এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • "দেখা দে মা, দেখা দে..."

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ মে ২০২২ | ৭৩৭ বার পঠিত
  • “দেখা দে মা, দেখা দে। একটিবার দেখা দে”…
     


    এই কথাগুলি কে বলেছেন, তা বাঙালি তথা কোন ভারতবর্ষের মানুষের কাছেই অজানা নয়। তিনি গদাধর। কিন্তু এই কথা বলার স্থান, তাঁর এই সাধনার জায়গা প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কয়টা মানুষ জানেন! জানেন, অনেকেই জানেন কিন্তু ইতিহাস কোনদিন কেউ সম্পুর্ন রুপে জানতে পারেনি, পারেনা। সময়ের সাথে সাথে, মানুষের মননশীল চিন্তাধারার সাথে সাথে ইতিহাস পরিবর্তিত হতে থাকে। অর্থাৎ একের উপর আর এক চেপে যাওয়া। কালের বিবর্তনে বারংবার ইতিহাস পরিবর্তিত ও মার্জিত হয়েছে, আগামী দিনেও যে হবে; সে কথায় সন্দেহ নেই।

    সালটা ১৮৫৫, রানী রাসমনি একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। দীর্ঘ আট বছরের কারিগরদের অকান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠল সেই মন্দির। কিন্তু বাধ সাধল তখনকার তথাকথিত সমাজের রক্ষকেরা অর্থাৎ ব্রাম্ভনেরা। রানীমা একজন শূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার দরুন সেই মন্দিরে কোন ব্রাম্ভন পূজা করতে চাইল না। রানীমায়ের অনেক অনুরোধের পরেও না। কিন্তু তিনি যে একজন রানী, সর্বাপেক্ষা তিনি একজন নারী। আর মায়ের আদেশ তাকে পালন করতেই হত। কারণ, স্বয়ং মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। দমলেন না রানীমা। কামারপুকুর থেকে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়কে তিনি মায়ের সেবার জন্য নিযুক্ত করলেন। 

    দিনটা ৩১শে মে, ১৮৫৫…অর্থাৎ আজকের দিন। এই দিনে রানী রাসমনি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়, মায়ের ভবতারিণী রুপের পূজা চালু হয় আজকের দিনে।
     
    রামকুমার একা পেরে উঠছিলেন না এই প্রায় বিশ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত মন্দির সামলাতে। তাই তিনি ভাই গদাধরকে নিজের সাহায্যকারীর কাজে নিযুক্ত করেন। ১৮৫৭ সালে গদাধর এই মন্দিরের সম্পুর্ন দায়িত্বে আসেন। সেই গদাধর ধীরে ধীরে মায়ের প্রেমে নিজেকে সঁপে দেন। 

    একদিন মন্দিরে বসে সেই আকুতি করেন মা-কে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব “দেখা দে মা, দেখা দে”…
    ভক্তের সেই আবদার মা ফেলতে পারেননি। কথিত আছে, মুর্তি থেকে সেইদিন স্ব্য়ং বেরিয়ে এসেছিলেন মা ভবতারিণী। এই সেই মন্দির যেখানে মিলন হয়েছিল দুই যুগপুরুষের। তথাকথিত নাস্তিক নরেন্দ্রনাথকে ঠাকুর বলেছিলেন “যা তোর কি চাইবার আছে চেয়ে নে, মা কাউকে খালি হাতে ফেরায় না”।

    নরেন্দ্রনাথ ধন-সম্পত্তির অভিপ্রায় নিয়ে মায়ের সামনে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু হায়, তিনি চেয়েছিলেন অন্য জিনিস “বিবেক, বৈরাগ্য, জ্ঞান আর ভক্তি”। যা মা ভবতারিণী তাকে ভরিয়ে দিয়েছিলেন সেইদিন।
     
    আজ এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু আজও মনে হয় তাঁর দোড় থেকে কোন মানুষকেই খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না মা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:b8da:3132:254:a3c8 | ৩১ মে ২০২২ ২০:১৬508323
  • দেখুন, দেবদেবীতে ভক্তি একটা বিশ্বাসের ব্যাপার। আমি কোনোদিন কারুর বিশ্বাসে কোনো আঘাত করতে চাইনা। কিন্তু এই লেখার শেষ লাইনটা পড়ে একটা কথা না বলে পারছিনা। তাঁর "দোড়" থেকে মা কাউকেই ফিরিয়ে দেন না (আপনি নিশ্চয়ই 'দোর' লিখতে চেয়েছিলেন) এটা ঠিক কী রকম কথা হলো? আমি যদি খুব ভক্তি ভরে চাই যে আমাকে নোবেল, অস্কার আর পুলিত্জার তিনটে প্রাইজই পাইয়ে দে মা। তাহলে কি তিনি আমাকে খালি হাতে ফেরাবেন, না না? আপনার বিশ্বাস থেকে আপনি লিখেছেন, ইট'স ওকে। আমার হয়তো রিয়াক্ট না করলেও চলতো। কিন্তু পাবলিক ফোরামে লেখা যখন, সারাক্ষণ নিজের মনে হওয়াটা গিলে ফেলাও মুশকিল লাগে।
  • r2h | 134.238.14.27 | ৩১ মে ২০২২ ২০:৪০508324
  • কেকের যেমন কথা।
    তাঁর পছন্দমত জিনিস চাইতে হবে, আবোল তাবোল জিনিস চাইলে হবে না। বিবেক বৈরাগ্য ঐসবের বদলে পয়সা কড়ি চাইলে তক্ষুনি কান ধরে বের করে দিতেন।
  • :|: | 174.251.167.151 | ০১ জুন ২০২২ ১১:২৫508352
  • না, তাঁর পছন্দমত জিনিস চাইতে হবে না। নিজের পছন্দ মত নোবেল-অস্কার-পুলিৎজার চাইলেও মা তা দেবেন। যথাসময়। এই জন্মে চেয়ে রাখলেন পরের জন্মে পুলিৎজার তারপরের জন্মে অস্কার তারপরের বার নোবেল। মানে অর্ডারটা এই রকমই হবে তা না -- মায়ের ইচ্ছেতে অন্য রকমই হতে পারে। কিন্তু "মা কাউকেই ফেরাননা" তত্ত্বটা এই ভাবেই ভক্তরা ব্যাখ্যা করবেন।
    যাই হোক, এই সিরিজ অফ ডিসায়ার ফুরালে তারপর হয়ত মনে হবে যাহা লইয়া অমৃতত্ব না পাইবো তাহা লইয়া আমি কী করিব? তখন বিবেক বৈরাগ্য ত্যাগ ইত্যাদি চাওয়ার প্রশ্ন। তখন এই বিস্তর চাওয়া বা তনহা/তৃষ্ণা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা। সব শেষে মায়ের দোর থেকেও বিদায় নিতে পারলে দেখা যাবে, ওই গানে যেমন বলেছে, মা তখন হেসে "হাত চাপড়ি" দিচ্ছেন।
     
  • দেবব্রত | 122.176.64.106 | ০১ জুন ২০২২ ১১:৪১508355
  • হ্যাঁ,সারাদিন আমি লোকের পিছনে কাঠি করে করে বেরাচ্ছি। আলফাল লিখে একে ওকে বোঝাচ্ছি আসলে তুমি যা বলছ তা মিথ্যে তোমার বিশ্বাস মিথ্যে। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলছি এইগুলোর জন্য আমায় অস্কার দাও। মা তখন মারলেন এক থাপ্পর।থাপ্পর খেয়ে বেরিয়ে বললান "এই মা ভালোনা" প্যাঁ প্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুরে ঘুরে যুক্তি দেখাচ্ছি। বিশ্বাস যাক চুলোয়। আবার কেউ কিছু লিখলে কাঠি করতে পিছনা হচ্ছি না। আবার অস্কার চাইতে যাচ্ছি মায়ের কাছে আবার থাপ্পর। এইসব তো হচ্ছে চারিদিকে। কবির ভাষা আর ক-জন মনে রেখেছে "বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু তর্কে বহুদূর"...
  • | 2406:7400:63:7fba::100 | ০২ জুন ২০২২ ০০:২৯508385
  • ম্যা ম্যা ম্যা ম্যা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন