এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

    Somen Dey
    অন্যান্য | ১৭ জুলাই ২০১২ | ১২৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somen Dey | 125.187.49.124 | ১৭ জুলাই ২০১২ ১৭:৩৬567088
  • কোনো এক মনোরম সন্ধায় যখন মৃদু মন্দ বাতাস বইছে আর আকাশে পূর্ণ ইন্দু বিরাজ করছে , আপনি কিঞ্চিৎ উদাস মনে - আমি যামিনী তুমি শশী হে গাইতে গাইতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালেন আর তখনি আপনার নজরে পড়লো ঠিক চাঁদের তলায় স্ক্রল করে কি যেন লেখা ফুটে উঠছে - একটু লক্ষ করতে পড়তে পারলেন - জোৎস্নালোকের এই অংশটুকুর প্রায়োজক অমুক ব্রান্ডের মলম - যা দাদ ও চুলকানি থেকে আপনাকে দেয় দ্রুত মুক্তি ....
    আপনার রোমান্টিকতা ঘুচে গেল বটে কিন্তু আপনার মস্তিস্কে একটি মলমের নাম প্রবিষ্ট হয়ে গেল।
    না , ঠিক এ রকমটা এখনো ঘটে নাই সত্য , তবে ঘটাটা বোধহয় খুব অসম্ভব নয়। কারন যেখানেই আপনার চোখ পড়ে বা পড়তে পারে , যে শব্দই আপনার কান ধারন করতে পারে , সেখানেই আক্রমন করছে বিজ্ঞাপন। পালাবার পথ নেই । যতক্ষন ঘুমিয়ে আছেন ততক্ষন রক্ষে (ভাগ্যিস নিদ্রিত অবস্থার স্বপ্ন গুলোকে ওরা এখনো কব্জা করতে পারেনি ) ।চোখ খুললেই চোখে পড়বে অথবা কানে ঢুকবে বিজ্ঞাপন।
    বিজ্ঞাপনের কাজ ক্রেতার মগজকে কোনো এক ব্যবসায়িক প্রস্তাবের দিকে প্রভাবিত করার উদ্দেশে ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। উদ্দেশ্য কিছু খারাপ নয় । আপাত দৃস্টিতে এর মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। আপনি বলতেই পারেন - একটি কার্নিভোরাস গাছ এক বিশেষ ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে এবং পতঙ্গকে হত্যা করে নিজের খাদ্যে রুপান্তরিত করে এর মধ্যে অন্যায় কোথায় ? কিম্বা একটি মাকড়সা প্রায় অদৃশ্য জাল বিছিয়ে অপেক্ষায় বসে থাকে। এক সময় কোনো কীট পতঙ্গ জালে আটকা পড়ে এবং মাকড়সা তার জৈব ক্ষুধা নিবৃত্ত করে , এটা কি অন্যায় ?
    কোনো মতেই নয় , কারন ঐ কার্নিভরাস গাছ বা মাকড়সা এ ভাবেই তাদের জীবন ধারন করে।
    আজকের বাজার অর্থনীতিতে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের কেও না কেও কিছু না কিছু বিক্রি করার চেস্টা করছে কারন ঐ বিক্রিটা না করতে পারলে তারা বাঁচবেনা। আমরা ঐ কীট পঙ্গের মত আর তারা আমাদের খাদক। তাই তারা প্রতি নিয়ত চেস্টা করছে আমাদের মনোযোগ , আমাদের অর্থ , আমাদের সময় এবং আমাদের চিন্তাশক্তি কেড়ে নেওয়ার । তাই এই বিজ্ঞাপনের যুদ্ধে আমরা শিকার হচ্ছি।

    যদিও বিজ্ঞাপন ব্যাপারটা পৃথিবীতে এসেছিল খুব নির্দোষ ভাবে। মধ্যযুগে এশিয়া আফ্রিকা ও দক্ষিন আমেরিকায় ভাষাবিহীন মানুষেরা গুহাচিত্র এঁকে অন্যদের জানান দিত তার বাসস্থান থেকে কোনো কাজে কিছুদিনের জন্যে দুরে চলে যাওয়ার কথা। । পরে মুচি , মিস্তি , দোর্জি এরা ছবি এঁকে জানাতো নিজেদের বৃত্তির কথা। এইগুলিই সম্ভবত আদীমতম বিজ্ঞাপন।
    অস্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে প্রথম কাগজে বই বিক্রীর বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। কিছুদিন পরে আমাদের দেশে হিকিজ বেঙ্গল গেজেটে অনুরুপ বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের কোম্পানি খুলতে থাকে । কাগজে নানা ধরনের সামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হয়। ১৯৪১ সালে প্রথম লাক্স সাবান তখনকার বিখ্যাত অভিনেত্রী লীলা চিটনিসকে দিয়ে এনডোর্সমেন্ট প্রথা শুরু করে।
    ষাটের দশকে বিভিন্ন বিদেশী বিজ্ঞাপন কোম্পানি ভারতে ব্যাবসা আরম্ভ করে। ১৯৬৭ সালে বিবিধ ভারতীতে প্রথম ব্যাবসায়িক বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে দেশে টেলিভিশন এল এবং ১৯৭৮ সালে প্রথম টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখা গেল। ১৯৮২ তে দিল্লি এশিয়াডের প্রাকালে টেলিভিশন রঙ্গীন হল। প্রথম রঙ্গীন বিজ্ঞাপনে তৈরী করলো বোম্বে ডাইং। ১৯৮৪ তে ভারতের প্রথম ' সোপ অপেরা' বা টেলিভিশন ধারাবাহিক শুরু হল । বলা যেতে পারে ভারতে শুরু হয়ে গেল বিজ্ঞাপনের যুদ্ধ ।
    আর এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে টিভি খুললেই বিজ্ঞাপনের পর বিজ্ঞাপন দেখে যখন আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন ক্ষনিকের জন্য আপনি আপনার কাঙ্খিত অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন , তারপর আবার দেখুন বিজ্ঞাপনের আক্রমন। শুধু টি ভি তো নয় আপনি যে দিকে তাকাবেন - বাড়ির দেওয়ালে , উঁচু বাড়ির ছাতে , ট্রামে বাসে ট্রেনে , টি সার্টে , টুপিতে কোথাও বাদ নেই ।
    মাঝে মাঝে হয়তো আপনার অন্তরাত্না হয়তো ক্ষেপে গিয়ে বলে ওঠে হা ঈশ্বর আমাকে একটা বিজ্ঞাপন বিহীন দিন দিতে পারো ?

    না , এটা বোধহয় ঈশ্বরের এলাকার বাইরে। আর ঈশ্বরও তো এখন কিছু কম বিজ্ঞাপিত হন না। কোনো কোনো মন্দিরের দেবতা নাকি খুব জাগ্রত ( অন্য মন্দিরে কি দেবতা ঘুমন্ত ? ) । এমন ধারনা তো বিজ্ঞাপনেই তৈরী হয় ।

    প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন আমাদের যা বোঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে , এই দেশের গড় পড়তা মানুষ তাতে কিছুটা তো বিশ্বাস করেই ফেলছে । বিশেষ করে অল্প বয়সের ছেলে মেয়েরা।
    প্রথম কথা কোনো পন্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে যে বিপুল পরিমানে খরচা হয় তার দাম তো আসলে সাধারন মানুষই দেয় । এক বোতল কোক নাকি দেড় দু টাকায় বিক্রী করা যেত যদি না বিপুল পরিমান অর্থ বিজ্ঞাপনে ব্যায় করতে হত,।
    দ্বিতীয়ত বিজ্ঞাপনে যে সব আজগুবি দাবি করা হয় তা অনেক সময় একেবারে মিথ্যা । কিন্তু বার বার এই মিথ্যা চোখের সামনে দেখতে দেখতে এতাই জনগনের ধারনা হয়ে যায়।
    তৃতীয়ত বিজ্ঞাপন মানুষের লোভ কামনা বাসনা কে উসকানি দেয় । ক্রয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে মানুষ কে অপ্রোয়জনীয় বিলাস দ্রব্য কিনতে প্ররোচনা দেয়।তাতে করে মানুষ আরো দু`্র্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে ।

    সবচেয়ে বিপদজনক হচ্ছে যৌনতাকে অপব্যবহার করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা। এমন ভাবে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় যাতে মনে হয় ম্যাসকুলাইন শরীর বিশিষ্ট পুরুষ এবং সেক্সি শরীর বিশিষ্ট নারী হওয়াটাই শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষন । আর সব গুন মূল্যাহেন ।
    কখনো বোঝানো হয় চমৎকার ভাবে মিথ্যা কথা বলাটাই আসল স্মার্টনেস । একটি বিশেষ ব্রান্ডের মিন্ট খেলে এমন দিমাক কি বাতি জ্বলে যায় যে টিচারকে অনায়াসে ঠকানো যায় বা বাড়িতে আসা অতিথি কে কায়দা করে তাড়িয়ে দেওয়া যায়। এ সব শিশুরা দেখে তেমন করেই ভাবতে শেখে ।

    এ পর্যন্ত লিখে মনে হচ্ছে আমি শুধুই বিজ্ঞাপনের নিন্দাই করে যাচ্ছি । তা হলে সব বিজ্ঞাপনই কি খারাপ ? মোটেই না । আমি জানি বিজ্ঞাপনও একটি আর্টের ফর্ম এবং এখনকার শক্তিশালী মেডিয়া দ্বারা বিজ্ঞাপন কে অনেক সদর্থক ভাবে ব্যাবহার করা যায়। এক সময় সত্যজিৎ রায়ের মত মানুষ ও বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । আমরা বহু ভালো বিজ্ঞাপন দেখেছি ও এখনো দেখছি ।

    পরে কোনো সময় বিঞ্জাপনের সৃজনশীল ও নান্দনিক দিকটি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
    শঙ্খ ঘোষ অনেক দিন আগে সেই বিখ্যাত কবিতায় লিখেছিলেন - 'মুখ ঢেকে যায় বিঞ্জাপনে ....... '
    এখন শুধু মুখ নয় - সব ঢেকে যায় বিঞ্জাপনে । আমাদের ভাবনার পরিসর , আমাদের চিন্তার মুক্তাচল , আমাদের চেতনার আকাশ - সব গ্রাস করার চেস্টা করছে বিজ্ঞাপন।
    সুতরাং সাধু সাবধান ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন