এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এবং সৌন্দর্য্য

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৬৯ বার পঠিত
  • ললনার সৌন্দর্য্য বা নারীর সৌন্দর্য্য। সৌন্দর্য্য বলতে প্রথমেই আমাদের মনে এইধরনের সৌন্দর্য্যের কথাই আসে। সৌন্দর্য্য কথাটি নারীর সাথে বা ললনার সাথেই মানানসই হয়। নারী বলতে সমগ্র নারী বা মহিলা জাতিকেই বোঝায়। আর ললনা বলতে স্ত্রী বা রমণী বোঝায়। অর্থাৎ শুধু নারী হলেই চলবে না তাকে স্ত্রী বা রমণী হতে হবে। এখন কোন সৌন্দর্য্য বেশী, সমগ্র নারী জাতির না শুধু ললনাদের, এটাই প্রথম প্রশ্ন। বিবাহের পরে অর্থাৎ বিবাহিত নারীর সৌন্দর্য্য কি বেশী হয়? বিভিন্ন দেশের নারীদের সৌন্দর্য্য বিভিন্নরকম, হয়তো সৌন্দর্য্যের পেছনে জলবায়ুর বা পরিবেশের কোনো অবদান রয়েছে। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্থান প্রদেশের হুনজা গ্রামের মেয়েদের সৌন্দর্য্য পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী। এই হুনজা গোষ্ঠীর লোকেদের গড় আয়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী (১২০ বছর), জাপানিদের চেয়েও বেশী। এই গোষ্ঠীর লোকেদের কর্মক্ষমতা যেমন বেশী তেমনি নারীদের সৌন্দর্য্য অনেকের মতেই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। এছাড়াও ইতালী, ব্রাজিল, তুরস্ক, ইউক্রেন, ভেনিজুয়েলা, সুইডেন প্রভৃতি দেশের নারীদের সৌন্দর্য্য পৃথিবীখ্যাত। আবার সৌন্দর্য্য বলতে গেলে ভালো লাগার বিষয়। একজন যে সৌন্দর্য্যের তারিফ করেন অন্যজন তা নাও করতে পারেন। একজন যে সৌন্দর্য্যের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পারেন, দেবদাস হতে পারেন অন্যজনের সেটা নিতান্তই বাতুলতা মনে হতে পারে। সুতরাং বলা যেতেই পারে যে সৌন্দর্য্য সম্পূর্ণরূপে একটি আপেক্ষিক বিষয়। কিন্তু পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের মাপকাঠি আছে পুরুষ বা নারীদের সৌন্দর্য্য তুলনা করার। সেই মাপকাঠিতে একটি নিকষ কালো বাচ্চাও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বাচ্চা। আবার সুন্দরী মাপা হয় মুখের, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাপ এবং তার অনুপাত দিয়ে। সুতরাং অনেকরকম মাপকাঠির ভিত্তিতে সৌন্দর্য্য নির্ধারণ করা হয়। এই কারণেই একেকজনের কাছে পার্থক্য ঘটে যায়।

    মানুষ ছাড়া বিভিন্ন প্রাণীকুলেরও সৌন্দর্য্যের বিষয় আছে। সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছেদের মধ্যে অতীব উচ্চ শ্রেণীর সৌন্দর্য্য দেখা যায়। স্থলচর প্রাণীর মধ্যেও অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণীর সৌন্দর্য্য আছে। এখানেও সেই দৃষ্টি, দৃষ্টির পার্থক্যের সাথে সাথে সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা পাল্টে পাল্টে যায়। একজনের বিচারের সাথে অন্যজনের বিচার মেলে না।

    এরপরে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সবুজ বনানী, হলুদ বা সবুজ ধানক্ষেত, নির্মল আকাশ, শরতের পেঁজা তুলোভর্তি সুনীল আকাশ, রামধনুর সাত-রঙ, পদ্ম-শালুক ভর্তি গ্রামের পুকুর, গ্রীষ্মে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হওয়া, বর্ষায় চতুর্দিক প্লাবিত হওয়া, পাহাড়ি ঝর্ণা, কাঞ্চনজঙ্ঘা-এভারেস্ট-লে-লাদাখ-নাথুলা'র বরফাবৃত পাহাড়, নদীর মোহনা, প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৌন্দর্য্যে ভরপুর। বর্ষায় বৃষ্টি পড়ার আলাদা সৌন্দর্য্য আছে, আবার গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রেরও নিজস্ব সৌন্দর্য্য আছে। মরুভূমিরও সৌন্দর্য্য অপূর্ব। শীত-ভোরের কুয়াশার সৌন্দর্য্যেও মন টানে। ঘাসের ওপর শিশির-বিন্দুর সৌন্দর্য্য মন উচাটন করে। শিউলি ফুলের ঝড়ার শব্দ মন ব্যাকুল করে। এইরকম হাজারো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে কারণ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আমাদের সবসময়েই মনোমুগ্ধ করে, উদাসী করে তোলে। প্রকৃতির প্রতিটি ঋতুর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে, প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি নিজস্ব ইচ্ছায়, নিজস্ব ধরনে সেজে ওঠে। কখনও গাছের পাতার রং সবুজ আবার কখনও হলুদ আবার কখনও সোনালী। 

    এরপরে আসে মনের সৌন্দর্য্য। কথাতেই আছে অমুক দেখতে খারাপ হলেও মনটা তার খুব সুন্দর। মনের নমনীয়তা, কোমলতা, পেলোবতাকেই মানুষের সম্পদ বলা হয়। যদিও কথাতে আছে, প্যাহেলে দর্শনধারী বাদমে গুনবিচারি। তবুও প্রাথমিক চটকদারি কাটতে খুব বেশী সময় লাগে না এবং সেটা কেটে গেলে মানুষের অন্তরের সৌন্দর্য্যের কথাই চলে আসে। সেখানেই বিচার হয় সে কেমন সুন্দর। মনের সৌন্দর্য্যের সাথে আচার, ব্যবহার মিলেমিশে থাকে। ব্যবহারের কর্কশতা, অসন্মান প্রদর্শন, অহংভাব, রুচিহীনতা, সংস্কৃতির অভাব, অন্তরে প্রেম বা বৈরাগ্যের অভাব ইত্যাদি মানুষের মনের সৌন্দর্য্যকে কালিমালিপ্ত করে। একজন সুন্দর মনের মানুষ, মনুষ্য প্রজাতিকে শ্রেষ্ঠতর হিসেবে প্রমাণ করে। আর যিনি সুন্দর মনের মানুষ নন তিনি পৃথিবীর অন্যান্য জীবের সাথেই তুলনীয় হন।

    আর সবচেয়ে এগিয়ে হলো বিচারের সৌন্দর্য্য। মহাবিশ্বের এক আশ্চর্য্য সৃষ্টি হল আমাদের এই পৃথিবী এবং সেই গ্রহের উন্নততর প্রাণী হল মানুষ। মানবজীবন যদি উপভোগ না করলাম, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যদি এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রেখে না গেলাম তাহলে আমরা উন্নততর প্রাণী হিসেবে দাবী করি কিভাবে? তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষদের এত কোটি বছর ধরে বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম, উন্নততর হওয়ার যে লড়াই, পৃথিবীতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যে অভিযোজন, সেসব মিথ্যা হয়ে যায় নিমেষেই। এখানেই আসে বিচারের সৌন্দর্য্য। সুন্দর বা সঠিক বিচার করতে পারার ক্ষমতা। উপস্থিত বুদ্ধি, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, নির্ভীকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছে এবং ক্ষমতা, প্রকৃতি ও পরিবেশতন্ত্রের সাম্যতা বজায় রাখার ইচ্ছে ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কোনো মানুষের একটি বিচার বা সিদ্ধান্ত কতটা সুন্দর।মানুষের একটা সুন্দর সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র মানুষকেই সাহায্য করে না, প্রকৃতি ও পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের মঙ্গল করে, বিনাশের হাত থেকে বাঁচায়। ফলে সঠিকভাবে বিচার করতে পারা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যেও এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য আছে।

    সৌন্দর্য্য বলতে আমাদের মনে প্রথমেই নারীর সৌন্দর্য্যের কথা আসে, সেটা প্রতীকী। নারীকে আমরা প্রকৃতির সাথে তুলনা করি। সৃষ্টি, শক্তির রূপ বলে মান্যতা দিই। নারী, সে নারী হোক আর ললনা হোক, তার সৌন্দর্য্য যেমন মনোমুগ্ধকর, উপভোগ্য (ভোগ্যা নয়), তেমনি সেই সৌন্দর্য্য না থাকলে পৃথিবী রসাতলে যাবে। এখানেও নারীর সাথে পৃথিবী বা প্রকৃতির তুলনা করা হয়েছে। সৌন্দর্য্যকে উপভোগ্য করে তোলা, উপভোগ করা এবং টিকিয়ে রাখা মানুষের কর্তব্য। এর জন্যে সবচেয়ে বেশী দরকার বিচারের সৌন্দর্য্য।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯527222
  • "নারী বলতে সমগ্র নারী বা মহিলা জাতিকেই বোঝায়। আর ললনা বলতে স্ত্রী বা রমণী বোঝায়। অর্থাৎ শুধু নারী হলেই চলবে না তাকে স্ত্রী বা রমণী হতে হবে।"
     
    একটু খটকা লাগলো। অভিধানে "ললনা" বলতে প্রথমেই দেখাচ্ছে - নারী। সাথে আছে - পত্নী। তাহলে কী "ললনা" বলতে কেবলমাত্র বিবাহিতা নারীকেই বোঝা‌য়?  
     
  • Surajit Dasgupta | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৬527224
  • ললনা বলতে নারী, স্ত্রী, রমণী বোঝায়। আর নারী বলতে মহিলা জাতিকেই বোঝায়। তাহলে তো একটা পার্থক্য থাকছেই। স্ত্রী বা রমনীও নারী নিশ্চয়ই, কিন্তু সেগুলো পত্নী অর্থেই ব্যবহৃত হয়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন