এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রামুর আগুন এবং কয়েকজন মানুষ ও মৃদু-মানুষের নড়াচড়া

    কুলদা রায়
    অন্যান্য | ০৯ অক্টোবর ২০১২ | ৫৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুলদা রায় | 34.90.91.2 | ০৯ অক্টোবর ২০১২ ১৮:০৬575416
  • ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুতে বৌদ্ধ পাড়া জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উখিয়া ও পাটিয়াতেও একইভাবে আক্রান্ত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বাংলাদেশের নাগরিক এবং বৌদ্ধ মূর্তি। সংবাদপত্রের রিপোর্ট বলছে, এর পিছনে বাংলাদেশে সক্রিয় মৌলবাদী গোষ্ঠী জড়িত। তারা আগে থেকে পরিকল্পনা করে এই হামলার পরিকল্পনা করেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রোহিঙ্গারা। প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু লোকজন এবং কিছু লোভী-দুর্বৃত্ত। এই হামলাকারীরা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাদেরকে আহবান করে পবিত্র কোরান অবমাননার প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সন্ধ্যায়। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল শ্রেণীর লোকজনই ছিল। ছিল উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা। পবিত্র কোরান অবমাননার প্রতিবাদ করাটাই সঙ্গত। যে কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমানই করবেন এটা স্বাভাবিক। এটা তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু প্রতিবাদটা সহিংস হলে সেটা ক্ষতিকর। এই প্রতিবাদের আড়ালে বাইরে থেকে ট্রাকে ভরে মৌলবাদী লোকজন আনা হয়েছে। তারা এনেছে গান পাউডার। অস্ত্রশস্ত্র। আক্রমণ করেছে সংঘবদ্ধভাবে রাত সোয়া এগারটার পরে রাতভর।

    এই ঘটনাকে সকল মিডিয়াসহ ওয়াকেবহাল মহল সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেউ দাঙ্গা বলেননি। বাংলাদেশে কখনো দাঙ্গা হয়নি। দাঙ্গা করতে দুই পক্ষ লাগে। দাঙ্গা সাধারণতঃ দুই বা ততধিক পক্ষের অমিমাংসিত বিরোধ নিয়ে ঘটে। দাঙ্গার পিছনে ইস্যূ থাকে –কখনো তা সামাজিক, কখনো রাজনৈতিক, কখনো ধর্মীয় এবং কখনো অন্য কিছু হতে পারে।

    রামুতে-উখিয়াতে-পটিয়াতে যা ঘটেছে সেখানে দ্বিতীয়পক্ষ একেবারেই মার খাওয়া পার্টি। তারা পালটা আক্রমণ করেনি। তাদের সে সামর্থ্য বা ইচ্ছে নেই। সুতরাং এটা দাঙ্গা ফ্যাসাদ জাতীয় ঘটনা নয়। এক তরফা সাম্প্রদায়িক হামলা।
    এই হামলা ঠেকানোর জন্য চেষ্টা করেছেন সেখানকার প্রগতিশীল মানুষ। তারাও মুসলমান।
    এরকম মানুষের সন্ধান রামু-উখিয়াতে পাওয়া গেছে।

    ১. শামীম ওসমান ভুলু–
    দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছে–মৈত্রী বিহারের তিনশ বছরের পুরনো লালচিং ও সাদাচিং মন্দিরে হামলার পাশাপাশি আশপাশের শ্রীকুল ও হাইটুপি গ্রামের বৌদ্ধ বসতিতেও হামলা হয়। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে মাঠে নামেন কক্সবাজার জেলা ন্যাপের নেতা ও শ্রীকুল গ্রামের বাসিন্দা শামীম ওসমান ভুলু। তিনি বলেন, মিছিল নিয়ে বসত বাড়িতে যারা হামলা করছিল তাদের বেশির ভাগই ছিল অচেনা। তাদের গ্রামের কাউকে ওই হামলায় অংশ নিতে দেখেননি বলেও জানান তিনি। হামলাকারীদের মধ্যে যারা বেশি বেপরোয়া ছিল তাদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
    এক হামলাকারীর ইটের আঘাতে তার মাথা ফেটে যায়। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা যোগে হাসপাতালে যাওয়ার পথে দেখেছি জীপ আর কক্সলাইনের বেশ কয়েকটি মিনিবাসে লাঠি-সোঁটা নিয়ে লোকজন রামুর চৌমুহনির দিকে আসছিল।’

    ২. প্রভাষক শাহ আলম–
    দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনার প্রভাষক শাহ আলমের কথা—‘১০ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে রাখলাম। একসময় দেখলাম, ওরা দল বেঁধে ধেয়ে আসছে। মনে হচ্ছিল আর পারব না। মন্দিরের ফটকে আমি ওদের পায়ে ধরি। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনল না। আমাকে মাড়িয়েই ওরা ভাঙচুর শুরু করে। ওদের পায়ের নিচে চাপা পড়ে আমি জ্ঞান হারাই।‘ কথাগুলো বলতে বলতে তিনি চোখ মুছলেন । উখিয়ার শত বছরের লেজুরকুল বৌদ্ধমন্দির ভাঙার সময় তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। তাঁর মতো আরেক প্রতিবাদী লেজুরকুলের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নুরুল কবীর। কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারেননি। রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে মন্দিরটি ভাঙচুর আর লুটপাট করা হয়।

    একই পত্রিকা লিখেছে–মরিচ্যা বাজারে গেলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ওই রাতে স্থানীয় জামায়াতের সদস্য মোহাম্মদ আলম, কায়সার আহমেদ, মনিয়া ভুলু, নুরুল আলমসহ কয়েকজন মিছিল বের করে মন্দিরে হামলা চালান।

    ৩. সেই মেয়েটি–
    ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ ইনাম আহমেদ ও জুলফিকার আলী মানিক সরেজমিন প্রতিবেদনে (৩ অক্টোবর) লিখেছেন
    মেয়েটির বয়স মাত্র আট বছর। মেয়েটি জানায়, তারা ভয়ে সুপারিবাগানে লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীদের ভয়ে। প্রতিবেদকদ্বয় তাকে প্রশ্ন করেন, কেন তোমাদের হত্যা করতে এসেছিল? কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, ‘আমরা যে বৌদ্ধ।’ এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেন তারা হত্যা করবে, তোমরা বৌদ্ধ বলে? মেয়েটি বলল, ‘হ্যাঁ।’ মেয়েটির চুল পরিপাটি ছিল, একদিকে লাল ক্লিপে আঁটা। কিন্তু চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। সারা রাত যে শিশুটি খাবার ও পানি ছাড়া খেতের মধ্যে লুকিয়ে ছিল, তার কাছে কেউ আশা করে না, সে ভালো থাকবে! কিন্তু তাকে শেষ প্রশ্ন ছিল, কে তোমাদে হত্যা করতে চেয়েছিল? ‘তারা মুসলমান’—মেয়েটি বলল।

    এই বালিকাটি সে রাতে যাদেরকে দেখেছে তারা মুসলমানদের পরিচয়েই এসেছিল। তারা নিশ্চয়ই শাহ আলম বা শামীম ওসমান ভুলু নামের মুসলমান নয়। তারা জঙ্গী মুসলমান।

    তাহলে দুধরণের মুসলমান পাওয়া গেলো। একদল আক্রান্ত বৌদ্ধদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের মাথা ফাটালেন। আরেকদল মুসলমান সেই মুসলমানের মাথা ফাটিয়ে অমুসলিম বৌদ্ধ পাড়ায় আগুন লাগাল। এবং সারা দেশে এই সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদের সোচ্চার হয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নাগরিকই। তাহলে এই ঘটনাকে বৌদ্ধদের উপর মুসলমানদের আক্রমণ বলার কোনো যুক্তি নেই। যিনি বলবেন তিনি সত্যকে পালটে দিতে চান। তার কিছু মতলব আছে।

    পটিয়াতে ওয়েস্টার্ন মেরিনে কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের একটা অংশ বৌদ্ধ মন্দির ভাঙ্গে। তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সদস্য। সিসি ক্যামেরাতে দেখে পুলিশ সনাক্তকৃত জামাতী সদস্য ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

    এরা জঙ্গী মুসলমান। এরা বাংলা ভাইকে তৈরি করেছিল। এরা সারা দেশে বোমাবাজী করেছিল। ১৯৯৯ সালে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল উদীচির সংস্কৃতি কর্মীদেরকে। সিপিবির মিটিংএ হত্যাকাণ্ড করেছিল। এরাই বানিয়ার চরে বোমা মেরেছিল চার্চে। প্রাণ হারিয়েছিল প্রভু যীশুর অনুসারীরা। এরাই বিচারকদের খুব কাছ থেকে খুন করেছিল। গাছে ঝুলিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল রাজশাহীর বাঘ মারাতে। তাদের উদ্দেশ্য সংখ্যালঘুমুক্ত বাংলাদেশ। উদার মুসলমানদের অনাধুনিক অন্ধকারের শাসনে পিষ্ট করা। এরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় মানুষ মেরে। কিন্তু ধর্মের কাজই হল মানুষকে রক্ষা করা।
    প্রফেসর সালাহউদ্দীন আহমদ লিখেছেন, অন্য ধর্মাবলম্বীকে আঘাত করা, তার ধর্মীয় আচারবিধি পালনে বাধা দেওয়া, তাকে নিজ গৃহে পরবাসী করে রাখাই ধর্মভিত্তিক কোনও রাজনৈতিক দলের অন্যতম মূল লক্ষ্য। তা না হলে তো তার পক্ষে নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব নয়। এ রকম কিছু দল বা গোষ্ঠীর মদদে এ দেশে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা বন্ধ করার চেষ্টা বরাবরই হয়েছে।

    ৪. চিন্তার দুটি রূপ –উদার ও জঙ্গীবাদী
    যে কোনো চিন্তারই দুটি রূপ থাকে। একটি উদার রূপ। আরেকটি জঙ্গী রূপ। উদার রূপটি যখন আম-মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে, তখন একদল ক্ষমতা লোভী জঙ্গীদের উত্থান ঘটে। জঙ্গীদের সঙ্গে উদার যুক্তি-প্রমাণ-প্রেমের সম্পর্ক থাকে না। সেখানে শক্তিই সকল ক্ষমতার উৎস। এই শক্তির প্রভাবে অন্যকে বাধ্য করার একটা প্রক্রিয়া চলে। ফলে সেখানে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। সেখানে হিংসা থাকে। প্রতারণা থাকে। ষড়যন্ত্র থাকে। সৃষ্টির বদলে ধংস থাকে। এই সকল কারণেই এই জঙ্গীরা অর্থ, শক্তি, অস্ত্র, ক্ষমতা, আঁতাত, গুপ্ত হত্যা, অন্তর্ঘাত, হামলা ইত্যাদি কাজের মধ্যে দিয়ে তাদের মতাদর্শকে অন্যের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

    এই কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এই জঙ্গীবাদীরা গ্রহণযোগ্য হয় না। এক সময়ে তাদের উগ্র জঙ্গীবাদকে জনগণ প্রতিরোধ করে। মানুষ শান্তি পাওয়ার জন্যই কোনো মতাদর্শ বা পথকে গ্রহণ করে। অশান্তির জন্য নয়। প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব বুদ্ধি আছে, বিবেক-বিবেচনা আছে, আছে গ্রহণ বর্জনের ক্ষমতা। সুতরাং এখানে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটাতে যারা আস্থা রাখে না-তারা সভ্যতাকে আস্বীকার করে বসে। তারা জঙ্গীদের নামে অশান্তি আনে। অশান্তি মানুষের কাম্য নয়।

    যে কারণে ভারত-ভুখণ্ডে যখন ব্রাহ্মণ্যবাদ যখন জঙ্গীরূপ ধারণ করেছে— তখন তাদের পীড়ণে অন্তজ হিন্দুরা সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছে। এই বৌদ্ধ জীবনে তাদের উপর যখন আঘাত এসেছে বৌদ্ধ ধর্মের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে তখন তারা উদার মুসলমান ধর্মকে গ্রহণ করেছে। এই উদারতার ধারাটি এসেছিল ইসলামের উদার ধারার সুফি-পীর-দরবেশ-ফকিরদের হাত ধরে। আবার যখন উদার ইসলামের বিপরীতে ইসলামের একটা ধারা উঁকি দিয়েছে জঙ্গী কোনো গোষ্ঠী/ শক্তি/ ঘরানা হিসেবে—তখন তাদেরকে রুখে দিয়েছে উদার ইসালামের অনুসারী মানুষ। একাত্তরই তার বড় প্রমাণ।

    সাতচল্লিশ থেকে একাত্তরে পাকিস্তানী জঙ্গীবাদী মৌলবাদী শোষক শ্রেণী যখন জোর করে এদেশের উদার পরিচয়-ভাষা-সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে বদলে দিতে চেয়েছে, তখনই এদেশের উদার মুসলমানরাই তাদেরকে বাতিল করেছে দিয়েছে। একাত্তরে যখন অমুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত গণহত্যা করেছে, উদার বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে মুসলমান বলেই স্বীকার করে নি–তাদেরকে হত্যা করেছে—তখন সবার আগে এই উদার মুসলমানরাই নিজের প্রাণ দিয়ে সেই ঘাতক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী জঙ্গী রাজাকার আল বদর আল শামস জামায়াতকে উৎখাত করে ছেড়েছে। তারপর ধর্মের সহজ সম্প্রীতির ধারাটি ফিরিয়ে এনেছে।

    ইতিহাস বলে, জঙ্গীবাদ কখনোই জয়ী হতে পারেনি। উদারপন্থাই চিরকাল বিজয়ী হয়েছে।
    এই জঙ্গীবাদী গ্রুপ হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ইহুদিসহ সকল ধর্মেই আছে। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প। সন্ত্রাসের সংজ্ঞা অনুসারে তারা আতংক সৃষ্টি করে সাময়িকভাবে উদার মানুষকে ভীত করে মাত্র। কিছুকাল বিশৃংখল সৃষ্টি করে। এর বেশী কিছু নয়। প্রকৃতি কখনও বিশৃংখলাকে পছন্দ করে না। তাকে উপড়ে ফেলে। মানুষের সভ্যতার ইতিহাসও তাই বলে।

    জঙ্গীবাদীরা অপশক্তি মাত্র। তারা প্রাণ নিয়ে, ঘৃণা দিয়ে ঈর্ষা দিয়ে দ্বেষ দিয়ে, হিংসা দিয়ে তারা কাজ করে। হিংসা কখনও মঙ্গল আনে না। মঙ্গলকে আনতে হয় ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে, স্নেহের মধ্যে দিয়ে, শ্রদ্ধার মধ্যে দিয়ে, সম্প্রীতির মধ্যে দিয়ে—ক্ষমার মধ্যে দিয়ে। তবে খল কখনো ক্ষমার যোগ্য হয় না। এই বৈপরীত্য খলেরই তৈরি।

    ৫. বাংলাদেশে কী জঙ্গী মুসলমান প্রকৃত সমস্যা–
    বাংলাদেশের নাগরিকের ৯০% মুসলমান। এখানে মুসলমান সম্প্রদায় ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছে দীর্ঘকাল থেকে। তারা চিন্তা ও চর্চার দিক থেকে উদার। এ কারণে তারা নামাজ পড়ে—আবার রবীন্দ্র সঙ্গীতও শোনে। রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠার জন্য জঙ্গী মুসলমানদেরকে রুখে দাঁড়ায়। লালন ফকিরকে জঙ্গী হিন্দুরা তার জীবিতকালে ত্যাগ করেছে। জঙ্গী মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছে। জঙ্গী হিন্দু-মুসলমান উভয় গ্রুপই লালনকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেছে। লালন তার গানে স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন তিনি হিন্দুও নন–তিনি মুসলমানও নন। তিনি সহজ মানুষ। এই সহজ মানুষ লালনকে এদেশের উদার মুসলমান আপন জন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে হিন্দু বা মুসলমানত্ব খুঁজতে যাননি।

    এই সহজ মানুষের প্রতিভু উদার মুসলমান প্রধান বাংলাদেশে জাতি ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায় নির্বিশেষে কোনো মানুষই বিপন্ন হবে না—আর ইসলাম বিপন্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না। যে দেশে ৯০% উদার মুসলমানের বাস সেখানে ইসলাম বিপন্ন হয় কী করে? এবং সেখানে নতুন করে ইসলাম কায়েমের কোনো দরকার আছে কি? ইসলাম তো কায়েম আছেই। সমাজে, প্রশাসনে, ক্ষমতায় সর্বত্রই ইসলামের অনুসারীরা আছেন। তাহলে জঙ্গীবাদের মাধ্যমে কোন ইসলাম কায়েমের জন্য অস্ত্র ধরে? বোমা মারে? বিচারকদের হত্যা করে? অমুসলমানদের বাড়ি ঘর মন্দির চার্চ জ্বালিয়ে দেয়?

    এদেশে সংখ্যা লঘিষ্ঠ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান যারা বসবাস করেছেন তারা নিতান্তই নীরিহ। এ কারণে দাঙ্গা বলতে যা বোঝায়—দুদলের সহিংস মারামারি সেটা ১৯৪৭ সালের পর থেকে কখনো হয়নি। এক তরফা জঙ্গীদের হাতে সংখ্যা লঘুরা মার খেয়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তারা দেশ ত্যাগ করেছে মাত্র। কখনো পালটা আঘাত করেনি। সংঘবদ্ধ হয়নি। হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ উদার মুসলমান তাদেরকে জান দিয়ে রক্ষা করছে। নিজে বিপন্ন হয়ে তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছে।

    কিন্তু এই জঙ্গীদের মুখপাত্ররা বলার চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদি হিসেবে প্রচার করে বাংলাদেশকে এক ভয়ংকর বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

    ৬. জঙ্গী প্রচারণার স্বরূপ–
    ৪ অক্টোবর, ২০১২ তারিখে একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক নয়া দিগন্তে। লিখেছেন ফরহাদ মজহার। নাম—বৌদ্ধ মন্দির ও জনপদের আগুনে বাংলাদেশও ছাই হয়ে যেতে পারে। এই কথাটির পেছনে একটা সান্ধ্য ভাষ্য আছে। যে জনপদে এই সব ঘটনা ঘটেছে সেখানে আগুনদাতাদের আগুনে, না, যাদের ঘর আগুনে পুড়েছে তাদের অভিশাপের আগুনে বাংলাদেশ ছাই হয়ে যেতে পারে এটা পরিস্কার করে বলেননি। ইঙ্গিতটা বুঝতে ফরহাদ মজহারকে একতু বিস্তারিতভাবে খুঁজে দেখতে হবে।

    ফরহাদ মজহার বলছেন—
    রামু উখিয়া ও পটিয়াতে ঘটে যাওয়া বৌদ্ধদের উপর হামলা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ভারতের দাস। তারা ভারতীয় পরিকল্পানা বাস্তবায়ন করতেই রামু, উখিয়া, পটিয়াতে বৌদ্ধদের উপর হামলার নাটক করে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারত চায়— এটা প্রমাণ করা যে–
    ক) বাংলাদেশে মুসলমান ছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্ম নিরাপদ নয়।
    খ) বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে ভারতের জনগনের শত্রুতে পরিণত করা।
    গ) ইসলাম যে মূলত বর্বরদের ধর্ম তার পক্ষে প্রমাণ হাজির করা।
    ঘ) বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের সম্ভাবনা নস্যাৎ করা। এ কাজটি ভারতের হয়ে করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

    তিনি আওয়ামী লীগকে এই হামলার জন্য দায়ী করার পাশাপাশি গালি দিয়েছেন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল শক্তিকে। তিনি বলেছেন এই সব ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতার বদলে কোন রাজনীতিটা দরকার যা রাষ্ট্রের সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সকল নাগরিককে রাষ্ট্র সমান চোখে দেখবে–সেটা তিনি বলেন নি। কিন্তু জামায়াত, বিএনপি, জঙ্গী মৌলবাদীদের পক্ষে তার সুস্পষ্ট অবস্থানটা বলে দিচ্ছে—তিনি জঙ্গী মৌলবাদের আদর্শটাই চান—যেখানে রাষ্ট্রে কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের দ্বারা শাসিত হবে। এদেশে অমুসলিমদের কোনো বসবাসের সুযোগটা থাকবে না। মন্দির পাগোডা চার্চগুলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। অমুসলিমদের জিজিয়া কর দিতে হবে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিকে তুলে দিতে হবে। গণতন্ত্র থাকবে না। বাকস্বাধীনতা বলে মানুষের অধিকার আছে–এটা করা হবে অস্বীকার।

    তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একাত্তরের পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে পুনর্মিত্রতা করুক। কারণ আমাদের চারিদিকে হিন্দু ভারত ঘিরে ফেলেছে। শুধু ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদি শাসক শ্রেণীই নয়—এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে ভারতের জনগণ। তারা যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে বাংলাদেশকে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সদা প্রস্তুত। তিনি মনে করেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে পুনর্মিত্রতা গড়ে তোলা।

    ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত যখন এদেশের হিন্দুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল, লুটপাট করেছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি, নির্মমভাবে মেরেছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে—তখন এই ফরহাদ মজহার কলাম লিখে বলেছিলেন—এটা মিডিয়ার বানানো গপ্প। আওয়ামী লীগের চক্রান্ত। ইত্যাদি। বছর দুই আগে সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে—পত্রিকায় দেখেছি। সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এটা মিডিয়ার বানানো গল্প নয়—সত্যি। পূর্ণিমা রানীকে হিন্দু হিসেবেই ধর্ষণ করা হয়েছিল। এবং তারা ছিল জামাত-বিএনপি নামে মৌলবাদী শক্তি। সেই পূর্ণিমা রানীকে শেল্টার দিয়েছিলেন এক জন মুসলমান সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।

    ৭) সূত্রসহ ফরহাদ মজহারের এ ধরণের বক্তব্য –
    মজহার লিখেছেন—
    ক) বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ী মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি– জামায়াতী ইসলামী নয়। কারণ ধর্ম তার বাইরের জিনিস নয়, তার ভেতরের জিনিস। ওটা তার ব্যবসা নয়, বা ধর্ম দেখিয়ে সে লোকের মন জয় করতে চাইছে না। বরং ধর্ম প্রতিষ্ঠা করাই সে তার কর্তব্য বলে মনে করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন জামায়াতের বিরুদ্ধে জাহানারা ইমাম গণ-আদালত করেছিলেন—তা ছিল একটা তামাশা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আচরণ হল ইঁদুরের মত। ( ফ.ম. সরল পাঠ। প্রথম আলো, জুলাই ২২, ২০০০)।

    খ) নাম না জানা যেসব ইসলামী দল—যাদের আদর্শ-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা বিশেষ কিছুই জানি না—তাদের হাতে যখন বোমা-বারুদ চলে আসে তখন সাধারণভাবে বুঝতে হবে এটা ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাজ। এটা সাধারণ প্যাটার্ন। ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ইস্রাইল-ভারত-মার্কিন নিরাপত্তা আঁতাতের কারণে উপমহাদেশের নব্বই দশকের শেষ বছর বছরগুলো এ ধরনের তৎপরতা আমরা বাংলাদেশে লক্ষ্য করছি। ( সুত্র. দৈনিক যুগান্তর, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আসল প্রশ্ন, ফরহাদ মজহার, ২৮ আগস্ট, ২০০৫)।

    গ) যারা ইসলামী জঙ্গীবাদ নিছকই একটা সন্ত্রাসী ধারা হিসেবে বিরোধিতা করছেন এবং ইসলামকেই সবকিছুর জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে দায়ী করে নিজেদের সেক্যুলার প্রমাণ করতে চাইছেন, তারা শুধু চিন্তার দিক থেকে সংকীর্ণ নন, অবাস্তবও বটে। ( সুত্র, ঐ)।
    ঘ)২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে ফরহাদ মজহার লিখেছিলেন– মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের দিন বহাল রাখে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। ( সুত্র. নিঃশব্দ নির্বাচনী ‘বিপ্লব’ –এর মর্ম কী বিএনপি বুঝবে?, দৈনিক যুগান্তর, ৩ অক্টোবর, ২০০১)।

    ঙ) ২০০১ সালে অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে সারা দেশে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছিল, তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই সেটার সত্যতা মিলেছে, সে সম্পর্কে লিখেছেন— সংখ্যালঘুর উপর হামলার কোন সংগত কারণ এই নির্বাচনোত্তর (২০০১ সালে) পরিস্থিতিতে নেই। তিনি জানান—আওয়ামী লীগের পক্ষের লোকজনই ‘আমাদের জিততে দিলি না কেনো’ বলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেছে। (সুত্র.বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের ব্যাবহার এবং আমাদের কর্তব্য, ফরহাদ মজহার, দৈনিক যুগান্তর, ৮ অক্টোবর, ২০০১)।
    ২০০১ সালের অক্টোবরের সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবরাদি প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায়। সেগুলোর কোনোটিই ফরহাদ মজহার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন নি। কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন—উক্ত পত্রপত্রিকাগুলো আওয়ামীপন্থী এবং সাংবাদিকতার দলবাজি করাই তাদের খ্যাতি। তিনি অভিযোগ করে লিখেছেন—গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও সরকার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দলবাজ সাংবাদিকতা কী পরিমাণ ক্ষতি করে বাংলাদেশ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি এই সাংবাদিকতাকে ন্যাক্কারজনক হিসাবে ধিক্কার দিচ্ছেন। এটাকে বাংলাদেশের জন্য খারাপ খবর বলেছেন। এইখান থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে, তার কাছে এই সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়টি নিন্দনীয় নয়।

    চ) মানুষের যদি জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকে, বেঁচে থাকার জন্য খুন, রাহাজানি, অপহরণ তো হবেই। ( সুত্র. বোমা হামলাকারীদের পক্ষে ফরহাদের সওয়াল, গণঅনাস্থা প্রাচীর : জোট সরকার ও আওয়ামী লীগ উভয়ের প্রতিই অনাস্থা, ২ এপ্রিল, ২০০৪, দৈনিক প্রথম আলো)।
    ছ) সরলপাঠ নামে কলামে দৈনিক প্রথম আলোতে ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফরহাদ মজহার লেখেন, কাউকে আঘাত না দিয়ে, অপমান না করে, ভারতের শাসক শ্রেণীর চুনোপুঁটি এজেন্ট না হয়ে, আমাদের সকলেরই স্বার্থে পাকিস্তানের আরো কাছাকাছি আসা উচিত। সেক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে পুনর্মিত্রতা করা দরকার বলেও মেহেরজান নামে একটা সিনেমার আলোচনায় জোর দাবী তোলেন।
    জ) বাংলা ভাই মিডিয়ার তৈরি। সে সন্তাসী নয়—অপরাধী নয়। তার কাজটিকে মতাদর্শিকভাবে দেখতে হবে। এই জঙ্গীরা জঙ্গী হলে নেপালের মাওবাদীদেরকেও জঙ্গী অপরাধী বলতে হবে,। ( সুত্র. সদর রাস্তা, ফরহাদ মজহার, ১২ মে, দৈনিক যুগান্তর, ২০০৪)।

    ঝ)) একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সোচ্চার শাহরিয়ার কবীরকে বিএনপি-জামাত জোট গ্রেফতার করেছিল এই সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কিত খবরাখবর প্রকাশের দায়ে। তাকে বিদেশী এজেন্ট, গুপ্তচর এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজে পারদর্শী হিসাবে অভিহিত করেছিলেন সরল পাঠ কলামে ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছিলেন, তাকে গ্রেফতার করা ছিল সরকারের একটি ভুল কাজ। কেন ভুল—সেটা স্পষ্ট করে বলেন নি। তবে স্পস্টভাবে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন–রাষ্ট্রে কাউকে গুপ্তচর, বিদেশী এজেন্ট, অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম করে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । তার এই স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিতটা কিন্তু বলে যে শাহরিয়ার কবীরকে গ্রেফতার না করে মেরে ফেলাটাই সরকারের জন্য ঠিক কাজ হত । ফরহাদ মজহার বলেছেন—শাহরিয়ার কবীর আধিপত্যবাদি ভারতের শাসক শ্রেণীর হয়ে ভাড়া খাটছেন। তিনি বলেছেন–আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে খবর, মত,সাংস্কৃতিক ধ্যান ধারণার সংগ্রাম অত্যন্ত মুখ্য। তার কাছে এটা মতাদর্শিক সংগ্রাম। ফরহাদ এটাকেই শ্রেণী সংগ্রাম বলে দাবী করছেন। মার্কসবাদের যাদের ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারা জানেন–’মার্কসীয় তত্ত্বে শ্রেণী শব্দের প্রধান ব্যবহার অর্থনৈতি ব্যবহার। জীবনধারণে সম্পদের মালিকানা এবং অ-মালিকানার ভিত্তিতে কোনো সমাজের মানুষকে চিহ্ণিত করার তত্ত্বটি মার্কসের শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্ব। আর এ দুয়ের সংগ্রামই শ্রেণীসংগ্রাম। বিএনপি-জামাতকে নিয়ে কোন ধরনের শ্রেণী সংগ্রাম হয়? কোন অর্থে বিএনপি-জামাত শোষিত শ্রেণী আর আওয়ামী লীগ শোষক শ্রেণী!

    শাহরিয়ার কবীর ঘরাণার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবিদের সম্পর্কে মজহার বলেছেন, তাদের রয়েছে চিন্তাশীলতার অভাব, রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে অপরিপক্ক ও অপিরণত ধারণা, নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে অশিক্ষা। এই কারণেই এইসব বুদ্ধিজীবিরা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফরহাদ মজহার এরপর ঘোষণা করেন—বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রবণতা দেশ ও দশের স্বার্থ বিরোধী।

    ঞ) ২০০৪ সালের ১৭ আগস্টের হামলাকারীদের যদি সন্ত্রাসী বলি তবে আমাদের ৫২, ৬৬, ৬৯ বা ৭১ এর আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বোমাবাজি সন্ত্রাস- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এই কথা বলেন।

    তিনি বলেছেন- তবে যারা সমাজকে বদলাতে চায় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলবো কেন? যারা ইসলামের নাম নেয়, কট্টরপন্থী রাজনীতির মাধ্যমে সমাজকে বদলাতে চায়, আমরা তাদের সন্ত্রাসী বলছি। অথচ আমরা বুশ-ব্লেয়ারকে বলি না যে, তারা খারাপ কাজ করছে। … আগস্টের বোমা হামলাকে প্রথাগত সন্ত্রাস বলা যায় না। … অনেকে বলেন ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। আমি এটার সাথে একমত নই। ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে। (দৈনিক সংবাদ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৫)।

    ট) একাত্তরে ইসলাম পরাজিত হয়েছিল। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় ভোটে জিতেছিল। জনগণও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ফ্যাসিবাদী হয়ে গিয়েছিল। (ফরহাদ মজহার, ভাবান্দোলন, মোকাবেলা, কলাম)।

    ঠ) বাঙালী জাতীয়তাবাদ একটি ফ্যাসীবাদী চেতনা। এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের সৃষ্টি। মুসলমান আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চেতনা এদেশের মানুষকে ভারতের দাসে পরিণত করতে চায়।

    ড) রবীন্দ্রনাথ হিন্দু সাম্প্রদায়িক। তিনি মুসলমানদের কলাটা-মূলাটা-মাখনটা খেয়ে-পরে নাদুস-নুদুস হয়েছেন, কিন্তু মুসলমানদের জন্য এক কলম লেখেননি। এমনকি মুসলমান মুঘলদের শব্দ ‘বাঙ্গালা’কে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে হিন্দুয়ানী বানান বাংলা করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ বানানটাই রবীন্দ্রনাথের হিন্দুত্ববাদের প্রমাণ। ইত্যাদি। (রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্র পাঠ, ফরহাদ মজহার)
    (ভাবান্দোলন, ফ.ম.)।

    ৮) ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম –নিজামীদের বক্তব্যের মিল—
    ক) ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযম এক সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতিকারী হিসেবে অভিহিত করেন।

    খ) ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযম বলেন, পুর্ব পাকিস্তানের সোসালিস্ট ও কম্যুনিস্টদের উপদল বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ধজাধারী সেজে তাদের চিন্তানায়কদের গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। তার মোকাবেলা করতে হলে সরকারী ও বেসরকারী সকল মহল থেকে এসব মহলের পরিচালকদের তালাশ করে বের করতে হবে।

    গ) ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গোলাম আযম বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের মীরজাফরী ভারতের দুরভিসন্ধির হাত থেকে (পাক) সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে। … (মুক্তিযোদ্ধা নামে) দুষ্কৃতিকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের কাজ পুর্ব পাকিস্তানের সরলমনা জনগণকে ভয় দেখিয়ে তাদের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করার জন্য এরা ফ্যাসীবাদী পন্থা অবলম্বন করেছিল।

    ঘ) ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গোলাম আযম বলেন, বৃটেনে বসবাসরত পুর্ব পাকিস্তানী মুসলমান্দের মধ্যে তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যেসব চক্র মুরব্বির ভূমিকা পালন করে তারা বেশীর ভাগই হচ্ছে—ইহুদি সম্প্রদায়ভুক্ত এবং ভারতীয় হিন্দু। বাংলাদেশ আন্দোলনকে পুর্ব পাকিস্তানীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। বৃটিশ পার্লামেন্ট হৈ চৈ থেকে শুরু করে ইহুদী প্রভাবিত সব পত্রিকাগুলোর একটানা পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণা, রিলিফ সংস্থা গঠনের নামে গুপ্তচরবৃত্তি এবং ভারতীয় এজেন্ট ও অনুপ্রবেশকারীদের নানাভাবে উৎসাহিত করা সবই এই ষঢড়যন্ত্রের অন্তর্গত।

    ঙ) ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে হিন্দু-ইহুদী পরিকল্পিত বাংলাদেশ নামীয় সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, এক খবরে জানা গেছে ওপারের বাবু মার্কা বাংলাদেশীদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’ গঠনের সমস্ত ব্যয়ভার ইসরাইল বহন করবে বলে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবা ইবনে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।। আবা ইবনে ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছেন, উক্ত সেনাদলকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ইসরাইল নিজের সামরিক বিশেষজ্ঞদের হিন্দুস্তানে প্রেরণ করবে এবং সকল প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র, বিমান, ট্যাঙ্ক,কামান ও গোলাবারুদ সরবরাহ করবে।।… হিন্দুস্তানের পুতুল বে-আইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের স্বজাতিদ্রোহী নেতৃবৃন্দের সাথে পূর্ব থেকেই ইসরাইলের লক্ষ্যগত ঐক্য ছিল। শেখ মুজিবের ‘ বাংলাদেশ’ ছিল আসলে হিন্দু-ইহুদিদের বাংলাদেশ।

    চ) পুর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদন নম্বর ৫৪৯ (১৫৯) পল. এস (আই)তে দেখা যায় (১৯৭১ সালের) আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন, হিন্দুরা মুসলমানদের অন্যতম শত্রু। তারা সবসময় পাকিস্তানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে।

    ছ) পাকিস্তানীদের জাতীয় আদর্শ ভিত্তিক সংস্থাগুলোই ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষে সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং সমাজতন্ত্র বা ধর্মনিরিপেক্ষতার সমর্থকরা বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। … যখনই তাদের (ধর্মনিরপেক্ষবাদী) হাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব অর্পিত হবে তখন এদেশের অস্তিত্বই খান খান হয়ে যাবে। এখানকার কোটি কোটি মুসলমানকেও বিজাতীয় চরদের হাতে জীবনাহুতি দিতে হবে। তার বড় প্রমাণ হচ্ছে হিন্দু ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের প্রচারক আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজতন্ত্রী ভাসানী-মোজাফফর তাদের অনুসারীদের অসহযোগ আন্দোলন যার শিকার হয়ে এদেশের নারী-পুরুষ শিশুর রক্তে লাল হয়েছে। (সুত্র ঐ)।

    জ) ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২ মতিউর রহমান নিজামী বলেন (একাত্তরে)স্বাধীনতার নাম দিয়ে ব্রাহ্মণ্য সাম্রাজ্যবাদের দালালরা হিন্দুস্তানে অন্তুর্ভুক্তির আন্দোলন শুরু করেছিল।

    ঝ)ভয়ংকর জঙ্গী বাংলা ভাই মিডিয়ার তৈরি। ( মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আমীর, জামায়াতে ইসলামী)

    ট) ২০০৪ সালের ১৭ আগস্টের বোমা হামলা মোসাদের কাজ। (মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আমীর, জামায়াতে ইসলামী)।

    ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের সারাংশ হল—জঙ্গীবাদ একটি বিপ্লবী পদ্ধতি (এই বিপ্লবটা কার জন্য, কাদের জন্য?), বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ব্রাহ্মণ্যবাদের সৃষ্টি, আওয়ামী লীগ আধিপত্যবাদী ভারতের দাস এবং ফ্যাসীবাদী শক্তি, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে যা ঘটেছে এবং ঘটে যদি থাকে তা আওয়ামী লীগের কাজ, জামায়াতে ইসলামী ফ্যাসীবাদী নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির দরকার নেই, জঙ্গীদের জঙ্গী বলা যাবে না, বললে বাংলাদেশকে বিদেশীরা নিয়ে যাবে ইত্যাদি।

    ফরহাদ মজহারের চিন্তা ও তৎপরতার সঙ্গে একাত্তরের পাক-বাহিনীর ঘাতক জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যের মিল থেকেই তার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যেটা বোঝা যায়। দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত তার লেখাটার শিরোণাম দিয়েছেন- তাহলে, বৌদ্ধ মন্দির ও জনপদের আগুনে বাংলাদেশও ছাই হয়ে যেতে পারে। সে আগুনটা কে লাগাবে? সেটা বলার দরকার নেই। সেটা ফরহাদ মজহার আগেই বলে রেখেছেন। তিনি বলেছেন–এই আগুন যারা জ্বালে তারা জীবন-জীবিকার লড়াই করছে। তারা আদালতের কাছ থেকে ন্যায্য বিচার পাচ্ছে না। তাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত করছে। তিনি এই জঙ্গীবাদকে সমর্থন করেন। কারণ ইসলাম জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে। সে আগুন এই জঙ্গীরা লাগাবে।

    কিন্তু ফরহাদ মজহার জানেন না, সে আগুন প্রকৃত উদার মুসলমানরাই নেভাবে। একাত্তরে প্রাণ দিয়ে তারা পাকিস্তানীদের জ্বালানো আগুন নিভিয়েছিল। কারণ মানুষ অমানুষের বিপরীতে দাঁড়ায়। তারা ধর্মের স্বাধীনতা চায়। আবার মর্মের স্বাধীনতাও চায়। এই মর্ম জঙ্গীত্বের নয়। এই মর্ম সহজ মানুষের সম্প্রীতির। হিংসার নয়–ভালোবাসার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন