এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • সলিল চৌধুরি -সুরের আকাশে নীল ধ্রুবতারা

    Somen Dey
    গান | ১৯ নভেম্বর ২০১২ | ১৬৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somen Dey | 125.187.49.83 | ১৯ নভেম্বর ২০১২ ০০:২৯576997
  • ও আলোর পথ যাত্রী
    আসামের চা বাগানের নিস্তরঙ্গ পরিবেশে বেড়ে উঠছে একটি বালক। বাবা চা বাগানের ডাক্তার। চারিপাশে গাছ গাছালির সবুজ ছায়া । ঝিম ধরা প্রকৃতির মধ্যে মাঝে মাঝে শোনা যায় অদ্ভুত অদ্ভুত পাখির ডাক , স্থানীয় আদিবাসীদের গান আর কে যেন বাঁশি বাজায় অনেক দুর থেকে।তার বাবার পূ`্র্ব্বতন ডাক্তার ছিলেন এক আইরিশ ভদ্রোলোক। এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি জলের দামে বিক্রি করে দিলেন তাঁর পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রচুর রেক`্র্ড আর একটি পিয়ানো। বালকটির পিতা কিনে নিলেন । মোৎজা`্র্ট , চাইকোভস্কি , বিথোফেন , চোপিন আরও আনেকের রেক`্র্ড। বালকটির বিলম্বিত লয় জীবনে এই রেক`্র্ড গুলি নিয়ে এল যেন কোনো স্ব`্র্গলোকের চাবিকাঠি । শুনতে শুনতে তার মনে হতে লাগলো সাতটি সুরের তৈরী এক অদ্ভুত জগৎ তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে।
    বালকটির পিতা ছিল অভিনয়ের সখ । চা বাগানের কুলি দের নিয়ে তিনি করতেন নানা রকমের নাটক যাত্রাপালা। সে খানে থাকতো দেশজ গান , ভাওয়াইয়া , ভাটিয়ালি ইত্যাদি মাটির গন্ধ মাখা সহজ সরল গান। দুরকমের গানই তাকে আক`্র্ষন করলো। এই দুই বিপরীত স্রোতের গান তার চেতনার মধ্যে তোলপাড় লাগিয়ে দিল।বিধাতা পুরুষের চিত্রনাট্যে সলিল চৌধুরি নামক এক ভবিষ্যত কম্পোজারের জীবনের প্রথম অংকের সূচনা হল এখানেই।
    পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সিমফনির মূ`্র্ছনা আর দেশজ সঙ্গীতের মেলডির নমনীয় মাধু`্র্য দুই তাকে সমান ভাবে টানছিল।
    ইতিমধ্যে তার স্কুলের পড়া শেষ হল। কলেজে ভ`্র্তি হতে চলে এল কোলকাতা।
    ১৯৪৪ সাল। সে এক উত্তাল সময় । একদিকে স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলান তখন তুঙ্গে । অন্যদিকে কমুনিস্ট পা`্র্টির সংগঠিত হচ্ছে প্রতিবাদের নতুন ভাষা নিয়ে। ভারতীয় গননাট্য সংঘ বা IPTA তখন সারা দেশ জুড়ে এক অসাধারন উন্মাদনা সৃষ্টি করলো সমস্ত শিল্পী সাহিত্যিকদের মধ্যে।সলিল যোগ দিলেন IPTA তে। একদিকে তার নিপীড়িত মানুষের জন্যে তার অনুভূতি অন্যদিকে সঙ্গীতের প্রতি তার তীব্র আক`্র্ষন দুইই যেন একটা সঠিক ঠিকানা পেল।

    ঢেউ উঠছে কারা টুটছে
    সলিল লিখতে শুরু করলেন মানুষকে জাগরিত করার গান। নিজেই সুর করলেন সে সব গানে।শ্রমিক কৃষক ও সাধারন মানুষের সভায় সে সব গান গাওয়া হতে থাকলো। সলিল জানতেন এই গানের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে । ।এ গান হতে হবে মানুষ কে উদ্দীপ্ত করার জন্য , মানুষের ঘুম ভাঙ্গনোর জন্য। এ গানের সুর হতে হবে এমন যাতে সাধারন মানুষ গলা মেলাতে পারেন। এই স`্র্ত মেনেও তিনি এই গানেও রাখলেন তাঁর নিজস্ব প্রঞ্জার ছাপ। ১৯৪৫এ রংপুরে ছাত্র সম্মেলনে প্রথম প্রকাশ্যে গাওয়া হল তাঁর গন সঙ্গীত।' বিচার পতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা'। সে গান মানুষের বুকের ভিতরে গিয়ে ধাক্কা দিল।১৯৪৬এ সারা দেশ জুড়ে হল রেল ও ডাক ধ`্র্মঘট। অক্টোরলনি মনুমেন্টের পাদদেশে এক বিশাল সমাবেশে গাওয়া হল ' ঢেউ উঠছে কারা টুটছে আলো ফুটছে' এখানে সলিল তার বামপন্থী চেতনার সঙ্গে মেলালেন তার পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ঞ্জান । ঢেউ উঠছে কারা টুটছে একই প`্র্দায় গাওয়া হচ্ছে কিন্তু বদলে যাচ্ছে ক`্র্ড । যেন ঢেউ ক্রমশ উত্তাল হতে হতে কারা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলছে। আরও অনেক গনসঙ্গীতের জন্ম হল এই সময়ে। যে গুলিতে তাঁকে পাওয়া গেল মুলত চারন কবির ভুমিকায়। কিন্তু কোথাও একটা আরো কিছু করার আকুতি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।
    ইতিমধ্যে ভারত স্বাধীন হয়েছে কিন্তু কমুনিস্ট পা`্র্টি নিষিদ্ধ হয়েছে। এরকম একটা সময়ে জ`্র্জ বিশ্বাসের বাড়িতে বিশ বছরের যুবক সলিলের দেখা হল এক উদীয় মান গায়কের , তার নাম হেমন্ত মুখা`্র্জি। পরিচয় না থাকলেও দু জনে দু জনের গুনগ্রাহী। দুজনের আলাপ হল। হল তৈরী হল একটি ইতিহাসের পটভুমিকা।
    কদিন পরেই সলিল গেলেন হেমন্তের বাড়ি , অনুরোধ করলেন তার সুরে গান গাইবার জন্য।
    হেমন্তের তখন 'কথা কওয়োনাকো শুধু শোনো' গেয়ে বেশ নাম ডাক হয়েছে। সলিলের প্রতিবাদী গান গাইতে একটু ইতস্তত করলেন।বললেন অন্য কোনো গান সুর করা আছে কিনা।
    সলিল বললেন না তেমন কিছু তো নেই।সলিল ফিরে যাচ্ছিলেন , হটাৎ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে একট গানের কথা যেটি আধখানা সুর তৈরী আছে। সলিল ফিরে এসে সেই আধখান গানের সুর শোনালেন হেমন্তকে। হেমন্তের খুব পছন্দ হল। বললেন তাড়াতাড়ি গানটা পুরোটা সুর করে আনতে। কয়েকদিন পরেই সলিল এলেন গানটি পুরোপুরি তৈরী করে।
    হেমন্তকে সুরটি তুলিয়ে দিলেন। কিন্তু সেদিন হেমন্তের বাড়িতে ফিরে গিয়েই সলিল জানতে পারেন তার কমুনিস্ট পা`্র্টির সদস্য হওয়ার সুবাদে তাঁর বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে সেই রাত্রিতেই তার বাড়ি রেইড হবে। তিনি পালালেন সন্দেশখালির গোপন আস্তানায়।

    ১৯৪৯ সালের পুজোর গান তৈরী হচ্ছে হেমন্ত ঠিক করেছেন সলিলের গানটিই গাইবেন সে বছর পুজোয়। কিন্তু সলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। কারন সে তখনো গোপন আস্তানায়।
    আগত্যা হেমন্ত নিজেই অ`কেস্ট্রেশন করে ফেললেন সলিলের অনুপস্থিতিতে। সেই গান পুজোতে রেক`্র্ড হয়ে বেরোলো । চারিদিকে আলোড়ন পড়ে গেল। গানটি ছিল' কোনো এক গাঁয়ের বধুর কথা তোমায় শোনাই শোনো রুপকথা নয় সে নয়' । এতদিন যেসব প্রতিবাদের গান তিনি শোনাচ্ছিলেন এ গান তার থেকে সম্পু`্র্ন ভিন্ন। একটি গ্রামীন বধুর জীবনের বেদনার আ`্র্তি। কমুনিস্ট পা`্র্টির আপত্তি উঠলো এ রকম গান লেখার জন্যে ।তিনি বললেন তিনি গান থেকে স্লোগান আলাদা করতে চান।

    'ছোটো যত আপন ছিল বাহির করে দিয়ে
    ভূবন টাকে আপন করে নিলাম'

    গাঁয়ের বধুর সাফল্যের পর তিনি আবার হাত দিলেন আবার একটি বড় কবিতায় সুরারোপ করায়। তবে সেটি সুকান্তের রানার ।এই কবিতায় সুর দিতে গিয়ে তিনি সুন্দর ভাবে মিলিয়ে দিলেন তার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ব্যাকরন লব্ধ জ্ঞান। তিনি ভেঙ্গে ফেললেন বাঙ্গলা গানের প্রচলিত ফরমাট।বাঙ্গলা গানে সাধারনত অন্তরার পর অস্থায়িতে ফিরে আসাই নিয়ম। কিন্তু যে হেতু রানার যাত্রা শুরু করে আর ফিরে আসছেনা তার শুরুর জায়গায় তাই গানের সুরও আর অস্থায়িতে ফিরছেনা। রানার এক দিগন্ত থেকে ছুটছে আরএক দিগন্তের দিকে তাই 'দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে' সুর করতে গিয়ে তিনি major chord থেকে চলে গেলেন minor chordএ ।
    আবার 'দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটি মিটি' সুর করতে গিয়ে চলে গেলেন একবারে কী`্র্তনের সুরে।
    'রানার চলেছে বুঝি ভোর হয় হয়' এখানে যেহেতু এখনো ভোর হয়নি তাই সুরে লাগালেন কোমল রে । আবার পরে যখন ' রানার রানার ভোর তো হয়েছে আলোয় হয়েছে লাল' এখানে ভোর হয়ে গেছে ব্যাবহার করলেন শুদ্ধ পরদা। এ রকম গোটা গানটি জুড়ে অনেক রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন যা বাংলা তথা ভারতেয় সঙ্গীতে এর আগে কখনো হরনি । গানের চলনটি একবারে পাশ্চাত্য সিম্ফনির সঙ্গে তুলনীয়।
    এর পর সুকান্তের অবাক পৃথিবী আর সত্যেন দত্তের পাল্কির গানে সুর করলেন। সেখানেও এই ধারা চললো।

    ১৯৪৯ এ বাংলা সিনেমায় সুর করার সুযোগ পেলেন।পরীক্ষার নিরীক্ষার জগত থেকে বাঙ্গলা গানের মুল ধারায় ফেরা। তবে তিনি পালন করতে লাগলেন একাধারে গীতিকার সুরকার এবং কম্পোজারের তিনটি ভুমিকা। রবীন্দ্রনাথ ডি এল রায় অতুলপ্রসাদ নজরুল এঁরা সবাই গীতিকার এবং সুরকার । কিন্তু কম্পোজার নন। এই 3 in 1 ভুমিকায় সলিলই প্রথম।

    বেশ কয়েকটি বাঙ্গলা ছবির সুর দেওয়ার পর ডাক পেলেন বম্বে থেকে বিমল রায়ের কাছ থেকে। সলিল চৌধুরিই একটি গল্প নিয়ে ছবি । সিনেমার নাম দো বিঘা জমিন।' ধর্তি কহে পুকর কে’ , ‘আরি অজা নিদিয়া’ , 'মউসম বিতা যায়' এই সব গান খুব জনপ্রিয় হল ।ছবিটি ও নুতন ধারার সিনেমা হিসেবে একটি মাইলস্টোন তৈরী করলো।সলিল রয়ে গেলেন বম্বেতে। মূল ধারার সিনেমার গান সেই সঙ্গে বাঙ্গলা বেসিক গানে তিনি অসাধারন সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন যা এর আগে কেও করেননি। সৃস্টি সুখের উল্লাসে তিনি নিজেকে বার বার ভাঙ্গলেন বার বার নতুন করে গড়লেন। যে কোনো ম্হান শিল্পীর মতন কিছুতেই সন্তুষ্ট হননি নিজের সৃস্টিতে । নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন সৃস্টিশীলতার সংকটের সামনে , তার পর তাঁর নিজস্ব প্রজ্ঞা দিয়ে উত্তী`্র্ন হয়েছেন সেই সংকট থেকে।
    একদিকে ভারতব`্র্ষের বিভিন্ন লোক সঙ্গীত নিয়ে সব অসামান্য কাজ করলেন।
    বাঙ্গলার ভাটিয়ালি নিয়ে গঙ্গা ছবির ' ইচ্ছা করে পরান টারে ", আমায় ডুবাইলি রে।পান্জাবী ভাঙ্গড়া নিয়ে হিন্দি ছবি জাগতে রহো তে ' ম্যায় ক্যা ঝুট বোলিঁয়া' আসামের বিহু গানের সুর লাগালেন মধুমতির বিছুয়া , মুকেশের গাওয়া বেসিক বাঙ্গলা গানে' ঝুম ঝুম ময়না নাচোনা' ।
    তেমনি অন্যদিকে রোমানিয়ান ও রাসিয়ান ফোক গান ভেঙ্গে তৈরী করলেন ঘড়ি ঘড়ি মোরা দিল ধড়কে আর শ্যমল বরনী ওগো কন্যা' গানে।
    আবার একেবারে মোৎজা`্র্টের 40th symphony এর একটি অসাধারন adaptation করলেন ' ইতনা না মুঝ্সে তু প্যার বড়া' গানটিতে ।

    সুরের এই ঝর ঝর ঝরনা

    শুধু গানের সুরে নয় গানের prelude এবং interlude যন্ত্রানুসঙ্গের ক্ষেত্রেও ঘটালেন আশ্চ`্র্য সব পরিব`্র্তন , যা ভারতীয় সঙ্গীতে এর আগে কখনো হয়নি।' কি যে করি , দুরে যেতে হয় তাই ' এই গানটির যন্ত্রানুসঙ্গে একেবারে ভারতীয় সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের অবাক মেল বন্ধন ঘটালেন।গানটির ভাষায় একদিকে দুখের অন্যদিকে দন্দ্ব আছে । হয়তো দুখের জন্য ভারতীয় সুর আর দন্দ্বের জন্য পাশ্চাত্য সুরের প্রয়োগ।
    তিনি প্রথম নিয়ে এলেন যন্ত্রানুসঙ্গে ত্রিমাত্রিক চরিত্র । এতদিন যন্ত্রানুসঙ্গ সাধারনত মুল গানের চলন কে অনুসরন করে চলতো। তিনি নিয়ে এলেন obligeto নামক একটি পাশ্চাত্য সঙ্গীতে প্রচলিত অর্কেস্ট্রেশনের ধরন। যা কিনা মুল গানের সুরের সঙ্গে সমান্তরাল হয়ে একটি ভিন্ন সুর অর্কেস্ট্রাতে বাজতে থাকে।'যারে , যারে উড়ে যারে পাখি' গানে স্যাক্সোফোনে এই রকম obligeto প্রয়োগ দেখালেন।
    interludeএ কোরাস ভয়েসের perfect unisonএর প্রয়োগ অসাধারন ভাবে দেখালেন 'জাগো মোহন প্রীতম' গানটিতে।
    vocal refray এর সা`্র্থক প্রয়োগ দেখালেন 'হ্যায় দিল কঁহা তেরি মঞ্জিল' এবং ' জীন্দগি ক্যায়সি এ পহেলি , হায়রে ' গানে।

    একই গানের কর্ড বদল নিয়ে করেছেন অনবদ্য সব পরীক্ষা নিরীক্ষা। হিন্দিতে' গুজর যায় দিন দিন দিন , হর পল গিন গিন গিন' গানের জটিল কর্ড বদল গাইতে গিয়ে সয়ং কিশোর কুমার নাকি হিম সিম খেয়ে ছিলেন। তেমনি হেমন্তের গলায় 'শোনো , কোনো একদিন আকাশ বাতাশ জুড়ে রিম ঝিম বরষায় ' গানে তিনটি স্কেলে এমন অবাধ ভাবে বিচরন করা , এ শুধু সলিল চৌধুরির পক্ষেই সম্ভব।তেমনি লতার গলায় ' ও মোর ময়না গো' গানটিতে তালের গান হওয়া সত্বেও ব্যাবহার কলেননা কোনো তাল বাদ্য। ব্যাবহার করলেন শুধু গিটারের কর্ড।
    আজ তবে এইটুকু থাক এবং হিন্দিতে আজ কো ই নহি অপনা গানে ধ্রুপদী অর্কেস্ট্রেশনের একতি অনবদ্য উদাহরন। একটা আবেগের ঢেউ যেন উত্তাল হতে হতে তীরে এসে আছড়ে পড়ে শান্ত হয়ে আচ্ছে । চেলো , স্যক্সোফোন , বাঁশির সঙ্গে অনেক তার যন্ত্রের সম্মিলিত ব্যাবহারে এরকম একটা আবহ সৃস্টি হচ্ছে।
    সবিতা চৌধুরির কন্ঠে সুরের এই ঝরনা গানে আবার একটি অসাধারন কম্পোজিশন তৈরী করলেন । হারমোনাইজ্ড কোরাস ভয়েস ব্যাবহার করলেন গানের আবহে , যা তিনি আগেও করেছিলেন । কিন্তু এখানে অন্তরাতে গিয়ে দেখা গেল কোরাস ভয়েসই নিয়ে নিচ্ছে লিড গায়কের রোল আর লিড ভয়েস তাকে সহযোগিতা করছে। এমনটা আগে কখনো শোনা যায়নি।
    এ রকম অসংখ্য সৃস্টিশীলতার উদাহরন আছে যা দিয়ে আর এ লেখাটি দীর্ঘায়িত করবোনা।

    'পৃথিবীর গাড়িটা থামাও , আমি নেমে যাবো , আমার টিকিট কাটা অনেক দুরের'

    সলিল চৌধুরির মৃত্যুর পর নৌষাদ সাহেব বলেছিলেন he was the composer of the composers. One of the seven notes of music has been lost
    সলিল শুধু যে অসাধারন কম্পোজার ছিলেন তাই নয় তাঁর লেখনীও ছিল সম পরিনাম শক্তিশালী। প্রতিবাদের গান , রোমান্টিক গান , শিশুদের জন্যে গান , ব্যাঙ্গের গান , যখন যা লিখেছেন তাতেই তা`্র প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। শুধু তাই নয় অনেক গানেই চেস্টা করেছেন সমাজ সচেতনার ছাপ রাখতে।
    একটি রোমান্টিক গানে বলছেন ' আজ নয় গুন গুন গুন্জন প্রেমের , চাঁদ ফুল জোছ্নার দিন আজ নয় , ওগো প্রিয় মোর খোলো বাহুডোর , পৃথিবী আমারে চায়" ।
    একটি ছোট দের গানে লিখছেন ' মা মাগো মা অন্য কোনো গল্পো বল , এক যে ছিল রাজা রানি অনেক হোলো' ।
    ৭৮টি হিন্দি ছবি , ৪০টি বাঙ্গলা ছবি , ২৪ টি মালয়ালম ছবিতে সুর দেওয়ার পরও তাঁর ভিতরের অতৃপ্ত মানুষটি মনে করছেন হয়তো যে বাম পন্থী নিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন তার থেকে হয়তো অনেক সরে এসেছেন।
    তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে আসে

    'এই জীবন এমনি করে আর তো সয় না
    যাই হারিয়ে মিলে মিশে এবার
    হই আবার জন সমুদ্রের একজনা'।

    এই অতৃপ্ত মানুষটি চেয়ে ছিলেন তাঁর মৃত্যু হোক কী বোর্ডে হাত রেখে কোনো একটা নুতন সুর সৃস্টি করতে করতে । বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি । ১৯৯৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বরে তিনি হাসপাতালে রোগ ভোগের পর মারা যান।
    যতই বাম পন্থী হোন তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে রবীন্দ্রনাথ বাস করতেন। শেষ বয়সে একবার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়ে ছিল তা`্র প্রিয়তম রচনা কোনটি । তিনি যে গানটির কথা বলেছিলেন সেটি মোটেই গান হিসেবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু এই গানে কোথাও যেন উঁকি মারছেন রবীন্দ্রনাথ। গানটি আসলে ছিল তাঁর জীবন দর্শন

    ধরনীর পথে পথে
    ধুলি হয়ে রয়ে যাবো
    এই কামনা , আর কিছুনা
    আগামীর পথে পথে আমিও পৌঁছে যাবো
    সেই ঠিকানা , এই কামনা।
  • shanku | 127.217.83.128 | ১৯ নভেম্বর ২০১২ ২০:৩০577005
  • সঙ্গীত জগতের একমাত্র নৈসর্গিক প্রতিভা ছিলেন সলিল। শুধু জিনিয়াস বললে যার কিছুই বলা হয় না।
  • সুকি | 168.161.176.6 | ২০ নভেম্বর ২০১২ ০৯:৪৬577006
  • দারুন লেখা - সলিল চৌধুরির এক মুগ্ধ শ্রোতা হিসাবে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে গেলাম।
  • b | 135.20.82.164 | ২০ নভেম্বর ২০১২ ১২:৩৭577007
  • নৈসর্গিক প্রতিভা মানে কি?
  • siki | 24.97.112.126 | ২১ নভেম্বর ২০১২ ০০:৫১577008
  • পার্থিব প্রতিভা বা প্রাকৃতিক প্রতিভা।

    এর মানে জিগাবেন্না।
  • jhumjhumi | 127.194.235.227 | ২১ নভেম্বর ২০১২ ১৭:৫২577009
  • ভালো লাগল।
  • DB | 125.187.36.10 | ২১ নভেম্বর ২০১২ ১৯:১৪577010
  • ভলো লগলো লেখাটি
  • | 127.194.84.55 | ২২ নভেম্বর ২০১২ ০১:২১577011
  • সলিল চৌধুরী জিনিয়াস। তাঁকে নিয়ে কোন কথা হবে না।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২২ নভেম্বর ২০১২ ০২:০৫577012
  • যাহ। কতগ্গুলি কথা বলার ছেল যে।
  • | 127.194.84.55 | ২২ নভেম্বর ২০১২ ০২:১৮576998
  • ইয়ে মানে বলতে চেয়েছিলাম বাজে কথা হবে না ঃ))
  • Somen Dey | 125.187.48.169 | ২২ নভেম্বর ২০১২ ১৬:২৭576999
  • কৃশানু ,

    যে কথা বলার ছিল বলে ফেলুন । অনেক কিছু নিয়েই তো লেখা হয়নি হয়নি এই লেখায় ।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২২ নভেম্বর ২০১২ ২১:১৮577000
  • না না, ওটা বতিন্দার পা টানছিলাম। আমি বড়জোর এই লিঙ তা দিতে পারি।
  • Somen Dey | 125.187.33.131 | ২৪ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৪৮577001
  • কৃশানু ,
    অনেক ধন্যবাদ লিংক টি এখানে দেবার জন্যে।
  • বি । জামান | 127.18.231.62 | ০১ জুন ২০১৩ ২০:১৯577002
  • আমি বাংলাদেশের , সলিল দাকে যখনই মনে পরে কোনদিন মনে হয় নি -সলিল দা সীমান্তের ওপারে থাকতেন। তার নাম যতবার আমার মুখে উচ্চারিত হয়েছে-- সলিল দা ছাড়া পুরো উচ্চারন করলে মনে হতো --সলিল দা আমার কাছে আসছে না । আমি একজন বাঙ্গালী হয়ে সলিল দাকে নিয়ে আমার গর্বের যেন শেষ নেই। তার এমন কিছু গান আছে বাল্যে মনে হতনা --- বাঙালি সলিলের হাতে এত সুন্দর গান আসতে পারে। তুমি ভাল থেক-- সলিল দা ।
  • lcm | 118.91.116.131 | ১০ অক্টোবর ২০১৫ ১১:৩৫577003
  • দেবী দেবী কাননম্‌ পুভনিঞ্জু --- জনপ্রিয় সুর
  • কল্লোল | 125.242.153.86 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২২:১১577004
  • সলিল চৌধুরী বাংলা কাব্যগীতির অন্য ধারার ভগীরথ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন