  • গুগল করে ফ.ম নিয়ে একটি নোট পেলাম। লেখাটি পুরনো, তবে মজারু! :)

    __________________

    আর্টিকেল ৩৯; একজন লুঙ্গি মজহারের লাদানোর মৌলিক অধিকার...
    পোস্টাইছেন: কাওছার আহমেদ » ৩১ আগস্ট, ২০১০, মঙ্গলবার, ১৭:০৮ শেষভাগ

    http://www.nagorikblog.com/node/2509
  • pi | 78.48.231.217 | ১০ মার্চ ২০১৩ ০৩:৪০587160
  • ফরহাদ মজহারের বুদ্ধিবৃত্তিক চালাকি
    ফাহমিদুল হক

    কবি, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার শাহবাগ আন্দোলনের প্রায় তিন সপ্তাহ পর, নিজ বক্তব্য নিয়ে হাজির হন। টেলিভিশন টক-শোতে কথা বলা শুরু করেন সাঈদীর বিচারের রায়ের আগমুহূর্তে আর পত্র-পত্রিকায় বেশুমার লেখা শুরু করেন সাঈদীর রায়-পরবর্তী সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনার পর; যাকে তিনি রাষ্ট্রের বা হাসিনার ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। আন্দোলকারীরা বা আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি ব্লগাররা অনলাইনে খুব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন আন্দোলনের প্রথম সপ্তাহেই, সবাই সংহতি জানাতে আসছেন, ড। মুহাম্মদ ইউনূস বা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আসছেন না কেন? আমার অবশ্য কৌতূহল ছিল ফরহাদ মজহার কেন নিশ্চুপ তা জানার জন্য, অপেক্ষা করছিলাম এই আন্দোলনকে তিনি কীভাবে দেখছেন তা শোনার জন্য। তিনি দেরীতে এলেন, কিন্তু প্রবলভাবেই এলেন। দিগন্ত টিভি, একুশে টিভি, নিজের অনলাইন পত্রিকা চিন্তা, ‘বন্ধু’ মাহমুদুর রহমানের পত্রিকা আমার দেশ-এর পর, মঙ্গলবার (৫ মার্চ, ২০১৩) লিখলেন ইত্তেফাক পত্রিকায়। আমি তার ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত রচনা ‘নির্মূলের রাজনীতি’-তে যে বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়াই লিখবো এখানে।

    ফরহাদ মজহার বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় বুদ্ধিজীবী। মার্কসবাদ থেকে ইসলাম, গণিত থেকে বাংলার ভাবান্দোলন Ñ বিচিত্র বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য। শুধু লেখনী নয়, বৈঠকী আড্ডা, সক্রিয়তা-সংগঠনের মাধ্যমে তিনি তৈরি করেছেন শিষ্যকূল, যারা আবার বাংলাদেশের অধুনা ইন্টেলিজেন্সিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেও ফরহাদ মজহারের অনেক চিন্তা ও কর্ম দ্বারা উদ্দীপিত হয়েছি, কখনো কখনো প্রভাবিতও হয়েছি। আমার দিক থেকে অবশ্য শিষ্যত্ব গ্রহণ বা পরিচিত হবার কথা কখনো মাথায় আসে নি। বলা যায়, সমাসাময়িক বাংলাদেশে যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেছেন, কেউই তাকে উপেক্ষা করতে পারেন নি। তার গুণমুগ্ধ অনুসারীর সংখ্যা যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অংশ হিসেবে তাকে আক্রমণ বা বাতিল করতে উৎসাহীর সংখ্যাও অনেক।
    যাহোক, ফরহাদ মজহারের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যাবে, তিনি সবসময় উল্টো স্রোতের যাত্রী হতে চেয়েছেন। তার মতাদর্শিক শিফটের অনেক প্রমাণও রয়েছে, তার কৃতকর্মেই। তবে আজ তিনি শাহবাগবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটার জন্য নয়। বরং ইতিহাসের বাঁকে কোনো কোনো ঘটনা উপস্থিত হয়, যখন তত্ত্ব-ভাব-কূহক-রেটরিক দিয়ে আলোচনা আগানো যায় না, স্পষ্ট অবস্থান নিতে হয়। ফরহাদ মজহার আন্দোলনের তৃতীয় সপ্তাহে এসে বুঝিয়ে দিলেন তিনি শাহবাগবিরোধী। তিনি ইত্তেফাক-এর লেখায় এই আন্দোলনকে বলেছেন ‘শেখ হাসিনার শাহবাগী তামাশা’। তার বিএনপি-সংশ্লিষ্টতার কথা সর্বজনবিদিত ছিল, এই আন্দোলন-উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি এও স্পষ্ট করলেন যে, প্রয়োজনে তিনি জামায়াত-শিবিরের কার্যকলাপের ব্যাখ্যাকার হিসেবে হাজির হতে পারেন, তবুও তিনি মানতে রাজী থাকবেন না যে ৫ থেকে ১০ লাখ লোক মাসব্যাপী আন্দোলনে যে শাহবাগে যাওয়া-আসা করেছেন, তাতে বহুমাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, কেবলমাত্র শেখ হাসিনার ‘সাজানো নাটকের’ জোকার সাজতে যাননি তারা। তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চলন তাকে বাধ্য করেছে শাহবাগবিরোধী অবস্থান নিতে। বিএনপি-জামায়াতের বিগত জোট সরকারের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য উপদেষ্টা-পরামর্শদাতার ভূমিকাটি এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। যে আমার দেশ তার অনৈতিক সাংবাদিকতা দিয়ে হীন উদ্দেশ্যে এক ব্লগারের নাস্তিক পরিচয় সব আন্দোলনকারীর সঙ্গে মিলিয়ে ধর্মীয় উস্কানি-উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল, ফরহাদ মজহার সেই পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিজের বন্ধু বলে দাবি করেছেন, সেখানে প্রকাশিত হওয়া সাম্প্রতিক এক লেখায়। বিগত জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের প্রশ্রয়ে যে জ্বালানি-দুর্নীতি হয়েছে দেশে, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও কমিউনিস্ট ফরহাদ মজহার তাকেই বন্ধু ভেবে গর্বিতবোধ করছেন। বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে মতলববাজি যুক্ত হলে এক বেদনাদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তার শিষ্যদের কাউকে কাউকে গুরুর এই অবস্থানগ্রহণ দেখে লজ্জিত হতে দেখছি।

    ফরহাদ মজহারের মতো আমিও মনে করি, জামায়াতের মতাদর্শের বিরুদ্ধে মতাদর্শিকভাবে লড়বার প্রয়োজন আছে। এই কাজটি রাজনৈতিক কাজ, চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করার কাজ, বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করবার কর্তব্য। আমাদের এটাও ভুললে চলছে না যে বিএনপি প্রবলভাবে এবং আওয়ামী লীগ মৃদুভাবে জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে। শাহবাগের তরুণদের কোনো রাজনৈতিক ধান্দা নাই, তারা জামায়াতকে সরাসরি নিষিদ্ধ করার পক্ষে, এবং এইভাবে তারা বড় দুই দলকে স্পষ্ট বার্তাও দিচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, এটা কোনো সহজ কাজ নয়, মতাদর্শিকভাবে ও চিন্তা দিয়ে জামায়াতকে মোকাবিলার কাজটি এর আগে ধারাবাহিকভাবে ও সঙ্গতিপূর্ণভাবে কেউ করে নি। তবে ফরহাদ মজহার জামায়াতকে মতাদর্শিকভাবে মোকাবিলার কথাটি বলার জন্যই বলেছেন, আপাতত তিনি জামায়াত শিবিরকে রক্ষা করার জন্যই মাঠে নেমেছেন। এমনকি এর আগে ২০০৪-০৫ সময়কালে আবির্ভূত জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরল-প্যাশনেট ইসলামপ্রিয়তার কোনো সৎ যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে। ফলে তিনি যখন জঙ্গিবাদকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নিচ্ছিলেন, তাকে আমরা এককথায় উড়িয়ে দেইনি। বুঝতে চেয়েছি কোন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আর্থ-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়। কিন্তু জামায়াত-শিবিরকে আমরা সবাই ভালোভাবি চিনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত কী বস্তু, তা আমরা সকলেই জানি।

    ইত্তেফাক-এর রচনায় ফরহাদ মজহারকে পাওয়া গেল জামায়াত-শিবিরের সবচাইতে সমব্যথী নাগরিক বুদ্ধিজীবী হিসেবে। তিনি লিখলেন, “আবুল কালাম আযাদ ও কাদের মোল্লার রায় দেখে জামায়াত-শিবির পরিষ্কার হয়ে গেল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। ।।। তদুপরি শাহবাগে ফাঁসির দাবির জন্য গণজাগরণের মঞ্চ খোলা ও তার প্রতি সকল প্রকাল রাষ্ট্রীয়, সরকারি ও দলীয় সমর্থন দেখে জামায়াত-শিবির বুঝে নিল বলপ্রয়োগের পথ গ্রহণ করা ছাড়া জামায়াত-শিবিরের সামনে কোনো গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক বা আইনি পথ খোলা নাই। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবার জন্য তাকে বলপ্রয়োগের পথে যেতে হোল”।

    জামায়াত কেন সহিংস হলো তিনি সেটা সহানুভূতির সঙ্গে বুঝতে পারছেন, কিন্তু সেই সহিংসতার অংশ হিসেবে কেন হিন্দু বাড়ি-উপাসনালয়ে হামলা করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তো দূরের কথা, উল্লেখ পর্যন্ত করছেন না। জামায়াত যদি ‘বলপ্রয়োগের পথে যায়’ তবে শাহবাগের আন্দোলকারীদের কী করা উচিত? তারা অহিংসই থেকেছে, বড়জোর ফ্যাসিবাদী দলের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী স্লোগান দিয়েছে ‘‘শিবির ধর, জবাই কর’’। আর এই পরিস্থিতিতে সরকারপক্ষ কি তার বাহিনী নিয়ে পাল্টা বলপ্রয়োগে যাবে? সম্ভবত এর উত্তর হবে, হ্যাঁ। তাই হয়েছে, অনেক মানুষ মরেছে, একশর কাছাকাছি। এর মধ্যে জামায়াত-শিবির কর্মীর সংখ্যাই বেশি, আছে সাধারণ মানুষও, আওয়ামী লীগ কর্মী আছে, আছে পুলিশও। অনেক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সম্পত্তির বিনাশ হয়েছে। টানা হরতালে জনজীবন অচল হয়েছে। অবশ্যই যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত, নিন্দনীয়, বেদনাদায়ক। একেই বিএনপি-জামায়াত এবং ফরহাদ মজহার বলছেন ‘গণহত্যা’। এর প্রতিবাদ করছেন তিনি। মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী তিনি, তিনি এর প্রতিবাদ করবেনই। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে সংখ্যালঘু মানুষদের আক্রমণ কি অতি সামান্য অপরাধ? একদমই না। এইক্ষেত্রে তিনি নিশ্চুপ কেন?

    আমি শেখ হাসিনার অনুরাগী নই, আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুসারীও নই ‘‘আমি পাঁচ তারিখ বিকেল চারটায় শাহবাগে গিয়েছি, এরপর প্রায় প্রতিদিনই একাধিকবার গিয়েছি। তিনি যখন একটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে বলেন ‘শেখ হাসিনার শাহবাগী তামাশা’, আমি তার প্রতিবাদ করবোই। তিনি তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান দিয়ে শাহবাগকে বিচার করছেন। তিনি আন্দোলনের তিন সপ্তাহের মাথায় তার ‘ট্যাগিং মেথড’ নিয়ে হাজির হয়েছে। শাহবাগ আন্দোলন মোটেই সরকারের সাজানো নাটক নয়। মনে রাখতে হবে পাঁচ ফেব্রুয়ারির বিকেলে যেই শখানেক মানুষ জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিল, তারা সরকারের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিল। তারা মনে করেছিল, সরকার ও জামায়াতের মধ্যে সম্ভবত একটা আঁতাত হয়েছে, নইলে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার পাঁচটি প্রমাণ হলেও ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন কেমন করে রায় হয়? অন্য সবার মতো সরকারও হতভম্ব হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশের প্রকৃতি বুঝতে প্রথম দু’তিনদিন পার করে দিয়েছে। সরকারের সাজানো নাটক হলে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফকে প্রজন্ম চত্বরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। এরপর সরকার বুঝতে পেরেছে এই আন্দোলনকে সমর্থন দেয়া দরকার, আখেরে তাদেরই লাভ। এ এক অদ্ভূত পরিস্থিতি! মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক নম্বর পাবেই, ঐতিহাসিক বাস্তবতা তাকে এই সুবিধা দেয়। চার বছর ধরে বহুল অপশাসনের পরও শাহবাগ আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-ব্যর্থতার ইস্যুগুলোকে আপাতত পর্দার আড়ালে লুকাতে সাহায্য করেছে। ফলে প্রকাশ্য না হলেও, অপ্রকাশ্য সমর্থন সরকার প্রথম দুই সপ্তাহ দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২১ তারিখের মহাসমাবেশের পর থেকে ছাত্রলীগ সামনের সারিতে চলে আসে, এবং সরকারপক্ষের অংশগ্রহণ প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। বিএনপির জন্যও এই পথ খোলাই ছিল, কিন্তু বিএনপির জামায়াত-সখ্য, বা জামায়াতনির্ভরতা ইদানীং অতি তীব্র। ফলে সিঙ্গাপুর থেকে খালেদা জিয়া ফিরে নিজের মধ্যপন্থী দলটিকে স্থায়ীভাবে আরও ডানে নিয়ে গেলেন।

    ফরহাদ মজহার তার লেখার শেষদিকে মারাত্মক একটা কাজ করে বসলেন। তিনি সাঈদীর রায়-পরবর্তী জামায়াত-শিবিরের ‘বলপ্রয়োগ’ কর্মসূচিকে তাত্ত্বিকভাবে ‘গণমানুষের বিদ্রোহ’ বলে বর্ণনা করার চেষ্টা করলেন। হ্যাঁ, সাঈদীকে চাঁদে দেখা, নাস্তিকদের আন্দোলন, আল্লাহ-রসুলকে অবমাননা ইত্যাদি মিথ্যাচার দিয়ে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সমর্থ হয়েছে জামায়াত। তাতেই কি এটা ‘গণমানুষের বিদ্রোহ’ হয়ে গেল? সেক্ষেত্রে লাখ লাখ ‘শাহবাগী’কে তিনি গণমানুষ বলতে রাজি হবেন না? তার ধূর্ততার বাড়বাড়ন্ত দেখা গেল জামায়াতের প্রতিবাদকে ‘শ্রেণিবিদ্রোহ’ হিসেবে চালান করার উদ্যোগে। তিনি লিখছেন, “দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী কোন শ্রেণির প্রতিনিধি সেটা এই রায় ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ।।। লড়াই মধ্যবিত্তের পরিসর থেকে গ্রামীণ খেটেখাওয়া গরিব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। রাজনীতির গুণগত উল্লম্ফন ঘটে গেল। শহরের বিরুদ্ধে গ্রামের গরিব জনগণের বিদ্রোহের একটি পটভূমি তৈরি হোল।” কথাগুলো মার্কসীয় শোনালেও এ এক ধরনের চালাকিমাত্র। মার্কসবাদে আমাদেরও আস্থা-আগ্রহ আছে, গরিব মানুষের মুক্তি আমরাও চাই। কিন্তু কোনো ভুল ব্যাখ্যা বা আরোপিত শ্রেণিবিদ্রোহের কথা আমরা শুনতে চাই না। আমরা জানতাম ফরহাদ মজহার একইসঙ্গে লেনিনবাদ ও চৈতন্য-লালনের লোকধর্মের অনুসারী, যাকে তিনি বলেন বাংলার ভাবান্দোলন। ফলে সুফি ইসলাম বা জনপ্রিয় ইসলাম তার কাছে প্রশ্রয় পাবার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি সুফি ইসলামের বিপরীত মতাদর্শ রাজনৈতিক ইসলামের তাত্ত্বিক ও রক্ষাকর্তা হিসেবে হাজির করেছেন। বিষয়টি আমাদের অবাক করে। অথবা তার আওয়ামীবিরোধিতা স্থূল পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ফলে একটি প্রগতিবিরুদ্ধ, পশ্চাৎপদ-ফ্যাসিস্ট ও যুদ্ধাপরাধীদের দলের পক্ষে তিনি দাঁড়াচ্ছেন, সংঘাতের তত্ত্বায়ন করছেন। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে যদি আমরা দেখি জামায়াতের পক্ষ থেকে এই চালাকির চাপ তিনি বিএনপির ওপর ফেলছেন “বাংলাদেশের রাজনীতিতে আস্তে আস্তে বেগম খালেদা জিয়া ও তার বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিল। এখন তার কঠোর অবস্থান তাকে হয়তো সাময়িক রক্ষা করবে, কিন্তু তিনি যদি গণমানুষের এই বিদ্রোহ থেকে দূরে সরে থাকেন, তাহলে শেষ রক্ষা হবে কিনা এখনও বলা যায় না”।

    ফরহাদ মজহারের এই অবস্থানগ্রহণ আমাদের হতবাক করে, বিক্ষুব্ধ করে।

    ফাহমিদুল হকঃ শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

    http://banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=e83c5713c9bd3deb742f0e5c674d7bdf&nttl=09032013180245
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ১০ মার্চ ২০১৩ ১৯:২১587161
  • # pi কে সাধুবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনের জন্য। কোনো কারণে লেখাটি নজর এড়িয়ে গিয়েছিল।

    ফাহমিদুল হকের সমালোচনামূলক লেখাটির আগে ফ.ম.র প্রাসঙ্গিক লেখাও পড়ে নিলাম। ইত্তেফাকের ওই একই লেখা জামাতি দৈনিক "নয়াদিগন্ত" এ-ও প্রকাশিত। সমালোচনামূলক লেখাটির সঙ্গে দুটি পয়েন্ট যোগ করে বলা যায়:

    ফ. ম. বলছেন:

    ["বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে কঠোর অবস্থান নেবেন এটা হয়তো কেউই আশা করে নি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি মূলত ‘গণহত্যা’ অর্থাৎ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছেন। কয়েক দিনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞায় ‘গণহত্যা’-ই। ‘গণহত্যা’ হতে হলে হিটলারের ইহুদিনিধন কিম্বা একাত্তরের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনীয় হতে হবে এমন কোন কথা নাই। এই ধরণের ফালতু তর্ক যারা করছেন তারা তাকে ভবিষ্যতে রা করতে সম হবেন না। তবে যারা এই তর্ক করছেন তাদের মূল উদ্দেশ্য এই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবার জন্য শেখ হাসিনাকে উৎসাহিত করা, যদিও তার দায় দায়িত্ব ভবিষ্যতে তারা কেউই নেবেন না। সুনির্দিষ্ট ভাবে জামায়াত-শিবির ‘নির্মূল’ও গণহত্যা হিশাবে গণ্য হবে। কয়েক দিনের হত্যাকাণ্ডকে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ হিশাবে প্রমাণ করা মোটেও কঠিন নয়।"]

    এবং

    ["মনে রাখতে হবে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বিচারব্যবস্থার দলীয়করণ বহু আগেই চরমে পৌঁছেছে। দুর্বৃত্তপনা ও দুর্নীতি ঠেকেছে নির্লজ্জ লুটতরাজে, তার ওপর চলছে গণহত্যা।"]

    http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=130849

    কি সাংঘাতিক!!

    ০১. পুরো লেখায় ফ.ম. শাহবাগের গণজাগরণকে আগাগোড়া আওয়ামী নকশা বলেই চালিয়ে দিলেন। তিনি অন্ধ বলেই ধরতে পারলেন না শাহবাগের প্রলয়-ক্ষোভ। পাশাপাশি তার কথিত "গণহত্যা"র পক্ষেও সাফাই গাইলেন।

    "গণহত্যা" এবং "মানবতা" এবং "অপরাধ" -- এই চার অক্ষরের তিনটি শব্দ খালেদা+ফ.ম. যথেচ্ছভাবে ঠিক এমন সময় ব্যবহার করছেন, যখন শাহবাগের হাত ধরে সারাদেশ ১৯৭১ এর "গণহত্যা" তথা "মানবতা" বিরোধী "অপরাধ" এর বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, যখন ১৯৭১ এর "মানবতা" বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একের পর এক "গণহত্যা"কারীদের বিচার শুরু করেছে!

    খালেদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ.ম. এই শক্তিশালী "গণহত্যা" কথাটির বার বার অপব্যবহার করে ছোট করে দেখেন, এদেশের মানুষের হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামকে পাকিস্তানি জান্তার বার বার বুটের নীচে পিষে মারার ইতিহাসও!! এটি কি স্পষ্টই পূর্ব বাংলার মানুষের কয়েকশ বছরের শোষণের ইতিহাস নিয়ে মশকরা নয়??

    ০২. পুলিশের হত্যাকাণ্ড ফ.ম অবশ্যই বন্ধ করার আহ্বান জানানোর অধিকার রাখেন। কিন্তু তিনি এখানেই থামেননি, আরেক কাঠি এগিয়ে ফ.ম. "নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে" এই ছোট্ট অনুবাক্যে জামাতি তাণ্ডবলীলা [এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন] কে চমৎকার করে বৈধতা দেন। তার পুরো লেখায় আশ্চর্যজনকভাবে উপেক্ষিত হয়:

    পুলিশের ওপর হিংস্র জামাতি আক্রোশ,
    হিন্দু-বৌদ্ধ জনপদে সহিংস হামলা,
    একের পর এক ব্লগার খুন,
    শাহবাগকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে মিথ্যে জামাতি প্রচার,
    রেল, সেতু, বিদ্যুত কেন্দ্রসহ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির যথেচ্ছ বিনাশ,
    এবং
    সর্বপরি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার।

    ফাহমিদুল হকের সমালোচনায় দ্বিতীয় পয়েন্টটি সেভাবে আসেনি। এরপরেই লেখাটি বেশ চোখা।

    চলুক।
  • Yan | 161.141.84.239 | ১৮ মার্চ ২০১৩ ০৪:১৮587163
  • সেই লিপস্টিকোলা লোকটা???? এই সময়ে????
    লেখাটা পড়ে মনে হলো ইচ্ছাকৃত গুলিয়ে দেবার চেষ্টা। চেষ্টাটা হয়েছে নানারকম মিথ্যা, অর্ধসত্য আর আটভাট বকা সব জড়িয়ে দিয়ে।
  • কল্লোল | 125.241.126.231 | ১৮ মার্চ ২০১৩ ১১:২১587164
  • এই সময়ের রবিবারের পাতায় ফরহাদ মজহর ও অন্যান্যদের লেখা পড়লাম।
    ফারহাদ খুব জরুরী কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্নটি খুবই জরুরী। কিন্তু এড়িয়ে গেছেন যুদ্ধপরাধীদের শাস্তির প্রশ্নটি। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওনার দ্বিমত নেই। বাঙ্গালীত্বের ওপর পাকিস্তানের ইসলাম চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই কে অস্বীকার করতে পারছেন না। কিন্তু সেই লড়াইয়ে যারা পকিস্তানের পক্ষে ছিলো ও নানান অপরাধ সংগঠিত করেছে তাদের শাস্তি নিয়ে ওনার কোন পরিষ্কার অবস্থান নেই। উল্টে এমন একটা ভাব লেখায় নিয়ে এসেছেন যেন এদের জোর করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
    এটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই যে মুজিবের বাংলাদেশের জাতিবহুত্বকে অস্বীকার করে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে বড় করে দেখা ও বাকশালের অবিমৃশ্যকারীতাই আজকের বিএনপি-জামাতের উত্থানের আসল কারন। কিন্তু তাই বলে, যুদ্ধপরাধীদের অপরাধকে সেই অবিমৃশ্যকারীতা দিয়ে আড়াল করাটাও শয়তানির লক্ষণ।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ১৮ মার্চ ২০১৩ ২০:১৯587166
  • # Yan, # কল্লোল,

    এ ক ম ত।

    ফ. ম. একের পর এক তালেবানী দৈনিক "নয়া দিগন্ত", "আমার দেশ", "সংগ্রাম" এবং "দিগন্ত টিভি"তে বকেই চলেছেন। এসব কাগজের দুর্বল অনলাইন লিংক পরে আর কাজ করে না। ফ. ম'র হেজিমনির মতোই। তবে সমাধানও ফ. ম নিজেই। তার "পাক্ষিক চিন্তা"র অনলাইন সংস্করণে এক সঙ্গে সব নোটপত্রের [অথবা হেজিমনিসমূহ] সন্ধান মিলবে। বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম-এর মতামত বিভাগের লেখাও আছে সেখানে। এই সংস্করণটির প্রযুক্তিগত দিকে খানিকটা এগিয়ে।

    রীতিমত বিষবৃক্ষ। শাহবাগ নিয়ে তার তালেবানী দেশনা চলছেই। আবার সাঈদী রক্ষার হরতালে "গণহত্যা"র শিকার জামাত সমর্থক মাদ্রাসার মোল্লাদের ভেতর তিনি শ্রেণীর সন্ধানও করছেন [তার ভাষায়, "দরিদ্র"। তবু ভালো, "সর্বহারা" নয়।]
    ____________
    দ্রষ্টব্য: ‘গণহত্যা’ কী?

    ["তাহলে কোন ধর্মীয়গোষ্ঠিকে পুরাপুরি কিম্বা তার কোন খণ্ড বা অংশকে হত্যা বা ধংস করা গণহত্যার মধ্যে পড়ে। যেমন এই গোষ্ঠির সদস্যদের হত্যা করা, তাদের শারিরীক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করা, এই গোষ্ঠিকে পরিকল্পিত ভাবে এমন অবস্থায় ঠেলে দেওয়া যাতে তাদের পুরোপুরি বা আংশিক শারিরীক ক্ষতি সাধন করা যায়।"]

    http://www.chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/183/bangla
  • pi | 78.48.231.217 | ০৩ এপ্রিল ২০১৩ ২১:২৫587167
  • 'বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “সরকারের প্রতি আমরা আলেম-উলামা ধর্মপ্রাণ মানুষদের শান্তিপূর্ণ কাফেলা বাধাহীন ও নির্বিঘœ করার আহ্বান জানাই। এই মুসাফিরদের থাকা, খাওয়া ও পানি-খরচের উপযুক্ত আয়োজন করুন।”

    শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে লংমার্চ করে আগামী ৬ এপ্রিল রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

    সারাদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের আহত অনুভূতি সরকারকে জানাতে ও তাদের গণবিচ্ছিন্নতা সর্ম্পকে হুশিয়ারি ব্যক্ত করতে হেফাজতে ইসলাম লংমার্চ ও ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বলেও মন্তব্য করেন জামায়াত ‘ঘনিষ্ঠতার’ কারণে গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনার মুখে থাকা ফরহাদ মজহার।

    তিনি বলেন, “আমরা এই কর্মসূচির প্র্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছি।”...'
    http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article609530.bdnews

    কিছু বলার নেই।
  • | 24.97.165.138 | ১১ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:২৬587168
  • কিচ্ছু বলার নেই
  • দেব | 127.197.241.59 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ২০:২৮587169
  • এখানে থাকুক এটা। ১৯৭১ নিয়ে কানাডা অভিবাসী পাকিস্তানীদের একটি টিভি চ্যানেলের আলোচনা।



    ভদ্রলোক একজন্ কাশ্মিরী। ভারতীয় কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য উত্তর আমেরিকায় জনমত গড়ার কাজ করছেন।
  • b | 135.20.82.166 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৩৭587170
  • 'দ' এর দেওয়া ছবিগুলো কোথা থেকে? প্রসঙ্গ কি?

    Date:11 Apr 2013 -- 04:26 PM
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন